আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥,পর্ব_৪,৫

আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥,পর্ব_৪,৫
সাহেদা_আক্তার
পর্ব_৪

আম্মা খাবার আর ঔষধ রেখে গেল। আমি নাক টানতে টানতে বাটিটা নিলাম। এক চামুচ মুখে দিতেই ক্রাসের কথা মনে পড়ল। সাথে সাথে লজ্জায় বিছানার সাথে মিইশা গেলাম। তাতেই ঘুম।

আম্মা আব্বার কথা শুনে ঘুম ভাঙল। চোখ খুলতে পারতেসি না। জ্বলতেসে। খুব ঠান্ডা লাগতেসে। শরীর কাঁপুনি দিতেসে। নড়তেই মনে হল গায়ে কম্বল দেওয়া। মাথা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাইতেসে। কানে আসল, আম্মা বলতেসে, একশ চার ডিগ্রি উঠে গেছে। তুমি ডাক্তার ডাকো।

– দাঁড়াও, আমি ফোন করতেসি। এত রাতে যাবো কি করে।

আব্বা ফোনে ডায়াল করল। আম্মা আবার বললেন, মেয়েটা আমার একটা কথাও শোনে না। এখন জ্বর একটা বাঁধাই আনসে। নিজের জামাটাও সামলাই আনতে পারে নাই। জর্জেটের জামা। কেমনে আনসে কে জানে। একেবারে উপর থেকে নিচে ছিঁড়ে ফেলছে। শুনেই আমি পিটপিট করে তাকালাম। তারপরই ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলাম। আমার কান্না শুনে আব্বা আম্মা কাছে আইসা বলল, কি হইসে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে? আমি কাঁনতে কাঁনতে কইলাম, আমার এত সাধের জামা!!!!! আম্মা ধমক দিয়া চিল্লাই বলল, একদম কানবি না। জামা একটার দফারফা করে এখন জ্বর বাঁধাই শুই আছে। ঔষধ দিয়ে গেসি সেটাও খায় নাই। জ্বর আসবে না তো কি আসবে। আমি বকা খেয়ে ফোঁপাতে লাগলাম।

সারা রাত জ্বরে ভুগলাম, সকালে একটু কমল। ঘুম ভেঙে দেখি আন্টি পাশে বসে আম্মার সাথে কথা বলতেসে। এই একজ্বরে নেতিয়ে পড়ছি। তবে মনটা খুশি হই গেল। আমার শ্বাশুড়ি আম্মা তো দেখতে আইলো। কি জামাইটা… আমি তাকাতেই আন্টি হেসে বললেন, কেমন আছো? আমি হাসলাম। আন্টি বললেন, কালকে আমার ছেলেটাও বৃষ্টিতে ভিজে সর্দি বাঁধিয়েছে। ও বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি বললাম তোর জামা কাপড় গুলো তো ছাদে। বৃষ্টি আসলে ভিজে যাবে। দশ মিনিট পর দেখি কাকভেজা হয়ে আসছে। সাথে কাপড়গুলাও ভিজাই আনসে।

আমি তো খুশি। মনে মনে কইলাম, দেখতে হইবো না কার জামাই। মনের কতো মিল!!! কি কানেকশান!!!! আমার সাথে তারও সর্দি হইসে।

– আর বলিয়েন না ভাবি, কালকে একটা জামা ধুয়ে দিসিলাম, ছাদে। মেয়েটা বের হওয়ার সময় বললাম, আসার সময় নিয়ে আসিস। মনে হয় কানেই নে নাই। পরে দেখি পুরা ঘর পানিতে চপ চপ করতেসে। বুঝলাম, মেয়ের কান্ড। বৃষ্টিতে ভিজে আসছে। বারান্দায় জামাটা ঝুলতেসে। ওটাও ভিজা। মেলতে গিয়ে দেখি জামার কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত ছিঁড়া।

