গল্পঃ আসলে সে কে?,পর্বঃএক
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)
অন্ধকারে রুমে একটা চেয়ারের সাথে হাত-পা ও মুখ বাধা অবস্থায় বসে আছে শহরের কোটিপতি বাবার একমাত্র ছেলে সৌরভ।রুমের ভিতরে ছোট্ট একটা সবুজ রংয়ের জিরো লাইট জ্বলছে।আর ওর দিকে একটা ধারালো ছুরি হাতে এগিয়ে আসছে একটা মেয়ে।
নিরা প্রায় এক ঘন্টা ধরে আয়নার সামনে বসে সাজগোছ করছে।আজ সে তার বিএফ সাইমনের সাথে দেখা করতে যাবে।একজন বিবাহিত মেয়ের বিএফ আছে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম।তবে নিরা বিবাহিত হলেও সে নিজের মতো চলাফেরা করে।নিরার বয়স মাত্র তেইশ বছর।তিন বছর আগে ওর নাইম চৌধুরী নামের এক বড় বিজনেস ম্যানের সাথে বিয়ে হয়েছে।নাইম বেশির ভাগ সময় ব্যবসার কাজে বাইরে থাকে।নাইম প্রায় নিরার চেয়ে পনেরো বছরের বড়,আর এজন্য নিরা নাঈমকে কেন জানি নিজের সাথে মানতে পারে না।নিরাকে দেওয়ার মতো সময় তার নেই বললেই চলে।তবে নাইম নিরার টাকা পয়সার কোনো অভাব রাখেনি।এত টাকা থাকার পরও নিরা বেশির ভাগ সময় একাকিত্বে ভুগে।তাই নিজের একাকিত্ব দুর করার জন্য অনলাইনের মাধ্যমে ছেলেদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে।তবে সে বেশির ভাগ সময় বড়লোক ও স্মার্ট ছেলেদের সাথে সম্পর্ক করে।সাইমনের সাথে নিরার প্রায় তিন মাস ধরে পরিচয় হয়েছে।সাইমনকে দেখে নিরার অনেক ভালো লেগেছে।যেমন সুন্দর চেহারা,তেমনি টাকা-পয়সাওয়ালা।নিরা নিজেও কম সুন্দরী না।দুধে আলতা গায়ের রং।দেখতে বেশ চিকন।এক দেখাতে যেকোনো ছেলে প্রেমে পড়তে বাধ্য।নিরা সাজগোছ করা শেষ।আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলো।পরণে নীল রংয়ের সালোয়ার কামিজ সাথে ম্যাচিং করা হিজাব।মুখে হালকা মেকাপ।ঠোঁটে লাল রংয়ের লিপস্টিক।একদম পারফেক্ট।এর মধ্যে সাইমনের ফোন এলো।নিরা ফোন রিসিভ করতে ওপাশ থেকে বলল
->এই যে মিস নিরা তোমার আরো কত দেরি হবে?আমি সেই এক ঘন্টা ধরে ওয়েট করছি।
->আর একটু সোনা আমি বেরিয়ে পড়েছি।
->তাড়াতাড়ি এসো।
নিরা বাড়ি থেকে বের হয়ে একটা রিকশা ধরে রওনা দিলো।বিশ মিনিট পর নিরা একটা ফাইভ স্টার হোটেলের সামনে এসে দাড়ালো।নিরা রিকশা থেকে নেমে দেখলো সাইমন একটা গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে।নিরা সাইমনের সামনে এসে দাড়ালো।সাইমন নিরাকে দেখে চোখের চশমা খুলে ফেললো।আর অস্ফুট স্বরে বলল,”ওয়াও”।সাইমন পলকহীন ভাবে নিরার দিকে তাকিয়ে আছে।নিরা সাইমনকে বলল
->এই যে,মিস্টার এভাবে কি দেখছেন আপনি?
->আমার সামনে দাড়ানো নীল পরীকে দেখছি।
->আগে দেখোনি বুঝি?
->দেখেছি তবে ওই দেখা আর এই দেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য।
->তাই বুঝি?
