ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:২৬,২৭
মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন
পর্ব:২৬
একটা অন্ধকার রুমে চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে মারিয়া। মুখ বেঁধে রাখায় চিৎকার করতেও পারছে না সে। হঠাত কেউ একজন দরজা খুলে ধীর পায়ে হেঁটে মারিয়ার সামনের চেয়ারে বসে পড়ে। মারিয়া চোখ বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
— ” কি ব্যাপার মারিয়া? আমার থেকে এভাবে লুকিয়ে বেড়াচ্ছো কেনো তুমি? কি হয়েছে? ”
আশ্বিনের এমন শান্ত কণ্ঠ শুনে মারিয়ার বুক ধক করে উঠে। মারিয়া ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আশ্বিনের দিকে। আশ্বিন বুঝতে পেরে মারিয়ার মুখের বাঁধন খুলে দেয়।
— ” আশ্বিন। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমাকে মাফ করে দাও আশ্বিন।
আমি হিংসায় পরে এমন কাজ করে ফেলেছি। এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি। ”
— আশ্বিন একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,, ” আরে আরে মারিয়া শান্ত হও। এতো ভয় পাচ্ছো কেনো তুমি? আমি তো এখনো তোমাকে কিছুই বললাম না।
তুমি আমার শত্রুর সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের বিপক্ষে কাজ করেছো। অধরাকে সত্যি জানিয়ে দিয়েছো,,,কলেজে অধরার রিপোর্টের ছবিও ছড়িয়ে দিয়েছো।
এতকিছু করার সময় তুমি ভয় পাওনি তাহলে এখন ভয় পেয়ে আর কি হবে? ”
— মারিয়া মাথা নিচু করে,, ” আশ্বিন আমি এসব করতে চাইনি। আমি বাধ্য হয়ে সাহিলের কথায় এসব করেছি। ”
— আশ্বিন অবাক হওয়ার ভান করে,, ” আচ্ছা তাই নাকি?
তো বলো,, কি এমন বললো সাহিল তোমাকে যে তুমি বাধ্য হয়ে এমন সব কাজ করলে? ”
মারিয়া কথা না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। আশ্বিন কিছুক্ষণ মারিয়ার দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে..
— ” এই ভিডিওটার জন্য এসব করেছো। তাই না? ”
মারিয়া অবাক হয়ে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে আশ্বিনের কাছে সেই ভিডিও যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মারিয়া অধরাকে লেকের পানিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো। ভিডিওটা আশ্বিনের কাছে দেখে মারিয়া চোখ আপনা আপনি বড় হয়ে যায়।
— মারিয়া কাপা কাপা কণ্ঠে,, ” এ..এটা! ”
— আশ্বিন ফোন রেখে,, ” এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।
তোমার কি মনে হয়? অধরা সেদিন হঠাত করেই লেকের পানিতে পড়ে গেলো আর বারবার বললো তাকে কেউ ধাক্কা দিয়েছে,, এই কথাটা শুনেও আমি বসে থাকবো? ”
” বিশ্বাস কর মারিয়া,, সেদিন যখন লেকের পাড়ের সিসিটিভি ফুটেজটায় দেখেছিলাম অধরাকে তুই ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিয়েছিস তখন ইচ্ছা করছিলো তোকে জানে মেরে ফেলি। কিন্তু না,, আমি অনেক কষ্টে সেদিন নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম। শুধু তোর জন্য আমি সেদিন অধরাকে বলেছিলাম যে সে নিজ থেকেই পানিতে পড়ে গিয়েছে।
আমি চাইনি সবার সামনে আমার বোনকে ছোট্ট করতে।