আম্মা জামা আইনা সামনে মেইলা ধরল। আমার তো চোখে পানি চইলা আসলো। আমার সবচেয়ে ফ্যাবোরেট জামা ছিল। আমি উঠে হেলান দিলাম। আন্টি সাহায্য করলেন। আমি হাত বাড়িয়ে জামা নিলাম। এমন সময় আমার ক্রাশের গলা শুনলাম। আন্টি বললেন, আমি আসি ভাবি, ছেলে কলেজ যাবে। আমার দিকে ফিরে বললেন, ভালো হয়ে যাস তাড়াতাড়ি। আমি মাথা কাত করলাম। আন্টি যেতেই আমি দৌঁড়ে গিয়া দরজার কাচে চোখ লাগালাম। দেখলাম ক্রাশ বের হইতেসে। আম্মা ডাক দিয়া কইল, ওখানে কি করিস?

– আসি।

ক্রাশ চলে গেলে আমি ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসলাম। আম্মা আমাকে আদার রঙ চা এনে দিলো। আমি বললাম, চা খাইতে ইচ্ছা করতেসে। আম্মা চোখ রাঙাই কইল, চা না খাইলে নিম পাতার রস খাওয়াবো। সব একেবারে বাপ বাপ বলে পালাবে। শুনেই আমার মুখ বেঁকে গেল। একবার খাইসিলাম। সেই ট্যাশ ছিল। করলার আব্বা। আমি আর কিছু কইলাম না। চুপচাপ চা বিস্কুট খেয়ে রুমে চলে গেলাম। বিকালে বারান্দায় বসলাম। সেখান থেকে মাঠ দেখা যায় যেখানে আমার ক্রাশ খেলতে যায়। দূর থেকে দেখতে লাগলাম খেলা। আজকাল গাজর আমার বন্ধু হয়ে গেছে। এখনও হাতে দুইটা গাজর। একটার মাথায় কামড় দিয়ে চিবাতে চিবাতে ভাবতে লাগলাম, আরেকবার গাজরের হালুয়া বানাইয়া নিয়া যামু কিনা? নাহ্, এত বার গেলে সন্দেহজনক মনে হইবো। তাইলে কি করা যায়!!! এমন সময় আম্মা এসে বলল, তুই যাবি? আমি মাঠ থেকে চোখ না সরাইয়া গাজরে আরেক কামড় দিয়ে বললাম, কোথায়?

– তোর জ্বর ছিল দেখে বলি নাই। আজকে ভাবির ছেলের জন্মদিন। আমাদের যেতে বলেছে। তুই যাবি?

শুনেই আমি চিল্লাই কবললাম, তুমি এতক্ষণে বলতেসো! আরো আগে বলবা না? আমি আলমারির দিকে ছুটলাম। কোনটা পরমু, কোনটা পরমু করতে করতে পুরা বিছানা গোয়াল ঘর বানাই ফেললাম। আম্মা তো এসে কয়েকবার বকে গেলেন। আমি কান দিলাম না। আমি গাজর খাচ্ছি আর জামা চুজ করতেসি। শেষ পর্যন্ত আমার গাজর শেষ হইলো আর একটা ফ্রক চুজ করলাম। ফ্রকটার উপরের অংশে কালো মখমলের উপরে লাল কাজ করা। আর নিচের অংশ লাল জর্জেট কাপড়ের। জামাটা পরে চুল আঁচড়ে কোমর পর্যন্ত ছড়িয়ে দিলাম। ফ্রেন্ডরা বলে আমার স্ট্রেট চুলগুলা খোলা রাখলে নাকি সেই লাগে। তাই করলাম। একপাশে একটা লাল ফুলের ক্লিপ আটকে দিলাম। ফ্রকের গলায় কলার আর হাত পর্যন্ত ঢাকা। তাই কিছু পরা লাগলো না। কানে লাল ছোট ঝুমকার কানের দুল পরলাম। চোখে কাজল দিলাম। ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক দিলাম। তারপর আয়নায় নিজেকে দেইখা নিজেই ক্রাশ খাইলাম। আম্মা দরজার কাছে দাঁড়াই বলল, তোর সাজোন গুজোন হলে বের হবি?

