তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ১৯,২০

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ১৯,২০
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ১৯

” আপনি শার্ট খুলছেন কেনো?”, হটাৎ টয়ার কথা কানে আসতেই ইয়াদ বিছানার দিকে তাকালো। টয়ার চোখ মুখের অবস্থা ভয়াবহ। ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,” তুমি ঘুমাও নি।”
” ভাগ্যিস ঘুমাই নি! আপনি কি করতে চাইছেন? শার্ট খুলছেন কেনো? ছি!আপনি এতটা..।”, বলতে নিবে ইয়াদ ধমক দিয়ে বলল,” shut up. একদম আজেবাজে কথা বলবে না। সবসময় মাথায় উল্টা পাল্টা চিন্তা।”
টয়া ইয়াদের ধমকে চুপ করে মাথা নিচু করে বির বির করতে লাগলো। আমাকে বলছে যে আমি উল্টা পাল্টা চিন্তা করি নিজে যে উল্টা পাল্টা কাজ করে বেড়ায় তার বেলায়। এখন তো নিজে সাধু।
ইয়াদ শার্ট গায়ে দিয়ে ঘুমাতে পারে না অসস্তি লাগে তাও টয়া পাশে আছে বলে সে শার্ট গায়ে রেখেই ঘুমানোর চেষ্টা করলো তাতে লাভ হলো না শরীর লাল হয়ে গেছে। টয়া ঘুমিয়ে গেছে ভেবেই শার্টটা খুলতে গিয়েছিলো জেগে থাকলে তো উল্টা পাল্টা ভেবে বসবে, কিন্ত লাভ হলো কি? টয়া যে ঘুমের ভান করে শুয়ে ছিলো কে জানত।
ইয়াদ বুঝতে পারল এভাবে বলা ঠিক হয়নি তাই আবার বললো,” শার্ট গায়ে ঘুমাতে পারি না তাই খুলছিলাম।”বলে শার্টের বাকি বোতাম গুলো খুলতে শুরু করলো। টয়া নিজে নিজে বির বির করে বললো,” হুঃ সব নাটক বুঝি না ভেবেছে।”
ইয়াদ শার্ট খোলার পর ইয়াদের পিঠের দিকে তাকিয়ে টয়ার ধরনা ভুল প্রমাণিত হওয়ায় সে অনুতপ্ত। ইয়াদের সাদা পিঠের অনেকটাই লালচে হয়ে গেছে। আর সে কিসব উল্টা পাল্টা ভেবেছিলো। দিন দিন নিজের আধোপতন হচ্ছে। ইয়াদের এমন অবস্থা দেখে টয়ার একটু খারাপ লাগছে। ইয়াদ শার্টটা টেবিলের ওপর রেখে ঘরের টর্চ লাইট দুটো বন্ধ করে দিলো। ইয়াদ বিছনায় এসে শুয়ে পড়লো। টয়ার কেমন জানি লাগছে ইয়াদের গায়ে এখন শার্ট নেই তারউপর আবার নাকি তার পাশে গিয়ে শুতে হবে। হাত পা সব ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে।
ইয়াদ টয়াকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বললো,” পেত্নী ধরেছে নাকি? এভাবে বসে আছো কেনো।”

ভুত পেত্নীর নাম শুনলেই টয়া ভয়ে কাপাকাপি শুরু করে। টয়া লাফ দিয়ে ইয়াদের কাছে ঘেঁষে বসে বললো,” আপনি এসবের নাম নিচ্ছেন কেনো?” ইয়াদ উঠে টয়ার কাছ ঘেঁষে বসে বললো,” আমি আছি তো নাকি? রিলাক্স।”
” আপনি আছেন মানে আপনি কি ওঝা নাকি?”, টয়ার কথায় ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো,” ইডিয়টের মতোন কথা বলো না। চুপ চাপ শুয়ে পড়ো।”
টয়া ইয়াদ থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে আটিসাটি হয়ে শুয়ে পড়লো সাথে সাথেই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায় টয়া।

