তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ১৩,১৪

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ১৩,১৪
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ১৩ : #সেই_মেয়ে

“তোমরা এতো রাতে কি করছো ছাদে?” ইয়াদের মায়ের প্রশ্নে টয়া ঘাবড়ে গেলো, ইস আণ্টি নিশ্চই উল্টা পাল্টা কিছু ভেবে বসে আছে।টয়া আমতা আমতা করে বলল,” আসলে আণ্টি, আমি একটু বাতাসে দাড়ানোর জন্যে এসেছিলাম।” ইয়াদ নিজের মাকে দেখে কোনো মাথা ব্যাথা নেই, সে চুপ করে আছে। মিলি আক্তার হাই তুলতে তুলতে বললো,” আচ্ছা, আমার ছেলেটাও কি হাওয়া খেতে এসেছে?” বলে ইয়াদের দিকে তাকাতেই ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে ঈশারায় চুপ থাকতে বললো। এটা দেখে মিলি আক্তার বললো,” ও আচ্ছা তোর রুমের এসি নষ্ট!” ইয়াদ মলিন চোখে মায়ের কান্ড দেখছে। টয়া অপ্রস্তুত হয়ে বললো,” আণ্টি আমি তাহলে যাই।”
মিলি আক্তার টয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,” আচ্ছা যাও, Good night.” টয়া ছাদ থেকে নেমে সোজা নিজের রুমে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসলো এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে সেটা সে কল্পনাও করেনি।
ইয়াদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই তার মা তাকে একটা মেয়ের সাথে তাকে এতো রাতে ছাদে দেখেছে এটা তার কাছে তুচ্ছ ব্যাপার। সেটা তো হবেই যেখানে মিলি আক্তার নিজেই তুচ্ছ করেই ধরেছেন। তিনি বললেন,” কিরে তোর ঘরিওয়ালি থেকে better না?” ইয়াদ ছাদে রেলিং এ হেলান দিয়ে ঠোঁট উল্টে না সূচক মাথা নাড়ল।
মিলি আক্তার আড় চোখে তাকিয়ে রইলেন। ইয়াদ হেসে উঠে বললো,” এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? তোমার টিয়া পাখি better কিন্তু আমার ঘরিওয়ালী best।”
” হায়রে রোমিও ! কি ভালোবাসা! হাওয়া খাওয়া শেষ হলে চলেন রোমিও স্যার ঘুমাতে যাই।”, ইয়াদ পৃথিবীতে দুজন নারীকে দেখে আজ পর্যন্ত বিস্ময় নিয়ে ভেবেছে কারণ এরা এতো আলাদা, একজন তার মা আরেকজন টয়া। ইয়াদের ইচ্ছে করে এদের আসে পাশে থাকতে, এই ভালোলাগা এই বিস্ময় সে আর কোথাও খুঁজে পায় নি।

_________

টয়ার আজ ঘুম ভেঙেছে দেরী করে। আজ তার এক ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস ছিল। সে হুড়োহুড়ি করে রেডি হয়ে দরজা খুলে বের হতেই দেখতে পেলো ইয়াদও বের হচ্ছে। এই ছেলেটা আর সময় পেলো না এবার যদি একসাথে লিফটে উঠে তাহলে উপর নীচে উপর নীচে না এই ঝামেলায় টয়া আর পড়তে চায় না। ইয়াদ টয়াকে দেখার আগেই টয়া দৌড় দিয়ে লিফটে পৌঁছে যায়। কারোর দৌড়ানোর শব্দে ইয়াদ তাকিয়ে দেখলো টয়া লিফটের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে। ইয়াদ কিছুই বুঝতে পারছেনা মেয়েটা কেনো যে তাকে দেখলেই পালাই পালাই করে আগেই ভালো ছিলো খোঁজার আগেই হাজির হয়ে যেতো।
ইয়াদ কিছুক্ষণ লিফটের জন্যে দাড়িয়ে অপেক্ষা করলো। কিন্তু অনেক্ষন হয়েগেছে লিফট উপরে আসছে না। বাটন টাও ঠিক মতন কাজ করছে না। ইয়াদ পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করলো আজ বোধয় তার এই সিড়ি বেয়েই নিচে যেতে হবে। লিফটা কি নষ্ট হয়ে গেলো? এগারো তলা থেকে হেটে নিচে নামবে? কি অসহ্য ব্যাপার! ইয়াদ অবশেষে নীচে নেমে পৌঁছালো ইয়াদের মাথা ভীষণ গরম হয়ে গেলো। লিফটে প্রবলেম থাকলে আগে থেকে ঠিক করে রাখা উচিৎ ছিলো। ইয়াদ রেগে গার্ডকে বলতে গেলো,” আপনাদের লিফট কেনো কাজ করছেনা? নামার সময় একটু ইজি হলেও যারা একটু মধ্যবয়সী তাদের জন্য তো বিশাল সমস্যা। এতটা irresponsible কি করে হতে পারেন?”

