হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸,পর্বঃ৯,১০
লেখিকাঃআদিলা
পর্বঃ৯
রুহান আমিরকে রুমে দিয়ে চলে যায়। আমির দরজার দিকে তাকাতে দেখে ইয়ামিনা মাএ ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়েছে। আধো ভেজা চুল পরমে ভেজা শাড়ি পাল্টে নতুন সুতি শাড়ি পরেছে। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আমিরের চোখে চোখ পড়ে যায়।ইয়ামিনা ইতস্তত বোধ করে চোখ সরিয়ে ফেললেও আমির ইয়ামিনার দিকে এখনো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। কি জানি আছে এই চোখের মধ্যে আমির না চেয়েও চোখ সরাতে পারে না।
আপনি তো পুরো ভিজে গেছেন। জামা চেঞ্জ করে নিন না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
ইয়ামিনার কথায় আমিরের ধ্যান ভাঙে। হ্যা করছি।
ইয়ামিনা আমিরের সামনে একটা টিশার্ট ধরে… এই নিন
আমির সেটা হাতে নেয়। চেঞ্জ করতে যেয়ে বিপত্তি ঘটে। হাত কেটে যাওয়ার কারনে আমিরের টিশার্ট খুলতে কষ্ট হচ্ছে তারপর চেষ্টা করচ্ছে ইয়ামিনা সেটা দেখতে পেয়ে আমিরের কাছে যায়।।
আমিরের টিশার্ট খুলতে খুলতে ইয়ামিনা বলে আমাকে বললে হতো না। আপনার তো হাত কেটে গেছে খুলতে তো সমস্যা হবে।।
ইয়ামিনা ভেজা টিশার্ট টা বারান্দায় মেলে দিয়ে রুমে ভেতরে আসে৷
আমাকে একটু ওয়াশরুমে নিয়ে যাও ফ্রেশ হবো। ইয়ামিনা আমিরকে ধরে উঠায় আমিরের নাকে একটা মিষ্টি স্মেল আসে ইয়ামিনার গায়ের থেকে আসছে। আমিরকে যেন এই স্মেলটা খুব বেশি টানচ্ছে। ইচ্ছে করচ্ছে সেখানে ডুব দিতে। ইয়ামিনা আমির কে ওয়াশরুমে দিয়ে আসে।
আমিরের ডাকে আমিরকে নিয়ে এসে বেডে শুয়ে দেয়। কোম্বলটা টেনে দিয়ে লাইট অফ করে দেয়।আমিরও কিছু না বলে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ে।
ইয়ামিনা বারান্দায় গিয়ে গ্রিল ধরে দাড়ায়। সাড়া শরীর ব্যাথা করচ্ছে। আমিরকে বুঝতে না দিলেও এখন বেশ খারাপ লাগচ্ছে।এত লম্বা মানুষকে ধরে নেয়া আসা করা কম কথা না৷ যতই হোক মেয়ে মানুষ এত ভার নেয়া ইয়ামিনার পক্ষে কষ্ট হয়ে পড়েছে ।আমির বুঝতে পারলে হয়তো ইয়ামিনাকে কাছে আসতে দিত না।তাই ইয়ামিনা মুখে হাসি ভাব বজায় রাখে। কিন্তু তার যে হার মানলে চলবেনা। যেভাবে হোক আমিরকে সবটুকু দিয়ে তার সেড়ে তুলতে হবে। এসব চিন্তা করে ইয়ামিনা রুমে আসে। চাদের আলো জালালা ভেদ করে আমিরের মুখের উপর পরচ্ছে। ঘুমের মধ্যে আমিরের মুখটা পুরো বাচ্চা বাচ্চা লাগচ্ছে। জেগে থাকলে তো রাগ সারাদিন মাথার উপর নিয়ে রাখে আর এখন… এটা ভেবে ইয়ামিনা কিছুটা হেসে দেয়।বেডের এক পাশে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পরে।
