মেঘকন্যা☁️ Part_14,15

মেঘকন্যা☁️
Part_14,15
Writer_NOVA
Part_14

মেঘরাজ্য…….

উঁচু টুলের মতো দেখতে একটা বস্তুর উপর বিশাল বড় একটা পাত্র। পাত্র ভর্তি হালকা আকাশি কালার স্বচ্ছ পানি।দেখতে সমুদ্রের পানি মনে হলেও তা নয়।পানির ওপর গোলাপের পাপড়ি ছিটানো।পাত্র ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে রাজা,রাণী, মন্ত্রী ও সেনাপতি রাকিন। রাজা খুব বেশি চিন্তিত তার পুত্রের প্রাণ নিয়ে। তবে সবাই এখন দেখতে চাইছে সেদিন উত্তরের ভয়ানক জঙ্গলে কি হয়েছিল? কারণ ইশালের থেকে আয়িশের শক্তি বরাবরের মতোই বেশি। তারপরেও আয়িশ কেন এতো আঘাত পেলো।পানি ভর্তি পাত্রের মধ্যে এখন দম করে ফুঁ দিলেই সেখানে তারা সেদিনের ঘটনা দেখতে পাবে।সবার মনটা আনচান করছে।

রাজাঃ সেনাপতি রাকিন জলদী করে পানিতে দম করো।নয়তো পানির রং কালো হতে শুরু করবে।আমরা কিছুই দেখতে পারবো না।

রাকিনঃ আপনি চিন্তা করবেন না মহারাজ। আমি থাকতে কিছুই হবে না।পানিতে দম করার আগে আমার এখানে আরো একটা গোলাপের পাপড়ি ছিটাতে হবে।পাপড়ি কম হয়ে গেছে।

রাণীঃ আমার সোনার টুকরো পুত্রের সাথে কিরকম করলো শয়তানটা।ওর ভালো জীবনেও হবে না। আল্লাহ সব দেখছেন উপরে।তিনি এর বিচার নিশ্চয়ই করবে।আল্লাহ রক্ষা করেছে বলে আজ আমার কোল খালি হয়নি।যাকে আল্লাহ বাঁচাতে চায় তাকে কি অন্য কেউ ক্ষতি করতে পারে।মহান রাব্বুল আলামীন, তোমার দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া। তুমি আমার মানিক-কে আমার কোলেই রেখেছো।

মন্ত্রীঃ তুমি কিভাবে চিন্তা করতে মানা করো রাকিন?বেলা শেষ হয়ে এলে এই পানির রং কুচকুচে কালো হয়ে যাবে। তাতে আমি শতভাগ নিশ্চিত। সেই পানির থেকে এক প্রকার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ছাড়তে থাকবে।যেটা সারা রাজ্যকেও গ্রাস করবে।তুমি ভুলে যেও না এটা কোন রাজ্যের পানি?এটা অঙ্গরাজ্যের জলদীঘীর পানি। ওদের পানির মধ্যেও কালা জাদু করা আছে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এটা ভালো থাকবে।সেই সময়ের আগে যদি তুমি কাজ সম্পন্ন করতে পারো তাহলে মঙ্গল। নয়তো সারা রাজ্যে কালো আঁধার নেমে আসবে।গোলাপের পাপড়ি সাবধানে ব্যবহার করো।ঐটা কিন্তু প্রচুর বিষাক্ত।

সেনাপতি রাকিন অঙ্গরাজ্য থেকে ফেরার সময় একটা কাচের বোতল ভর্তি করে জলদীঘীর থেকে পানি নিয়ে এসেছে। তাছাড়া গোলাপ ফুলও সেই রাজ্যের বাগান থেকে তুলে এনেছে। কারণ সেখানকার সব কিছুতেই কালা জাদু করা আছে। পুরো রাজ্যটাই তো কালা জাদুই ঘেরা।কিন্তু পূর্বের ঘটনা দেখতে অঙ্গরাজ্যের পানি ও গোলাপ ছাড়া হবে না। জীবনের ঝুঁকি জেনেও সে এই দুটে জিনিস অঙ্গরাজ্য থেকে নিয়ে এসেছে।

