হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸,পর্বঃ১১,১২,১৩

হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸,পর্বঃ১১,১২,১৩
লেখিকাঃআদিলা
পর্বঃ১১

আমির কতটা দুর্বল হয়ে পরেছে ইয়ামিনার প্রতি সেদিনই বুঝেছিল। আমির বুঝে গিয়েছিল ইয়ামিনাকে ছাড়া তার চলবে না। ইয়ামিনাকে সে নিজের গভীরে জড়িয়ে ফেলেছে।চাইলেও ইয়ামিনার ভাগ সে কাউকে দিতে পারবে না। প্রতিটা পদে ক্ষনে শুধু তার ইয়ামিনাকেই চায়। ভালোবাসা আছে নাকি আমির তখনও জানতো না। শুধু জানতো প্রতিদিন সে নতুন করে ইয়ামিনার মায়া জড়াচ্ছিল।সে মায়ার গভীরতা কতটা ভয়ংকর তা আমির হারে হারে বুঝতে পারত কিন্তু আমির কিছুই বলতে পারতো না।আমিরের প্রচন্ড রাগ উঠলে ইয়ামিনার চেহারার দিকে তাকালে সব রাগ পানি হয়ে যেত। চেয়েও না রাগ করতে পারতো না৷

আমির ছাদে দেওয়ালের সাথে ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমির এখন ধরে ধরে দাড়াতে পারে কিন্তু হাটার জন্য ইয়ামিনার সাহায্য করতে হয়৷ ইয়ামিনা গাছে পানি দিচ্ছে আমির তা এক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে। কেন জানি আমিরের ইয়ামিনার দিকে চোখ পড়লে চোখ সরাতে ইচ্ছে করে না৷ ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে হাসচ্ছে আমির।

কি হলো খারাপ লাগছে বসবেন।ইয়ামিনার কথায় আমিরের ধ্যান ভাঙে। কখন যে ইয়ামিনা আমিরের সামনে এসে দাড়িয়েছে আমিরের খেয়ালি ছিল না৷

না আমি ঠিক আছি৷ একটু হাটবো হাটাবে৷

ইয়ামিনা মুচকি হাসি দিয়ে বলে… আমাকে ধরুন শক্ত করে।
আমির ইয়ামিনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ভর যথা সম্ভব আমির নিজেই রাখার চেষ্টা করচ্ছে৷ইয়ামিনা না বললেও আমির বুঝে ইয়ামিনার পক্ষে এত ভর নেওয়া সম্ভব না।বাতাসে ইয়ামিনার চুল গুলো আমিরের মুখে বার বার এসে পড়চ্ছে। ইয়ামিনা আমিরকে হাটাচ্ছে আর এটা সেটা বলচ্ছে। আমিরের সেদিকে খেয়ালিনেই আমির তো ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আছে ইয়ামিনার চুলের ঘ্রাণ নিতে ব্যাস্ত।
হটাৎ ইয়ামিনা বলে উঠে …. এই এই আপনি এখানে একটু দাড়ান।
কেন কি হয়েছে। তোমার কোথাও লেগেছে। ব্যাথা পেয়েছো।
না না আপনি দাড়ান। আমির দেওয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে ভর রেখে দাড়ায়।ইয়ামিনা একটু কাছে যেয়ে পানির পাইপ টা হাতে নেয়। পাইপ বন্ধ করা হয়নি গাছে পানি দেওয়ার সময় খেয়ালি ছিল না। ইয়ামিনা এক হাতে পাইপটা নিয়ে একটু ঝুকে অন্য হাত দিয়ে কল্টা বন্ধ করার চেষ্টা করচ্ছে এত টাইট হয়ায় পারছে না।হটাৎ ইয়ামিনার খেয়াল হতেই পিছে ফিরে তাকায়। ইয়ামিনার হাতে পাইপ টা আমিরের দিকে মুখ করে থাকার কারনে আমির পুরো ভিজে গেছে আমির রাগি রাগি ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে ইয়ামিনার দিকে। ইয়ামিনা তারাতারি করে পাইপটা নিচে নামিয়ে ফেলে…
সরি সরি আমি খেয়াল করি নি যে পাইপের মুখটা আপনার দিকে ছিল। ইয়ামিনা আর কিছুই বলতে পারলো আমিরের অবস্থা দেখে খিল খিল করে হেসে দেয়।
আমির এতক্ষন রাগ হয়ে থাকলে ইয়ামিনাকে এইভাবে হাসতে দেখে আমিরের ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। রোদ্রের মধ্যে ইয়ামিনার মুখশ্রী আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে৷ রোদের তাপে ইয়ামিনার গাল দুটো হাল্কা গোলাপি বর্ণ ধারন করেছে। ইয়ামিনাকে দেখতে ছোট্ট পুতুল লাগচ্ছে৷ আমির মুচকি হাসি দিয়ে ইয়ামিনার হাত থেকে টান দিয়ে পাইপটা নিয়ে ইয়ামিনাকে ভিজিয়ে দেয়। ইয়ামিনা আমিরের এমন করাতে চমকে উঠে।
পরনে মিষ্টি কালারের কামিজটা অনেকটা ভিজে গেছে। ইয়ামিনা কোমরে দুহাত দিয়ে বলে…
এটা কি হলো পুরো ভিজিয়ে দিয়েছেন আমাকে।

