আষাঢ়ে_প্রেম_শ্রাবণে_পরিণয়,শেষপর্ব(১ম খন্ড)
লেখিকা_সুমাইয়া_জাহান
দেখতে দেখতে বর্ষাকাল পেরিয়ে গেছে। শরৎ আর হেমন্তকে বিদায় জানিয়ে ধরণির বুকে শীতের আগমন ঘটেছে। প্রকৃতি সেজেছে তার নতুন রুপে।
সজীবতা হারিয়ে সে রুক্ষতা আবরণে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে। সাঁইসাঁই করে চারদিকে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। চিরচেনা পথ ঘাট ডুবে গেছে কুয়াশার সাদা চাদরের আবরণে।সবুজ ঘাসের উপর বিন্দু বিন্দু শিশিরজল জমেছে।সবুজ ঘাসের কচি ডগায় সে জল টলমল করছে। উত্তরের সমীরণ গায়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে।চারপাশে ঘন কুয়াশার আচ্ছাদন চাঁদোয়ার মতো প্রকৃতিকে ঘিরে রেখেছে।এক হাত দূরের জিনিসও ঠিকভাবে বোঝবার উপায় নেই এমনি কুয়াশার দাপট।পৃথিবীর বুকে অন্ধকার ঘাঢ় হওয়ার আগে ফাঁকা মাঠে কুয়াশা জমাট বাঁধতে শুরু করেছে।ঘনায়মান অন্ধকারেও অতিথি পাখিরা দলবেঁধে ক্লান্তিহীন ছুটে চলেছে নিরুদ্দেশের যাত্রায়।ধীরেধীরে ধরণী তলিয়ে যায় অন্ধকারের অতল গভীরে। কুয়াশারা ঘাঢ় থেকে আরো ঘাঢ় হয়। সেঁজুতিদের টিনের চালায় ফোঁটা ফোঁটা কুয়াশা টপ টপ করে ঝরে পড়ছে।আর টপ টপ করে ঝরে পড়া কুয়াশা টিনের চালায় শব্দের নতুন ছন্দ তুলে।সেঁজুতি কান পেতে শুনছে সেই শব্দ।বেশ লাগছে তার।চারপাশে নিস্তব্ধতায় ছেয়ে আছে। নিশুতি রাতে দূর হতে মাঝে মাঝে শেয়ালের হাঁক ভেসে আসছে। কনকনে শীতের রাতে সেঁজুতি লেফ মুড়িয়ে শুয়ে আছে, পাশেই হামিদা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।মাথার কাছে মিটমিট করে হারিকেন জ্বলছে।সেঁজুতি একদৃষ্টিতে সেটা দেখছে।দেখতে দেখতে তার চোখ দুটো ক্ষীণ হয়ে আসে,চোখের কার্নিশে জল জমে।সেঁজুতি চোখের পকল ফেললে একফোঁটা জল গড়িয়ে এসে নাকের ডগায় পড়ে। সেঁজুতি দ্রুত হাতের উল্টো পিঠে সেই জল মুছে নেয়, হারিকেন আলো মৃদু বাড়িয়ে ধীরেধীরে শোয়া থেকে উঠে বসে। অনেক রাত হয়েছে তবুও তার চোখ দুটিতে ঘুম নেই। মনে রাজ্যের যত অস্থিরতা ভর করেছে। রাত বাড়ার সাথে সাথে কষ্ট গুলোও কেমন গভীরভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বুক ভার হয়ে এলো সেঁজুতির। হাজারটা যন্ত্রণা যেনো দলা পাকিয়ে তাকে ঝাপটে ধরেছে এমনি বিতৃষ্ণায় মন অস্থির হয়ে উঠে।
সেঁজুতি হারিকেনের আলো বাড়িয়ে বিছানা ছেড়ে নামলো।আলনা থেকে চাদরটা নিয়ে বেশ করে গায়ে জড়িয়ে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো।নিশুতি রাত চারপাশে পিনপতন অন্ধকার।দূরে কোথাও কয়েকটা কুকুর একসাথে চেঁচামেচি করছে।কনকনে শীত উপেক্ষা করে গুটিগুটি পায়ে সেঁজুতি পিছনের বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।