আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ♥,পর্ব_৬,৭

আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ♥,পর্ব_৬,৭
সাহেদা_আক্তার
পর্ব_৬

আমি টেবিল থেকে খুঁজে ক্রাশের বোতামটা বাইর করলাম। সেটা দেখেই আমি বরফের মতো গলে গেলাম। বোতাম টাকে কয়টা কিস কইরা নাচতে লাগলাম। হঠাৎ বাঁধ সাধল বিছানার পায়া। ফলে উস্টা খাই পড়লাম।

পইড়াই ষাঁড়ের মতো চিল্লাইতে লাগলাম, ওরে বাবা গো, কোমর গেল গো। আব্বা আম্মা দৌঁড়ে এসে বলল, কি হইসে, ছোঁয়া? দরজা খোল। আমি সাথে সাথে চুপ করে গেলাম। বললাম, কিছু হয় নাই। আম্মা বলল, তুই দরজা খুলবি না দরজা ভাঙমু? আমি মুখ বাঁকা করে বিছানা ধরে উঠে দরজা খুললাম। সাথে সাথে আব্বা আম্মা রুমে ঢুকলেন। সন্দিহান কিছু না দেখে আব্বা বললেন, কি হয়েছিল? আমি বিছানায় বসে বললাম, বিছানার সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে গেসিলাম।

– এত বড়ো ধামড়া মেয়ে হইসে এখনও চলতে শিখে নাই। চোখগুলা কি হাতে নিয়ে হাঁটিস?

আব্বা আমার কাছে এসে বসলো। বলল, তুই কি প্রেম করছিস? আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, আবার এই কথা জিজ্ঞাসা করতেসো।

– তো কি করবে? যা শুরু করেছিস। সত্যি করে বল তো, কার প্রেম পড়েছিস?

আমি দুইজনের দিকে তাকাই আছি। আমার আব্বা আম্মার লাভ ম্যারেজ। তাই মনে করতেসে আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি সুড়সুড় করে সব বলে দেবো। ওটি হচ্ছে না। আগে আমি ক্রাশকে পটামু, তারপর। কিন্তু ক্রাশ!!!!! আমি বললাম, ওসব কিছুই না। আসলে একলা একলা ভালো লাগে না। আর এখনো বিয়ে করারও বয়স হয় নাই। তাই নিজে নিজে সময় কাটাইতেসি। তোমরা যাও তো। আমি পড়মু।

আব্বা আম্মা হয়ত বুঝতে পারছে আমি কিছু কমু না। তাই হতাশ হয়ে বেরিয়ে গেল। আমি দরজা মেরে আয়নার সামনে গিয়া আমার চেইনটা খুলে বোতামটা লাগিয়ে আবার গলায় ঝুলাই দিলাম। বাহ্!!!! কি সুন্দর লাগতেসে। একেবারে পার্ফেক্ট হইসে আমারে। আমার ক্রাশের বলে কথা। আমি বোতামটা হাতের মুঠায় ধইরা টেবিলে বসলাম। ওটাতে একটা চুমু দিয়ে পড়ায় মনোযোগ দিলাম।
.
.
.
.
এর মধ্যে আরো এক সপ্তাহ অতিবাহিত হইল। আরেক শুক্রবার আসলো। আমি ঘুম থেকে হাই তুলতে তুলতে উঠলাম। আজকে আম্মা জাগায় নাই। তাইলে আজকে কোনো কাজ নাই। ফ্রেশ হয়ে ধীরেসুস্থে খাবার খাইলাম। আম্মার রুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম আম্মা কার সাথে ফোনে কথা বলতেসে। আমি নিজের রুমে এসে একটা গল্পের বই নিয়ে বসলাম। আম্মা আমার রুমে উঁকি দিতেই আমি বললাম, আজকে কাপড় ধুইবা না? আম্মা আমার কাছে এসে বলল, হঠাৎ তোর কাপড় ধোয়ায় এত আগ্রহ?