– হ্যাঁ, আম্মু।

আমি রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। আম্মা আব্বা আমার দিকে তাকাই আছে। আমি কইলাম, কি হইসে? এভাবে তাকাই আছো কেন? আম্মা বলল, এত সাজচিস কেন? বার্থে পার্টিতে যাইতেছিস নাকি বিয়েতে?

– আহা, মেয়েরা একটু সাজার শখ হইসে। থাক না। চলো।

আমরা নক করতেই কেউ একজন দরজা খুলল। আমি ঢুকে বেকুবের মতো দাঁড়াই আছি। এত মানুষ!!! পুরো রুম গিজগিজ করতেসে। আমি এদিকওদিক তাকাই আমার বার্থডে ক্রাশরে খুঁজতেসি। দেখলাম এক কোনায় বন্ধুদের সাথে দাঁড়াই গল্প করতেসে। আমার ক্রাশটারে তো হেব্বি লাগতেসে। সাদা শার্ট, হালকা নীল জিন্স, শ্যাম্পু করা চুলগুলো চোখের সামনে পড়ে আছে। ইচ্ছা করতেসে গিয়া সরাই দিয়ে আসি। আমি আগাই গেলাম। আমি যাওয়ার আগেই একটা মেয়ে দৌঁড়ে এসে ওকে জড়াই ধরলো। আমি থমকে গেলাম। মেয়েটা আসতেই আমার ক্রাশ একটা কিটকাট ধরিয়ে দিল। আমার যাইতে অস্বস্তি লাগতেসে। আমি ফেরত যেতে লাগলে আমার ক্রাশ ডেকে বলল, কি হলো, গাজরের হালুয়া। কই যাচ্ছো? আমি পিছন ফিরতেই দেখলাম সে দাঁত কেলাই হাসতেসে। একটা মানুষ এত কিউট হয় কেমনে? ও কাছে এসে বলল, আমার গিফট কই? আমি আমতা আমতা করে বললাম, আনিনি। আসলে জানতাম না। মনে মনে বললাম, আমি আসছি যে হয় নাই? আরও গিফট লাগবো? সে বলল, ওমা, না জানলে আসলে কি করে? ওর ফ্রেন্ডরা বলল, এ কে রে? ও হেসে বলল, গাজরের হালুয়া। মেয়েটা এসে জিজ্ঞেস করল, গাজরের হালুয়া মানে? তখন ক্রাশ রাঙিয়ে চাঙিয়ে আমার হালুয়ার কাহিনী বলতে লাগল। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। চোখ তুলতে ভয় লাগল যদি চোখের পানিটা কেউ দেখে ফেলে!!! এতটা অপমানিত আমি জীবনেও হই নাই। ওদের কথার মাঝেই ‘আমি যাচ্ছি’ বলে চলে আসলাম। একি কি করল আমার ক্রাশ!!! ক্রাশ!!!? আমি নিজেকে নিজে বিদ্রুপ করলাম। চোখ মুছে আন্টির কাছে গেলাম। আন্টি কয়েকজনের সাথে কথা বলছিল। আমি গিয়ে সালাম দিতেই আন্টি বললেন, আরে আমার ছোঁয়া মা যে। কি মিষ্টি লাগছে!!!! আমি বললাম, আন্টি আমার শরীর খারাপ লাগছে। আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।

– কি হয়েছে?

