বিনি_সুতোয়_গাঁথা 💙,পর্ব_০৬

বিনি_সুতোয়_গাঁথা 💙,পর্ব_০৬
লেখক_ঈশান_আহমেদ

কি মি.চৌধুরী আপনি এতো চুপচাপ বসে আছেন যে!(রিধিকা)

তো আমি কি আর করব!বন্ধুদের সাথে এসেছি দেখছো না তারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।(আমি)

আপনি কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন।আপনি অনেক ভদ্র ছেলে!(রিধিকা)

আসল কথা হলো কি একজনের মুগ্ধতায় আটকে গেলে আর কাউকে ভালো লাগে না।তবে জানো আমি তার মুগ্ধতায় আটকে থাকতে চাই না।বের হয়ে আসতে চাই।কিন্তু কিছুতেই পারছি নাহ্।(আমি)

অন্য কারো মুগ্ধতায় আটকে গেলেই তো হয়!(তমশা)

পিছনের সিটে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে বসে আছে।

একটু আগে কথাটা কি আপনি বললেন?(আমি)

হুম আমিই বলেছি।(তমশা)

সবকিছু এতো সহজ নাহ্।(আমি)

আরে তমশা আমার বেয়াইসাব অনেক রাগী মানুষ।তুই আবার এইসব বলে চটিয়ে দিস নাহ্।(রিধিকা)

আমি রিধিকার দিকে রাগী চোখে তাকালাম।রিধিকা উঠে ওর বান্ধবীদের কাছে চলে গেল।সবাই গান-বাজনা করছে।সিটে বসা মেয়েটা আমার পাশে এসে বসল।

আপনি এখানে এসেছেন কেন?(আমি)

একটু কথা বলব আরকি।আর আমি আপনার ছোট। আমাকে তুমি বলতে পারেন।(তমশা)

আমি যাকে তাকে তুমি বলি নাহ্।(আমি)

ওহ্ আচ্ছা।আমি তমশা আর আপনি?(তমশা)

আমি কে জেনে আপনি কি করবেন?(আমি)

একটু কৌতুহল জানার!(তমশা)

আমি আরাভ।(আমি)

আচ্ছা আরাভ আপনি এখন কি করেন?(তমশা)

আরাভ না ওটা আরাভ ভাইয়া হবে।আমি আপনার বড় সো সেই হিসেবে কথা বলুন।(আমি)

বাবা রে কি রাগী ছেলে!(তমশা)

তমশা আমার পাশে থেকে উঠে চলে গেল।বেশি পাকনা হয়ে গেছে।আমার সাথে কথা বলতে আসছে।বিরক্তিকর!(আমি)

রিধিকা এসে আমার হাতে এক কাপ কফি দিয়ে বলল,

এই নিন মি.চৌধুরী কফিটা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করুন।তমশা তো আপনাকে রাগিয়ে দিয়ে গেছে।

আমি ওর হাত থেকে কফি নিলাম।

এটা আমার খুব প্রয়োজন ছিল।থ্যাংকস।(আমি)

হুম আমি জানি।জিজু বলেছিল আপনি নাকি অনেক রেগে গেলে কফি খান।তাহলে নাকি আপনার মাথা ঠান্ডা থাকে।(রিধিকা)

রিধিকা চলে গেল।

আসলে নিধিকা তো আমাকে না ভাইয়াকেও ঠকিয়েছে।আমার সরল,সোজা ভাইয়াটাকে হয়তো এখনো কিছুই জানায় নাই।সরি রে ভাইয়া আমিও তোকে এইসব কিছু জানাতে পারব নাহ্।তোর কষ্ট তো আমি দেখতে পারব না।




রিধিকার ডাকে ঘুম ভাঙ্গল।

মি.চৌধুরী আমরা চলে এসেছি আপনি কি গাড়ি থেকে নামবেন না।(রিধিকা)

ওহ্ আচ্ছা।চলো!(আমি)

গাড়ি থেকে নেমে হোটেলের রুমে গেলাম।আমি,অন্তু আর রাজন এক রুমে।

আচ্ছা রাজন তুই কিন্তু ওই তমশা নামের মেয়েটার সাথে প্রেম করতে পারিস!(অন্তু)

আমি কি প্রেম করব ও তো আরাভের উপর ফিদা হয়ে গেছে।(রাজন)

ওই এইসব বাজে কথা বাদ দে।তোরা যা খুশি কর আমার নাম কোথাও ঢুকাবি না।(আমি)

আরে তমশা তো রিধিকাকে বলতে ছিল যেন তোর সাথে ওর প্রেম করিয়ে দেয়।(রাজন)

চুপ কর।প্রেম করার এতো শখ হয়েছে।কালকে মিটিয়ে দিব নে।(আমি)

কি করবি রে?(অন্তু)

থাপ্পড় দিয়ে মাথা থেকে প্রেমের ভূত নামাবো।(আমি)

এটা করিস না রে আমার ও কে অনেক পছন্দ হয়েছে।(রাজন)

