#মিথ্যে_মায়ার_শহর,#অন্তিম_পর্ব
#কাব্য_চৌধুরী_নীল
খেতে বসলাম কাকা দিলো ইলিশের লেজ আর ডাল। কাকাকে বললাম কাকা আজ তো গরুর মাংশ রান্না করলাম আমাকে দিবা না। চাচা এমন একটা উত্তর দিবে কখনো আশা করিনি।…..
অনেক দিন হলো খাওয়া হয়না কাকাকে দেখলাম ছলছল চোখে বললো নাই বাজান শেষ হয়ে গেছে। কিছুর শব্দে পিছনে তাকাতে দেখি ইভা দারিয়ে আছে । আল্লাহকে বললাম আল্লাহ আর কতো লজ্জা দিবা । তোমার পছন্দের কি আমি একাই যে এতো কস্ট দাও আমাকে। ইভা আমার দিকে তাকিয়ে পানি নিয়ে চলে গেলো। আমি আর মাছটা খেতে পারলাম না কাটার জন্য। ডাল দিয়ে খেয়ে চলে আসলাম।
কিছুদিন পরের কথা,
একটা চাকরি হলো আমার। খুববেশি বেতন না হলেও চলবে আমার। এমন একটা অবস্থা যে সিগারেট না খেলে ঘুম আসে না। অফিস থেকে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে যখন পানি খেতে সামনের রুমে গেলাম শুনতে পেলাম ভাইয়া ভাবিকে আমার থেকে সাবধান করছে আমার চরিত্র ভালো না আরো রোজাকে নিয়ে সব কাহিনী বলছে আর থাকতে পারিনি চলে আসলাম রুমের মধ্যে সিগারেট ধরালাম। কি থেকে কি হলো জীবনটা । রোজা নামক কাল নাগীনের জন্য ধ্বংস হলো আমার জীবনটা। ভাইয়ার প্রত্যেকটা কথা আমার কলিজায় আঘাত করেছে। ইচ্ছা করছিলো মাটির মধ্যে ঢুকে যাই।
আমার জীবনটাই বা এমন কেনো সবাই তো কত সুখে আছে।মজা মাস্তি করে কাটায় আমি পারিনা কেনো। চুপচাপ থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে। বাসায় তেমন থাকা পরে না নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি। সব ভুলে যাবো নতুন থেকে শুরু করবো।
অফিসে বসে কাজ করছিলাম মাথাটা খুব ব্যাথা করছে আর বুকেও। হঠাৎ চোখে অন্ধকার দেখে অজ্ঞান হয়ে গেলাম আর কিছু মনে নাই।যখন জ্ঞান ফিরলো তখন হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম নিজেকে। ডাক্তার বললো কিছু টেস্ট করা লাগবে। আমি বেড থেকে উঠলাম খুব দুর্বল লাগছে তবুও উঠে গিয়ে টেস্ট গুলো করলাম। বসে আছি ডাক্তারের চেম্বারে ডাক্তার রিপোর্ট দেখছে। আমার দিকে মুখ কালো করে তাকাচ্ছিলো। আমি তার মুখ দেখে কিছু আন্দাজ করতে পারছিলাম না যখন ডাক্তার বললো
ডাক্তারঃ দেখুন আপনাকে সরাসরি বলি কারন আপনি একা আছেন তাই বলছি আপনার ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে এবং আপনি একদম লাস্ট স্টেজে আছেন অপারেশন করলে বাচার সম্বাবনা ১৫%। আর আপনি সম্ভবত ১ মাস এর বাচবেন।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো । ডাক্তারকে বললাম যে
মুন্নাঃ এটা কিভবে সম্ভব আমি তো বুঝতেই পারিনি যে এমনটা হইছে আমার তবে লাস্ট স্টেজে কেনো।
ডাক্তারঃ আপনার লক্ষন গুলো স্বাভাবিক তাই টের পাননি ডাক্তার বললো আমি দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনার হাতে সময় খুবই কম। চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো সিট থেকে ওঠার চেষ্টা করলাম কোনো শক্তি পাচ্ছি না। সকল কাকতালীয় ঘটনা গুলো বার বার আমার সাথেই কেনো ঘটে।ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে হাটছি উদ্দেশ্যহীন ভাবে। কেনো জানি এখন বাচতে ইচ্ছা করে খুব নতুন থেকে শুরু করার সুযোগ পেতাম তাহলে কাউকে মনে রাখতাম না।
