তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ২৩,২৪

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ২৩,২৪
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ২৩ :#তোমাকে_চাই

ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে ওকে কাধে তুলে নিলো। টয়া চিৎকার করতে নিলো কিন্তু করতে গিয়েও থেমে গেলো। চিৎকার করলেই নিরব ভিতর থেকে এসে পড়বে তারপর যা হবে সেটা টয়া ভাবতেও পারছে না। টয়া ইয়াদের পিঠে মুষ্টি বন্ধ হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে আঘাত করতে লাগলো। ইয়াদ নিজের রুমে যেতেই টয়া জোড়ে জোড়ে চেঁচাতে লাগলো,” ছাড়ুন আমাকে। ছাড়ুন। কি শুরু করেছেন?”
ইয়াদ টয়াকে নিজের রুমে নিয়ে গেল তারপর নামলো। ছাড়া পেয়ে টয়া কিছু বলার আগেই ইয়াদের চোখে চোখ পড়তেই টয়া নিজেকে শান্ত করে নিয়ে বললো,”আপনার কি মাথা খারাপ হয়েগেছে? সরুণ আমাকে যেতে দিন। আমি চাই না কোনো ঝামেলা হক।” শুকনো গলায় বলল টয়া।
ইয়াদ গম্ভীর গলায় বললো,” কে ঝামেলা করবে? ঐ ছেলে? করুক ঝামেলা আমিও দেখতে চাই ঐ rascal টা কি ঝামেলা করে।”
” দেখুন সমস্যা বাড়াবেন না। আমাকে যেতে দিন।”, বলেই টয়া ইয়াদকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে দেওয়ালের সাথে দাড় করিয়ে তারপর দুপাশে হাত রেখে বললো,” আমি সমস্যা বাড়াচ্ছি? আর তুমি যে আমার কাছ থেকে পালাচ্ছ। তুমি যে সবটা ভুলে আছো?”
টয়া এতক্ষন নিচের দিকে মাথা করে তাকিয়ে ছিলো ইয়াদের শেষের কথায় টয়া মাথা তুলে বললো,” কি মনে রাখার কথা বলেছেন? আর এখন এসব কেনো করেছেন? চাইছেন টা কি? কেনো ফিরে এসেছেন?”, তিক্ততার সাথে বললো টয়া তারপর মুখ ঘুরিয়ে রাখলো।

” তোমাকে বলতে হবে কি চাইছি? বুঝতে পারো না। তোমাকে চাইছি। এবার বুঝেছ।তোমার খোঁজে ফিরে এসেছি।”, টয়ার খুব কাছে গিয়ে জোর গলায় বললো ইয়াদ।

টয়া চোখ বন্ধ করে ফেললো, তারপর আস্তে আস্তে চোখ খুলে ইয়াদের দিকে তাকালো। চোখের কোনে অশ্রু জমেছে তার। সে ছল ছল চোখে তাকিয়ে থেকে বললো,” সব কি আপনার ইচ্ছে মতন হবে? আজ বলছে আমাকে চাইছেন আর সেদিন তো চেহারাও দেখতে চান নি। কি জানি বলেছিলেন আমি কাজ ছেলে ফাঁসানো তা আজ কেনো এই ছেলে ফাঁসানো মেয়েটাকে চাইছেন? আজ হটাৎ করে কি এমন হয়েছে যে সেই মেয়েটিকে আপনার দরকার।” এতটুকু বলতেই টয়া টয়ার চোখ বেয়ে পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পরতে লাগলো।
ইয়াদ অপরাধী চোখে তাকিয়ে আছে। ভিতরটা কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছে। টয়া অন্য দিকে তাঁকিয়ে চোখ মুছে কয়েকটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,” জানেন আমি, সেই ষোলো বছরের মেয়েটা কক্ষনো জানতোই না সে কতটা জঘন্য। আপনার কয়েকটা কথায় আমার সেই সুন্দর পৃথিবীটা কালোমেঘে ঢাকা পরে যায়।সেই মেয়েটা বদলাতে শিখেছে অন্ধকারে ঘুমাতে শিখেছে, নিজের চুল বাঁধতে শিখেছে। আপনি জানেন আপনি ছিলেন সেই মেয়েটির ছোটো ছোটো খুশির উপলক্ষ। আপনি বললেন না আমাকে চান কিন্তু কেনো? ইয়াদ আর টয়ার যেখানে শুরু হয়েছিল আপনি ঠিক সেই জায়গায় গল্পটা শেষ করে দিয়েছেন। আজ আমি অর্নীহা সেই টয়া অর নেই যে কিনা একসময় আপনার পড়ার টেবিলের দিকে তাকিয়ে ঘুমাতো, যে কিনা আপনার পিছু পিছু যেতো।” বলতেই টয়া থেমে গেলো আর কথা বলতে পারছে না সে খুব কষ্ট হচ্ছে।

ইয়াদ একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,” আমি এতটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ভাবতে পারিনি।”
” নাহ্ আপনার কোনো দোষ নেই আপনি সেটাই করেছেন যেটা আপনার মনে হয়েছিল। যা আপনি বিশ্বাস করেন। আমি একটা খারাপ মেয়ে কথাটা তো সত্যি। আমি তো ছেলে ফাসাই আপনাকেও দেখুন কিভাবে ফাঁসিয়েছি, আমি বুঝলেন না। হটাৎ করে ইয়াদ আফরান এতো বোকা হয়ে গেলো যে সেই মেয়েটিকে চায়।
শুনুন আমি জানি আমরা এমন একটা সম্পর্কে জরিয়ে গেছি যেখান থেকে বেরিয়ে আসাটা অনেক কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। “, বলতে গিয়ে টয়ার কণ্ঠ কেপে উঠলো।
ইয়াদ অনেক কষ্টে কথা গুলো শুনছে সে ভুল করেছে আর এই কোথাগুলো টয়া তাকে শোনানোর অধিকার রাখে। কিন্তু সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে। টয়া আর সময় নষ্ট করলো না সে বেরিয়ে যেতে নিলো ইয়াদ টয়াকে জরিয়ে ধরলো। টয়া আর কোনো কথা বলতে পারলো না। নিশ্চুপে ইয়াদ কিছুক্ষণ টয়াকে জরিয়ে রাখলো। ইয়াদ যে সেই মেয়েটিকেই ভালোবাসে এই কথা কি টয়া বুঝবে না। ইয়াদ টয়াকে আবার হারানোর ভয়টা জেগে উঠলো। টয়ার এই ঘৃনা ইয়াদমেনে নিতে পারছে না।

নিরব অনেক্ষন ধরে বসে আছে টয়া যে কোথায় গেলো ফিরার নাম নেই। নিরব ঘরে হাটাহাটি করতে লাগলো। এদিকে রিতু শাওয়ারে ছিলো এতক্ষন টাওয়াল দিয়ে মাথা মুড়িয়ে সে বের হয়। গোসলের পর কি যে ফুরফুরা লাগে, রিতু আয়নার সামনে গিয়ে চুল খুলে গাইতে লাগলো,” dy-na-na-na, na-na , na-na-ayy light it up like dynamite.” গান গাইতে গাইতে খাটে উঠে নাচতে লাগলো রিতু। হটাৎ গানের আওয়াজে নিরব চমকে উঠলো। গান গাইছে কে এ বাসায়, নিরব গান আওয়াজের দিকে হাঁটতে লাগলো। রিতুর রুমে এসে রিতুকে দেখে নিরব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। এই সে মেয়ে যে তাকে বলেছিলো জামা ধুয়ে দিতে। বাহ্ এতো সহজে একে পেয়ে যাবে নিরব ভাবে নি। রিতু নিজের মতো নাচানাচি করছিলো হটাৎ দরজার দিকে নজর পড়তেই নিরবকে দেখে রিতু গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগল।

” ডাকাত ডাকাত, বাঁচাও আমাকে। কে কোথায় আছো।”
রিতুর চিৎকারে নিরবের কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার অবস্থা নিরব জোড়ে একটা ধমক দিয়ে বললো,” চুপ। একদম চুপ।”
ধমকে রিতু চুপ করে গেল তবে ভয় কমে নি।

নিরব কান থেকে হাত নামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমার মতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলেকে তোমার ডাকাত মনে হয়? Like seriously!”

