মিথ্যে মায়ার শহর,#পর্ব_০১

#মিথ্যে মায়ার শহর,#পর্ব_০১
#কাব্য_চৌধুরী_নীল

কাল আমার গার্লফ্রেন্ড ইভার বিয়ে।আর বিয়েটা হচ্ছে আমারি বড় ভাইয়ের সাথে। মা বাবা পছন্দ করেছে ইভাকে। করবেই বা না কেনো এককথায় আগুন সুন্দরী। ভাইয়া মুখে না বললেও বুঝতে পারছি মেয়ে তার পছন্দ হয়েছে,হয়তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা অপরিচিতার অনুপমের মতো স্বপ্ন বুনছে মনের কোনে ।

ইভাকে ফোন দিলাম প্রথমে দেখলাম ওয়েটিং হয়তো ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলো তাই দ্বিতিয়বার কল দেয়ার সাহস হয় নি। কিছুক্ষন পর ইভা নিজেই কল দিলো রিসিভ করে বললাম

মুন্নাঃ ইভা কেমন আছো,
ইভাঃ ভালো আছি।।
মুন্নাঃ আচ্ছা ইভা আমাদের গল্পটা এরকম না হলে পারতো না কি.?
ইভাঃ আমি জানিনা।
মুন্নাঃ তোমার সাথে কিছু কথা আছে
ইভাঃ আচ্ছা বলো
আমি বললাম ফোনে বলা সম্ভব না সামনাসামনি বলবো প্লিজ।
ইভা বললো আচ্ছা কোথায় আসবো আমি বললাম সেই পরিচিতো জায়গাটাতে । ফোন কেটে দিলো।
ভাবতেই পারিনা এইকি সেই ইভা যে আমাকে বকা দিয়ে নিজেই কান্না করতো। একদিন কথা না বললে চোখের জল নাকের জল এক করে ফেলতো। কথা বলতে পারতো না হেস্কি তোলার জন্য।তখন খুব গর্ভ হতো আমার ওর মতো জীবনসংগীনি পেয়ে। ও আমাকে বলছিলো আমাদের বাবুর নাম রাখবে রিধি। হাসি পাচ্ছে যেখানে বাবা মায়ের ঠিক নেই সেখানে বাচ্চার নাম ঠিক করা কিন্তু একটা সময়ে এগুলো ভালোবাসা মনে হলেও এখন ন্যাকামো বলেই মনে হয়।

যখন বন্ধুরা বলতো ভালোবাসা রং বদলায় কিন্তু আমি বিশ্বাস করতাম না কিন্তু এখন বুঝতে পারছি অর্থ আর পরিস্থিতির জন্য ভালোবাসার রং পরিবর্তন হয়। তবে আমি এখনো বিশ্বাস করি যে সম্পর্কের শেষ হলেও ভালোবাসার শেষ নেই ।

(আসুন পরিচয় পর্ব শেষ করি,,আমি মুন্না যদি সবাই জানেন,,আমি বাবা মায়ের ২য় সন্তান,, আমি ছোট আর আমার বড় একটা ভাই আছে। তার সাথে আমার গ্রালফ্রেন্ড এর বিয়ে,,আর, এতক্ষন যার সাথে কথা বললাম সে হচ্ছে আমার এক্স গ্রালফ্রেন্ড মানে আমার হবু ভাবি ইভা। এবার গল্পে আসা যাক)

গোসল করে নামাজ পড়লাম বসে বসে ফোন ঘাটছি। বাবা মায়ের খাওয়া হলে খেতে যাবো কারন আমার সেই সৌভাগ্যটা নেই তাদের সাথে একটেবিলে বসে খাবার সেটা অনেক আগেই হারিয়েছি। আপনারা হয়তো ভাবছে সেটা আবার কেনো চলুন

ফ্লাসব্যাকে,

আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট ২য় বর্ষে পড়ি তখন ভাইয়ার জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠান ছিলো। অনেক মেহমান ছিলো। তাদের মধ্যে বাবার বন্ধুর মেয়ে রোজা। রোজা আমাকে অনেকবার ভালোবাসা নিবেদন করেছে কিন্তু আমি রোজাকে পছন্দ করতাম না । রোজা আর আমি সেইম ক্লাসেই পড়তাম। আমি লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিলাম তবে খুব চঞ্চল আর দুষ্ট ছিলাম। দুষ্টমির জন্য অনেক বকা খেয়েছি।আমার সকল চঞ্চলতা আর দুষ্টমি এক নিমিশেই চুপচাপে পরিনত করেছিলো রোজা । অনুষ্ঠানের দিন সকালে যখন গোসল করে পোশাক পড়বো তখনি আগমন হয় রোজার আর আমি তখন খালি গায়ে আমি রোজাকে বের হতে বলি কিন্তু সে আমাকে জরিয়ে ধরে আমার রাগ উঠে যায় ঠাসসস করে চর বসিয়ে দিই রোজার গালে। রোজা অবাক হয় আর কেদে ফেলে কারন বাবা মায়ের আদরের মেয়ে একটুতেই কান্না। রোজা দৌরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আসলো আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে নিজের জামা নিজে ছিরে চিৎকার দিলো বাচাও বাচাও বলে সবাই দৌরে এসে দেখলো দরজা লক করা ভেঙে ঢুকলো ভিতরে তখনি রোজা দৌরে চলে গেলো আম্মুর কাছে আব্বু এসেই আমাকে চর মারলো জীবনের প্রথমবার মারলো।

