গল্পঃ ভয়ংকর মৃত্যুপুরী,পর্বঃ চতুর্থ শেষ
লেখাঃMd Taraju Islam(Shihab)
সিহাব আর সাবিলা সেই জেলের দিকে এগিয়ে গেলো।যদি সাবিলার কাছে ব্যাপারটা ঠিক মনে হচ্ছে না তারপরেও না যেয়ে উপায় নেই।আর যাই হোক এই ভয়ংকর জায়গা থেকে ওদের বাঁচতে হবে।এখানে থাকলে না খেতে পেয়ে মরতে হবে।সিহাব সাবিলাকে একটু দুরে দাড়িয়ে থাকতে বলে সে নিজে একাই জেলের কাছে এগিয়ে গেলো।জেলে সিহাবকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
->কি তুমি আর এত রাতে এখানে কি চাও?
->দেখুন আসলে আমরা বিপদে পড়েছি।আমরা আপনার কাছে সাহায্যে চাই।
তখন সেই জেলে সিহাবের পিছনে তাকিয়ে বলল
->বউ বাচ্চাও আছে দেখছি।
জেলে সাবিলা আর রিফাকে সিহাবের বউ বাচ্চা ভেবে নিয়েছে দেখে সিহাব বেশ লজ্জা পেলো।সাবিলাও একটু লজ্জা পেলো।রিফা কেন জানি হেসে উঠলো।রিফাকে হাসতে দেখে সাবিলা ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো তা দেখে রিফা ওর আঙ্গুল মুখে রাখলো।সাবিলা মুচকি হাসলো রিফার কান্ড দেখে।সিহাব জেলেকে পুরো ঘটনা খুলে বললো।সব শুনে জেলে বলল
->সত্যি বলতে বাবা এই জায়গা সাধারন কোন মানুষের জন্য একটুও নিরাপদ নয়।
->সেটা তো বুঝতে পারছি।এখান থেকে যেতে সাহায্য করতে পারবেন?
->হ অবশ্যই।খাড়াও আমি নৌকা রেডি করছি।ওই পাড়ে একটু গেলে তোমরা রাস্তা পেয়ে যাবে এখান থেকে যাওয়ার।
->আচ্ছা চাচা।
লোকটি জাল গুছিয়ে নিয়ে একটা নৌকা ছিলো সেটাতে সিহাব সাবিলা সহ উঠলো।সিহাব জেলেকে প্রশ্ন করলো
->আচ্ছা চাচা এখানে এই প্রেত্মাতা কই থেকে আসলো?
->সে অনেক কাহিনি রে বাবা।এটা একটা সাধারন শহরের মতোই ছিলো কিন্তু পুরোটায় জঙ্গলে ঘেরা তাই বাইরের লোক খুব কম আসতো।তবে প্রায় এখানে জলদস্যু বনদস্যুর আক্রমন হতো।তো একবার একজন বনদস্যুর লোক ধরা পড়ে।তখন সবাই মিলে তাকে হত্যা করে হাত-পা কেটে দেয়,আর তার শরীরের অংশ কারেন্ট মাগুরদের(ইলেকট্রিক ইল)খেতে দেয়।এই গ্রামের লোকের সাথে ওই বনদস্যুদের সাথে যোগাযোগ ছিলো।তার সাহায্য একদিন রাতে ওরা গ্রামে আক্রমন চালায় আর সব মানুষকে মেরে মাছেদের খাদ্য বানায়।তখন থেকে এই জায়গা এমন।
->খুব কষ্টের ব্যাপারটা।
এমন সময় রিফা সাবিলাকে কি যেন বলতে চাইলো কিন্তু জেলের ওপর চোখ পড়তে আর কিছু বললো না।সাবিলা বলল
->কিছু বলবে মা?
রিফা মাথা ঝাকিয়ে “না” জবাব দিলো।একটু পর জেলে ওদেরকে নদীর ওপারে নামিয়ে দিলো।তারপর বলল
->এখান থেকে সোজা যেতে থাকেন কয়েকঘন্টা হেঁটে গেলে রাস্তা পেয়ে যাবেন।
->আপনাকে ধন্যবাদ চাচা।
সিহাব সাবিলাকে নিয়ে হাঁটতে লাগলো।সাবিলা রিফাকে জিজ্ঞেস করলে
->আচ্ছা আম্মু তুমি আমায় কি যেন বলতে চেয়েছিলে?