রাতে ঘুম আসছেনা হয়তো চির জনমের ঘুম সামনে আসছে সেজন্য। বেলকোনিতে গেলাম সিগারেট ধরালাম আবারো যদিও এটাই আমার প্রান নাশ করী তবুও এটাই আমার একাতিত্বের সাথি ছিলো। সিগারেটে একটা টান দিয়ে ধোয়াটা আকাশের দিকে ছুরলাম ধোয়ার মধ্যে দেখলাম সেই তারাটা আজো একা তবুও জ্বল জ্বল করছে । আজ খুব আম্মুর কোলে মাথা রাখতে ইচ্ছা করে আর তাহলেই আমার ঘুম আসবে। ঝি ঝি পোকার ডাক গুলো আজ খুব বিরক্ত কর লাগছে কিন্তু কিছুদিন আগের মন দিয়ে শুনতাম। রুমে চলে আসলাম টেবিলে বসলাম কিছু লিখবো। শক্তি থাকা কালিন কিছু লিখে যাই প্রথমে লিখলাম আম্মু আব্বুকে
প্রিয় আব্বু,,
আব্বু রাগ করোনা তোমাকে বাবা বলে ডাকছি বলে। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ক্ষমা করে দিও আম্মু আব্বু। তোমারা যখন এগুলা পরবে তখন হয়তো চলে যাবো না ফেরার দেশে। ফিরবো না কোনোদিন তোমার অবহেলার মাঝে চলে যাচ্ছি আমার সৃষ্টিকর্তার কাছে।
জানো আব্বু সেদিনের সেই অপরাধটা করিনি। রোজা ফাঁসিয়েছে আমাকে। তোমার মারে আমার শরীরে ক্ষত হলে তোমাদের আচারনে আমার মনে বেশি ক্ষত হয়েছে তোমরা তোমাদের ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারলে না একটু দুষ্টই ছিলাম কিন্তু চরিত্রহীন না আব্বু। তুমি যখন বলেছিলে তুমি আমার সাথে একটেবিলে খাবে না সেদিন খুব কেদেছিলাম। কস্টও পেয়েছিলাম আব্বু। জানো কতটা দিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম তোমাদের খেতে আমার চেয়ারটা খালিই পরে থাকতো ইচ্ছা করতো তোমাদের পাসে বসে খাই আমিও। ছোটো বেলায় যেমন খাইয়ে দিতে ঠিক তেমন করে খাইয়ে দিবে। কিন্তু সামনে যাবার সাহস হয়নি। তবে একটা শিক্ষা আমি পেয়েছি তুমি যখন আগে টাকা দিতে আমার কোনো বন্ধুর অভাব ছিলো না কিন্তু যখন নিজে টিউশন করে টাকা ইনকাম করতাম তাও কম তখন আমার কোনো বন্ধু ছিলো না কারন তারা ছিলো দুধের মাছি। আব্বু ক্ষমা করে দিও আমাকে যে তোমার সুসন্তান হতে পারলাম না দাফন করার আগে ছোট্ট একটা চুমু দিও এই অভাগার কপালে।ভালো থেকো আর ভাইয়াকে দেখে রেখো।
ইতি
তোমাদের অবহেলার মুন্না
তারপর লিখলাম আম্মুকে,
প্রিয় আম্মু,,
যখন এই চিরকুট টা পাবে তখন হয়তো দেখতে পাবো না তোমাকে আমাকেও জীবিতো পাবে না কারন আমার যে ব্রেইন ক্যান্সার। কেরে নিলো অবেলায় আমাকে। জানো আম্মু যেদিন আব্বু আমাকে মেরে ছিলো সেদিন আমি আম্মু আম্মু বলে চিৎকার করেছিলাম ভেবেছিলাম তুমি আসবে বাচাতে কিন্তু আমার ধারনা মিথ্যে প্রমান করে তুমি আসো নি মা। আম্মু তুমি না বলতে আমি আর ভাইয়া তোমার দুইটা কলিজা তাহলে তোমার সামনে তোমার কলিজাকে কিভাবে মারলো আম্মু। তোমরা যখন ভালো ভালো খাবার খেতে আমারো খুব ইচ্ছা করতো খেতে কিন্তু আমি পেতাম না। আমি ভাবতাম তুমি লুকিয়ে নিয়ে আসবে আমার জন্য তাও আনোনি আম্মু। তুমি যখন ভাইয়াকে খাইয়ে দিতে আমি দুর থেকে দেখে কাঁদতাম আমারো ইচ্ছা করতো খেতে। কিন্তু ভয়ে বলতে পারিনি।আম্মু তুমি না বলতে আমি তোমার বেশি আদরের আমি না খেলে তোমার গলা দিয়ে খাবার নামে না তাহলে কিভাবে পারলে এতো গুলা দিন আমাকে রেখে খেতে। কতটা একা হলে মানুষ আকাশের তারা দেখে রাত কাটায় বলতে পারো আম্মু ঠিক ততটা একা ছিলাম। তোমরা সবাই যখন কথা বলা বন্ধ করে দিলে তখন মরে যেতে ইচ্ছা করছিলো এর থেকে হয়তো সেদিন আব্বু মেরে ফেললে কস্ট কম হতো। তোমরা আমাকে বাচিয়ে রেখে প্রতিদিন মেরেছো। দোয়া করো আম্মু তোমার ছেলেটা পরোপারে যেনো ভালো থাকে। তোমাদের সাথে আমার খুব কথা বলতে ইচ্ছা করে কিন্তু তোমরা বলো না। আগ বারিয়ে অনেকবার চেস্টা করার পরও তোমরা বলনি।আম্মু তোমরা বুঝবে সবই তবে বেলাশেষে।তোমরা কলিজাটার জন্য দোয়া করো যেনো আল্লাহর কাছে ভালো থাকতে পারি।আমার খুব বাচঁতে ইচ্ছা করে তোমাদের সাথে। কে চায় বলো অল্প বয়সে মরতে কত রঙিন স্বপ্ন নিয়ে চলছিলাম দুর্বার গতিতে একনিমিশেই সব শেষ হয়ে গেলো। ভাইয়াকে ভালোবেসো কারন আমি তো আর নেই। ভালো থেকো আম্মু