” কিসের হ্যান্ডসাম ? দেখেই বুঝা যায় আপনি আগে মুরগি চুরি করতেন। আমাদের গ্রামে আপনার মতো কতো মুরগি চোর আছে। বুঝি না ভেবেছেন?”, ঠাস ঠাস করে বললো রিতু।
নীরবের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো।” What the hell? আমি….. আমাকে তোমার মুরগি চোর মনে হচ্ছে? How dare you? Stupid girl।”

রিতুর এখন মনে পড়েছে এই সেই বাইকওয়ালা এতক্ষন ঠিক খেয়াল করেনি সে। টয়া বিছানা থেকে নেমে এসে শাসিয়ে বললো,” আমি stupid আর নিজে কি? বদমাইশ পোলা। ঘরে হান্দ্দাইসোস কেমনে?”

শেষের কথা নিরব কিছুই বুঝলো না। কথাটা যেনো নীরবের মাথার উপর দিয়ে গেলো,” what! যা বলছো ভালো করে বলো। What is this হন্দ্দা ?”

” ওরে আমার ঘেটুপুত্র কমলা কিচ্ছু বুঝে না। আপনি ঘরে ঢুকলেন কিভাবে?”, কড়া গলায় বললো রিতু।
” Listen আমি কোনো ঘেটু কমলা নই।”, শাসিয়ে বললো নিরব।
” আরে ধুর। আপনি কি জন্যে আসছেন সেটা বলেন। নিশ্চই টয়া খুইল্লা দিছে দরজা। আচ্ছা সমস্যা নাই জামাটা ধুইয়া দিতে আসছেন তো। আসেন, যদিও আমি ধুইছি।”, বলে হাতের ঈশারায় দেখিয়ে দিলো।
নীরবের বিস্ময়ের সীমা রইলো না। এই মেয়ে এত অদ্ভুত কেনো? নিরব হা কোরে রইলো কিছুক্ষণ তারপর কিছু বলার আগে মলিন চোখে বাসায় আসলো টয়া। নিরব টয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,” এই মেয়ে আমাকে কি বলেছে জানিস আমি নাকি মুরগি চোর।”
রিতু তেজী গলায় বলে উঠলো,” অবশ্যই।”
টয়া কোনো কথাই শুনলো না। ইয়াদের বলা শেষ কথাটি তার কানে বাজছে। টয়া যখন চলে আসছিলো ইয়াদ পিছন থেকে বলেছিলো” তোমায় আমি ছাড়ছি না। তোমার কাছে আমি অসহ্য হলেও তোমায় আমার কাছেই থাকতে হবে। আবার তোমায় আমি হারিয়ে যেতে দিবো না।”