____________________🌸
শ্বাস নিতে আমিরের কষ্ট হচ্ছে চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে ভোর হয়ে গেছে। বুকের উপর এখনও ভার অনুভব করচ্ছে ভাল করে তাকিয়ে দেখে ইয়ামিনা আমিরের বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে শুয়ে আছে। বাতাসে ইয়ামিনার চুল গুলো উড়ে আমিরের মুখে ভারি খাচ্ছে। আমির মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরাতেই ইয়ামিনা ঠোট উল্টে আমিরকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আমির নিজের অজান্তেই হেসে দেয়। ইয়ামিনার সামনে পড়া চুল গুলো কানে গুজে দিতেই ইয়ামিনার গায়ে মিষ্টি স্মেল্টা আমির এখনও পাচ্ছে। আমির চোখটা বন্ধ করে ইয়ামিনাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। কখন যে আমির ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়ালি নেই।
ইয়ামিনার ঘুম ভাঙতে দেখে ইয়ামিনা আমিরের বুকে আর আমির ইয়ামিনাকে জড়িয়ে রেখেছে। ইয়ামিনা একটু লজ্জা পেয়ে দ্রুত উঠে পরে। আমির যদি দেখে ফেলে আরও লজ্জা পরে যাবে। উনি হয়তো ঘুমের ঘোড়ে জড়িয়ে ধরেছে খেয়াল নেই কিন্তু আমি কিভাবে এখানে এসে পরেছি।আল্লাহ উনি জেগে থাকলে কি হতো।
ইয়ামিনা বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে আমিরকে ডাক দেয়।
এইযে উঠুন আজান দিয়েছে নামাযটা পড়ে নিন। কি হলো উঠুন।আমিরের উঠার নামই নেই। ইয়ামিনা আমিরের দিকে একটু ঝুকে হাত বাড়িয়ে ডাকচ্ছে। কি হলো নামাজ ওয়াক্ত বেশিক্ষন নেই। উঠুন। আমির ঘুমের ঘোড়ে ইয়ামিনার হাতটা ধরে হেচকা টান মেরে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। আমির ঘুমের মধ্যে বির বর করেই চলচ্ছে।
প্লিজ আরেকটু ঘুমাতে দাও । আমির এত জোরে জড়িয়ে ধরেছে ইয়ামিনার যেন দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম।ইয়ামিনা আর না পেরে আমির গায়ে জোরে চিমটি কাটে। আমির চোখ খুলে তাকায়। কিছুক্ষন এইভাবে তাকানোর পর বুঝতে পারে আমির ইয়ামিনাকে ছেড়ে এক লাফে উঠে বসে। ইয়ামিনা উঠে শাড়ি ঠিক করে নেয়।
আমির অপ্রস্তুত হয়ে বলে…ঘ..ঘ..ঘুমের ঘোরে হয়তো খেয়াল ছিল না …
সমস্যা নেই আমি উঠুন নামাজটা পরে নিন।
আমির ফ্রেশ হয়ে আসতে দুজনে নামাজ আদায় করে নেয়।
খাওয়ার টেবিলে সবাই বসে আছে ইয়ামিনা আর জাফরা সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। আমির খাওয়ার দিকে দৃষ্টি রেখে আরুশিকে বলে… কিরে এত রঙচঙ মেখেছিস কেন তাও এত সকাল সকাল।
আরুশি এমন কথায় মুখটা বাকা করে নেই। মেখেছি আমার ইচ্ছা আর তোমার বউয়ের মত এত সুন্দর না তাই আদা ময়দা মেখেছি। আর এমনিতেও আমার ফ্রেন্ডস আর কাজিন আসবে ভাবিকে দেখতে..
আমির ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আবার খাবারে মনোযোগ দিয়ে বলে… ও আচ্ছা।
.
.
.
.
বিকেলের দিকে আমির রুমে বসে লেপটপে বসে কাজ করছিলো৷ হুইল চেয়ারে বসে ছিল৷ বাহিরের আওয়াজে আমির বাহিরে এসে দেখে আরুশির ফ্রেন্ডসরা এসে পরেছে সাথে ফ্রেন্ডের কাজিনরাও আছে।
ইয়ামিনা সবার সাথে হেসে কথা বলছে আর খাবার সার্ভ করচ্ছে।আরুশি সবার সাথে ইয়ামিনার পরিচয় করে দিচ্ছে।ইয়ামিনা হাল্কা গোলাপির সাথে কালো পারের শাড়ি পরেছে।। আমির ইয়ামিনার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে। কেন জানি আমিরের প্রচন্ড রাগ লাগচ্ছে ইয়ামিনার উপর।
পেছন থেকে একটা ছেলে বলে উঠে
কেমন আছো?
