ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:২৪,২৫
মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন
পর্ব:২৪
অধরা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আশ্বিনের দিকে।।। এই মাত্র আশ্বিনের বলা কথাগুলো কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না তার।।।
আশ্বিন নিজেই তাকে মনের কথাগুলো বললো!!!
— অধরা অবাক হয়ে তাকিয়ে,,,,””আ..আশ্বিন ভাইয়া…!!!””
— আশ্বিন স্বাভাবিক ভাবেই বললো,,,,””এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।।
ভালোবাসি তোকে আমি।।
তখন থেকেই যখন তুই ভালোবাসার মানেও বুঝতি না।।।
জানি আমার ভালোবাসা তোর ঐসব সিনেমার হিরোদের মতো না।। তাই বলে তাদের থেকে কোন অংশে কমও না।।””
— অধরা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে,,,,””আগে তো কখনোই বললে না।। আবার আমি বললেও তো উল্টো আমাকেই বকা দিতে।।””
— আশ্বিন অন্যদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,,,,”” অধরা আমি সবসময় চেয়েছি তুই বড় কিছু হও।।
এক্সিডেন্টে তোর যাই ক্ষতি হয়েছে সেটা কাটিয়ে তুলে আবার নতুন করে শুরু কর।।””
“”আমি চাই তুই নিজে প্রতিষ্ঠিত হও,,,,যেমনটা বড় আব্বু তোকে দেখতে চেয়েছিলেন।। উনার বিজনেস আর প্রোজেক্ট সামলে উনার মতোই নিজের নাম সবজায়গায় ছড়িয়ে দিবি তুই।।””
“”অধরা,,,,কেউই একদম পারফেক্ট হয়ে জন্ম নেয় না।। সবার জীবনেই একটা না একটা কমতি থাকে।। তাই বলে তো কারো জীবন থেমে যায় না।।
আজকে যারা তোকে দেখে পাগল বলে হাসাহাসি করছে দেখবি তারাই একদিন তোর সফলতা দেখে প্রশংসা করবে।।””
“”এখন সিদ্ধান্ত তোর তুই তোর জীবন কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবি।। বড় আব্বুর তোকে নিয়ে স্বপ্নগুলো পূরণ করবি?? নাকি সবার কটু কথাগুলো থেকে বাঁচতে লুকিয়ে বেড়াবি??””
— অধরা এক ধ্যানে আশ্বিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,,,,””আমি বাবাইয়ের স্বপ্ন পূরণ করবো।। আমি দেখিয়ে দিবো সবাইকে আমি দূর্বল না,,,,আর তাদের থেকে কোন অংশে কমও না।। হুমম।””
কিছু একটা ভেবে শান্ত কণ্ঠে,,,,”” কিন্তু ভাইয়া,,,,বাবাইয়ের প্রোজেক্ট তো….।।””
— আশ্বিন অধরার কাধে হাত রেখে,,,,””চিন্তা করিস না।। আমি থাকতে আমাদের প্রোজেক্ট কিছুতেই শাহিন হাসাদকে নিতে দিবো না।।
তোর প্রোজেক্ট শুধু তোর কাছেই থাকবে।।।
তুই নিজে তোর প্রোজেক্ট ফিরিয়ে আনবি।।
— অধরা চোখ বড় করে তাকিয়ে,,,,””কিহহ??? আমি..?? আমি কিভাবে??””
— “”হুম তুই।। ভয় নেই।। আমি আছি তো তোর পাশে,,,,সব সময়।।””
কথাটা বলেই আশ্বিন একটা মিষ্টি হাসি দেয়।। অধরা কিছুক্ষণ ড্যাবড্যাব করে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক একটা হাসি দেয়।।
🍁পরদিন….
— “”লাইক সিরিয়াসলি??? অধরা তুই সত্যি বলছিস??””
