বিনি_সুতোয়_গাঁথা 💙,পর্ব_০৪
লেখক_ঈশান_আহমেদ
বাসায় চলে আসলাম সবাই।অনেক রাত হওয়ার কারণে নিধিকার বাবা-মা আমাকে আর আনহিকে বাসায় যেতে দেয়নি।আমার তো এই বাড়িতে থাকতে আরও অশান্তি লাগছে।বাসায় থাকলে নাহলে রুমে বসে থাকতাম।কিন্তু এখানে তো আর রুমে বসে থাকা যায় না।আর নিধিকা চোখের সামনে ঘুরঘুর করবে।ওর তো লজ্জা নামের জিনিসটাই নাই এখন যা শুরু করেছে।
ভাইয়া আমি চলে যাই বাসায়।মাত্র বারোটা বাজে।(আমি)
আরাভ!বাবা-মা দুজনেই নিষেধ করেছে যাওয়াটা কি ঠিক হবে!(ভাইয়া)
কেন আরাভ আমাদের বাড়ি কি তোমার ভালো লাগছে নাহ্?(নিধিকা)
আমার তো আপনাকে ভালো লাগছে না।(আমি)
ভাইয়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।নিধিকা তো ভয়ে চুপ।আমি জোরে হেসে দিলাম।
আরে আমি মজা করছিলাম ভাবি।আপনি এতো ভয় পেয়ে গেলেন কেন?(আমি)
আমি কোথায় ভয় পেয়েছি?(নিধিকা তুতলিয়ে বলল)
আমার তো মনে হলো।(আমি)
আরাভ তুইও না মাঝে মাঝে এমন কথা বলিস অবাক হয়ে যাই।(ভাইয়া)
আচ্ছা ভাইয়া আমি কোন রুমে থাকব যদি একটু দেখিয়ে দিতে তাহলে ভালো হতো।(আমি)
নিধিকা তুমি আরাভকে একটা রুম দেখিয়ে দেও।তোমাদের বাড়ি আমি তো আর কিছু জানি নাহ্।(ভাইয়া)
আচ্ছা আরাভ আমার সাথে এসো আমি রুম দেখিয়ে দিচ্ছি।(নিধিকা)
যদিও এই মেয়ের সাথে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই।তবুও যেতে হচ্ছে।
নিধিকা আমাকে একটা রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
দরজা লাগালেন কেন আপনি?(আমি)
তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।(নিধিকা)
আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই।(আমি)
দেখো আরাভ সবকিছু বুঝতে শিখো।তুমি দুই বছর ধরে কানাডায় রয়েছো।আমার সময় কিভাবে কাটতো।আমার তো একটা সঙ্গীর প্রয়োজন ছিল।আমার কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছা হলে যেতে পারতাম না।একা একা সারাদিন কাটতো।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিই যে আমি নতুন রিলেশনে জড়াবো।আর আয়ান যে তোমার ভাই আমি তা আগে জানতাম না।যেদিন তোমাদের বাড়িতে আমাকে আয়ান প্রথম ঘুরতে নিয়ে যায় তখন ছবি দেখেছি আর জানতে পেরেছি তুমি আয়ানের ছোট ভাই।তখন আমার আর কিছু করার ছিল না কারণ আমি আয়ানকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।(নিধিকা)
আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম।
নিধিকা আমিও কিন্তু কানাডায় একাই ছিলাম।আমারও কোন সঙ্গী ছিল না।আই মিন আপনি যেই সঙ্গীর কথা বললেন।আমাদের বিভিন্ন স্মৃতি নিয়েই দুইটা বছর ওই দূরদেশে কাটিয়েছি।কই আমার তো একবারও ইচ্ছা হলো না নতুন রিলেশনে জড়ানোর।আর বললেন ভাইয়াকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলেন!আপনার সাথে ভাইয়ার রিলেশন এক বছরের আর আমার সাথে ছিল চার বছরের।এই চার বছরেও কি আপনার আমার প্রতি এতোটা ভালোবাসার সৃষ্টি হয়নি।আপনি দয়া করে এই রুম থেকে চলে যান।আপনার মুখ দেখলেও আমার এখন ঘৃণা হয়।(আমি)
আরাভ একটা কথা তুমি প্লিজ আমাকে তুমি করে বলো আর হ্যাঁ আমাকে দয়া করে ভাবি বলে ডেকো নাহ্।(নিধিকা)
আপনি এখনিই আমার সামনে থেকে চলে যান।আর একটা কথাও বলবেন নাহ্।(আমি)
নিধিকা আরাভের মুখ দেখে বুঝতে পারে আরাভ অনেক রেগে গেছে।সে আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে যায়।
হায়রে দুনিয়া!আমি এতোটা বোকা।এমন একটা মেয়েকে ভালোবেসেছি।আসলে ওতো আমাকে কখনো ভালোই বাসে নাই।শুধু টাইমপাস করতো।যাক আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি।হঠাৎ কে যেন দরজায় টোকা দিল।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ২ টা বেজে গেছে।এতো রাতে কে আসল!
দরজা খুলতেই দেখি রিধিকা দাঁড়িয়ে আছে।আমার তো মাথা কাজ করছে না।এতো রাতে এই মেয়ে এখানে কেন?
এতো রাতে তুমি এখানে কি করছো?(আমি)
আসলে আনহির অনেক জ্বর এসেছে।ঘুমের ঘরে উল্টাপাল্টা বকছে।আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না।তাই আপনার রুমে আসলাম।(রিধিকা)
এই মেয়েটা কোন কথা শোনে না।কালকে নিষেধ করেছিলাম আইসক্রিম খেতে।কিন্তু ঠিকই খেয়েছে।(আমি)
তার মানে আনহির আইসক্রিমে প্রবলেম আছে?(রিধিকা)
প্রবলেম না ওর কোল্ড এলার্জি আছে তার জন্য আইসক্রিম খেতে নিষেধ করেছিলাম।(আমি)
ইশ্ তাহলে তো আমারই দোষ।(রিধিকা)
আচ্ছা চলো আনহির কাছে।(আমি)
রিধিকার রুমে গিয়ে দেখি আনহি বিছানায় শুয়ে আছে।কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে গাঁ পুড়ে যাচ্ছে।রিধিকা ডাক্তারকে কল করল।এতোক্ষণে সবাই উঠে পড়েছে।ডাক্তার এসে আনহিকে দেখল আর কিছু ঔষধ দিল।
এতোরাতে আপনি আসবেন আমি কখনও ভাবতে পারি নাই ডাক্তার কাকু।(রিধিকা)
আরে মা রায়হান আমার বন্ধু।তুমি ওর মেয়ে।আমি তোমার কথা কি ফেলতে পারি।(ডাক্তার)
ডাক্তার চলে গেল।
আঙ্গেল-আন্টি এতো রাতে আপনাদের আমার জন্য অনেক সমস্যায় পড়তে হলো।”সরি।”(আনহি)
কি যে বলো তুমি।তুমি তো আমার আরেকটা মেয়ে।তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়ো।আমি আর রিধিকা তোমার সাথে আছি।(নিধিকার মা)
আনহি শুয়ে পড়ল।আমি রুমে চলে আসলাম।
সকালবেলা,
এই যে মি.চৌধুরী আপনি কি উঠবেন নাকি আজকেও পানির ছিটা দিব!(রিধিকা)
আজকে পানির ছিটা দিলে তোমার খবর ছিল।(আমি)
বাহ্ এতোক্ষণ না ডেকে এটা আগে বললেই তো হতো।ফ্রেশ হয়ে নিচে আসেন আপনার জন্য সবাই বসে আছে।
আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম।কি লজ্জার বিষয় ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি এসে এভাবে পড়ে ঘুমিয়েছি।
আনহি তোর জ্বর কমেছে?(আমি)
হুম ভাইয়া।(আনহি)
ওকে আমরা একটু পরে বের হবো।(আমি)
ওকে।(আনহি)
আঙ্কেল-আন্টি অনেক জোর করেছিল কিন্তু অনেক কষ্টে উনাদের বুঝিয়ে বাড়িতে চলে আসছি।
আম্মু-আব্বু আমি আবার কানাডায় চলে যেতে চাই।(আমি)
তোমার সাহস কি বেশি বেড়ে গেছে আরাভ?তুমি কোথাও যেতে পারবে না।কয়েকদিন পরে তোমার বাবার অফিসে জয়েন করবে।আমি জানি আর একটা কথাও না শুনি এই বিষয়ে।(মা)
ঠিক আছে।বেশি চালাক হয়ে গেছিস তাইনা।বুড়ো বাপকে খাটাতে খুব ভালো লাগে!তাড়াতাড়ি অফিসে জয়েন করবি।(বাবা)
কিছুই বলার নেই।বাবারও বয়স বেড়েছে আর কত সামলাবে।আর ভাইয়াই বা এতো বড় কোম্পানি কিভাবে সামলাবে!আমার তো জয়েন করাই লাগবে।আর ঠিকই তো ওই মেয়ের কারণে আমি আমার পরিবার থেকে কেন দূরে যাবো!তার চেয়ে ভালো ওর সব স্মৃতি মন থেকে মুছে ফেলব।
সন্ধ্যাবেলায় ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছি।এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল।তাকিয়ে দেখি “মিস.মায়াবীনি”নামটা ভেসে উঠল।চোখটা কেমন জানি ঝাপসা হয়ে গেল।চোখটা ভিজে গেছে।আমি কাঁদছি কেন!আর এই নাম এখনও সেভ করা কেন!এটা তো সবার আগে ডিলিট করা উচিত ছিল।কলটা কেটে গেল।আমি নাম টা ডিলিট করে ‘ভাবি’ দিয়ে সেভ করলাম।
মিস.মায়াবীনি ডাকার কারণ হলো নিধিকার মায়াবী চোখ।এই চোখের প্রেমেই আমি প্রথম পড়েছিলাম।ওর চোখের মায়ায় আটকে গেছিলাম।তাই ও কে মায়াবীনি বলেই ডাকতাম।আমার মনে পড়ে না কবে নিধিকাকে নাম ধরে ডেকেছি।ধ্যাত এইসব কেন ভাবছি!ও এখন আমার ভাবি এছাড়া আর কিছুই নয়।
ও আমাকে ফোন করল কেন!
