রক্তচোষা,পর্বঃএক

গল্পঃরক্তচোষা,পর্বঃএক
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

ফয়েজ মিয়া তার স্ত্রী রিমাকে নিয়ে টাকা গুনতে বসেছে।মাসের শেষ আজ।এই মাসে কত টাকা এসেছে তারই হিসেব কষছে দুই জন বসে থেকে।ফয়েজ মিয়া ব্যবসা করে আর সেটা হলো সুদের ব্যবসা।যাকে টাকা দেয় তার থেকে সপ্তাহে প্রতি হাজারে দুইশত টাকা করে নেয়।যে দশ হাজার টাকা নেয় তাকে সপ্তাহে দিতে হয় দুই হাজার টাকা।টাকা দিতে দেরি হলে ফয়েজ গিয়ে তার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে।রিমাও ঠিক একই কাজ করে।টাকা দিতে দেরি করলে গায়ে হাত দিতে দেরি করে না।খেয়ে খেয়ে ফয়েজ নিজের ভুড়িটা করে বড় সর লাউয়ের মতো।রিমা টাকা গোনা শেষ করে বলল
->নাও সর্বমোট এখানে পচাত্তর হাজার টাকা হলো।তোমার ওখানে কত এসেছে?
->আমার এক লক্ষ তেত্রিশ হাজার টাকা।
দুইজনের চোখ কেমন যেন চকচক করে উঠলো।রিমা ফয়েজের একটু কাছে এসে বলল
->এই বলছি কি শোনো না এবার একটা বাইক কিনে ফেলো।
->হুম ঠিক বলেছো।বাইক কিন আমরা লং ড্রাইবে যাবো কি বলো?
->দারুন হবে।কিন্তু একটা যদি বাবু হতো আমাদের তাহলে আরো ভালো হতো।
এটা ভেবে ফয়েজের মুখটা মলিন হয়ে গেলো।সাত বছরের বিবাহিত জীবনেও ওদের একটা বাচ্চা হয়নি।ডাক্তার দেখিয়েছিলো কারো সমস্যা নেই তারপরেও হয়নি।এটা নিয়ে একটু কষ্ট লাগে,যে এত টাকা কামাই করছে অথচ এসব ভোগ করার কেউ নেই।
এমন সময় হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো।ফয়েজ বলল
->তাড়াতাড়ি টাকা গুলো সরিয়ে ফেলো।আমি গিয়ে দেখছি কে এসেছে।
ফয়েজ এসে দরজা খুলতে দেখলো মুখোশসহ আটসাট কালো পোশাক পরিহিত কেউ দাড়িয়ে আছে।বুকে লাল রংয়ের ক্রস চিহ্ন আকা।ফয়েজ বলল,কে আপনি?”।
তখন সেই লোকটি খাপ হতে একটি সুক্ষ্ম তলোয়ার বের করে সেটা দিয়ে ফয়েজের গলা বরাবর বিদ্যুতের গতিতে এক টান মারলো।ফয়েজ হালকা আওয়াজ করে নিজের গলা চেপে ধরলো।হাতের আঙ্গুলের ফাঁক ফোকড় দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।এরপর আবারো সেই তলোয়ার ফয়েজের বুকে বাম পাশে ঢুকিয়ে বের করলো।ফয়েজ সেখানে পড়ে ছটফট করতে করতে মারা গেলো।
ফয়েজ আসছে না দেখে রিমা ভাবলো,এত সময় লাগে নাকি দরজা খুলতে,গিয়ে দেখে আসি তো কি করছে ও?এটা ভেবে রিমা দরজার কাছে আসতেউ ফয়েজের লাশ দেখলো।চিৎকার করতে যাবে তার আগেই রিমার গলা কেটে হা হয়ে গেলো।রিমা বুঝতে পারলো না কি করে এভাবে গলা কেটে গেলো?আড়চোখে দেখলো ওর পাশে মুখোশ পড়া কালো পোশাকের একজন চকচকে তলোয়ার হাতে দাড়িয়ে আছে।যেটাতে লেগে আছে তাজা রক্ত।রিমা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।তখন সে কালো পোশাক পরিহিত সেই লোকটি ওদের লাশের আশেপাশে ঘুরতে লাগলো আর আনন্দে পৈশাচিক ভাবে হাসতে লাগলো।এরপর বেজে উঠলো রাত নয়টার ঘন্টা।

পরেরদিন ফয়েজের বাড়িতে মানুষের ভীড় জমে আছে।আশেপাশের লোক সহ পুলিশ দিয়ে ভরে গেছে ফয়েজদের পুরো বাড়ি।পুলিশ ইন্সপেক্টর জোহান তদন্ত করছে।লাশ গুলোর অবস্থা ইতিমধ্যে খারাপ হতে শুরু করেছে।জোহান লাশ গুলো দেখার সময় ফয়েজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো সেখানে বেশ স্পষ্ট ভাবে হাত কেটে তাতে ইংরেজিতে লেখা,”কিল বাই রন”।ব্যাপারটা দেখে বেশ অবাক হলো।সাব ইন্সপেক্টর রাসেল জোহানকে বলল
->স্যার খুনের পর হাতে নাম লিখে গেছে দেখে তো মনে হচ্ছে এটা কোনো সিরিয়াল কিলারের কাজ।
->আমারো তাই মনে হচ্ছে।আর নাম দেখে মনে হচ্ছে এই বেটা নতুন কিলিং শুরু করেছে।আগে তো এমন নাম শুনিনি।
->হুমম হতে পারে।আচ্ছা সারা বাড়ি তল্লাশি নাও দেখো সব ঠিক আছে কি না?