সকালে টয়ার ঘুম ভাঙ্গলো দেরিতে উঠে সে ইয়াদকে পাশে না দেখে একটু স্বস্তি পেল। সকাল সকাল ওনার চেহারা না দেখাই ভালো। টয়া উঠে শাড়ি বদলে জামা পরে নিয়ে শাড়িটা ভাজ করছে এমন সময় ইয়াদ ঘরে ঢুকে বিরক্তি নিয়ে বললো,” বাহ্ ভালোই, আমার ঘুম নষ্ট করে নিজে ভালোই ঘুমিয়ে নিয়েছো।”
মুডটা কি ভালো ছিলো সকাল সকাল আজেবাজে কথা বলে মুড নষ্ট না করলে এনার পেটের ভাত হজম হচ্ছে না। টয়া আড় চোখে তাকিয়ে বলল,” আমি আপনার ঘুম নষ্ট করেছি? তা কীভাবে শুনি?”
ইয়াদ হাতে থাকা নাস্তার প্লেট দুটো টেবিলে রেখে বলল,” ঘুমের মাঝে হাত পা ছোড়া ছুরি করো, কীভাবে পারো এগুলো করতে? শেষমেশ তোমায় বাধ্য হয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম তারপর শান্ত হলে।”
ইয়াদের কথায় টয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো টয়ার রেগে বলল,” আপনি জরিয়ে ধরেছিলেন! এইজন্য বলেছিলাম আপনার সাথে থাকবো না। ঘুমের মধ্যে আপনাকে ঠেলে বিছানা থেকে ফেলে দেওয়া উচিৎ ছিলো তাহলে আপনি বুঝতেন।”

” সেটা করতে হলে যে আমার সাথে থাকতে হবে। তুমি কি থাকতে ইচ্ছুক?”, ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বললো ইয়াদ।

টয়া চেঁচিয়ে উঠে বললো,” কক্ষনো না।” তারপর শাড়ি হাতে বড় বড় পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।


ইয়াদ টয়াকে ফ্ল্যাটের সামনে নামিয়ে দিয়ে ক্লিনিকে গেলো। টয়া সাড়া রাস্তা মুখ ফুলিয়ে এসেছিলো। বাসায় এসে রিতুকে দেখে টয়ার মেজাজ বিগড়ে গেলো। টয়া দম দম করে হেঁটে সোফায় বসে পড়লো। রিতু টয়াকে দেখে পালাই পালাই করছে।
” তোর পেটে কথা থাকে না? শেষমেশ বলেই দিলি। তোর জন্যে আমাকে কি কি ফেস করতে হয়েছে তুই জানিস। ইচ্ছে করছে তোর গলা টিপে ধরি।”, রেগে গজ গজ করে বললো টয়া।

রিতু কটাক্ষ করে বললো,” হ তোমার লাইগ্গা আমি মইরা যাই। বাপরে বাপ কি সাংঘাতিক পোলা। আমার আছিলো প্রেজেন্টেশন ওইদিন ভালা ভালা বাহির হইসিলাম ওমা বাইর হইয়া দেখি আমার সামনে দারাইয়া রইসে। তারপর চইল্যা জামু ভাবসি কিছু কইয়া ধড়াম কইরা ফোনটা লইয়া গেছে আমার হাত থেইক্কা……..।”
” হইসে বুঝছি। তারপর তোরে ভয় দেখাইসে তুই ভয় পাইয়া সব গর গর কইরা কইয়া ফেলসস।”, মলিন চোখে তাকিয়ে বলল টয়া।
” হ ! যে ভয় পাইসিলাম।”, বলে রিতু পানি খেলো।