বোকার মতো করে তাকিয়ে অধরাকে প্রশ্নগুলোর করলো তিশা।।
— অধরা একটা ভাব নিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে,,,,””হ্যা রে হ্যা।। তোর কি মনে হয় আমি মিথ্যা কথা বলছি???””
— “”নাহহ।। ঠিক তা নাহ।। আসলে বিশ্বাস হচ্ছে না,,,আশ্বিন ভাইয়া অবশেষে তোকে মনের কথাগুলো বলেই দিয়েছে।। যাক,,, আলহামদুলিল্লাহ।।
কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না,,,,কতো সিনেমায় দেখলাম হিরো ফুল দিয়ে,,,চকলেট দিয়ে,,,ঘুরতে গিয়ে আরো কতো ভাবেই হিরোইনকে প্রপোজ করে।।””
“”কিন্তু আজ প্রথম তোর কাছেই শুনলাম আশ্বিন ভাইয়া তোকে এই বিড়াল ছানা দিয়ে প্রপোজ করেছে।। সত্যিই অদ্ভুত।।””
— অধরা একটা লাজুক হাসি দিয়ে,,,””দেখতে হবে না মানুষটা কে ছিল??
আশ্বিন ভাইয়ার সব কিছুই একটু ইউনিক স্টাইল।। হিহি।।””
— “”এটা ঠিক বলেছিস।। তবে যাই বলিস না কেনো,,,,বিড়াল ছানাটা কিন্তু খুব খুব খুব কিউট দেখতে।। নাম কি রেখেছিস তার??””
— অধরা বিড়ালটা কোলে তুলে লাজুক কণ্ঠে,,,,””তার নাম সানাই।। ভাইয়া আর আমার হবু বিয়ের সানাই বাজাতেই তো তার আগমন,,,তাই আমি তাকে সানাই বলেই ডাকবো।।””
— “”হোয়াট??? বিড়ালের নাম সানাই!!! যাই হোক,,,,চল যাই কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে।। এমনিতেই দুদিন কলেজে যাসনি তুই।।””
অধরা আর কথা না বাড়িয়ে তিশার সাথে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।।
🍁🍁
কলেজে প্রবেশ করতেই অধরার কাছে সবকিছু কেমন যেন নিরব নিরব মনে হচ্ছে।। সবাই যে যার মতো কাজে ব্যস্ত,,,,একবারে জন্যও কেউ অধরার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না।। অথচ দুদিন আগেও সবাই ঘুরঘুর করে অধরার দিকে তাকিয়ে ছিলো।।
অধরা আর এতো কিছু না ভেবে ক্লাসে চলে যায়।।
ক্লাস শেষে অধরা আর তিশা রুম থেকে বেরিয়ে গেইটের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।। হঠাত দেখে রকি তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে,,,হাতে পায়ে মাথায় ব্যান্ডেজ করা।।
— তিশা অধরার কানে ফিসফিস করে,,,,””রকি আসার আগেই চল আমরা চলে যাই।। আল্লাহ জানে আজকেও হয়তো আমাদের অপমান করবে।।””
অধরা তিশার দিকে এক পলক তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিতেই রকি তার সামনে এসে দাঁড়ালো।।
— অধরা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে,,,,””আবার কি চাই তোর? আর তোর এই অবস্থা কেনো?? কে মেরেছে তোকে??””
— রকি মাথা নিচু করে,,,,””কেউ মারেনি।। আসলে ছোট খাটো একটা এক্সিডেন্ট করেছি। এই আরকি।।।””
— অধরা চমকে উঠে,,,,””কি বলিস,,,এক্সিডেন্ট!!! কিভাবে হলো?? এখন ঠিক আছিস তো তুই???