– তেমন কিছু না। একটু মাথা ব্যাথা করছে।

– আচ্ছা যাও।

আমি চলে আসলাম। বাসায় ঢুকেই চোখের পানির বাঁধ ভাঙলো। আমি দৌঁড়ে গিয়া বাংলা সিনেমার নাইকাদের মতো নিজের রুমের বিছানায় ঝাঁপিয়ে পরলাম। টানা দুই ঘন্টা পার হইয়া গেল। আমি কাইন্দা কাইটা এক সার হইসি। কাজল লেপ্টে ফুলা চোখগুলো কালো হয়ে পেত্মী হয়ে গেসি। ওয়াশরুমে ঢুকে মুখে পানি দিলাম। সাবান দিয়ে ভালো কইরা ঘইষা মাইজা সব ক্লিন করে ফেললাম। আয়নায় তাকাই দেখি মুখটা ঝকঝক করতেসে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে একটা সুতি জামা পরে সবে শুবো, এমন সময় কলিং বেল বাজলো। আমি ভাবলাম আব্বা আম্মা চলে আসছে। আমি না দেখেই দরজা খুলে রুমের দিকে এগিয়ে বললাম, চলে আসছো? পার্টি শেষ? আমি রুমে যাইতেসি। রাতে খাবো না। আমাকে আর ডাকিও না। আমি রুমে ঢুকে লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে পরলাম। কান্না করায় নাক ভারি হয়ে আছে। নিঃশ্বাস নিতে পারতেসি না। কোনোমতে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম। হালকা আলো আসছে বাইরে থেকে। আমি চোখ বন্ধ করলাম। কতক্ষণ পর মনে হইল কেউ আমার দিকে তাকাই আছে। তারপর কপালে কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই জেগে উঠলাম। আমি ডাকলাম, আব্বু… আম্মু… কোন সাড়া নাই। বিছানা থেকে নেমে পুরো ঘর ঘুরে দেখলাম ঘর ফাঁকা। দরজা খোলা। আমি মনে মনে বললাম, কি হইল ব্যাপারটা! আমি দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে দেখলাম বিছানার পাশের ছোট টেবিলটায় এক টুকরো কেক। তার উপরে লাভ ইমোজি। কেউ যেন আলাদা করে পিসটা কেটে দিয়েছে। আমি একটু ভাবতে বসলাম, কে এসেছিল!!! কে? আব্বু নাকি আম্মু না অন্য কেউ!!! কোনো ভুত আসছিল নাকি!!! খেয়াল হতেই দেখলাম আমি কেকটা খেয়ে ফেলসি। হায় হায়!!!! ভাবছিলাম একটা ছবি তুইলা রাখমু। ক্রাশের জন্মদিনের কেক। প্লেটের দিকে তাকাই আবার ভাবলাম, আমি খাইসি তো নাকি কোনো পেত্নী এসে খেয়ে চলে গেছে!!!
.
.
.
.
আবার শুক্রবার চলে আসলো। এই কয়দিন ঠিক মতো ঘুম হইতেসে না। ক্রাশের জন্মদিনের পর থেকে যতসব ভয়ানক ভয়ানক স্বপ্ন দেখতেসি। একবার তো দেখলাম, বাসর ঘরে আমার কাছে এসে ঘোমটা তুলে ক্রাশ বলতেসে, কি রে গাজরের হালুয়া বউ, আমার গিফট কই? দেখেই লাফাই উঠছি ঘুম থেকে। আম্মা আজকে আবার কাপড় ধুইসে। আমারে আবার ছাদে পাঠাইলো। আজকে না গান বাইর হইতেসে না বিরক্তি আসতেসে। মাথায় শুধু স্বপ্নটাই ঘুরতেসে। মনে মনে কইলাম, এত কিছু থাকতে গাজরের হালুয়া বউ? বাসর রাতে হালুয়া আমি যদি তোমারে গুইলা না খাওয়াইসি তাহলে আমার নামও ছোঁয়া না। আমি বিড়বিড় করতে করতে ছাদে উঠে টাসকি খাইলাম। ঐদিনের মেয়েটা আমার ক্রাশের গা ঘেঁষে দাঁড়াই আছে আর হেসে হেসে কথা বলতেসে। তাদের হাসি দেইখা আমার সারা শরীরের লোমে দাবানল লাইগা গেল। নরম মনটা বলল, গাজরের হালুয়া বৌ ডাকো তবু আমার কাছে ফিইরা আসো। আমি মনরে ধমক দিয়া কইলাম, এখন পিরিতের সময় না। আগে আচ্ছা মতো ঝাঁটার বাড়ি তারপর পিরিত।

