গল্পঃআসলে সে কে?,পর্বঃতিন

গল্পঃআসলে সে কে?,পর্বঃতিন
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

সাইমন যখন চোখ খুললো তখন দেখলো সে একটা অন্ধকার রুমের মধ্যে চেয়ারে বসে আছে।ওর হাত-পা বাঁধা।সাইমন ভাবতে লাগলো তাকে এই অবস্থায় বেধে রাখলো কে?সে তো নিরার সাথে ছিলো।তাহলে কি নিরার ওর সাথে এমনটা করেছে?না না এটা হতে পারেনা নিরার মতো মেয়ে আর যাই হোক এই কাজ করবে না তাহলে কে করলো এই কাজ?হঠাৎ ঘরে লাইট জ্বলে উঠলো।সাইমন সামনে তাকিয়ে দেখলো ওর সামনে দেখতে কুৎসিত এক মেয়ে দাড়িয়ে আছে।শরীরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ওর পুরো শরীর আগুনে পুড়ে গেছে।আর সাইমনকে ওর বাড়িতেই বেধে রাখা হয়েছে।সাইমন বলল
->কে তুমি?আমায় এভাবে বেধে রেখেছেন কেন?
মেয়েটা কোনো কথা না বলে হাসছে।হাসিটা এত বিশ্রি লাগছে যা বলার মতো না।সাইমন মেয়েটার দিকে হতে নিজের চোখ সরিয়ে নিলো।তখন মেয়েটি হাসি থামিয়ে বলল
->যখন আমার রুপ যৌবন সুন্দর ছিলো তখন তো নিজের মতো করে ভোগ করতে আজ এভাবে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো কেন?
->এই মেয়ে বলো কে তুমি?
->আমার পোশাক দেখে চিনতে পারছো না?
সাইমন চিনতে পেরে বললো
->নিরা তুমি?তোমার এই অবস্থা হলো কি করে?নাকি তুমি সত্যিকারের নিরা নও?
->ঠিক বলেছো আমি সত্যিকারের নিরা নই।আর আমার এই অবস্থার জন্য তোমরা দায়ী।
->কি বলছো এসব?আমি দায়ী কি করে?
->দুই বছর আগের সেই রাতের কথা মনে আছে?
এই কথা শুনে সাইমন চোখ বড় বড় করে মেয়েটির দিকে তাকালো।সাইমন বলল
->তারমানে তুমি,,,,,,?
তখন সেই মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল
->সেদিন তুমি আমায় ভোগ করেছিলে আর আজ আমি তোমায় ভোগ করবো।
->এই কি বলছো এসব?আমি তোমার শরীর কখনো স্পর্শ করবো না।
->হাহাহাহা এটাই তো আমি চেয়েছি।একজন মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে স্পর্শ করলে তার কেমন লাগে আজ এটাই আমি তোমায় বুঝিয়ে দিবো।
মেয়েটি সাইমনের সাথে ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লো।সাইমনের মনে হচ্ছে ওর শরীরের ভিতর যেন কি প্রবেশ করছে আর সেই সাথে অসহ্য যন্ত্রনা শুরু হচ্ছে।সাইমন যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগলো।একসময় মেয়েটির ওর ওপর থেকে নেমে পড়লো।সাইমনের শরীরের ভিতর আবারো পোকার মতো কি যেন বিড়বিড় করতে লাগলো।খুব অসহ্য লাগছে ওর।হাত-পা বাধা থাকায় সেই যন্ত্রণা যেন আরো বেশি হচ্ছে।সাইমন ছটফট করতে করতে বলল
->আমার সাথে কি এমন করলে আমার এমন হচ্ছে কেন?ইস আমি আর পারছি না।
মেয়েটি সাইমনের সামনে বসে থেকে ওর অবস্থা দেখে হাসছে।মেয়েটি হাসি থামিয়ে ওর দিকে তাকালো।তখন সাইমন সেই অবস্থায় মেয়েটিকে দেখে বলে উঠলো
->নিলাদ্রি তুমি বেঁচে আছো?
