নীড়হারা_পাখি,পর্ব :২

নীড়হারা_পাখি,পর্ব :২
Susmita_Jana

আমার চুপচাপ সহ্য করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কারণ এর আগেও আমি মার খেয়েছি। এই তো বিয়ের এক মাস হয়নি গায়ে হাত তোলা শুরু করে দিলো।

বসে বসে টিভি দেখছিলাম আমি, উনাকে বিকালের চা দিতে দেরী হয়েগিয়েছিল। ওই যে শুরু হল ছয় মাস হতে চললো বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই মাইর খাই।

প্রথম প্রথম মা কে ফোনে বলতাম অনেক কান্নাকাটি করতাম। একদিন শাশুড়ী মা এর মুখে মুখে তর্ক করেছিলাম উনাদের মতে। কিন্তু আমি তো উচিত কথাই বলেছিলাম তবু উনার মনে হল আমি শাশুড়ী মা কে অসম্মান করেছি। উঠানে পড়ে থাকা চ্যালা কাঠ দিয়ে আমার শরীরে আঘাত করলো কাব্য। হাত ফুলে গেলো , সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হল। শরীরে প্রচন্ড জ্বর নিয়ে বাবার বাসায় চলে গেলাম। পণ করলাম মরে গেলেও আমি আর ওই লোকের সংসার করবো না।

কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস চারদিনের মাথায় আমি আবার ফিরে এলাম ওই লোকের সংসারে। আমি বুঝতে পারলাম মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়া মান আর বাবার বাসায় অধিকার থাকে না। আমি থাকাতে আমার মা আর বাবার মধ্যে দিন রাত অশান্তি হতো। বাবা মা কে বলতো আমাকে ঠিক ভাবে মানুষ করতে পারে নি। সব দোষ পড়লো মা এর উপর। আমি মা এর কষ্ট কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলাম না। যেদিন চলে আসবো সেদিন সকালে বাবার পা ছুঁয়ে সালাম করতে গেলে বাবা পা টা সরিয়ে নেয়। গম্ভীর গলায় স্পষ্ট ভাবে আমাকে উদ্দেশ্য করে মাকে বললেন,,, তোমার মেয়েকে জানিয়ে দাও জামাইকে ছাড়া এলে এই বাসার দরজা ওর জন্য বন্ধ।আমি কোন কথা বললাম না নিঃশব্দে অশ্রুপাত করতে করতে বাসা থেকে চলে আসলাম। নিজের মনে কসম করলাম মেরে ফেললেও আমি জীবনেও আর কখনো বাবার বাসায় পা রাখবো না।

পুনরায় স্বামীর কাছে যখন ফিরে আসলাম। শাশুড়ি মা ঝাঁঝিয়ে উঠলেন। বললেন বেশ তো দেমাক দেখিয়ে চলে গিয়েছিলে কি করতে আবার ফিরে এলে! আমি এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলে ফেলেছিলাম ,, আমার নিজের বাসা আমি যখন খুশি যেতেও পারি আবার আসতেও পারি। শাশুড়ি মা আমার কথা শুনে আর কিছুই বললেন না।

আমার মা বলে বিয়ের পর মেয়েদের কাছে স্বামীর বাসাটাই নিজের বাসা। তাই তো বলার সাহস পেলাম। কিন্তু যতোটা সহজ ভেবেছিলাম তা কিন্তু নয়। রাত তখন আনুমানিক সাড়ে এগারোটা হবে। সারা শরীরের অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছিলাম ঘুম আসেনি চোখে।

হঠাৎ আমার পিঠে বেল্টের বারি পড়লো আমি চিৎকার করে উঠে বসি। কাব্য আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। পারলে আমায় চিবিয়ে খাবেন। শরীর এর ক্ষত গুলো তখনও সারেনি। ওই ক্ষত শরীরটার ওপর বেশ কয়েক ঘা পড়তে চার পাঁচ বার চিৎকার করলাম ঠিকি। কিন্তু এক সময় আর কিছু মনে হলো না। এক ঘণ্টা ধরে আমাকে মারতে মারতে তিনি ক্লান্ত হয়ে আমার পাশে শুয়ে পড়লেন। আমি শরীরে ব্যাথা বুঝতে পারছি না। তবে শরীরে তরল কিছু বেয়ে যাচ্ছে তা অনুভব করতে পারছি।

বুঝতে পারলাম স্বামীর বাসা টাকে নিজের বাসা বলার অপরাধের দাম দিতে হল। তারপর থেকে মুখ বুজে সহ্য করা শিখে গেছি। কাকে বলবো? কে শুনবে আমার কথা ? যেখানে আমার জন্মদাত্রী বাবা আমাকে বুঝলো না সেখানে কে আমার কষ্ট বুঝবে!!

চলবে…. …….
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here