বিনি_সুতোয়_গাঁথা 💙,পর্ব_০৫
লেখক_ঈশান_আহমেদ
রুমে এসে শুতেই ফোনটা বেজে উঠল তাকিয়ে দেখি অন্তুর কল।কলটা রিসিভ করলাম।
কি খবর রে তোর?(অন্তু)
এই তো ভালো তোর কি খবর?(আমি)
ওই চলছে।শোন আমাদের ভার্সিটিতে কয়েকদিন আগে সুবর্ণজয়ন্তী হয়েছিল।তুই তো তখন দেশে ছিলি না।তখন আহিনুল স্যারের সাথে দেখা হয়েছিল।উনি তো আমাদের গ্রুপের সবাইকে ভালোভাবে চিনে।দুইদিন পরে ভার্সিটি থেকে স্টাডি টুরে যাবে।তাই স্যার কল করে বলল আমাদেরও যেতে।তোর কিন্তু যেতেই হবে কোন কথা শুনছি না।(অন্তু)
আচ্ছা আমি যাবো।ভালো হবে এইসবের থেকে একটু শান্তি পাবো।(আমি)
হুম এর জন্যই তোকে এতো করে বলা।(অন্তু)
সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করে অফিসে গেলাম।আজকে একটু সব দেখে আসব গিয়ে।কয়েকদিন পরে জয়েন করব।
অফিসে গিয়ে সব দেখেশুনে বুঝে আসলাম।বাসায় এসে দেখি আম্মু আর নিধিকা গল্প করছে।আমি রুমে যেতে যাবো এমন সময় নিধিকা বলল,
আরাভ অফিসে গিয়ে কেমন লাগল?(নিধিকা)
ভালোই।(আমি)
রুমে চলে আসলাম।
আচ্ছা বৌমা আরাভের সাথে কি তোমার কোন সমস্যা আছে?(মা)
মা,,,,মানে.আমি ঠিক বুঝলাম নাহ্।(নিধিকা)
আমি প্রথম দিন থেকে খেয়াল করছি।আরাভ তোমাকে কেমন জানি এড়িয়ে চলে।(মা)
আরে না মা।ওর সাথে আমার কোন সমস্যা নেই।ও তো এমনিই তেমন কথা বলে না।(নিধিকা)
না রে মা।আমার ছেলেটা অনেক হাসিখুশি ছিল।ইদানীং কেমন জানি মনমরা হয়ে গেছে।(মা)
নিধিকা মাথা নিচু করে চুপ হয়ে বসে আছে।সে তো ভালো করেই জানে আরাভ কেন এতোটা পরিবর্তন হয়েছে।
দুপুরে খাবার খেয়ে রুমে শুয়ে আছি।নিধিকা আমার রুমে এসে আমার পাশে বসল।আমি ও কে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসলাম।
এখানে কি আপনার?যখন তখন এমন রুমে চলে আসেন কেন?(আমি)
আরাভ আমার কেমন জানি নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।তুমি তো আমার জন্যই এমন চেঞ্জ হয়ে গেছো।(নিধিকা)
আর ইউ সাইকো?এই ভরদুপুরে আপনার এই কথা মনে পড়েছে!আর আপনাকে না আমি বলেছি আমার সামনে বেশি আসবেন না।তো এখানে কি করছেন?(আমি)
প্লিজ আরাভ তুমি আমার সাথে এমন করো না।আমার অনেক কষ্ট হয়।আর প্লিজ আমাকে ভাবি বলবে না।সেকেন্ড টাইম বলছি!(নিধিকা)
ওহ্ আচ্ছা আপনি যখন আমাকে দেবর জি বলেন তখন কিছু হয় না!আর হ্যাঁ আপনি তো আমার ভাবি হন।সো ভাবিকে তো ভাবিই বলবো।আর বিশ্বাস করেন আপনাকে ভাবি ডাকতে আমার খুব ভালো লাগে।(আমি)
আরাভ প্লিজ একটু বুঝো।এমন করেতেছো কেন!(নিধিকা)
কথাটা বলে নিধিকা আমাকে জড়িয়ে ধরল।আমি ধাক্কা দিয়ে নিধিকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে ওর গালে একটা চড় মারলাম।
একদম আমার সাথে নষ্টামি করতে আসবেন না।তাহলে আপনার এই গাল আর আস্ত থাকবে না।গেট আউট।(ধমক দিয়ে বললাম)
নিধিকা ভয়ে আমার রুম থেকে চলে গেল।আমি রাগের কারণে টেবিলে রাখা গ্লাস নিচে ছুড়ে মারলাম।কাচ ভাঙার আওয়াজে আম্মু আমার রুমে দূরে আসল।
আরাভ বাবা কি হয়েছে তোর?তুই এতো রেগে গেলি কেন?(মা)
আম্মু তুমি আমার বিছানায় এসে একটু বসবে!(আমি)
আম্মু আমার বিছানায় এসে বসল।আমি আম্মুর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লাম।আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