ভেবেছিলাম,, পরে তোর সাথে এই নিয়ে কথা বলবো। কেনো এমন করেছিস জানতে চাইবো।
কিন্তু তুই তো তার আগেই এতকিছু করে ফেললি। ”
— মারিয়া কাপা কণ্ঠে,, ” আশ্বিন।
আমি ছোট থেকেই দেখেছি তুমি আমার থেকে ঐ অধরাকেই বেশি গুরুত্ব দাও। তার সাথে তুমি অনেক ক্লোজ ছিলে। আমার সবসময় হিংসে হতো। কারণ ঐ অধরার কোন রূপ গুণ কিছুই নেই,, তবুও তুমি তাকে পছন্দ করো।
এমনকি তার জন্য তুমি আমাকে রিজেক্ট করেছো। তাই আমি ঘৃণা করি অধরাকে। ”
— আশ্বিন একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,, ” ভুল বললে মারিয়া। আসলে অধরার সমান হওয়ার যোগ্যতা তোমার নেই। মানছি অধরার তোমার মতো এতো রূপ গুণ নেই,, কিন্তু সে জানে মানুষের কাছ থেকে কিভাবে ভালোবাসা আদায় করতে হয়। তার ভালো ব্যবহারের জন্য সবার তাকে এতটা আপন করে নেয়।
তুমি কোনভাবেই অধরার সমান হতে পারবে না মারিয়া। ”
” যাক,, এখন বলো কি শান্তি চাও তুমি? তুমি তো জানোই আমি চাইলে এখন তোমাকে খুনও করতে পারি। ”
— মারিয়া কান্না করে,, ” না আশ্বিন। প্লিজ। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি আমার ভুল স্বীকার করছি। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো তবুও আমাকে মেরো না। আমি অধরার কাছেও মাফ চাইবো। প্লিজ আশ্বিন। ”
আশ্বিন এতক্ষণ মারিয়ার কথায় কান না দিয়ে মোবাইলে কিছু একটা করছিলো। তারপর কিছু একটা ভেবে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে,,
— ” ঠিক আছে,, মারবো না। ছেড়ে দিবো তোকে। কিন্তু তার আগে আমার হয়ে তোকে একটা কাজ করতে হবে। বল করবি? ”
— মারিয়া কান্না বন্ধ করে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,, ” ঠিক আছে। বলো কি করতে হবে আমাকে? ”
মারিয়ার কথাটা শুনে আশ্বিন একটা বাঁকা হাসি দেয়।
🍁🍁
আশ্বিন বাসায় এসে সোজা অর্ণবদের ছাদে উঠে আসে। অর্ণব আগে থেকেই ছাদে ছিলো,, তার শখের গাছগুলোর পরিচর্যা করছিলো। আশ্বিন ছাদে এসে ধপ করে দোলনায় বসে পড়ে। অর্ণব এক নজর আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আবার গাছে পানি দেওয়ায় মন দেয়।
— আশ্বিন দোলনায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে,, ” বুঝলি অর্ণব। শাহিন আমার বিপক্ষে যে ফাঁদ পেতে ছিলো,, আমি এখন সেই ফাঁদে তাকেই ফেলবো। ”
— অর্ণব আশ্বিনের সামনে এসে,, ” মানে? আবার নতুন করে কি করলি তুই? ”
— আশ্বিন সোজা হয়ে বসে,, ” তোর কি ধারণা? শাহিন প্রোজেক্ট হারিয়ে এখন চুপচাপ বসে আছে?
আমি নিশ্চিত সে একটা না একটা প্ল্যান করছে। আমাকে তার পরিকল্পনা আগে থেকেই জানতে হবে। ”
— অর্ণব দোলনায় বসে পড়ে,, ” কিভাবে? আর কি করবি তুই? ”
আশ্বিন কিছু একটা বলতে নিবে তার আগেই অধরা একটা ট্রে হাতে নিয়ে ছাদে প্রবেশ করে। অধরাকে দেখে আশ্বিন থেমে যায়। অধরা তাদের সামনে এসে এক ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে..
— ” ভাইয়া দেখো,, আমি তোমাদের জন্য নিজে হাতে নুডলস রান্না করে নিয়ে এসেছি। ”
অধরার কথা শুনে অর্ণব চোখ বড় করে একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে একটা কাশি দিয়ে শান্ত কণ্ঠে..