চলবে…

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_৫
#সাহেদা_আক্তার

নরম মনটা বলল, গাজরের হালুয়া বৌ ডাকো তবু আমার কাছে ফিইরা আসো। আমি মনরে ধমক দিয়া কইলাম, এখন পিরিতের সময় না। আগে আচ্ছা মতো ঝাঁটার বাড়ি তারপর পিরিত।

আমি গিয়াই কাপড়ের বালতিটা জোরে ছাদে রাখলাম। ওরা একবার আমার দিকে তাকালো। আমি না দেখার ভান করে কাউয়ার মতো গান গাওয়ার শুরু করলাম, কেউ কথা রাখেনি, ভালোবাসেনি……। আমি গান গাইতেসি আর কাপড় মেলতেসি। আমার গান শুনে হোক বা অনিচ্ছায় হোক, মেয়েটা কাছে এসে বলল, হাই, গাজরের হালুয়া। হোয়াটস আপ? আমি তাকে আগাগোড়া দেখলাম। মনে মনে কইলাম, নিজে তো শুঁটকি মাছের পোনা, আবার আমারে আসছে গাজরের হালুয়া ডাকতে। আমি বললাম, ফগরফ টগরফ গাট। মেয়ে আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে বলল, হোয়াট? আমি বললাম, জীবনে তিন গোয়েন্দা পড়নাই? মেয়েটা ক্রাশের দিকে তাকাল। আমি বললাম, বাঙালি?

– ইয়েস।

– তবে বাংলায় কথা বলো। অসব ঢঙের ইংলিশ এই দেশের খাঁটি মানুষ বোঝে না।

আমি কাপড় দিয়া নিচে নাইমা আসলাম। বাসায় ঢুকতে ঢুকতে কইলাম, ইংলিশ মারতেসে। তোর ভাগ্য ভালো যে ক্রাশ ওখানে ছিল, নাইলে বুঝতি এই ছোঁয়া কি জিনিস। আমার ক্রাশের লগে ঢলাঢলি বাইর করতাম। আমি বালতি রেখে মুখ গোমড়া করে বারান্দায় বসে রইলাম।

দুপুরে খাইতে গিয়া দেখি টেবিলে একটা বাটিতে টেংরা মাছের ঝোল। আমার আরেকটা বালুবাসা। আমি ভাত ছাড়াই খাইতে শুরু করলাম। আম্মা এসে আমার মাথায় চাটি মেরে বলল, আর কেউ খাবে না নাকি একাই সাবাড় করবি? আম্মাকে এডের স্টাইলে বললাম, এই স্বাদের ভাগ হবে না……। আম্মার আমার থেইকা বাটি কাইড়া নিয়া কইল, তোর স্বাদের খেঁতা পুড়ি। যা প্লেট নিয়ে ভাত বাড়। আমি মুখ কালো কারে ভাত বাড়তে বাড়তে বললাম, কখন রান্না করসো, দেখি নাই যে।

– দেখলে তো বিলাইর মতো আসি পাতিল খালি করে ফেলতি। আর দেখবি কেমনে আমি রানলে তো দেখতি।

– তাইলে?

– ভাবি দিয়ে গেল। আজকে নাকি কোন মেহমান এসেছে সে জন্য রান্না করেছে।

– ঐ শুঁটকি মাছের পোনার জন্য…

– কে?

– কেউ না। আমি মাছ খামু না। আমারে গোশত দাও।

– হঠাৎ তোর আবার কি হইল?