জানো আম্মু তোমার ছোট ছেলের লাইফে একটা বেইমান মেয়ের আগমন ঘটেছিল।যাকে সে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসতো।এতো ভালোবাসার পরেও সেই বেইমান মেয়ের অন্যের প্রতি ঝোঁক ছিল।সে তো কখনো তোমার এই হতভাগা ছেলেকে ভালোই বাসেনি।আর এই স্টুপিট,ইডিয়টটা ভেবে ছিল ওই মেয়েটা তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।(আমি)
কথাগুলো বলে কেঁদে দিলাম।আম্মুর চোখের পানির ফোঁটা আমার গালের উপর পড়ল।
আর সেই মেয়েটা হলো নিধিকা।(মা)
আমি আম্মুর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছি।
আমি নিধিকার ছবি তোর আলমারিতে দেখেছি।তখন এতোকিছু বুঝতে পারিনি কিন্তু আজ সবটা আমার কাছে পরিষ্কার।(মা)
আম্মু তুমি যা জানো তা যেন আর কেউ না জানে।বিশেষ করে ভাইয়া তো নাই।তুমি আমাকে কথা দেও।(আমি)
আচ্ছা বাবা কথা দিলাম।কেউ কিছু জানবে না।তবে এতোটা কষ্ট পাস না।নিজেকে সামলে নে বাবা।যারা বেইমানি করে তাদের জন্য কষ্ট পেতে নেই।(মা)
তবে আম্মু তুমি কিন্তু নিধিকাকে কোন কষ্ট দিবে না এসব জানার পরে।তাহলে কিন্তু সবচেয়ে বেশি কষ্ট আমিই পাবো।আর শুনো কালকে আমি ঘুরতে যাবো।দুইদিন পরে চলে আসব।(আমি)
আচ্ছা বাবা ঘুরে আয়।ভালো লাগবে তোর।(মা)
আম্মু রুম থেকে চলে গেল।আমি কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না।সন্ধ্যার সময় বাড়িতে হৈচৈ এর কারণে ঘুমটা ভেঙে গেল।নিচে নেমে দেখি রিধিকা এসেছে।
আহা বিয়াইসাব যে!এতোক্ষণ কি ঘুমাচ্ছিলেন?(রিধিকা)
হুম।তো তুমি এখানে কখন আসলে?(আমি)
এই তো একটু আগে।কালকে একটা স্টাডি টুরে যাচ্ছি তো তাই ভাবলাম আপুর সাথে একটু দেখা করে যাই।(রিধিকা)
ওহ্ আচ্ছা ভালো।(আমি)
সোফার একপাশে বসে কফি খাচ্ছি।আর সবাই আড্ডা দিচ্ছে।নিধিকার গালটা দেখলাম লাল হয়ে আছে।আচ্ছা ভাইয়া কি ও কে জিগাসা করেনি ওর গালে কি হয়েছে!হয়তো বানিয়ে কোন মিথ্যা বলেছে!
বাই দ্যা ওয়ে আপু তোমার গালে কি হয়েছে?(রিধিকা)
আ..আসলে ঘুমিয়ে ছিলাম তো।তখন মশা বসে ছিল।জোরে থাপ্পড় মারার কারণে গালটা লাল হয়ে গেছে।(নিধিকা)
নিধিকার কথায় সবাই হেসে দিল।
তা মিশ্রি মশাটা কি মরে ছিল?(ভাইয়া)
ওয়েট ওয়েট!ভাইয়া তুমি ভাবিকে কি বলে ডাকলে?(আনহি)
মিশ্রি!এটা আমি ও কে ভালোবেসে ডাকি।(ভাইয়া)
ওয়াও!তাহলে আমরা সবাই এখন থেকে ভাবিকে মিশ্রি ভাবি বলে ডাকব।আরাভ ভাইয়া তুমিও ডাকবে কিন্তু!(আনহি)
ওকে।(আমি)
নিধিকা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ সরিয়ে নিলাম।
আম্মু তুমিও ডাকবে।(আনহি)
আচ্ছা ঠিক আছে।(মা)
ভাবি তোমার কোন সমস্যা নেই তো?(আনহি)
আরে নাহ্।কোন সমস্যা নেই।(মিশ্রি)
রাতে সবাই একসাথে খেয়ে নিলাম।অনেক রাত হয়ে গেছে।
রিধি মা তুমি আজ থেকে যাও।অনেক রাত হয়ে গেছে।(মা)
আন্টি আমার তো কাল সকালেই যেতে হবে।এখানে থাকলে সমস্যা হয়ে যাবে।আমি যেতে পারব সমস্যা নেই।(রিধিকা)
কি বলো তুমি এগুলো!এতো রাতে আমি তোমাকে একা যেতে দিব তুমি ভাবলে কি করে!আরাভ তুই গিয়ে রিধিকাকে দিয়ে আয়।(মা)
আম্মুর কথায় সাই না দিলে সবার সামনে বকা দিবে।মানসম্মান থাকবে নাহ্।তাই রাজি হয়ে গেলাম।
গাড়ি চালাচ্ছি।দুজনেই নিশ্চুপ।নিরবতা ভেঙে রাধিকা বলল,
আচ্ছা একটা কথা জিগাসা করি?