এখন বুঝো আমাকে ভেজানোর সময় খেয়াল ছিল না।

আমি না দেখে আপনাকে ভিজিয়ে দিয়েছি। খেয়াল ছিল না। আর আপনি ইচ্ছে করে আমাকে ভিজিয়ে দিয়েছেন৷ ইয়ামিনা শরীর থেকে পানি জড়াচ্ছে আর রাগে বির বির করচ্ছে
আমিরের ইয়ামিনার এইভাবে বাচ্চাদের মত ফেশ দেখে হেসে দেয়৷
ইয়ামিনা রাগ নিয়ে বলে… আপনি থাকেন দাড়িয়ে এখানে। আমি গেলাম এটাই আপনার শাস্তি।

আরে আরে শোনো রাগ করচ্ছো কেন। ইয়মিনা চলে যেতে নিলেই আমির ধরতে যেয়ে পড়ে যেতে নেয় ইয়ামিনা দৌড়ে আমিরকে নিজের সাথে ঝাপটে ধরে।

কি করচ্ছেন কি পড়ে যাবেন তো।
আমি পড়ে গেলে তোমার কি। তুমি তো আমাকে রেখে চলে যাচ্ছিলে।
হয়েছে আপনার সাথে লাগার ইচ্ছে নেই আমার। ধরুন আমাকে। আমির ধরতেই ইয়ামিনা আমিরকে ধরে নিচে নিয়ে আসে।
.
.
.

কাচের জানালার সামনে গ্রিল ধরে দিহান দাড়িয়ে দাড়িয়ে বেস্ত নগরীটাকে দেখে চলচ্ছে। কত সুন্দর ভাবে ব্যস্ত দিনে এই নগরীটা মানুষকে ব্যাস্ত করে তুলচ্ছে। সবাই সবার মত করে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।কিন্তু দিহান। দিহান যে আজও পারে নি ইয়ামিনাকে ভুলতে৷শুধু দিন গুনচ্ছে কখন শেষ হবে এই অপেক্ষার প্রহর। কখন ইয়ামিনাকে আবার নিজের করে পাবে।এই সময়টা যে দিহানের কাছ থেকে যেতে চাচ্ছে না। কিন্তু এই অশান্ত মনটা যে অপেক্ষা করতে নারাজ।দিহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোনটা হাতে নেয়।

আপনি চেঞ্জ করে নিয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে আসচ্ছি। ইয়ামিনা আমিরকে টিশার্ট দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আমির বেডের পাশে হুইল চেয়ারে বসে ছিল।আমির তোয়ালেটা নিয়ে হাত দিয়ে মাথার একসাইড মুছচ্ছে।। হটাৎ ইয়ামিনার ফোনটা বেজে ওঠে আমির মাথা মুছতে মুছতে বেডের দিকে তাকায় ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ফোনের স্কিনে “DG” কেউ একজন ফোন করেছে। দিজি আবার কে ফোনটা ধরবে কি ধরবে না আমির একটু চিন্তায় পড়ে যায়। ভাবতে ভাবতে ফোনটা রিং হয়ে কেটে যায়। দ্বিতীয় বার ফোন দিতেই আমির ফোনটা ধরে কানে নিতেই ওপর পাশ থেকে….
শুধু নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর
ইয়ুমনি…..
কি হলো চুপ করে থাকবে৷ একটা বার কি আমার সাথে কথা বলা যায় না। খুব বেশি অন্যায় করে ফেলেছি ইয়ু। বিশ্বাস করো তোমাকে ভাল রাখার জন্যই আমি এত কিছু করেছি। চিন্তা করো না ইয়ু খুব শীগ্রই তোমাকে নিজের করে নিব।হ্যালো

আমিরের চোখ দুটো ক্রমশো লাল হয়ে আসে।রাগে ফোনটা ফ্লোরে ছুরে মারে যার কারনে ফোনটা ভেঙে দুভাগ হয়ে যায়। আমির কিছুতেই নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারচ্ছে না। রাগ লাগচ্ছে প্রচন্ড রকম রাগ৷ আমির তোয়ালেটা বিছানায় ছুড়ে মারে।

না ইয়ামিনা ওই দিহানের কাছে যেতে পারে না।সব কিছুর সাক্ষী রেখে আমি ওকে বিয়ে করেছি। ও তো আমার। নাহহহহহহহহহ। আমার এত রাগ লাগচ্ছে কেন। হোয়াই কেন। রাগে আমিরে সমস্ত শরীর কাপচ্ছে। আ..আ..আমি কি ইয়ামিনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। রাগে আমির কপালে আংগুল ঘষচ্ছে।
এতক্ষন ইয়ামিনা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গেছে। পায়ের কাছে ফোনটা ভাঙা দেখে হাতে তুলে নেয়। আমিরের সামনে দাড়ায়।
ফোনটা ভেঙেছে কিভাবে..
আমির লেপটপ হাতে নিয়ে ওপেন করতে করতে বলে… আমি কি জানি পড়ে গেছে হয়তো।
পড়ে যাওয়ার তো কথা না আচ্ছা যাই হোক আপনাকে বলে গিয়েছিলাম ভেজা চুলে না থাকতে। মাথাটাও ঠিক ভাবে মুছতে পারেন না । চুল থেকে টপ টপ পানি পড়চ্ছে।
আমির কোনো কথা না বলে লেপটপে কাজ করেই চলচ্ছে । ইয়ামিনা বিছানা থেকে তোয়ালেটা হাতে নিয়ে আমিরের মাথা মুছতে শুরু করে।
ইয়ামিনার হাতের স্পর্শে আমির চোখটা বন্ধ করে নেয়।
ইয়ামিনা তখন ধরে কথা বলে চলচ্ছে। ইয়ামিনা আমিরের সামনে দাড়িয়ে লেপটপটা হাত থেকে নিয়ে নেয়। কি হলো আমি কিছু বলচ্ছি আপনি কি শুনতে পারেন নি। আচ্ছা বেশ শুনা লাগবে না খেতে চলুন।
আমির চুপ করে শুধু ইয়ামিনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
_________________________🌸🌸