এক্সিডেন্ট করেছিস তাহলে কলেজে কেনো আসলি?? এখনি বাসায় গিয়ে রেস্ট কর।। আমি অর্ণব ভাইয়াকে বলে তোর জন্য নোটস পাঠিয়ে দিবো।।।””
রকি এতক্ষণ মাথা নিচু করে সব শুনছিলো।। অধরার কথা শেষ হওয়ায় কিছুক্ষণ অধরার দিকে তাকিয়ে…
— “”অধরা আমি আসলে তোকে সরি বলতে এসেছি।। সেদিন তোকে ঐভাবে কথাগুলো বলা আমার ঠিক হয়নি।। আমি সত্যিই অনেক লজ্জিত।।””
— “”আরে আরে ঠিক আছে।। সরি বলতে হবে না,,,,আমি কিছু মনে করিনি।।
তুই এখনি বাসায় চলে যাবি আর একদম সাতদিন রেস্ট নিবি।।
আর শোন,,,,রাস্তায় সব সময় দেখে শুনে চলবি।। আর কোন প্রয়োজন হলে অবশ্যই ফোন দিবি।। ঠিক আছে???””
— রকি মাথা নিচু করে,,,,””তুই সত্যিই অনেক ভালো মেয়ে অধরা।। শুধু মাত্র অর্ণবের বোন দেখে তোকে এতদিন শত্রু ভেবে এসেছি,,,,বাজে ব্যবহার করেছি।। আমি আমার ভুল এখন বুঝতে পারছি।।
আজকে থেকে তাহলে তুই আমার বন্ধু।। ঠিক আছে??””
— অধরা আর তিশা মুচকি হেসে,,,””ঠিক আছে।।””
অধরা তিশা আর রকি কথা বলছে এদিকে দূর থেকে একজন তাদের কার্যকলাপ দেখছে।। হঠাত ফোন আসায় তিনি ফোন রিসিভ করে…
— ওপাশ থেকে,,,””কাজ হয়েছে???””
— “”জি স্যার।। রকি কথামত ছোট মনির কাছে ক্ষমা চেয়েছে।। কিন্তু,,,,এখন ছোট মনিকে দেখছি রকির সাথে বন্ধু বানিয়ে ফেলেছে।।””
— আশ্বিন চেয়ারে বসতে বসতে একটা হাসি দিয়ে,,,””অধরা এমনই।।
যাই হোক,,,,রকির পর্ব যেহেতু শেষ তাহলে মারিয়াকে খুঁজে বের করো।। কোথায় গিয়ে লুকিয়ে আছে সে এতদিন ধরে??””
— “”স্যার।। আমরা সব জায়গায় তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাকে পাচ্ছি না।।””
— আশ্বিন রেগে,,,””যেভাবেই হোক মারিয়াকে খুঁজে বের করো।। জীবিত অথবা মৃত আমার ওকে চাই।।””
আশ্বিন কথাটা বলে ফোন রাখতেই অর্ণব এসে তার পাশে বসে পড়ে।। আশ্বিন ফোন রেখে তার দিকে তাকাতেই অর্ণব বললো…
— “”তোর কি মনে আছে আজকে আমাদের প্রোজেক্ট শাহিনকে হস্তান্তর করা হবে।।
কোথায় তুই কিছু একটা করে প্রোজেক্টটা বাঁচাবি,,,,তা না করে তুই রকিকে তুলে এনে মেরেছিস,,,,কলেজে গিয়ে সবাইকে শাসন করে এসেছিস।।””
— আশ্বিন একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে,,,,””আমার যা করা প্রয়োজন সেটা আমি করে ফেলেছি অর্ণব।। চিন্তা করিস না,,,শাহিন প্রোজেক্ট নিতে পারবে না।।””
কথাটা বলেই আশ্বিন নিশ্চিন্তে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে।। এদিকে অর্ণব চোখ ছোট করে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আছে।।
🍁🍁
আকাশ চৌধুরী,,,শাহেদ,,,অর্ণব সবাই মিলে মিটিং রুমে বসে আছে।। এদিকে তাদের বিপরীত দিক শাহিন আর সাহিল বসে আছে।। ডিলাররা এসে যে যার মতো কথা বললো…
— “”মিস্টার আকাশ চৌধুরী,,,,আমরা আপনার পূর্ববর্তী সকল কাজে খুশি হয়ে আপনাকে প্রোজেক্টের দায়িত্বটা দিয়েছিলাম।। কিন্তু আপনারা আমাদের বিশ্বাস ভেঙে মিথ্যা কথা বলে প্রোজেক্ট নিয়েছেন।।””
“”যার নামে এই প্রোজেক্ট সে একজন মানসিক ভারসাম্য হীন।। আর প্রোজেক্ট রুল অনুযায়ী কোন মানসিক ভারসাম্যহীন এই প্রোজেক্টের দায়িত্ব পাবেন না।। তার মানে,,,,এই প্রোজেক্ট দ্বিতীয় ক্লায়েন্ট মানে শাহিন হাসাদের কাছে প্রোজেক্ট হস্তান্তর করতে বাধ্য হচ্ছি।।””
কথাটা শুনেই শাহিন একটা বিজয়ের হাসি দেয়।। এদিকে অর্ণব মন খারাপ করে মাথা নিচু করে আছে।। ডিলাররা ফাইলে সাইন করার সময় হঠাত….
