রক্তচোষা,পর্বঃ তিন (অন্তিম পর্ব)

গল্পঃ রক্তচোষা,পর্বঃ তিন (অন্তিম পর্ব)
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

সাব ইন্সপেক্টর রাসেল খুন হওয়া লোকটির কাছে থেকে খুনির ব্যাপারে কোনো প্রমান পেলো না।রাসেল মনে মনে ভাবছে এ কেমন খুনি যার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত একটা প্রমানও নেয়।পুলিশ ইন্সপেক্টর জোহান থানায় এসে রাসেলকে জিজ্ঞেস করলো
->খুনির ব্যাপারে কিছু জানতে পারলে কি?
->এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।
->খুনি চালাক খুব।
->হুমম।
এর মধ্যে থানায় ফোন এলো।রাসেল ফোন রিসিভ করে জানতে পারলো আরো দুইটা খুন হয়েছে।ওরা দেরি না করে খুন হওয়া জায়গায় চলে গেলো।ভালো ভাবে চারপাশ দেখতে লাগলো।এর মধ্যে একজন বলে উঠলো,”আমি খুনিকে দেখেছি স্যার”
লোকটির কথা শুনে জোহান ভ্রু কুচকে ওর তাকিয়ে বলল
->কি তুমি খুনিকে দেখেছো?
->হ্যাঁ স্যার দেখেছি।
জোহান তখন ওর কাছে এগিয়ে এসো বলল
->কেমন ছিলো সে বলো আমায়?
->ও কালো কাপড় পড়া ছিলো।আর হাতে ছিলো চকচকে তলোয়ার।সে বেশ দ্রুত গতিতে দৌড়াচ্ছিলো।ওর দৌড়ানোর গতি ছিলো অনেক বেশি।
রাসেল তখন কেমন যেন অবাক হলো ব্যাপারটা শুনে।জোহান লোকটিকে বলল
->তুমি তার মুখ দেখেছো?
->না।তবে সে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছিলো।
->আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও।

যে দুইজন খুন হয়েছে এরাও ছিলো ফয়েজ আর শামসুদ্দিনের মতো।দুইজনই সুদের ব্যবসা করতো।জোহানের বুঝতে বাকি রইলো না যে,খুন গুলো যে করেছে সে এই ধরনের লোকদের খুব ঘৃণা করে।রাসেল মনে মনে সন্দেহ করছে যে একমাত্র জোহান সেই দৌড়ের গতিতে অনেক ফাস্ট।এমন কোনো অপরাধী নেই যাকে সে দৌড়ে ধরতে পারেনি,আর যখন খুন গুলো হয় ঠিক সে সময় জোহান থানায় উপস্থিত থাকে না।
রাসেল মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো,এবার সে জোহানের ওপর নজর রাখবে।পরেরদিন যখন থানায় ওরা বসে ছিলো এমন সময় এক লোক রক্তাক্ত অবস্থায় থানার ভিতর ঢুকে জোহানের সামনে বলল
->স্যার আপনি আমায় সাহায্যে করুন দেখুন ওরা আমায় মেরে কি করেছে।
->কে মেরেছে এভাবে?
->রবিউল আলম।শুধু আমায় মারেনি,আমার স্ত্রী-সন্তানকেও মেরেছে।
->কেন মেরেছে?
->টাকা নিয়েছিলাম আমি।সেটার এক মাসের সুদ ছাড়ায় ফেরত দিছি এটাই আমার অপরাধ।
->ঠিক আছে আপনি জিডি করুন।
এরপর জোহান রাসেলকে হুকুম দিলো লোকটিকে নিয়ে যেতে।কিন্তু রাসেল আমতা আমতা করছিলো।তখন সে লোক বলে উঠলো
->আরে স্যার উনি যাবে কেন নিজের বাবার বিরদ্ধে বিচার করতে,উনি তো আরো আমাদের উনার ক্ষমতার গরম দেখিয়ে জুলুম করে।
রাসেল লোকটির দিকে চোখ গরম করে তাকালো।কিন্তু জোহানের দিকে চোখ পড়তে রাসেল চোখ নামিয়ে ফেললো।
জোহান লোকটির সাথে গিয়ে সেখানে বিচার করে দিলো আর জানিয়ে দিলো পরবর্তীতে কেউ এর গায়ে হাত তুললে এর ফল ভালো হবে না।

সেদিন বিকেলে রাসেল জঙ্গলের দিকে রওনা দিলো।লোকটি বলেছিলো খুনিকে সে জঙ্গলের দিকে যেতে দেখেছে।তাই সে জঙ্গলের ভিতরে যাচ্ছে খুনিকে খুজতে।গভীর জঙ্গলে আসার পর সে একটা কুড়ে ঘর দেখতে পেলো।রাসেল বন্দুক বের করে সেই কুড়ে ঘরের ভিতর ঢুকে দেখলো সেখানে শুধু মাত্র একটি চেয়ার আর টেবিল রাখা।টেবিলের ওপর একটা মোমবাতি,আর বিভিন্ন কাগজ পত্র রাখা।মাটিতে বেশ কিছু কাগজের টুকরো পড়ে আছে।রাসেল কাগজের টুকরো হাতে নিয়ে দেখলো এগুলো কারো ছেড়া ছবির টুকরো।বেশ সময় নিয়ে রাসেল টুকরো গুলো এক করে দেখলো সব গুলো এই খুন হওয়া মানুষদের ছবি।রাসেল ভালোভাবে টেবিলের সব কাগজের টুকরো দেখতে লাগলো।তারপর ওর সামনে আরেকটা ছবি আসলো,যেটা দেখে রাসেল চমকে উঠলো।কারন ছবিটা রাসেলের বাবা রবিউল আলমের।আর ছবির ওপরে লেখা,”লাস্ট টার্গেট”।
রাসেল দেরি না করে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।কারন ওর বাবার জীবন নাশের আশংকা আছে।এদিকে বেশ রাত হয়ে গেছে।
রাসেল বাড়ি এসে দেখলো বাড়ির দরজা খোলা।রাসেলের বাবা কোথাও নেই।রাসেল তাড়াতাড়ি ঘরে এসে দেখলো ওর বাবা-মায়ের লাশ পড়ে আছে।রাসেল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দেখলো ওর সামনে সেই কালো পোশাক পরিহিত লোক তলোয়ার হাতে দাড়িয়ে আছে।রাসেল রেগে গিয়ে বলল
->আজ তুই আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবি না।তুই অনেক মানুষের খুন করেছিস।কিন্তু আর পারবি না।এদিকে তাকা নয়তো এখনি পিঠ ফুটো করে দিবো।
রাসেলের কথা শুনে সে সামনের দিকে তাকালো তারপর নিজের মুখোশ খুলে ফেললো।রাসেল তখন চমকে উঠলো।