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
[পর্বঃ২৪ :#মাথা_ব্যাথার_ওষুধ
লেখিকা :#নবনী_নীলা
“তোমায় আমি ছাড়ছি না। তোমার কাছে আমি অসহ্য হলেও তোমায় আমার কাছেই থাকতে হবে। আবার তোমায় আমি হারিয়ে যেতে দিবো না।” ভাবতে ভাবতে টয়া এক ঘোরের মধ্যে চলে গেলো। কেনো জানি ইয়াদের কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইয়াদ কি তাকে সত্যিই ভালোবাসে? হয়তো আজ সে আগের মতো নেই তাই সেই টয়া। যে তার পিছু পিছু ঘুরতো তাকে তো তার পছন্দ ছিলো না। এসব মাথায় ঘুরছিল টয়ার এমন সময় নিরব হাত দিয়ে তুরি বাজিয়ে বলল,” এই মেয়েটাকে চুপ কর।”
টয়ার মেজাজ বিগড়ে গেলো এমনেই নিজের যন্ত্রণায় বাঁচে না এই দুইটা আবার কি শুরু করছে।
” আমি চুপ করুম না। “, টয়া রিতুকে থামিয়ে বলল,” কি সমস্যা তোদের? এমন করছিস কেনো?”
নিরব তীক্ষ্ণ গলায় বললো,” এটাই সে মেয়েটা।”
টয়া অবাক হয়ে বললো,” রিতু! ” বলেই রিতুর দিকে তাকালো তারপর বললো,” ঠিক আছে। এমন কাজ ওই পারবে করতে। খুব ভালো করেছিস রিতু। আমার এই ভাইটাকে একটু শিক্ষা দে।” বলেই রিতুকে বাহবা দিলো।
নিরব কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেন, টয়া ওকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে কেনো। রিতু হাহাহাহা করে জোড়ে হেসে বললো,” আজ এমন শিক্ষা দিবো জীবনেও ভুলতে পারবে না।”
নিরব টয়াকে শাসিয়ে বললো,” তুই কিন্তু এটা ঠিক করছিস না। তুই ওই মেয়েটার সাইড নিয়ে কেনো কথা বলছিস?”
” মেয়ে হয়ে আমি একটা মেয়েকে সাপোর্ট করবো এটা স্বাভাবিক না?”, বলে টয়া নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।

” আসেন আসেন জামাটা ভিজিয়ে দিচ্ছি ধুয়ে দিন। আজকে জামা না ধুইতে পারলে এই জায়গায় আটকে রাইখা দিবো।”, নিরব রাগে কটমট করে রিতুর দিকে এগিয়ে এসে বললো,” তোমাকে আমি দেখে নিবো। বলে রাখলাম।” বলে গড়গড়িয়ে বাহির হয়ে গেলো। রিতু নিরবকে রাগিয়ে দিয়ে বেশ মজা পাচ্ছে। রিতু আবার গান ধরলো ” dy-na-na-na na-na na-na-ayy”

টয়া নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে হাঁটু ভাঁজ করে তার উপর মাথা রেখে চুপ করে বসে আছে। তার কিছুই ভাল্লাগছে না অন্যদিকে ইয়াদ টয়ার ঘড়িটা হাতে নিয়ে বসে আছে। দুজনেই কষ্টে আছে কিন্তু কেউ সেটা স্বীকার করবে না।

🌟
ইয়াদের প্রচুর মাথা ব্যাথা করছিলো। কিছুক্ষন শুয়ে ছিলো তাও মাথা ব্যাথা ছাড়ছে না। রাতে একটা অপারেশন শেষে বাসায় ফিরে আসার পর থেকে মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। ইয়াদ কফি নিয়ে বসেছে যদি মাথা ব্যাথাটা কোনো ভাবে কমে। এমন সময় মিলি আক্তার মানে ইয়াদের মায়ের কল আসে। ইয়াদ কলটা রিসিভ করে কানে ধরলো।

” কি হয়েছে তোর আজ সারাদিনে যে একবারও মায়ের খোঁজ নিলি না।”

” মা, আজ একটু বেশি বেস্ততায় ছিলাম। কেমন আছো তুমি?”

” হ্যা ভালো আছি।”

“আর বাবা?”

” হ্যা ভালো আছে। আচ্ছা কি করছিস এখন?”

” কিছু না কফি খাচ্ছি।”

” শরীর ঠিক আছে তোর?”

” হ্যা মা ঠিক আছি।”

” টয়া ওকে একটু ফোনটা দে তো। কথা বলিনা কতদিন। ওর নাম্বারটা হারিয়ে গেছে।”

” টয়াকে দিবো মানে ও কি আমার বাসায়?”

” উঠে গিয়ে দরজা খুল তারপর টয়ার বাসার কলিংবেল বাজা তারপর টয়া দরজা খুললে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলবি মা কথা বলবে। বুঝেছিস?”

