নীলাম্বরীর_প্রেমে,পর্ব :১১,১২
Tuhina pakira
পর্ব :১১
সকাল ৭:৩৬ ।।
-” তিশু অঙ্কগুলো ঠিক মতো কর। কেউ বলবে তুই ক্লাস টু তে পড়িস। এখনও তুই মাঝে মাঝে যোগ এর জায়গায় বিয়োগ আর বিয়োগের জায়গায় যোগ করে চলেছিস। এইবার ভুল হলে আজ তোর কপালে মার জুটবে। ”
-” উহু, বললেই হলো তুমি আমাকে মারবে না আমি জানি। ”
-” বড্ড কথা বলছিস তুই আজ। দাঁড়া না কদিন পর থেকে তো আর আমি পড়াবো না তখন বুঝবি। মা এর বকা তুই খুব মিস করছিস না? ”
তিশা মুখে পেন পুড়ে কথা জড়িয়ে বললো,
-” মা বলেছে এবার থেকে সময় পেলে তোমার কাছে পড়তে বসতে। আমি তো তোমার কাছেই পড়বো।”
-” হ্যাঁ তাতো পড়বেই। আমি আপনাকে বকি না কিনা। তবে এবার থেকে তোকে কান ধরে উঠবস করাবো।”
তিশা আয়ুর গালগুলো ধরে বললো,
-” তুমি তো আমার ভালো আয়ু দি। তুমি আমাকে বকতে পারবেই না। ”
-” চুপ চাপ কাজটা কর। আমাকে কলেজ যেতে হবে। তাড়াতাড়ি কাজ কর।”
আয়ু বিছানায় বসে নিজের কিছু ডকুমেন্টস ঠিক করতে লাগলো। তিশা নিজের মতো অঙ্ক করছে। মাঝে মাঝে গাঁট গুনতে গিয়ে নিজের ভাবনায় হারিয়ে গিয়ে আয়ুর ঘরের বারান্দার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
নীচে কারোর চিৎকার শুনে তিশা ছুটে বারান্দায় চলে গেলো। নীচে তাকিয়ে দেখলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে দ্রুতি আর দিহান ঝগড়া করছে।
কাল রাত থেকে দ্রুতি তক্কে তক্কে আছে। দিহান সকালে এই পাড়ায় ঢুকলেই ও ওর ঠ্যাং খোঁড়া করবে। ওরা সবে এই প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে। তাও আবার একই কলেজে আবার একই ডিপার্টমেন্টে। এই গতকাল ওরা কেবল সবে নতুন কলেজে গিয়েছিল। সেখানে ওদের ডিপার্টমেন্টের অনেকের সঙ্গেই বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। বলতে গেলে গলায় গলায় বন্ধুত্ত্ব। বেশ ভালো ভাবেই ওরা ক্লাস করে বাড়ি আসছিল। তখনই দূর থেকে ওদের ডিপার্টমেন্টের একটা ছেলে দ্রুতি কে ডেকে বললো,
-” বাই ফ্রুটি, কাল আসবি তো?”