— “”এক মিনিট স্যার।।।””
সবাই সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।। অর্ণব চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে…
— “”অধরা!!!!””
অধরা সবার এমন তাকিয়ে থাকাকে উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়ে।। তারপর সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে ডিলারদের দিকে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে…
— “”কি হলো??? সবাই এতো অবাক হচ্ছেন কেনো??””
— শাহিন হাসাদ অবাক হয়ে,,,,””অধরা মামুনি!! তুমি এখানে কি করছো???””
— অধরা ড্যাম কেয়ার একটা ভাব নিয়ে,,,,””কি বলেন আংকেল,,,,আমার প্রোজেক্ট নিয়ে মিটিং হচ্ছে।। আর আমি আসবো না?? এটা হয় নাকি??””
অধরা কথাটা বলেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে ব্যাগ থেকে কিছু ফাইল বের করছে।।
এদিকে সবাই অবাক হয়ে অধরার সব কার্যকলাপ দেখছে।।
—চলবে❤
#ভালোবাসি_তাই❤
#মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন
পর্ব:::২৫
অধরা কথাটা বলেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে ব্যাগ থেকে কিছু ফাইল বের করছে।
এদিকে সবাই অবাক হয়ে অধরার সব কার্যকলাপ দেখছে।
— অধরা ডিলারদের দিকে তাকিয়ে,, ” আসলে সকালে আমার কলেজ ছিলো তো তাই আসতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে। আমি দুঃখিত। কিছু মনে করবেন না। ”
ডিলাররা একে অপরের মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অর্ণব এখনো অবাক চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।
অধরা সবার এমন নিরবতা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,,
— ” আমি জানি আমার হঠাত এখানে উপস্থিতিতে সবাই হয়তো অবাক হয়েছেন,, হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি এখানে কিছু জরুরি কথা বলতেই এসেছি। ”
” প্রথমত,, আমি জানতে পেরেছি আপনাদের কাছে আমার একটা মেডিকেল রিপোর্ট দেখানো হয়েছে। যেখানে স্পষ্ট করে দেখানো হয়েছে একটা এক্সিডেন্টে মাথায় আঘাত লাগার কারণে আমি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছি। সত্যি বলতে,, হ্যা। রিপোর্টটা সত্যি। আমি অস্বীকার করবো না,, আমি মানসিক ভাবে অন্যদের থেকে একটু দুর্বল। ”
” কিন্তু,, আপনারা একটা পুরনো রিপোর্টের ভিত্তিতে আমার প্রোজেক্ট অন্যজনকে দিতে পারেন না।
আপনাদের উচিত ছিল আমার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জেনে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার। ”
— ডিলাররা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে,, ” তুমি আসলে কি বলতে চাইছো অধরা মামুনি? ”
— অধরা মুচকি হেসে,, ” একটা মানুষ অসুস্থ হলে ধীরে ধীরে সে সুস্থও হতে পারে স্যার।
আমি জন্ম থেকে মানসিক ভারসাম্য হীন না যে সুস্থ হওয়ার তেমন সম্ভবনা নেই। আপনাদের উচিত ছিল আমার বর্তমান মেডিক্যাল রিপোর্টগুলো একবার চেক করার।