এক হাতে সাবেতের দেয়া সেদিনের চিঠিখানি মুঠো করে ধরে আছে অন্য হাতে হারিকেনটা বারান্দার এক কোণে রেখে মাটিতে লেপ্টে বসলো সে। মনটা আজ তার বড্ড পুড়ছে। বুকের ভিতর জমিয়ে রাখা কষ্টগুলো ডানা ঝাপটাচ্ছে, একটু খানি সুযোগ পেলেই যেনো দলবেঁধে বেড়িয়ে আসবে। কান্নারা দলা পাকিয়ে ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসতে চায় সেঁজুতি বড় বড় নিশ্বাস ফেলে তাদের দমিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় কিন্তু পারে না অচিরেই তারা সেঁজুতিকে ব্যার্থ করে শ্রাবণের ঢলের মতো বুক ছিঁড়ে বেড়িয়ে আসে। সেঁজুতি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। তার চাপাকান্নার সুর কনকনে শীতের রাতে করুন আত্ননাদের মতো শুনায়। প্রথম প্রেমের অনুভুতি গুলো আজ বিষধর সাপের ন্যায় তাকে প্রতিনিয়ত দংশন করছে। প্রথম যৌবনের ভয়ংকর প্রেমের সুখকর অনুভুতি গুলো আজ বিভীষিকা হয়ে পোড়াচ্ছে খুব।হৃদয়টা যেনো দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে।সেঁজুতি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।কাঁদতে কাঁদতে তার হেঁচকি উঠে গেছে।নিজেকে ধাতস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেও সে সফল হচ্ছে না।সাবেতের স্মৃতি তাকে বড্ড বেসামাল করে তুলছে।ধারালো তরবারির ন্যায় সেগুলো তার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে।
অনেকটা সময় পেড়িয়ে গেলে সেঁজুতি নিজেকে ধাতস্থ করে চোখ মুছে নেয়। হারিকেনের আলো মৃদু বাড়িয়ে সাবেতের দেয়া চিঠিটা সমুখে মেলে ধরে।
আমার প্রিয়, আষাঢ়ে সদ্য ফোঁটা কামিনী,
সকাল হতেই মনটা বড় বিমর্ষ হয়ে আছে।হৃদস্পন্দন বেগতিক ভাবে বাড়ছে। দু-দন্ড শান্তি পাচ্ছি না কোথাও।যেখানে যাই, যে ভাবনাই ভাবি না কেনো ঝড়ের রাতের তোমার লজ্জায় রাঙা ওই ভয়ার্ত মুখটা সমুখে ভেসে উঠছে। হারিকেনের লাল আলোয় তোমার কাজল কালো চোখ দুটি আমায় দ্বিতীয় বারের মতো খুন করেছে।আমি আবারো খুন হয়েছি তোমার ওই কাজল কালো পাখির নীড়ের মতো টানা টানা চোখ দুটিতে। তোমার ভয়ানক চাহনি আমায় পাগল করেছে,মনটাকে বড্ড অস্থির করে তুলছে।আমি যেনো আর আমিতে নেই তোমাতে ডুবে গেছি।তোমার হৃদয়ের গোপন কোনো কুঠরিতে আটকা পড়ে গেছি।সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথ বোধ হয় হারিয়ে ফেলিছি।তুমি নামক নেশা আমায় সর্বক্ষণ গ্রাস করে রাখে। আমি চেয়েও নিজেকে সামলে রাখতে পারছি না,পারছি না তুমি নামক ভাবনা হতে বেরিয়ে আসতে। কি করবো আমি? কি করে আমি এই প্রেমাসুখ থেকে পরিত্রাণ পাবো? এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো উপায় কি নেই?ওগো আমার আষাঢ়ে সদ্য ফোঁটা কামিনী তুমি কি জানো, তোমার কথা ভেবে ভেবে কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি,তোমায় একটি বার দেখার আশায় কতবার তোমার পিছু নিয়েছি?জানো না, জানতে দেই নি আমি। তবে আজ শুনো সেদিন ছিলো শনিবার আমি কি এক কাজে বেরিয়েছিলাম।ধান ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটছিলাম, পথে হঠাৎ দূর থেকে তোমায় দেখি সাথে আরো দুজন।একজন বারো কি তেরো বছরের কিশোরী অন্যজন ছয় কি সাত বছরের ছেলে।গ্রামের কাঁদা মাখা মাটির রাস্তা ধরে তিনজন হেঁটে যাচ্ছো স্কুলে।আমি পিছু নিলাম।স্কুল পর্যন্ত তোমায় অনুসরণ করতে করতে গেলাম।