আমি গোশত, তরকারি আর ভাত নিয়া রুমে চলে আসলাম। ওরে টেংরা রে… তুইও ঐ শুঁটকির হইয়া গেলি!!! আমার এখন কি হপ্পে। মনের দুঃখ আর শ্যাষ হইল না। ক্রাশ তো আমার হইল না, টেংরাও আমার থেইকা চইলা যাইতেসে। ঐ শুঁটকি রে আমি ভর্তা বানাই খামু। আমার ক্রাশ… আমার টেংরা… আমি হাড্ডি চাবাইতেসি আর কানতেসি। এমন সময় আম্মা উঁকি দিয়া বলল, কিরে, কি হইসে তোর, এমন কুই কুই করতেছিস কেন? আমি চুপ করে বললাম, কিছু না আম্মা, হাড্ডির শব্দ। এইযে দেখো। আমি চাকুষ তাকে হাড্ডির শব্দ দেখাইলাম। যদিও হাড্ডি কুই কুই শব্দে ভাঙে না। তো কি হইসে মড় মড় করে ভাঙলেও তো টপিক ঘুইরা যাইবো।

আমি আর আমার বন্ধু গাজর বিছানায় শুয়ে আছি। টপিক শুঁটকি। কে এই শুঁটকি, জানা দরকার। আমার ক্রাশে ভাগ বসাইতেসে। কতক্ষণ ভাবলাম। বাইরে তাকাই দেখলাম এখনও সন্ধ্যা হয় নাই। তার মানে ক্রাশ এখনও বাইরে খেলতেসে। আম্মা নিজের রুমে শুইসে। আমি গুটি গুটি পায়ে দরজা খুলে পাশের বাসায় নক দিলাম। আমি এদিক ওদিক উঁকিঝুঁকি মারতেসি এমন সময় দরজা খুলল। আমি কইলাম, আন…টি…। আমি চুপ করে গেলাম। আমার ক্রাশ আমার দিকে তাকাই আছে। আমি তো ভাবছি সে খেলতে চলে গেসে। আমার তার উপর প্রসুর অভিমান হইসে। মন চাইতেসে ওর দুই গালে চাইরটা চড় দিয়া আমি কাঁদি। আমি মুখ খোলার আগেই সে কইল, কেমন আছেন, গাজরের হালুয়া? আমি কইলাম, ভালো, চেরি ফল। সে মুখ সুচালো করে বলল, চেরি ফলটা আবার কে? আমি একটু উদাসভাব করে বললাম, আমার সামনে যে খাম্বা দাড়াই আছে সে। ক্রাশ কিছু বলার আগেই ভেতর থেকে মেয়েটা এসে বলল, কে এসেছে? আমি তাকে দেখে রাগে অন্ধ হই গেলাম। কইলাম, চেরির বউ গাজর আসছে৷ সরো। আমি দুইজনকে ঠেলে ভেতরে চলে গেলাম। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা বলল, মেয়েটা কি সাইকো? আমি ওদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাইলাম। খালি মন্ত্রটা জানতাম, পুইড়া ছাই হই যাইতো। আমি আন্টির রুমে গিয়া বললাম, আসবো?

– আরে ছোঁয়া যে, এসো।

– আন্টি আপনার রান্না সেই লেভেলের ভালো। আমি তো ফ্যান হয়ে গেলাম।

আন্টি হেসে বলল, এই জন্যই আমার কাছে আসা? আমি অভিমানী স্বরে বললাম, এমনিতে আসতে পারি না?

– তা পারো।

– তাহলে?

আন্টি বিছানায় বইসা ছিল। আমি গিয়া ওনার কোলে শুয়ে পড়লাম। বললাম, আন্টি, আম্মু বলছিল মেহমান এসেছে দেখে নাকি আপনি টেংরা মাছের ঝোল রান্না করেছেন। মেহমান কি ঐ মেয়েটা? আন্টি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, হুম। আমি জিগাইলাম, কে ও?