তবে সমস্যা নেই। আমি সাথে করে আমার বর্তমান রিপোর্ট নিয়ে এসেছি। ”
অধরার ডিলারদের দিকে তার রিপোর্ট এগিয়ে দিলো। ডিলাররা অধরার হাত থেকে রিপোর্ট নিয়ে দেখতে শুরু করলো। এদিকে অর্ণব অবাক হয়ে শাহেদের দিকে একবার তাকিয়ে অধরার দিকে তাকালো।
— অধরা একটা ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে,, ” যেমনটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন,, রিপোর্টে স্পষ্ট লেখা আছে আমার ব্রেইন সেই এক্সিডেন্টের পর থেকে 75% রিকভার করেছে।
এর মানে আমি এখন মানসিক ভারসাম্য হীনদের তালিকায় আর নেই।
এই রিপোর্টের ভিত্তিতে আপনারা আমাকে চাইলেই একজন অসুস্থ ভাবতে পারবেন না।
আর তাছাড়া,, এতক্ষণ ধরে আমার কথা বার্তা শুনে আর যাই হোক আমাকে নিশ্চয়ই একজন মানসিক রোগী ভাবার কথা না। ”
” আমার বাবাই অমিত রহমান দীর্ঘদিন আগে এই প্রোজেক্ট নিয়ে অনেক পরিশ্রম করে অবশেষে এই প্রোজেক্টটা পেয়েছিলেন। তিনি শেষ সময়ে এই প্রোজেক্ট আমাকে ডেডিকেটেড করেছেন এবং কিছু রুল নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। যেখানে স্পষ্ট করে লেখা আছে,, অমিত রহমানের অবর্তমানে অধরা ওহির আঠারো বছর পূর্ণ হওয়ার পর তাকে সম্পূর্ণ প্রোজেক্টের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
তার মানে এই প্রোজেক্ট এখন সম্পূর্ণই আমার। ”
অধরার কথায় অর্ণব শাহেদ আর আকাশ চৌধুরী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অধরার দিকে। এদিকে শাহিন অবাক হয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে..
— ” নাহহ। এই রুল আর সম্ভব না অধরা মামুনি। তোমার ব্রেইন রিকভার করলেও তুমি এখনো প্রোজেক্ট সামলানোর মতো যোগ্য না। একে তো তুমি বুদ্ধিতে দূর্বল দ্বিতীয়ত তুমি বয়সেও ছোট। তাই প্রোজেক্ট পাওয়া তোমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব না। ”
— অধরা শাহিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ডিলারদের উদ্দেশ্য,, ” আপনাদের উপর এতোদিন দায়িত্ব ছিলো আমার বাবাইয়ের প্রোজেক্ট দেখে রাখার। এখন সময় হয়েছে আমার প্রোজেক্ট আমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার।
আর শাহিন আঙ্কেল,, আপনি হয়তো রুল ভুলে গিয়েছেন। আমি চাইলে আমার প্রোজেক্টের দায়িত্ব যে কাউকে দিতে পারবো। তাই আমি ভেবেছি,, আজ থেকে আমার হয়ে এই প্রোজেক্টের সকল দায়িত্ব আমার ভাই অর্ণব রহমান পালন করবে। ”
” আমি মনে করি সব ধরনের প্রমাণ আর রুল দেখার পর আপনারা সসম্মানে আমার প্রোজেক্ট আমাকে হস্তান্তর করবেন।
নয়তো আমরা আইনি সহায়তা নিতে বাধ্য হবো। এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের। ”
অধরার এমন সোজাসাপ্টা কথা শুনে অর্ণব চোখ বড় বড় করে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। এটাই কি তার সেই ছোট্ট বোনটা? আজ সবার সামনে বসে বাবার প্রোজেক্ট ফিরিয়ে আনতে লড়াই করছে!