– এতে আগ্রহের কি আছে? প্রত্যেক শুক্রবারই তো তুমি কাপড় ধোও।

মনে মনে কইলাম, প্রত্যেক শুক্রবারই তো আমার চেরি ফলের লগে ছাদে দেখা হয়। তাই প্রত্যেক শুক্রবার আমার ক্রাশ ডে। তাই এত আগ্রহ।

– তুই তো নিজের কাপড় সব জমাই রাখিস। যা আজকে তুই ওগুলা নিজে ধুবি।

আমি কিছু না বইলা উঠে গেলাম। আলমারি থেকে খুঁইজা ময়লা কাপড় বাইর করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। আজকে কেন জানি প্রতিবাদ করতে মন চাইল না। হয়ত ক্রাশের সাথে দেখা করার লোভ সামলাইতে পারি নাই।
.
.
.
.
কাপড় ধুইতে ধুইতে হাত ব্যাথা হইয়া গেল। দুইটা ভারি বালতি টাইনা টাইনা পাঁচতলায় উঠে হাঁপাই গেলাম। বাপ রে! ক্রাশের চোটে ইচ্ছা মতো কাপড় ধুইসি। এখন অবস্থা টাইট। আমি ঘেমে নেয়ে একাকার। ছাদে বালতি দুটো রেখে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়া চোখ বন্ধ করে দাঁড়ালাম। নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কতক্ষণ দাঁড়াই ছিলাম জানি না। চোখ খুলে তাকাতেই সারা শরীরে হিম বয়ে গেল। আমার ক্রাশ দাঁড়াই আছে। যদিও আমার দিকে মনে হয় খেয়াল করে নাই। মনোযোগ দিয়ে কি যেন দেখতেসে। হাতে ডিএসএলআর ক্যামেরা!!!! ওয়া!!! হঠাৎ নিজের দিকে খেয়াল হতেই কেমন কেমন লাগল। ঘামে পানিতে পুরা ভিজে আছি। ইস্। আমি কোনোমতে কাপড় মেলে তাড়াতাড়ি যেতেই একটা বড় রকমের উস্টা খাইলাম। আমার মনে হল আমি পড়াতে পুরা বিল্ডিং হয়তো কাঁইপা উঠছে। আমি কি এতই মোটা!? কিছুক্ষণ এটা নিয়ে ভাইবা মাত্র চিৎকার দিমু, মা গো… সাথে সাথে মুখ চেপে ধরলাম। কোনোমতে দেয়াল ধরে উঠে হাঁটতে গিয়া বুঝলাম অবস্থা খারাপ। ভালোমতো পা মচকে গেসে। পেছনে তাকাইয়া দেখি ক্রাশ আমার দিকে তাকাই আছে। আমি মনে মনে কইলাম, সার্কাস দেখতেসে। আমি পইড়া গেলাম আর একটু তুলতেও আসলো না। আমি খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে তার আড়ালে গিয়া সিঁড়িতে বসে পড়লাম। মনে মনে চিৎকার করতেসি, আল্লাহ গো, কি দুনিয়া পাঠাইলা। পইড়া এত ব্যাথা পাইলাম। অথচ একটু আইসা জিজ্ঞেস পর্যন্ত করল না!!! আব্বা আম্মা, কি ব্যাথা!!! আমি মনে মনে চিল্লাইতেসি আর এমন সময় সে পেছন থেকে এসে বলল, পুরা রাস্তা মেরে বসে আছো কেন? সাইড দাও। আমি বেকুবের মতো তার দিকে তাকাই আছি। সে আবার ইশারা করে পা সরাতে বললে আমি পা সরাই দিলাম। সে সুড়সুড় করে নেমে গেল। আমার ইচ্ছা করতেছিল ডাক ছেড়ে কাঁদি। যাই হোক, এখন কাঁইদা লাভ নাই। নিচে তো যেতে হবে। আমি রেলিং ধইরা উঠতে গিয়ে আবার বইসা পড়লাম। প্রচুর ব্যাথা করতেসে। তাকাই দেখি কালো হয়ে ফুইলা গেছে। আল্লাহ গো, কি হইল এটা!!! এমনিতে ক্রাশের সামনে পইড়া ইজ্জতের ফালুদা, আর এখন পায়ের ব্যান্ড বেজে আছে। আমি আরেকবার চেষ্টা কইরা হাল ছেড়ে বসে রইলাম। হঠাৎ দেখি কেউ আমার দিকে হাত বাড়াই আছে। তাকাই দেখি ক্রাশ আমার দিকে তাকাই আছে। তারে দেইখাই আমার মনে লাড্ডু ফুটতে লাগল। সে কইল, এত বড় মেয়ে হয়েছে এখনও হাঁটতে শিখে নাই। আমি হ্যাবলার মতো বসে রইলাম। সে আবার কইল, আমি ছবির নায়ক না যে তোমাকে কোলে তুলে নিবো। আমার কাঁধে হাত রেখে উঠো। ও আমার সামনে ঝুঁকতেই আমি ওর কাঁধে হাত রেখে দাঁড়াইলাম। তাল সামলাতে না পেরে পইড়া যাচ্ছিলাম। রেলিং ধরে দাঁড়ালাম। মনে মনে বললাম, কি মানুষ রে ভালোবাসলাম!!! পড়ে যাইতেসি তাও একটু ধরতেসে না। যাগ্গে, অন্তত আসছে তো। সে আমাকে বাসার দরজার সামনে পৌঁছাই দিয়াই ছেড়ে দিল। আমি পড়ে যাইতে লাগলে দরজা ধরে দাঁড়ালাম। সে নিজের বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বলল, ভালো করে গোসল করো। ইস্, আমাকেও এখন গোসল করতে হবে। বলেই দরজা মেরে দিল। আমার রাগে মাথার চুল ছিঁড়তে মন চাইতেসে। আমি দরজায় নক করতেই আম্মা এসে দরজা খুলল। আমারে দেখে কইল, কি রে, বালতি কই?