“স্যার লিফটের দায়িত্বে তো আমি নেই। দাড়ান আমি এক্ষুনি পাশের রূমে জিজ্ঞেস করছি। তাই তো বলি কিছুক্ষণ আগে মনে হলো কেউ লিফটে নীচে নামছে কিন্তু এখনো আসেনি। দাড়ান আমি এক্ষুনি দেখছি।” লোকটার কথা শুনে ইয়াদের কেনো জানি খারাপ কিছু মনে হলো। টয়া ঠিক আছে তো? ঠিক মতো নীচে পৌঁছাতে পেরেছে? লোকটা পাশের রুমে যেতেই ইয়াদ লোকটাকে থামিয়ে প্রশ্ন করলো,” আচ্ছা, টয়াকে দেখেছেন যেতে, একটু আগে কাউকে দেখেছেন? একটা মেয়ে সাদা ড্রেস গলায় নেভিব্লু স্কার্ফ ?”

গার্ড কিছুক্ষণের জন্য চুপ থাকলো তারপর বললো,” ও আচ্ছা বুঝেছি, ভার্সিটিতে যায় তো উনি প্রতিদিন। কিন্তু কই আজ তো দেখলাম না।”
গার্ডের কথায় ইয়াদের চোখ মুখ অস্থিরতায় ভরে গেলো। টয়া লিফটে আটকা পড়েনি তো? দশ মিনিটের মতো তো হয়েছে টয়া বেরিয়েছে। ইয়াদ গার্ডের সাথে পাশের লিফট কন্ট্রোল রূমে গেলো। সেখানে যে দায়িত্বে আছে সে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে দেখেই ইয়াদের মাথায় রক্ত ওঠে গেলো। গার্ড তাড়াহুড়ো করে সেই ছেলেকে ডেকে তুললো। ছেলেটা উঠার সাথে সাথে ইয়াদ কড়া গলায় বললো,” লিফটে কি সমস্যা? তোমাকে দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে আর তুমি পরে পরে ঘুমাচ্ছো।” ইয়াদের কথায় ছেলেটা ভয় পেয়ে উঠে দেখে বললো,” একটু সমস্যা হয়েছে কিছুক্ষনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”
ইয়াদের ভিতরটা চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। ইয়াদ রেগে গিয়ে বললো,”কিছুক্ষণ মানে? এক্ষুণি আমাকে লিফটের সিসিটিভি ফুটেজ দেখাও। What the hell! তোমার কম্পিউটার বন্ধ কেনো?” বলে ইয়াদ জোরে টাবিলে একটা বাড়ি দিলো। ছেলেটা ভ়ঙ্করভাবে ভয় পেয়ে জলদি সিসিটিভি ফুটেজ অন করলো। ইয়াদ সিসিটিভি ফুটেজে স্পট টয়াকে দেখতে পাচ্ছে। অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
ইয়াদের মেজাজ হারিয়ে ছেলেটার কলার চেপে ধরে বলে,” you bustard, তোমাকে এখানে রাখা হয়েছে পরে পরে ঘুমানোর জন্য? দুই মিনিটের মধ্যে লিফট খোলার ব্যবস্থা করো টয়ার যদি কিছু হয় না I swear আমি তোমাকে দেখে নিবো। তোমার চাকরি তো এমনেতেই শেষ।”

ইয়াদের ধমকে গার্ড আর ছেলেটা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব লিফট খোলার ব্যবস্থা করে। টয়াকে কোলে করে ইয়াদ নিজের বাসায় নিয়ে আসে।