তুমি কি বোকা বুঝতেই পারলে না।এইভাবে প্রায় তোমার পিছু নিতাম তোমাকে একটিবার দেখার জন্য।ভেবেছিলাম তুমি বুঝতে পারো নি কিন্তু একদিন ঠিক ধরা খেয়ে গেলাম, তুমি ঠিক বুঝে গেলে আমি তোমার পিছু নিচ্ছি।তারপরের কথা মনে আছে তোমার? একদিন দুপুরে আকাশ ভেঙে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামলো। তুমি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলে, পথেই আমার সাথে দেখা আমি একটা বড় গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলাম।ঝুম বৃষ্টি, তুমি উপায় না পেয়ে গাছ তলায় আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলে।তোমার আমার মধ্যিখানে তখন এক হাত দূরত্ব।তুমি প্রচণ্ড ভয়ে পাচ্ছিলে সাথে লজ্জা। তুমি প্রায় অর্ধভেজা শরীর, লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছিলে।আমি সাহস পাচ্ছিলাম না তোমার দিকে তাকানোর শুধু একবার আড়চোখে দেখেছি।তোমার পদ্মফুলের পাপড়ির ন্যায় শুভ্র অধরযুগল নীলাভ রঙ ধারণ করেছে।তিরতির করে কাঁপছিল তারা।গালে ফোঁটা ফোঁটা জল জমেছিলো কি অপুর্বই না দেখাচ্ছিলো তোমায়। তুমি ভয়ে কাঁপছিলে,তোমার লজ্জায় আরক্তমুখ খানা আমার হৃদয়ের অতল সমুদ্রে তখন ঢেউ বইয়ে দিচ্ছিলো।আমি আবারো আমার হৃদয়ের স্থবিরতা অনুভব করি।
তুমি আড় চোখে একবার আমায় দেখেছিলে, বিশ্বাস করো তোমার সেই চাহনি আমায় ভিতরে ভিতরে উন্মাদ করে তুলছিলো।কি শিহরণ জাগানো সেই অনুভুতি আমি বলে বুঝাতে পারবো না।সেইদিন প্রথম আমার প্রেম নামক সেই আশ্চর্য অনুভুতির সাথে পরিচয় হয়।
আজ আমার গ্রাম ছেড়ে যাবার পালা। খুব যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের বা পাশটায়। তোমায় আমি প্রেম নিবেদন করিনি শুধু সহধর্মিণী হওয়ার আবেদন জানিয়েছি জানি না তোমার উত্তর কি হবে। আমার
দেয়া ছোট্ট জিনিসটি তোমার অঙ্গে এতটুকু স্থান পাবে কিনা তাও জানি না।যাবার বেলায় তোমার মুখখানি আরেকবার দেখবো কিনা সেটা নিয়েও বড় সংশয়ে আছি।তবে তোমার উত্তর যাই হোক আমি সব মেনে নিতে প্রস্তুত।তোমায় বিদায় জানাতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।খুব ভালো থেকো আমার আষাঢ়ে সদ্য ফোঁটা কামিনী।নিজের যত্ন নিও আর পড়াশুনো কিন্ত ভালোভাবে করা চাই।
ইতি,
তোমার ডাক্তার সাহেব।
চিঠিটা শেষে সেঁজুতির চোখের কার্ণিশ বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। সেঁজুতি হাতের উলটো পিঠে আবারো সেটা মুছে নিলো তারপর চিঠিটা সযত্নে ভাঁজ করে বুকের সাথে ঝাপটে ধরে।
সাবেত চলে গেছে প্রায় ছয়মাস হলো আর এই ছয়মাসে সেঁজুতি চিঠিটা ঠিক কতবার পড়েছে জানা নেই।চিঠিটা যত বার পড়েছে ততোবার সেটাকে নতুন বলে মনে হয়েছে সেঁজুতির। চিঠিতে লিখা প্রতিটা অক্ষর আজও প্রথম দিনের মতো মনে শিহরণ জাগায়।এক অন্যরকম আবেশে জড়িয়ে নেয় সেঁজুতিকে। মনের কোণে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত অনুভুতিগুলো আজও প্রথম দিনের মতো হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়। নিশ্বাস ভারী করে তুলে। হৃদয়ের উত্তাল সমুদ্রে প্রলয়কারী ঘুর্ণিঝড় বইয়ে দেয়। এই ঝড় যেনো থামবার নয়, হৃদয় তোলপাড় করা প্রেম নামক সেই ঝড় সেঁজুতির বিক্ষিপ্ত হৃদয়কে আন্দোলিত করে। নবযৌবনের প্রেমাসুখ তাকে মাতাল করে তুলে। তার প্রিয়তমকে দেখার অসুখ রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবাহিত হয়ে তাকে উন্মাদ করে তুলে।তবুও একটিবার সেঁজুতি তার প্রিয়তমের দেখা পায় না। প্রেমিকের বিরহে সেঁজুতি কতসহস্র আশ্রু বিসর্জন দিয়েছে সেখবর কেউ রাখে নি তবুও প্রেমিকের দেখা মিলে না।সাবেত সেদিন ফিরে আসার কথা দিলেও আর ফিরে আসে নি।ছয় মাস শেষ হতে চলেছে তবুও তার কোনো খবর নেই।সেঁজুতি রোজ প্রতিক্ষার প্রহর গুনে কিন্তু সেই প্রতিক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না, সাবেতের দেখা মিলে না, খবর আসে না।সেঁজুতি জানে না সাবেত কোথায় আছে কেমন আছে।ঢাকায় যাবার পর মাস তিনেক সাবতে নিয়ম করে চিঠি দিতো। প্রথম প্রথম চিঠি দীর্ঘ হলেও পরে তা ক্রমশ সংক্ষিপ্ত হতে থাকে। চিঠিতে সে খুব একটা বেশি কিছু লিখত না।সেঁজুতি কেমন আছে? পড়াশোনা ঠিক করে করছে কিনা এই দুই এক বাক্য ছাড়া অতিরিক্ত কোনো বাক্যই সাবেত লিখতো না।একটা সময় পর হঠাৎ সাবেতের চিঠি আসা বন্ধ হয়ে যায়। এক মাস দুই মাস এইভাবে আরো তিনটি মাস কেঁটে যায় কিন্তু সাবেতের দেয়া আর কোনো চিঠিই সেঁজুতির কাছে আসে না।সেঁজুতি প্রতি মাসে নিয়ম করে সাবেতের ঠিকানায় চিঠি পাঠাত কিন্তু সেই চিঠির প্রতিউত্তর অপর পাশ থেকে কেউ দেয় নি। সেঁজুতি প্রতিদিন অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে এই বুঝি সাবেত তাকে চিঠি পাঠালো কিন্তু না সাবেত কোনো চিঠিই আর পাঠায় নি।
রাতের প্রায় অর্ধপ্রহর কেঁটে গেছে।কিছুক্ষণ পর ফজরের আজান পড়বে।সেঁজুতি কনকনে ঠান্ডায় নির্লিপ্ত ভাবে বারান্দা বসে আছে। মাঘের শীত যেনো তার শরীর ছুঁতে পারছে না।একটু পর চারপাশ হতে আজানের ধ্বনি ভেসে এলো সেঁজুতি এইবার ধীরোস্থির হয়ে উঠে দাঁড়ায়। হারিকেন হাতে করে গুটিগুটি পায়ে কলপাড়ে গিয়ে ওযু সারে।তারপর ঘরে ফিরে আলতো হাতে হামিদাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে দুজনে একসাথে নামাজে দাঁড়ায়।
_____________________
সেঁজুতির মেট্রিক পরীক্ষার মাত্র দুমাস বাকি। তাই সে প্রতিদিনের মতো আজও সকাল সকাল উঠে বই পড়ছে। হামিদা আর ফরিদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ তাই দুজনেই এই শীতের সকাল ঘুমিয়ে পার করছে। মিনারা বেগম খুব ভোরে উঠে উঠান ঝাড়ু দিয়ে রসুইঘরে ঢুকলেন। সেঁজুতি সামনের বারান্দায় বসে বই পড়ছিলো মিনারা বেগম রসুইঘর থেকে বেড়িয়ে এসে সেঁজুতিকে ডেকে বললেন,
“আইজ আর তোর স্কুলে যাওন লাগবো না সেঁজুতি। বাড়িতে থাকবি আর ঘর থেইকা একদম বাহির হইবি না।”
মিনারার কথায় সেঁজুতি অবাক হলো তারপর জিজ্ঞাস করলো,
“ক্যান আম্মা স্কুলে যামু না ক্যান?”
“তোর আব্বা কইয়া গেছে আইজ তোর স্কুলে যাওন লাগবো না।”
“আব্বা কইয়া গেছে মানে?আব্বা কই গেছে আম্মা এত সকালে?”
মিনারা রসুইঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন। সেঁজুতি প্রশ্ন শুনে তিনি হাতের কাজ রেখে থাকার ঘরের সামনের বারান্দায় এসে সেঁজুতির পাশে বসলেন। সেঁজুতি অবাক হয়ে তার মায়ের কর্মকাণ্ড দেখছে। মিনারা সেঁজুতির মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন তারপর বললেন,
“তোর আব্বায় তোর লাগি একখান ভালো সম্বন্ধ আনছে। ছেলে শহরে মেলা বড় চাকরী করে।অনেক টাকা মাইনে পায়। দেখতে শুনতেও নাকি সুন্দর ওই যে কমলপুরের মানিক আছে না? তার আত্নীয় লাগে।”
মিনারার কথায় সেঁজুতির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। সে যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। বিস্ময়ে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। হঠাৎ করে তার মাথায় যেনো বজ্রপাত পড়তে শুরু করেছে। সেঁজুতি অবিশ্বাসী ভঙ্গিতে বলল,
“আম্মা এইডা তুমি কি কও? আইজ আমারে দেখতে আইবো মানে? আ-আমি তো তার কিছুই জানি না।”
সেঁজুতি কথায় মিনারা ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে আফসোস করে বললেন,
“আমি কি আর জানতাম রে মা? কাল রাইতে হঠাৎ তোর বাপে আমারে কইলো আইজ নাকি তোরে দেখতে আইবো ছেলের বাড়ি থেইকা। তখন আর কি করার থাকে।”
“কিন্তু আম্মা আমি পড়ালেখা করতে চাই এত তাড়াতাড়ি বিয়া করতে চাই না। আম্মা তুমি আব্বারে বুঝায় কও আমি এখন বিয়া করমু না। সামনে আমার মেট্রিক পরীক্ষা আম্মা তুমি আব্বারে বুঝাও।”
“তোর আব্বায় কইছে ছেলে তোরে বিয়ার পর পড়াইতে রাজী আছে।”
“কিন্তু আম্মা আমি।”
“আর অমত করিস না মা রাজী হইয়া যা।”
বলে মিনারা উঠে চলে গেলেন। সেঁজুতি ঠায় শক্ত হয়ে বসে রইলো। এই মুহূর্তে সে ঠিক কি করবে বুঝতে পারছে না। তার ভিতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।অসময়ে কাল বৈশাখী ঝড় তার ভিতর চুরমার করে দিচ্ছে। বুকে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। এই দিকে সাবেতের কোনো খবর নেই অন্য দিকে তাকে আজ দেখতে আসছে। যেনো সে অথই জলের জোয়ারে ভাসছে। কুল নেই কিনারা নেই নদীর জোয়ারে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দূর থেকে বহুদূর। এই মুহূর্তে কি করবে কার কাছে যাবে কিভাবে এই বিয়ে আটকাবে কিছুই বুঝতে পারছে না সেঁজুতি। নিজেকে বড্ড অশহায় লাগছে। বুকে হাজারটা তলোয়ার একসাথে বিদ্ধ হচ্ছে। সে কি যন্ত্রণা। এই সময় তার সাবেতকে বড্ড প্রয়োজন অথচ সাবেতের কোনো খোঁজখবর নেই আজ তিনমাস হলো। সেঁজুতি কত চেষ্টা করেছে একটিবার সাবেতের খোঁজ পেতে কিন্তু কেউ তাকে সাবেতের খবর এনে দেয় নি। হামিদা কতদিন রানীর সাথে দেখা করার ছলে চেয়ারম্যান বাড়িতে গেছে সাবেতের খবর জানতে। নানান ভাবে সাবেতের খোঁজ নেয়ার কত চেষ্টা করেছে কিন্তু সফল হয় নি। ও বাড়ির কেউই তাকে সাবেত সম্পর্কে একটি কথাও বলে নি। এমনকি রানী পর্যন্ত এড়িয়ে গেছে সাবেতের প্রসঙ্গ। সেঁজুতি উপায়ন্তর না পেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। তার কাছে এমন কোনো উপায় নেই যে যেটা দ্বারা সে বিয়ে টা আটকাতে পারবে।