— ডিলাররা কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে কথা বলে তারপর,, ” সকল এভিডেন্স দেখে এবং মরহুম অমিত রহমানের লিখে যাওয়া নিয়ম অনুসারে আজ থেকে আমরা রহমান গ্রুপের এই প্রোজেক্ট একচ্ছত্র ভাবে অধরা ওহির কাছে হস্তান্তর করছি। এবং উনার সাক্ষ্য মতে বর্তমানে উনার ভাই অর্ণব রহমান এই প্রোজেক্টের দায়িত্ব পাচ্ছেন। ”
কথাটা বলেই উনারা ফাইলে সই করে প্রোজেক্ট অধরার নামে করে দেয়।
অধরা খুশি হয়ে অর্ণবের দিকে তাকাতেই অর্ণব মুচকি হেসে মুখ ঘুরিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলে। আকাশ আর শাহেদ খুশিতে হাত তালি দিতে শুরু করে। এদিকে শাহিন আর সাহিল রেগে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
🍁🍁
আশ্বিন মাত্রই শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। এর মধ্যেই অধরা দৌড়ে আশ্বিনের সামনে এসে লাফাতে শুরু করে।
— ” ভাইয়া আমি পেরেছি। আমি পেরেছি। বাবার প্রোজেক্ট আমি বাঁচাতে পেরেছি। তোমাকে এএএএ..এতগুলো ধন্যবাদ। তোমার বুদ্ধিতেই তো আজকে আমরা প্রোজেক্ট ফিরে পেলাম। ”
আশ্বিন মুচকি হেসে অধরাকে এক টানে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে অধরার কোমরে দুহাত রেখে কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে। কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে শান্ত কণ্ঠে…
— ” আমি জানতাম তুই পারবি। আমার বিশ্বাস ছিলো তোর উপর। ”
অধরা আশ্বিনের কথাটা শুনে মুচকি হেসে আলতো করে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
🍁এদিকে….
শাহিন হাসাদ রেগে রুমে প্রবেশ করে সবকিছু ভাঙচুর করতে শুরু করে। সাহিল চুপচাপ দূরে দাঁড়িয়ে আছে। শাহিন কিছুতেই তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
— ” সব শেষ হয়ে গিয়েছে। সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে। ”
— ” বাদ দাও ড্যাড। আমরা নাহয় অন্য নতুন প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করবো। ”
— ” কখনোই না। তুমি জানো না এই প্রোজেক্ট আমার কাছে কতটা ইমপরটেন্ট। এতোগুলো বছর ধরে এই প্রোজেক্ট নিয়ে আমি আর অমিত কতো স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু ভাগ্য,, অমিত আমার সামনেই এই প্রোজেক্ট পেয়ে গিয়েছিল।। ”
” ভেবেছিলাম অমিতের কাছ থেকে যেভাবেই হোক প্রোজেক্ট ছিনিয়ে নিবো কিন্তু সেদিন ফাংশনে অমিত সেই প্রোজেক্ট তার মেয়েকে ডেডিকেটেড করে আমার সব পরিকল্পনা শেষ করে দেয়।
তাই আমিও রাগে ক্ষোভে সেদিন তার গাড়ির ব্রেক ফেইল করে দেই। তার সেদিনই… ”
” আমার কাছে বন্ধুত্বের চেয়ে বড় ছিল সেই প্রোজেক্ট। এখনো তাই।
আমার সেই প্রোজেক্ট চাই সাহিল। যেভাবেই হোক চাই। ”
— সাহিল শাহিনের দিকে তাকিয়ে,, ” ডোন্ট ওয়ারি ড্যাড। একজন আছে যে আমাদের সাহায্য করতে পারে। আমরা খুব শীঘ্রই একটা ব্যবস্থা নিবো। ”