টয়া সোফায় গা হেলিয়ে দিলো। এমন সময়ে টয়ার ফোন বেজে উঠলো ফোনটা গাড়ীতে চার্জ দিয়েছিলো। মা কল করেছে, এখন এবার বকা খেতে হবে। টয়া নিরাশ মুখে কল রিসিভ করল একগাদা বকাও খেলো। তবে শেষের কথা শুনে টয়া খুশিতে আত্মহারা। দাদাভাই আর ভাইয়া এ সাপ্তাহে দেশে ফিরছে। যাক দিন শেষে একটা ভালো খবর তো শুনা গেলো।
টয়া খুব খুশি হয়ে গেলো। তারপর নাচতে নাচতে কিচেনে এলো। টয়াকে এতো খুশি দেখে রিতু একটা ভ্রু তুলে বললো,” কাহিনী কি? একটু আগে মুখ কালা কইরা ছিলি এখন এতো খুশি?”
টয়া কিচেন এপ্ররণ পরে বললো,” দাদাভাইরা আসবে এ সপ্তাহে ইয়েয়। চল আজকে ফাটিয়ে কিছু রান্না করি।”
” কি করবি? চল বিরিয়ানি করি।”, বলতেই যেনো রিতুর মুখে জল চলে এলো।
” আচ্ছা।”, বলে দুজনেই নাচতে লাগলো।
রিতু পিয়াজ কুচি কুচি করে কাটতে কাটতে টয়াকে জিজ্ঞেস করলো,” জিজু তোকে অনেক ভালোবাসে তাই না? কীভাবে ছুটে গেলো তোর জন্যে।”

” জিজু? কে তোর জিজু? এই নামে যদি ডেকেছিস এরেকবার খুন কইরা ফেলব তোকে।”, টয়া শাসিয়ে বললো।

” আরে আমাকে বলেছে জিজু বলতে আমি কি করবো?”, হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলো রিতু।

” তুই ডাকবি না শেষ কথা। আসছে জিজু বলতে ঢং।”, মুখ বাকিয়ে বললো টয়া।

” তোদের মধ্যের কাহিনীটাকি কিছুই বুঝি না। আমাকে একটু বলবি?”, মুখ কালো করে বললো রিতু।

” আমি নিজেও জানি না। আচ্ছা তুই আমাকে বল সাত বছর আগে যে আমাকে বলেছিলো ছেলে ফাঁসানোই আমার কাজ আজ এতো বছর পর হটাৎ তার আমার প্রতি এতো ভালোলাগা কীভাবে সম্ভব?”, আনমনে প্রশ্ন করে বসলো টয়া।

” মানে?”, অবাক হয়ে প্রশ্ন করে রিতু।

” না কিছু না।”, একটা ঢোক গিলে বললো টয়া।
” না তুই আমাকে বল।”, রিতু ভীষণভাবে জোর করতে লাগলো টয়াকে। টয়া উপায় না পেয়ে সবটা বললো।
সবটা শুনে রিতু বললো,”আচ্ছা তুই তাকে জিজ্ঞেস করলেই পারিস হটাৎ তোর প্রতি তার এমন আচরনের কারণ। আর সেদিনের ভিত্তিহিন কথা গুলোর পর আজ এতো ভালবাসার কি কোনো মানে হয়?”
টয়া একটা ছোট নিশ্বাস ফেলে বললো,” আমি জানি না। সে বলেছে তার বাবা মার কথা রাখতে আমাকে বিয়ে করেছে।”

” এই ছেলের মনে কি চলছে? আচ্ছা তুই কি ইয়াদকে এখনও?”, রিতু শেষ না করতেই টয়া বলে উঠলো ” জানি না। আমি এসব নিয়ে ভাবতে চাই না। অনেক কষ্টে সবটা ভুলতে পেরেছি আবার আমার পক্ষে সম্ভব না”
টয়া উঠে গিয়ে বাকি কাজগুলো করতে বেস্ত হয়ে গেল। টয়ার কষ্ট দেখে রিতুর ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ইয়াদকে গিয়ে প্রশ্ন করে।


টয়া রাতের দিকে বারান্দায় বসে ছিল। এখানে বসে থাকতে তার ভালো লাগছে। হটাৎ টয়ার নজর নিচের দিকে গেলো, ইয়াদের গাড়ির মতো লাগছে এতো উপর থেকে তেমন বোঝাও যাচ্ছে না। টয়া চেয়ারের পাশে থাকা চশমাটা পরে ভালো করে দেখার চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে ইয়াদের সাথে একটা মেয়ে গেট দিয়ে ঢুকলো।
এতো রাতে কে আসবে? তাও একটা মেয়ে। এই মেয়ে আবার ইয়াদের সেই পছন্দের মেয়েটা নাতো? মেয়েটাকে দেখতে হচ্ছে তো। টয়া তাড়াতাড়ি করে দরজার ফাঁক দিয়ে উকি মেরে দাড়িয়ে আছে তাকে দেখতে হবে মেয়েটা ইয়াদের ফ্লাটে যায় কিনা। অনেকক্ষন দাড়িয়ে আছে কই কেউ আসছে না জে। নাকি লিফটে একবার উপরে একবার নিচে করছে। একবার হাতেনাতে ধরি তারপর বুঝাবো টয়া কি জিনিস। শাড়ি পরা একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। ঐতো হিটলারটাকেও দেখা যাচ্ছে। কথা বলছে দুজনে এতো রাতে একটা মেয়ের সাথে ফ্ল্যাটে ঢুকছে। টয়ার ইচ্ছে করছে এক্ষুনি দরজা খুলে গিয়ে হাতে নাতে ধরে ফেলে। রিতুর টয়াকে দেখে বিস্ময়ের শেষ রইলো না। মেয়েটার কি হইসে তখন থেকে দরজার ফাঁক দিয়ে উকি দিচ্ছে।
রিতু হাত দিয়ে টয়াকে ডেকে বললো,” কি করছিস তুই?”
টয়া বিরক্তি চোখে তাকিয়ে বলল,”আস্তে কথা বল। আমাকে দেখতে দে।”
রিতু নিজেও উকি ঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করলো কিন্ত সে কিছুই বুঝলো না।
টয়া রিতুকে বললো,”আজ হাতে নাতে ধরবো বুঝেছিস।”
“কি”, রিতু প্রশ্ন করে বসলো।
“মেয়েটা ওনার রূমে ঢুকেছে।”, রাগে গজগজ করে বললো টয়া।
টয়া অনেক্ষন বাহিরে অপেক্ষা করলো কিন্তু মেয়েটাকে বের হতে দেখলো না। টয়া গিয়ে নক করে দেখবে তারা কি করছে? টয়া কিছুই বুঝতে পারছেন না। টয়া চিন্তিত গলায় রিতুকে বললো,” যাবো?”
রিতু সাহস জোগিয়ে বললো,” অবশ্যই যাবি তোর জামাই এতো অন্য মেয়ের সাথে আছে। কাহিনী কি দেখতে হইবো না। ”
টয়া মাথা নেড়ে বললো,” ঠিক বলেছিস। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।”
টয়া কোনো রকম সাহস যোগিয়ে কলিং বেল বাজলো রিতু একটু ফাঁক দিয়ে উকি দিচ্ছে। টয়া আবার দ্বিতীয় বার কলিং বেল চাপতেই ইয়াদ দরজা খুললো। ইয়াদ দরজা খুলে টয়াকে দেখে অবাক টয়া তো কখনো তার ফ্ল্যাটে আসে না।
ইয়াদ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,” তুমি?”
” হ্যা কেনো আমি আসতে পারি না?”, টয়া ঝাজালো গলায় বলল। তারপর ইয়াদকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেল। ভিতরে ঢুকতেই সেই মেয়েটাকে দেখলো সোফায় বসে আছে টয়ার ইচ্ছে করছে ঘাড় ধরে মেয়েটাকে বের করে দেয়। রাগটা সামলে নিয়ে ইয়াদের দিকে তাকালো। ইয়াদ এমন ভাব করছে যেনো সে কোনো দোষ করেনি। মেয়েটা সোফা থেকে উঠে হাসি মুখে টয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,” হেলো! আমি প্রভা”
টয়া অনিচ্ছাকৃত হাসি মাখা মুখ নিয়ে বললো,” টয়া।”

ইয়াদ বুকের কাছে হাত গুজে ভাবছে হটাৎ টয়া কি জন্য এখানে আসতে পারে। মেয়েটাকে ইয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে,” ইয়াদ তাহলে আমি যাই। আমি যা বলেছি তুমি তো বুঝতেই পারছো। প্লীজ একটু সময় করে বাসায় এসে সবার সাথে কথা বলো।”