->ছবির চেয়ে তুমি বাস্তবে অনেক অনেক সুন্দর।
সাইমনের কথা শুনে নিরা হেসে উঠলো।দুইজনে মিলে রেস্টুরেন্টে ঢুকলো।তারপর নিজেদের পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করলো।খাওয়া শেষে দুইজন বেরিয়ে পড়লো।সাইমন নিরার হাত ধরে বলল
->আমি তোমার কাছে একটা জিনিস চাই।যেটা পাওয়ার স্বপ্ন তোমাকে দেখার দিন থেকে দেখে আসছি।
নিরা বুঝতে পারলো যে,সাইমন কি বলতে চাইছে।সাইমন যেটা চায়,নিরাও তো সেটাই চায়।নিরা বলল
->সেফ জায়গা থাকলে চলো।
সাইমনের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সাইমন ওর বাইকে করে নিরাকে নিয়ে ওদের একটা বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
প্রায় দুইদিন হয়ে গেলো সৌরভের কোনো খোঁজখবর না পাওয়ায় সৌরভের বাবা শফিক চৌধুরী পুলিশের কাছে নিজের ছেলে নিখোঁজ হওয়ার কমপ্লেন করেছে।পুলিশ অফিসার আকাশ সঙ্গে সঙ্গে সৌরভকে খুঁজে বের করার কাজে নেমে পড়েছে।শফিক চৌধুরী কাদো কাদো অবস্থায় আকাশকে বলল
->যেকোনো মূল্য আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই।যত টাকা লাগে লাগবে আপনারা আমার ছেলেকে খুঁজে এনে দেন।
->দেখুন আপনি চিন্তা করবেন না আমরা আপনার ছেলেকে খুজে এনে দিবো।আচ্ছা আপনার ছেলে কি আগে এভাবে কোথাও নিখোঁজ হয়েছে?
->একদমই না সে যেখানে যেত আমায় বলে যেত আর ফোন কখনো বন্ধ রাখতো না।
->শেষবার কখন ওর সাথে কথা হয়েছে আপনার?
->কাল দুপুরে।কোথায় যেন যাচ্ছিলো।বেশ খুশি খুশি লাগছিলো ওকে।
->কোথায় গিয়েছে কিছু বলেছে কি?
->না।বলেছিলো এসে বলবে কিন্তু তারপর থেকে ফোন বন্ধ।ওর বন্ধুদের থেকে খোঁজ নিয়েছি কিন্তু কেউ ওর ব্যাপারে কিছু জানে না।
->আচ্ছা ঠিক আছে আপনি এখন আসতে পারেন।কোন খোঁজ খবর পাওয়া মাত্র আমি আপনাকে জানাবো।
শফিক তখন আকাশকে অনেক অনুরোধ করার পর চলে গেলো।একটু বাদে এক পুলিশের এসআই রিমন এসে বলল
->স্যার সৌরভের ফোনের লোকেশন বালুঘাটে দেখাচ্ছে।আর তাই আমি দেরি না করে সেখানে আমাদের ফোর্সকে পাঠিয়ে দিয়েছি।
->ভালো কাজ করেছো।আমরাও যাবো চলো।
আকাশ এসআই রিমনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।আকাশসহ সবাই সৌরভকে খুজতে লাগলো।নদীর ধারের এই জায়গাটা একদম নির্জন।এখানে সৌরভ কেন আসতে পারে বুঝতে পারছে না।একটু বাদে এক কনস্টেবল সৌরভের ফোন খুজে পেলো।আর সেই ফোন এনে আকাশের হাতে দিলো।আকাশ ভাবতে লাগলো,সৌরভের ফোন এখানে তাহলে সৌরভ এখন কোথায়?এর মধ্যে আকাশ নদীর ওপারে একটা পুরোনো বাড়ি দেখতে পেলো।আকাশ কয়েকজন কন্সটেবলকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়ির দিকে যেতে লাগলো।বাড়ির সামনে আসতে আকাশের মনে হলো এই বাড়িতে অনেকদিন যাবৎ কেউ থাকে না।আকাশ দরজা খুলতে ক্যাঁচ করে একটা আওয়াজ হয়ে দরজা খুলে গেলো আর সাথে সাথে ভিতর থেকে অসংখ্য বাদুড় বের হয়ে আসতে লাগলো।এসআই রিমন বলল
->স্যার আপনার কি মনে হয়ে এখানে কেউ আছে?