দুপুরের পর ছেলের বাড়ি থেকে লোক আসে সেঁজুতিকে দেখতে আর দেখেই তারা সেঁজুতিকে পছন্দ করে ফেললো। ছেলের বাবা মেয়ে দেখে বলেন এক্ষুনি কাজি ডেকে বিয়ে পড়িয়ে দিতে কিন্তু এতে সেঁজুতি বাবা সৈয়দ আলী ঘোর আপত্তি জানান। তিনি চান সেজুতির পরীক্ষা শেষ হলে যেনো বিয়েটা হয়। অবশ্য তিনি প্রথমে রাজী ছিলেন না পরীক্ষা শেষ হওয়া অবদি অপেক্ষা করতে কিন্তু সেঁজুতির আকুতি মিনতির কাছে হার মানলেন। পরীক্ষার পরেই বিয়ের হবে বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। সেদিন সেঁজুতিকে ছেলের বাড়ি থেকে আঙটি পড়িয়ে যায় আর বিয়ে আগামী শ্রাবণ মাসে হবে বলেই দিন ধার্য করা হয়।
দেখতে দেখতে দুমাস কেঁটে গেলো।সেঁজুতি মেট্রিক পরীক্ষা শুরু হয়। গত কয়েক মাসে সেঁজুতি সাবেতের সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করে কিন্তু প্রতিবারের ব্যার্থ হয়। সেঁজুতি দিনের পর দিন নামাজে বসে আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে কেঁদেছে। হামিদাকে পাঠিয়েছে চেয়ারম্যান বাড়িতে কিন্তু কোনো লাভ হয় নি কেউ ই সাবেতের কোনো খবর দেয় নি। সেঁজুতি প্রতিরাতে বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদেছে। রাতের নিশ্চুপতা আর অন্ধকার ছিলো তার নীরব সাক্ষী। সেঁজুতি জানে না তার অঘোষিত প্রেমিক তারই অগোচরে কি গোপন খেলায় মেতে উঠেছে। কেনো সে ঠিকানাহীন শহরে আত্ন গোপন করেছে। দিনের পর দিন বিরহ যন্ত্রণায় কাতর সেঁজুতি ভিতরে ভিতরে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। নাওয়া খাওয়া ভুলে দিনের পর দিন বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদেছে তার নীরব আত্ননাদে প্রকৃতিও কেঁদে উঠেছে অসংখ্যবার। তবুও সাবেত তার মনের আকুতি শুনে নি, ছুটে এসে বলে নি “ওগো আমার আষাঢ়ে সদ্য ফোঁটা কামিনী আমি এসেছি।তোমার সকল বিরহ যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিতে, ছুটে এসেছি দূর- দূরান্তের পথ ছুটে।এসেছি হাজার পথ পেরিয়ে তোমার অঘোষিত প্রেমের ঘোষনা দিতে। বরণ করে নিতে আমার সহধর্মিণী হিসেবে।”
এক আষাঢ়ে শুরু হওয়া প্রেম অন্য আষাঢ়ে তার যবনিকা টানতে বসেছে।সেঁজুতির পরীক্ষা শেষ হয়েছে মাত্র দিন তিনেক আগে।এরই মাঝে সৈয়দ আলী বাড়িতে বিয়ের তোড় জোড় শুরু করে দিয়েছেন।
সন্ধ্যার পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ছে।সেঁজুতি বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে।হামিদা আর ফরিদ টেবিলে বসে বই পড়ছে।টিনের চালায় অনবরত বৃষ্টির ফোঁটা নৃত্যের ছন্দ তুলছে।সেঁজুতি নীরবে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে। তার মন এখনো মানতে চাইছে না সাবেতের নিরুদ্দেশ হওয়া। একটি বছর পার হয়ে এসেছে সাবেতের সাথে তার শেষ দেখা হয়েছিলো।এমনি এক বৃষ্টির রাতে প্রেমিকের ডাকে সাড়া দিতে ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে মাঝ রাতে বেড়িয়ে পড়েছিলো সেঁজুতি। তার শরীরে তখন প্রথম প্রেমের শিহরণ জাগানো অনুভুতির ঢল খেলছিলো। মনে শ্রাবণের ভরা নদীর টলটলে জলের মতো উপছে পড়া শিহরণ তাকে ভাসিয়ে নিচ্ছিলো আর আজ সেই শ্রাবণের ভরা নদীর অথৈ জলে সে হাবুডুবু খাচ্ছে দিকভ্রান্ত হয়ে ভেসে যাচ্ছে অচিনকূলে।
____________________
আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে। একটু পরেই তা আছড়ে পড়বে ধরিত্রীর বুকে। চারপাশে ঘনবরষার আমেজ লেগেছে। ব্যাঙেরা নতুন পানি পেয়ে মিলন খেলায় মেতে উঠেছে। চারদিকে চম্পা,কদম,কামিনী ফুটেছে। নদীতে জল ভরপুর।