->হ্যাঁ বেঁচে থেকেও আমি মরার মতো হয়ে আছি।
->আমার ভুল হয়ে গেছে ছেড়ে দাও আমায়।
নিলাদ্রি তখন দাঁত কটমট করতে লাগলো।তারপর একটা ধারালো ছুরি বের করে সাইমনের মাথা কেটে ফেললো।সাইমনের কাটা মাথা মেঝেতে রেখে নিলাদ্রি নিরা রুপে ফিরে আসলো।তারপর সাইমনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো।

প্রায় কয়েকদিন কেটে গেলো।আকাশ সৌরভের খুনের ব্যাপারে কিছু জানতে পারলো না।আকাশ নিলাদ্রির বাসায় গিয়েছিলো এটা জানার জন্য যে নিলাদ্রি কি আসলেই বেঁচে আছে নাকি সে মারা গেছে।কিন্তু আকাশ নিলাদ্রির বাবা-মার বাসায় গিয়ে জানতে পারলো নিলাদ্রির বাবা কয়েকমাস আগে মারা গিয়েছে আর নিলাদ্রির মায়ের অবস্থা খুব খারাপ।এক বছর ধরে তিনি প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।নিলাদ্রি বেঁচে আছে এরকম কোনো প্রমান আকাশ পেলো না।আকাশ কয়েকজন পুলিশ নিয়ে ওই ফোন খুঁজে পেলো কিন্তু সেটা থেকে এমন কোনো প্রমান এলো না যার মাধ্যমে সে খুনির কাছে পৌছাতে পারবে।যেভাবে সৌরভ মারা গেছে সেটা একদম অস্বাভাবিক।এখন সৌরভের খুনির কাছে পৌছাতে হলে ওই মেয়েকে খুজে বের করা জরুরি যার সাথে ওর শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিলো কিন্তু তাকে খুজে পাওয়া অনেক মুশকিল।তবে নিলাদ্রির ফোন নাম্বার থেকে যে সৌরভকে ফোন করেছিলো আকাশের মনে হচ্ছে সেই খুনি।এমন সময় এসআই রিমন আকাশের কাছে আসলো।আকাশ বলল
->কিছু জানতে পারলে কি তুমি?
->হ্যাঁ স্যার জানতে পেরেছি।সৌরভ,সাইমন আর রিফাত এরা তিন বন্ধু।এরা প্রত্যেকে একই রকম।এদের বেশির ভাগ টার্গেট ছিলো বিবাহিত মেয়েরা।যাদের স্বামী কাছে থাকতো না তাদের সাথে নানা কৌশলে এরা তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতো পরবর্তীতে ব্লাকমেইল করে তাদের থেকে টাকা আদায় করতো।
->বাবার এত টাকা থাকার পরেও এমন জঘন্য কাজ করে বেড়াতো।কতটা খারাপ হলে কেউ এসব কাজ করতে পারে।আচ্ছা ওই নিলাদ্রির এক্সিডেন্টের ব্যাপারে কি কিছু জানতে পেরেছো?
->না স্যার।ওদের মৃত্যুটা সাধারন এক্সিডেন্ট ছিলো।বেশ উচু থেকে গাড়ি একদম নিচে পড়ে আগুন লেগে যায়।
->ও আচ্ছা।
আকাশ কিছু বলতে যাবে এমন সময় একজন হন্তদন্ত হয়ে আকাশের কাছে আসে।এসে সে নিজের পরিচয় দেয়।ওর নাম রিফাত।সাইমন আর সৌরভের বন্ধু সে।আকাশ মনে মনে এদের তুলে আনার কথা চিন্তা করছিলো কিন্তু তার আগেই এরা হাজির।আকাশ বলল
->তো কি খবর মিস্টার রিফাত?
->স্যার আমার বন্ধু সাইমনকে দুইদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
->হয়তো গিয়েছে কোথাও?
->না স্যার যেখানেই যাক সে বলে যায়।এবারও সে বলে গিয়েছিলো কিন্তু এখন পর্যন্ত ফিরে আসেনি।
->কোথায় গিয়েছে বলেছে কি আপনাকে?