ব্যাস দ্রুতি বুঝে গেছে ওর নামের পিন্ডি কোন গর্দভ চটকেছে। সেই থেকে ও রেগে আছে। শুধু মাত্র রাস্তার লোকেরা দেখবে বলে ও কালকে কিচ্ছুটি বলে নি। দাঁতে দাঁত চেপে বাড়ি ফিরেছে। তাইতো সকাল থেকে ওই বাড়িতে ঘাপটি মেরে বসে ছিল। দিহান যেই স্পর্শের বাড়ির চৌকাঠে পা দিয়েছে সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতি ওকে ছুট কাটিয়েছে।
-” আঃ , ফ্রুটি লাগছে চুল ছাড়। ”
-” তোর চুল ছাড়া যাবে না গর্দভ কোথাকার।”
-” ওই তুই আমাকে গর্দভ বলবিনা একদম। আমকে কী গর্দভের মতো দেখতে নাকি? ”
-” দেখতে না তুই গর্দভই। ”
দিহানের পিঠে দ্রুতি গুমগুম করে কয়েকটা কিল মেরে বললো,
-” আমাকে সবার সামনে ফ্রুটি বলার তোকে কে সাহস দিয়েছে? নেক্সট টাইম যদি কারোর মুখে ওই নামটা শুনি তবে তোকে ওই খানেই মেরে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেবো বলে রাখছি। তখন আর এই পাড়ায় ঢুকতে পারবি না।
দিহান নিজের পিঠে যতটুকু হাত যায় সেই টুকুর মধ্যে হাত বুলিয়ে ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠছিল।
-” তোর হাতের যা মার। আর কারোর সামনে তোকে ওই নামে ডাকা তো দূর, তোকে ডাকবোই না। আজকে আর মারিস না। আজ অনেক কাজ করতে হবে আমায়। পারলে হেল্প করবি আয়।”
-” তুই যা, যাচ্ছি আমি।
-” পাড়ায় ঢুকলে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেবে ,
বলেছে পাশের পাড়ার মেয়েটা।
কুঁজো হয়ে আমি যাচ্ছি তাই,
স্পর্শ দা আমি আর আসবো না।।
স্পর্শ দা আমি আর আসবো না।।”
নিজের সাজানো গান গাইতে গাইতে স্পর্শদের বাড়ির দিকে ঝুঁকে বুড়োদের মতো দিহান বাড়ির ভিতরে পা বাড়ালো।
– ” কেনো যে ও আমার কলেজে আবার একই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হলো কে জানে? নির্ঘাত বাকি প্রতিটা ইয়ার মাথা খেয়ে ফেলবে।”
নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে দ্রুতি ওর পিছনে গেলো।
♣
তিশা বারান্দা থেকে ছুটে গিয়ে আয়ুর গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
-” জানো আয়ু দি আজ স্পর্শ দা আসবে। ”
আয়ু কিছু বললো না। চুপচাপ নিজের কাজ করতে থাকলো।
-” খুব মজা হবে বলো। স্পর্শ দা খুব ভালো আমার জন্যে চকলেট আনবেও বলেছে।”
-” তুই স্পর্শকে চিনিস তিশা?”
মায়ের কথায় আয়ু চোখ তুলে দরজার দিকে তাকালো। তিশা জেম্মাকে দেখে বিছানায় উঠে দাঁড়িয়ে বললো ,
-” চিনিতো, আমার সঙ্গে কথা হয়েছে ভিডিও কলে। জানোতো স্পর্শ দাকে খুব সুন্দর দেখতে; পুরো রাজপুত্র। ”
-” তোর ছোটবেলার স্পর্শ দার কথা মনে আছে তিশা?”
-” কই নাতো। তবে জানো জেম্মা আমার অন্নপ্রাশনের একটা ছবি আছে ওখানে আয়ু দির কোলে আমি আর স্পর্শ দা পাশে বসে আমাকে নেবার চেষ্টা করছিল। মা বলে স্পর্শ দা আয়ু দির থেকে আমাকে নিয়ে নিচ্ছিল। আর আয়ু দি দেবে না বলে কাঁদছিল। ”
-” ঠিকই বলেছে তোর মা। এই দুটো ছোটো বেলায় খুব দুষ্টু ছিল। খালি একে অপরের পিছনে লেগে থাকতো। ”
আয়ু এতক্ষণ চুপ করে সব কথা শুনছিল। কিছুই বলার মতো পাইনি সে।
-” কিছু বলবে মা?”
-” ও হ্যাঁ , তিশা মা ডাকছে বাড়ি যাও। আজ আর পড়তে হবে না।”
পড়তে হবে না শুনে তিশা কী খুশি। ব্যাগ গুছিয়ে আয়ু কে বলল,
-” আয়ু দি আমার ছুটি? ”
তিশার কিউট করে বলা কথা শুনে আয়ু বললো ,
-” যা। ”
তিশা কে আর কে পায় ছুট লাগালো নীচে। দুই অক্ষরের ছোট্ট শব্দ’ ছুটি’। প্রতিটা মানুষের বেশ ভালো লাগে। সবাই নিজের জীবনে ছুটি চায়। কেউ পড়াশোনা থেকে, কেউ দুঃখ দুর্দশা থেকে, কেউ ক্লান্ত অবসর থেকে, কেউবা নিজের জীবন থেকে।
আয়ুর মা ওর যাবার দিকে তাকিয়ে বললো ,
-” আস্তে পড়ে যাবি।”
-” কিছু বলবে মা?”
