গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ১১,১২
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ১১: #টিয়া_পাখি
“এই ফ্ল্যাটে আমার গার্লফ্রেন্ড থাকে, বুঝলেন?”নিরব যদিও কথাটা ইয়াদকে সাবধান করার জন্যে বলেছে যাতে টয়াকে বিরক্ত না করে। কথাটা শুনার সাথে সাথে ইয়াদের ইচ্ছে করছে এক্ষুণি একটা ঘুষি মেরে ছেলেটাকে শিক্ষা দিয়ে দেয়। ইয়াদ নিজের রাগটা প্রকাশ করলো সজোড়ে দরজা খুলে। ইয়াদের চোখ মুখ দেখে যে কেউ বুঝবে যে সে কতটা রেগে আছে। নিরব আর কিছু বললো না কারণ তার মনে হচ্ছে এমন কথা বলা ঠিক হয়নি ভেবে চিন্তে বলা উচিৎ ছিলো। ইয়াদ দাতে দাত চিপে বললো,” আর কিছু ?” নিরব একটু হাসো হাসো চেহারা করে মাথা নেড়ে চলে গেলো।
ইয়াদ রুমে গিয়ে সোফায় গা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাগ সামলাচ্ছে। ছেলেটার এমন সাহস হয় কীভাবে? আর টয়া কেনইবা এই ছেলের সাথে ছিলো। এটা কি সেই ছেলেটা? ইয়াদের এই সব প্রশ্নের জবাব শুধু টয়া দিতে পারবে। ইয়াদ উঠে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলো কিন্তু রাগ কমছে না। ইয়াদ কিছু না ভেবেই রুম থেকে বেরিয়ে এলো। টয়ার দরজার সামনে এসে বেল বাজলো। টয়া গোসল সেরে বেরিয়েছে মাত্র, কলিংবেলের আওয়াজ শুনে সে ভেবেছে ঋতু। টয়া মাথা মুছতে মুছতে দরজা খুললো, খুলে ইয়াদকে দেখে বিস্ময়ের সীমা রইল না।
এতো রাতে চাইছে টা কি? টয়া ভ্রু কুঁচকে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইল। টয়ার কিছু বুঝে উঠার আগেই ইয়াদ ভিতরে চলে এলো।
টয়া বিস্ময় নিয়ে বললো,” আপনি চাইছেন টা কি? এতো রাতে এভাবে আপনি কারোর বাসায় আসতে পারেন না তারউপর যেখানে একটা মেয়ে রয়েছে।”
ইয়াদ মহা বিরক্তি নিয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে একটা চেয়ারে বসলো। টয়া রেগে গিয়ে বলল,” আপনাকে কি আমি নেমতন্ন করেছি চেয়ারে বসছেন কেনো?দেখুন আপনি আমার ফ্ল্যাট থেকে চলে যান।”
ইয়াদ রাগ সামলে নিয়ে বললো,” তোমার বয়ফ্রেন্ড যে তোমাকে দেখে রাখতে বললো। তাই দেখতে এলাম ঠিক আছো কিনা?” যদিও নিরব এমন কোনো কথা বলেনি তাও টয়ার মুখ থেকে কথা বের করতে একটু চালাকি করেছে ইয়াদ। টয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। কোথ থেকে আবার এই বয়ফ্রেন্ড এলো। টয়া রেগে বলল,” আজেবাজে কথা বলার জায়গা পান না? কিসের বয়ফ্রেন্ড? কোথাকার বয়ফ্রেন্ড? শুনুন আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। এসব ট্রিক আমার সাথে করবেন না।”
ইয়াদ একটু সস্থি পেলে কিন্তু তারপরও বললো,” নেই বললেই হলো নাকি? তোমার বয়ফ্রেন্ড নিজে আমাকে বলেছে।”
টয়ার রাগে গজগজ করছে। বলা নেই কওয়া নেই কোথা থেকে আবার বয়ফ্রেন্ড উদয় হলো। আর রাতের বেলা এই লোকটা আবার সেই বয়ফ্রেন্ডের খোঁজ জানাতে এসেছে। টয়া রেগে বলল,” কে সেই হতচ্ছাড়া? কে রটিয়েছে এসব?”
টয়ার কথায় ইয়াদ একগাল হাসলো তারপর বললো,” যেই হতচ্ছাড়া তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিলো সে নিজে বলেছে।”
টয়া অবাক হয়ে বললো,” নিরব বলেছে ?”
ইয়াদ মাথা নাড়িয়ে বললো,” ইডিয়েটটার নাম তাহলে নিরব!”