আমির চুপচাপ বসে খাচ্ছে আর ইয়ামিনা খাবার বেড়ে দিচ্ছে আমিরকে। ইয়ামিনা ভালই করেই বুঝচ্ছে আমিরের কিছু নিয়ে রাগ উঠচ্ছে কিন্তু কারন কি ইয়ামিনার জানা নেয়।

দূর থেকে কেউ একজন লোলুপ দৃষ্টিতে ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে ইয়ামিনার খেয়ালই নেয়। হাত দুটো মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়।লোভ কাতুরে ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আছে ইয়ামিনাকে একটিবার কাছে পাওয়ার নেশায়।।
.
.
.
চলবে……🌸🌸

🌸#হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸

#লেখিকাঃআদিলা
#পর্বঃ১২
_________________________🌸
ইয়ামিনা বেসামাল ভাবে সামনের দিকে ছুটে চলছে। আশেপাশে কোনো কিছুর হুস তার নেই। গায়ের ওরনাটা গায়ে ঠিক ভাবে নেই অনেকটা সরে গেছে।সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে ইয়ামানার শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে।কপাল বেয়ে টপ টপ করে ঘাম ঝরচ্ছে। ইয়ামিনা অস্থির ভাবে মেইন দরজার দিকে ছুটছে। কিন্তু শেষ রক্ষাটুকু হলো না। পিছন থেকে খপ করে কেউ ইয়ামিনার চুলের মুঠি ধরে টান মারে। ইয়ামিনা ব্যাথায় আহহহ করে উঠে।

কিরে কই পাল্লাচ্ছিস৷ এতই সহজ পালানো আমার কাছ থেকে। আজকের এই দিনটির জন্য কত ঝল্পনা কল্পনা করে রেখেছি তোকে একরাতের জন্য নিজের করে পাওয়ার। এক রাতের জন্য হলেও তোকে চাই আমার। বলেই ইয়ামিনার গায়ের থেকে ওরনা ছুড়ে মারে৷
ইয়ামিনা চুল থেকে লোকটার হাত ছাড়াতে কিল ঘুষি খামচি যা পারচ্ছে দিয়ে চলচ্ছে। ছাড় আমাকে জানোয়ার কথাকার৷ তোদের মত কাপুরষরাই এসব পারে তোদের মত কুলাঙ্গার যে নারীদের পেট থেকে জন্ম নেয় বলতে আমার ঘেন্না হয়। ছাড় জানোয়ার।
ইয়ামিনা নিজেকে ছাড়ানোর যথা সম্ভব চেষ্টা করচ্ছে।

কিরে মুখে এত খই কিভাবে আসে তোর।।আজ তোর এমন অবস্থা করবো না। বলার জন্যে এই মুখ তোর থাকবে না। এই শরীর আর শরীর থাকবে না। বকেই লোকটা বিশ্রী ভাবে হেসে উঠে।ইয়ামিনা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করচ্ছে।
ইয়ামিনা হাপিয়ে উঠেছে।চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়চ্ছে। চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। ধস্তাধস্তি কারনের ইয়ামিনা জামার হাতা ছিড়ে গিয়ে হাত ছিলে সেখান থেকে রক্ত বেয়ে পরচ্ছে সাদা হাতে রক্ত জমাট বেধে কালশিটে দাগ পড়ে গেছে।

একপর্যায়ে ইয়ামিনা না পেরে আকুতি করে উঠে প্লিজ রুহান ভাইয়া আপনি তো আমার ভাইয়ের মত আমার এত বড় সর্বনাশ করেন না। ভাইয়া প্লিজ আমি আপনার কাছে হাত জোড় করে বলচ্ছি।

রুহায় উচ্চস্বরে বাজে ভাবে হেসে উঠে… কিসের ভাই হ্যা। একটু আগে তো ঠিকি তেজ দেখাচ্ছিলি।কান খুলে শুনে রাখ আজ এক রাতের জন্যে হলেও তো বলার আগে কেউ রুহানের মাথায় ফুলদানি ছুড়ে মারে।বেশ জোরে মারার কারনে রুহানের হাত আলগা হয়ে আসে। এই সুযোগে ইয়ামিনা রুহান নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দেয়। বেসামাল ভাবে ধাক্কা লাগার কারনে রুহান মাটিতে পড়ে যায়। মাথার পিছনে হাত দিয়ে দেখে রক্ত।
পিছন থেকে আমিরের জোড়ে চিৎকারে রুহান পিছন ফিরে তাকায়….
আমির পিলার ধরে কোনো রকম দাড়িয়ে আছে… রাগে আমিরের চেহারায় হিংস্রত্ব ধারন করেছে। চোখ গুলো লাল হয়ে ভয়ংকর ভাবে ফুলে আছে। সাদা পাঞ্জাবিতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। পা ছিলে গিয়ে রক্ত পড়ে ফ্লোর ভেসে গেছে। আমিরের সেদিকে খেয়ালি নেয়…..

কিছুক্ষন আগে…….