সাব ইন্সপেক্টর রাসেল পুরো বাড়ি তল্লাশি চালালো।জোহান আশেপাশের লোকদের জিজ্ঞাসা বাদ করতে লাগলো যে,কেউ সন্দেহ জনক কিছু দেখেছে কি না?কিন্তু কেউ তেমন কোন উত্তর দিলো না।একটু বাদে রাসেল এসে জোহানকে বলল
->স্যার আলমারি খোলা রয়েছে,আলমারিতে গহনা আছে কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে নগদ টাকা শুধু সরানো হয়েছে।আর তালা ভাঙ্গা বা এ জাতীয় কোন চিহ্ন নেই।
->মনে হচ্ছে এমন কেউ কাজটা করেছে।যে এদের ব্যাপারে খুব ভালো করে জানতো।কিন্তু তোমার এমন কেন মনে হলো যে শুধু নগদ ক্যাশ সরানো হয়েছে?
->কেননা স্যার গহনার পাশে কিছুটা জায়গা ফাঁকা দেখা যাচ্ছে আমি শুধু সন্দেহ করে বললাম আর কি?
->হুম ভালো।তবেখুনি কিন্তু বেশ চালাক।সে গহনা চুরি করেনি কারন এগুলো বেঁচতে গেলে ধরা পড়ার চান্স আছে তাই নগদ ক্যাশ সরিয়েছে।
->হুমম।এটা কি আসলে শত্রুটা করে খুন করেছে নাকি টাকা লুট করার জন্য করা হয়েছে?
->বুঝতে পারছি না।লুট করার জন্য করে থাকলে আবার নিজের নাম লিখে রাখতে যাবে কেন?
->হয়তো খুনের সাথে নিজেও কিছু মালকড়ি কামাতে চাইছে।
->সে যাইহোক খুনি ধরা পড়লে আসল ব্যাপারটা সামনে আসবে।লাশ গুলো পোস্ট মর্টেমের জন্য পাঠিয়ে দাও।

জোহান ফয়েজের বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আশেপাশের লোকের মুখে শুনতে পেলো তারা বলা বলি করছে,”এরকম সুদ খোরের মরাই ভালো”,”এরা হলো রক্ত চোষা বাদুড়,এরা সুদের মাধ্যমে মানুষের রক্ত চুষে খায়”।”এদের যেন নরকেও ঠাই না হয়”।
জোহান মানুষের কথা শুনে বুঝলো যে,এই ফয়েজকে মানুষ খুব একটা দেখতে পেতো না।সবাই ঘৃণা করে ওকে।
জোহানের হাতে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এলো।তা থেকে স্পষ্ট যে,ওদের খুন সুক্ষ্ম তলোয়ার দ্বারা করা হয়েছে।আর হাতের লেখাটে সিলের মতো করে বসানো হয়েছে।হাত দিয়ে ওভাবে লেখা কখনো সম্ভব না।জোহান রাসেলে ডেকে বলল
->এই শহরে যারা যারা সিল তৈরি করে তাদের প্রত্যেকের থেকে খবর নাও এরকম সিল কে তৈরি করে নিয়েছে।
->ঠিক আছে স্যার।
জোহান বেরিয়ে পড়লো আশেপাশের খোঁজ নেওয়ার জন্য।কেউ না কেউ কিছু তো নিশ্চয় দেখে থাকবে।আজ তো সিসি ক্যামেরা প্রায় অনেক জায়গাতে লাগানো আছে।ফয়েজের বাড়ির আশেপাশের সিসি টিভি ফুটেজ চেক করতে হবে তাহলে নিশ্চয় কোন না কোন সুত্র হাতে আসবে।ফয়েজের বাড়ির আশেপাশের সিসি টিভি ফুটেজ চেক করলেন কিন্তু খুনির কাছে পৌছানোর মতো কোন সুত্র পেলেন না।এমনকি সাব ইন্সপেক্টর রাসেল এসে জানালো
->স্যার এরকম সিল কেউ বানিয়ে দেয়নি।কেউ তো বললো না এই ব্যাপারে কিছু।
->অদ্ভুত ব্যাপার।তাহলে কি এই সিল খুনি নিজে বানিয়েছে?