টয়া আরো রেগে বললো,” নিরব আমার খালাতো ভাই। ও এসব কেনো বলবে? আপনি ইচ্ছে করে আমাকে জালাচ্ছেন।”
ইয়াদ চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো,” ওই ইডিয়েটাকেই জিজ্ঞেস করো সে কি বলেছে।” বলতে বলতে ইয়াদ রুম থেকে বেরিয়ে এলো। এভাবে রুমের ভিতরে আসাটা তার উচিৎ হয় নি সে বুঝতে পেরেছে।
টয়া চিন্তায় পড়ে গেলো, কথাগুলো টয়ার ঠিক হজম হচ্ছে না। ইয়াদ ফিরে এসে টয়ার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললো,” এসো দরজা বন্ধ করো।” টয়া হা করে তাকিয়ে আছে। সে এতক্ষন ইয়াদকে নিজের রুমে বসিয়ে রেখেছে তার উচিৎ ছিলো আরো আগে তাকে বের করা। বাহ্ কি ভদ্রতার নমুনা জোর করে বাসায় ঢুকলো আবার নিজে নিজে চলে যাচ্ছে। যাক বাঁচা গেল।
ইয়াদ দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে গিয়ে বললো,” ইডিয়েটটার নাম যেনো কি?” টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” আপনি কাকে ইডিয়েট বলছেন?”
ইয়াদ হাসো হাসো চেহারা করে বললো,” তুমি যাকে হতচ্ছাড়া বলেছিলে।”
” সে আমি বলতেই পারি, আপনি কেনো বলবেন? আর আমি আপনার সাথে এতো কথাই বা কেনো বলছি। আপনি প্লীজ যান।” ইয়াদ মনে করে বললো,” ও নিরব দেট ইডিয়েট । মনে পড়েছে।”
টয়া ইয়াদকে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। ইয়াদের এবার রাগ কমেছে, সে নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। টয়া কিছুতেই বুঝতে পারছেনা নিরব এসব উল্টা পাল্টা কথা ইয়াদকে কেনো বলতে যাবে? নিরব যদি বলে থাকে তাহলে ওর বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে টয়া। আর এই ইয়াদ? এর কতো বড় সাহস হুট করে রুমে চলে এলো, যদিও ভদ্র ভাবে চলেও গেছে তাও সে আসবে কেনো? আমার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা কেনো উনার?
________________________
সকালে বেলের শব্দে ইয়াদের ঘুম ভাঙ্গলো এতো সকালে কে আসবে? ইয়াদ কোনো মতে চোখ খুলে উঠে এসে দরজা খুললো। খুলে ইয়াদ একটু চমকালো তার মা এত সকালে এখানে কি করছে? ইয়াদের মা ইয়াদকে সরিয়ে ভিতরে এসে সোফায় বসলো। ইয়াদ ঘুম ঘুম চোখে দরজা বন্ধ করলো। তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না তার মা এখানে কেনো এসেছে।
ইয়াদের মা ঘাম মুছতে মুছতে বললেন,” বুঝলি ফজরের নামাজ পড়ে রওনা দিয়েছি তাই এতো তাড়াতাড়ি আসতে পেরেছি।”
ইয়াদ চুপ করে একপাশে বসে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে কিছুক্ষণ পর প্রশ্ন করলো,” মা বাবা কি করবে তুমি যে চলে এলে?”
ইয়াদের মা কটাক্ষ করে বললো,” কি করবে মানে? খেয়ে দেয়ে ঘুমাবে। সব রান্না করে বক্স ভরে ফ্রিজে রেখে এসেছি। আমি কয়েকদিন তোর কাছেই থাকবো বুঝলি।” ইয়াদ গালে হাত দিয়ে হা সূচক মাথা নাড়ল।
ইয়াদের মায়ের নাম মিলি আক্তার। তিনি ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,” বাপ বেটা হয়েছে একরকম।”
মায়ের কথায় ইয়াদ হাসলো তারপর উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে রেডি হয়ে ক্লিনিকে গেলো। যাবার আগে মাকে কোথাও বের হতে বারণ করেছে ইয়াদ কিন্তু কে শুনে কার কথা।
মিলি আক্তার বের হয়ে কিছু কেনা কাটা করলেন। লিফটে উঠে টয়ার সাথে দেখা কেউ কাউকে চিনে না যদিও, তারপরও টয়া মিলি আক্তারকে সালাম দিলো। টয়া সাথে কথা বলে টয়াকে বেশ ভালোই লাগলো তার। কি মিষ্টি চেহারা!