আমির বারান্দায় বসে আছে। চিন্তায় আমিরের মাথা ধরে গেছে। ইচ্ছে করচ্ছে হাতের কাছে যা পায় সব ছুড়ে ভেঙে ফেলতে। আমির নিজের চুল টেনে ধরে মাথা নিচু করে আছে।দিহানের কথা গুলো আমিরের কানে বাজচ্ছে।
ইয়ামিনা আমিরের পিছনে এসে দাড়ায়। আমিরের ঘাড়ে হাত রাখতে আমির ইয়ামিনার দিকে মাথা তুলে তাকায়। আমিরের চাহনিতে আকুতি দেখতে পায় কিন্তু কিসের সেটা ইয়ামিনার জানা নেই। চোখাচোখি হতে ইয়ামিনা চোখ সরিয়ে নেয়।
কি হলো আপনার শরীর খারাপ করচ্ছে।

আমির একখনো ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আছে।
কি হয়েছে সকাল ধরে আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। কি হয়েছে কি আমাকে বলবেন….

আমির সামনের দিকে তাকিয়ে বলে…আমার মাথাটা ধরে আছে মাথাটা একটু চুল গুলো টেনে দিবে.. আমির চোখটা বন্ধ করে নেয়।
ইয়ামিনা আমিরের পেছনে দাড়িয়ে মাথা আলতো করে চুল গুলো টেনে দিচ্ছে। বেশ কিছুক্ষনপর আমির চোখ খুলে তাকায় গম্ভীর গলা বলে…
আমি সুস্থ হয়ে গেলে কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে… সত্যি কি চলে যাবে..

হটাৎ এমন কথা ইয়ামিনার হাত আমিরের মাথা থেকে সড়িয়ে নেয়। ইয়ামিয়া বেশ ইতস্তত বোধ করচ্ছে এমন কথায়।ইয়ামিনা কথা ঘুরানোর জন্য বলে..আ..আপনি এখনে থাকুন আমি কফি বানিয়ে নিয়ে আসচ্ছি। খেলে কিছুটা ভাল লাগবে বলে ইয়ামিনা চলে যেতে নিলে ইয়ামিনা হাতে টান খেয়ে
পিছন ফিরে তাকায়।ইয়ামিনার হাত ধরে রেখেছে আমির।
প্লিজ আমি শুনতে চায়…
ইয়ামিনার শ্বাসের গতি বেসামাল ভাবে উঠানামা করচ্ছে আর কিছু না বলে ইয়ামিনা আমিরের হাত ছাড়িয়ে রুম থেকে বের হয় কিচেনে চলে যায়।।

ইয়ামিনা হাত দিয়ে চুলে খোপা বেধে ভাল করে মাথায় গোমটা দিয়ে নেয়। কিচেনে গিয়ে চুলোয় কফির পানি বসায়… বাসায় বলতে গেলে কেউ নেই। জাফরা ভাবির মা অসুস্থর কারনে ভাবি কাল বিকেলে ভাইয়ার সাথে মার বাসায় চলে গেছে। আসতে আসতে রাত হবে। ভার্সিটিতে থেকে টুরে নিয়ে যাবে যার কারনে আরুশি সকাল সকালই চলে কাপড় ব্যাগ গুছিয়ে ভার্সিটিতে চলে গেছে।।।
বাসায় শুধু ইয়ামিনা আর আমিরই আছে।

ইয়ামিনা পানিতে কফি পাউডার মিশাতে কেউ পিছনে ইয়ামিনার গা ঘেষে দাঁড়ায়। এতটাই কাছে দাড়ায় যে ইয়ামিনার কানে লোকটার নিশ্বাসের শব্দ বার বার ধাক্কা খাচ্ছে।লোকটা কোমড়ে হাত রাখতে ইয়ামিনা চমকে পিছন ফিরে লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে পরে।
সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে রুহান ভাইয়া…
ইয়ামিনার কফি মগটা হাত থেকে পড়ে যায়..

আমির রুমে হইল চেয়ারে বসে আছে। আমার প্রশ্নের উত্তর তোমাকে দিতে হবে আমি সত্যি পাগল হয়ে যাবো ইয়ামিনা। এতক্ষন লাগে একটা কফি আনতে আমিরের প্রচন্ড রাগ উঠচ্ছে। হটাৎ কিছু পড়ার আওয়াজে আমির ইয়ামিনাকে ডাক দেয় কোনো সাড়া না পেয়ে আমির নিজেই একহাত দিয়ে চেয়ার ঘুড়িয়ে রুম থেকে বের হয়।

রুহান বাজে হাসি দিয়ে ইয়ামিনার মাথা থেকে পা পর্যন্ত তাকায়….পুরায় রসের দোকান৷।কত দিন ধরে এমন একটা দিনের অপেক্ষা ছিলাম। আজ ফাইনালি। বিয়ের এতদিন হয়ে গেলো ওই আমির তো মনে হয় এখনো তোমাকে সুখ দিতে পারেনি চিন্তা করোনা সুইটহার্ট আমি আজ সারারাত পুষিয়ে দিব। তোমারও তো ইচ্ছে হয় গো….

রুহানের কথা শুনে ইয়ামিনার সাড়া শরীর রিরি করে ওঠে।। মানুষের এত রুপ আছে তা একাকিত্ব না হলে বুঝা যায় না। এই মানুষটাকে আমির ও তার পরিবার কত আপন করে রেখেছে। ইয়ামিনার ভাবতে চোখ ভর্তি জল চোখে থৈ থৈ করচ্ছে৷

ভাইয়া প্লিজ আমি আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি এমন কিছু বলেন না যাতে সেটাও না থাকে…
রাখ তোর সম্মান আমার তোর শরীর পেলেই হয় বলে ইয়ামিনার দিকে আগাচ্ছে…

রুহহহহহহহহহহানননন..
এমন চিৎকারে রুহান আতকে পিছন ফিরে তাকায়.. রক্ত দু জোড়া চোখ রুহানের দিকে হিংস্র ভাবে চেয়ে আছে। মনে হয় এখনি চোখ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়বে।।