ইতি
তোমার অভাগা ছেলেটা
তারপর ভাইয়াকে লিখলাম।
প্রিয় ভাইয়া,,
তোর হাতে যখন চিঠিটা থাকবে তখন আমি থাকবো না এ জগতে।এমন জায়গায় চলে যাবো যেখান থেকে ফেরা যায় না, জানিস তোর ভাইটার ব্রেইন ক্যান্সার এ আক্রান্ত। তোর যে ভাইটা সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারতো সে ভাই সিগারেট না খেলে ঘুম আসে না। ভাইয়া তুই হয়তো জানিস না। ইভাকে কতটা ভালোবাসি আমি। মাফ করিস নাম ধরে বললাম। জানিস একটা সময় ইভাও আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো। কোনো কিছুর অতিরিক্ত যেমন ভালোনা তেমনি ভালোবাসাও। হঠাৎ করেই ইগনোর করছিলো আমাকে তারপর তোদের বিয়ে ঠিক হলো। আমি ইভাকে দোষি করছি না দোষ আমার নিয়তির নাহলে এতো গুলা ঘটনা আমার সাথেই কেনো ঘটবে। ইভা মেয়েটা খুবই ভালো ভদ্র শান্ত দেখে রাখিস আর ভালো বাসিস। তোদের মেয়ে হলে নাম রাখিস রিধি নামটা আমার পছন্দের। মাফ করে দিস তোর এই ভাইটাকে, যে তোর ভালো একটা ভাই হতে পারলাম না রে। ভালোথাকিস।
ইতি
তোর ভাই মুন্না
……
…..
অন্যদিকে রোজার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে ছেলেটাও আমার অফিসে চাকরি করতো সে যখন আমার ছবি দেখিয়ে বললো এই ছেলেটা ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে রোজা প্রথমে বিশ্বাস না করলেও পরে করছে। সেখান থেকে আসার পর যখন তার আব্বু আম্মুকে বললো আমার করুন পরিনতির কথা তখন প্রথমে তারা খুসি হয় আর রোজা যখন সত্যটা বলে রোজাকে চর মারে তার বাবা তারা সকলেই আসে পরের দিন খুব সকালে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইতে।
খুব সকালেই ঘুম থেকে জেগে যাই তখন টের পেলাম জোরে জোরে কথা হচ্ছে। বাবা খুব রেগে যাচ্ছে কারো ওপর কন্ঠ শুনে বুঝলাম রোজারা আসছে। আমার মাথায় খুব পেইন হচ্ছিল যা সহ্য করার মতো না আবছা আবছা দেখছি সব চোখে পানি এসেছে ঠাসস করে চর মারার শব্দ শুনলাম অস্পষ্ট ভাবে। একটু হাসি দিলাম আর ভাবলাম যে বাবা এবার সঠিক অপরাধিকে শাস্তি দিলো তবে দেরি করে ফেললো খুব। হাত পা অসার হয়ে আসছে শ্বাস করতে কস্ট হচ্ছে। শুনতে পেলাম তারা সবাই দৌরে আসছে আমার রুমে দরজা খোলার শব্দে তাকালাম কোনো রকমে দেখলাম আমার আম্মু আব্বু দারিয়ে আছে চোখে জল।দৌরে আসলো আামার মাথার কাছে। এসে চিৎকার করে ডাকলো আমাকে শুনছি তবে বলতে পারছি না কথা আসছে না ভিতর থেকে চেস্ট করছি কিন্তু পারছি। বুকটা ফেটে কান্না বেরিয়ে আসছে। তারা মাফ চাইছে কিন্তু বলতে পারছি না আমি যে তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি।ভাবছি, তখন আমি কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু তোমরা বলনি আর আজ তোমরা বলছো কিন্তু আমি বলতে চেয়েও পারছি না।সবই বুঝতে পারলে তবে বেলা শেষে। সবার দিকে একবার চোখ ঘুরিয়ে তাকালাম। নিশ্বাসটা বন্ধ হওয়ার আগে মুচকি হেসে ভাবলাম পৃথিবীতে বেইমান প্রতারক গুলাই বেশি সুখি হয়।।
আর এভাবেই শেষ হয় আরেকটা গল্পের সমাপ্তি।
( সমাপ্ত)
“ভূলত্রুটি গুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন”…
নোটঃ- পুরো গল্প পড়ে কেমন লেগেছে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে জানাবেন। লিখতে গিয়ে নিজেই অনেকটা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছি