গল্পঃআসলে_সে_কে?,পর্বঃচার
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)
আকাশ নিজেদের কাটা মাথা ঝুলতে দেখে বেশ ঘাবড়ে গেলো।এটা কি করে সম্ভব হতে পারে বুঝতে পারছে না।রিমন আকাশকে বলল
->স্যার এখান থেকে চলুন।নিশ্চয় এখানে কোনো ভুতুড়ে ব্যাপার স্যাপার আছে।হয়তো এটার মাধ্যমে আমাদের সতর্ক করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
->হুমম।আমারো সেরকমটায় মনে হচ্ছে।
হঠাৎ খট করে কিসের যেন একটা আওয়াজ হয়ে উঠলো।দুইজনে তখন ঘুরে পিছনে তাকালো।তখন কিছুই দেখতে পেলো না।তারপর ওরা আবার সামনের দিকে তাকাতেই আর সেই কাটা মাথা গুলো দেখতে পেয়ে দুইজনে চমকে গেলো।আকাশ বলল
->পুরো বাড়িটা ভালো করে দেখা যাক।নিরা এখানেই কোথাও লুকিয়ে আছে।
দুইজনে বন্দুক বের করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো আর তখনি ওদের দুইজনের হাঁটুর একটু নিচে সুচালো কি যেন আঘাত করলো।ওরা একটু চিৎকার দিয়ে হাঁটুতে হাত দিয়ে দেখলো রক্ত বের হচ্ছে।আর সামনে তাকিয়ে দেখলো অনেক গুলো ওই ক্ষুদ্রাকৃতির মানুষ দাড়িয়ে আছে।আর ওরা কি যেন ওদের দিকে ছুড়ে মেরেছে যেটা হাটুতে লেগে রক্ত বের হচ্ছে।আকাশ ওই মানুষগুলোর দিকে গুলি ছুড়তে লাগলো আর তখনি তারা একে একে অদৃশ্য হয়ে গেলো।রিমন বলল
->স্যার মন বলছে এখানে নিরা নেই।আর আমাদের এখানে থাকা ঠিক হবে না।
->হুম আমারো তাই মনে হচ্ছে।তবে খুনিকে পেয়েও এভাবে ছেড়ে দেওয়াও ঠিক হবে না।
এমন সময় ওদের সামনে সেই ক্ষুদ্রাকৃতির মানুষের চেহারার বিশাল এক মানুষ ওদের সামনে উপস্থিত হলো।উচ্চতায় সে প্রায় সাতফুট।শরীর একদম কুচকুচে কালো।হাতে শান দেওয়া চকচকে তলোয়ার।আকাশ একটু ভয়ে পেয়ে বলতে লাগলো
->কে তুমি?
->আমি ওর রক্ষাকারী।বাঁচতে চাইলে চলে যা নয়তো কেউ বাঁচতে পারবি না।
->তুই আমার কিছু করতে পারবিনা।
এই বলে আকাশ গুলি চালাতে লাগলো ওর দিকে কিন্তু গুলি ওর শরীর ভেদ করে চলে যাচ্ছিলো।যেটা দেখে আকাশ একদম ভড়কে গেলো।হঠাৎ ঘরের জিনিসপত্র সব হাওয়ায় ভেসে উঠতে লাগলো।আর প্রতিটা জিনিস এসে ওদের দুইজনকে আঘাত করতে লাগলো।আকাশ আর রিমন পালিয়ে বাইরে আসবে আর তখন দুটো দরজা এসে দুইজনকে আঘাত করলো।ওরা তখন মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
শহর থেকে অনেকদুরে একটা গ্রামে নিরার রুপে থাকা নিলাদ্রি এলো।তারপর সে গ্রামের সবচেয়ে পুরোনো দুতলা একটা বাড়িতে গিয়ে ঢুকলো।নিলাদ্রি ভিতরে আসতেই এক বয়স্ক মহিলা।নাম নুর নাহার।তিনি নিলাদ্রিকে বলল
->তুই এসেছিস দিদি ভাই?
->হ্যাঁ নানি এসেছি।
->দ্যাখ তোর বাচ্চাটা কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো।
নিলাদ্রি তখন একটা রুমে গিয়ে দেখলো ওর ৯ মাস বয়সী মেয়ে নিশি দোলনায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে।নিলাদ্রি তার মেয়ে নিশিকে কোলে তুলে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিলো।তারপর মেয়েকে নিয়ে বিছানায় এসে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।নিশি একমাত্র ওর স্বামী নাইমের শেষ স্মৃতি চিহ্ন।
সাড়ে তিন বছব আগে নাঈমের সাথে নিলাদ্রি পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছিলো।নিলাদ্রি নাঈমকে পছন্দ করতো না কারন নাঈম ছিলো নিলাদ্রির চেয়ে প্রায় পনেরো বছরের বড়।পছন্দ না করার আরেকটা কারন হলো নিলাদ্রি অন্য একজনকে ভালোবাসতো কিন্তু সে নিলাদ্রির সাথে মিথ্যা প্রেমে অভিনয় করে।কিন্তু নিলাদ্রি তাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো তাই সে তার জায়গায় অন্য কাউকে মানতে পারতো না।কিন্তু নাঈম বিয়ের পর থেকে নিলাদ্রিকে খুব ভালোবাসতো।আর নাঈমের এতো ভালোবাসায় নিলাদ্রি নিজেও ওকে ভালোবাসতে শুরু করে।নাঈম ব্যবসার কাজে বিদেশ থাকতো।বিদেশ থাকলেও সে নিলাদ্রির খুব কেয়ার করতো।এই কেয়ারিং জিনিসটার কারনেই নিলাদ্রির নাঈমকে বেশ ভালো লাগতো।আসলে মেয়েরা তার স্বামীর কাছে থেকে কেয়ারিং ভালোবাসা এগুলো পেলে তারা যেকোনো বয়সী পুরুষের সাথে মানিয়ে নিতে পারে।
নাঈম বাসায় না থাকায় বাজার-হাট নিলাদ্রিকে করতে হতো।একদিন নিলাদ্রি বাজারে যাবার জন্য বাইরে বের হইছে এমন সময় সৌরভ আর সাইমন নিলাদ্রিকে দেখতে পায়।নিলাদ্রি দেখতে অনেক সুন্দর।নিলাদ্রিকে দেখে সৌরভ আর সাইমন দুইজনেরই ভালো লেগে যায়।সাইমন সৌরভকে বলে
->মামু নতুন মাল এসেছে।এটাকে পটাতে হবে?
->হ মামু চেহারা দেখেছিস একদম মাখন।
নিলাদ্রি যখন ওদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো তখন ওরা এই কথা গুলো বলছিলো।নিলাদ্রি সব শুনেও না শোনার ভান করে চলে যায়।নিলাদ্রি যাওয়ার পথে রিফাত ওকে দেখতে পেয়ে সাইমন আর সৌরভের সামনে এসে বলে
->ভাই এই মেয়েটা কিন্তু বিবাহিত।স্বামী বিদেশ থাকে।
সেটা শুনে সৌরভ বলে,” তাহলে একে পটানো তো দুই মিনিটের ব্যাপার।একবার পটাতে পারলে মালটা তিনজনে নিতে পারবো”।তখন সাইমন বলে,”যে আগে এটাকে পটাতে পারবে সে তাকে আগে খাবে রাজি আছিস তো সবাই?”সবাই এক বাক্যে বলে উঠে,”হ্যাঁ আমরা রাজি আছি”।রিফাত বলল,”তাহলে আজ থেকে মিশন স্টার্ট”।
নিলাদ্রি বাজার করে ফিরছিলো তখন হঠাৎ সাইমন ওর সামনে গিয়ে বলে
->ভাবি আপনার তো ব্যাগ নিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে।দিন আমি পৌছে দিচ্ছি।
->না ভাই তার দরকার পড়বে না।আমি নিজে একাই নিয়ে যেতে পারি।
নিলাদ্রি সাধারন ভাবে কথা বলে সরে আসে।নিলাদ্রি তখন ওদের কথা শুনে বুঝতে পেরে গেছে এরা কি ধরনের ছেলে।ওরা তিনজনে মিলে প্রায় নিলাদ্রিকে নানারকম ভাবে ডিস্টার্ব করে।কখনো বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকে কখনো পথে আগলে রেখে বলে ওরা নাকি নিলাদ্রিকে ভালোবেসে ফেলছে।নিলাদ্রি এসবের পাত্তা দিতো না।একদিন সাইমন নিলাদ্রিকে রাস্তায় আটকে বলে
->আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই?
নিলাদ্রি রেগে গিয়ে বলে
->আপনার সাথে তো আমার কোনো কথা নেই।আপনি প্লিজ আমায় আর বিরক্ত করবেন না।
এই বলে নিলাদ্রি চলে যাচ্ছিলো তখন আবার সাইমন ওর সাথে সাথে হাঁটতে হাঁটতে বলে
->জানি আপনার স্বামী আপনার সাথে থাকে না,এজন্য হয়তো আপনি একাকিত্ব বোধ করেন তাই আপনি যদি চান তো আমি আপনার একাকিত্ব দুর করে দিতে পারি।
নিলাদ্রি এবার আরো রেগে গিয়ে বলে
->আমার স্বামী আমায় অনেক ভালোবাসে+কেয়ারও করে আমার কারো দরকার নেই।
->এসব করে বুঝলাম কিন্তু শারিরীক সুখ ঠিকমতো দিতে পারে তো?যে বয়স হইছে।
নিলাদ্রি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারে না।কষে সাইমনের গালে এক চড় মারে।আর বাসায় এসে ফোন করে পুরো বিষয়টা সে নাঈমকে জানায়।
কিছুদিনের মধ্যে নাঈম বাসায় চলে আসে।আর সবকিছু শুনে সে ওদের তিনজনকে গিয়ে বলে,
->ভাই আপনাদের সমস্যা কি?মানুষের বউয়ের পিছনে না লেগে নিজেরা একটা করে বিয়ে করে নিলেই তো পারেন।
তখন সাইমন বলে
->মানুষের বউয়ের মজা কি আর নিজের বউ দিতে পারে।কেউ ওরে একটু বুঝা।
সাইমনের কথা শুনে নাঈম রেগে গিয়ে বলে
->এরপর কেউ এরকম করলে আমি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।কথাটা সবাই মাথায় ঢুকিয়ে রাখবেন।
সৌরভ বলে
->তুমি আমার কিছু করতে পারবা না।তোমার ক্ষমতা তোমার পকেটে ঢুকিয়ে রাখো।
নাঈম ওদের সামনে থেকে চলে আসে।কিন্তু এতে ওরা আরো বেশি নিলাদ্রিকে জ্বালাতে থাকে।নিলাদ্রি যখন নাঈমের সাথে বাইরে যেতো তখন নানা ভাবে ওদের সাথে বিদ্রুপ করতো।আর সেদিন নাঈম তিনজনকে গিয়ে চড় মারে।তখন ওরা তিনজন রেগে গিয়ে নাঈমকে কে মারতে থাকে তখন আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসে।আর নাঈম গিয়ে পুলিশের কাছে ওদের নামে মামলা করে তখন পুলিশ ওদের এরেস্ট করে কিন্তু বেশিদিন জেলে থাকেনি ওরা।তবে ওরা নিলাদ্রিদের বিরক্ত করা বন্ধ করে দেয়।
নিলাদ্রি নাঈমের সাথে বেশ সুখে দিন কাটাচ্ছিলো।এরপর আরেকটি খুশির খবর আসে যে,নিলাদ্রি মা হতে চলেছে”।নিলাদ্রি আর নাঈম দুইজনই অনেক খুশি হয়।নিলাদ্রিকে হাসপাতাল থেকে চেকাপ করে নাইম ওকে নিয়ে গাড়ি করে বাসায় আসছিলো।যখন ওদের গাড়ি এসপি ব্রিজের ওপর তখন হঠাৎ নাঈম গাড়ি থামায়।
চলবে,,,,,,