” মা এতো রাতে? ১১টা বাজে টয়া আমার মাথা চিবিয়ে খাবে।”

” যা করতে বলেছি কর।”

ইয়াদ এমনেই মাথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে এবার নাকি টয়ার কাছে গিয়ে ফোন দিতে হবে। টয়া প্রশ্ন করে মাথা খেয়ে না ফেলে। দরজা খুলবে কিনা তাও সন্দেহ আছে। টয়া আর তার মা দুজনই নাছোড় বান্দা। ইয়াদ কিছুক্ষণ মাথা ধরে বসে থাকলো, মাথা ব্যথার ওষুধ থাকলে ভালো হতো সেটাও নেই। কল রিসিভে থাকা অবস্হায় ইয়াদ টয়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বেল বাজালো। কিছুক্ষণ পর টয়া দরজা খুলে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। সে ভিতর থেকে না দেখেই দরজা খুলেছ ইয়াদকে দেখে এদিকে ওদিক তাকাচ্ছে। ইয়াদ হাতে থাকা ফোনটা এগিয়ে দিলো। টয়া বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ইয়াদ তাকে নিজের ফোন দিচ্ছে কেনো? সে তার ফোন নিয়ে কি করবে। ইয়াদ টয়ার হাত তুলে হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে নিজের ফ্ল্যাটের দিকে চলে গেলো মাথার যন্ত্রণাটা বেশ বেড়েছে। টয়া ফোন হাতে হতবুদ্ধির দাড়িয়ে আছে। এভাবে ফোন ধরিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার মানে কি? ডাক্তার সাহেবের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
হটাৎ ফোনের থেকে আওয়াজ আসতেই টয়া স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখলো মা নাম সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা কানে নিলো। আজব মানুষ মা তোমার সাথে কথা বলবে এইটা বলতে তার কি সমস্যা ছিলো। ফোনটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো। টয়া রুমে গিয়ে অনেক্ষন কথা বললো। ইয়াদের মায়ের সাথে কথা বলার মজাই আলাদা। টয়া কথা শেষে ফোনটার দিকে তাকালো। এবার এই ফোন সে কি করবে? যার ফোন তার কি কোনো চিন্তা নেই। টয়া ভাবলো থাক ফোনটা দিতে যাবে না, যার দরকার সে নিজে এসে নিয়ে যাবে। তখনি একটা কল এলো টয়া ফোনটা হাতে নিলো নাম উঠেছে প্রতিভা। দেখেই টয়ার গা জ্বলে উঠলো একবার প্রভা আরেকবার প্রতিভা এই ছেলের জীবনে দেখছি সব প এর ছোড়াছুড়ি।এবার আবার এই ফোনটা দিয়ে আসতে হবে নিশ্চই বিশেষ কেউ ফোন করেছে।