খুব কান্না পেলো আমার বাবা কিছু না জিজ্ঞাসা করেই কেনো মারলো আমাকে। আমি কান্নারত কন্ঠে বললাম বাবা আমি কিছু করিনি সব রোজার ষড়যন্ত্র সেটা রোজা শুনে নেকা কান্না করে বললো আঙ্কেল আমার গালে দেখেন চর ও মেরেছে। সত্যি রোজার ফর্সা গালটা লাল হয়ে আছে আমি আটকে গেছি কিছু বললেও কেউ বিশ্বাস করবে না মেহমানে রুমটা ভরে গেলো যে যা পারছে আব্বুকে বলছে আমি চিৎকার দিয়ে বললাম

মুন্নাঃ যা বলার আমাকে বলুন আমার বাবাকে বলবেন না।

একথা বলার সাথে সাথে বাবা এসে আমাকে মারতে লাগলেন লাথি চর যা পারছে দিছে আমি শুয়ে পড়ছি মা বলে চিৎকার দিলাম দেখলাম মা কান্না করছে কিন্তু তার চোখে আমার জন্য মায়া নাই। কাজের লোক রহিম কাকাকে যখন বাবা লাঠি আনতে বললেন তিনি কিছু বলতে গেলে বাবার গর্জনে রিড়ালের মতো চলে যায়। লাঠি দেখেই চিৎকার দিলাম আম্মু বাচাও আমাকে আমি কিছু করিনি থামাও বাবাকে। বাবার প্রতিটা বারিতে আমি চিৎকার করছিলাম রক্ত বের হয়ে গেছে ছিলে গেছে অনেক জায়গা হঠাৎ দেখলাম রোজার আব্বু আমার আব্বুকে থামালেন ধরে আর বললেন মেরে ফেলবে নাকি মেরে কি প্রমান করতে চাও। আমি রোজার দিকে তাকালাম মুচকি হাসি দিলো তার হাসিতে আমার কলিজা ছিরে যাচ্ছিলো। বলতে ইচ্ছা করছে রোজা তুমি না আমাকে ভালোবাসতে তাহলে কেনো এমনটা করলে। আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলো আমি রুমের মেঝেতে পরে রইলাম কখন যে অজ্ঞান হলাম টের পেলাম না। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখলাম আমি মেঝেতেই আছি তার মানে কেউ আসেনি আমার রুমে। খুব শীত করছে উঠার চেস্ট করলাম কিন্তু প্রথমবার পারলাম না অনেক কস্টে উঠে বসলাম দেখলাম আমি খালি গায় কাধে লাঠির একটা টুরে ঢুকে গেছে। উফ করে শ্বব্দ করলাম উঠানোর সময়। কোনোরকমে লাইট অন করলাম মোবাইলে দেখলাম রাত ১১টা তারমানে এতোক্ষন অজ্ঞান ছিলাম। রাথরুমে গেলাম ফ্রেশ হতে হাতের গিটে পানি লাগার সাথে সাথে চিৎকার দিলাম তাকিয়ে দেখলাম কতখানি ছিলে গেছে চামরা বাবর দেয়া লাঠির বারি ফিরোনোর জন্য যখন হাত পেতে ছিলাম তখন গিটে পরেছিলো উফ কি ব্যাথা। খুব ক্ষুদা লাগছে গিয়ে দেখলাম বাবা মা ভাইয়া বসে খাচ্ছে রহিম কাকা দারিয়ে আছে আমি যাওয়ার পর চেয়ারে বসতে দিলো রহিম কাকা। আমি বসলাম কিন্তু সাথে সাথে বাবা দারিয়ে গেলেন আর বললেন

বাবাঃ ওর সাথে আমি এক টেবিলে খেতে পারবো না।

অবাক চোখে তাকিয়ে আছি বাবার দিকে। সে আরো বললো

বাবাঃ আজ থেকে তুই বাবা বলে ডাকবি না। ডাকলে আমি তোকে ত্যাজ্য করবো।

আমি তাকিয়ে আছি বাবার দিকে সে উপরে তাকিয়ে আছে আমি ভাবছি এই কি আমার সেই বাবা যে বাবা আমি টেবিলে না আসলে খেতো না। এই কি আমার সেই বাবা যে আমার সাথে ক্রিকেট খেলতো ঘুরতে যেতো কাধে নিয়ে। হাজরো বায়না পুরন করতো। প্লেটটা সামনের দিকে ঠেলে চেয়ার থেকে উঠলাম। হাটতে হাটতে রুমে আসলাম শুয়ে পরলাম। লজ্জায় ঘৃনায় আর খাইনি রাতে ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলাম। সকালে শরীরটা খুব দুর্বল উঠতে কস্ট হয়। আম্মুকে ডাক দিলাম আম্মু দরজার সামনে এসে বললো কি হয়েছে আমি বললাম আমার শরীরটা খুব খারাপ একটু ধরে উঠিয়ে ওয়াসরুমে দিয়ে এসো তখন অাম্মু যা বললো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না

#চলবে???

ভূলত্রুটি গুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here