– আমার ছেলের বান্ধবী।

এমন সময় ক্রাশ বসার রুম থেকে বলল, আম্মু আমি চাঁদনীকে এগিয়ে দিয়ে আসছি।

– আচ্ছা যা।

আমি গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালাম। একটু পরে ওদের দেখা গেল। ওরা হেসে কথা বলতে বলতে হাঁটছে। আমি মনে মনে ভাবলাম, ছোঁয়া রে… তুই সত্যিই বাপ্পারাজ হয়ে গেলি। আমি বললাম, আন্টি আমি আসি। আন্টি বলল, একটু কিছু খেয়ে যা। আমি বললাম, না, আন্টি। আরেক সময়। আমি আসি। আন্টির রুম থেকে বের হয়ে হঠাৎ ক্রাশের রুমের দিকে নজর পড়ল। ভাবলাম, একটু ক্রাশের জগতে ঘুইরা আসি। যেই ভাবা সেই কাজ। ঢুকে পড়লাম চোরের মতো। চারপাশ পরিপাটি। আহা কি সুন্দর আমার চেরি ফলের রুমখানা!!! ঠিক চেরি ফলের মতো। দেয়ালে দেখলাম হ্যাঙ্গারে ক্রাশের কলেজ ড্রেস ঝুলছে। আমি গিয়ে ওটার কাছে দাঁড়াইলাম। তারপর জাপটে ধরে বললাম, যদি পারতাম তোমারে এভাবে নিজের কাছে বাইন্ধা রাখতাম। কিন্তু কপালে কি আছে? আমার মাথায় একটা জিনিস আইল। আমি বহুত খুঁইজা একটা ছোট কেঁচি নিলাম। তারপর ঘ্যাচ ঘ্যাচ করে শার্টের শেষের বোতামটা কাইটা নিলাম। কি সুন্দর সোনালি বোতাম!!! রাগে ইচ্ছা করতেছিলো শার্টটাই কাইটা দি। কিন্তু দিলাম না। কেঁচিটা আগের জায়গায় রাইখা আমি তার টেবিল দেখতে লাগলাম। হঠাৎ একটা নীল ডায়রীর উপর নজর গেল। ভেতরে কলম রাখা। আমি ডায়রীটার ডালা খুইলা প্রথম পৃষ্ঠা উল্টাইলাম। ওখানের লেখা দেইখা আমার পুরা জগত থমকে গেল। একি লেখা!!!!!!

তুমি জানো না রে প্রিয়, তুমি মোর জীবনের সাধনা।
তোমায় প্রথম যেদিন দেখেছি, মনে আপন মেনেছি।

ফ্রার্স্ট লাভ♥

আমার ক্রাশেরও ফার্স্ট লাভ আছে! আমি কাঁপা হাতে পরের পেইজ উল্টাইলাম। সেখানে হেড লাইন, প্রথম দেখা। আমি মাত্র পড়মু এমন সময় ডায়রীটা উড়াইয়া নিয়া গেল। তাকিয়ে দেখি ক্রাশ দাঁড়াই আছে। আমি ধরা খাওয়া চোরের মতো আমতা আমতা করতেসি আর ও বলল, তুমি কোন সাহসে আমার ডায়রী ধরেছো? আমি পেছনে হাত রেখে বললাম, ইয়ে মানে……

– তোমার হাতে কি?

