তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ২১,২২

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ২১,২২
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ২১ :#স্টিকি_নোট

“এসেছো নিজের ইচ্ছায় যাবে কি যাবে না কখন যাবে সেটা আমি ডিসাইড করবো।”ইয়াদের কথা শুনে টয়া অগ্নি মূর্তি হয়ে গেলো।
” আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন? দেখুন ভাল্লাগছে এসব। আমি বাসায় যাবো।”, অস্থির হয়ে বললো টয়া।
ইয়াদ খেতে নিবে এমন সময় জিজ্ঞেস করলো,” তুমি ডিনার করেছো?”
টয়া বড়ো বড়ো চোখ করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইয়াদ মলিন ভাবে তাকিয়ে থেকে বললো,” এভাবে তাকিয়ে থেকো না চোখ বের হয়ে আসবে। যেটা প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দাও।” টয়া মুখ কালো করে বসে আছে। টয়া না খেয়ে থাকলে ইয়াদ কি করে খাবে? এই মেয়ে যা জেদি মুখেও বলবে না। ইয়াদ চেয়ারটা টয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে আসতেই টয়া রাগী চোখে তাকালো, ইয়াদ সেটা গ্রাহ্য করলো না। ইয়াদ চামচে করে পাস্তা টয়ার মুখের সামনে ধরে বললো,” নাও এটা শেষ করো।”

” এতো care দেখাতে হবে না আমি খেয়েছি। এবার আপনি খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।”, রাগী চোখে তাকিয়ে বলল টয়া।
ইয়াদ না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” care কে দেখছে? তুমি যে খাবারে উল্টা পাল্টা কিছু মিশাও নি তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই তুমি খেলে আমি নিশ্চিত হয়ে বাকিটা খেতে পারবো।” ইয়াদের কথায় টয়ার পুরো মেজাজ নষ্ট হয়ে গেলো।
” আমি উল্টা পাল্টা কিছু মিশিয়েছি। এইজন্য বলে মানুষের উপকার করতে নেই। আপনি সবাইকে নিজের মতো মনে করেন”, বাকিটা বলে শেষ করার আগেই ইয়াদ টয়ার মূখে খাবারটা ভরে দিয়ে বললো,” এতো যে কথা বলো tired লাগে না?”
টয়া এমন ভাবে চাবাচ্ছে যেনো পারে না এক্ষুনি ইয়াদকে কামড়ে দেয়। ইয়াদ চাইছে না টয়া চলে যায় তাই যতক্ষণ পারা যায় আটকে রাখে।

ইয়াদ খাবার শেষে নিজেই টেবিল গুছিয়ে নিচ্ছে। টয়া রেগে আটম বম হয়ে আছে। একেই বলে অতি চালকের গলায় দড়ি আমারই বা দরকার কি ছিল এখানে আসার জন্মের মত ফেসে গেছি। ইচ্ছে করছে হাতুড়ি দিয়ে দরজাটা ভেঙে ফেলে। ইয়াদ প্রথমে ভেবেছিলো টয়াকে যেতে দিবে কিন্তু এখন মত পাল্টেছে। এর মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠল টয়া দৌড়ে গিয়ে দরজার সামনে দাড়ালো। এবার কি করবে দরজা তো খুলতেই হবে এই ফাঁকে টয়া কেটে পড়বে। ইয়াদ টয়ার হাব ভাব দেখে বুঝতে পারছে পালানোর জন্য টয়া প্রস্তুত কিন্তু এতো সহজে ইয়াদ তো ছাড়ছে না। ইয়াদ দরজার ফাঁকে দেখলো বাহিরে রিতু দাড়িয়ে এবার দরজা খোলার প্রশ্নই উঠে না ওই মেয়ে সারারাত দাড়িয়ে থাকুক। ইয়াদ দরজার সামনে থেকে চলে যেতেই টয়া চেঁচিয়ে বললো,” কি হলো দরজা না খুলে কোথায় যাচ্ছেন? আপনি দেখছি আসলেই একটা হিটলার। দরজা খুলে দিন আমি বাসায় যাবো। শুনতে পেয়েছেন? আমার ঘুম পেয়েছে আমি বাসায় যাবো।”

ইয়াদ টয়ার দিকে ঘুরে বললো,” ঘুম পেলে আমার রূমে গিয়ে শুয়ে পরো।” টয়ার চেঁচামেচি করে কোনো লাভ নেই সেটা ইয়াদের কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তার চোখে মুখে বিরক্তির কোনো ছাপ নেই সে যেনো মজা পাচ্ছে।
” আমি আপনার রূমে কেনো ঘুমাবো ? আর আমি বলেছি না যে আমি আপনার সাথে থাকবো না। তাহলে জোর করেছেন কেনো? “, টয়ার কথায় ইয়াদ এগিয়ে আসতে আসতে বললো,”তোমার কথা কি আমাকে শুনতে হবে? শুনবো না আমি। কি করবে। এখানে থাকবে তুমি বুঝেছ?”
টয়া খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে আজ তাকে এখানেই থাকতে হবে কিন্তু টয়া সেটা কক্ষনো হতে দিবে না।
” বলেছি তো থাকবো না “, বলে টয়া পিছিয়ে যেতে লাগলো ইয়াদ অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে।
টয়া দেওয়ালের সাথে লেগে দাড়িয়ে পড়তেই ইয়াদ দুপাশে হাত রেখে টয়ার দিকে ঝুঁকে আসতেই টয়ার হার্টবিট বেড়ে গেছে। টয়া তাও রাগ দেখিয়ে বলতে গেলো ইয়াদ আদুরে গলায় বলল,” আমার সাথে থাকলে আমি কি তোমায় খেয়ে ফেলবো?”
টয়া একটা ঢোক গিলে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,” আমি জানি না।”
ইয়াদ নিশব্দে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আর টয়া নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে দাড়িয়ে আছে। ইয়াদ যেনো হারিয়ে যায় এই স্নিগ্ধতায়। ইয়াদ উঠে দাড়িয়ে টয়ার হাত ধরে বললো,” ঘুমাবে এসো।”
টয়া চিৎকার শুরু করে বলে না না আমি যাবো না। ইয়াদ উপায় না পেয়ে টয়াকে কোলে তুলে নিলো। ইয়াদের হটাৎ এমন কাণ্ডে টয়া চোখ বন্ধ করে ইয়াদের জামার কলার খামচে ধরলো। ইয়াদ টয়াকে কোলে তুলে টয়ার দিকে ঝুকে বললো,” আর একটা চিৎকার দিবে তুমি, তোমাকে আমি একদম ছুড়ে ফেলে দিবো।”
টয়া দাতে দাঁত চিপে বললো,” আর আপনাকে বুঝি আমি ছেড়ে দিবো?”
ইয়াদ একটু হেসে বললো,” তুমি আমাকে ভয় পাও না, তাই না।”
” আপনাকে ভয় পাওয়ার কি আছে? “, ইয়াদের কানের কাছে চেঁচিয়ে বললো টয়া।
” ভয় পাওয়ার কি আছে একটু পরই বুঝতে পারবে।”,বলে আড় চোঁখে তাকিয়ে হাসতেই টয়া একটা ঢোক গিলে বললো,” আমাকে নামান। আমি যাবো না।”
ইয়াদ টয়াকে নিজের রূমে নিয়ে এসে খাটের উপর বসিয়ে দিলো। তারপর দরজা আটকে দিতেই টয়া খাট থেকে নেমে দাড়িয়ে পড়লো। বুকের ভিতরটা যেনো কেমন করে উঠলো। দরজা আটকে দিয়েছে কেনো টয়ার চোখ মুখে ভয়ের ছাপ চলে এসেছে। টয়া চেঁচিয়ে বললো,” একি আপনি দরজা বন্ধ করেছেন কেনো। দরজা খুলুন।”
ইয়াদ শার্টের বোতাম খুলে এগিয়ে আসতেই টয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। টয়া ভয়ে পুরো শেষ হয়ে গেলো বুকের ভিতরটা কেমন জানি করছে।
ইয়াদ এগিয়ে আসতে আসতে পুরো শার্টটা খুলে ফেললো। টয়া একদম দেওয়ালে সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো। এবার বাঁচবে কিভাবে? টয়ার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। ঘনো ঘনো নিঃশ্বাস নিতে হচ্ছে। টয়া কিছু বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে।
ইয়াদ কাছে এসে দাড়াতেই টয়া চোখ বন্ধ করে নিচের দিকে ঝুঁকে রইলো। কিছু বোঝার আগেই ইয়াদ টয়াকে কোলে তুলে নিলো। টয়া চোঁখ মুখ খিচে ফেললো তার শরীরে এক শিতল শিহরন বয়ে গেল। ইয়াদ টয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো,” ভয় পাচ্ছো বুঝি?”
টয়ার হাত ইয়াদের কাধে ছিলো এই কথা শুনে টয়া রাগ সামলাতে না পেরে ইয়াদের পিঠে এক খামচি বসিয়ে দিলো। ইয়াদ চোখ বন্ধ করে ফেললো খামচি দেওয়ার সাথে সাথে।
” এর শোধ আমি নিচ্ছি আমি দাড়াও।”, বলে টয়াকে বিছনায় শুইয়ে দিলো। টয়া চোখ খুলছেনা কারণ ইয়াদ তার একদম সামনে আছে। টয়া ভয়ে বিছানার চাদর শক্ত করে ধরলো। ইয়াদ কিছুক্ষণ টয়ার দিকে তাকিয়ে তারপর সরে গিয়ে বললো,” ভীতুর ডিম একটা।”বলেই ইয়াদ হেসে ফেললো। ইয়াদ মোটেও চায় না তার ভালোবাসা টয়ার ভয়ের কারন হয়ে দাঁড়াক। So let it be।
টয়া বোকা হয়ে গেলো। টয়ার ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ইয়াদের ঘাড় মটকে দেয়। অসভ্য, বেয়াদব একটা ছেলে। টয়া চোখ খুলে হাতের মুঠি শক্ত করে রাগ সামলাচ্ছে। রাগ সামলাতে না পেরে টয়া বলে বসলো,” এসবের মানে কি?”
ইয়াদ অবাক হয়ে টয়ার দিকে ঘাড় ফিরলো ইয়াদের বুঝতে বাকি রইলো না যে এ মেয়েকে চুপ করানো বেশ কষ্টের কাজ। ইয়াদ একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,” কিছু না।”
টয়া বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে ইয়াদ তাকে ভয় দেখানোর জন্য এসব করেছে ভেবেই গা জ্বলে যাচ্ছে ওর। ইয়াদ কিছু করবেনা সে ব্যাপারে সে নিশ্চিত হয়েছে তাই কথার পিঠে কথা বলে বসলো,” আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?” বলে টয়া উঠে বসতেই ইয়াদ হাত ধরে টয়াকে বিছানার সাথে আটকে রেখে টয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো টয়া কিছু বলতে গেলো ইয়াদের চোখে চোখ পড়ায় চুপ করে গেলো। ইয়াদ হটাৎ যেনোএক ঘোরের মাঝে চলে গেলো। ইয়াদের নিশ্বাস টয়ার মুখে পড়তেই শরীরে শীতল শিহরন বয়ে গেল। এইবার ও ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিবে ভেবে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে টয়া। কিন্তু হটাৎ ইয়াদের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে টয়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তারপর নিমিষেই চোখ বন্ধ করে ফেললো।
কিছুক্ষণ পর ইয়াদ সরে আসতেই টয়া মুখ ঘুরিয়ে হাপাতে লাগলো। উচিৎ শিক্ষা হয়েছে তার কেনো যে বেশি কথা বলতে যায়। ইয়াদ নিশব্দে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এই নিরবতায় টয়ার অসস্তি লাগছে। আবার কি করে বসবে কে জানে।
ইয়াদ নিরবতা ভেঙে বললো,” শেষ পর্যন্ত বাধ্য করলে আমায়। চুপ চাপ থাকলে কি সমস্যা হতো তোমার। এর পর আর একটা কথা বলেছো আমি সেন্টেন্সের ওয়ার্ড গুনে গুনে ঠিক ততটা কিস করবো।”
ইয়াদের কথা শুনে টয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে। টয়া ইয়াদের দিকে ফিরতেই, ইয়াদ টয়াকে আশ্বস্থ করে বললো,” I mean it।”বলে ইয়াদ টয়ার উপর থেকে সরে গেল। টয়া চাপতে চাপতে বিছানার একদম কোনায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করতেই বুকের ভিতরটা কেমন যেন একটা করে উঠলো।

সকালে টয়া ইয়াদের আগে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়। টয়ার চুল এলোমেলো হয়ে আছে চুল থেকে রাবারব্যান্ড খুলে সে আবার বোকা হয়ে গেলো। সে কোথায় ভেবেছিলো কোনো মেয়ের রাবারব্যান্ড আসলে টাকা বাধার রাবারব্যান্ড দিয়ে ইয়াদ তার চুল বেধে দিয়েছে।ভাগ্যিস সে ইয়াদের আগে ঘুম থেকে উঠেছে। ইয়াদের সামনা সামনি কি করে হবে টয়া বুঝতেই পারছিলো না কাল রাতের পর থেকে। টয়া তাড়াতাড়ি সকালের নাস্তা বানিয়ে ফেললো পরে দরজা খুলে দিতে গেলে হয়তো বলবে আমার নাস্তাও তুমি বানিয়ে দেও তখন? আগে ভাগে ঝামেলা শেষ করে রাখলেই ভালো।
টয়া নাস্তা গুলো টেবিলের উপর ঢেকে রেখে দিল। এবার শুধু হিটলারের ঘুম থেকে উঠার অপেক্ষার পালা। টয়ার চোখ হটাৎ দরজায় লাগানো একটা পিংক স্টিকি নোট দেখতে পেলো টয়া এগিয়ে গিয়ে সেটা হাতে নিলো। সেখানে লেখা:

Password hint : Arniha tabassum toya

ইয়াদ রাতে উঠেই hint লিখে রেখেছিল কারন সকালে সে চায় না টয়া ভার্সিটির জন্যে লেট হয়ে যাক। ইয়াদ অনেক রাতে ঘুমালে তার সকালে উঠতে দেরি হয়। নিজের নামের hint তো টয়া বুঝবেই চাইলে password লিখে দিতে পারতো তবে টয়াকে বিরক্ত করার সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। এদিকে টয়া পিংক স্টিকি নোট হাতে দাড়িয়ে আছে তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। এইখানে লেখা hint অর্নীহা তাবাসসুম টয়া কিন্তু password এ তো সব নাম্বার কোনো অ্যালফাবেট তো লিখার অপশন নেই। তার পুরা নামে কয়টা অ্যালফাবেট আছে অর্নিহাতে আছে পাঁচটা তারপর তাবাসসুমে
আছে আটটা তারপর টয়াতে আছে চারটা তাহলে পাসওয়ার্ড হবে 684। টয়া এটা বের করতেই কয়েকমিনিট ব্যায় করে দিলো। অবশেষে 684 দিয়ে দরজা খুলে খাচা ছেড়ে যেনো বেড়িয়ে এলো টয়া। কি যে শান্তি লাগছে সেটা শুধূ সে নিজেই জানে। তবে পাসওয়ার্টার কাহিনি অদ্ভুত লাগল তার কাছে ইয়াদ এই কাজ কেনো করবে।

ইয়াদ ঘুম থেকে উঠে প্রথমে টয়াকে খুজলো কোথাও নেই মানে সে চলে গেছে টেবিলে খাবার দেখে ইয়াদ একটু অবাক হলো কিন্তু অজান্তেই মূখে হাসি চলে এলো।

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ২২ :#মুখোমুখি
লেখিকা :#নবনী_নীলা