জোহানের মাথা কিছু আসছে না।ফয়েজের সাথে যাদের ঝামেলা হয়েছিলো জোহান প্রত্যেকের খোঁজ নিলো।কিন্তু তাদের দেখে মনে হয়না যে তারা ফয়েজকে খুন করবে।
দুই দিন আগে শামিম নামের এক লোকের সাথে ফয়েজের ঝামেলা হয়েছিলো।লোকটি পেশায় ব্যবসায়ী।জোহান গাড়ি নিয়ে শামিমের দোকানের সামনে এসে দাড়ালো।পুলিশ দেখে শামিম দোকান থেকে বাইরে এলো।জোহান বলল
->এখানে শামিম কে?
শামিম সাথে সাথে বলল
->স্যার আমি শামিম?কিছু হয়েছে কি?
->হুম।আমি ফয়েজের খুনের ব্যাপারে প্রশ্ন করতে এসেছিলাম।
->কে ওই সুদখোর ফয়েজ?
->হুমম।
->ও খুন হয়েছে?
->হুমম।ওর সাথে আপনার নাকি ঝামেলা হয়েছিলো?ঝামেলা কি নিয়ে জানতে পারি?
->আর বলবেন না।আমার এক কর্মী ওর থেকে সুদের ওপর টাকা নিয়েছিলো।ওকে প্রায় অনেক টাকা সুদ দিয়ে আর দিতে পারছিলো না।তখন আমি একমাসের সময় নিয়েছিলাম কিন্তু ওই বেটা শুনছিলো না।এটা নিয়ে ঝামেলা।
->বুঝলাম।আপনি আবার মারেন নি তো ওকে?
->ছিঃ ওদের মতো কুলাঙ্গারদের মেরে হাত আর আমার সারাজীবন নোংরা করবো কেন?
->হুমম।
জোহান শামিমের থেকে তেমন কোনো উত্তর না পেয়ে চলে আসতে লাগলো।রাসেল জোহানকে জিজ্ঞেস করলো
->স্যার এখন পর্যন্ত যতগুলো মানুষের সাথে কথা বললাম তারা কেউই ফয়েজের জন্য শোক প্রকাশ না করে উল্টো তার মৃত্যুতে সবাই খুশি হয়েছে।
->খুশি হওয়ায় স্বাভাবিক।এরা মানুষের জীবনটা নষ্ট করে দেয়।এদের কারনে অনেকের পড়া নষ্ট হয়,অনেকে অনাহারে থাকে,নিজেদের শখ আহ্লাদ পূরন করতে পারে না।
->কিন্তু মানুষ টাকা নেয় কেন?
->বোকার মতো কথা বললে?সবাই তো আর সব সময় আমাদের মতো সরকারি চাকরি করেনা যে মাস গেলে টাকা পেয়ে যাবে।বিভিন্ন পেশার মানুষ আছে সমাজে,কেউ চাকরি হারিয়ে ফেলছে,কারো ব্যবসায় লস।অনেকে টাকার অভাবে ছেলের স্কুল ফিস দিতে পারছে না।এক্ষেত্রে টাকা সুদের ওপর নেওয়া স্বাভাবিক।বর্তমান জামানায় কেউ তো মাগনা টাকা দেয় না,তাই বাধ্য হয়ে সুদের ওপর নিতে হয়।
->বুঝতে পেরেছি স্যার।
->হুম সুদ যেখানে খাওয়া হারাম সেটা জেনেও এরা সুদ খায়।সুদ যখন এতই খাওয়ার ইচ্ছা তাহলে লিমিটের মধ্যে থেকে খা।
->স্যার আপনিও দেখছি সুদকে খুব ঘৃণা করেন।
জোহান কিছু না বলে গাড়িতে উঠবে তখন দেখলো গাড়ির সিটের ওপর একটা কাগজ পড়ে আছে।জোহান সেই কাগজ হাতে নিয়ে দেখলো তাতে লেখা,”স্যার,আপনি এই কেস থেকে দুরে থাকুন,শেষ করতে দিন এই রক্তচোষাদের”।
জোহান রাসেলকে বলল
->আশেপাশে খোঁজ নাও খুনি এইদিক দিয়ে গেছে।বেশিদুর যায়নি সে।
->স্যার এইদিক দিয়ে তো অনেকে গেছে কিন্তু কে কাজটা করেছে তা বলা মুশকিল।
জোহান কিছু না বলে গাড়িতে উঠে থানায় চলে এলো।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here