টয়ার জ্ঞান ফিরলেও বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার কারণে ওকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়। টয়ার এমন অবস্থায় মিলি আক্তার চিন্তায় পড়ে যায়। এদিকে ইয়াদ নিজের পরিচিত একজন ডক্টরকে বাসায় আনে। তিনি বলেছেন মেয়েটা প্রচন্ড ভয় পেয়েছে । মণে হয় ছোট বেলার কোনো ভয় ভিতরে ঢুকে গেছে দেখে রাখতে হবে আর কাছাকাছি একজনকে সবসময় থাকতে বলেছেন। ইয়াদ নিজেও এটাই ধারণা করে ছোটো বেলার কি এমন ভয় থাকতে পারে টয়ার ?

অনেক্ষন পর টয়ার ঘুম ভাঙ্গলো ছোটবেলার সেই দুঃস্বপ্নে সে ঘুমের মাঝে ছোটফটিয়ে হালকা চোখ খুললো। সাড়া শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে, চোখ খুলেই সামনে কাউকে না দেখে ভয়ে একাকার হয়েগেছে টয়া। এ জায়গায় সে আগে কখনো আসেনি। এটা কোথায়? টয়া উঠে বসতে বসতে মা মা করে চিৎকার করতে লাগলো। ছোটোবেলায় ফুফুর বিয়েতে লুকোচুরি খেলতে গিয়ে অন্ধকার স্টোর রুমে লুকিয়েছিলো টয়া। তাকে কেউ যাতে খুজে না পায়। কে জানি সেদিন দরজাটা বাহির দিয়ে আটকে দিয়েছিলো।
ভয় আর আতঙ্কের সে চিৎকার আর কান্না কেউ শুনেনি সেদিন। যখন খুজতে খুজতে স্টোর রুমে আসে তখন নিস্তেজ হয়ে এসেছিলো সেই ছোট্ট শিশুটির দেহ। আজ সেই জায়গায় আবার ফিরে গিয়েছিল টয়া। আজও তার কান্না কেউ শুনেনি। টয়া কাদতেঁ লাগলো, টয়ার ডাকে মিলি আক্তার রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন। ইয়াদ পাশের রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

