ভয়ংকর_মৃত্যুপুরী,পর্বঃদ্বিতীয়

গল্পঃভয়ংকর_মৃত্যুপুরী,পর্বঃদ্বিতীয়
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

লোকটির পানিতে পড়ে যাওয়া দেখে সবাই অবাক।সেখানে পানি নড়ছে।সিহাব সহ সেখানে আরো দুইজন যাবে আর তখন সাবিলা বাধা দিয়ে বলল
->দাড়ান ওখানে যাবেন না তাহলে আপনারাও এভাবে মারা পড়বেন?
->কেন?
->কারন ওই জায়গায় ইলেকট্রিক ইল মাছ আছে।আমি দেখেছি সেটা।হয়তো ওই মাছ উনাকে আক্রমন করেছে।
ইলেকট্রিক ইল মাছের কথা শুনে অনেকে একটু ভড়কে গেলো।যদি এদের মধ্যে থাকা অনেকে এই মাছের ব্যাপারে জানে না।কিন্তু সেখানে যতই ওই মাছ থাকুক না কেন ওখানে ওই লোক পড়ে থাকলে হয়তো আরো মাছের আক্রমনে মারা যাবে তাই যত দ্রুত সম্ভব উনাকে নিয়ে আসতে হবে।সিহাব সহ কয়েকজন মিলে মাটি তুলে সেগুলো দলা পাকিয়ে পানিতে ছুড়ে মারতে লাগলো।একটু পর তিনজন গিয়ে লোকটিকে তুলে নিয়ে আসলো।সবাই মিলে ওর হাত-পা ঘষতে লাগলো কিন্তু কিছুতে কাজ হচ্ছে না কি করবে এখন?ওদের কোন চেষ্টা সফল হলো না লোকটি মারা গেলো।এখন এরা এই লাশ নিয়ে কি করবে বুঝতে পারছে না।রিফা বেশ ভয় পেয়ে আছে।বেশ দুই তিন ঘন্টা হয়ে গেলো লাশের অবস্থা খারাপ হতে চলেছে।সবাই ভাবছে এখনো হয়তো কেউ খবর পায়নি তাই এখনো উদ্ধার করতে আসছে না।দিন শেষ হতে চললো লাশ অনেকটা পঁচতে শুরু করেছে।গন্ধতে এখানে থাকা মুশকিল হয়ে গেছে।সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো এখান থেকে ওরা লাশ রেখে চলে যাবে।আর এখান থেকে না গেলে উদ্ধারের আশায় বসে থাকতে থাকতে এমনিতে ওরা না খেতে পেরে মরে যাবে।এদিকে রিফার আবার ওর মায়ের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় কাঁদতে লাগলো।সাবিলা রিফার পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
->কেঁদো মামুনি আমি আমি আছি না।
->আমার আম্মু কি আসবে না?
এতটুকু বাচ্চাকে কি বলে শান্তনা দিবে বুঝতে পারছে না।জঙ্গলে সন্ধ্যা নামতে খুব একটা দেরি হয় না।এখানে যেহেতু এরকম ইল মাছ আছে তাই এর খুব কাছাকাছি হয়তো কোন নদী আছে।আর নদীর ধার দিয়ে গেলে হয়তো কোন না কোন পথ নিশ্চয় খুজে পাওয়া যাবে।যে ভাবে সে কাজ জলাভূমির এক ধারে পানি খুব কম সিহাব সবাইকে নিয়ে সেই পথে হাঁটা ধরলো।হাঁটতে সবার একটু কষ্ট হচ্ছে এখানে খাবার মতো কিছু নেই।ওদের পায়ের নিচে শুকনো জমি আসলো।আর সামনের দিকে জঙ্গলের ঘনত্ব ক্রমশ কমে আসছে।তাহলে কি ওরা কোনো লোকালয়ের দেখা পেলো?যদি এত কাছাকাছি কোন লোকালয় থাকতো তাহলে নিশ্চয় কেউ না কেউ বিমান দূর্ঘটনার ব্যাপারটা টের পেতো আর ওদের উদ্ধার করতে ঠিক চলে আসতো?সামনের দিকে বেশ ফাঁকা জায়গা দেখা যাচ্ছে।সবাই যখন সামনে আসলো তখন জায়গাটা পুরো অবাক।জমকালো বাড়ি ঘরের তৈরি এক শহর।যে বাড়ি গুলো সবুজ লতা পাতা দিয়ে ঘিরে আছে।রাস্তাঘাট সবকিছুতে সবুজ শেওলা জমে আছে।তা দেখে সাবিলা বলল
->এটা আবার কোন জায়গায় এসে পড়লাম।যতদুর চোখ যায় শুধু এরকম বাড়ি।
তখন ওদের মধ্যে থাকা এক মহিলা নাম রিমা।সেবলল
->এরকম জায়গাতে নাকি অনেক অশরীরী আত্মা বাস করে।আমরা আবার আত্মার জগৎে এসে পড়লাম না তো?
