তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ৯,১০

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ৯,১০
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ৯: #সবটা_আগের_মত

“আমি কি এই সিটে বসতে পারি।”ইয়াদের কথায় টয়া হা করে তাকিয়ে থেকে কান থেকে হেডফোন খুলে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টি নিয়ে আবার তাকিয়ে আছে। ইয়াদ বুঝতে পারলো ওকে আবার জিজ্ঞেস করতে হবে। সে আবার প্রশ্ন করলো, প্রশ্নে টয়া ইতস্তত বোধ করে হা সূচক মাথা নাড়ল। গ্রামে ফ্রী ট্রিটমেন্ট দেওয়ার কাজ বিকেল পর্যন্ত গড়িয়েছে। খেয়ে দেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যা সাতটায় বাসে উঠলো সবাই। ইয়াদের গাড়ি করে যাবার কথা ছিলো সে ড্রাইভারকে ফ্ল্যাটের ঠিকানা দিয়ে সেখানে চলে যেতে বললো। ইয়াদ বাসে উঠেই টয়ার পাশের সিট খালি দেখে অন্য কোথাও বসার চিন্তা করলো না।

টয়া জানালার পাশে বসে গান শুনছে, ইয়াদকে না করেনি কারন কাল রাতে লোকটা তাকে হেল্প করেছে। এভাবে একজন ছেলের সাথে পাশাপাশি বসে যেতে তার কেমন যানি লাগছে।
ইয়াদ পকেট থেকে ফোনটা বের করতে গেলে তার আইডি কার্ডটা পরে যায়। ইয়াদ তুলতে যাওয়ার আগেই টয়া সেটা হাতের কাছে পেয়ে তুলে দিতে গেলেই নামটা তার চোখে পড়ে
” ইয়াদ আরফিন ” নামটা তার চেনা। টয়ার মুখ গম্ভীর হয়ে গেলো। ইয়াদ আইডি কার্ডটা হাতে নিয়ে thank you বললো। টয়া শুধু মাথা নাড়ল কিছু বললো না।

টয়া কিছুক্ষণ পর পর ইয়াদের দিকে তাকাচ্ছে। ভালোভাবে তাকানোর পর এবার তার চেহারাটা চেনা চেনা লাগছে। এটা কি করে সম্ভব? এতো বছর পর হটাৎ আজ..? ইয়াদ কি জানে সে যে টয়া। হয়তো ভুলে গেছে, ভুলে গেলেই ভালো।
কিন্তু আসলে কি ভুলে গেছে? কাল রাতের সেই গানটা সেটা কেনো গেয়েছে সে? আর তার পুরো নামটা জিজ্ঞেসই বা করেছিলো কেনো? তাহলে কি ইয়াদ জানে এই মেয়েটাই সেই টয়া।
এইগুলো ভেবেই টয়ার অস্থির লাগছে, ইয়াদ আবার বসে আছে তার পাশে। অনেক কষ্টে যেই দিনগুলো সে ভুলে থেকেছে এতো বছর
আজ হটাৎ এক মুহুর্তে সবটা মনে পড়ল তার।

ইয়াদ কি কাজে ফোন নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো টয়া উঠে দাঁড়ালো। ইয়াদ একটু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো, হটাৎ আবার কি হলো? টয়া অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,” আমি বের হবো।” ইয়াদ কিছু চিন্তা না করেই টয়াকে বের হবার জায়গা দিতেই টয়া বের হয়ে পিছনে দুই সিট পরে তানিমার পাশে গিয়ে বসলো।
ইয়াদ প্রথমে বুঝলোই না কি হলো? হটাৎ এভাবে উঠে চলে গেলো কেনো? তখন আইডি কার্ডের কথাটা মনে পড়লো, তার মানে টয়া নামটা পড়ে বুঝতে পেরেছে সে যে ইয়াদ। ইয়াদ চোখ বন্ধ করে সীটে মাথা রাখলো। এভাবে উঠে যাওয়ার মানে কি টয়া সেদিনের কথা গুলোর জন্য রাগ।
না হলে এভাবে উঠে যাবে কেনো?
টয়া তানিমার পাশে বসতেই তানিমা বলে উঠলো,” কিরে হ্যান্ডসাম ছেলেটাকে রেখে আমার পাশে আসলি যে? কিছু কি করেছে?”
টয়া শুধু বললো,” ঘুম পাচ্ছে। একটু আমাদের লাইটা অফ করে দিতে বলবি?”
ইয়াদ সবটাই খেয়াল করলো এভাবে উঠে চলে যাওয়ায় ইয়াদের রাগ হচ্ছে। সে রাগটা সামলে নিয়ে সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।