টয়ার ওনার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগছিলো কারন উনি অনেক আদর ভরা কণ্ঠে কথা বলে ঠিক তার বাবা যেভাবে বলে।
লিফট থেকে বেড়িয়ে মিলি আক্তার যখন ইয়াদের দরজার লক খুলছিলেন সেটা দেখে টয়ার কেমন যেন লাগলো।
মিলি আক্তার হাসতে হাসতে বললো,” এই ফ্ল্যাটে আমার ছেলে থাকে। এতো বদজ্জাত আর বলো না নিজের সুবিধা অসুবিধা কাউকে বলে না। আরে আমি মা আমাকে বল, আচ্ছা আমাকে বলতে মনে না চাইলে বিয়ে করিয়ে দেই বউকে বলিস সেটাও করতে রাজি না। এ কয়দিন কি খেয়েছে জানো? শুধু নুডুলস খেয়েছে। রান্নার কোনো জিনিস কেনার সময় পায়নি সে।”
ইয়াদের মায়ের কথা শুনে কেমন জানি মায়া লাগছে টয়ার। সব কথা কি অবলীলায় বলছে।
রাতে ইয়াদ ফিরে বাসায় মাকে না দেখে একটু চিন্তায় পড়ে গেলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর মিলি আক্তার বাসায় এলো। ইয়াদ এতোক্ষণে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এলো। তারপর রেগে বললো,” মা তোমাকে না আমি বারন করলাম বাসা থেকে বের হতে না।”
মিলি আক্তার বললো,” বাসা থেকে বের হবো না কোনো? আমি কি বুড়ি হয়ে গেছি যে বাসায় বসে থাকবো। ছেলের বিয়ে দেই নি, নতিনাতনির মুখ দেখিনি।”
ইয়াদ সরু চোখে বললো,” মা তুমি থামবে? এবার বলো কোথায় গিয়েছিলে?”
” তোর সামনের ফ্ল্যাটের মেয়েটাকে কে দেখেছিস? কি মিষ্টি দেখতে!”
বলতেই ইয়াদ চুপ করে থেকে তারপর বললো,” হুম, তা কি হয়েছে?”
মিলি আক্তার সোফায় বসে বললো,” ওর কাছেই ছিলাম এতক্ষন। কি ভালো হাতের রান্না! আমাকে গরম মাংসের সঙ্গে পরোটা করে খাওয়ালো অসাধারন!” ইয়াদ নিজের মায়ের মুখে টয়ার প্রসংশা শুনে নিচের ঠোঁট চেপে হাসছে।
মিলি আক্তার ছেলেকে বেঙ্গ করে বললো,” হাসবি না, একবার দেখলে বুঝতি। মেয়েটার নাম জানিস?” ইয়াদ দুইহাত বুকের কাছে ভাজ করে না সূচক মাথা নাড়ল। মায়ের কথা শুনতে বেশ মজাই লাগছে তার।
মিলি আক্তার বললো,” মেয়েটার নাম টয়া, দেখবি ওর জামাই ওকে টিয়া পাখি বলে ডাকবে।” ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। টিয়া পাখি নামটা তার মোটেও পছন্দ হয়নি। সে আর যাইহোক টিয়া পাখি বলে ডাকবে না। মিলি আক্তার উঠে এসে বললো,” তোর সেই ঘড়িওয়ালিকে পেয়েছি? ওই ঘরিওয়ালির জন্যে না হলে এই মেয়েকেই আমি বউ করে আনতাম।”
ইয়াদ মায়ের কথায় হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না। মিলি আক্তার অবাক হয়ে বললো,” কিরে এভাবে হাসছিস যে?”
ইয়াদ হাসি থামিয়ে বললো,” যদি বলি তাকে পেয়ে গেছি?”
[ চলবে ]
গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ১২ : #অভিমান
লেখিকা :#নবনী_নীলা
ওই ঘরিওয়ালির জন্যে না হলে এই মেয়েকেই আমি বউ করে আনতাম।”ইয়াদ মায়ের কথায় হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না। মিলি আক্তার অবাক হয়ে বললো,” কিরে এভাবে হাসছিস যে?”ইয়াদ হাসি থামিয়ে বললো,” যদি বলি তাকে পেয়ে গেছি?”
মিলি আক্তার হা করে ছেলের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” পেয়ে গেছিস মানে? ” ইয়াদ হা সূচক মাথা নাড়ল।
ইয়াদ লক্ষ করলো তার মায়ের চেহারাটা কেমন হয়ে গেলো। ইয়াদ কোমরে হাত দিয়ে বললো,” কিন্তু কোনো লাভ হয়নি মা। মেয়েটা আমার উপর রেগে আছে নাকি বিরক্ত হয়ে আছে কিছুই বুঝতে পারছিনা।
মিলি আক্তার একটু চিন্তিত হয়ে বললেন,” কিছু করেছিস তুই? রাগ করে থাকবে কেনো?”