মিলি আক্তার টয়াকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেস্টা করলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। টয়া থর থর করে কাঁপতে লাগলো। কিছুক্ষন পর টয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলো। তবে তার ভয় কমে নি। ইয়াদ শান্ত ভঙ্গিতে একপাশে দাড়িয়ে ছিলো। মিলি আক্তার ছেলেকে বললো,” একটু মেয়েটার পাশে এসে বস। আমি ওর জন্য সুপটা গরম করে আনি।” ইয়াদ টয়ার পাশে এসে বসলো কিন্তু টয়া মিলি আক্তারের কাপড়ের এক অংশ ছোটো বাচ্চাদের মতো হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে আছে। মিলি আক্তার বুঝিয়ে সুজিয়ে টয়াকে ইয়াদের কাছে রেখে গেলো। টয়ার ইচ্ছে করছে কিছু একটা শক্ত করে ধরে রাখতে। ইয়াদ শান্ত চোখে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া হাতের কাছে কিছু না পেয়ে বিছানার চাদর ধরে আছে কিছুক্ষণ পর পর টয়ার সেই অন্ধকার ঘরের কথা মনে পড়তেই কেপে উঠে। ইয়াদ টয়কে কীভাবে সামলাবে বুঝতে পারছেনা। ইয়াদ টয়ার হাত ধরতে নিয়েছিলো টয়া হাত সরিয়ে নিয়েছে। ইয়াদ টয়াকে এই মূহুর্তে জোর করতে চাচ্ছে না। মেয়েটা বড্ডো জেদি সেটা ধীরে ধীরে ইয়াদ টের পাচ্ছে।
ইয়াদ নিজের শার্টের হাত ভাঁজ থেকে নামিয়ে সেই হাতটা টয়ার সামনে বাড়ালো। টয়া ক্লান্ত চোঁখে ইয়াদের দিকে তাকালো। ইয়াদ চোখে হাতের দিকে ইশারা করলো। টয়া কিছুক্ষণ ইয়াদের হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে ইয়াদের শার্টের হাতার কিছু অংশ মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। ইয়াদ টয়ার কান্ড দেখে হাসলো, ভয়ে আছে তাও নিজের জেদ বজায় রাখবে। হাতটা ধরলে কি অসুবিধা হতো তার।
কিছুক্ষন পরেই ইয়াদের মা গরম সুপ এনে টয়াকে খাইয়ে দিলেন। ইয়াদ পাশেই বসে ছিলো। টয়া এখন অনেকটাই স্বাভাবিক তবে সে যে ইয়াদের বসায় ইয়াদের রূমে বসে আছে ব্যাপারটা টয়া এই মাত্র খেয়াল করলো। রুমটা অচেনা লাগছিলো তবে এটা যে ইয়াদের ফ্ল্যাট এটা এবার স্পষ্ট। টয়া টিপ টিপ করে একবার ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো। এবার টয়ার নজর গেলো নিজের হাতের দিকে এতক্ষন ধরে ইয়াদের শার্টের হাতা ধরে বসে ছিল কেনো? এখন ইয়াদের মা সামনে আছে। উনি দেখেছেন নাকি? কালকে রাতে একবার…. কি শুরু হয়েছে এগুলো তার সাথে? ভেবেই সঙ্গে সঙ্গে ইয়াদের শার্টের হাতা ছেরে দিয়ে হাতটা নিজের কম্বলের ভিতরে নিয়ে গেলো।
টয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। ইয়াদ টয়াকে আরেকটা ওষুধ খাইয়ে দিলো এরপর অনেকটাই ভালো হয়ে উঠবে টয়া। টয়ার শরীর ক্লান্ত হওয়ায় সে শুয়ে পড়তেই চোখ দুটো ঘুমে ঘিরে ধরে।
ইয়াদ একটা চেয়ার এনে টয়ার খাটের পাশে বসে টয়ার ব্যাগের বাহিরে থাকা কিছু ডিজাইন দেখছিলো। এমন সময়ে মিলি আক্তার এসে টয়ার মাথার কাছে বসলো। তিনি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে প্রশ্ন করলো,” আচ্ছা আরফিন ?” মায়ের ডাকে ইয়াদ মায়ের দিকে ফিরলো। ” এই টয়া কি সে মেয়ে যার ঘড়িটা আমার ছেলে এতো বছর আগলে রেখেছে?”
মায়ের কথায় ইয়াদ হেসে বলল,” হটাৎ তোমার এমন মনে হলো কেনো, মা?”
” আমিতো মা, আমি বুঝি। তোর চেহারায় এতো টেনশন কেনো বলতো? আমাকে বল কি হয়েছে?” মায়ের প্রশ্নে ইয়াদ শব্দ করে একটা নিশ্বাস ফেলে টয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,” একটা ভুল করেছিলাম।”
” অনেক শুনেছি তোর এসব কথা। এই টয়া কি সেই মেয়ে? আমাকে শুধু এই প্রশ্নের উত্তর দে।”, ইয়াদ নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে,” হুম ” বললো।

” আচ্ছা ঠিক আছে, বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।”, মায়ের এমন কথা শুনে ইয়াদ অবাক হয়ে বললো,” দেখে নিচ্ছ মানে? ”

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ১৪ : #Wishing_star ⭐
লেখিকা :#নবনী_নীলা
” টয়া আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না। মা এই সহজ কথাটা তুমি কেনো বুঝতে পারছো না?” ছেলের এমন কথায় মিলি আক্তার বললেন,” চেস্টা না করে হাল ছাড়লে হবে?”
ইয়াদ কোমরে হাত দিতে দাড়িয়ে পড়ল,” মা তুমি আমার বিয়ে নিয়ে কেনো পড়েছ বলতো? আর তুমিই টয়ার বাবা মাকে ডেকেছো তাই না?”
” ধেত, আমি কেনো ডাকবো? মেয়ের এমন ঘটনা শুনে ওনারা চলে এসেছেন। আমি কি নিজে ফোন দিয়ে ডেকে এনেছি? টয়ার ফোন বাজছিল বেচারির ঘুম ভেঙে যেতো তাই কথা বলেছি একটু।”বলেই ছেলের উদ্দেশে হাসলেন।
” আচ্ছা, তাই? তাহলে বাবা কি করে একরাতের মধ্যে ঢাকায় চলে এলো?”, বলে সন্দেহের চোখে তাকালো ইয়াদ।
মিলি আক্তার হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললো,” তোর বাবার ফোন ধরিনি যে কালকে তাই এসেছে, কল দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছে তো আমার মোবাইল। বুড়োটাকে শিক্ষা দিতে হবে বুঝলি?”
ইয়াদ বললো,” বাবাকে বুড়ো বলছো!”