আরেকটা গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে রাকিন পানিতে দম করলো।ধীরে ধীরে পানিটার রং বিবর্ণ হয়ে ধোঁয়ার কুন্ডলী পাকাতে শুরু করলো। পানির মধ্যে সেদিনের ঘটনা স্পষ্ট দেখা যাতে লাগলো।চলুন আমরাও দেখে আসি।কি হয়েছিল সেদিন????

উত্তরের ভয়ানক জঙ্গল…….

ইশাল উল্টো দিকে ঘুরে শয়তানি হাসি দিচ্ছে। তার পরিকল্পনা মাফিক সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিক তখনি ওর পেছনে এসে মেঘপুত্র দাঁড়ালো। পরনে তার হালকা আকাশি কালার রাজকীয় পোশাক। কোমড়ের বন্ধনীতে স্বর্ণের তলোয়ার কোষবদ্ধ। চোখ মুখ তার রাগে লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে সামনে যা পাবে তাই ধ্বংস করে দিবে।

ইশালঃ স্বাগতম মেঘপুত্র আবরার আওসাফ আয়িশ।আমার দুনিয়ায় তোমায় স্বাগতম।

আয়িশের রাগে নাকের ডোগা লাল হয়ে আছে। কান দুটো দিয়ে মনে হচ্ছে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আয়িশ রাগে সামনে এগিয়ে আসতে নিলেই ইশাল ওর চারিদিক দিয়ে অদৃশ্য শক্তি দিয়ে ঘিরে দিলো।যেহেতু আকাশে চাঁদ নেই তাই আয়িশ একটু দূর্বল হয়ে পরেছে।ইশাল সামনে এগিয়ে এলো।

ইশালঃ আবরার আওসাফ। একটা ইসলামিক নাম।যার অর্থ ন্যায় গুণাবলি। তা ন্যায়ের প্রতীক আবরার সাহেব, রাগে কি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন নাকি।আকাশের দিকে একটু নজরও দেননি।নিজের প্রিয়তমাকে সাপে কেটেছে বলে একটু দেরী না করেই, কোন দিকে নজর না দিয়ে সোজা উত্তরের ভয়ানক জঙ্গলে চলে এসেছে। অবাক করা কান্ড। আমার চোখ তো বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি মেঘরাজ্যের পুত্রকে আমার অধীনের জঙ্গলে দেখছি।

আয়িশঃ সাহস থাকলে আমার সাথে মোকাবিলা কর।কাপুরুষের মতো অদৃশ্য শক্তি দিয়ে আটকে রেখেছিস কেন?তোর মৃত্যু আমার হাতেই আল্লাহ লিখে রেখেছে। আজ হয় তোকে মারবো নয়তো নিজে মরবো।

ইশালঃ ভুল বললি তুই আয়িশ।তোর মৃত্যুটা আমার হাতে লিখে রেখেছে। আজ তুই এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবি না।তোকে মেরে মেঘকন্যাকে নিজের করে ফিরবো পৃথিবীর থেকে।তোর শরীরে এখন আমার পোষা সাপ রিহিসের বিষ আছে।তাই তোর ওপর আমি নিজের শক্তি ব্যবহার করতে পারবো।

আয়িশঃ তোর রিহিসের বিষ আমাকে কোন কাবুই করতে পারবে না।আমি এতটা বোকা নই সেই বিষ এখনো নিজের শরীরে রেখে দিবো।পুরো জঙ্গলটা তোর অধীনে হতে পারে।কিন্তু পুরো পৃথিবীটা আমার মাওলার অধীনে। সে যদি আমাকে বাঁচাতে চায় তোর মতো একটা পুঁচকে শয়তানের কোন ক্ষমতা নেই আমাকে মারার।