-” হ্যাঁ , বলছি আজ কি কলেজ যেতেই হবে?”
– ” হ্যাঁ যেতেই হবে। আজ অ্যাসাইনমেন্ট সাবমিট করতেই হবে। ”
-” আজ কেনো? যেতে হবে না অন্য দিন দিস। আর এমনিতে তোর মিমি আজ থাকতে বলেছে তোকে। ”
-” সে পরে আমি মিমির সাথে দেখা করে নেবো। তুমি আমাকে এক কাপ চা দাও। ”
-” নীচে আয়। ”
আয়ুর মা চলে যেতেই আয়ু গিয়ে বারন্দায় দাঁড়ালো। সামনে স্পর্শের ঘরের বারান্দায় হাওয়ার তালে উইন্ড চিমস এর মেটেল গুলো একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এক অপরূপ শব্দ করছে।
আয়ু সেই দিকে তাকিয়ে রইল। দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে সাড়ে তিন বছর। সময়ের ছন্দে কতো কিছু পরিবর্তন হয়েছে। নিজে পরিবর্তন হয়েছে। কাউকে ছাড়া থাকতেও শিখে গেছে, অনুভূতি লুকাতে শিখে গেছে। তবে এখনও কিছু কথা মনটাকে বড্ড খচ খচ করে। নীচে বাড়ির সামনে ওর আর স্পর্শের বাবা কথা বলছে। সম্ভবত স্পর্শ কখন আসবে সেই বিষয়ে। আয়ু নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। আপন মনে বিড়বিড় করে বললো ,
-” কই কখনও আমার সাথে কথা বলার জন্য জোর করলো নাতো। হয়তো সে ভুলে গেছে। অবশ্য ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কে আমি তার? কেউ না। ”
বিছানার উপর রাখা ফোনটা নিয়ে আয়ু ফোন লাগালো রুহিকে। রুহি ওর কলেজ ফ্রেন্ড।
-” কী রে পেত্নী সব কমপ্লিট?”
-” আমার তো কমপ্লিট। তোদের হয়েছে?”
-” আমার কমপ্লিট। তবে সজলের হালত খারাপ। বেচারা কাল লিখতে বসেছে। আজকের মধ্যে হবে কী বলতে পারছি না। তবে তোর উপর খোঁচে আছে খুব। বলেছে আয়ু কে হাতের সামনে পেলে তোর ভর্তা বানাবে। আচ্ছা আয়ু, কী দরকার আজকে সাবমিট করার। আমার তো আজ কলেজ যেতেই ইচ্ছে করছে না। আয়ু চলনা কাল কলেজ যাই একেবারে। ”
-” তোরা যাবি কী বল সেটা?”
-” আরে রাগিস না। যাবো যাবো। এবার রেডি হবো খালি। চল রাখছি। ”
-” বাই। ”
♣
-” নিশিতা কাল তোমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো। ”
-” আরে না ঠিক আছি আমি। তোমাকে টেনশন করতে হবে না।”
চেয়ারে বসে চা খাচ্ছিল নিশিতা। শুভ এগিয়ে গিয়ে ওর পাশের চেয়ারে বসে বললো,
-” উহু , ডক্টর বলেছেন তোমাকে মাসে মাসে চেক আপ করাতে। তাই তোমাকে কালকেই যেতে হবে। আজই নিয়ে যেতাম তবে আমাকে স্পর্শ কে স্টেশন থেকে আনতে যেতে হবে। ”
তিশা ছুটে এসে ওর মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-” ডাকছো আমাকে মা? ”
-” হ্যাঁ ডাকছি। বসো আমি তোমাকে খাইয়ে দিই। তুমি তো বাবার সাথে স্টেশনে যাবে।”
-” বাবা তুমি নিয়ে যাবে?”