ছেলের কন্ঠ পেয়ে ইয়ামিনা পিছন ফিরে তাকায়। হয়তো আরুশির ফ্রেন্ডের কাজিন তাই ভেবে ইয়ামিনা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, জি আলহামদুলিল্লাহ ভাল।।
তো আপনি আরুশির ভাবি। আরুশির থেকে শুনেছিলাম আপনার কথা।।
ও হ্যা।।
বাই দ্যা ওয়ে আপনি আসলে অনেক সুন্দর। আপনার মত আপনার হাতের রান্নাটাও মাশাল্লাহ।
ইয়ামিনার কেন জানি বিরক্ত লাগছে লোকটাকে দেখে একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে। কথা কাটাতে আরুশির দিকে ইশারা করে বলে… আরুশি মনে হয় আমাকে ডাকচ্ছে আপনি বসেন আমি আসচ্ছি।
ইয়ামিনা আমিরকে খেয়াল করে নি। আরুশি পাশে যেয়ে বাকি জনদের সাথে কথা বলচ্ছে।
পাশ থেকে আরুশির ফ্রেন্ডের কাজিন টয়াকে ফিসফিসিয়ে বলে… এত ছোট বয়সে বিয়ে হয়ে গেছে ভাবতে পারিস।
আরে ভাবি আমাদের এইজের। দেখতে ছোট লাগে।
যাই বলিস ভাবি কিন্তু দেখতে পুরা পুতুলের মত৷
ভাইয়া তো পঙু ভাইয়ার সাথে বনে কিভাবে রে।আমার মনে হয়না এ মেয়ে বেশি দিন টিকবে। কয়েকদিন পরই ছেড়ে চলে যাবে দেখিস।
এতক্ষন আমির কপালে আঙুল ঘষে সবই শুনছিল কেউ না শুনলেও লাস্ট কথাটা শুনে আমিরের রাগ চটে উঠে চোখ গুলা লাল হয়ে আসে। আমির ইয়ামিনার আচল ধরে হাল্কা টান দেয়।
আচলে টান পেয়ে ইয়ামিনা পিছনে ফিরে তাকায়।আমির ইয়ামিনার আচল ধরে আছে।ইয়ামিনা কিছু বলার আগে আমির বলে উঠে…
আমার ক্ষুধা লেগেছে৷ আমাকে ভেতরে নিয়ে যাও।
ইয়ামিনা কিছু না বলে আমিরকে রুমের ভেতর নিয়ে যায়। আপনি বসুন আমি আসচ্ছি।ইয়ামিনা যেতে নিলে আমির হাতটা ধরে ফেলে…
কোথায় যাচ্ছো?
আপনি না বলেছেন ক্ষুধা লেগেছে..
তোমার যাওয়া লাগবে না আমি সার্ভেন্টকে বলে দিয়েছি দিয়ে যাবে খাবার।ওরা যাওয়া না পর্যন্ত তুমি রুম থেকে বের হবা না।
কেন যাবো না যদি কিছু প্রয়োজন পরে আমাকে ডাকলে।
রাগে আমিরে হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় বেশ জোরে গলায় বলে..আমি একবার বলেছিনা না যেতে যাবে না বেস।
ইয়ামিনা একটু ভয় পেয়ে যায়। আমির বুঝতে পেরে নিজেকে শান্ত করে ঠান্ডা গলায় বলে… আমি যেখানে না বলেছি সেখানে যাওয়ার কোনো মানে হয়না আমি তোমার ভালোর জন্য বলছি।
ইয়ামিনা আর কিছু না বলে বারান্দায় চলে যায়। আমির একটা লম্বা শ্বাস ছাড়ে।।
🌸
🌸
কিছুক্ষন পর আরুশি রুমে আসে ইয়ামিনাকে না দেখে বারান্দায় উকি দেয়…
আরে ভাবি তুমি এখানে আমি তোমাকে সারা ঘর খুজে বেড়াচ্ছি। চলো তো
কোথায় যাব?