রিমার কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।সিহাব হাসতে হাসতে বলল
->সত্যি এরকম পরিস্থিতিতে হাসি আটকিয়ে রাখতে পারলাম না।তবে এরকম অবস্থায় হাসতে পারলে ভালো হয়।
সিহাবের কথা রিমা রাগে কটমট করতে লাগলো।ওরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখলো বেশ কিছু ফলের গাছ।সবাই এটা দেখে একটু খুশি হলো।সবাই যে যার মতো গাছ থেকে ফল পেরে খেতে লাগলো।সাবিলা আর পারতে পারছে না।তখন সিহাব সাবিলার কাছে এসে ওর হাতে কয়েকটা আপেল দিয়ে বলল
->আপনিও খান আর এই বাবুটাকে খাওয়ান।
সাবিলা মুচকি হেসে বলল
->ধন্যবাদ আপনাকে।
সাবিলার কেন জানি সিহাবকে দেখে বেশ চেনা চেনা লাগছে।কেন জানি মনে হচ্ছে দুইজনের আগে কোথাও দেখা হয়েছিলো।কিন্তু কোথায় দেখা হয়েছিলো তা মনে করতে পারছে না।
সবাই একটু খাওয়া দাওয়া করায় একটু সুস্থবোধ করছে।রাত হয়ে এলো সবাই এক জায়গায় বসে পড়লো।এছাড়া উপায় নেই।এখন কাল সকাল হলে এখান থেকে বের হতে হবে।রাতে সবাই সেখানকার মাটিতে বসে পড়লো।কেউ কেউ কান্না করছে আর বলছে এখান থেকে হয়তো আর যেতে পারবে না কেউ।সিহাব তখন সবাইকে উদ্দেশ্যে করে বলল
->আপনারা কান্না করবেন না।কান্না করলে তো আর যেতে পারবেন না তাই।ধৈর্য ঠিক একটা উপায় বের হবে।
সিহাবের কথা সবাই একটু চুপ হলো।সাবিলা রিফাকে নিয়ে উঠে দাড়াল।মশা ধরছে বলে রিফাকে কোলে নিয়ে সে হাঁটতে লাগলো।চাঁদের আলোয় চারদিক আলোকিত হয়ে আছে।সাবিলা সামনের দিকে হাঁটছে আর রিফার পিঠে হালকা হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।রিফা সাবিলার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।সাবিলাকে হাঁটতে দেখে সিহাব ওর কাছে এসে বলল
->কোথায় যাচ্ছেন ওইদিকে?
->এই তো বাবুকে একটু ঘুম পাড়ায়।
->আচ্ছা তবে বেশি দুর যাবেন না।
->ঠিক আছে।
সাবিলা রিফাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটু সামনে আসতে দেখলো ওর থেকে একটু দুরে একটা লোক দাড়িয়ে আছে।মুখ সামনের দিকে ঘুরানো তাই চেহারা দেখা যাচ্ছে না।তবে লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে না সেই ওই লোকগুলোর মধ্যে কেউ যারা এখন রয়েছে।তারপরেও সাবিলা মনে সাহস নিয়ে বলল
->আচ্ছা ভাইয়া আপনি এখান থেকে বের হওয়ার পথ বলতে পারেন?
সাবিলার কথার কোন জবাব এলো না দেখে সাবিলা বলল
->আমার কথা কি শুনতে পাননি আপনি?