শুভ মেয়েকে কোলে নিয়ে বললো,
-” নিয়ে যাবো তো মামনি। যাও শান্ত হয়ে খেয়ে নাও। মাকে জ্বালাবে না কিন্তু। ”
-” আচ্ছা।”
তিশা ওর বাবার কোল থেকে নেমে মায়ের পেটে হাত দিয়ে বললো,
-” তাড়াতাড়ি চলে আয় ভাই। তারপর তুই আর আমি মিলে একসঙ্গে বাবার সাথে ঘুরতে যাবো। ঠিক আছে।”
নিশিতা মেয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিল। পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট ও। তিশা কে একভাবে বসে পড়াতে কষ্ট হয়। তার উপর তিশার দুষ্টমিতে ও একটু তেই ক্লান্ত হয়ে যায় তাই কয়েকমাস আয়ুর কাছে গিয়ে পড়া গুলো করে আসে।
(চলবে )
#নীলাম্বরীর_প্রেমে
#Tuhina pakira
পর্ব : ১২/ বোনাস
কোনো মতে মুখে কিছু গুজে আয়ু ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোলো। দু পা হাটতেই তিশাদের নতুন চার চাকা গাড়িটা চোখে পড়লো আয়ুর। এবারে এই গাড়িটা শুভ রেন্টে নিয়েছে। লাল রঙের গাড়িটা তিশার পছন্দের; ওর লাল রং খুব ভালো লাগে। আয়ু কে দেখামাত্রই শুভ বললো,
-” কোথায় যাচ্ছিস?”
-” এই কলেজ। তুমি কোথায় যাচ্ছো কাকাই? ও বাবা তিশু বুড়িও আছে দেখছি।
তিশা ওর বাবার কোলে বসে হাত নাড়িয়ে বললো,
-” আমি বাবার সাথে স্টেশনে যাচ্ছি। তুমিও চলো। খুব মজা হবে।”
-” হ্যাঁ আয়ু চলে আয়। তোর ও তো ট্রেন ধরার একটা ব্যাপার আছে। চলে আয়। এক যাত্রায় পৃথক ফল করে লাভ নেই।”
শুভর অনেক করে বলায় আয়ু না করলো না। ড্রাইভিং সিটের পাশে বসতে গেলে তিশা বাঁধা দিয়ে বললো,
-” না আমি সামনে বসবো। আমার পিছনে বসতে ভালো লাগে না। আমি সামনে বসে বাবার মতো গাড়ি চালাবো।”
-” আচ্ছা তুইই বস।”
-” শুভ তিশার কথায় কান না দিয়ে তিশাকে পিছনের সিটে বসিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। আয়ু কে ইশারায় সামনে বসতে বললো। শুভ গাড়িতে বসতেই দেখতে পেলো তিশা কাঁদো কাঁদো হয়ে বসে রয়েছে।
-” প্লিজ বাবা আমি সামনে বসবো।”
শুভ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললো ,
-” কদিন আগে তুমি কী করেছিলে মনে নেই?”
তিশা আর কিছু বললো না। চুপ করে পাশের জানলা দিয়ে বাইরে দেখতে লাগলো। আয়ু কৌতুহল ধরে রাখতে না পেরে বললো,
-” কাকাই কী করেছে ও? ”
শুভ গাড়িটা বাঁক পেরিয়ে মেইন রোডে আনলো। গাড়ির স্প্রিড হালকা বাড়িয়ে দিলো।
-” তোর ছাত্রী কেই জিজ্ঞেস কর।”
আয়ু পিছন ফিরে তিশার দিকে তাকাতেই তিশা বোকা বোকা হাসতে লাগলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই মেয়ে কিছুই বলবে না।
-” কাকাই তুমিই বলো। ও বলবে না।”
-” গতবার যেদিন ওর মামার বাড়ি গেলাম, সেইদিন যাবার পথে ও সামনে বসেছিল। নীলিমার একটু খারাপ লাগছিল তাই ও পিছনে বসে ছিল। বেশ ভালোই যাচ্ছিলাম জানিস। আর তিশাও আমার গাড়ি চালানোর দিকে পর্যবেক্ষণ করছিল। কিন্তু হঠাৎই ও স্টিয়ারিং টা ঘুরিয়ে দিল। আচমকা হওয়ায় আমিও ঠিক বুঝতে পারি নি। একটু হলে অ্যাকসিডেন্ট করতাম।
-” তিশু দুষ্টুমি কিন্তু অতিরিক্ত হচ্ছে।”