আমি আর কিছু না বলে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।হোটেলের নিরিবিলি পরিবেশে বসে আছি।হালকা শীতল হাওয়া বইছে ভালোই লাগছে।

আচ্ছা নিধিকা সেদিন যেগুলো বলেছিল সবটা কি সত্য ছিল!আমি তো এগুলো নিয়ে একবারও ভাবি নাই।আসলে ও নিজের ইচ্ছায় এমন করেছে নাকি কারো চাপে পড়ে।আমার মাথায় কিছু আসছে নাহ্।আর আমি তো ও কে সহ্যই করতে পারি না।উফ!জাস্ট পাগল হয়ে যাব আমি।

এই যে মি.চৌধুরী আপনাকে সারা হোটেল খুঁজে এখানে আসলাম।(রিধিকা)

কেন কি হয়েছে?(আমি)

চলুন তো একটু চারিপাশটা ঘুরে আসি।(রিধিকা)

অনেক রাত হয়ে গেছে।নতুন পরিবেশ এখন বের হওয়াটা ঠিক হবে নাহ্।(আমি)

আপনি এতো ভীতু!আমি তো ভেবেছিলাম আপনি অনেক সাহসী।(রিধিকা)

এখানে ভীতু বা সাহসীর কথা আসল কোথা থেকে!আর আমি তোমার সেফটির কথা ভেবেই বলছি।(আমি)

কেন আপনি তো আছেন।আপনি আমাকে রক্ষা করবেন।(রিধিকা)

আচ্ছা এতো লোক থাকতে আমার কাছে এসেছো কেন?(আমি)

সবাইকে তো আর ভরসা করা যায় নাহ্।(রিধিকা)

কেন?(আমি)

দেখুন আপনি হলেন আমার আপুর দেবর।আমার আত্মীয়।আর যাইহোক আপনি আমার কোন ক্ষতি করবেন না।এই বিশ্বাস আপনার উপর আমার আছে।এতোদিন ধরে তো দেখছি।(রিধিকা)

আমি চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

এই যে যাবেন নাকি যাবেন না?(রিধিকা)

চলো!(আমি)

রিধিকার সাথে হাঁটছি।রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা।তেমন মানুষজন নেই।রিধিকা আমার আগে আগে হাঁটছে আর লাফাচ্ছে।

দেখো!এই রাতেরবেলা এতো আগে আগে হেঁটো না।আমার সাথে সাথে হাঁটো।(আমি)

ওফ!কিছু হবে না।আপনি আস্তে আস্তে হাঁটুন।আমি তো জোরে জোরেই হাঁটবো।(রিধিকা)

হঠাৎ একটা ছেলে রিধিকার হাত টেনে ধরল।সাথে আরও কয়েকজন এসে রিধিকাকে ঘেরাও করে দাঁড়ালো।

মি.চৌধুরী।(রিধিকা)

ওই কি হচ্ছে!ও কে ছেড়ে দেন।(আমি)

এই রাতের বেলা রোমিও জুলিয়েট প্রেম করতে বের হয়েছিলে।আচ্ছা সমস্যা নাই জুলিয়েটকে আমরাও একটু ভালোবাসা দি তারপর তুমি দিও কেমন!(একটা লোক)

এইসব কথা শোনে আমার মাথা গরম হয়ে গেছে।লোকটা কলার টেনে ধরে নাক বরাবর একটা ঘুষি মারলাম।তারপরে একেকটাকে এলোপাতাড়ি মেরেছি।সবগুলো দৌড়ে পালিয়ে গেছে।

মি.আরাভ আপনি ঠিক আছেন?(রিধিকা)

চুপ!একটা কথাও বলবে না।কতবার নিষেধ করেছিলাম বের হতে!এখন যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমি তোমার বাবা-মাকে কি জবাব দিতাম!(ধমক দিয়ে বললাম)

রিধিকা ভয়ে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি রিধিকার হাত ধরে হাঁটা শুরু করলাম।

একদম রাস্তায় লাফালাফি করবে নাহ্।তাহলে একদম পাহাড় থেকে নিচে ফেলে দিব।হোটেলে এসে রুমে চলে আসলাম।খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

কি রে রিধু তুই আরাভের সাথে কোথায় গেছিলি?(তমশা)

রিধিকা সব ঘটনা বলল।

কি এতোকিছু ঘটেছে!(তিশা)

এই আরাভ কি হিরোদের মতো ফাইট করে?(তমশা)

কি রে তুই কোথায় আমার কথা জিগাসা করবি ঠিক আছি নাকি সেখানে মি.চৌধুরীর কথা জিগাসা করছিস!(রিধিকা)

ধূর তুই তো ঠিকই আছিস।তাও তো আরাভের জন্য।বল না রে ও কি হিরোদের মতো ফাইট করে।(তমশা)

মি.চৌধুরী ফেইক হিরো না রে বাস্তব জীবনের হিরো।যে মেয়েদের রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত থাকে।যা আমি আজ নিজের চোখে দেখে বুঝেছি।(রিধিকা)

আমি যদি আরাভের ফাইট দেখতে পারতাম!(তমশা)