কোথায় মানে তোমার জন্য আমার ফ্রেন্ডসরা আসলো তোমাকে দেখবে বলে। আর তুমি এখানে বসে আছো। তারাতারি চলো।
আমির যেতে মানা করেছে বললে যদি আরুশি অন্য কিছু মনে করে। ইয়ামিনা কি বলবে বুঝতে পারচ্ছে না।আসলে আমার শরীরটা ভাল লাগছিলো না তাই এসে পরেছি। তোমার ফ্রেন্ড তোমার থাকা বেশি জুরুরি।
কি যে বলো আমার ফ্রেন্ড তো কি হয়েছে আমার তো সারাদিনই ওদের সাথে দেখা হয়। তোমার জন্যই তো ওরা এসেছে। চলো তো চলোই না। আরুশি ইয়ামিনার হাত ধরে টানচ্ছে…
ইয়ামিনা বার বার রুমে উকি দিচ্ছে আমিরকে কোথাও দেখচ্ছে না।
আচ্ছা আচ্ছা তোমার ভাইয়াকে কোথায় দেখেছো।
না ভাবি রুমে তো দেখলাম না হবে হয়তো কোথাও কোথায় যাবে এই অবস্থায় বলে ইয়ামিনাকে টেনে আরুশি নিয়ে যায়।
আরুশির টানাটানির কারনে ইয়ামিনার আঁচল কোমর থেকে কিছুটা সরে যায়।ইয়ামিনারও খেয়াল ছিল না।
ড্রইং রুমে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে আরুশির ফ্রেন্ড টয়া এসে বলে আরে ভাবি কোথায় ছিলা তুমি। এতক্ষন ধরে বসে আছি আসো একসাথে খাবো।
হটাৎ প্রচন্ড শব্দে ইয়ামিনা সহ বাকি সবাই পিছন ফিরে তাকায় পুরা ফ্লোরে কাচ গুরগুর হয়ে পড়ে আছে। আমির চোয়াল দাত মুখ শক্ত করে ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইয়ামিনা দৌড়ে যায়।কি ভাবে ভেঙেছে আপনার কোথাও লেগেছে কি।
খেয়াল ছিল না হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেছে৷
আসুন আমি ভেতরে দিয়ে আসি আপনাকে…
আমার পা গেছে হাত না। নিজে যেতে পারবো কারো সাহায্য লাগবে না বলেই আমির হাত দিয়ে চাকা ঘুড়িয়ে রুমে চলে যায়।
আমিরের প্রচন্ড রাগ লাগছে এত রাগ কখনো উঠেনি কেন এত রাগ উঠছে তার কারন সে নিজেও জানে না। সত্যি কি ইয়ামিনার জন্য রাগ উঠছে আমির মাথা হাত দিয়ে রেখেছে। রাগে আমিরের সারা মুখ লাল হয়ে আছে।।
ভাবি তুমি মন খারাপ করো না ভাইয়া একটু এরকম রাগ উঠলে কি বলে না বলে হুস থাকে না। আসলে ভাইয়া রাগটা খুব খারাপ যখন তখন রাগ উঠে যায়।
না আরু আমি কিছু মনে করিনি তুমি যাও ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলো আমি এগুলা পরিষ্কার করে নেই।
আরুশি চলে গেলে ইয়ামিনা পরিষ্কার করে নেয়। রান্না ঘরে যেয়ে এক কাফ কফি বানিয়ে রুমে যায়।
ইয়ামিনা আমির সামনে কাপা কাপা হাতে কফিটা ধরে কারন আমির এখন রেগে আছে যদি রাগে চটে ফেলে দেয়।কফিটা খান মাথা ঠান্ডা হবে….
আমির ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে কফিটা হাতে নেয় ইয়ামিনা একটু হাফ ছাড়ে।
আমির সামনে দিকে তাকিয়ে বলে.. শাড়ি যখন গায়ে ঠিক ভাবে রাখতে পারো না তখন পরো কেন। যে জিনিসটা পারো না সেটা করার কোনো মানে হয় না। জাস্ট ডিজগাস্টিং।
ইয়ামিনা বুঝতে পারেনি আমি ঠিক কি বুঝালো৷
.
.
.