রাত সাড়ে দশটার দিকে বিকট এক শব্দে
টয়া ভয়ে দাড়িয়ে পরে।সবাই চিন্তিত হয়ে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে গাড়ির টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে। এর থেকেও বিরক্তিকর কথা হচ্ছে তাদের কাছে এক্সট্রা কোনো টায়ার নেই, টায়ার আনতে নাকি এক ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। কথা শুনে সিনিয়র কিছু মানুষ চেঁচামেচি করতে লাগলো।
পরে কোনো মতে পরিবেশ ঠাণ্ডা হলো সবাই সিদ্ধান্ত নিলো তারা বাসের বাহিরে গিয়ে দাঁড়াবে এই কিছুক্ষণ। ইয়াদ নিজের সিটে বসে আছে, টয়ার অপেক্ষায় সে কখন নামবে।
টয়া উদাস হয়ে বাস থেকে বের হতেই পিছু
পিছু ইয়াদও বাস থেকে নেমে আসে।

টয়া অপন মনে ঘুরছে চারিপাশ। আশেপাশে জঙ্গলের মতন জায়গা আছে। বাসের বাকিরা উল্লাস করে রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে চা খাচ্ছে। এদিকে টয়ার পিছু পিছু ইয়াদও হাঁটছে। ইয়াদের মনে হচ্ছে সাত বছর আগের সাথে আজকের অনেক মিল পার্থক্য শুধু আগে টয়া পিছু পিছু আসতো, এখন ইয়াদ পিছু পিছু যাচ্ছে। টয়া নিজের মতো হাঁটতে হাঁটতে হটাৎ তার কানে এলো,” ওদিকে জঙ্গল , ওদিকে যাওয়াটা safe না।”

হটাৎ আওয়াজেই টয়া লাফিয়ে ওঠে পিছনে তাকালো। পিছনে ইয়াদ দাড়িয়ে, এবার সে চারপাশে তাকালো ভয়ে নাজেহাল অবস্থা টয়ার। যেদিকে তাকাচ্ছে চারিদিকে শুধু গাছপালা। অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে সে নিজেও জানে না। আর টয়ার পিছু পিছু ইয়াদ এসেছে কেনো সেটাও সে বুঝতে পারছেনা।

ইয়াদ এগিয়ে গিয়ে বললো,” টয়া চলো এখান থেকে, জায়গাটা ভালো মনে হচ্ছে না।” টয়ার হাত পা যেনো শীতল হয়ে গেছে কেনো এমন হচ্ছে? সাত বছরেও কি টয়ার অনুভুতি পাল্টায় নি? সব কেনো আগের মত লাগছে। টয়া সেই দিনগুলোতে আর ফিরে যেতে চায় না অনেক কাদিয়েছে সেই দিনগুলো তাকে। ইয়াদ টয়াকে আবার বললো,” চলো।”
টয়া ভারী গলায় বললো,” আমি যাবো না আপনার সাথে। যেতে হলে একাই যেতে পারবো।”

ইয়াদ কিছুটা চমকালো কিন্তু বুঝতে পারলো যে রাগের জন্যই বলছে এসব। ইয়াদ এক হাত পকেটে ভরে বললো,” কেনো আমার সাথে গেলে কি আমি তোমাকে গিলে ফেলবো? এমনিতে আমার সাথে না যেতে চাইলে থাকো, একটু পর সিঙ্গেল ভূতেরা পেত্নী খুঁজতে বের হলে তাদের সুবিধাই হবে, হাতের কাছে একটা পেত্নী পেয়ে যাবে।”

ভুত পেত্নীর কথা টয়া সহ্য করতে পারে না। টয়া একটা চিৎকার দিয়ে ইয়াদের আশেপাশে এসে দাড়ালো তারপর মেজাজ দেখিয়ে বললো
,” আপনি আমাকে পেত্নী বললেন কেনো?”
ইয়াদ দুই হাত পকেটে ভরে হাঁটতে হাঁটতে বললো,”এতো কথার উত্তর আমি দিতে পারবো না, ইচ্ছে হলে আমার সাথে এসো না হলে ভূতেদের জন্য অপেক্ষা করো।”