ইয়াদ নিচু স্বরে বললো,” তুমি তো জানো রাগ হলে আমি কি করি আমার ঠিক নেই, হয়তো তাই।”
” আচ্ছা ঠিক আছে বলতে ভালো লাগলে বলিস না। কিন্তু তুই কি মেয়েটাকে sorry বলেছিস?” বলে ছেলের কাধে হাত রাখলেন।
ইয়াদ মনে মনে বললো,” sorry বলার সুযোগ দিয়েছে নাকি? দেখলেই পালাই পালাই করে।”
ইয়াদ না সূচক মাথা নাড়ালো। তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,” মনে হয় মেয়েটা অভিমান করেছে। রাগ জিনিসটা অনেকদিন পুষে রাখা যায় না। অভিমান আর ঘৃনা জমে থাকে। তোকে ঘৃনা করলে তোকে কখনো সহ্য করতে পারতো না, রাগ দেখাতো না। মেয়েটা অভিমান করেছে বুঝলি। বাপ আর ছেলে হয়েছে এক রকম কিচ্ছু বুঝে না।”
ইয়াদ নিজের মায়ের কথা ফেলতে পারছে না। হয়তো সত্যিই অভিমান করে বসে আছে টয়া। ইয়াদ প্রসঙ্গ ঘুড়িয়ে বললো,” তোমার কি বাবার কথা খুব মনে পড়ছে ? কিছুক্ষণ পর পর বাবার কথা বলছো যে?”
” তোর বাবা! ওই লোক কি জানে কিভাবে বউয়ের খেয়াল রাখতে হয়। সে দিনে যতবার খাবার খায় নিয়ম করে ততবার ফোন করে। সকালে একবার, দুপুরে একবার, রাতে একবার। এর বাহিরে একবার ও ফোন করে খোঁজ নেয় নি।”বলতে বলতে মিলি আক্তার কিচেনে গেলেন।
ইয়াদ পিছু পিছু গিয়ে বললো,” তুমি তো বলো আমি বাবার মতো তাহলে আমারও নিশ্চই বিয়ের পর বউয়ের মুখে এসব শুনতে হবে। থাক বাবা বিয়ে নামক ভেজালে আমি পড়ছি না।”বলে ইয়াদ নিজের রুমে চলে যায়। মিলি আক্তার আর কিছু বললেন না চাইলে বলতে পারতেন।
_______________________
টয়া বের হয়েছিলো ছাদে হাঁটতে যাবে বলে এমন সময় ইয়াদ ও বের হয়। ইয়াদকে দেখে টয়া রুমের ভিতরে চলে যাবে এমন সময় ইয়াদ হাত ধরে ফেলে। টয়া বিস্ময় নিয়ে ইয়াদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে তারপর,” আপনি আমার হাত ধরেছেন কেনো? ছাড়ুন । কেউ দেখলে কি ভাববে ছাড়ুন।” বলে হাত ছড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। ইয়াদ হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,” ছাদে যাবো চলো।”
টয়া আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” ছাদে যাবো চলো মানে? আমি কেনো আপনার সাথে ছাদে যাবো? আপনার যেতে ইচ্ছে হলে আপনি যান।”
” ছাদে যেতে বলেছি, ছাদ থেকে লাফ দিতে বলিনি। ” বলেই একটা ভ্রু তুলে তাকালো ইয়াদ।
টয়া কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে ছাদের দিকে হাঁটতে লাগলো, তার এমনিতেই খুব আকাশ দেখতে ইচ্ছে করছে। ইয়াদের জন্যে ইচ্ছে নষ্ট করার কোনো কারণ নেই।
ইয়াদ ভেবেই পায় না, এই মেয়েটার মাথায় যে কি চলে? একটু আগে কি বলল আর এখন কি করছে?
টয়া ছাদের এ মাথা থেকে সে মাথা আপন মনে হেটে চলে চলেছে। ইয়াদ কিছুক্ষণ বসে থেকে টয়ার হাটাহাটি দেখলো। এই মেয়ে দেখি থামার নাম নিচ্ছে না। ইয়াদ উঠে দাড়িয়ে টয়ার হাত ধরে ওকে দাড় করালো। টয়া সেই আবার শুরু করেছে আপনি আমার হাত ধরলেন কেনো???……. ইয়াদ রেগে বলল,” চুপ, আমি হাত ধরলে কি তোমার হাত খসে পড়বে?”
টয়া হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,” সে তো পড়বেই, শুনুন আমার হাত ধরার অধিকার আপনার নেই বুঝলেন?”