ইশাল রেগে ওর তলোয়ার কোষমুক্ত করে আয়িশের গলায় ধরলো।তাতে আয়িশ বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না।বরং উচ্চবরে হাসতে লাগলো।ওর হাসি দেখে ইশাল কিছুটা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। সেই সুযোগে আয়িশ ওর শক্তি দিয়ে নিজেকে ইশালের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।নিজের কোমড় বন্ধনী থেকে তলোয়ার বের করে দুজনে যুদ্ধ আরম্ভ করলো।

বেশ কিছু সময় তলোয়ার ঠোকাঠুকির পর ইশাল হেরে মাটিতে পরে গেল। সেই সুযোগে আয়িশ ওর সামনে গিয়ে ওর গলায় তলোয়ারের ধারালো মাথা দিয়ে ওর গলায় চেপে বসলো।তার আগে ইশালের বুকের ডান কাঁধের নিচের কিছুটা অংশে তলোয়ারের মাথা অনেকটা অংশ বসিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে।

আয়িশঃ আমাকে হারানো কি এত সোজা নাকি?আমি নিজেকে সবদিক থেকে প্রস্তুত করে এসেছি। তাছাড়া আল্লাহ তো আমার সাথেই আছে।তার দরবারে হাত তুলেই আমি এখানে এসেছি। তিনি আমার জন্য যা ভালো মনে করবেন তাই করবেন।চাঁদের আলো নেই বলে আমার শক্তি নেই এমনটা যদি ভাবিস।তাহলে অনেক বড় ভুল ভেবেছিস।

ইশাল সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। আশেপাশে তাকিয়ে নিজের কাছে শুকনো বালির দেখা পেলো।যখনি আয়িশ সামনে এসে ওকে আঘাত করবে সেই মুহুর্তে ইশাল ওর চোখে দুই হাত ভর্তি করে বালি ছুঁড়ে মারলো। জঙ্গলটা পুরোটা ঝুরঝুরে বালিতে ভর্তি।
আয়িশ তলোয়ার ফেলে নিজের চোখ ডলতে আরম্ভ করলো।ইশাল পেছন থেকে ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। আয়িশের সারা শরীর তলোয়ারের আঘাত করলো।আয়িশ এখনো চোখ ডলছে।চোখে কিছু দেখছে না।

আয়িশঃ কাপুরুষের মতো পেছন থেকে আঘাত করছিস কেন?

ইশালঃ পেছন থেকে করছি নাকি সামনে থেকে। সেটা বড় কথা নয়।সবচেয়ে বড় কথা তোকে আমি আঘাত করতে পেরেছি।

ইশাল ওর মুখে অনেকগুলো নখের আঁচড়ও বসিয়ে দিলো।আয়িশ পেছনে পেছাতে গিয়ে ধারালো কাচের সাথে বেজে পা কেটে ফেললো।কাচের টুকরোগুলো ইশাল চারিদিকে ছরিয়ে ছিটিয়ে রেখেছিলো।আয়িশ পা ধরে বসে পরলো।কিন্তু তারপরেও ইশাল থামলো না।একের পর এক আয়িশকে আঘাত করতেই থাকলে।সে বেশ উপভোগ করছে আয়িশকে হামলা করতে।একসময় আয়িশ মাটিতে ঢলে পরলো।ইশাল সামনে গিয়ে আয়িশপর নিশ্বাস পরীক্ষা করলো।আসলে আয়িশ মরার ভান করে পরে আছে।

ইশালঃ এতো তাড়াতাড়ি মরে গেলো।নিশ্বাস চলছে না কেন?আমিতো এখনো মন মতো মারতেই পারিনি।সামান্য কয়েকটা আঘাতে মেঘপুত্র আবরার কপোকাত। অবিশ্বাস্য ব্যাপার।