ইয়াদ মাথা নেড়ে বললো,” হুম, আমি চেষ্টা করব। তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসবো?” টয়া মনে মনে বেঙ্গ করে বললো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসবো। ঢং!
প্রভা না সূচক মাথা নেড়ে বললো প্রয়োজন নেই নিচে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। মেয়েটা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই টয়া দেওয়ালের সাথে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে। ইয়াদ দরজা বন্ধ করে টয়ার সামনে দাঁড়িয়ে একটা ভ্রু তুলে বললো,” তুমি হটাৎ আমার ফ্ল্যাটে?”
” কি করছিলেন আপনি ঐ মেয়ের সাথে?”, গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো টয়া।

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ২০:#প্রশ্ন_পর্ব
লেখিকা:#নবনী_নীলা

” কি করছিলেন আপনি ঐ মেয়ের সাথে?”, গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো টয়া।
” আচ্ছা তারমানে তুমি এটা জানতে এখানে এসেছো?”, এক হাত পকেটে রেখে প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
টয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না এটা জানতেই তো সে এসেছিলো কিন্তু এটা বললে গন্ডগোল হয়ে যাবে। টয়া ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইল ইয়াদ ভ্রু তুলে বললো ” কি?”
” কি এমন করেছেন যে বলতে পারছেন না?”, আবার প্রশ্ন করে বসলো টয়া। ইয়াদের কেনো জানি মনে হচ্ছে টয়া jelouse।

ইয়াদ স্বাভাবিক ভাবে বললো,” আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।”

টয়া না সূচক মাথা নেড়ে বললো,”প্রশ্নটা আগে আমি করেছিলাম তাই উত্তর আপনি আগে দিবেন।”
ইয়াদ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে টয়া jelouse সুতরাং একটু রাগিয়ে দিলে মন্দ হয় না।

” তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে কি আমি বাধ্য?”, ইয়াদের এমন কথা শুনে টয়ার রাগ বেড়ে গেলো। বাধ্য না মানে? এইগুলো কি কথা। ইয়াদ এতটুকু বলে নিজের রুমের দিকে গেল সে ভালো করেই জানে টয়া নাছরবান্দা। কি হয়েছে সেটা না জানতে পারলে তার রাতের ঘুম হবে না তাই টয়া যে তার পিছু পিছু তার রূমে আসবে সেটা সে নিশ্চিৎ।

টয়া ইয়াদের পিছু পিছু তার রূমে আসে বললো,” বাধ্য না মানে অবশ্যই আপনি বাধ্য।”
ইয়াদ শার্টের বোতাম খুলতে যাবে এ কথা শুনে সে টয়ার দিকে এগিয়ে এসে বললো,” তাই বুঝি? তা তুমি আমায় হাজব্যান্ড বলে মানো বুঝি যদি মানো তাহলে নিশ্চয়ই আমি বাধ্য। তুমি কি মানো?”
টয়া কটাক্ষ করে বললো,” অবশ্যই না।”

” তাহলে তোমায় বলতেও বাধ্য নই।”, হাসি মুখে কথাটা বললো ইয়াদ। টয়ার আসল কথা জানতেই হবে কে মেয়ে? কি এমন করেছে যে পেট থেকে কথাই বের হচ্ছে না। টয়া আমতা আমতা করে বলল,” আমি কি সেই দিক দিয়ে বলেছি? আমি না মানলে কি হবে আইনত তো আমরা …… হাজব্যান্ড…. ওয়াইফ।”
বলতে বলতে থেমে গেলো।
“আচ্ছা মানছো তাহলে, তা মেয়েটা কে সেটা তুমি জেনে কি করবে?”, ইয়াদ আবার প্রশ্ন করলো।