টয়া ইয়াদের পিছু পিছু হাটছে তার কাছে আর কোনো উপায়ও নেই। কি ধরনের কথা বলছে, সিঙ্গেল ভুত আবার কি? ভূতেরা কি আবার প্রেম করে নাকি? আজই শেষ দেখা এরপর টয়া আর কোনোদিন ইয়াদের মুখোমুখি হতে চায় না।
ইয়াদের পিছু পিছু টয়া রাস্তার পাশের খালি জায়গা যেখানে সবাই আছে সেখানে এলো।

কিছুক্ষণ পর টায়ার নিয়ে লোকটা এসে যায়। টায়ার বদলাতে লোকটার আরো কিছুক্ষণ সময় লাগে এর মাঝে টয়া এক কাপ চা খেয়ে নেয়। টায়ার বদলানো শেষে ড্রাইভার সবাইকে তাড়া দেয় টয়া চায়ের টাকা দিয়ে বাসে উঠবে এমন সময় ইয়াদ টয়ার সামনে এসে বলে,” এখন গিয়ে চুপচাপ আমার পাশের সিটে বসবে।”

টয়ার যেনো মাথার উপরে ভারী কিছু দিয়ে কেও বাড়ি দিচ্ছে এমন মনে হলো ইয়াদের কথা শুনে। টয়া কেনো তার পাশে বসতে যাবে, আর এমন হুমকি বা দিচ্ছে কেনো? টয়া আরো রেগে বললো,” মুড়ির মোয়া পেয়েছেন ? ইচ্ছে মতন! আমি কেনো আপনার সাথে বসতে যাবো? জীবনেও বসবো না।”

এমন সময়ে গাড়ির কন্ডাক্টার এসে বললো,” গাড়িতে উইঠ্যা কথা বইলেন। অহন চলেন, উডেন।”
ইয়াদ মুখ শক্ত করে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে, টয়া সেটা গ্রাহ্য না করে বাসে উঠে পড়ল। বাসে উঠে টয়া থ। যে যার সিটে না বসে সবাই ইচ্ছে মতন উল্টা পাল্টা করে বসেছে নিজের মতন। টয়া দেখলো শেষের দুইটা সিট বাদে সবগুলো ভরাট। টয়া ফ্রেন্ডদের উঠে পিছে যেতে বললে তারা বলেছে,” তুই দেরী করে উঠেছিস কেনো? যা এবার, পিছে বসে বাকি রাস্তা যাবি।”

টয়া ভালোই বুঝতে পড়ছে এই বেয়াদবগুলো ওকে বসতে দিবে না।
এর মাঝে ইয়াদ শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে পিছের সিটে এসে বসে পড়লো। টয়া বাধ্য হয়ে ইয়াদের পাশের সীটে গাল ফুলিয়ে বসলো। ইয়াদ বাকা হাসি দিয়ে বললো,” যা হওয়ার সেটা তো হবেই, তুমি চাইলেও আটকাতে পারবে না।”
ইয়াদের কথায় টয়া রাগ আরো বেড়ে গেছে তার ইচ্ছে করছে গাড়ি থেকে নেমে যায় কিন্তু সেটা সম্ভব না, বাধ্য হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে তাকে।

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ১০ : #আমার_গার্লফ্রেন্ড
লেখিকা :#নবনী_নীলা

টয়া এতো রাগী হলো কবে ইয়াদ সেটাই বুঝতে পারছে না। গাল ফুলিয়ে বসে আছে এমন ভাব করছে যেনো চিরো শত্রুর পাশে বসে আছে। টয়া কানে হেডফোন লাগিয়ে বাসের সীটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে। সামনের ছোটো চুল গুলো গালের দুপাশে এসে পড়েছে, কিছুক্ষণ পর উড়ে টয়ার মুখে পড়ছে। ইয়াদ বিস্ময় নিয়ে টয়াকে দেখছে। হটাৎ করে এভাবে মেয়েটার সাথে তার দেখা হয়ে যাবে এটা সে ভাবেনি।