এমন সময় সেই লোকের শরীর বাদে পুরো ঘাড় ঘুরে তার মুখ সাবিলার দিকে করলো।লোকটির মুখ প্রচন্ড ভয়ংকর।মুখের চামড়া ভাজ পড়া।যা থেকে রক্ত পড়ছে।দুই চোখের ভিতর যেন কেউ সাদা বল রেখে দিয়েছে।সাবিলা এটা দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠলো।সাবিলার চিৎকারে রিফা জেগে উঠে রিফাও সেই লোককে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
সাবিলা আর রিফার চিৎকার শুনে সিহাব সহ সবাই হুড়মুড়িয়ে উঠলো।সবাই মিলে সাবিলার দিকে যাচ্ছে আর তখন দেখলো সাবিলা দৌড়ে আসছে।সিহাব সাবিলার কাছে এসে ওকে জিজ্ঞেস করলো
->কি হয়েছে এভাবে চিৎকার করছেন কেন?
সাবিলা কাঁপতে কাঁপতে রিমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন
->উনি ঠিক কথা বলছিলেন এখানে অশরীরী আছে।আমি নিজে দেখেছি।
রিফাও বলল,,সে নিজেও দেখেছে।সাবিলার কথা শুনে রিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল
->আমি আগেই বলেছিলাম এখানে নিশ্চয় খারাপ কিছু আছে কিন্তু কেউ আমার কথা বিশ্বাস করলে না এখন দেখলে তো।
সিহাব সহ সবাই একধরনের আতংকের মধ্যে পড়ে গেলো।এমন সময় এক ধারছে অনেক গুলো গোঙ্গানি আর কান্নার আওয়াজ আসতে লাগলো।সবাই ভয়ে কাচুমাচু করতে লাগলো।এমন সময় একের পর এক ভয়ংকর চেহারার নারী-পুরুষ ওদের সামনে আসতে লাগলো।সবাই কেমন যেন করছে, মনে হচ্ছে এখনি ওদের ছিড়ে ফেলবে।চারদিক থেকে সবাইকে ঘিরে ধরেছে।সিহাব এসে সাবিলার হাত ধরলো।তখন সাবিলা একটু অবাক হলো।রিফা ভয়ে কাঁদছে।সিহাব বলল
->বাচ্চাকে আমার কোলে দিন?
সিহাব রিফাকে নিজের কোলে নিয়ে বলল
->বাঁচতে চাইলে সবাই এখান থেকে পালাও।।
সিহাবের কথা শেষ না হতে যে যার মতো করে ভয়ে পালাতে লাগলো।সিহাব সাবিলার হাত ধরে দৌড়াতে লাগলো।হঠাৎ দুইজনের চিৎকার ভেসে এলো।সাবিলা পিছনে তাকিয়ে দেখলো দুইজনকে ওই অশরীরী গুলো ছিড়ে ফেলে দিছে।সাবিলার ভয়ে জান শুকে গেলো।সিহাব সাবিলাকে নিয়ে সোজা দৌড়াতে লাগলো।আর তখন দেখলো ওদের সামনে আবারো জঙ্গল।জঙ্গলের ভিতর ঘন অন্ধকার।সাবিলা থেমে বলল
->আমরা কি আবারো জঙ্গলে যাবো নাকি?
->তাই করতে হবে।এছাড়া আর উপায় নেই।
->আমার কিন্তু খুব ভয় করছে।
->ভয় নেই আমি আছি।
সিহাব সাবিলাকে নিয়ে জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করলো।জঙ্গলের ভিতরের মাটি অনেকটা নরম।পা মাটিতে ডেবে যাচ্ছে।হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।হঠাৎ মাটির ভিতর থেকে একটা হাত বের হয়ে সাবিলার পা টেনে ধরলে সাবিলা ভয়ে চিৎকার করতে লাগলো।সিহাব সাবিলার পা ছাড়াতে যাবে আর তখন গাছের ভিতর থেকে একটা হাত বের হয়ে রিফাকে টেনে ধরলো।মাটি আস্তে আস্তে ফেটে যেতে শুরু করলো।আর ভিতর থেকে একটা করে কাটা হাত বের হচ্ছে।সিহাব এখন কাকে বাচাবে সাবিলাকে নাকি রিফাকে?নাকি সে নিজে বাঁচবে?

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here