— ” এটার কি দরকার ছিল বোন? মাত্রই তো পেট ভরে খেলাম। এখন আর কিছু খাওয়া একদম সম্ভব না। ”
— অধরা চোখ ছোট করে,, ” ভাইয়া। আমি এতো কষ্ট করে রান্না করে এনেছি আর তুমি খাবে না? ”
— অর্ণব নিজের কাজে মন দিয়ে,, ” এখন খেতে পারবো না। রেখে দে। ”
— অধরা গাল ফুলিয়ে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,, ” তুমিও খাবে না নুডলস? ”
— আশ্বিন এক নজর অধরার দিকে তাকিয়ে,, ” এখানে রেখে যা।
আর নিচে গিয়ে এখনি পড়তে বসবি,, তোর না সামনে পরীক্ষা? পড়া বাদ দিয়ে ঢংঢং করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পড়া চোর কোথাকার,, যাহ। ”
অধরা চোখ ছোট করে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে নিচে চলে যায়। অধরা যেতেই আশ্বিন ট্রে থেকে একটা বাটি নিয়ে নুডলস খেতে শুরু করে। অর্ণব আড়চোখে একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে..
— ” কিভাবে খাচ্ছিস এই ফালতু নুডলস? পেট খারাপ হবে,, রেখে দে। ”
— আশ্বিন মুচকি হেসে,, ” তোর বোনের রান্না খেয়ে অভ্যাস করছি। সারা জীবন তো আমাকে এগুলো খেয়েই থাকতে হবে। ”
আশ্বিনের কথা শুনে অর্ণব হাসতে হাসতে নিজের কাজে মন দেয়।
🍁এদিকে…
শাহিন হাসাদ চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে আছে। সাহিল রুমে প্রবেশ করে শাহিনের সামনে গিয়ে..
— ” ড্যাড,, দেখো কাকে নিয়ে এসেছি। ”
শাহিন মাথা তুলে উপরে তাকিয়ে দেখে মারিয়া। মারিয়াকে দেখে শাহিন প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে সাহিলের দিকে তাকায়।
— ” ড্যাড। আমার মনে হয় অধরার থেকে প্রোজেক্ট ফেরত আনার জন্য একমাত্র মারিয়াই আমাদের সাহায্য করতে পারবে। ”
— ” কিন্তু মারিয়া কেনো আমাদের সাহায্য করবে? এতে তার স্বার্থ কি? ”
— মারিয়া একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,, ” আমার স্বার্থ আছে। আমি অধরাকে ঘৃণা করি।
আশ্বিন সবসময় আমার থেকে অধরাকে বেশি গুরুত্ব দেয় যা আমার একদম সহ্য হয়না। তাই অধরাকে বিপদে ফেলে আশ্বিনের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে আমি সব করতে পারি,, সব। ”
” আর সেদিন অধরার মেডিক্যাল রিপোর্ট সাহিলকে দিয়ে দেওয়ায় আশ্বিন আমাকে সব জায়গায় পাগলের মত করে খুঁজ বেড়াচ্ছে। আমার এখন ছন্নছাড়ার মতো ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে।
এই সব কিছুর জন্য তো অধরাই দায়ী। তাই আমি অধরাকে সরিয়ে দিতে সব ধরনের সাহায্য করতে পারি,, বলুন আমাকে কি করতে হবে। ”
— শাহিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,, ” এতো তাড়াহুড়ো করে কিছুই করা যাবে না। অধরার কাছ থেকে প্রোজেক্ট আনতে যদি আমাদের খুন করতে হয়,, তবে তাই হবে।
কিন্তু সেটা বুদ্ধির সাথে করতে হবে। ”
” ঠিক যেভাবে আমি অধরার বাবা অমিতের গাড়ির ব্রেক নষ্ট করে দিয়েছিলাম। আর পুরো দেশ জেনেছে তারা এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে,, হুহহ! কিন্তু সত্যিটা তো ভিন্নই ছিলো। ”
— মারিয়া চোখ বড় করে অবাক হয়ে,, ” মানে? এই প্রোজেক্টের জন্য আপনি অধরার বাবা মাকে খুন করেছেন? আর সবাই এক্সিডেন্ট বলে জানে? আপনার কাছে প্রোজেক্ট এতোটা গুরুত্বপূর্ণ ? ”