টয়া কয়েকবার কলিং বেল বাজলো এই রিতুর বাচ্চা মরার মতো ঘুমাচ্ছে মনে হয়, দরজা খোলার নাম নেই। অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর রিতু চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুললো। ঘুমে চোখ জড়িয়ে এসেছিলো তবে টয়াকে দেখে ঘুম চলে গেছে। গেছিলো কাল রাতে ফিরেছে আজ সকালে? করেছে টা কি সারারাত। রিতুর চাহিনি টয়াকে আরো বিব্রত করছে এই মেয়ে আবার বেশি বুঝে সব কাজে। টয়া কোনো কিছু না বলে বড় বড় পা ফেলে নিজের রূমে গিয়ে শুয়ে পড়বে ভেবেছে কারন কিছু বলতে গেলেই এই মেয়ে হাজারটা প্রশ্ন করবে। যেই ভাবা সেই কাজ টয়া সুর সুর করে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল। টয়া এতক্ষন বাহিরে দাড়িয়ে ছিলো অথচ চেঁচামেচি করলো না বিষয়টা রিতুর হজম হচ্ছে না। নিশ্চই ভয়ংকর কিছু হয়েছে। রিতু পিছু পিছু গিয়ে টয়াকে প্রশ্ন করলো,” গেছিলি কাল রাতে আইলি আজ সকালে কাহিনী কি? ”
টয়া এড়িয়ে যেতেও পারবেনা কারন তানা হলে রিতুর মনে সন্দেহ জাগবে আর সেটা হতে দেয়া যাবে না। টয়া শুকনো গলায় বললো,” কই কিছু না তো। আসলে কথা বলতে বলতে দেরী হয়ে গেছিলো।”
রিতুর সন্দেহ আরো বেড়ে গেলো কারন সে ঐ মেয়েকে কিছুক্ষণ পরেই বেরিয়ে যেতে দেখেছে, তাহলে কি টয়া সারারাত ইয়াদের সাথে কথা বলেছে রিতু মাথার চুলগুলো এক পাশে এনে বললো,” তুই সারারাইত ইয়াদের লগে কথা বলসস। ঐ মাইয়্যা তো অনেক আগেই বাহির হইয়া গেছে দেখলাম।”
টয়ার মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে কি বলবে সে নিজেই বুঝছে না। টয়া বিচলিত হয়ে বললো,” আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো, পরে তোকে বলবো।”
এই কথা শুনে রিতুর সন্দেহ বেড়ে গেলো যে মেয়ে কই মাছের মতো ছোটফট করে সে মেয়ে এতো শান্ত গলায় কথা বলছে রিতু টয়ার চারপাশ ভালো করে দেখতে লাগলো। টয়া বার বার শুধু ঠোঁট কামড়াচ্ছে এই রিতুর বাচ্চা এমন করছে কেন? অসহ্য লাগছে। টয়া গলা ঝেড়ে বললো,” কি করছিস? এভাবে আমার চারপাশে ঘুরছিস কেনো?”
” তোদের মধ্যে কি কিছু হইসে? একসাথে ছিলি কিছু তো নিশ্চই হয়েছে।”, একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো রিতু।
টয়া বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। টয়া একটা রাগ দেখিয়ে বললো,” কিসব বলছিস?”
” কিছু না হলে বার বার ঠোঁট কামড়াচ্ছি কেনো? কিস করেছে তোকে ! নাকি অন্য কিছু হয়েছে। এক মেয়ে অর এক ছেলে একসাথে সারারাত ছিলো কিছু না হয় কিভাবে?” রিতুর কথায় লজ্জায় টয়া লাল হয়ে গেল। সেই অনুভূতির কথা মনে পড়তেই শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।
” এতো বেশী বুঝিস কেনো?”, একটা ঝাড়ি মেরে রিতুকে চুপ করানোর চেষ্টা করে টয়া।
” কি করছে রে? ঝাড়ি টাও দেখি ঠিক মতন দিতে পারছিস না!”, টয়া হুড়মুড়িয়ে নিজের রূমে ঢুকে সজোড়ে দরজা লাগিয়ে ফেললো।

যতক্ষন রিতু বাসায় আছে টয়া রুম থেকেই বের হবে না ভেবে অনেক্ষন নিজের রুমে বসে ছিলো তবে শেষমেশ বাধ্য হয়েই রুম থেকে বেরিয়ে আসতে হলো। খিদে লেগেছিল তার, আজ ভার্সিটিতে যাওয়া হয়নি তার। বেরিয়ে রিতুকে না দেখে খুব শান্তি লাগছে তার। রিতু নিশ্চয় ভার্সিটিতে গেছে। টয়ার কয়েকটা পাউরুটি টোস্ট করে খেয়ে নিলো কিছু করে খেতে ইচ্ছে করছে না তার। ফোন হাতেbনিয়ে দেখে নিরবের অনেকগুলো মিসড কল এসেছে। টয়া ফোন হাতে নিতেই আবার টয়ার ফোনে নিরবের কল। টয়া ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই নিরব চিন্তিত গলায় বলল,” কি হয়েছে তোর ফোন দিলে ফোন ধরিস না কেনো। ঠিক আছিস?”