আয়িশঃ এতো সহজ নয় আমাকে মারার।

কথাটা বলেই আয়িশ হাত ভর্তি করা বালি ইশালের চোখে ছুঁড়ে, অনেক কষ্ট করে পেছনের দিকে সরে এলো।একটা মোটা গাছের আড়ালে গিয়ে চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসে রইলো।সারা শরীর রক্তের বন্যা বসে যাচ্ছে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। পায়ের থেকে অনরবত রক্ত পরছে। আয়িশের শরীরে কোন শক্তি নেই। ইশাল চোখ খুলে আয়িশকে পেলো না।কিছু সময় এদিক সেদিক খুঁজে হয়রান হয়ে গেলো।তারপর রেগে নিজের রাজ্যে চলে গেলো।

আয়িশ ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেল।গোটা একদিন আয়িশ অজ্ঞান অবস্থায় ছিলো।যখন জ্ঞান ফিরলো তখন বিকাল গড়িয়ে যাচ্ছে। সেনাপতি রাকিন আয়িশের খোঁজে মেঘরাজ্য থেকে সেই জঙ্গলে চলে এলো।অনেক সময় খোঁজার পর আয়িশের গোঙানির শব্দ পেয়ে ওর কাছে ছুটে এলো।তারপর ওকে ধরে ধরে মেঘাদের বাসার সামনে রেখে চলে গেল। রাকিন ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিলো। কিন্তু আয়িশ মানা করে দেয়।আসার সময় দুজন মিলে বাপ-বেটার মধ্যে দ্বন্দ্ব বানানোর ফন্দি এঁটে নিলো।সেই ফন্দিতেই রাকিন অঙ্গরাজ্যে গিয়ে রাজার রূপ নিয়ে দ্বন্দ্ব বাঁধিয়ে ফিরেছে।

পুরো বিষয়টা পানির পাত্রে দেখে উপস্থিত সবার রাগ উঠে গেল। কারণ ইশাল কাপুরুষের মতো পেছন থেকে হামলা করেছে। আর এটা কোন যুদ্ধ নিয়ম নয়।তবে অন্যদিকে সবাই খুশি যে তাদের মেঘপুত্র এখন সুস্থ আছে,ভালো আছে।রাণী আচলে মুখে ঢেকে কান্না করছে।আল্লাহ তার পুত্রকে কত বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছে। তা সে নিজ চোখে দেখলো।এক পলক পুত্রকে দেখার জন্য তার মনটা উতলা হয়ে পরলো।তার ইচ্ছে করছে পৃথিবীতে ছুটে গিয়ে নিজের সন্তানের সেবা করতে।কিন্তু তিনি নিরুপায়। চাইলেও এখন পৃথিবীতে যেতে পারবে না।গেলে যে তার পুত্র ও পুত্রবধূর ক্ষতি হতে পারে।সে মা হয়ে তা কি করে হতে দিতে পারে?

চলবে

#মেঘকন্যা☁️
#Part_15
#Writer_NOVA

চোখ খুলতেই নিজেকে ঘন কালো জঙ্গলে আবিষ্কার করলাম। মাঝারি সাইজের একটা গাছের সাথে শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধা আমি।চারিদিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম।অসংখ্য কালো কুচকুচে বিষাক্ত সাপ কিলবিল করছে। আমি যেই গাছের সাথে বাঁধা, তার ৪/৫ হাত দূর পর্যন্ত গোল দাগ টানা।সেই দাগের বাইরে সাপগুলো।আশ্চর্যের বিষয় হলো,কোন সাপ ঐ গোল দাগ ভেদ করে আমার কাছে আসছে না।তারা তাদের গন্ডির মধ্য আছে।শরীর নিস্তার হয়ে আসছে।কাঁপা কাঁপা গলায় থেমে থেমে চিৎকার করে উঠলাম।