আরাভ…(মা)
হুম বলো আম্মু।(আমি)
নিধিকা কল করে বলল তোকে আর আনহিকে……….কফিশপে যেতে।(মা)
কেন আম্মু?(আমি)
আমি জানি না তোরা গিয়ে দেখ।(মা)
আমার শরীর ভালো না আম্মু আনহিকে পাঠিয়ে দেও টিটু আঙ্কেলের(ড্রাইভার) সাথে।(আমি)
তোর কি হয়েছে বাবা?তুই তো আমার এমন ছেলে ছিলি না!হাসিখুশি একটা ছেলে এমন নীরব হয়ে গেছিস কেন?(মা)
আম্মুকে কিছু বলতে না পারলেও আম্মুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
কিছু না আম্মু।অনেকদিন পরে দেশে আসার কারণে আমার কিছু ভালো লাগছে না।(আমি)
এটা কি সত্যি কথা বললি?(মা)
হুম আম্মু।(আমি)
তুই তাহলে তোর বন্ধুদের সাথে কোথাও গিয়ে ঘুরে আয়।(মা)
কি আর ঘুরব!আমার জীবন থেকে শান্তি নামের বিষয়টাই চলে গেছে।কিছুই ভালো লাগে না এখন আর!
কি রে বাবা?চুপ হয়ে আছিস কেন?(মা)
আম্মুকে ছেড়ে দিলাম।
কিছু না আম্মু।(আমি)
বুঝেছি তোকেও বিয়ে দিতে হবে।হ্যাঁ রে তুই না একটা মেয়েকে পছন্দ করতি!বলেছিলি সময় হলে সারপ্রাইজ দিবি সবাইকে।(মা)
এই কথাটা শুনে চোখ ছলছল করছে।অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করলাম।আম্মু জানি কিছু না বুঝে তাই জোরে হেসে দিলাম।
আরে আম্মু তুমি ওটা এখনও মনে রেখেছো।আমি কোন মেয়েকে পছন্দ করব!আমি তো ওটা মজা করে বলেছিলাম।আর আমার এখন বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই নেই।তুমি গিয়ে আনহিকে বলো যেতে।লেট হয়ে যাচ্ছে তো!(আমি)
আম্মু আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আনহিকে ডাকতে চলে গেল।
ভাইয়া তুমি যাবে না কেন?(আনহি)
ভালো লাগছে না রে।তুই গিয়ে ঘুরে আয়।(আমি)
দিন দিন বুড়ো বুড়ো ভাব চলে আসছে তোর মধ্যে।(আনহি)
হয়েছে বেশি বকবক না করে যা এখন।(আমি)
আনহি চলে গেল।
রাতেরবেলা,
ভাইয়া,নিধিকা আর আনহি বাসায় আসল।
কিরে আরাভ তুই গেলি না কেন?(ভাইয়া)
ভাইয়া আমার শরীরটা অনেক খারাপ।ভালো লাগছে না।তাই যাই নাই।(আমি)
কেন রে কি হয়েছে তোর ভাই?(ভাইয়া)
তেমন কিছু না ভাইয়া।একটু রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে নো টেনশন।(আমি)
তোর ভাবি কিন্তু রাগ করেছে।তুই গেলি না দেখে।(ভাইয়া)
তুমি ভাবিকে বুঝিয়ে বলে দিও।(আমি)
তুই গিয়েই বলে আয়।(ভাইয়া)
বললাম তো শরীরটা ভালো না ভাইয়া।তুমি বুঝিয়ে বলো।(আমি)
অন্যদিকে,
কি ব্যাপার মি.চৌধুরী আসল না কেন?আমার কেমন জানি একটা খটকা লাগছে সবকিছু মিলিয়ে।(রিধিকা)
এই রিধু কি ভাবছিস তুই?(নিধিকার মা)
কিছু না আম্মু।আর হ্যাঁ শোনো দুইদিন পরে আমাদের ভার্সিটি থেকে স্টাডি টুরে নিয়ে যাবে।ব্যস্ততার মধ্যে তোমাকে বলা হয়নি।(রিধিকা)
আচ্ছা তবে সাবধানে যাবি।কয়দিন থাকা লাগবে?(নিধিকার মা)
বেশি না দুইদিন।(রিধিকা)
চলবে…………