” আরে না তেমন কিছু হয় নি। একটু ব্যাস্ত ছিলাম। তোর কি অবস্থা বল।”

” আমার সাথে এখন দেখা করতে পারবি? দরকার আছে।”

” হুম, পারবো তবে ট্রিট দিতে হবে।”

” হ্যা সেতো তুই আমাকে ফকির বানিয়ে ছাড়বি আমি জানি।”

” ভালো হবে দুজনে একসাথে বসে ভিক্ষা করবো। এখন ফোন রাখ। আমি রেডি হবো।”

টয়া ফোন রেখে রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো।
রেস্টরেন্টে টয়া নিজের প্রিয় খাবার গুলো সামনে নিয়ে আরাম করে খাচ্ছে। নিরব হাঁটুর উপর এক পা তুলে বসে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। নীরব ভ্রু কুঁচকে বললো,” এতো খাইতে পারোস তুই! আজ পর্যন্ত আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড দুসপ্তাহেও এতো খায় নাই।”
” প্রেম করিস তো সব শুঁটকি মাছের সাথে। একেকটাকে ফু দিলে উড়ে যাবে। সবগুলো তো ফিগারের চিন্তায় খায় না।”, কটাক্ষ করে বললো টয়া।
” তুই মনে হয় খুব শক্তিশালী।”, আড় চোখে তাকিয়ে বলল নিরব।
” তোর শুঁটকি মাছগুলোর থেকে বেটার। তা মিস্টার রোমিও আপনার এ দশা কেনো?”, জুসের গ্লাসটা নিজের দিকে নিয়ে বললো টয়া।
” ওদের কথা বলিস না। আর প্রেমটেম করবো না। এরপর সোজা বিয়ে।”, এক হাত টেবিলেরেখে বললো নিরব।
” তোকে কে বিয়ে করতে যাবে? সেধে সেধে কার কুয়ায় লাফ দিতে ইচ্ছে হবে “, উপহাস করে বললো টয়া।
” কেউ না করলে তুই তো আছিস।”, একটু হেসে বললো নিরব।
বিয়ের কথা শুনেই টয়ার মুখটা কেমন যেন হয়ে গেলো। মনে পড়ে গেলো ইয়াদ আর তার বিয়ের কথা। টয়া যেনো কোথাও হারিয়ে গেলো।
” আরে চিল। মজা করছিলাম তোকে বিয়ে করলে হয়েছে আমার মাথা খারাপ করে দিবি তুই।”, তুরি বাজিয়ে বললো নিরব। শব্দে টয়ার হুশ ফিরল টয়া নড়ে চড়ে বললো,” কি জন্যে ডেকেছিস সেটা বল।”
নীরব দুই হাত টেবিলের সামনে রেখে বললো,” তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড তাই বলছি এক ঘটনা শুন,” টয়া ভালোমত শুনতে মাথা আরো এগিয়ে আনলো।
” সেদিন আমি বাইক নিয়ে বেড়িয়েছিলাম। রাস্তায় কাদা ছিলো বৃষ্টির কারণে তাই ভূল বসতো বাইক কাদা উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ে এক মেয়ের গায়ে কাদার ছিটকে যায়।”, এতটুকু শুনে টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” বেয়াদব কোথাকার! চোখ কি বন্ধ করে গাড়ী চালাস।”
” চুপ কর! পরে কি হলো শুন। আমি ভদ্রতার খাতিলে বাইক থামিয়ে মেয়েটিকে sorry বলতে এগিয়ে গেলাম। মেয়েটির জামায় কিন্তু বেশি কাদা লাগে নি। এদিক মেয়েটা পুরা ধানি লঙ্কা। তারপর কি কি যে কোথা শুনালো বিশ্বাস করবি না মানুষ জড়ো হয়ে গেছিলো। শেষমেশ কোনো ভাবে কেটে পড়েছিলাম। মেয়েটা sorry শুনার পর বললো,” আপনার সরি দিয়ে আমি কি করবো? আপনার সরি দিয়ে কি আমার কাপড় কাচা হবে নাকি জামার দাগ উঠে দৌড় দিবে?” বিশ্বাস করবি না অমন মেয়ে বাপের জন্মে দেখি নাই। আমি জামার দাম দিয়ে দিতে চাইলাম বলে কিনা দাম দেওয়া লাগবে না জামাটা ধুয়ে দিলেই হবে। ভাব আমাকে বলছে কিনা তার জামা ধুয়ে দিতে।”, নিরবের এই কাহিনি শুনে টয়া পেট ধরে হাসতে লাগলো।