টয়া ঘুমে কাহিল সে অন্য পাশে মাথা রেখেছে। ইয়াদ ভেবেছিলো মাথাটা ঠিক করে দিবে, হাত বাড়ালো কিন্তু সে সেটা করলো না। উপকার করতে গিয়ে ঘুম ভেঙে ফেললে মহারানী আবার তেলে বেগুনে রেগে উঠবে। টয়া নিজে নিজে ঘাড় সোজা করেলো। তারপর চোখ খুলতেই দেখলো ইয়াদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া বিরক্তি চোখে তাকালো কিন্তু ইয়াদ চোখ সরালো না। আরো এমন ভাবে তাকিয়ে থাকলো যেনো টয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার অধিকার আছে তার।
টয়া কিছু বলার আগেই বাস থামলো। সবাই বাস থেকে নামতে শুরু করেছে। টয়া আর ইয়াদ দুজনেই নেমে পড়লো। ইয়াদ অবাক হয়ে শহরটা দেখছে। অনেক কিছু বদলেছে কিন্তু আকাশটা আজও তারায় ভরা। ইয়াদ কিছুক্ষণ এদিকে ওদিকে তাকিয়ে চারিপাশ দেখছিল এর মাঝে টয়া একটা রিক্সায় উঠে চলে গেলো। ইয়াদ পরে আর টয়াকে আশে পাশে দেখলো না। মেয়েটা হটাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। দুই জন নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হলো।

______________________________

টয়ার ভার্সিটির ফাইনাল বর্ষের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি টয়া একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। একটা অফিসে পার্ট টাইম জব করছে। টয়ার পুরো ফ্ল্যাট এর সব ওয়ালম্যাট টয়ার নিজের ডিজাইন করা। নিজের রুমটা মনের মত করে সাজিয়েছে সে। টয়া আর ঋতু মিলে ফ্ল্যাটটায় থাকে। ঋতু টয়ার সাথেই পড়ে, তবে বেশির ভাগ সময় ঋতু ঘুড়িয়ে বেড়িয়ে কাটায়। তাই পুরো ফ্ল্যাট এ তার একাই থাকতে হয়। বাবা মা গ্রামে চলে গেছে, তারা সেখানেই নাকি থাকতে চায়। টয়ার পড়ুয়া ভাইয়া বিয়ে করে বড়ো ভাইয়ার কাছে চলে গেছে।
টয়া একাই এই শহরে আছে দু বছর ধরে। এই ফ্ল্যাটটা বড়ো ভাইয়ের দেওয়া। টয়া চাইলে তাদের পাঁচতলা বাসাটায় থাকতে পারতো কিন্তু ওই বাসায় একা থাকতে তার ভালো লাগে না। বারো তলা বিল্ডিংটার এগারো তলায় থাকছে টয়া।

বাসাটা অনেক সুন্দর দুইটা রুম, ড্রয়িং, ডাইনিং, কিচেন আর সবচেয়ে ভালো লেগেছে করিডরটা। উপরে তাকালেই তারায় ভরা আকাশটা দেখা যায়। টয়ার আজ কিছু ডিজাইন জমা দিতে হবে। ডিজাইন গুলো নিয়ে সে লিফটে দাড়ালো। লিফটটা বন্ধ হয়ে আসতেই একজন হাত দেওয়ায় দরজাটা খুলে যায়। ফরমাল ড্রেসে একজন লিফটে উঠলো। কালো প্যান্ট , সাদা শার্ট , হাতে সিলভার কালারের ঘড়ি। টয়া মুখের সামনে ডিজাইনগুলো ধরে রাখায় চেহারা দেখতে পায় নি। এতক্ষন ডিজাইনগুলো ধরে রাখতে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে সবগুলো লিফটে এলো মেলো হয়ে পরে যায়।

টয়া বিরক্তি নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা তুলতেই বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠলো কারণ সামনে ইয়াদ দাড়িয়ে আছে। এমনটা সে আশা করেনি, ইয়াদও চমকে গেছে।
দুদিন ধরে যাকে খুজে বেড়াচ্ছে সে কিনা একই বিল্ডিং এ আছে। ইয়াদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ঘাড় কাত করে হেসে ফেললো। টয়া একটা ঢোক গিলে ডিজাইন গুলো তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। ইয়াদ কিছু ডিজাইন তুলে নিয়ে দেখতে লাগলো, ডিজাইন গুলো দেখে বুঝতে দেরী হলো না যে টয়া একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার।
ইয়াদ কিছুক্ষণ সেগুলো দেখে তারপর বললো,” বাহ্ , impressive!”