– ছাদে। আমার পা মচকে গেছে। আনতে পারি নাই।

– কিভাবে মচকালো!!!? হাঁটতে তো পারিস না ঠিক মতো। ক্লাস এইটে পড়ে এখনও হাঁটতে জানে না।

– তুমি এখন এসব বলবা না আমাকে ঢুকতে দিবা?

আমি অনেক কষ্টে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ঢুকলাম ভেতরে। সবার উপর রাগ হইতেসে। বিশেষ করে আমার এই অকম্মা পা দুইটার উপর। যখন তখন খালি উস্টা খায়। আম্মা বাম দিয়ে গেল। আমি ওটা না লাগাই ওয়াশরুমে চলে গেলাম। গায়ে বালতি বালতি পানি ঢালতেসি আর ভাবতেসি, আমার গায়ের গন্ধ এত বাজে যে তারে গোসল করতে হবে!!! আজকে ঢইলা আমি সব গন্ধ দূর করমু। যদি আমার গায়ে এক ফোঁটাও গন্ধ থাকে তো আমার নামও… ধুর বাবা, টুলে বইসা গোসল করা যায় নাকি! সাত নাম্বার বার বালতি পুরানোর সময় আম্মা বাইরে থেকে ডাক দিয়া বলল, কি রে ছোঁয়া বেঁচে আছিস নাকি? আমি চিল্লাই জিগাইলাম, হঠাৎ মরতে যামু ক্যান?

– না, তোর কাকের গলা শুনতে পাচ্ছি না তো তাই ভাবলাম। এখন বের হ। তখন থেকে তো খালি পানি ঢালার আওয়াজ শুনতেসি।

আমি মুখ বাঁকা করে শেষ বালতির পানি গায়ে ঢেলে বের হলাম। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবতেসি কি করা যায়। আম্মা এসে জিগালো, বাম লাগাইছিস?