চুপ কর তো তমশা।ঘুমিয়ে পড়।খালি আজেবাজে কথা।(তিশা)

তুমি কি বুঝবা সিঙ্গেল থাকার কষ্ট।নিজের তো বয়ফ্রেন্ড আছে।(তমশা)

কেন রে রিধুও তো সিঙ্গেল।ও তো এমন করে না।আর সবচেয়ে বড় কথা।তুই সিঙ্গেল কেমনে হইলি!তোর তো চার থেকে পাঁচটা বয়ফ্রেন্ড আছে।(মিহি)

চুপ কর।এইসব কি কেউ সব জায়গায় বলে!দেয়ালেরও কান আছে কেউ যদি শুনে আরাভকে বলে দেয়!তাহলে আমি আর পটাতে পারব নাহ্।(তমশা)

মি.চৌধুরীকে তুই পটাতেও পারবি নাহ্।এইসব গিয়ে বল বকা খেয়ে ফিরে আসবি।(রিধিকা)

তুই একটু ব্যবস্থা করে দে না।(তমশা)

আমি এইসব পারব না।(রিধিকা)

রিধিকা ঘুমিয়ে পড়ল।

পরেরদিন সকালে সবাই বাইরে ঘুরতে বের হলো!সবাই অনেক আনন্দ করছে।আমি একটা তাবুর ভেতরে বসে বসে সবার কাজ-কর্ম দেখছি।কেউ খেলা করছে,কেউ গান গাচ্ছে,কেউ বা নাচছে তার প্রিয় মানুষটির সাথে।হঠাৎ খেয়াল করলাম রিধিকা তার বান্ধবীদের সাথে পিক তুলছে।পিক তুলতে তুলতে একদম পাহাড়ের ঢালে চলে গেছে।দুই কদম পিছনে গেলেই ওর আর অস্তিত্ব থাকবে না কারণ পিছনে গভীর খাদ।আমি তাবু থেকে বেরিয়ে তাড়াতাড়ি করে ওদের কাছে গেলাম।এমন সময় রিধিকা সেল্ফি তুলতে পিছনে পা দিয়ে পড়ে যেতে যাবে তার আগে ওর এক হাত টেনে ধরলাম।তাল সামলাতে না পেরে রিধিকাকে নিয়ে নিচে পড়ে যাই।

আমি উঠে দাঁড়িয়ে রিধিকার দিকে তাকিয়ে আছি।রিধিকা চুপ হয়ে নিচে বসে আছে।ভয়ে একদম চুপসে গেছে।

তোমার মাথায় কি সমস্যা আছে?পিছনে যে খাদ এটা তোমার চোখে পড়ে নাই!এতো সেল্ফি তুলতে হবে কি কারণে!সেল্ফি তুলবে ভালো কথা তাই বলে পাহাড়ের শেষ সীমানায় গিয়ে তুলতে হবে!নেক্সট টাইম এমন কিছু দেখলে থাপ্পড় দিয়ে গাল ফাটিয়ে ফেলব।

কথাগুলো বলে তাবুতে ফিরে আসলাম।প্রচুর রাগ উঠে গেছে।

রিধিকার বুক ধুপধুপ করছে।এমন একটা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল,তারপরে আবার এতোগুলো বকা খেলো সে একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।

রিধু তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?ওমন ভাবে কেউ সেল্ফি তুলে!(তিশা)

ধূর আমি তো চেয়েছিলাম সূর্যটা যেন সেল্ফিতে থাকে।সূর্যটা আনতে গিয়েই তো ওমন ঢালে চলে গেছিলাম!(রিধিকা)

চুপ কর।আর তাবুতে চল।(মিহি)

হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল।তাকিয়ে দেখি ভাইয়া ফোন করেছে।তারা সবাই জানে যে আমি আর রিধিকা দুজনে এক জায়গায় এসেছি।কলটা রিসিভ করলাম।

আরাভ কি খবর তোদের?(ভাইয়া)

আমি রিধিকা কুকর্মের কথাগুলো বললাম নাহ্।শুধু শুধু টেনশন করবে।

এই তো ভালোই ভাইয়া।(আমি)

আচ্ছা তোর ভাবি একটু কথা বলবে তোর সাথে।(ভাইয়া)

আয়ান মিশ্রিকে ফোনটা দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

আরাভ।(নিধিকা)

আমার সাথে আপনার কি কথা আছে?(আমি)

দেখো আরাভ তুমি আর রিধিকা এক জায়গায় আছো ঠিক আছে।তবে তুমি রিধিকার থেকে দূরে থাকবে।(নিধিকা)

এইসব কেমন কথা।আর এইসব কথা বলার কি দরকার আপনার!(আমি)

বাসায় অনেক কথাই চলছে যা তুমি জানো না।(মিশ্রি)

আমার জানাও লাগবে না।(আমি)

ফোনটা কেটে দিলাম।বিরক্ত লাগে একদম।ফাজলামো করতে ফোন দিয়েছে।তবে লাস্টে কি বলল!যা ইচ্ছা বলুক।

চলবে……….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করি!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here