মারিয়ার কথা শুনে শাহিন বাঁকা হাসি দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। সাহিল মারিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেয়।
এদিকে আশ্বিন আর অর্ণব মারিয়ার ফোনে শাহিনের কথাগুলো শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ে। দুজন দুজনের দিকে অবাক হয়ে তাকায়।
— ” এটা কি বললো শাহিন?? মানে মম আর ড্যাড…। ”
কথাটা বলে অর্ণব মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে।
—চলবে❤
#ভালোবাসি_তাই❤
#মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন
পর্ব:::২৭
এদিকে আশ্বিন আর অর্ণব মারিয়ার ফোনে শাহিনের কথাগুলো শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ে। দুজন দুজনের দিকে অবাক হয়ে তাকায়।
— ” এটা কি বললো শাহিন?? মানে মম আর ড্যাড…। ”
কথাটা বলে অর্ণব মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে।
আশ্বিন কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
এতদিন ধরে যেটা তারা এক্সিডেন্ট ভেবে এসেছে সেটা আসলে খুন ছিলো। শাহিন একটা প্রোজেক্টের জন্য অমিত আর দিয়াকে খুন করেছে। শুরু মাত্র তার জন্যই অধরা এতগুলো বছর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঘর বন্দি থাকতে হয়েছে।
আর শাহিন? একজন খুনী হয়েও সে সম্মানের সাথে অবাদে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অমিতের কষ্টের প্রোজেক্ট এতগুলো বছর নিজের দখলে রেখেছে। আর মানুষ তাকে টপ বিজনেসম্যান বলে সম্মান করে।
— অর্ণব চেয়ারে বসে মাথায় হাত রেখে,, ” আমি ছাড়বো না ওই শাহিনকে। খুন করে ফেলবো তাকে আমি।
আমাদের জীবন শেষ করে দিয়েছে সে। শুধু মাত্র তার জন্য আমরা এতিম হয়ে গিয়েছি,, আমার ছোট্ট বোনটা মানসিক ভারসাম্য হীন হয়ে গিয়েছে।
আমি তাকে শেষ করে দিবো,, আশ্বিন। ”
অর্ণব রেগে চেয়ার থেকে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই আশ্বিন তার হাত ধরে ফেলে। অর্ণব আশ্বিনের দিকে তাকাতেই আশ্বিন তাকে বসতে ইশারা করে।
— ” মাথা ঠান্ডা করে বসো এখানে।
দেখ অর্ণব,, আমি জানি এই মুহূর্তে তোর মনের অবস্থা কেমন। কিন্তু এখন তাড়াহুড়ো করে এভাবে রাগের মাথায় কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।
তাছাড়া,, শাহিনের বিপক্ষে কোন প্রমাণও তো আমাদের নেই। তাই আমাদের ঠান্ডা মাথায় সব পরিকল্পনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বুঝতে পারছিস? ”
অর্ণব কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। আশ্বিন অর্ণবের কাধে হাত রেখে তাকে সান্ত্বনা দেয়।
🍁🍁
অধরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে গুনগুন করে গান গাইছে। আবহাওয়াটা আজকে খুব সুন্দর। শীতল এক ঠান্ডা বাতাস চারদিকে মাতাল হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে। আর সেই বাতাসের ঝাপটা এসে অধরার কাধ সমান চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে।
হঠাত কেউ একজন হুট করে এসে অধরাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আচমকা এমন হওয়ায় অধরা চমকে উঠে পিছনে ফিরে দেখে আশ্বিন।
আশ্বিন দুহাত দিয়ে অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অধরার কাধের উপর তার থুতনি রেখে শান্ত কণ্ঠে বললো..