” এই শোন বেশী বাবা বাবা করিস না। আমি যাই ওনাদের নিয়ে আসি।”, মায়ের কথায় ইয়াদ চমকে উঠে বলে,” ওনাদের মানে কাদের?”
মিলি আক্তার যেতে যেতে বললো,” টয়া আর টয়ার বাবা- মা ওনাদের ডিনারের দাওয়াত দিয়েছি।”
ইয়াদ নিজের মায়ের কাজকর্মে হতবাক হয়েগেলো। ইয়াদের বাবা টিভিতে নেশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেল এ ম্যান vs ওয়াইল্ড দেখছে। ইয়াদের বাবা একজন শান্তি প্রিয় মানুষ আর এদিকে তার মা অশান্তি প্রিয়।

ইয়াদের মা সবাইকে নিয়ে ফ্লাটে ঢুকলেন। ইয়াদ নিজের রুমে ছিলো। ইয়াদ অনেক্ষন পর রুম থেকে বেরিয়ে এলো। টয়ার বাবা তার বাবার সাথে কি বিষয়ে খুবই জোরালো এক আলোচনায় বসেছে। টয়ার বাবা একের পর এক কথা বলছে ইয়াদের বাবা চুপ করে শুনছেন এবং মাঝে মাঝে নিজের কিছু মন্তব্য জানাচ্ছেন।
এদিকে উল্টো, ইয়াদের মা বক বক করছে টয়ার মা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। ইয়াদের মা এমনভাবে কথা বলে সবাই আগ্রহ সহকারে শুনে। টয়া ডাইনিং টেবিলে বসে ফোন নিয়ে ব্যাস্ত, হাতে ম্যাঙ্গো জুস।
সব দেখে ইয়াদ টয়ার পাশের চেয়ারটা টেনে বসলো। টয়া একবার আড় চোখে তাকিয়ে আবার ফোনে দৃষ্টি স্থির করলো। ইয়াদ অ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য একটু কেশে নিলো। টয়া ইয়াদ নামক বিষয়টাকে ইগনোর করছে। ইয়াদের মেজাজ একটু বিগড়ে গেলো তার বাসায় এসে তাকেই ইগনোর করছে।
ইয়াদ টয়ার হাত থেকে হটাৎ করে জুসের গ্লাসটা নিয়ে নিলো। টয়া এবার বিরক্তি চোখে ইয়াদের দিকে তাকালো তরপর বললো,” দেখুন ওটা আণ্টি আমার জন্য বানিয়েছে। আমাকে ফেরত দিন।”
ইয়াদ গ্লাসটা নাড়িয়ে চারিয়ে দেখে বললো,” আচ্ছা ” বলে গ্লাসটা একটা চুমুক দিতেই টয়া চোখ বড় বড় করে ইয়াদের দিকে তাকালো।
ইয়াদ এমন কিছু করবে টয়া ভাবেনি। এক চুমুক দিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে গ্লাসটা টয়ার দিকে এগিয়ে দিলো। টয়া ভ্রু কুচকে ফেললো। ইয়াদ জুসের গ্লাসটা টয়ার সামনে রাখতে গিয়ে বললো,” তুমি অনেক অকৃতজ্ঞ সেটা কি তুমি জানো?”
টয়া চোখগুলো রসগোল্লার মতোন করে তাকালো তারপর বলল,” আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?”
” কালকে এতো কষ্ট করে তোমাকে বাঁচলাম তুমি একটা ধন্যবাদ দিলে না।” ইয়াদের কথায় টয়া এমন ভাবে তাকালো যেনো তার কাছ থেকে তার একটা কিডনি চেয়েছে ইয়াদ।
” আপনি আমাকে বাঁচিয়েছেন?” টয়ার কথায় ইয়াদ বললো,” নাহ্ ভূত তোমাকে কোলে করে ফ্ল্যাটে নিয়ে এসেছে। ”

টয়া আরো বিস্ময় নিয়ে বললো,” কিহ? আমাকে কোলে করে এনেছে! আপনি! আপনি কোলে নিয়েছেন আমাকে? কেনো?”