টয়া এবার ভীষণ রেগে গিয়ে বলল,” আপনাকে কি আমি কোনো বাংলা সালের তারিখ বলতে বলেছি এতো ঘোরাচ্ছেন কেনো? আমি সহজ একটা প্রশ্ন করেছি সহজ ভাবে সেটার উত্তর দিতে পারছেন না। তখন থেকে জিলাপির মতন পেচিয়ে যাচ্ছেন। কি এমন কাজ করেছে তার জন্যে এতো কিছু শুনতে হচ্ছে।”,
ইয়াদ অবাক হয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো এতো কথা কি করে বলে সে প্রশ্নের উত্তর না জানতে পারলে মনে হয় ইয়াদের মাথা খেয়ে ফেলবে। ইয়াদ টয়াকে থামিয়ে বললো,” হয়েছে থামো। কি জানতে চাও মেয়েটা কেনো এসেছে? মেয়েটা আমার একজন সিনিয়র ডক্টর এর মেয়ে, তার বাবা একটু অসুস্থ সে বিষয়ে কোথা বলতে এসেছিলো।
টয়া সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,”তাই? শেষে যে বললো বাড়ির সবাইকে গিয়ে বুঝাতে।”
ইয়াদ বির বির করে বললো,” কি কান রে বাবা!”
” কি বির বির করেছেন? যা বলার জোড়ে বলুন।”, চেঁচিয়ে বললো টয়া।
” আস্তে!”, বলে ইয়াদ দুই আঙ্গুল দিয়ে ভ্রুয়ের উপরের অংশ ঘষে বলল,” এমন করছো কেনো? বলছিতো। আমি ওনাকে স্যার বলি তো তিনি বিদেশে গিয়ে ট্রিটমেন্ট নিতে চাইছেন না কিন্তু এই মুহুর্তে ওনার জন্যে ওটাই বেটার। বাড়ির কারো কথায় তিনি রাজি হচ্ছেন না তাই বলেছে আমি যদি পুরো ব্যাপারটা ওনাকে বুঝিয়ে বলি।”কথাগুলো বলে ইয়াদ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।

টয়া সব কথা শুনে ও আচ্ছা বলে মাথা নাড়ল। ইয়াদ নিজের গায়ের শার্টটা শার্টটা রাখতে যাবে টয়া বলে উঠে,” আপনি সবসময় এমন শার্ট খুলে ফেলেন কেনো? আজব!” ইয়াদ শার্টটা একপাশে রেখে টয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ পকেটে থেকে ফোন, ওয়ালেট সব বের করে টেবিলে রাখতে রাখতে বললো,” তো আমি বাহির থেকে এসে ফ্রেশ হবো না। তোমার যদি এতো সমস্যা হয় তাহলে উল্টো দিকে তাকিয়ে থাকো।”

আজব সামনে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে সেটা মাথায় নেই। এই ছেলের আবার বলছে আমাকে উল্টো দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার ভুল হয়েছে এখানে আসাটা। টয়া রেগে বললো,” উল্টো দিকে তাকিয়ে থাকার কি আছে আমি চলে যাচ্ছি। কিন্তু একটা প্রশ্ন।”
ইয়াদ দুই হাত বুকের কাছে গুঁজে বললো,” আবার প্রশ্ন! হুম বলো মনের সব প্রশ্ন বলো। আজকে সারারাত তোমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাই আমি।”
টয়া বুঝতে পারছে সে বেশি কথা বলছে কিন্তু কিছু করার নেই এই প্রশ্ন তাকে করতেই হবে। টয়া একটু কেশে গলা ঠিক করে নিয়ে বললো,” আচ্ছা মেয়েটা কি বিবাহিত না অবিবাহিত?”
এ প্রশ্ন শুনে ইয়াদ নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে টয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। টয়া পিছাতে পিছাতে একদম দেয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে পড়ল। ইয়াদ একদম কাছে চলে আসায় বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে। এ বাসার তো কেউ নেই ইয়াদ যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে ফেলে।
ইয়াদ দেওয়ালের এক পাশে হাত রেখে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললো,” কি জানি জানতে চাচ্ছো? মেয়েটা বিবাহিত না অবিবাহিত? কেনো তুমি কি মহিলা ঘটক হওয়ার উদ্বেগ নিয়েছো? তুমি জেনে করবেটা কি? মাথা পুরো নষ্ট হয়ে গেছে তোমার? তখন থেকে উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করে মাথা খেয়ে ফেলছো।”
ইয়াদ একদম কাছে চলে আসায় টয়া অপ্রস্তুত হয়ে চলে যেতে নিলো ইয়াদ আরেক পাশে হাত দিয়ে টয়াকে আটকে দিলো। টয়া কোনরকম টিপ টিপ চোখে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো,” রাগ করেছেন কেনো? আমি তো এমনেই…. বলে শেষে করবার আগেই ইয়াদ টয়ার দিকে ঝুঁকে গিয়ে বললো,” এসব প্রশ্ন করতে এখানে এসেছো?”
টয়া না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” কই নাতো আমি তো এসেছে ছিলাম ………… ঐযে আণ্টি বলেছিলো আমাকে আপনার খেয়াল রাখতে তাই এমনেই এসেছিলাম।”,বলে একটা ঢোক গিললো।
ইয়াদ টয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া ইয়াদকে আশ্বস্থ করে বললো,” সত্যি বলছি। এবার আমি যাই।” বলে ইয়াদের হাতের নিচে দিয়ে বলে বের হবে ইয়াদ টয়ার হাত ধরে বলে,” এখানে এসেছো কার ইচ্ছায়? নিজের ইচ্ছায় তাই না কিন্তু যাবে আমার ইচ্ছেয়। খেয়াল রাখতে এসেছিলে না আমার।” বলে টয়ার কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে আসতেই ইয়াদের ছোঁয়ায় টয়া শিউরে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ইয়াদ টয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো,” আমার খিদে লেগেছে যাও গিয়ে আমার জন্যে রান্না করো।”
এ কথা শুনে টয়া চোখ বড় বড় করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো,” রান্না করবো মানে? আপনারা খেয়ে আসেন নি?”
ইয়াদ ভ্রু কুচকে বললো,” আপনারা ! মানে ?”
” মানে ঐযে প্রভা আপনারা ডিনার করে আসেন নি?”, টয়ার প্রশ্ন শুনে শুনে ইয়াদের মাথা ধরে গেলো ইয়াদ আচমকা টয়াকে ছেড়ে দিয়ে বললো,” যেটা করতে বলেছি সেটা করো ফ্রেশ হয়ে আসছি আমি। আর তোমার এই useless question এর answer আমি দিচ্ছি না।”বলে ইয়াদ ওয়াশরুম এ ঢুকলো।
টয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো,” ইস কতো শখ আমাকে দিয়ে রান্না করাবে? আমি এখানে থাকলেই না এক্ষুনি বেরিয়ে যাবো।”