পথঘাট কাদাজলে পরিপূর্ণ। বর্ষায় গ্রামের প্রকৃতিকে যেনো দুহাত সজীবতা দান করেছে। আকাশে ঘন মেঘরাশি এবার ঝুপঝাপ বৃষ্টি হয়ে নামলো। বলতে না বলতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।হামিদা আর ফরিদ দৌড়ে বাড়ির পথ ধরে আসছিলো পথেই ঝুম বৃষ্টি তাদের একেবারে ভিজিয়ে দিলো। উপায়ন্তর না পেয়ে হামিদ ফরিদের হাত ধরে টেনে একটা বড় গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিলো। হামিদ পুরো ভিজে গেছে, ঠাণ্ডা তার ভিজে শরীর ঠকঠক করে কাঁপছে। হামিদা ফরিদকে কাঁপতে দেখে কিছুটা কাছে সরে এসে বলল,
“গায়ে জামাটা খুইলা ফেল ফরিদ না হয় ঠান্ডা লাইগা যাইবো।”
ফরিদ মুখ গম্ভীর করে আছে। চোখ দুটো ছলছল করছে কাঁদছে কিনা বুঝা গেলো না। বৃষ্টি পানিতে হয়তো মিশে যাচ্ছে ফরিদের চোখের পানি। হামিদা ফরিদকে নিজের কাছে টেনে আনতেই ফরিদ কাঁদোকাঁদো কণ্ঠস্বরে বলল,
“বড় আপার বিয়া কি সত্যিই হইয়া যাইবো তাহলে?”
হামিদা মুখ গম্ভীর করে বলল,
“হ!”
“সাবেত ভাই এমনটা ক্যান করলো ছুডু আপা? তুমি না কইছিলা সাবেত ভাই আপারে বিয়া করবার চায়।”
হামিদা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“মিছা কথা। সব মিছা কথা উনি আপারে ঠকাইছে
শহর থেইকা বিয়া কইরা বউ নিয়ে গ্যারামে ফিরা আইছে।”
” গ্রামের সবাই কইতাছে সাবেত ভাই নাকি চার পাঁচ দিন আগে শহরের এক মাইয়ারে বিয়ে কইরা বাড়িতে নিয়া আইছে,কেউ জানতো হেই কথা।”
ফরিদের কথায় আর কোনো জবাব করলো না হামিদা। ফরিদ লোকমুখে যা শুনেছে হামিদাও স্কুল থেকে ফেরার পথে একি কথা শুনেছে। সাবেত নাকি দিন চার পাঁচেক আগে গ্রামে ফিরেছে সাথে করে নাকি নতুন বউ নিয়ে আসছে অথচ কেউ সেটা জানতেই পারে নি। সাবেত যে এই কয়দিন গ্রামে অবস্থান করছে সে কথা হামিদা কিংবা সেঁজুতি কেউ জানতেই পারে নি। রানীর সাথে তার প্রতিদিন স্কুলে দেখা হয়েছে অথচ রানীও তাকে কিছু জানায় নি। মনে মনে হামিদা সাবেতের উপর খুব ক্ষিপ্ত হলো। তার আপাকে কষ্ট দিয়ে ভালোবাসার নাটক করে একবছর পর গ্রামে বউ নিয়ে ফিরেছে এটা ভাবতেই হামিদার মাথায় আগুন ধরলো। রাগে তার সারা শরীর গজগজ করতে লাগলো। সাবেতকে পেলে যেনো এখনি সে তাকে ভস্ম করে দিবে।
বৃষ্টি থামলে হামিদা আর ফরিদ পা টিপে টিপে বাড়ির দিকে এগোয়। বাড়িতে পৌঁছেই হামিদা দেখতে পায় সেঁজুতি মায়ের সাথে রসুইঘরে কাজ করছে। আর তিন দিন পর সেঁজুতির বিয়ে বাড়িতে এখন তারই আয়োজন চলছে। হামিদা বাড়ি ফিরে সোজা ঘরে চলে গেলো। সেঁজুতি জন্য তার মন বড্ড পুড়ছে। সাবেতের জন্য তার আপা দিনের পর দিন কত কষ্ট পেয়েছে কত চোখের জল ফেলেছে অথচ সাবেত ঠিক শহর থেকে বিয়ে করে পাঁচ দিন আগে বউ নিয়ে গ্রামে ফিরেছে। সেঁজুতি কথা সে একটুও ভাবে নি। সে যে গ্রামে ফিরেছে সে কথাটাও তারা জানতে পারে নি।
হামিদাকে মুখ গোমড়া করে বসে থাকতে দেখে সেঁজুতি নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে হামিদার পাশে এসে দাঁড়াল। হামিদার দৃষ্টি তখন মেঝেতে। সেঁজুতি আলতো হাতে মাথায় হাত দিতেই হামিদা চোখ তুলে তাকায়। সেঁজুতি অবাক হয়ে হামিদাকে দেখে। হামিদার চোখে ছলছল করছে পলক পড়লেই জল গড়িয়ে পড়বে। সেঁজুতিকে দেখে হামিদা চোখের জল লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
” কি হইছে কাঁদিস ক্যান তুই?”