চলবে….. 🌸
কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন..🌸
🌸#হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸
#লেখিকাঃআদিলা
#পর্বঃ১০
________________________🌸
সেদিনের পর থেকে ইয়ামিনা নিজের যতটকু সম্ভব আমিরের যত্নতে কোনো কমতি রাখে নি। সারাদিন হারভাঙা পরিশ্রম করে আমিরের সেবা করে গেছে। নিয়ম করে আমিরকে প্রতিদিন দুবেলা করে হাটাতো। দিন শেষে ইয়ামিনার কোমরে মাঝায় ব্যাথা হলে তা কখনোই প্রকাশ করত না। চেয়েও আমিরকে বুঝতে দিত না কারন আমির একবার জানতে পারলে কখনোও ইয়ামিনাকে নিজের সেবা করতে দিবে না অন্য কাউকে দিয়ে করাতো৷ যা ইয়ামিনা কিছুতেই চায় না। যাই হোক তাকে হার মানলে হবে না। আমিরকে ভালো করে তুলতে হবে। আমির মাঝে মাঝে ইয়ামিনাকে দেখে অবাক হতো এরকম মানুষ হতে পারে। এত সেবা করার পরও আমির ইয়ামিনার মুখে কখনও বিরক্তির ছাপটুকু দেখে নি। সবসময় মুখের মধ্যে একটা মিষ্টি হাসি নিয়ে রাখত। ইয়ামিনা কিছু না বললে আমির ঠিকই বুঝতে পেত ইয়ামিনার যে কষ্ট হয়। প্রতিদিন দু দু বার হাটানো কম কথা নয়। কিন্তু কেন জানি আমির চেয়েও না বলতে পারত না অন্য কাউকে সেবার জন্য। আমিরের যে অভ্যাস হয়ে গেছে ইয়ামিনাতে৷ ইয়ামিনার শরীরের মিষ্টি স্মেল, স্পর্শে এবং প্রতিটা কাজে। ইয়ামিনা ছাড়া আমিরের এখন কারো স্পর্শই ভাল লাগে না। তাই আমির যতটুকু সম্ভব পায়ের ভোরটা নিজে রাখা চেষ্টা করে। আমির ইচ্ছে করেই হাটতে চেত না কারন ইয়ামিনার কষ্ট হবে কিন্তু ইয়ামিনা শুনলে না জোর করে আমিরকে হাটাতো। আমির প্রতিদিন ইয়ামিনার নতুন নতুন প্রতিভা দেখে শুধু অবাক হতো। এক অন্যরকম অনুভুতিতে আবদ্ধ হতো।
সকালে আমির রুমে বসে লেপটপে কাজ করছিলো।।ফোন বাজতে ফোনটা কানে নেয়। মেজাজ একদম চটে আছে। বেশ জোরে গলায় আমির চিল্লিয়ে বলে…..
সমস্যা কি আপনাদের। শেয়ার মার্কেটের রেট এট বেড়েছে কিন্তু আমাদের কোম্পানিতে এত কম রেটে কিভাবে বিক্রি হচ্ছে।আমার পা ভেঙেছে এখনও বেঁচে আছি মরে যায় নি। আমি অফিস যায় না বলে আমার মাথার উপর চড়ে বসবেন ফাজলামি পেয়েছেন।আগে যে রেটে বিক্রি হতো সে রেটে বিক্রি হবে এর এক টাকাও বেশি না আর সব ডিটেইলস আমার ইমেইলে এখনি পাঠান। আমার প্রত্যেকটার ডিটেইলস চাই এট এনি কস্ট।
ইয়ামিনা গোসল করে বেড়িয়েছে। চুল থেকে চুয়ে চুয়ে কোমর বেয়ে পানি পরচ্ছে। ইয়ামিনা কিজানি খুজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমির হা হয়ে তাকিয়ে আছে আশেপাশ সব কিছু মাথা থেকে বের হয়ে গেছে।
ও পাশ থেকে ম্যানেজার হেলো স্যার বলেই চলচ্ছে আমিরের যেন হুসই নেই। সব রাগ যেন কোথায় ফুস।ইয়ামিনা এতক্ষনে খুজতে খুজতে রুম থেকে বের হয়ে গেছে….
হেলো স্যার শুনতে পারচ্ছেন হেলো…..