– ও, ভুলি গেসি।

– তোর যে কি মনে থাকে! এই বয়সে যদি এমন ভুলে যাস বুইড়া বয়সে কি করবি? দেখি পা। ইস্ রে, কেমনে পড়ছিস? আল্লাহই ভালো জানেন। পুরা কালো হয়ে গেছে৷ ধর এখন বাম লাগা, আমি বরফ আনি। তোর আব্বু আসলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।

আমি ভালো মেয়ের মতো বাম লাগাই বরফের শ্যাক দিতে লাগলাম। দুপুরে খাওয়া শেষে লুকিয়ে ছাদের দিকে রওনা দিলাম। আম্মা জানলে আমারে ফালাই পিটবো। অনেক ভাইবা একটা ব্যাপার মাথায় আসছে তাই গেলাম ছাদে। গিয়ে দেখি আমি তখন ঠিকই দেখসি। ক্রাশের জন্মদিনের শার্টটা শুকাইতে দিসে। আমি গিয়া দেখলাম ওটা শুকাই চকচক করতেসে। আমি চোরের মতো এদিক ওদিক তাকাই শার্টটা ডাকাতি করলাম। জামার মধ্যে ঢুকাই পা টিপে টিপে নামলাম। এখনো পায়ে ভীষণ ব্যাথা। অনেক কষ্টে রুমে গিয়া দরজা মারতেই আম্মা কইল, ছোঁয়া, কই গেসিলি এই পা নিয়ে?

– ছাদে গেসিলাম। একটা ইম্পর্টেন্ট জিনিস রাখি আসছিলাম। ওটা আনসি।

আমি জামার উপর শার্টটা পরলাম। সাদা শার্ট। বুক পকেটের জায়গায় নীল সুতা দিয়ে অল্প কাজ করা। আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই নিজেকে দেখতে লাগলাম। কলারটা নাকের কাছে টেনে ধরতেই একটা মিষ্টি সুবাস নাকে লাগল। আহা!!! আমার ক্রাশের গায়ের গন্ধ তো জোস। বিয়ার পর ক্রাশরে একেবারে জড়াই ধইরা ঘুম যামু। ইস্!!! ভাইবা লজ্জায় মুখ ঢাইকা ফেললাম। শার্টটা পরে নাচতে লাগলে পাটা মনে করিয়ে দিল, আমি কিন্তু রেগে আছি। আর নাচা গেল না। আমি শার্টটা পইরাই বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ক্রাশের গায়ের সুগন্ধে আমার চোখে ঘুম চইলা আসলো।
.
.
.
.
ঘুম ভাঙল সন্ধ্যার পরে। উইঠা মাত্র বিছানা থেকে নামতে যামু এমন সময় বসার ঘরে হাসির শব্দ শুনতে পাইলাম। নামতে গিয়ে টের পেলাম পায়ের ব্যাথা এখনো কমে নাই। তাকাই দেখি এখনো কালো হই আছে। কোনমতে খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে দরজা খুলতে যামু তখনই গায়ের দিকে নজর পড়ল। আয় হায়!!! ক্রাশের শার্ট এখনো গায়ে।
চলবে…

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_৭
#সাহেদা_আক্তার

কোনমতে খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে দরজা খুলতে যামু তখনই গায়ের দিকে নজর পড়ল। আয় হায়!!! ক্রাশের শার্ট এখনো গায়ে। এখন এইভাবে গেলে তো আমার খবর হই যাইতো। আমি তাড়াতাড়ি কইরা শার্ট খুইলা আলমারিতে লুকাই রাখলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলে দেখলাম আমার হবু শ্বাশুড়ি আম্মা মানে পাশের বাসার আন্টি এসেছেন। আম্মার সাথে গল্প করতেছেন। আমাকে দেখে ডাকলেন। আমি কোনোমতে গিয়া আন্টির পাশে বসলাম। আন্টি জিজ্ঞেস করলেন, পায়ের কি অবস্থা?

– ব্যাথা আছে এখনো।

– দেখেন না ভাবি, বলসি বিকালে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাবো আর সে পড়ে পড়ে ঘুমাইসে। কেমন লাগে। পায়ের কি অবস্থা করেছে। পুরা কালো হয়ে গেসে।

– ভাই কোথায়?