-” সরি আমি আর ওই ভুল কোনো দিন করবো না। ”
-” মনে থাকে যেনো।”
নানা ধরনের কথা বলতে বলতে ওরা অনেকটা রাস্তাই পেরিয়ে এসেছে । হঠাৎই আয়ুর ফোনে রিংটোন বেজে উঠলো । ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে যেতেই ব্যাগটা কোল থেকে নীচে আয়ুর পা এর কাছে পড়ে গেলো। আয়ু তাড়াতাড়ি ব্যাগটা তুলে ফোন টা ব্যাগ থেকে বের করলো। আয়ু যা ভেবেছিল তাই হলো, রুহি ফোন করেছে। রুহির বাড়ি স্টেশনের অপরদিকে। তবে ওর বাড়ি থেকে স্টেশন অনেকটাই কাছে।
-” হ্যালো, আয়ু কোথায় তুই? তাড়াতাড়ি আয়। ট্রেনের অ্যানউন্স হয়ে গেছে। ”
-” আমি চলেই এসেছি। আর দুই মিনিট। তাছাড়া ট্রেন ঠিক সময়ে আসে না। আমি ঠিক সময়ে চলে যাবো। ”
-” তুই কেনো যে তাড়াতাড়ি আসিস না আমি আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম না। কী করিস তুই?
-” রান্না, ঘর ঝাড়ু-মোছা, কিছুই করিনা আমি। ”
আয়ুর কথায় তিশা আর শুভ হেসে উঠলো। আয়ু ওদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। অপর দিকে রুহিও হাসছে।
-” তুই তো আজন্ম কুটে। ”
-” রুহি তুই বেশি না বকে চুপচাপ ট্রেন আসছে কী দেখ। আমি ঠিক ট্রেন পেয়ে যাবো। ছুটে হলেও আমি ট্রেন ধরবো। চল ফোন রাখ। ”
কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা স্টেশনে পৌঁছে গেল। আয়ু নামতে যেতে আবারও ওর ব্যাগটা পায়ের কাছে পড়ে গেলো। ব্যাগটা পায়ের নূপুরের সঙ্গে কোনোভাবে আটকে গেছে। পিছনের জানলা দিয়ে তিশা মুখ বের করে বললো,
-” আয়ু দি দেখো ট্রেন চলে গেলো। ”
কোনমতে ব্যাগটা তুলে আয়ু সামনে তাকিয়ে দেখলো ও যেই ট্রেনে যাবে সেই ট্রেন না। তিশার গাল টেনে বললো,
-” ওই ট্রেন টা না তিশু বুড়ি। আমি অন্য ট্রেনে যাবো। ”
-” আয়ু তোর ট্রেন এসে গেছে দেখ। ”
শুভ এর কথায় আয়ু সামনে তাকিয়ে দেখলো ওর ট্রেন ও প্লাটফর্মে ঢুকে গেছে। আয়ু তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নামলো।
-” আসছি আমি টাটা, বাই। ”
আয়ু জোরে ছুট লাগিয়েছে। কোনো দিকে না তাকিয়ে ট্রেনের দিকে ছুটেছে। আগে পিছে কে আছে সেই দিকে তার ধ্যান নেই। শুভ ও বাইরে নামলো। দূরে কাউকে দেখে শুভ হাসি মুখে এগিয়ে গেলো।
♣
স্পর্শ ট্রেন থেকে নেমে রাস্তায় নেমে এলো। কাউকে ছুটে যেতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। তখনই সামনে শুভ কে দেখে জড়িয়ে ধরলো।
-” কেমন আছো কাকাই?”
– ” আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?”
শুভ নিজের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে স্পর্শের থেকে কোনো উত্তর পেলো না। স্পর্শ এখনও সামনে তাকিয়ে রয়েছে। যে সমস্ত ব্যাক্তিরা খুব তাড়াহুড়ো করে ট্রেন ধরে আমরা অনেকেই তার দিকে তাকিয়ে থাকি। যতক্ষণ না সেই ব্যাক্তিটি ট্রেনটা ধরতে পারছে। তখন মনে হয় অপর ব্যাক্তি না আমরাই যেনো ট্রেনে উঠছি। এইরকম দেখার সৌভাগ্য অনেকেরই হয়েছে। স্পর্শও তার ব্যাতিক্রম নয়। শুভ পাশ থেকে স্পর্শকে নাড়িয়ে বললো ,
-” কী দেখিস?”
-” তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে আসতে পারবে না। এখানে এসে ছুটবে। মেয়েটাকে দেখো একবার। করে ছুটছে। ”
শুভ সামনে তাকিয়ে দেখল ওই মেয়েটা আয়ু।
-” আরে ওটা তো আয়ু। আমার সাথেই এলো। ”
স্পর্শ আয়ুর দিকে তাকিয়ে বললো,
-” ও । ”
নিজের মনে বিড়বিড় করে বললো,
-” তুই বাড়িতে কি করিস আমি দেখছি। কোনো দিকে হুশ নেই। তিনি ট্রেনের জন্যে ছুটছে।”
♣
আয়ু ট্রেনের সামনে আসতেই ট্রেন চালকের দিকে হাত দেখালো। এটার মানে ওর হাত দেখে উনি বুঝবেন কেউ এখনও ট্রেনে উঠবে। তবে আদৌ তারা তাদের ইশারা মতো কাজ করে কিনা সেই বিষয়ে সন্দেহ আছে।
আয়ু কেবলই ট্রেনে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। দূর থেকে আয়ুকে ট্রেনে উঠতে দেখে
স্পর্শ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে গাড়ির দিকে পা বাড়ালো।
♣
স্পর্শ গাড়িতে বসলো। শুভ গেছে সামনে কিছু দরকারে। স্পর্শের পায়ের কাছে জলের বোতল আছে কী দেখতে গিয়ে দেখলো নীচে কিছু পড়ে রয়েছে। হাত বাড়িয়ে জিনিসটা তুলে দেখলো এক পায়ের নুপুর। স্পর্শের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। এই নুপুর ওর ভালো করেই চেনা। আচমকা ছোটো ছোটো দুটো হাত স্পর্শের চোখ টিপে ধরলো।
-” বলোতো আমি কে?”
– ” সত্যিই তো এটা কে? এটা তো আমাদের তিশু বুড়ি।”
তিশা স্পর্শের চোখ ছেড়ে দিয়ে বললো,
– ” তুমি কী করে বুঝলে?”
স্পর্শ ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
-” বুঝতে হয়েছে। ম্যাজিক। ”
-” কিন্তু আমি যখন এলাম তখন তো তোকে দেখলাম না। কোথায় ছিলি? ”
– ” লুকিয়ে পড়ে ছিলাম। ”
শুভ আসতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো। স্পর্শ ফোন ঘাটতে ঘাটতে ওদের দুজনের সঙ্গে গল্পঃ করতে লাগলো।
♣
আয়ু ট্রেনে বসে জানালার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ওর পাশে বসেছে রুহি। রুহি নিজের মতো ফোন ঘাটতে ব্যস্ত। হঠাৎই আয়ুর ফোনের এসএমএস টোন বেজে উঠলো। আয়ু এসএমএস টা অন করে দেখলো অজানা নম্বর থেকে এসেছে।
-” এই যে মন উদাসী – তোমার মূল্যবান কিছু আজ আমার হস্তগত। ”
আয়ু কিছু বুঝলো না। কী এমন হস্তগত? এই নম্বর ওর চেনা। যিনি এই এসএমএস টা পাঠিয়েছে তিনি আয়ুর ফোন কেনার পর থেকেই প্রতিনিয়ত ফোন করতো। তবে কথা বলতো না। আয়ুও তাই ব্লক মেরে দিতো। কিন্তু এই পর্যন্ত আয়ু মোট ১১টা নম্বর ব্লক মেরেছে। এটা ১২ নম্বর। ফোনের অপরের ব্যাক্তি ওর সাথে কথা বলে না ঠিকই তবে মাঝে মাঝে এসএমএস করে। আয়ু তা দেখে কিন্তু রিপ্লাই দেয় না।
(চলবে)