আমিরের ধ্যান ভাঙতে বলে.. ও হ..হ্যা শুনতে পারচ্ছি আপনি আমাকে সব ডিটেইলস গুলা পাঠান কুইক… বলে আমির ফোন কেটে দেয়।
একটা লম্বা শ্বাস ছাড়ে ইয়ামিনাকে এইভাবে ভেজা শাড়িতে দেখলে আমিরের সব কিছু যেন উল্টপাল্ট হয়ে যায়।
.
.
.
ভাইয়া ভাবি কোথায় ভাবিকে দেখাছো।আরুশি রুমে ডুকতে ডুকতে বলে।।
আমির লেপটপে কাজ করতে করতে বলে.. একটু আগে রুমে ছিল। হবে হয়তো রান্নাঘরে…
ধুর ভাবিকে একটা কাজের জন্য খুজে পায় না।
আমির আরুশির দিকে ব্রু কুচকে তাকায়। কেন কি এমন কাজ এত লাফালাফি করছিস…
ভাবিকে নিয়ে শপিং যেতাম। ভাবিতো তেমন বাহিরে বের হয়না। আমার ফ্রেন্ডসরাও যাবে তাই ভাবলাম নিয়ে বলার আগে আমির বলে উঠে কোনো দরকার নেই তুই তোর ফ্রেন্ড যাচ্ছিস তোর ভাবিকে কেন টানচ্ছিস।
কেন দরকার নেই ভইয়া?
আমি বলেছি তাই।
এমন করো কেন ভাইয়া ভাবি তো সারাদিন বাসায় বসে থাকে কোথাও যায় না ভাবিরো তো যেতে ইচ্ছে করে। যেতে দাও না।
আমির বেশ গম্ভীর গলায় বলে…আমি একবার না বলেছি তো তার উপর কোনো কথা না।
ভাইয়া তু আরুশি কিছু বলার আগে ইয়ামিনা রুমে এসে আরুশিকে দেখে বলে উঠে… কি হয়েছে তুমি এখানে কিছু লাগবে…
আরুশি ইয়ামিনাকে দেখে ইয়ামিমার হাত ধরে.. দেখোনা ভাবি ভাইয়া যেতে দিচ্ছে না কত করে বললাম তোমাকে নিয়ে যায় তুমি সারাদিন বাসায় থাকো কোথাও যাও না কিন্তু না বলো না ভাইয়াকে যাতে তোমাকে যেতে দেয়..
ইয়ামিনা আমিরে দিকে তাকায় আমির ভাবলেশহীন ভাবে লেপটপে বসে কাজ করচ্ছে। এমন ভাব আমির যেন কিছু শুনেই নি৷
আমির আরুশি দিকে হেসে বলে… আরু তুমি যাও তোমরা ফ্রেন্ডরা তো আছেই। তোমার ভাইয়া মানা করেছে নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে।আমি তো আগে অনেক ঘুরেছি তাই এখন আর মন বসে না এসবে মন খারাপ করো না আরু তুমি যাও ফ্রেন্ডের সাথে এনজয় করো।
আরুশি কিছু না বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায়।
এই নিন ধরুন আমির তাকিয়ে দেখে ইয়ামিনা এক হাতে গ্লাস আর ওষুধ নিয়ে দাড়িয়ে আছে৷
আমির গ্লাস আর ওষুধ হাতে নিয়ে ইয়ামিনার দিকে তাকায় কিন্তু ইয়ামিনা মুখে কোনো রাগ দেখতে পায়না আমির ভেবেছিল যেতে না দেওয়া ইয়ামিনা হয়তো মনখারাপ করবে কিন্তু তেমন কিছুই না।
___________________🌸
ড.আবির বেশ গম্ভীর ভাব নিয়ে আমিরকে দেখে যাচ্ছে। এমন একটা ভাব যেন খুব সিরিয়াস কিছু। আমিরের চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে ওঠেছে। বিরক্ত নিয়া ড.আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আমিরকে ঘিরে ইয়ামিনা পাশে জাফরা ভাবি বসে আছে। জাবির বিজনেসের কাজে কয়েকদিনের জন্য বাহিরে গেছে। ইয়ামিনা বেশ আগ্রহী নিয়ে বসে আছে আবিরের কথা শোনার জন্যে ।