– আপনার ভাই, নাস্তা আনতে গেছে। দেখি নাস্তা খেয়ে তারপর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।

– ও। জানেন ভাবি, আজকে আমার ছেলের শার্ট চুরি হয়ে গেসে।

– কি বলছেন? কি করে?

– আরে ছাদে ধুয়ে শুকাতে দিয়েছিলাম। কাপড় আনার সময় দেখি শার্টটা নেই। আমার ছেলের প্রিয় শার্ট ওটা।

– কি যে শুরু হল? দিনে দুপুরেও চোরের উৎপাত।

আমি ভিজা বিড়ালের মতো দুইজনের দিকে তাকাইতেসি আর মনে মনে হাসতেসি। নাচতে মনে করতেসে, শার্টটা আমার ক্রাশের ফ্যাবোরেট। ভালো হইসে, ওই চাঁদনী না শুঁটকি ওইটার সাথে এত হেসে হেসে কথা বলে ক্যান? চুরি করসি বেশ করসি। ওর জিনিসের উপর শুধু এই ছোঁয়ার অধিকার আছে। আর কারো না।

এমন সময় আমার ক্রাশ ঢুকল। আমি তখন তারে নিয়া ভাবতেসি। খেয়াল করি নাই। সে এসে কইল, আম্মু, চল। নাস্তা খাবে।

– তুই যা, আমি আসছি। ভাবি, আজকে আমার ছেলে নিজে নাস্তা বানিয়েছে।

শুনেই আমি সাথে সাথে বললাম, আন্টি, আমাকে দিয়েন তো। আমি দেখবো কি রকম নাস্তা বানিয়েছে। ক্রাশ বলল, তোমাকে দিবো কেন? জানো আম্মু, কালকে না আমার কলেজ শার্টের শেষ বোতামটা কেউ চুরি করেছে। শুনেই সাথে সাথে আমার মুখ আমসি হয়ে গেল। আমি আমতা আমতা করে গলায় ঝোলানো বোতামটা হাত দিয়ে ঢেকে বললাম, আন্টি, আমি আসতেসি। রেডি হতে হবে। আমি বের হওয়ার আগে আপনাদের বাসায় যাবো। নাস্তা খেতে।

– আচ্ছা, আসিস।

আমি আঙ্গুল দিয়া চোখ টেনে জিহ্বা বের করে ওরে ভেংচি কেটে নিজের রুমে চইলা আসলাম।

আন্টি চলে যাওয়ার পর আম্মা আমার রুমে আইসা একটু থমকে গেল। তারপর আমার উপর চিক্কুর দিয়া কইল, গোয়াল ঘরও তো তোর রুম থেকে ভালো। কি করছিস? ডাক্তারের কাছেই তো যাবি। এত জামা কাপড় বের করে বিছানার এই অবস্থা করছিস কেন?

– ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি তো কি হইসে? বাইরেই তো যাইতেসি। একটু সুন্দর হয়ে যাইতে হবে না?

– আল্লাহ গো, কি মেয়ে দিলা!?

আম্মা বের হই গেল। আমি মনে মনে হেসে বলতেসি, হি হি, আমি তো ক্রাশের বাসায় যাবো। একটু সাজুগুজুর ব্যাপার আছে না। কি যে কও না আম্মা। আমি বোতামটার সাথে মিলাইয়া একটা সোনালী রঙের থ্রিপিস পরলাম। মাথায় বেণী করে ওটাকে প্যাঁচাই খোঁপার মতো বেঁধে নিলাম। ছোট চুলগুলা মুখের দুই পাশে ঝুলতেসে। আমি চোখে হালকা কাজল দিয়ে ওড়না পরে বের হয়ে আসলাম। আম্মারে চিল্লাই কইলাম, আম্মু, আমি আন্টির বাসায় যাইতেসি। আব্বু আসলে নক দিও। আমি বের হওয়ার সময় আম্মা জিজ্ঞেস করল, তুই সত্যি সত্যি যাচ্ছিস?