— ” থামলি কেনো? ভালোই তো গান গাইছিলি। ”
— অধরা মুচকি হাসি দিয়ে,, ” আশ্বিন ভাইয়া। আজকের আবহাওয়াটা খুব সুন্দর,, তাই না? চলো,, তুমি আর আমি মিলে একসাথে গান গাই। ”
— আশ্বিন অধরাকে ছেড়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে,, ” থাক,, আজ না। ”
— অধরা ড্যাবড্যাব করে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,, ” ভাইয়া,, কি হয়েছে? তোমার মন খারাপ? অর্ণব ভাইয়াকেও দেখলাম মুখ কালো করে বসে আছে। কোন সমস্যা? ”
— আশ্বিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,, ” নাহ,, কোন সমস্যা নেই। অর্ণবের সাথে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে,, তাই হয়তো মন খারাপ। ব্যাপার না। ”
— ” ওওও,, এই কথা। আমি আরো ভাবলাম কি না কি।
ভাইয়াও না,, একটুতেই কষ্ট পেয়ে যায়। তবে যাই বলো,, আমার ভাইয়াটা কিন্তু খুব ভালো। ”
আশ্বিন কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দেয়। অধরাও প্রতি উত্তরে একটা মুচকি হাসি দেয়।
দুজনের মাঝে নিরবতা কাজ করছে। চুপচাপ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে শীতল বাতাসের স্পর্শ অনুভব করছে। অধরার এলোমেলো চুলগুলো এসে মুখের উপর বারি খাচ্ছে। আশ্বিন আলতো করে অধরার চুলগুলো সরিয়ে কানের পিঠে গুজে দিয়ে..
— ” অধরা,, তুই চোখে কাজল দিতে পারিস না? তোর টানা টানা চোখগুলো কাজল কালো করলে তোকে আরও বেশি মায়াবী লাগে। জানিস তুই? ”
অধরা একটা লাজুক হাসি দিয়ে আশ্বিনের ডান হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখে।
🍁পরদিন…
অধরা বসে বসে বই পড়ছিলো হঠাত তার ফোন বেজে ওঠে। ফোন হাতে তুলে দেখে নম্বরটা অপরিচিত। অধরা ফোন রিসিভ করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতেই ফোন কেটে যায়।
ফোন রেখে পড়ায় মনযোগ দিতেই আবার কল আসে। অধরা আর সাত পাঁচ না ভেবে ফোন রিসিভ করে।।
— ” হ্যালো। কে বলছেন? ”
— ” অধরা,, আমি মারিয়া। ”
— অধরা অবাক হয়ে,, ” মারিয়া আপু? তুমি হঠাত আমাকে কল দিলে! কি ব্যাপার? সেদিন আমাকে এতকিছু বলে,, কলেজে আমার মেডিক্যাল রিপোর্ট ছড়িয়ে দিয়েও তোমার মন ভরেনি? আবার কেনো ফোন দিয়েছো? ”
— মারিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে,, ” আসলে অধরা,, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে ফোন করেছি। আসলে সেদিন আমি জেদের বশে তোমাকে কথাগুলো বলেছিলাম। তোমার উপর এক প্রকার রাগ ছিল আমার।
কিন্তু আমি এখন আমার ভুল বুঝতে পারছি। আমি সত্যিই অনুতপ্ত। তাই তোমার সাথে সরাসরি দেখা করে সরি বলতে চাই। ”
— ” দেখা করতে পারবো না। ফোনে সরি বলেছো এতেই আমি খুশি। তবে তুমি চাইলে আমাদের বাসায় আসতে পারো। ”
— ” আরে মাথা খারাপ নাকি? সেদিনের পর থেকে আশ্বিন আমাকে সব জায়গায় পাগলের মতো করে খুঁজে বেড়াচ্ছে। যদি একবার ধরা পড়ে যাই,, তাহলে শেষ।
তাই আমি চলে যাচ্ছি,, এখান থেকে অনেক দূরে। আর যাওয়ার আগে একবার তোমার সাথে দেখা করে সরি বলতে চাই অধরা। প্লিজ না করো না। ”
অধরা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সবাইকে লুকিয়ে মারিয়ার সাথে দেখা করতে যাওয়া কি তার ঠিক হবে? যদি আশ্বিন ভাইয়া জানতে পারে..?