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো,” আসলে ভুল করেছি, তোমাকে অজ্ঞান অবস্থায় হাটিয়ে হাটিয়ে নিয়ে আশা উচিৎ ছিলো।”
” তাই বলে আপনি এভাবে অনুমতি না নিয়ে কোলে নিবেন?” উত্তেজিত হয়ে বললো টয়া।
ইয়াদ একটা ভ্রু তুলে বলল,” ও আচ্ছা তোমার অনুমতি নিতে হতো। তাহলে সেখানে অজ্ঞান অবস্থায় আগে তোমাকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ ছিলো এক্সকিউজ মি ম্যাডাম আমি আপনাকে কোলে করে বাসায় পৌছে দিবো? তারপর অপেক্ষা করতাম কখন তোমার জ্ঞান ফিরবে তুমি অনুমতি দিবে। তারপর কোলে নিতাম, হুম বুঝতে পেরেছি।”

ইয়াদের উপহাসে টয়ার রাগ হলো সে সামনে থাকা জুসের গ্লাসটা নিয়ে এক ঢোক পুরোটা শেষ করে ফেললো।
ইয়াদ সেটা দেখে হেসে ফেললো, রাগের মাথায় টয়া কি করেছে সে সেটা নিজেও বুঝতে পারছেনা। টয়া অবাক হয়ে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে থাকতেই তার মনে পড়লো ইয়াদ এই জুসটায় চুমুক দিয়েছিলো। এটা কি করে ফেলল টয়া? সে অনেক অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। টয়া আর ইয়াদের চেয়ারের মাঝে অনেকটাই দূরত্ব ছিলো। ইয়াদ টয়ার চেয়ারের মাথা ধরে নিজের দিকে টেনে আনতেই টয়া হকচকিয়ে উঠলো। সে আশেপাশে দেখলো কেউ দেখেছে কিনা? এমন সময়ে ইয়াদ টয়ার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললো,” কি দেখছো? কেউ দেখেনি। ”
ইয়াদের কাছাকাছি থাকলেই টয়ার বুকের ভিতরটা কেমন যেন করে।টয়া অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো,” আপনি কি শুরু করেছেন? আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে।” বলে টয়া উঠে যেতেই টয়ার হাত ধরে ফেললো ইয়াদ। টয়া দাড়ানোর আগেই বসে পড়লো। টয়া হাত ছড়ানোর জন্য নানা চেস্টা করছে আর ভয়ও লাগছে কেউ না জানি দেখে ফেলে।
টয়া আওয়াজ নিচু করে বললো,” আমার হাতটা ছাড়ুন।”
ইয়াদ টয়ার হাতটা নিজের কাছে টেনে নিতেই টয়া হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। ইয়াদ টেবিলের নিচে হাতটা আবার শক্ত করে ধরে বললো,” তুমি যদি এই চেয়ার উঠে অন্য চেয়ারে বসো তারপর আমিও পিছু পিছু গিয়ে তোমার পাশের চেয়ারে যদি বসি। কেমন হবে ব্যাপারটা? তোমার বাবা মা কি ভাববে? আর তুমি যদি না চাও আমি তোমার পিছু পিছু যাই তাহলে চুপ করে এখানে বসে থাকো।”

টয়ার ইয়াদের উপর বিশ্বাস নেই এই ছেলে সব পারে। উপায় না পেয়ে টয়া বসে রইলো। এই ছেলেটা এতো কথা শিখেছে কবে কে জানে? টয়া মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে বসে আছে আর নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। টয়ার এবার রাগ লাগছে, হাতটা এভাবে ধরে বসে আছে কেনো সে কি তার প্রেমিকা।
টয়া বির বির করে বললো,”হাত ধরে আছেন কেনো?”
“ভালো লাগছে, তাই।” বলে অন্য হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে টেবিলে রাখলো। টয়া তেজী গলায় বললো,” আমার ভালো লাগছে না।” ইয়াদ ফোনর স্ক্রীন স্ক্রোল করতে করতে বলল,” সে তোমার কিছুই ভালো লাগে না। তাই বলে কি সব কিছু তোমার ইচ্ছে মতো হবে?”