->ভিতরে না গেলে কি করে বুঝবো।সবাই প্রস্তুত হও আর সাবধানে আমার সাথে ভিতরে চলো।
আকাশ ওর পিস্তল হাতে ভিতরে প্রবেশ করলো।ভিতরে ঢুকে প্রতিটা ঘর সে ভালো করে দেখতে লাগলো।সব কয়টা ঘর ফাঁকা আর অনেকদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় ভিতরে জংলি গাছপালা জন্মেছে।আকাশ দেখলো একটা রুমের দরজা শুধু ভালো আছে,তাই ওর একটা সন্দেহ হলো।আকাশ দরজায় ঠেলা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই থমকে গেলো।আকাশের মুখোমুখি মাটিতে পড়া অবস্থায় সৌরভ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আর চেয়ারের সাথে বাধা রয়েছে ওর বাকি দেহ।আকাশ তাড়াতাড়ি সবাইকে ডাকলো।সবাই এসে সৌরভের লাশ দেখে চমকে গেলো।এসআই রিমন বলল
->স্যার এখন আমরা সৌরভের বাবাকে কি বলবো?
->যেটা সত্যি সেটাই বলবো।লাশ পোস্টমর্টেম করার জন্য পাঠিয়ে দাও।
আকাশ এসে সৌরভের বাবাকে সৌরভের মৃত্যুর খবর দিলেন।নিজের ছেলের মৃত্যুর কথা শুনে তিনি অনেকটা ভেঙ্গে পড়লেন।সেই সাথে আকাশকে এটাও জানালেন যে,যেভাবেই হোক সৌরভের খুনিকে খুজে বের করা হয়।
প্রায় ঘন্টা তিনেক নিরা আর সাইমন শারিরীক মেলামেশা করার পর শুয়ে আছে।নিরা সাইমনের বুকে শুয়ে আছে।সাইমন কেমন যেন মরার মতো হয়ে গেছে।কোনো নড়াচড়া কিছু নেই।নিরা এটা দেখে হাসছে।নিরা সাইমনের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে চোখ বুজে আছে।নিরা বলল
->কি ব্যাপার মরে গেলে নাকি?
->না।তবে শরীরটা কেমন জানি দূর্বল লাগছে আমার।আগে আমার এমনটা কখনো হয়নি।
নিরা ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বলল
->আগে মানে?তার মানে কি তুমি আমার মতো আরো মেয়ের সাথে এসব করেছো?
->হুমম।কিন্তু আমি তোমায় সত্যি ভালোবাসি।
নিরা এক লাফে সাইমনের বুকের ওপর থেকে উঠে গেলো।তারপর সে রাগ দেখিয়ে বলল
->তোমরা সবসময় আমাদের মতো মেয়েদের সুযোগ নাও।আমার ভুল হয়ে গেছে এসব করা।
->আরে সোনা রাগ করছো কেন?আমি কি তোমায় ছেড়ে গেছি নাকি?আমি তো তোমারই আছি।সব সময় তোমার সাথে থাকবো।
এই বলে সাইমনে এসে নিরাকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে চুমু দিলো।এরপর দুইজন আবারো ইনটিমেট হয়ে পড়লো।প্রায় সন্ধ্যার একটু আগে দুইজন যে যার বাসায় ফিরে আসলো।সাইমন বাসায় এসে নিরার কথা ভাবতে লাগলো,সে আজ নিরার কাছে থেকে যা পেয়েছে তা অন্য আর কারো কাছে পায়নি।সাইমন ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে গেলো আর ঠিক তখনই সাইমনের পেটে অসহ্য যন্ত্রনা শুরু হলো।সাইমন পেট ধরে সেখানে বসে পড়লো।এমন পেট ব্যথা সাইমনের কখনো হয়নি।হঠাৎ সাইমনের মনে হতো লাগলো ওর শরীরের ভিতর দিয়ে অসংখ্য পোকা বিড়বিড় করছে।সাইমন হাত দিয়ে ওর সারা শরীর নাড়তে লাগলো।যত নাড়ছে বিড়বিড়ে ভাবটা যেন তত বাড়ছে।সাইমন মেঝে পড়ে গড়াগড়ি করতে লাগলো।আর একসময় সব ঠিক হয়ে গেলো।সাইমন একটু স্বস্তি পেলো।
আকাশ বসে থেকে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসার অপেক্ষা করছে একটু বাদে পোস্টমর্টেম করা ডাক্তার দৌড়ে আকাশের কেবিনে আসলো।ডাক্তারের চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে।ডাক্তার বলল
->আপনারা এটা কি লাশ নিয়ে এসেছেন?এমন লাশ আর এমন মৃত্যু আমি কখনো দেখিনি।
->কেন কি হয়েছে?
->আপনারা নিজেরাই দেখবেন আসুন।
আকাশ ডাক্তারের সাথে লাশ দেখার জন্য গেলো।তারপর সে যা দেখলো তা দেখে সবাই ভয়ে আৎকে উঠলো।
চলবে,,,,,