শাহিন কথাটা শুনে ধপ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে ফেলে। সাহিল ফোন হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
🍁🍁
অধরাকে কেন্দ্র করে বাসার সবাই বসে আছে। সবার মুখেই লেগে আছে বিজয়ের হাসি। এতদিন পরে সবাই যেন স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছে।
— দাদু ভাই অধরার মাথায় হাত রেখে,, ” আমার ছোট্ট বুড়িটা কবে এতো বড় হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি। বাবার কষ্টের প্রোজেক্ট আজ সাহসের সাথে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।
এই সবাই এই দিনটাকে ভালো ভাবে উদযাপন করো। বউমা,, আমার অধরার সব প্রিয় খাবার রান্না করো। ”
— ছোট মা মুচকি হেসে,, ” জি বাবা। আমি এখনি যাচ্ছি। ”
— অধরার দাদি গান ছেড়ে,, ” নাচ গান ছাড়া আজকের উদযাপন একদম বৃথা। এই ওহি এখানে আয় একসাথে ডান্স করবো। ”
অধরা একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে দাদির সাথে ডান্স শুরু করে। এদিকে তাদের নাচ দেখে সবাই একসাথে হেসে যাচ্ছে। আশ্বিন অর্ণবের পাশে সোফায় বসে তাদের সব কার্যকলাপ দেখছে।
— অর্ণব মুচকি হেসে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,, ” কিভাবে করলি এসব? একবারও আমাকে জানালিও না। ডিলারদের সামনে অধরাকে তুই এসব বলতে বলেছিস,, তাই না? ”
— আশ্বিন অর্ণবের দিকে তাকিয়ে,, ” অধরাকে এতটা দূর্বল ভাববি না অর্ণব।
আমি শুধু অধরাকে মনের সাহস দিয়েছি। বাকি সব সে নিজেই করেছে। ”
অর্ণব কথাটা শুনে অবাক হয়ে অধরার দিকে ফিরে তাকায়।
এদিকে অধরা ডান্স শেষ করে এসে ধপ করে আশ্বিনের পাশে বসে পড়ে।
— আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে লাজুক কণ্ঠে,, ” আশ্বিন ভাইয়া। চলো তুমি আর আমি কাপল ডান্স করি। ”
— আশ্বিন চোখ ছোট করে তাকিয়ে,, ” তোর কি মাথা পুরোটাই শেষ? সবার সামনে আমরা কাপল ডান্স করবো তাই না? ”
— অধরা বোকার মত,, ” হ্যা। তো কি হয়েছে? এখানে সবাই আমরা আমরাই তো। ”
— ” যা ভাগ এখান থেকে। আমি নাই। ”
অধরা আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে শ্রাবণের সামনে গিয়ে আশ্বিনকে শুনিয়ে..
— ” শ্রাবণ ভাইয়া। চলো তুমি আর আমি ডান্স করি। ”
— ” আচ্ছা চল। ”
অধরা দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে শ্রাবণকে নিয়ে ডান্স শুরু করে। এদিকে আশ্বিন রাগী চোখ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন এখনি অধরাকে গিলে খাবে।
— মনে মনে,, ” সাহস কিভাবে হয় আমার সামনে অন্য ছেলেদের সাথে ডান্স করার। তোকে একবার একা পেয়ে নেই অধরা। জন্মের ডান্স শিখিয়ে দিবো তোকে। ইডিয়েট। ”
আশ্বিন রাগী চোখ তাদের দেখছে হঠাত তার ফোন আসে। আশ্বিন উঠে একটু দূরে গিয়ে..
— ” হ্যা মহিব বলো। ”
— ” স্যার। মারিয়াকে খুঁজে পেয়েছি। ”
— ” গ্রেট। তাকে আমাদের ফ্রাম হাউজে নিয়ে যাও। আমি এখনি আসছি। ”
আশ্বিন ফোন রেখে একটা বাঁকা হাসি দেয়।
—চলবে❤