– হুম।

আমি নক দিলাম। ক্রাশ দরজা খুলে বলল, কি চাই? আমি কইলাম, খেতে আসছি। সরেন। সে না সরে আমার দিকে তাকাই আছে। আমি ভাবলাম আমার উপর ক্রাশ খাইল নাকি? যেভাবে তাকাই আছে। আমি তো মনে মনে খুশিতে বান্দরের মতো লাফাইতেসি। কিন্তু তার কথা শুইনা আমার মন ফুঁটা বেলুনের মতো চুপসাই গেল।

– এটা কোনো রেস্টুরেন্ট না। যে যেই আসবে তাকে খাওয়াবো। বাপরে, মেয়েরা কতই না ঢঙ করতে পারে। ডাক্তারের কাছে যাইতেসে না প্রেম করতে যাইতেসে বুঝাই যাইতেসে না।

– তাতে আপনার কি। সরেন।

– না।

আমি চিৎকার দিতে লাগলাম, আন্টি……। হঠাৎ ক্রাশ এসে আমার মুখ চেপে ধরল। আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই সে বলল, চুপ। আমি বলেছি না ভেতরে যাওয়া নিষেধ……আউ……। আমি তার হাতে কামড়াই দিলাম। সে ব্যাথায় হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, বাপরে, রাক্ষসী একটা। আমি পায়ের ব্যাথা নিয়া দৌঁড়ে ওদের বাসায় ঢুইকা গেলাম। যাওয়ার আগে ওর দিকে ভেংচি কাইটা আন্টির কাছে চইলা আসলাম।

– এতক্ষণে আসার সময় হলো?

– একটু দেরি হয়ে গেছে রেডি হতে। তার উপর এক বিরাট পাহাড় অতিক্রম করে আসছি।

– পাহাড়!

– হুম, কই, আমাকে দাও না। খিদে পেয়েছে।

আন্টি দুটো পিচ্চি বড়া বের করে দিলেন। আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম, মাত্র দুটো!!! তাও এত্তো ছোট!!! এগুলা তো আমার পেটের কোণা দিয়েও যাবে না। আন্টি আমাকে সান্ত্বনা দিয়া বলল, কি করব? আমার ছেলেটা এত ফাজিল। তোমার জন্য রাখতেই দিল না। আমি ফোঁপাতে ফোপাঁতে দুটো বড়া একসাথে মুখে পুরে দিয়া কইলাম, আমারে কেউ ভালোবাসে না। আন্টি বলল, আচ্ছা মা, আর কাঁদে না। আমি কালকে তোমার জন্য বানিয়ে দিবো। আমি উজ্জ্বল মুখে কইলাম, সত্যি?

– হুম।

– তাহলে কালকে বিকালে আমি শিখতে আসবো।

আমি দরজার দিকে তাকাতেই মনে হল কেউ একজন সরে গেল। ভাবলাম চোখের ভুল হয়তো। কিছুক্ষণ পর আব্বা নক করলো দরজায়। আমি আন্টি থেকে বিদায় নিয়ে বাইর হই গেলাম। যাওয়ার সময় বললাম, আন্টি কালকে কিন্তু আমি আসবো। আন্টি হাসলেন।