তোর সাহস কিভাবে হলো ওকে এসব বলার। একবার ও চিন্তা করিস নি এর পরিনাম কি হতে পারে।তুই ভুলে গিয়েছিস এই আমির আবরার কি। তোকে নিজের পরিবারের মত আপন করে রেখেছি। নিজের ভাইয়ের মত দেখেছি। আর আজ তুই

রুহান বড় সড় ঢোক গিলে বেয়াহার মত উচ্চ শব্দে হেসে উঠে…. ভাই হাহ!!! ভাই নাকি নিজের সার্ভেন্ট করে রেখেছিস। যখন যা মন চাই আমাকে দিয়ে তাই করাবি। আরে রাখ তোর ভাই চোখের সামনে এমন জিনিস দেখলে কে ঠিক থাকে বল… বাসর করতে পারিস নি তো কি হয়েছে দেখার সাধ তোর মিটিয়ে দেব চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারবি না। এ ভাঙা পা নিয়ে আসতে আসতে আমাদের বাসর হয়ে যাবে বলেই ইয়ামিনার দিকে এগুতেই ইয়ামিনা স্টিলের খুন্তি দিয়ে রুহানের মুখে আঘাত করে দৌড় আমিরে পিছনে আমিরের কাধ খামচ্ছে ধরে দাড়ায়। আমির ইয়ামিনার হাতের উপর হাত রেখে শক্ত করে চেপে ধরে।

দেখ রুহান আমার সাথে যা করার কর ইয়ামিনা গায়ের হাত দিলে তোর হাত আমি কেটে টুকরো টুকরো করে কুকুরদের খাওয়াতে দুবার ভাবব না।

রুহানের যেন আমিরের কথা কানেই গেল না। ইয়ামিনা হাত ধরে সামনে টানতে থেকে। ইয়ামিনা এক হাত দিয়ে আমিরের পাঞ্জাবী ধরে রেখেছে। পাঞ্জাবি ছিড়ে যাচ্ছে তার পর ইয়ামিনা খামচে ধরে রেখেছে।
আমির দুহাত দিয়ে রুহানকে ধাক্কাছে। ছাড় বলছি তোর সাহস কিভাবে হলো ওর গায়ে হাত দেওয়া। রুহান না পেরে দুহাত দিয়ে আমিরকে ধাক্কা দিয়ে ইয়ামিনাকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়া আসে। আমির পরতে পরতে কোনো মতে সামলে রুহানকে টেনে কলার ধরে বসেই মুখে কয়েকটা পাঞ্চকরে রুহানের নাক থেকে রক্ত ঝরচ্ছে পাশ থেকে রুহান ইয়ামিনার হাত এমন ভাবে খামছে ধরেছে নক ইয়ামিনার হাতে একদম গেথে গেছে তারপরও রুহান হাত ছাড়চ্ছে না। ইয়ামিনা প্রানপনভাবে ছাড়ানোর চেষ্টা করচ্ছে। আমির রুহানের গলা চেপে ধরে রুহান না পেরে চুলার ওপর হাত হাতরাতে হাতরাতে ছূড়ি পেয়ে যায়। বেচোটে আমিরের হাতে কয়েকটা ফোস দেয়। আমিরের হাত থেলে গড়গড় করে রক্ত বেয়ে পরচ্ছে।আমির তার পরও রুহানের গলা চেপে ধরে আছে। রুহানের যেন প্রান যায় যায় অবস্থা। আর না পেরে রুহান আমিরে পেটে ছুড়ি দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করছে ইয়ামিনা বাধা দিতে ইয়ামিনার হাতেও কয়েক ঘা লেগেছে ।
আমিরের হাত আল্গা হয়ে আসতে রুহান স্বজরে একটা কিছু দিয়ে আমিরের মুখে ভারি দেয় আমির চেয়ার ধরে পড়ে যায়। রুহান ইয়ামিনাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমির কোনো মতে চেয়ার ধরে পায়ের উপর ভোর দিয়ে ঝাপটে রুহানের গায়ের কলার ধরে।

রুহান ইয়ামিনাকে ছেড়ে দে ….

আমিরের সাথে রুহানের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেছে আমির কোনো রকম রুহানকে ধরে আছে বার বার পড়ে যাচ্ছে তারপর রুহানের পায়ের সাথে পা পেছিয়ে দাড়িয়ে রুহানকে মেরে চলচ্ছে রুহান ও কম না আমিরকে উপর যা পাচ্ছে তা দিয়ে আঘাত করচ্ছে। আমির চিৎকার দিয়ে ইয়ামিনাকে বলে উঠে…সব সময় তোমাকে বাচানোর জন্য আমি থাকব না নিজেকে নিজে সেফ করো। পালাও এখান থেকে যাওঅঅঅঅঅঅঅঅ
ইয়ামিনার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আমিরের অবস্থা দেখে ইয়ামিনা আরও কেদে দেয়। কি করবে বুঝতে পারচ্ছে না।ইয়ামিনার হেচকি উঠে গেছে।

আমির শুধু চিৎকার দিয়ে বলেচ্ছে কি হলো যাও আমি ওকে বেশিক্ষন ধরে রাখতে পারবো। আমার চিন্তা করো না আমার কিছু হবে না নিজেকে বাচাও। সদর দরজা খুলে কাউকে ডাকো যাও আমি বলছি।

হাতের উল্টো পিট দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ইয়ামিনা সমস্ত শরীরে শক্তি জুগিয়ে উল্টো পথে দৌড় দেয়।