টয়া ইয়াদের দরজার সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। দরজায় password lock দেওয়া। টয়া হাবি জাবি কত কিছু বলে দরজা খুলার চেষ্টা করছে কিছুতেই খুলছে না। যে যেমন হয় তার আশেপাশের সব কিছু তার মতোন হয়। হিটলারটার দরজাও হিটলারের মতোন। ইচ্ছে করে এসব করছে অসহ্য। যখন ঐ মেয়ের সাথে আসলো ওই মেয়েকেই বলে দিতো রান্না করে খাওয়াতো আমাকে বলতে এসেছে কেনো। এনার জন্য রান্না না করলে হয়তো আজ রাতে এইখানেই থাকতে হবে অসম্ভব। টয়া কিচেনে গেলো কিচেনের উপরের ড্রয়ার খুলতেই একগাদা নুডুলস এর প্যাকেট তার মাথায় টপ টপ করে পরতে লাগলো। টয়া এতো নুডুলস দেখে থ মেরে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলো পুরো নুডুলসের ফ্যাক্টরি খুলে রেখেছে। তখনি ইয়াদের মায়ের একটা কথা মনে পড়লো তিনি বলেছিলেন ইয়াদ অফিস থেকে ফিরে tired হয়ে যায় তাই নাকি সে নুডুলস খেয়ে থাকে। আরে আজব সব সময় এইগুলো খেলে ক্ষতি হবে জনাব ডক্টর কি সেটা জানে না? ধুরো এই নুডুলস আমি রান্না করবো না। টয়া আরো কিছুক্ষন খুঁজতে লাগলো কিছু পাস্তা আর সুপের প্যাকেট পাওয়া গেছে আপাদত এইগুলোই ঠিক আছে।