ইয়াদ রাগী চোখে তাকিয়ে রইলো। টয়া সেটা তোয়াক্কা না করে বললো,” রাগ দেখাচ্ছেন আমাকে? শুনুন আপনার রাগকে না আমি ভয় পাই না। রাগ দেখাচ্ছে আমাকে।”
ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে টয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। টয়া সন্দেহের চোখে বললো,” আপনি এগিয়ে আসছেন কেনো? ” কথায় কোনো কাজ হলো না। ইয়াদ এগিয়ে আসছে দেখে টয়া পিছাতে লাগলো। বেশি কথা বলা ঠিক হয় নি এবার রাগের মাথায় কিছু করে বসলে। পিছাতে পিছাতে টয়া ছাদের রেলিং আর সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে পড়ল। ইয়াদ এগিয়ে এসে টয়ার দুপাশের রেলিং এ দুই হাত রাখলো।
টয়া এক ঢোক গিলে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে। ইয়াদের স্থির দৃষ্টি যে টয়ার দিকে, টয়া সেটা বুঝতে পারছে। টয়া ঘামতে লাগলো, এর মাঝে ইয়াদ বলে উঠলো ” ঘামছো কেনো? ” টয়া একবার ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,” আপনি সরুন।”
ইয়াদ একটু কাছে এসে বললো,” আচ্ছা আমি কাছে আছি বলে নার্ভাস লাগছে তাই কি ঘামছো। এতো সুন্দর আবহাওয়া বাতাস বইছে তাও এমন হওয়ার কথা না।”
ইয়াদের এই কথাগুলো শুনে টয়ার হার্টবিট বেড়ে গেছে।
টয়া কিছু বলতেও পারছে না। ইয়াদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,” একটা কথা বলার ছিলো শুনবে?”
টয়া ইয়াদের চোখের দিকে তাকালো তাকানোর সাথে সাথে আবার চোখ নামিয়ে ফেললো। ইয়াদ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। ইয়াদের নিরবতায় টয়ার ভয় লাগছে। কি বলবে এবার সে? ভয় গলা শুকিয়ে এসেছে টয়ার।
টয়া যেনো ইয়াদের নিশ্বাসের শব্দ পাচ্ছে।
ইয়াদ নিরবতা ভেঙ্গে বললো,” সেদিনের জন্য কি আমাকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় না?” কথাটা শুনার সাথে সাথে বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। কোনদিনের কথা বলছে ইয়াদ? টয়া নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,” কোন দিনের কথা বলছেন আপনি?” নিজের বলা কথায় ইয়াদ নিজেও লজ্জিত।
ইয়াদ একটু চুপ থেকে বললো,” আমি তোমাকে যেই কথাগুলো বলেছিলাম…. আসলে আমি নিজেও বুঝিনি কথাগুলো কতটা ভুল। সেদিনের ভুলের জন্য….” ইয়াদ বলে শেষ করার আগেই
টয়া চোখ ছল ছল করে এলো টয়া নিজেকে সামলে বললো,” থাক, আমি সেসব কথা শুনতে চাই না। আর ক্ষমা চাওয়ার কি আছে আপনার যা মনে হয়েছে, আপনি যা বিশ্বাস করেছেন সেটাই বলেছেন। আর আপনি ঠিকই বলেছিলেন…. কারণ আপনি না বললে আমি বুঝতেই পারতাম না আমি যে খারাপ।”
ইয়াদ কিছু বলতে নিলো টয়া থামিয়ে বললো,” দেখুন যা হবার সেটা হয়েগেছে। আমি ভুলে গেছি আপনিও ভুলে যান।”
টয়ার কথাগুলো যেনো ইয়াদের বুকে গিয়ে লাগলো তারপরও সে বললো,” তুমি রাগ করে বলছো?”
টয়া একটু হেসে বললো,”রাগ কেনো করবো বলুনতো? রাগ করিনি। বললাম তো আপনিও ভুলে যান। যদি কখনো মনে পড়ে ভাববেন সেটা একটা দুঃস্বপ্ন।”
ইয়াদ আর কথা বলার ভাষা খুঁজে পেলো না , ইয়াদ রেলিং থেকে হাত সরিয়ে নিলো। টয়ার গাল বেয়ে পানি পড়তেই টয়া সেটা মুছে নিয়ে ছাদ থেকে বেড়িয়ে যাবে এমন সময়ে টয়া থমকে গেলো। টয়ার পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেছে। সামনে ইয়াদের মা দাড়িয়ে, তাহলে তিনি কি এতক্ষন সবটা দেখেছেন?
[ চলবে ]