এর মাঝে টয়ার ডিজাইন গুলো তোলা শেষ। সে উঠে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে ইয়াদের হাত থেকে বাকিগুলো টান দিয়ে নিয়ে নেয়। ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো,” কি সমস্যা তোমার? ”
টয়া বিরক্তি নিয়ে বললো,” বুঝলাম আপনি ডক্টর তার মানে এই না সবাইকে জিজ্ঞেস করে বেড়াবেন কি সমস্যা। আর আমার সমস্যা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।”
টয়ার কথা শেষ হতেই লিফট নিচে নেমে দরজা খুলে দিলো। টয়া বেড়িয়ে যাচ্ছিলো ইয়াদ টয়ার হাত ধরে অন্য হাতে আবার লিফটের ১০ বাটনে প্রেস করলো। টয়ার চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো। ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে লিফটের দেওয়ালে সাথে দাড়করালো। টয়ার বিস্ময়ের সীমা রইল না। কি হয়েছে এই ছেলের? টয়া দাতে দাঁত চিপে বললো,” কি করলেন এটা আপনি? আবার কেনো উপরে যাচ্ছি আমরা?”

ইয়াদ টয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের পকেটে হাত ভরে বললো,” আমার ঘড়ি লাগবে তাই।” টয়া ভালোভাবেই দেখতে পারছে ইয়াদের হাতে ঘড়ি আছে তাহলে…? টয়া কটাক্ষ করে বললো,” আপনার কি চোখে সমস্যা? নাকি দুই হাতে দুটো ঘড়ি পড়বেন?”
ইয়াদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,” কালারটা ডাল লাগছে, চেঞ্জ করবো।”
এই কথা শুনে যেনো টয়ার মাথা আরো গরম হয়ে গেল। সামান্য একটা ঘড়ি বদলাতে উপরে উঠছেন তিনি ভেবেই রাগে গা জ্বলছে। টয়া রাগ চেপে বললো,” দেখুন আপনার কাছে অফুরন্ত সময় থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে নেই। আমার এগুলো অফিসে জমা দিয়ে আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে।”

ইয়াদ লিফটের দেওয়ালে হেলান দিয়ে প্রশ্ন করলো,” সমস্যাটা তাহলে কার?” টয়া রেগে গিয়ে বলল,” অবশ্যই আমার সমস্যা।”
ইয়াদ বললো,” তোমার সমস্যা নিয়ে আমি কেনো ভাববো? As you said তোমার সমস্যা নিয়ে আমার ভাবনার দরকার নেই।”

রাগে টয়ার গা জ্বলে যাচ্ছে। টয়া ওই কথা বলেছে বলে এভাবে বদলা নিচ্ছে তো, ঠিক আছে। সুযোগ পেলে টয়াও ছেড়ে কথা বলবে না। টয়া অপেক্ষা করে আছে কখন ইয়াদ লিফট থেকে বের হবে ঘড়ির জন্য। একবার বের হলেই টয়া বাঁচে। লিফট এসে থামলো কিন্তু ইয়াদ বের হচ্ছে না, এটা দেখে টয়ার আরো রাগ হচ্ছে। ” কি ব্যাপার? যাচ্ছেন না কেনো আপনি?” টয়ার প্রশ্নে ইয়াদ বললো,” না ঘড়িটা ভালোই লাগছে এখন। বদলানোর প্রয়োজন নেই, নিচেই যাওয়া যাক।” বলে আড় চোখে টয়ার দিকে তাকিয়ে বাটন প্রেস করলো।

টয়ার রাগের মাত্রা বেড়েই চলেছে। মনে হচ্ছে সে রোলার কোস্টারে উঠেছে, একবার উপরে আবার নিচে অসহ্য লাগছে। এই ছেলেটা আর কোনো বাসা পেলো না? ঢাকা শহরে কি বাড়ির অভাব পড়েছে? যত দূরে দূরে সরে থাকতে চাইছে টয়া ততবার কাছে চলে আসছে ইয়াদ।
লিফটটা নীচে এসে থামতেই টয়া দৌড়ে বেড়িয়ে এলো। মনে হচ্ছে যেনো পিছনে ডাকাতরা ধাওয়া করেছে। ইয়াদ একটু হেসে লিফট থেকে বেরিয়ে এলো।
ইয়াদ নিজের গাড়িতে উঠে বসলো।

টয়া আজ এমনিতেই দেরী করে ফেলেছে। ভার্সিটিতে আবার শয়তান নিরবটা আবার এসে হাজির। এই ছেলেটা কি চাইছে টয়া বুঝতে পারছে না। টয়া এড়িয়ে যেতে চাইলো নিরব এসে হাত ধরে ফেললো। টয়া হাত ছাড়িয়ে বললো,” দেখ আমার ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে। একদম জ্বালাবি না এখন।”
নিরব টয়ার দিকে রেগে বললো,”তোকে ফোন করেছি ধরিস নি কেনো? এনজিও থেকে ফিরে এসে দেখাও করলি না।”