রাসেল আর তার পরিবার খুন হয়েছে শুনে জোহান দেরি না করে তাড়াতাড়ি বাসায় এসে পৌছালো।জোহান দেখলো রাসেলের বাবা-মার পাশেই রাসেলের লাশ পড়ে আছে।রাসেলের মাথা হতে রক্ত পড়ছে।রাসেলের লাশের পাশে পড়ে আছে একটা সিল।জোহান হাতর নিয়ে দেখলো এটা সেই ছিলো যেটায় লেখা”কিল বাই রন”।এছাড়াও বিছানার ওপর পড়ে আছে খাপ সহ একটা তলোয়ার আর কালো পোশাক।তার মানে রাসেল এই খুন গুলো করেছে?
এমন সময় এক পুলিশ কন্সটেবল ডাক দিয়ে বলল
->স্যার একটা চিঠি পেয়েছি।
->কই?
->এই যে নিন।
জোহান চিঠি হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো,
“যারা অতিরিক্ত মানুষের সুদের টাকা জুলুম দিয়ে আদায় করে তাদের আমি ছোট বেলা থেকে ঘৃনা করি।আমার মা-বাবার প্রতিও এর জন্য অনেক রাগ হতো।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিই এই জুলুমবাজদের আমি নিজে হাতে শেষ করবো তাই এরকম ছদ্মবেশে থেকে প্রত্যেককে খুন করি।কিন্তু নিজের মা-বাবাকে মারার পর খুব আপসোস হয় তাই নিজে নিজেকে শেষ করতে যাচ্ছি।
ইতি
রাসেল”

জোহান চিঠিটা পড়ে আপসোস করতে লাগলো।তারপর সে রাসেলের হাতের লেখা চিঠির হাতের লেখার সাথে ম্যাচ করালো।ফলাফল আসলো চিঠির লেখাটা রাসেলের ছিলো।অতএব কেস ক্লোজড।

বিকেলবেলা জোহান নদীর ধারে বসে আছে।আজ সে তার মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে।জোহানের বাবা-মা এই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে একবার পদক্ষেপ নিয়েছিলো।জোহানের মা-বাবা চেয়েছিলো,তোরা সুদের ব্যবসা করিস কর,তাতে কোনো সমস্যা নেই,তাই বলে মানুষকে টাকার জন্য মারধর,মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে দেওয়া এসব করার প্রয়োজন কি?এটা ওদের সহ্য হয়নি।তারা সবাই মিলে জোহানের বাবা-মাকে তাড়ানোর চেষ্টা করলে তাড়াতে ব্যর্থ হয়।তখন অনেক প্লান করে তারা জোহানের মা-বাবাকে ইলেক্ট্রনিক শকের দ্বারা মেরে ফেলে কিন্তু রাসেলের সাহায্য তারা রিপোর্ট করে যে জোহানের মা-বাবা বাড়িতে বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনায় মারা যায়।
আর সে সময় জোহান অন্য শহরে কর্মরত ছিলো।যখন সে এই শহরে বদলি হয়,তখন ওর পরিচিত একজনের কাছে থেকে সব জানতে পারে।পরবর্তী কেস চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু পরে ভাবে এভাবে এরা যথাযথ শাস্তি পাবে না তাই নিজে শাস্তি দিবে।তাই সে প্লান করে এভাবে প্রত্যেকে তলোয়ার দ্বারা হত্যা করে,খুনের ধরন দেখে যাতে সিরিয়াল কিলারের কাজ বলে মনে হয়।জোহান দৌড়ানোর দিক দিয়ে অনেক ভালো ছিলো।তাই খুন করে অন্ধকারের মধ্যে দ্রুত চলে গেছে কেউ বুঝতে পারেনি।অনেক দিনের চেষ্টায় জোহান রাসেলের হ্যান্ডরাইটিং নিখুত ভাবে নকল করা শিখতে সফল হয়।তাই রাসেলকে মারার পর চিঠি জোহান নিজ হাতে লিখে রেখেছে।আর সব প্রমান সে মুছে ওর ব্যবহৃত সকল জিনিস রাসেলের লাশের কাছে রেখে দিয়েছে।যাতে সবাই ভাবে খুন গুলো রাসেল নিজে করেছে।আর এটাই সে সবার কাছে প্রমান করে যে,এতগুলো খুন রাসেলই করেছে।
জোহান বেশ স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।আজ ওর মিশন সাকসেসফুল।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here