টয়া নিজের মতো সবটা করছিলো। ইয়াদ শাওয়ার শেষে মাথা মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়ে টয়াকে কিচেনে দেখে এমনিতেই মুখে একটা হাসি চলে এলো। ইয়াদ সোফায় এসে রিলাক্স হয়ে বসে টিভি অন করলো।
টয়া চুলগুলোর জন্যে একটু বিপাকে পড়েছে কিছুক্ষণ পর পর মুখের সামনে চলে আসছে সাথে রাবারব্যান্ড নেই যে বেধে রাখবে খোঁপা করলেও খুলে যাচ্ছে। ইয়াদ টিভি অন করে রাখলেও তাকিয়ে আছে টয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে গিয়ে একটা ছোট্ট ঘটনা মনে পড়লো। অনেক আগে টয়া একবার তাকে তার চুল বেঁধে দিতে বলেছিলো। ঘটনাটা মনে পড়ায় ইয়াদ উঠে নিজের রূমে গিয়ে কিছু একটা নিয়ে বেরিয়ে এলো তারপর কিচেনে টয়ার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। টয়ার চুলে হাত দিতেই টয়া লাফিয়ে ওঠে চামচ হাতে পিছে ফিরলো। হটাৎ এভাবে পিছনে এসে দাঁড়ানোয় টয়া ভয় পেয়ে যায়।
” তোমাকে দেখছি ছোঁয়াও যায় না কাপাকাপি, লাফালাফি শুরু করে দাও।”, বিরক্তি নিয়ে বললো ইয়াদ।
” আপনি ভুতের মতো পিছে এসে দাঁড়িয়ে থাকলে আমি বুঝবো কিভাবে আমার কি মাথার পিছে চোখ আছে?”, হাতে থাকা চামচ নাড়িয়ে বললো টয়া।
চামচ যেনো ইয়াদের গায়ে না লাগে তাই সে সরে এসে বললো,” হয়েছে বুঝেছি, এবার সামনে ঘুরো।”
” কেনো?”, প্রশ্ন করলো টয়া।
” এতো কথা বলো কেনো?”ইয়াদ টয়াকে ঘুড়িয়ে দাড় করিয়ে দিয়ে চুল গুলো বেধে দিতে লাগলো। মোটামুটি একটা ঝুটি করে দিলো ইয়াদ। যখনই কেউ টয়ার চুল বেধে দেয় তার অনেক ভালো লাগে। কিন্তু ইয়াদ বেধে দেওয়ায় যে ভালো লাগা কাজ করছে সেটা অনেক আলাদা।
তবে টয়ার মনে একটা প্রশ্ন জাগলো ইয়াদ রাবার ব্যান্ড কথায় পেলো সে নিশ্চয় ঘরে রাবার ব্যান্ড রাখবে না। তাহলে কি অন্য কোনো মেয়ের? মনে প্রশ্ন জাগতেই টয়া বড়ো বড়ো চোখ করে সামনে তাকালো। হটাৎ একটা অন্যরকম আওয়াজে টয়া আর ইয়াদ দুজনের দৃষ্টি টিভির দিকে তাকালো।

তাকিয়ে টয়ার চোখ কপালে উঠে গেলো একটা মুভির কিসিং সীন দেখাচ্ছে। একটু আগের আওয়াজটা কি তাহলে…. এটা দেখে টয়া মূর্তির মতন দাড়িয়ে রইলো। ইয়াদ স্বাভাবিক ভাবে এগিয়ে গিয়ে চ্যানেল বদলে দিলো তবে টয়া আর ইয়াদের চোখে চোখ পড়তেই দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।


টয়া খাবার গুলো টেবিলে ইয়াদের সামনে রাখলো। তারপর ঝাঁঝালো গলায় বললো,” এবার passward টা বলুন।”
ইয়াদ প্লেট নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললো,” বসো বলছি।”
” আবার বসা লাগবে কেনো? আপনি বলুন তারাতারি।”, টয়া অস্থির হয়ে বললো। ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে বসিয়ে বললো,” তুমি এখানে বসবে যতক্ষণ পর্যন্ত আমার খাওয়া শেষ হচ্ছে। খাবার সময় কেউ পাশে বসে থাকলে আমার ভালো লাগে।
” মানে!”, তেজী গলায় বললো টয়া।
” মানে? এসেছো নিজের ইচ্ছায় যাবে কি যাবে না কখন যাবে সেটা আমি ডিসাইড করবো।”ইয়াদের কথা শুনে টয়া অগ্নি মূর্তি হয়ে গেলো।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here