— অধরা অনেক ভেবে,, ” ঠিক আছে। আমি আসবো। বলো কোথায় আসতে হবে? ”
মারিয়া একটা বাঁকা হাসি দিয়ে অধরাকে একটা ঠিকানা আর সময় বলে দেয়।
🍁🍁
অধরা সবার থেকে লুকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো মারিয়ার সাথে দেখা করতে। বাসার সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত ছিলো তাই অধরাকে কেউই লক্ষ্য করেনি।
অধরা তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছে মারিয়াকে কল দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মারিয়া উপস্থিত হয়।
— ” অধরা তুমি এসেছো। আমি খুব খুশি হয়েছি। ”
— ” আমার হাতে বেশি সময় নেই। একটু পরেই ভাইয়া বাসায় চলে আসবে। তারপর আমাকে না পেলে অনেক চিন্তা করবে। তাই যা বলার জলদি বলো। ”
— মারিয়া আশেপাশে একবার তাকিয়ে,, ” অধরা। চলো বাসার ভেতর গিয়ে কথা বলি। ”
— অধরা চোখ ছোট করে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে সন্দেহের কণ্ঠে,, ” কেনো? না। আমি কোথাও যাবো না। যা বলার এখানেই বলো। নয়তো আমি চলে যাচ্ছি। ”
মারিয়া বিভিন্ন ভাবে অধরাকে বাসায় যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকে। কিন্তু অধরা রাজি না হয়ে চলে আসতে নিতেই মারিয়া রেগে গিয়ে অধরার মুখে একটা রুমাল চেপে ধরে।
অধরা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও কয়েক মুহূর্তেই অধরা জ্ঞান হারায়।
🍁এদিকে….
অর্ণব বাসায় ফিরে এসে অধরার রুমে প্রবেশ করে দেখে অধরা রুমে নেই। অর্ণব পুরো বাসা খুঁজেও অধরাকে কোথাও পায়না।
— ” ছোট মা,, অধরা কোথায়? ”
— ” কেনো? অধরা তো এতক্ষণ তার রুমেই ছিলো। ”
— ” না। অধরা তো রুমে নেই। বাসার কোথাও নেই। ”
অর্ণব অস্থির হয়ে অধরাকে ফোন দিতে থাকে। কিন্তু অধরার ফোন প্রতিবারই বন্ধ দেখাচ্ছে।
নিধি আর তিশাকে ফোন করেও অধরার কোন খবর পায়নি অর্ণব। শেষে আশ্বিনকে কল দেয়।
— ” হ্যা অর্ণব,, বল। ”
— ” আশ্বিন,, অধরাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি কিন্তু অধরা কোথাও নেই। ”
— ” কিহহ? নেই মানে? কোথায় যাবে? ভালো মতো খোঁজ নিয়ে দেখ। ”
— ” আরে আমি ভালো মতোই খুঁজেছি। আর অধরা কখনো কাউকে না জানিয়ে বাহিরে যায় না।
আমি ড্যাম সিওর তোর বোন মারিয়া আমার বোনের কোন ক্ষতি করেছে। তোকে বলেছিলাম মারিয়াকে চোখে চোখে রাখতে। ”
— ” আমি..। আচ্ছা তুই টেনশন করিস না। আমি খোঁজ নিচ্ছি। অধরার কোন ক্ষতি আমি হতে দিবো না অর্ণব। তুই শান্ত হও। ”
কথাটা বলে আশ্বিন ফোন রেখে মাথায় হাত রেখে রাগে সামনে থাকা দেয়ালে ঘুষি দেয়।
— ” ড্যাম ইট..। মারিয়া…। ”
—চলবে❤