হুম করো।(আমি)
নাহ্ থাক।(রিধিকা)
বলো সমস্যা নেই তো।(আমি)
নাহ্ বাদ দিন।(রিধিকা)
আমি আর কিছু বললাম নাহ্।তবে রিধিকা কি জিগাসা করতে চেয়েছিল।ও কি কিছু জেনে ফেলেছে!ধ্যাত মাথাটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
রিধিকাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামালাম।রিধিকা গাড়ি দিয়ে নেমে গেল।
মি.চৌধুরী ভিতরে আসুন।(রিধিকা)
অনেক রাত হয়ে গেছে।আরেকদিন আসব তুমি যাও।(আমি)
রিধিকা ভিতরে চলে গেল।আমি বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালবেলা,
ব্যাগপত্র গুছিয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে পড়লাম।ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীর সাথে বাসে বসে আছি।ছেলের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেশি।যার ফলে আমার অনেক বিরক্ত লাগছে।অন্তু আর রাজন তো মহা খুশিতে আছে এতো মেয়ে দেখে।তবে আমার চোখ শুধু মায়াবীনিকে খুঁজে।এগুলো আমি কি বলছি!সে এখন আমার বড় ভাবি।আল্লাহ ও কে ভুলে যাওয়ার ক্ষমতা দেও আমায়!
বাস ছাড়তে যাবে এমন সময় একটা মেয়ে দৌড়ে এসে বাসে উঠল।মেয়েটা আর কেউ না রিধিকা।আমি তো অবাক।রিধিকা এখানে আসল কোথা থেকে!তারমানে রিধিকা এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট।কোনো সিট ফাঁকা নেই।শুধু আমার পাশের সিট ফাঁকা।আমি অনেক কষ্টে সিটটা ফাঁকা রেখেছি যেন আরাম করে ঘুমাতে পারি।কিন্তু আমার যা পোড়া কপাল এই সিটটা এখন অন্যের দখলে চলে যাবে।
রিধিকা এসে আমার পাশে বসল।
বিয়াইসাব আপনি এখানে?আপনিও কি এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট ছিলেন?(রিধিকা)
হুম।(আমি)
ওয়েট!আপু আর আপনি তো এক ব্যাচ।সো আপনি তো মেইবি আপুকে আগে থেকে চিনতেন।(রিধিকা)
উফ!এই মেয়ে আবার এগুলো নিয়ে পড়ল কেন!এখন আবার মিথ্যা বলা লাগবে।(মনে মনে বললাম)
মানে ভাবি কি এই ভার্সিটিতে পড়তো?(আমি)
হুম পড়তো তো।(রিধিকা)
হতে পারে বাট আমি ভাবিকে চিনি না।এক ভার্সিটিতে হলেও সাবজেক্ট তো আলাদা।(আমি)
ভার্সিটিটা তো এতো বড় না যে আপনি আপুকে কখনও দেখেন নাই!(রিধিকা)
আসলে আমি তেমন ভার্সিটিতে আসতাম নাহ্।(আমি)
এই ভার্সিটি থেকেই আমাদের প্রেম শুরু।আর এখন সব অস্বীকার করা লাগছে।
কি রে রিধু!হ্যান্ডসাম সিনিয়র ভাইয়া পেয়ে আমাদের তো ভুলেই গেলি।(তিশা)
আরে না উনি তো আমার বিয়াইসাব।তোরা তো উনাকে চিনিস।(রিধিকা)
কই দেখি তো।আসলেই তো।ইনি তো নিধিকা আপুর দেবর।(মিহি)
আমি চুপ হয়ে বসে আছি।এতো মেয়ের মাঝে অশান্তি ফিল হচ্ছে।অন্তু আর রাজন তো ভালোই আনন্দে আছে।মাইশা আর রাজিবও তাদের প্রেম নিয়ে ব্যস্ত।আমি তীর্থের কাকের মতো বসে আছি।
চলবে……….