নীড়হারা পাখি,পর্ব : ১

নীড়হারা পাখি,পর্ব : ১
Susmita Jana

দরজা খোলার সাথে সাথেই আমার গালে সজোরে থাপ্পড় পড়ে গেলো।

“দরজা খুলতে এতো দেরী করিস কেন?”

“আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম। আর তাছাড়া আমার শরীর টাও… ”

“চুপ করতো, মাথা গরম করাস না। যা পানি নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি। ”

আমি পানি এনে উনার সামনে রাখলাম। শাড়ির আঁচল আঙুলে নিয়ে গুটাচ্ছি।

“বলছিলাম কি, বেশ কয়দিন হল আমার শরীরটা ভীষণ খারাপ। আমাকে একবার ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবেন? ”

“কেনো শরীরে কি জং ধরেছে না কি?এই তোদের মেয়ে মানুষদদের এক সমস্যা ..। সারাদিন তো বাসাতেই থাকিস। সময়ে খাওয়া, ঘুম সব হচ্ছে তার পরেও বলিস শরীর খারাপ! আজীব! ”

“আমি সত্যি বলছি ইদানীং আমার রাত হলেই জ্বর আসে । শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। আর সারাদিন মাথা যন্ত্রনা হয়। ”

“উফফ তোকে বলছিনা চুপ থাক। অফিস থেকে আসতে না আসতেই এই হয় সেই হয় শুরু করে দিয়েছিস। আমি যে সারাদিন এতো হাড় ভাঙা পরিশ্রম করি কই আমার তো জ্বর আসে না। যত্তোসব আজাইরা,,। ”

আমি আর কথা বাড়ালাম না। গুটি গুটি পায়ে রুম ছেড়ে চলে এলাম। আমার স্বামী কাব্যর কাছে এইগুলো কোন রোগ না। এই তো সেদিন আমার হাতটা কতোটা পুড়ে গেলো। যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলাম। কিন্তু উনার কাছে এটা কোন বড়ো বিষয় ছিলো না। উনি পোড়ার মলম আমাকে দিয়ে দিলেন। একবারো দেখলেন না হাতটা কতোটা পুড়েছে। শুধু গম্ভীর সুরে বললেন,,

“এই সমস্ত ছোটো ছোটো বিষয় নিয়ে বাচ্চাদের মতো আচরণ করবে না তৃষা আমার অসহ্য লাগে ”

পারিবারিক ভাবেই আমার আর কাব্যর বিয়ে হয়। আমার বাবা এক দেখাতেই কাব্যকে পচ্ছন্দ করে ফেলে। হবে নাই বা কেনো আমার বাবা তো তার পচ্ছন্দ মতো পাত্র পেয়েছেন। ছেলে বড়ো ব্যবসায়ী অনেক নাম যশ আছে। সেখানে আমার পচ্ছন্দের মধ্যবিত্ত একটা বেকার ছেলের হাতে কেন তুলে দিবেন। ছোটো থেকেই দেখে আসছি বাবা বিলাসী লোক। সবসময় নিজের স্টেটাস বজায় রাখেন। আর কাব্য মাহমুদ সব দিক থেকে পারফেক্ট। বাবার সাথে তেমন বন্ধুত্ব নেই আমার। আমার আশে পাশে চার পাঁচটা মেয়ে যেমন তার বাবার পরী হয় বা বড়ো হয়ে গেলেও আঙুল ধরে রাস্তা পার হয়। সেখানে আমি এসব কিছুই পাই নি। আমার বাবা সবসময় লাভ ক্ষতির অঙ্ক কষতেন। কাব্য মাহমুদ এর সাথে বিয়ে হলে উনি উনার ব্যাবসা দেখার একটা বিশ্বস্ত লোক পাবেন। তাতে মেয়ে খুশি থাকুক বা না থাকুক। অথচ আমার বাবা চাইলে ওই মধ্যবিত্ত বেকার ছেলেটাকে একটা চাকুরী দিতে পারতেন কিন্তু না উনার কাছে স্টেটাস বজায় রাখাটা মাস্ট।এখানে আমার মা ছিলেন নিরব দর্শক। শুধু মা কেন আমার দাদী, ফুপু সবাই বাবাকে বেশ ভয় করতো। বাবার মুখের ওপর কেউ কোন কথা বলতে পারে না। এই সব কিছুই ছোটো থেকে দেখে আসছি। আমার বিয়ের সময়ও তার কোন ব্যতিক্রম হল না।ভেবেছিলাম বাবার কাছে না পাওয়া ভালোবাসা গুলো স্বামীর ভালোবাসা পেয়ে পুষিয়ে নিবো কিন্তু তা আর হলো কই!! কাব্যর সাথে আমার ছয় মাস হল বিয়ে হয়েছে স্বামীর ভালোবাসাটা কি তাই এখনো বুঝে উঠতে পারলাম না।

“এটা কি ধরনের রান্না হয়েছে? এতো লবণ! লবণ কি সস্তা হয়ে গেছে না কি যে পুরোটাই ঢেলে দিয়েছিস? ”

কাব্য খাবার এর প্লেটটা আমার দিকে ছুঁড়ে মারলো। তারপর আমার চুলের মুঠি টেনে ধরে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করলো। দু চারটে লাথি, থাপ্পড় মারলো। অসহ্য যন্ত্রণা হলেও কিন্তু নিরবে পড়ে থেকে কান্না করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই।।

চলবে….

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here