টয়া ইয়াদের দরজার সামনে দাড়ালো দেখে তো মনে হচ্ছে দরজা খোলা। এই ছেলের কোনো কান্ড জ্ঞান নেই এভাবে কেউ দরজা খুলে রাখে। টয়া ভিতরে ঢুকে একটু ঘাবড়ে গেলো। ঘরের মাঝে শুধু একটা হালকা বাতির আলো জ্বলছে। টয়া ঘাবড়ে গেলো। ইয়াদকে খুঁজতে ইয়াদের রুমে গেলো পুরো রুম অন্ধকার করে ইয়াদ শুয়ে আছে। আলোতে চোখ খুলতে অসহ্য লাগছে তার। টয়া এসে রুমে বাতি জ্বালাতেই ইয়াদ চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় ভ্রু কুঁচকে চোঁখের সামনে হাত রাখলো। ইয়াদ বুঝতে পেরেছে টয়া এসেছে।
” টয়া লাইটটা অফ করে রাখো।”, ইয়াদের কথায় ভ্রু কুঁচকে বললো,” আপনি এভাবে অন্ধকারে শুয়ে আছেন কেনো?”
” মাথা ব্যাথা করছে, লাইট অফ করো।”, ইয়াদ চোখ খুলতে পারছেন তাই বিচলিত হয়ে টয়া লাইট অফ করে দিলো, এবার এই অন্ধকারে সে কি করবে? টয়া বেশ জোড়ে বললো,” আমি কিছু দেখতে পারছি না আপনি কোথায়? আমি যাবো কিভাবে?”
” ইডিয়ট ফোনের টর্চ অন করলেই তো পারো।”, ইয়াদ চোখ খুলে বললো।
টয়া বোকা হয়ে গেলো সত্যিই মাঝে মাঝে নিজের উপরই তার রাগ হয়। টয়া ফোনের টর্চটা জ্বালিয়ে ইয়াদকে পেলো সে মাথার নিচে দুহাত রেখে শুয়ে আছে। টয়া সামনের দিকে আলো রেখে এগিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু নীচে কি আছে সে খেয়াল করলো না। ছোটো একটা টুলের সাথে হোচট খেয়ে সামলাতে না পেরে ইয়াদের বুকের উপর পড়ে যায়। টয়ার চুলগুলো মুখের সামনে এসে পড়লো। ইয়াদ হটাৎ এমন ঘটনায় নিজেও অবাক হলো। তাও ভালো অন্য কোথাও পরে ব্যাথা পায় নি। ইয়াদ টয়ার মুখের সামনের চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বললো,” পুরো পেত্নী লাগছিলো।”
টয়া রেগে উঠে যেতে নিলো ইয়াদ টয়াকে নিজের সাথে জরিয়ে নিলো। টয়া ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছে পারছেনা। টয়া কঠিন গলায় বলল,” ছাড়ুন বলছি নইলে।”
” চিৎকার করবে? করো তুমি তো সেটাই পারো। তুমি তো এক্সপার্ট ইন সাউন্ড পলিউশন”, টয়াকে জড়িয়ে কাত হয়ে গিয়ে বললো।
” আপনার না খুব মাথা ব্যাথা করছে? এখন কি হয়েছে ? মাথা ব্যাথা উড়ে গেছে।”, রাগ করে বললো টয়া।
” মাথা ব্যথার ওষুধ তো এখন কাছেই আছে।”, বলেই টয়াকে আরো কাছে নিয়ে এলো।
” কাছে আছে খেয়ে নিন। আমাকে জলাচ্ছেন কেনো?”, নিষ্পাপ মনে প্রশ্ন করলো টয়া।
টয়ার কথায় ইয়াদ শব্দ করে হেসে বললো,” সত্যি বলছো তো?”
টয়া কিছু বলার আগেই আবার ইয়াদের ফোন বেজে উঠলো। ইয়াদ বিরক্তি নিয়ে ফোনের দিকে তাকালো। টয়াসঙ্গে সঙ্গে বললো,” আরে ধরুন ধরুন আপনার প্রভাতী ফোন করেছে। ”
প্রভাতী নামে কাউকে ইয়াদ চিনে না তাই টয়ার কথায় তার ভ্রু কুচকে গেলো। ইয়াদ হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলো। প্রতিভা নাম উঠে আছে ইয়াদের কলিগ তাহলে প্রভাতী কে?
” কে প্রভাতী? এখানে প্রতিভা ফোন করেছে।”, ইয়াদ আড় চোখে প্রশ্ন করলো।
টয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো,” ওই একই কথা প্রতিভা প্রভাতী সব তো প দিয়েই শুরু তাই না। কেনো আপনার কি গায়ে লেগেছে প্রভাতী বলায়।”
” তুমি বড্ড হিংসুটে।”, ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো ইয়াদ।
” কি আমি হিংসুটে? আমি কেনো হিংসে করতে যাবো?” ইয়াদকে হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিতে লাগলো নিজের উপর থেকে” আপনি সরুন তো। আমি যাবো।”
ইয়াদ টয়ার হাত ধরে বিছানার সাথে মিশিয়ে রাখলো।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here