আমির এখনও রুহানের উপর ভোর দিয়ে এলোপাথাড়ি মেরেই চলচ্ছে।
পা গেছে তো গেছে গায়ের তেজ দেখি এখনো আছে তোর রুহান আমিরের পায়ে জোরে লাথি দেয় আমির ঠাস করে মাটিতে পরে যায়। রুহান যেতে নিলে আমির হাত দিয়ে রুহানের পা আটকে ধরে। রুহান পা ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পারচ্ছে না আমির সমস্ত শক্তি দিয়ে রুহানের পা দুটো ধরে রেখেছে রুহান পাশ থেকে কাচের জগ দিয়ে আমিরের মাথায় জোড়ে আঘাত করে নিমিষেই কাচের জগ ভেঙে ঘুড়ঘুড় হয়ে যায় আমিরকে ধাক্কা দিয়ে রুহান বের হয়ে যায়….

বর্তমান…….

রুহান দেখ তোর যত টাকা লাগে আমি দিব তুই ইয়ামিনাকে ছাড় বলেই আমির এগোতে গেলে ধপাস করে মাটিতে পড়ে যায়।

আমাকে টাকার লোভ দেখাচ্ছিস। সেটা তো আমি এমনি নিতে পারবো। তোর বউয়ের সাথে বাসর করে ভিডিও ভাইরাল করে বলে রুহান হু হু করে হেসে উঠে।। ইয়ামিনা রুহানের হাতে জোড়ে কামড় দিয়ে পালাতে নিলে রুহান খপ করে ধরে ইয়ামিনাকে দেয়ালের সাথে ধাক্কা দেয়। ইয়ামিনা কোনো মতে মাথা ধরে মাটিতে বসে পড়ে আর পারচ্ছে না দূর থেকে শুধু আমিরের আর্তনাদ দেখে যাচ্ছে ইয়ামিনা। ইয়ামিমার চোখ ঝাপ্সা হয়ে আসচ্ছে। শুধু একটা আওয়াজই কানে বাজচ্ছে… ইয়ামিনা নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে পালাও।

ইয়ায়ামিনাকে আজ যে করে হোক ভোগ করেই ছাড়বে রুহান জেদ যেন মাথায় চেপে বসেছে।
ইয়ামিনা উঠতে নিলেই রুহান ইয়ামিনার চুলের মুঠি ধরে টেনে হিচড়ে রুমের ভেতর নিয়ে যাচ্ছে…
আমির শুধু চিৎকার দিয়ে বলে যাচ্ছে.একবার তোর নাগাল পায় তোকে সেখানে শেষ করে দিবো।. আমিরের মনে হচ্ছে তার কলিজা ছিড়ে কেউ নিয়ে যাচ্ছে। চিৎকার করে ইয়ামিনাকে ডাকচ্ছে। ফ্লোরে আমিরের হাতের রক্তের ছাপ লেগে গেছে ।নিজের চোখের সামনে ইয়ামিনাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমির চিৎকার করেই যাচ্ছে বার বার উঠার চেষ্টা করেও আমির পড়ে যাচ্ছে। আজ নিজের অবস্থা দেখে নিজের মনের মধ্যে শুধু হাহা কার আসচ্ছে। রাগে মাটিতে কয়েকটা ঘুষি দেয় আমির। হার মানলে চলবে না তাকে….কিছুতেই ইয়ামিনার ক্ষতি হতে দিবে না আমি থাকতে মনে মনে শুধু আল্লাহকে ডাকচ্ছে।।।

রুহান ইয়ামিনার চুল ধরে একটানে বলেন বিছানার উপর ছিটকে ফেলে… ইয়ামিনার গায়ে যেন বিন্দু পরিমান শক্তিটুকু নেই। চোখ দিয়ে তাকানো ছাড়া। লাল লাল চোখ গুলো আধো আধো খুলে আছে। রুহান একলাফে ইয়ামিনার উপর উঠে বসে। লোলুপ দৃষ্টিতে ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে বলে… তোর সো কল্ড বর মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে।খারাপ লাগচ্ছে কি বা করার বল শুধু দেখা ছাড়া বলে রুহান একটা একটা করে শার্টের বোতাম খুলচ্ছে.. ইয়ামিনা শেষ শক্তি দিয়ে হাত দিয়ে বার বার বাধা দিচ্ছে।

রুহান ইয়ামিনার গলায় মুখ ডুবাতে ধারাম করে দরজায় শব্দ হয় রুহান দরজার দিকে তাকাতেই তার আগে কেউ রুহানের হাত আর পা বরাবর গুলি করে রুহান হুমরি খেয়ে ছিটকে বিছানা থেকে পড়ে যায়.
.
.
.
চলবে…..🌸🌸

🌸#হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸

#লেখিকাঃআদিলা
#পর্বঃ১৩
_________________________🌸
ইয়ামিনার চোখ যেন বন্ধ হয়ে আসছিলো।। কিন্তু তারপর ও গুলি করা লোকটাকে দেখার আগ্রহ ইয়ামিনার মনে যেন বেড়ে চলচ্ছে। ঝাপসা চোখে সারা শরীর রক্তে রাঙানো শুধু আমিরের মুখটাই অস্পষ্ট ভাবে দেখতে পায়।।তারপর ইয়ামিনার আর কিছুই মনে নেই।