” মানে? আপনি আমার হাত ধরে আছেন কেনো আমি সেটাই বুঝতে পারছি না। আমি কি আপনার প্রেমিকা লাগি? হাত ছাড়ুন।” জোর দিয়ে বললো টয়া।
বলে সে বিরক্তি নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
ইয়াদ ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো,” উহু, you’re my wishing Star।”
ইয়াদ কথাটা একটু আস্তে নিজে নিজে বির বির করলো। টয়া কিছু না বুঝে আড় চোখে তাকিয়ে থেকে বললো,” কি বলছেন জোড়ে জোড়ে বলুন। বির বির করেছেন কেনো?”
” তুমি এতো ঝগড়ুটে কেনো?”ইয়াদের কথায় টয়া রাগে গজগজ করতে লাগলো।
তাকে ঝগড়ুটে বলা কতো বড় সাহস! সব সময় ঝগড়া বাজায় কে? নিজে ঝগড়া শুরু করে এবার আমাকে ঝগড়ুটে বলা। টয়া টেবিল থেকে অন্য হাত দিয়ে একটা কাটা চামচ তুলে ইয়াদের মুখের সামনে হুমকি স্বরূপ দেখাতেই ইয়াদ হেসে উঠে বললো,” সিরিয়াসলি টয়া” টয়া কিছু বলতে যাবে এমন সময় মিলি আক্তারের কণ্ঠ,” কি ব্যাপার কাটা চামচ হাতে কি করছো তোমরা।” শুনেই টয়া সাথে সাথে চামচটা আগের জায়গায় রেখে দিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
ইয়াদের মা ট্রেতে খাবার এনে টেবিল সাজালেন। ইয়াদ এখনো হাতটা ধরে আছে। টয়া ভীষণ অসস্থিতে পরেছে কেউ দেখে ফেললে কি যে ভাববে। টয়া আড় চোখে ইয়াদের দিকে তাকালো সে এমন ভাব করছে যেনো কিছু হয়নি।
টয়া একটু চালাকি করে নিচু স্বরে বললো,” হাতটা ব্যাথা করছে ছাড়ুন।” ইয়াদ যদিও টয়ার কথা বিশ্বাস করেনি তাও সে ছেড়ে দিলো হাতটা না হলে ইয়াদেরই সমস্যা পড়তে হতো কারণ ইয়া ডান হাতে টয়ার হাত ধরেছিলো। একটু পর এমনেই ছেড়ে দিতে হতো অন্য হাতে ধরে রাখা যেত কিন্তু থাক একটু আগে কাটা চামচ হাতে নিয়েছে কিছুক্ষণ পর হয়তো ছুরি দেখিয়ে শাসিয়ে যেতো।
টয়া যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো ছাড়া পেয়ে,হাতটা গুটিয়ে রাখলো।

খাবার টেবিলে সবাই গল্প করছিল টয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খেয়ে নিয়ে উঠে পড়ল। কখন আবার হুট করে হাত ধরে বসে এই চিন্তায় সে তাড়াতাড়ি খেয়ে একপাশের সোফায় বসে রইলো। এখন হুট করে বাসায় যাবার কথা বলতেও পারছেনা, সবাই খাবার টেবিলে আড্ডা দিচ্ছে। কখন যে শেষ হবে এদের আড্ডা বাসায় গেলেই টয়া বাঁচে। টয়ার বাবা ইয়াদের সাথে তখন থেকে কি যে গল্প শুরু করেছে থামার নাম নেই। এই ছেলের সাথে এতো কথা বলার দরকার কি তার বাবার। খাওয়া শেষ উঠে পড়লেই তো হয়। ইয়াদের মা কি যেনো একটা বললেন সেটা কানে আসতেই টয়া চমকে উঠলো।
” আপনার মেয়েটাকে আমার ভীষন পছন্দ হয়েছে ভাবি। ওদের দুজনকে মানবে ভালো।” এতটুকু শুনেই টয়া হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে গেলো।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here