ও বলার সাথে সাথে হাতের মুঠা শক্ত কইরা কইলাম, কিছু না। তরপরই ভৌঁ দৌঁড় দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। সোজা নিজের রুমে। দরজা মাইরা চোখের কল ছেড়ে দিলাম। হায়রে!!! ক্রাশও কারো উপর ক্রাশ!!! ছোঁয়া তুই তো ফক্কা।
.
.
.
.
সন্ধ্যায় যখন রুম থেকে বাইর হইলাম তখন আব্বা আম্মা আমাকে দেইখা আঁতকে উঠলেন। আমারে চেনা যাইতেসে না। আমি তাদের দিকে তাকাই কইলাম, এভাবে কি দেখতেসো? তেঁতুল গাছের শাঁকচুন্নি? আম্মা বলল, কি হইসে তোর? কাঁদছিস কেন? আমি নাক টেনে বললাম, দুঃখে। আমার প্রিয় ফুল শুকিয়ে ঝরে গেছে। মৌচাক বানানোর আর মধু নাই। মৌচাক মধু শুদ্ধা কেউ চুরি কইরা নিয়ে গেছে। আব্বা আম্মা অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকালেন। তাদের মাথায় কিছু ঢুকল না। আমার হেঁচকি উঠে গেল। আমি ঢক ঢক করে পানি খেয়ে গাজরের পুরো পলিথিনটা নিয়ে রুমের দরজা লাগাই দিলাম। ঢুকার আগে কইলাম, আমি ধ্যান করমু, রাতে ভাত খামু না। আমারে ডিস্টার্ব করবা না। তারপর দরজা বন্ধ। আম্মা আব্বারে কইল, মেয়েটার কি হইসে বুঝতেসি না। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়ে প্রেম করতেসে।

– আমারও তাই মনে হয়। কিন্তু কে সেই ছেলে!!!!

আমি দরজা মেরে একটা গাজর ধুয়ে আবার ফ্যানের দিকে তাকাই আছি। ফ্যান ভন ভন করে ঘুরতেসে, তার সাথে আমার চিন্তার চাকাও। কি করা যায়? গাজরটা শেষ করে আয়নার সামনে দাঁড়াইলাম। নিজেকে বলল, না ছোঁয়া না, তুই এভাবে হারতে পারিস না। তোর চেরি কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে আর তুই হা করে দেখবি এ হতে পারে না। কিন্তু কি করা যায়?

বৌয়ের মতো সেজে গুজে একটা বন্দুক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। পাশের বাসায় নক করতেই ক্রাশ দরজা খুলল। আমি বন্দুক তার দিকে ধরে বললাম, চল। ক্রাশ ভয়ে আমার সাথে কাজি অফিস চইলা আসলো। রেজিষ্ট্রি কাগজে জোর কইরা তারে সাইন করাইয়া নিজেও সাইন করলাম। তারপর সেই বিখ্যাত হাসি হু হা হা হা হা……

ধুর! নিজের মাথায় নিজে চাটি মাইরা কইলাম, কি ভাবনা!!! আমি বন্দুক পামু কই? নাহ্, এই বুদ্ধি বাদ। তাহলে কি করা যায়?

আমি ছাদের দরজা মাইরা রেলিং এর উপর দাঁড়াই আছি৷ নিচে ক্রাশ, আন্টি, আব্বা, আম্মা সবাই দাঁড়াই আছে। আমি চিল্লাই কইতেসি, তুমি যদি আমারে বিয়া না করো, তো আমি নিজেকে শ্যাষ কইরা দিমু। ক্রাশ নিচ থেকে কইতেসে, না না, ছোঁয়া এমন করিও না। আমি তোমারেই ভালোবাসি। তুমি নাইমা আসো। তার কথায় নাইমা আসতেই সে থাপ্পড় মাইরা কইল, সাধে কি তোমারে গাজরের হালুয়া বলি?

আমি মাথা নেড়ে কইলাম, নাহ্, বুদ্ধিতে জঙ ধরসে। কিচ্ছু মাথায় আসতেসে না। আমি টেবিল থেকে খুঁজে ক্রাশের বোতামটা বাইর করলাম। সেটা দেখেই আমি বরফের মতো গলে গেলাম। বোতাম টাকে কয়টা কিস কইরা নাচতে লাগলাম। হঠাৎ বাঁধ সাধল বিছানার পায়া। ফলে উস্টা খাই পড়লাম।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here