আমিরের সমস্ত শরীর কাপছে। হিংস্রভাবে রুহানের দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে মুখ চোয়াল দাত সব শক্ত হয়ে আসে। রুহান পা হাত বেয়ে রক্ত পুরো ফ্লোরে মেখে গেছে। রুহানের উঠার শক্তি যেন নেই শুধু মাথা তুলে সামনের দিকে তাকাতেই রুহান আতকে উঠে স্বয়ং আমির পিস্তল হাতে নিয়ে রুহানের সামনে দাড়িয়ে আছে। লাইসেন্স করা পিস্তল সব সময় আমির সাথে রাখে।

রুহানেত বুঝতে বাকি নেই আর আমিরের হাত থেকে আজ সে রেহাই পাবে না। রুহানের সাড়া শরীর শির শির করে উঠে। রুহান কোনো রমক ফ্লোরের সাথে হিচড়ে হিচড়ে যাওয়ার চেষ্টা করচ্ছে৷ আমিরে রুহানের পা ধরে হেচকা টান দেয়। রুহান ছিটকে গিয়ে কাচের টেবিলে ভারি খায়। কাচ ভেঙে রুহানের হাতে শরীর ঢুকে যায়।

আমির রুহানের সামনে হাটু গেরে বসে পিস্তলটা কপালে ঘেঁষে বেশ গম্ভীর গলায় বলে… কি বলছিলি বাসর..ও হ্যা বাসর । বাসর করার খুব শখ তাই না। তোর বাসর আজ আমি জন্মে মিটিয়ে দিব।আমির চোখ খুলে তাকাতেই রুহানের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে। গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না।

আমির রুহানের কলার চেপে ধরে দেয়ালের সাথে ভারি দিয়ে হুংকার দিয়ে বলে কিরে জাওনোয়ার এখন কথা বলিস না কেন। বল বাসর করবি। তুই আমার কলিজা আমার ভালবাসার গায়ে হাত দিয়েছিস এই হাত দিয়ে তাই না এই হাত বলে হাতে কয়েকটা লাথি দেয়।
রুহান ব্যাথা কুকরিয়ে উঠে… প্লিজ ভাই আমাকে ছেড়ে দেও ভুল হয়ে গেছে বুঝতে পারি নি ছেড়ে দাও আমিরের পা ধরে বলে.. আমির রুহানের গলা চেপে ধরে… ও তো তোকে এইভাবে মিনতি করেছিল শুনেছিলি রেহাই দিয়েছিলি। তোকে নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশি ভালো বেশেছি। আমার গায়ে আঘাত করতি কিছুই বলতাম না কিন্তু তুই….বলেছিলাম না ঘুমন্ত সিংহকে কখনো জাগাতে নেই। বলেই রুহানকে আছার মেরে দেয়ালে ছুড়ে মারে ইচ্ছে মত লাথি দিতে থাকে। রুহানের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
আমির বিছানায় বসে পড়ে হাতের উল্টো পিট দিয়ে রক্ত মুছতে মুছতে বলে জানোয়ার….

আমিরের হুস হতেই দৌড়ে ইয়ামিনার পাশে যায়। ইয়ামিনার এই অবস্থা দেখে আমিরের ফোলা লাল চোখ থেকে কয়েকফোটা জল গরিয়ে পড়ে। ইয়ামিনা জামার অনেক অংশই ছিড়ে গেছে। জামার হাতা পেটের ঘাড় রক্তাক্ত হয়ে আছে।চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আশেপাশে চুল ছিড়ে পড়ে আছে৷ আমির চোখট বন্ধ করে মুখটা অন্য দিকে ফিরে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ইয়ামিনার বাসে ধপ করে বসে পড়ে। পাশ থেকে চাদর টেনে ইয়ামিনার সাড়া শরীরে মুড়িয়ে সাদা চাদরে আবদ্ধ করে নেয়। ইয়ামিনাকে টেনে আমির নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে৷

চোখের জল যেন বাধা মানচ্ছে না। আমির ইয়ামিনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কি নিষ্পাপ মুখ। ইয়ামিনাকে আরও শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে আমির।আমির চেয়ে কাদতে পারচ্ছে না। ছেলেদের যে কাদতে নেই। এই নিষ্পাপ মেয়েটাকে অপবিত্র করতে চেয়েছে ভাবতেই আমিরের শরীর কেপে উঠচ্ছে। রাগে মাথা ধরে গেছে৷ আল্লাহ রমহতে আজ ইয়ামিনাকে বাচাতে পেরেছে যদি একটু দেরি হয়ে যেত ভাবতেই আমিরের চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়।অনেক কষ্ট সহ্য করছো । অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে তাই না আর না। আর কষ্ট দিব না শুধু ভালো বাসবো। ভালোবাসা দিয়ে সব ঠিক করে দিব। এতএত ভালো বাসবো যে তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিব। ভালোবাসি আমার মিষ্টি পাখি। অনেক অনেক বেশি ভালো বাসি। আমার রাজ্যের রাণী করে রাখবো মিষ্টিপাখি আমার। ইয়ামিনাকে আরও নিজের কাছে টেনে নেয় আমির। তুমি শুধু আমার। তুমি চাইলেও আমার না চাইলেও আমার। তুমি আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছো ইয়ামিনা তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।

অন্যদিকে গার্ডসরা দরজা ধাক্কিয়ে চলচ্ছে৷ দরজা এমন ভাবে তৈরী করা হয়েছে ভাঙা তো দুরের কথা পিন কোড ছাড়া দরজার লকও খোলা যাবে না। এতক্ষন জাবির আর জাফরা এসে পড়ে গার্ডসরা দৌড়ে যেয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে তারা নেমে পড়ে।