আমিঃ কেউ কি আছেন?আমাকে এভাবে আটকে রেখেছেন কেন?আমি বাসায় যাবো।আমার আম্মির কাছে যাবো।আমাকে যেতে দিন।

আমার কথাগুলো বারবার প্রতিধ্বনি হয়ে বাতাসের সাথে মিলিয়ে গেল।কিন্তু কারো কানে পৌছালো বলে মনে হলো না।আমার চিৎকার শুনে সাপগুলো খুব তীক্ষ্ণ নজরে আমার দিকে তাকালো। কিরকম অদ্ভুত দেখতে সাপগুলো।চোখ দুটো টকটকে লাল, বিষ দাঁত দুটো একটু বেশি বড়।যার কারণে মুখের বাইরে চলে এসেছে।মাঝে মাঝে সারা শরীর আলোতে ঝলকানি দিচ্ছে। আমার ভীষণ ভয় করছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ঢোক গিলে গলা ভিজাতে চাইলাম।কিন্তু কাজ হলো না।

আমিঃ পানি,পানি।একটু পানি দিতে পারবেন।আমাকে একটু পানি দিন না।আমার সারা শরীর দূর্বল হয়ে পরছে।এক ফোঁটা পানি হলেও চলবে।আমি আর পারছি না।কেন কষ্ট দিচ্ছেন আমাকে?

এবারো কথা বাতাসে মিইয়ে গেলো।কলেজ থেকে ফেরার পথে পেছন থেকে কেউ আমার মুখের সামনে স্প্রে জাতীয় কিছু একটা নাকের সামনে মারলো।আমি ঢুলে নিচে পরে গেলাম।তারপর আর কিছু মনে নেই। চোখ খুলে নিজেকে ঘন জঙ্গলে পেলাম।আশিশ আমাকে বারবার মানা করেছিলো আজ কলেজে যেতে না।আমি ওর কথা তোয়াক্কা না করে একরকম জিদ করে গিয়েছিলাম কলেজে।জিদের ফলটা এখন বের হচ্ছে।

বেশ কিছু সময় পর আমি শুকনো পাতার মরমর আওয়াজ পেলাম।চোখ পাতা দুটো ছোট হয়ে আসছে।ধীরে ধীরে বোধ শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। তবুও জোর করে চোখ দুটো মেলে রাখলাম। যেদিক থেকে শব্দ আসছে সেদিক তাকালাম।

আমি একজন কালো অদ্ভুত পোশাক পরিহিত ব্যাক্তিকে আমার দিকে আসতে দেখলাম।সে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। মুখে তার অদ্ভুত দেখতে মাস্ক।
মাস্কের পুরোটা সাপের ডিজাইন। চোখ দুটো গাঢ় হলুদ। পরনে রাজপুত্রের পোশাক। পেছনে বিশাল পর্দা ঝুলছে। কোমড়ে তলোয়ার কোষবদ্ধ। আমার ইচ্ছে করছে নিজেকে চিমটি মারতে।দূর্বল শরীরে উল্টো পাল্টা দেখছি না তো।কিন্তু হাত দুটো তো গাছের পেছনে বাঁধা। এখন পৃথিবীতে কোন রাজা শাসন করে না।তহলে রাজপুত্র আসবে কোথা থেকে?

ইশালঃ কেমন আছো মেঘকন্যা?আহারে, আমার হবু বউটার অনেক কষ্ট হচ্ছে। কি আর করার বলো?তোমাকে ভালো করে আনতে চাইলাম তুমি তো মানা করে দিলে।তাই বাঁকা পথে নিয়ে এলাম।আমার কথা না শোনার যদি এটা তোমার শাস্তি। সমস্যা নেই, এখন একটু কষ্ট করো।বিয়ের পর আদর করে পুষিয়ে দিবো নে।ইস,মুখটা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই তোমাকে আমাদের রাজ্য নিয়ে যাবো।তবে তার আগে তোমার বর্তমানের স্বামীকে তো মারতে হবে।ওকে না মারলে তোমাকে তো আমি হাসিল করতে পারবো না।

আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।তখনি মুখের মধ্যে লোকটা পানির ঝাপটা মারলো।চমকে তার দিকে তাকালাম।তিনি বাজ পাখির নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলাম।খুব কষ্ট করে বললাম।

আমিঃ আমাকে একটু পানি দিবেন?আমার বড্ড তৃষ্ণা পেয়েছে। আমার গলা শুকিয়ে গেছে।

🌨️🌨️🌨️

আমার কথা শুনে সে হো হো করে হেসে উঠলো। মনে হচ্ছে আমি খুব মজার একটা জোকস বলেছি।জঙ্গল কাঁপানো হাসি থামিয়ে আমার সামনে এসে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো।

ইশালঃ খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেক কষ্ট। তোমাকে তো কষ্ট দিতেই এখানে এনেছি আমার রাণী।তোমার কষ্ট টের পেয়ে তোমার নাগর ছুটে আসবে।আর তাকে আমি মেরে এই জঙ্গলে পুঁতে দিবো।তোমার শ্বশুর, শাশুড়ী কান্নার জন্য মেঘপুত্রের লাশটাও পাবে না।

আমিঃ আপনি আমার স্বামীর কোন ক্ষতি করবেন না।তাহলে আমি আপনাকে ছারবো না।

ইশালঃ তুমি তো বিয়েই মানো না।এখন আবার স্বামীর জন্য ভালোবাসা উথলে পরছে কিভাবে?বিষয়টা অনেক আকর্ষণীয়।আমার বউ আমার সামনে আরেকজনের নাম নেয়। তা কি আমি মেনে নিবো বলো।চুপচাপ আমায় বিয়ে করতে রাজী হয়ে যাও।আমি কোন ঝামেলা করবো না।

আমিঃ আমি বিবাহিত। আমি বিয়েটা মানি কিংবা না মানি।আমার বিয়ে হয়েছে। যার সাথে হয়েছে সে আমার স্বামী। আমি তাকে তালাকনামা দেইনি।কিংবা সেও আমায় দেয়নি।আল্লাহর হুকুমে আমাদের বিয়ে হয়েছে। আপনি কি জানেন?প্রত্যেক নর-নারীকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে।

ইশালঃ গলার তেজটা একটু বেশি বেরে গেল মনে হলো।এতক্ষণ তো ক্ষীণ শোনা যাচ্ছিলো।একদম উঁচু গলায় কথা বলবে না।তাহলে কিন্তু ভুলে যাবো তুমি কে?

মুখ ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগে।এবার এগিয়ে এসে আমার গলা চেপে ধরলো। আমার চোখ মুখ উল্টে আসছে।সবকিছু অন্ধকার দেখছি।কিছু সময় পর সে আমাকে ছেড়ে দিলো।

ইশালঃ এটা শুধু একটু ঝাপসা দেখিয়ে দিলাম।ভালো থেকো।আমার আবার তোমার মেঘপুত্রের আদর,যত্নের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। একবার তো মরতে মরতে বেঁচে গেছে। এবার বাঁচতে পারবে না। আমি বাঁচতে দিবো না। একদম পালানোর চেষ্টা করো না।যদিও তুমি তোমার শক্তি কাজে লাগাতে পারো না।তারপরেও সাবধানের মার নেই। এই যে সাপগুলোকে দেখছো।তুমি এই গোল দাগের বাইরে গেলেই তোমাকে দংশন করবে।কিন্তু এই গোল দাগের ভেতরে কখনো প্রবেশ করবে না।আমি ফিরে এসে তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাবো।এখন একটু আরাম করো।আগামীকাল তো আবার আমাদের বিয়ে।