->হ্যাঁ স্যার শহর থেকে দুরে ওদের একটা বাংলো বাড়ি আছে সেখানে গিয়েছিলো।আমি ওর খোঁজ না পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম কিন্তু দেখি ওর গাড়ি সেখানে আছে কিন্তু দরজা বাইরে থেকে বন্ধ।তাই আমি এখানে চলে এলাম।
->বাসায় খোঁজ নেন নি ওর বাবা-মার কাছে?
->গিয়েছিলাম তারা নাকি কিছু জানে না।আমার খুব ভয় করছে।না জানি ও আবার সৌরভের মতো মারা না যায়।
->আপনার কেন মনে হচ্ছে যে সৌরভের মতো সে মারা যেতে পারে?
আকাশের কথা সে একটু ভড়কে গেলো।তারপর বলল
->জানি না স্যার।
->আচ্ছা কোনো ব্যাপার না আমাদের সে বাড়িতে নিয়ে চলো আমরা গিয়ে দেখি আসল ব্যাপারটা।
আকাশ রিফাতকে সহ সেই বাসায় এসে পৌছালো।সাইমনের গাড়ি দেখতে পেয়ে বুঝলো যে রিফাত সত্যি বলছে।দরজা খুলে ভিতরে যেতেই দেখলো একদম ওদের মুখোমুখি সাইমনের কাটা মাথা পড়ে আছে।যেটা দেখে রিফাত চিৎকার করে ভয়ে বাইরে চলে এলো।আকাশ সাইমনের লাশ পোস্টমর্টেম করার জন্য পাঠিয়ে দিলো।সৌরভের লাশের মতো সাইমনেরও একই অবস্থা।ওর পেট হতেও সে ক্ষুদ্রাকৃতির মানুষ বের হলো।আর যাদের স্পর্শ করা মাত্রই তার ছাই হয়ে গেলো।এমনকি ওর শরীরের ভিতরের কলিজা নাড়ি-ভূড়ি কিছু নেই।ভেতরটা একদম ফাপা।
আকাশ রিফাতের কাছে এসে ওকে জিজ্ঞেস করলো
->সাইমন ওই বাসায় কেন গিয়েছিলো?
রিফাত কোনো কথা বলছে না।একদম চুপ করে আছে।তখন আকাশ রেগে গিয়ে রিফাতকে ধমক দিলো।রিফাত তখন নিচু স্বরে বলল
->সাইমন প্রায় ওই বাড়িতে মেয়ে নিয়ে গিয়ে ফুর্তি করতো।আর সেদিনও একটা মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলো।
->সে মেয়েটাকে তুমি চিনো?
->না তবে নাম শুনেছি আমি।
->কি নাম?
->নিরা।
নাম শুনে আকাশ চমকে উঠলো।এসআই রিমন বললো
->স্যার এটা তো সেই মেয়ে যে নিলাদ্রির বাসায় ছিলো।
->হুমম এবার ওর সাথে দেখা করে আসি চলো।মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি আমরা খুনির কাছে পৌছে যাবো।
আকাশ এসআই রিমনকে নিয়ে নিরার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো আর রিফাতকে বললো,সে যেন কোথাও না যায়।আকাশ নিরা বাড়িতে এলো।নিরা ফ্লাটের দরজায় নক করতেই দরজা নিজে নিজে খুলে গেলো।আকাশ রিমনকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখলো পুরো বাড়ি লাল আলোয় ভরে আছে।দুইজন একটু এগোতেই ওপরের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো,আকাশ দেখলো ওদের দুইজনের কাটা মাথা উপরে শূণ্য ভাসছে।আকাশ নিজের মাথায় হাত দিলো দেখলো সব ঠিক আছে তাহলে ওর মতো দেখতে এই কাটা মাথা কার?নাকি এবার আকাশ মারা যাবে?

বিঃদ্রঃনিলাদ্রি আর নিরা একজনই।গল্পে নিলাদ্রি নিরার নামের ছদ্মবেশ ধরে আছে তা হয়তো সকলে বুঝতে পেরেছেন।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here