ড.আবিরের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। বেশ হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলে… এতটা ইনপ্রুফ অসম্ভব। এটা তো মিরাক্কেল ছাড়া কিছুই না। মি.আমির দিন দিন আপনার অনেক ইনপ্রুফ হচ্ছে। এভাবে চললে আর বেশি দিন না আল্লাহর রহমতে খুব শীগ্রই হাটতে পারবেন।আমির ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আছে। কথাটা শুনে আমিরের থেকে ইয়ামিনা বেশি খুশি হয়েছে। চোখ দুটো ছল ছল করচ্ছে। জাফরা ভাবি জাবিরকে খবর শুনানোর জন্য চলে যায়।আচ্ছা এখন তাহলে উঠি আমি ওষুধ আর হাটাটা সব যেন নিয়মিত হয় বলে ড. আবির চলে যায়।
ইয়ামিনার ফোন বাজছে সেদিকে তার খেয়ালি নেয়। আমির একটু জোরে গলায় বলে… তোমার ফোন
বাজচ্ছে অনেক্ষন ধরে ফোনটা পিক করো।
ইয়ামিনা ফোনটা পিক করে কানে নিতেই নিমিষেই ইয়ামিনার ছলছল চোখে পানি এসে ভোর করে। কান থেকে ফোনটা সরিয়ে নেয়।স্টেচু হয়ে দাড়িয়ে আছে ইয়ামিনা।
আমির একটু অস্থির হয়ে পরে.. কি হলো এমন করে দাড়িয়ে আছো কেন? কে ফোন দিয়েছে কি বলেছে কি হলো বলো। আমির এখন টেনশনে পড়ে গিয়েছে… এই বলবে তো কে ফোন করেছে..
ইয়ামিনা হটাৎ ডুকরে কেদে দেয়। আমিরের সামনে হাটু ঘেড়ে বসে পড়ে…
প্লিজ আমাকে বাহিরে যাওয়ার পারমিশনটুকু দিন। আমাকে কিছুক্ষনের জন্য বাহিরে যেতে দিন। প্রমিস কিছুক্ষনের জন্য যাবো। যাবো আর আসবো।
প্লিজ রিলেক্স কি হয়েছে সেটা বলো.. দেখ চুপ করে থেকো না আরলি বলো..
ইয়ামিনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে উঠে..ব..ব..বাবা অনেক অসুস্থ। প্লিজ আমকে যেতে দিন। আমি সত্যি পালাবো না। বিশাস রাখুন। আপনি পারমিশন না দিলে গার্ডসরা আমাকে বের হতে দিবে না। আমকে যাওয়ার পারমিশন টুকু দিন। আর কোনো দিন আপনার কাছ থেকে কিছু চাইবো না।
আমিরের খুব খারাপ লাগচ্ছে সাথে একটু একটু ভয় হচ্ছে। যেতে দিতে ইইছে করছে না ইয়ামিনাকে নিজের কাজ থেকে। আমিরের যে খুব বলতে ইচ্ছে করছে আমাকে সাথে নিয়ে চলো। কিন্তু সেটা আমিরের নিতান্তই চিন্তা।
উঠো এভাবে ভেঙে পড়ো না। আমির ইয়ামিনাকে বাহু ধরে উঠতে বলে। আমির ইয়ামিনার কান্না মুছে দিয়ে এত স্ট্রোং মেয়ে এভাবে ভেঙে পরলে হবে…. আমির বেশ শান্ত গলায় বলে.. সাবধানে যেও আমাকে কল করে জানিও
ইয়ামিনা আমিরের দিকে অশ্রু ভেজা চোখে তাকিয়ে বলে.. আমি আসবো আর যাবো।বলেই ইয়ামিনা কোনো রকম উঠে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। আমির হাতটা অটোমেটিক বুকের পা পাশে চলে যায় .. প্লিজ রিলেক্স শান্ত হো। ক্ল্যাম ডাউন ও আসবে।।
.
.
.
.
.