আমিঃ মরে যাবো তাও তোর মতো কাপুরুষকে বিয়ে করবো না।আমার স্বামী আছে।বিয়ে জীবনে একবারি হয়।হাজার বার নয়।

ইশালঃ আচ্ছা, তুমি কি জানো তোমার স্বামী কে?ওহ্ তুমি জানবে কি করে? তুমি তো তখন নিজের মধ্যে ছিলে না।আমি বলছি তোমার স্বামী কে?মেঘরাজ্যের একমাত্র মেঘপুত্র আবরার আওসাফ আয়িশ। আয়িশকে চিনেছো?তোমার প্রাণ প্রিয় বন্ধু আয়িশ রহমান। যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারো।সেই তোমাকে ধোকা দিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে।

আমিঃ আমার যদি আয়িশের সাথে বিয়ে হয় তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ। আমি অনেক খুশি।আল্লাহ আমার মনের মানুষের সাথে আমাকে মিলিয়ে দিয়েছে। তাতে আপনার এতো টেনশন করতে হবে না।আমি আয়িশকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিলাম।তারপরেও তোর মতো কুলাঙ্গার কে বিয়ে জীবনেও না।আমার স্বামী যদি সত্যি আয়িশ হয়। তাহলে এখান থেকে আমায় ঠিক নিয়ে যাবে।

ইশালঃ মুখে কথার খই ফুটছে মনে হচ্ছে। এখন এত শক্তি পাচ্ছো কোথা থেকে? চুপ একদম চুপ।

আমিঃ আমি কথা বলবোই। আমাকে থামাতে পারবেন না।

ইশালঃ খুব বেশি কথা বলছো।কিছু বলছি না বলে চটাস চটাস কথা বের হচ্ছে। সারা পৃথিবী এক করলেও তোমাকে আয়িশ খুঁজে পাবে না। কারণ তুমি এখন কোথায় আছো তা একমাত্র আমি ছাড়া আর কেউ জানে না।

আমিঃ কে বলেছে কেউ জানে না?আমার আল্লাহ সব দেখছে।সে তোকে ছারবে না। আল্লাহ ঠিক আমাকে সাহায্য করতে আমার আয়িশকে পাঠাবে।ও আমাকে খুঁজে বের করে তোকে শেষ করবে।

ইশালঃ এতো বিশ্বাস আয়িশের ওপর।বিশ্বাস করা ভালো তবে অতিরিক্ত নয়।তোমার স্বপ্ন আয়িশ তোমাকে বাঁচাবে। এবার মনে হয় সেটা স্বপ্নই থাকবে।বাস্তবে রূপান্তর হবে না।

হঠাৎ করে আমার কথা বলার জোর কি করে আসলো কে জানে? নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে দিয়েছে। আমি দূর্বল থাকলেও এখন কথা বলতে পারছি।অনেকটা রেগে বললাম।

আমিঃ আমি পৃথিবীর যেই প্রান্তে থাকি আয়িশ আমাকে ঠিক খুঁজে নিবে।তোর বিয়ের স্বপ্ন এবার চুরমার হবে।কবরে গিয়ে বাকিটা বুঝিস।আয়িশ যদি আমার স্বামী হয় তাহলে তোকে আমাকে আটকে রাখার শাস্তি ইনশাল্লাহ দিবে।কাপুরুষের মতো মুখে মাস্ক পরে সামনে কেন এসেছেন। লজ্জা করে না। যে নিজের চেহারা আমার থেকে লুকিয়ে রাখে সে নাকি আমার আয়িশের সাথে লড়াই করবে।হাউ ফানি।

আমার কথা শুনে সে তেড়ে এসে আমাকে এত জোরে একটা থাপ্পড় মারলো যে আমি চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলাম।ঠোঁট কেটে গেছে। মাথাটা ভন ভন করছে।কানে ঝিম ধরে আছে। ধীরে ধীরে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এলো।তারপর_______

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here