নিরব টয়ার হাসি দেখে বললো,” হাসি থামা। ওই মেয়েটাকে তুই খুজে বের করবি, এই জন্যে তোকে ডেকেছি।”, টয়া অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললো,” ওই মেয়েকে দিয়ে তুই কি করবি? আর আমি কই থেকে ঐ মেয়েকে খুজবো। ”
” পারবি মেয়েটার গলায় তোদের ভার্সিটির আইডি কার্ড ছিলো। নাম রোল দেখে নিলে ভালো হতো but it’s ok। তুই খুজে বের করতে পারবি।”, নিশ্চিত হয়ে বললো নিরব।
“তাতে আমার কি লাভ?”, একটা ভ্রু তুলে বললো টয়া।
” তোদের এনজিও তে আমি ডোনেট করবো। আর একবছরের Netflix এর বিল আমি pay করবো।”

” বাহ্ । মেয়েটা দেখছি তোর মনে একেবারে বসে গেছে। ok Then deal done।”, টয়া একটু চিন্তা করতে লাগল কিভাবে মেয়েটাকে খুজে বের করবে।

টয়া আর নিরব কথা বার্তা শেষে এনজিও তে গিয়ে কিছু কাজ সেরে নিলো, সেগুলো করতে করতে রাত হয়ে গেলো। ফ্ল্যাটে ফিরলো রাত ৯টায়। আজ ইয়াদ আগেই কাজ শেষে ফ্ল্যাটে ফিরেছে। রাতে একবার প্রভাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা আছে স্যারের অবস্থা নাকি যত সময় যাচ্ছে ততই খারাপ হচ্ছে। একবার গিয়ে দেখে আসাও দরকার। ইয়াদ সে কারণেই বের হচ্ছিল ইয়াদ লিফটের দিকে যাবে এমন সময় টয়া আর নিরব লিফট থেকে একসাথে বের হলো। ইয়াদ ব্যাপারটা খেয়াল করলো না সে নিজের রুমের কার্ডটা মানিব্যাগ এ ভরতে গিয়ে ভুল করে আইডি কার্ড সহ কিছু কার্ড ফেলে দেয় আর ইয়াদ সেগুলো তুলতেই বেস্ত হয়ে পড়ে। টয়া ইয়াদকে দেখেই পালাই পালাই করছে ইয়াদ ব্যাস্ত থাকায় সে এসুযোগে কেটে পরতে চাইলো। কিন্তু এই নিরব নামক আপদ ইয়াদের কার্ডগুলো তুলতে সাহায্য করতে গেলো। টয়া ইয়াদের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো যাতে ইয়াদ তাকে না দেখে। এদিকে তাড়া দুজনই কার্ডগুলো তুলে উঠে দাড়ালো। ইয়াদ উঠে দাঁড়িয়ে নিরবকে দেখে চোখ মুখ শক্ত করে ফেললো।
নিরব ইচ্ছে করেই ইয়াদের হেল্প করতে গেলো কারন এর আগে গালফ্রেন্ডে বলার কারণে টয়া অনেক রাগ করেছিলো তাই এসুযোগে সবটা মিটিয়ে নেওয়া যাবে। এদিকে পিছে টয়ার ইচ্ছে করছে নিরবের কান ধরে টেনে নিয়ে আসে। আজ খুব মানবদরদী হয়ে উঠেছে বেয়দপটা।