এদিক দিয়ে সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলচ্ছে কিন্তু ইয়ামিনার কোনো খবর নেই। ফোন দিয়েছে আমির নিজেই কিন্তু ফোন বাজলেও রিসিভ হচ্ছে না।এদিকে আমিরের শত্তু ইয়ামিনার যদি কোনো ক্ষতি করে ফেলে অন্য ইয়ামিনা যদি নিজে ফিরে না আসে তখন আমির মাথা হাত দিয়ে রেখে কোনো কিছুই মাথায় সে নিতে পারচ্ছে না।
অন্যদিকে দুপুর ঘড়িয়ে বিকেল বিকেল ঘড়িয়ে সন্ধ্যা সন্ধ্যা থেকে রাত হতে চলচ্ছে আমির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে নয়টা বাজতে চলচ্ছে। কিন্তু ইয়ামিনা এখনো আসেনি। ফোনটা আগে রিং হলেও এখন বন্ধ দেখাচ্ছে। আমিরের ভেতরে ভয়টা আরও ঝেকে বসেছে। আজ নিজের নিজেরই প্রতি রাগ লাগচ্ছে৷নিজের এই অসহায়ত্বের উপর প্রচন্ড জেদ উঠচ্ছে।ইচ্ছে করচ্ছে সব কিছু ভেঙে ঘুর ঘুর করে দিতে।আমির রেগে দেওয়ালে পাঞ্চকরে একটা। তারপরও রাগ যেন কমচ্ছে। ইয়ামিনা তাহলে সত্যি ছেড়ে….না ওতো আমাকে কথা দিয়েছিল ফিরবে।। ও ওর প্রতিশ্রুতি এভাবে ভেঙে ফেলবে। না আমি আর চিন্তা করতে চায় না।
🌸
🌸
🌸
রুমে ঘুট ঘুট অন্ধকার। এই অন্ধকারটাকে আমিরের বেশ আপন মনে হচ্ছে। এই অন্ধকার যতই অন্ধকার হোক না কেন কখনও প্রতারনা করে না। সবসময় সাথেই থাকে৷ হটাৎ লাইট জ্বলে উঠলে আমিরের চোখটা ভারি হয়ে আসে। এতক্ষন অন্ধকারে থাকার কারনে চোখে কিছুটা ঝাপসা দেখছে আমির।ঝাপসা চোখে ইয়ামিনার ঘামে মাখা মুখটা স্পষ্ট দেখতে পায় আমির। ইয়ামিনা আঁচল দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে আমিরের সামনে দাড়ায়।
কি হলো আপনি রুমের লাইট অফ করে রেখেছেন কেন?আমির ওইযে ইয়ামিনার দিকে দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে। এক মুহুর্তের জন্য চোখ সড়ায় নি৷ একটা পলকও ফেলেনি।
ইয়ামিনা কিছুবলার আগে আমির ইয়ামিনার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। টান পেয়ে ইয়ামিনা আমিরের বুকে হুমরি খেয়ে পরে। আমির ইয়ামিনার গলায় মুখ গুজে নেয়। ইয়ামিনা গলায় গরম কিছু পরার অনুভব করে। তাহলে কি আমির কাদচ্ছে কিন্তু কেন..ইয়ামিনা নিজের অজান্তেই আমিরকে জড়িয়ে ধরে….
আমির কতটা দুর্বল হয়ে পরেছে ইয়ামিনার প্রতি সেদিনই বুঝেছিল। আমির বুঝে গিয়েছিল ইয়ামিনাকে ছাড়া তার চলবে না। ইয়ামিনাকে সে নিজের গভীরে জড়িয়ে ফেলেছে।চাইলেও ইয়ামিনার ভাগ সে কাউকে দিতে পারবে না। প্রতিটা পদে ক্ষনে শুধু তার ইয়ামিনাকেই চায়। ভালোবাসা আছে নাকি আমির তখনও জানতো না। শুধু জানতো প্রতিদিন সে নতুন করে ইয়ামিনার মায়া জড়াচ্ছিল।সে মায়ার গভীরতা কতটা ভয়ংকর তা আমির হারে হারে বুঝতে পারত কিন্তু আমির কিছুই বলতে পারতো না।আমিরের প্রচন্ড রাগ উঠলে ইয়ামিনার চেহারার দিকে তাকালে সব রাগ পানি হয়ে যেত। চেয়েও না রাগ করতে পারতো না৷
.
.
.
চলবে…🌸