হামিদা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকালো সেঁজুতির দিকে। তারপর কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,
” আপা তুমি বিয়া কইরা ফেলো এতেই তোমার ভালা হইবো।”
সেঁজুতি চমকে উঠলো হামিদার কথায় সাথে বেশ অবাক ও হলো। যে হামিদা সকালেও তাকে বিয়ে না করার জন্য চাপাচাপি করেছে। বিয়েটা ভাঙার জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়েছে আর সেই নাকি এখন তাকে বিয়ে করতে বলছে। সেঁজুতি অবাক হয়ে হামিদাকে আরো একবার দেখলো তারপর বলল,
“কি হইছে তোর হঠাৎ এমন কইরা কথা কছ ক্যান?”
হামিদা আর কোনো ভণিতা করলো না সোজাসুজি উত্তর দিলো।
” সাবেত ভাই ফিরা আইছে কিন্তু একা ফিরে নাই বিয়া কইরা বউ নিয়া ফিরছে পাঁচ দিন আগে। গ্রামের লোক বলাবলি করতাছে।”
হামিদার শেষ কথা শুনে সেঁজুতির ভিতরটা ধক করে উঠে।সে মোটেই এমন কিছু শুনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। সাবেত ফিরেছে এ কথা তার কান অবদি পৌঁছালেও পরের টা আর সে শুনতে পায় নি।মুহূর্তে তার বুকের ভিতরটা হু হু করে উঠলো। যন্ত্রণা গুলো যেনো বোলতা হয়ে তাকে হুল ফোটাতে শুরু করেছে। ভিতরটা ধুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। হৃদয়ে প্রবল ঝড় বইতে আরম্ভ করেছে। মনে মনে অভিমানের পাহাড় জমিয়ে রেখেছিলো সেঁজুতি। সেই অভিমান গুলো নিমিষে অর্থহীন হয়ে পড়লো। মন ভাঙার নিদারুণ যন্ত্রণা সেঁজুতির সমস্ত বুকজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তার। কান্নারা দলা পাকিয়ে বেড়িয়ে আসতে চায় সেঁজুতি প্রাণপণে সেটা আটকে রাখার চেষ্টা করে। তার মন ভাঙার শব্দ কেউ শুনতে পায় না। তবে হামিদা বুঝতে পারে এই মুহূর্তে সেঁজুতি মনে ঠিক কি চলছে। পাথরের মত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেঁজুতি। তার দেহে যেনো প্রাণ নেই এমনি অসার হয়ে আছে সে। ভিতরে ভিতরে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে তবু বাহিরে সেটা প্রাকাশ করছে না। কিছুটা সময় এভাবে কেটে গেলে সেঁজুতি নিজেকে ধাতস্থ করে নেয় তারপর কঠিন গলায় বলে,
” ভেজা গায়ে বইসা থাকলে ঠান্ডা লাগবো জলদি কাপড় বদলায় খাইতে আয়।আম্মা ডাকতাছে।”
হামিদা অবাক হয়ে সেঁজুতির দিকে তাকালো।সেঁজুতি কত সহজে তাকে কথাটা বললো। মনে হলো যে কিছুই ঘটেনি। হামিদা আর কিছু বললো না নীরবে সেঁজুতির কথা মেনে নিলো।
চলবে,,,।