ইয়াদ নিরবকে দেখে মোটেও খুশী হয় নি চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে। নিরব এসেছে তার মানে এতক্ষন টয়া নিরবের সাথে ছিলো ভেবেই ইয়াদের রাগের পরিমাণটা বেড়ে গেলো। নিরবের হাতে ইয়াদের আইডি কার্ড সেটার দিকে তাকাতেই নিরবের চোখ মুখ কুচকে গেলো। ইয়াদ আফরান নামটা পরেই নিরব টয়ার দিকে তাকালো। নীরব এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো টয়া বুঝতে পারছেনা তাড়াতাড়ি কার্ড দিয়ে চলে এলেই পারে। ইয়াদ নিরব এভাবে কি দেখছে ভাবতেই ইয়াদ পিছে ফিরল টয়া পরে গেলো মহা বিপদে। টয়া এখানে তারমানে দুজনেই এক সাথে ছিলো। ইয়াদ রাগটা সামলাচ্ছে কোনো
ভাবে।
” ইয়াদ আফরান “, হিংস্রতার সাথে নিরব বলে উঠলো। ইয়াদ একটু অবাক হয়েই নিরবের দিকে তাকালো। সাহস হচ্ছে কিভাবে এই ছেলের এভাবে আমার নাম ধরে ডাকার। নিরব কিছু বলে উঠার আগেই টয়া নিরবের হাত থেকে কার্ডটা নিয়ে ইয়াদের দিকে এগিয়ে দিলো। ইয়াদ কার্ডটা হাতে নিয়েই নিরবের দিকে তাকালো। টয়ার যে করেই হোক নিরবকে ইয়াদের সামনে থেকে সরিয়ে নিতে হবে। নিরব সেদিনের পুরো ঘটনাটা জানে সেদিনের পর টয়া ভীষণ ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে তার জন্যে নিরবের ইয়াদের প্রতি ক্ষোভ জমে আছে। ইয়াদের কোন অধিকার নেই সেদিন টয়াকে এতগুলো কথা শুনানোর। সেদিন যা হয়েছিলো তারপর টয়া যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্যে দায়ী ইয়াদ। অবশেষে ইয়াদের মুখোমুখি হলো নিরব।
নিরব ঝাঁঝালো গলায় বলল,” আপনি সেই… বাকিটা বলার আগেই টয়া নিরবের হাত ধরে থামলো তারপর বলল,” দেরী হয়ে যাচ্ছে চল।” টয়া নিরবকে টেনে নিয়ে আসতে লাগলো নিরব নিজের রাগ সামলে নিলো। টয়া কেনো তাকে থামলো সেটার উত্তর টয়াকে দিতেই হবে।
ইয়াদের মাথায় যেনো রক্ত উঠে গেলো। টয়া তার সামনে কিভাবে অন্য ছেলের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো। এই বিষয়টার একটা হেস্ত নেস্ত হতে হবে। ইয়াদ এই ব্যাপার আর নিতে পারছে না। ইয়াদ রেগ সামলাতে না পেরে দেওয়ালে গিয়ে হাত দিয়ে সজোড়ে আঘাত করলো।

টয়া নিরবকে রুমের ভিতরে নিয়ে এলো। ভিতরে এসে নিরব হাত ছাড়িয়ে শাসিয়ে বললো,” থামালি কেন আমায়? অপমান কাকে বলে আমিও দেখিয়ে দিতাম। এই ছেলের সাথে তুই পাশাপাশি ফ্ল্যাট আছিস। তুই আছিস কিভাবে? সবটা জেনেও তোর উচিৎ ছিল আমাকে জানানো। ”
টয়া হাত উঠিয়ে নিরবকে থামিয়ে বললো,” তুই খুব ভালো করেই জানিস যা হয়ে গেছে সেটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। আমি ভাবতেও চাই না। সেটা আমার জীবনের অন্ধকার একটা অধ্যায়, সে অধ্যায়ের পাতা উল্টে আমাকে কষ্ট দিস না।”
” ওকে আমি ছেড়ে দিবো তুই এটা বলছিস?”, দাতে দাত চেপে বললো নিরব।
“যাকে আমি ধরে রাখিনি তুই ছাড়তে পারবি না কেনো?। আমি নিজের দুর্বলতাটা অন্য কাউকে দেখাতে চাই না।”, শুকনো গলায় বলল টয়া। কলিং বেল বেজে উঠলো হটাৎ। টয়া নিরবকে ঠাণ্ডা হতে বললো তারপর ওকে রুমে বসিয়ে বাহিরে এলো। দরজা খুলে ইয়াদকে দেখে ভয়টা বেড়ে গেলো টয়ার। টয়া উপায় না পেয়ে দরজা লাগিয়ে দিতে নিলো তখনি ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে ওকে কাধে তুলে নিলো। টয়া চিৎকার করতে নিলো কিন্তু করতে গিয়েও থেমে গেলো। চিৎকার করলেই নিরব ভিতর থেকে এসে পড়বে তারপর যা হবে সেটা টয়া ভাবতেও পারছে না। টয়া ইয়াদের পিঠে মুষ্টি বন্ধ হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে আঘাত করতে লাগলো।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here