->আন্টি ওই জেলের উল্টো ছিলো কেন?
->মানে?
তখন সিহাব সাবিলা দুইজনে পিছনে তাকিয়ে দেখলো নৌকা সহ সেই জেলে উধাও।তা দেখে ওরা দুইজনে একটু আৎকে উঠলো।সাবিলা বলল
->তার মানে সে একজন অশরীরী ছিলো?
->হুম তাই মনে হচ্ছে দ্রুত এখান থেকে যাওয়া যাক।
সিহাব সাবিলাকে নিয়ে দ্রুত হাঁটতে লাগলো।ইতিমধ্যে ভোর হতে শুরু করেছে।সিহাব আর সাবিলা একটা ফাঁকা জায়গায় আসলো আর তখন একটা হেলিকপ্টারের আওয়াজ শুনতে পেলো।ওরা তাকিয়ে দেখলো একটা হেলিকপ্টার আসছে।সিহাব হাত নাড়িয়ে ওদের দিকে ইশারা করলো।হেলিকপ্টারের লোকজন ওদের দেখতে পেয়ে দ্রুত হেলিকপ্টার ওদের থেকে কিছু দুরে ল্যান্ড করালো।ওরা আসলে ওই লোকদের উদ্ধার করতে এসেছে।হেলিকপ্টার থেকে একজন নেমে এসে বলল
->আপনারা ঠিক আছেন তো?
->হ্যাঁ ঠিক আছি।
->চলুন।
ওদেরকে হেলিকপ্টারে তুলে নিয়ে রওনা দিলো।অবশেষে ওরা এই ভয়ংকর মৃত্যুপুরী থেকে বেঁচে বের হতে পারলো।ওরা জানতে পারলো যে,বিমানে একটা যান্ত্রিক ত্রুটি ছিলো যেটা পরিক্ষা না করে যাত্রা শুরু করে যেজন্য আজ এই অবস্থা।ওরা সহ আরো ৭জন লোককে জীবিত উদ্ধার করেছে।
হেলিকপ্টার থেকে নামার পর সিহাব আর সাবিলা তার মা-বাবা ফিরে পেয়ে খু্ব খুশি।
সাবিলা আর সিহাব একসাথে রিফাকে তার পরিবারের কাছে তুলে দেওয়ার জন্য নিয়ে গেলো কিন্তু গিয়ে দেখলো রিফার দাদি মারা গেছে।রিফা ওর দাদির কাছে গিয়ে কাঁদতে লাগলো।সবাই বলাবলি করছে,এতটুকু মেয়ে এখন কার কাছে থাকবে?তখন সাবিলা বলে উঠলো
->কারো যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে রিফাকে আমার সাথে রাখবো।
এই কথা শুনে কেউ অমত করলো না।এমন সুযোগ কেউ ছেড়েও দিতে চায় না।সবাই তাতেই রাজি হলো।সিহাব সাবিলাকে বলল
->আপনি তো মেয়েটির দায়িত্ব নিলেন আমি কি আপনার দায়িত্ব নিতে পারিনা?
সিহাবের কথা শুনে সাবিলা হেসে বলল
->আমার দায়িত্ব আমি নিজে নিতে পারি।
সিহাব কথাটা শুনে মাথা নিচু করলো।তখন রিফা বলল
->আংকেল খুব ভালো।
সাবিলা রিফার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ওর গাল টেনে বলল
->ওর দুষ্ট মেয়ে আংকেলের হয়ে আর কথা বলতে হবে না।
সাবিলা সিহাবকে বলল
->ঠিক আছে প্রস্তাব নিয়ে আসুন বাসায়।প্রথম ফিরে গেছেন কিন্তু এবার আর ফিরে যাবেন না আমি বললাম।
সাবিলা কথাটা বলে লজ্জায় মাথা নিচু করলো।এভাবে যে হুট করে ডাইরেক্ট বলে দিবে তা ভাবতে পারেনি।সাবিলার কথা শুনে সিহাবের মুখে ফুটে উঠলো রাজ্য জয়ের হাসি।
(সমাপ্ত)