নয়টার সময় বাসায় আসলাম। পায়ে প্লাস্টার করা। হাড় নড়ে গেছে। হাড় নড়ার আর সময় পাইলো না। আম্মা সাফ জানায় দিসে বিছানা থেকে নামা যাবে না। আমি মুখ গোমড়া করে বিছানায় বইসা আছি। পাটার দিকে তাকাই ইচ্ছা করতেসে লাথি মারি। কিন্তু পা দিয়ে পাকে কেমনে লাথি মারি! আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম, কালকেও যদি আম্মা ১৪৪ জারি কইরা রাখে আমি ক্রাশের বাসায় যামু ক্যামনে? যত দোয়া দুরুদ আছে সব পইড়া ফু দিয়া কইলাম, ভালা পা তোরে আর বকুম না। তুই তাড়াতাড়ি ভালা হই যা। রাতে আম্মা এসে খাওয়াই দিলো। এতদিন তার হাতে খাওয়ার জন্য আমি কল্লা পিটতাম। এখন খাওয়াই দিতেসে তাও সব তিতা লাগতেসে। কোন দুক্ষে আগের ভাড়াটিয়া চলে গেসিলো!!!!
.
.
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে নামতেই পা ভারি লাগল। তাকাই দেখি প্লাস্টার বাঁধা পাটা আমার দিকে চিনা হাসি দিয়ে তাকাই আছে। আমি মনে মনে কইলাম, পা, তোরে যে কি করতে মন চাইতেসে। আমি আস্তে আস্তে ওয়াশরুমে গিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে আবার বিছানায় বসলাম৷ পায়ের কারণে স্কুল যাইতে হবে না এটা আনন্দের বিষয়। কিন্তু ঐ বাসায় যাইতে পারমু কি না সেটাই এখন মুখ্য বিষয়।

আম্মা এসে দেখল আমি বিছানায় বইসা হা হুতাশ করতেসি। জিজ্ঞেস করল, কি অবস্থা? আমি খেয়াল করি নাই৷ তখনও আমি ভবিষ্যতের কথা ভাইবা নিজেরে সান্ত্বনা দিয়েতেসি, একদিনেরই তো ব্যাপার৷ জামাইকে না দেখলে কিছু হবে না। আম্মা ভ্রূ কুঁচকাই কইল, তোর জামাই আসছে কোথা থেকে? আমি চমকাই উঠে আমতা আমতা করে কইলাম, আসলে পায়ের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার জামাইকে তো খোঁড়া বউ নিয়ে সংসার করতে হবে তো, তাই ভাবছিলাম। আম্মা আমার মাথায় চাটি মেরে বলল, এত দূরে না ভেবে সামনের পরীক্ষার কথা চিন্তা কর।

– ওমা, দূরে চিন্তা না করলে তোমার মেয়ের কি হবে! তোমার ভবিষ্যত জামাই তো মনে দুঃখ পাবে।

– মাইর খাবি। দাঁড়া, তোর জে এস সি শেষ হলেই বিয়ে দি দিমু।

এই রে!!!! কথা অন্যদিকে মোড় নিতেসে। যদি সত্যিই ধরে বেঁধে অন্য কারো সাথে বিয়া দিয়া দেয়। আমি কইলাম, বাদ দাও না আম্মু। আজকে কি নাস্তা বানাইসো?

– দুধে পাউরুটি চুবাই খাবি।

– এ্যাঁ…… দুধ ক্যান।

– দুধ খাবি। তাইলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হবি। নইলে তোর আব্বুকে দিয়ে নিমপাতা আনাবো।

আমি নিমপাতার রস দিয়ে পাউরুটি খাইতেসি। ভাবতেই শিউরে উঠে বললাম, না আম্মু, থাক। এত কষ্ট করা লাগবে না। আমাকে দুধ পাউরুটিই দাও। আম্মা এক মগ দুধ আর পাউরুটি দিয়ে গেল। আমি দুধে পাউরুটি ডুবাই নিয়া চিবাইতে লাগলাম। পাউরুটিও আমার দুঃখে দুধে ঝাঁপ মারে। বাকিটা মুখে যায়। হঠাৎ গাজর বন্ধুর কথা মনে পড়ল। আমি চিল্লাই কইলাম, আম্মু, আমারে গাজর দাও।

– এসে নিয়ে যা। আমি কাজ করতেসি।

এখন নামতে ইচ্ছে করতেসে না। তাই যেভাবে পাউরুটি খাইতেসিলাম, ওভাবেই খাইতে লাগলাম। ক্রাশের জ্বালায় জীবন একেবারে ত্যানা ত্যানা।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here