টয়া রেগে বলল,” নীরব আমি এখন ক্লাস এ যাবো।”

নিরব কপাল কুচকে বললো,” আচ্ছা বাবা যা। আমি বাহিরে ওয়াইট করছি ।”

টয়া হাতের ইশারায় থাকতে বলে ক্লাসের দিকে গেলো। টয়ার ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরব বসে রইলো ক্যান্টিনে। টয়ার ক্লাস শেষে টয়া এসে নিরবকে হাত ধরে টেনে দাঁড়করালো। নিরব দাড়াতে দাড়াতে বললো,” আবার কি হলো? শেষ তোর ক্লাস?”
টয়া তাড়া দিয়ে বললো,” হুম, চল এবার আমায় বাসায় দিয়ে আয়।”

নিরব না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” না আমার তোর সাথে কথা আছে। আর এমনিতেই তোর বাসায় যাওয়া আমার জন্য নিষেধ করেছিস। তুই কুমারী মেয়ে , ফুলের মত পবিত্র ব্লা ব্লা……. । তুই বাহির থেকেই তাড়িয়ে দেস। so তুই আমার সাথে থাকবি কিছুক্ষণ।” বলে নিরব আবার বসে পড়ল।

টয়া নিরবের শার্ট টেনে বললো,” উঠ, গাড়ীতে কথা বলবে। চল”

নিরব উঠে দাড়ালো এই মেয়ে নাছোড় বান্দা।
নিরব একটা উবার ডাকলো।
ফ্ল্যাটের সামনে এসে থামতেই টয়া আর নিরব নেমে যায়।
নিরব বিরক্তি নিয়ে বলে,” যা বাসায় যা।” টয়া সেদিকেই যাচ্ছিলো হটাৎ মনে হলো এবারও যদি লিফটে ইয়াদ থাকে। ভেবেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। টয়া তাই নিরবের কাছে এলো। নিরব ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমাকে তোর ফ্ল্যাটে যেতে বলবি না জানি তাহলে আবার ফিরে এলি যে।”

টয়া আমতা আমতা করে বলল,” আমাকে একটু লিফট করে বাসার দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিবি।”
নিরব যেনো কোনো হাসির কথা শুনেছে এভাবে হাসছে। টয়া মুখ কালো করে তাকিয়ে আছে। নিরব হাসি থামিয়ে বললো,” লিফটে ভুত দেখেছিস?” নিরবের কথায় টয়া বির বির করে বললো,” ভুত না রাক্ষস।” তারপর নিরবকে টেনে নিয়ে যায়।

লিফটে ইয়াদ ছিলো না তবে টয়ার ফ্ল্যাটের দরজার সামনে পৌঁছে টয়ার গলা শুকিয়ে এলো। টয়ার মুখোমুখি ফ্ল্যাটটার সামনে ইয়াদ দাড়িয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে দরজা খুলছে। এটাই হবার বাকি ছিলো। টয়া পা বড় বড় পা ফেলে নিজের ফ্ল্যাটের সামনে গেলো। ইয়াদ খেয়াল না করলেই সে বাঁচে। ইয়াদ ফোনে ব্যাস্ত, টয়া এর ফাঁকে দরজা খুলে ফেলে। নিরব ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে, টয়া ইশারায় নিরবকে চলে যেতে বললো।

নিরব বলে উঠলো,” তুই ভিতরে গিয়ে দরজা বন্ধ কর তারপর যাবো।”

নিরবের কথায় ইয়াদ পিছে ফিরতেই টয়াকে দেখলো। টয়া সাথে সাথে দরজা লাগিয়ে দিল। ইয়াদের চোখ গেলো এবার নিরবের দিকে, টয়া কার সাথে এতক্ষন ছিলো। ইয়াদ কান থেকে ফোন নামিয়ে কলটা কেটে ফোনটা পকেটে রেখে তীক্ষ্ণ চোখে নিরবের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিরব কি ভেবে ইয়াদের দিকে এগিয়ে বললো,” এই ফ্ল্যাটটায় আপনি থাকেন?” ইয়াদের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল সে কিছু বলল না। নিরব নিজে থেকেই একটু হুমকির মতো দিয়ে বললো,” এই ফ্ল্যাটে আমার গার্লফ্রেন্ড থাকে , বুঝলেন।”

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here