জাবির ব্রু কুচকে বেশ বিরক্ত নিয়ে বলে…. সমস্যা কি এখানে কি সার্কাস চলচ্ছে আপনারা দরজার সামনে দাড়িয়ে কি করছেন।
একজন গার্ডস বেশ হাপিয়ে বলে… স্যার দরজা ভেতর থেকে লক করা কিন্তু ভেতর থেকে অনেক ভাঙচুরের আওয়াজ আসচ্ছিল তাই আমরা সবাই খোলার চেষ্টা চালাচ্ছিলাম।

জুবির বুঝে গেছে আমির আবার হয়তো ইয়ামিনার উপর রাগ করত দেখাচ্ছে। দ্রুত যেতে দরজার লক খুলে ভেতরে ঢুকতেই জাবির আর জাফরা অবাক এইভাবে ভাঙচুর কে করলো ফ্লোরে এত রক্ত কেন। জাফরা ভয় পেয়ে যায় এত রক্ত দেখে। জাবির অবাক হয়ে বলে… এত রক্ত কিভাবে আসলো
রক্ত রুম বরারব চলে গেছে জাবির জাফরা রুমের দিকে ছুটে চলে…

আমির চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে আছে।সাদা পাঞ্জাবীতে রক্তের দাগ লেগে আছে। আমির ইয়ামিনাকে ওইভাবে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রেখেছে।তার কিছুদুরে রুহানের নিথর দেহটা পড়ে আছে।

জাবিরের যেন সব কিছু মাথা উপর দিয়ে যাচ্ছে। জাবির বেশ রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে বলে…. আমির এসব কি হচ্ছে ঘরের এই অবস্থা কেন।।

আমির লাল লাল চোখ নিয়ে জাবিরের দিকে তাকায়। তারপর ইয়ামিনাকে কোলে তুলে নেয়৷ জাবির আর জাফরার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে আমিরকে এইভাবে দেখে। আমির চিৎকার দিয়ে গার্ডসদে ডাক দেয়….

গার্ডসরা আসলে আমির বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলে…. আমি এসে এই নদর্মার কীটাকে এখানে না দেখি ইশারা করে বলে জাস্ট ফিনিস।।
গার্ডসদের ভয়ে কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে আমিরকে এইভাবে দেখে আগের ফর্মে এসে পড়েছে আমির।। এখন আমির কতটা ভয়ংকর হতে পারে কারো কোনো ধারনা নেই।

আমির রুমে এসে ইয়ামিনাকে শুয়ে দেয় বিছানায়। ইয়ামিনার কপালে গভীর ভাবে নিজের ঠোট ছোয়ায়।আমার মিষ্টিপাখি আজ থেকে শুধু ভালোবাসবো তোমাকে। একবার সুস্থ হয়ে নাও।কোনো কষ্ট তোমাকে স্পর্শ করতে দিবো না।আমির রুম থেকে বের হয়ে জাফরা ভাবিকে ডাক দেয়।জাফরা যে এখনো শকডে আছে। সামনে আমিরকে দেখে বিশ্বাস হচ্ছে না। এটা আসলে আমির নাকি।

ভাবি আমি আপনাকে কিছু বলছি…. আমিরের কথায় জাফরার ধ্যান ভাঙে… ও হ্যা কি বলছিলে

ভাবি ওর শরীরের অবস্থা তেমন ভালো না আপনি ওর কাপড় চেঞ্জ করে দিন আমি ডক্টরকে কল করে আসতে বলচ্ছি…

জাফরাকে কিছু না বলতে দিয়ে আমির চলে আসে।
________________________🌸🌸🌸
ড.আবির গালে হাত দিয়ে বসে আছেন। তার সামনে কি সুন্দর করে আমির হেটে চলচ্ছে। আবির বেশ অবাক হাটতে পারবে জানতো কিন্তু ভাবতে পারে নি এত আরলি আমির স্বাভাবিক ভাবে হাটতে পারবে।

আমির হাত বাজ করে আবিরের সামনে দাড়ায়…. তো মি.আবির দেখলেন তো এখন বলেন আর কোনো ফ্যাকচার আছে বা প্রবলেম।

ড.আবির বেশ ফুরফুর মন নিয়ে বলে… নো স্যার আর কোনো প্রবলেম নেই। তবে এখন মাএই সেড়ে উঠেছেন পায়ে প্রেসার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এত বেশি প্রেসার দেওয়া যাবে না। আসলে আল্লাহ রহমত ছাড়া এত দ্রুত সুস্থ হওয়া পসিবল ছিল না। ক্রেডিট কিন্তু আপনার বউয়ের সবচেয়ে বেশি দেওয়া চলে।মেয়েটা আসলে দিনরাত পরিশ্রম করে আপনার সেবা করেছে। আমাকে বার বার ফোন দিয়ে সব ইনফরমেশন নিতো।
ইয়ামিনার নামত শুনতে আমিরের মুখে হাসি রেখা চলে আসে।
আচ্ছা আমি আসি তাহলে আপনি একটু আমার চেম্বারে আসবেন চেক আপ করা বেশ দরকার। ড.আবির চলে যায়।

কিছুক্ষন আগে ইয়ামিনারকে চেক আপ করে ড.রাবেয়া ব্যথার কিছু মেডিসিন আর মলম দিয়ে যায়। আমির রুমে ঢুকে দেখে ইয়ামিনা এখনো ঘুমিয়ে আছে। আমির পাশে বসে ইয়ামিনার হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইয়ামিনার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে ইয়ামিনার দুচোখে চুমু দেয় আমির মাথায় হাত বুলিয়ে। কিছুক্ষন পর উঠে দাড়িয়ে বারান্দায় যায় আমির।

চলবে…..🌸🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here