আমার_অপ্রিয়_আমি,পর্বঃ৬খ

আমার_অপ্রিয়_আমি,পর্বঃ৬খ
রিলেশন_সিরিজ
Ipshita_Shikdar (samia)


ঐদিনের পর থেকে কাব্য ইপশির খেয়াল রাখলেও আগের মতো পাগলামো করেনা কিংবা ভালোবাসাযুক্ত কথাগুলো আর বলে না। যা ইপশিকে খুব পোড়ায়, অদ্ভুত এক শূণ্যতা গ্রাসিত করে তাকে। এর মধ্যেই নববর্ষের অনুষ্ঠান চলে আসে যার এরেঞ্জমেন্ট করার দায়িত্ব সবসময়কার মতো কাব্যর কাঁধে পড়ে। নিয়মানু্যায়ী প্রধান দায়িত্বে কাব্য থাকলেও কাজ জুনিয়ার ও সিনিয়র মিলে করে। প্রতিটি সিনিয়রের সাথে একজন করে জুনিয়ার থাকবে। তাই কাব্য নিজের সাথে ইপশিকে নেয় কিন্তু সে তো জানতো না এই মেয়ে জন্মের অলস।

স্টেজ প্ল্যানিং ও ডেকোরেশনের জন্য সকাল সকাল ইপশিকে কল করে কিন্তু সে তো তখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলো। তাই কল পিক করে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে উঠে,

— হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম! কে বলছেন?

আমি উত্তর দিবো কি আমি তো ইপশির কণ্ঠ শুনেই বিমোহিত এবং নেশায় পড়ে গিয়েছি। এতো মধুময়ও যে কারো গলা হতে পারে তাতো জানাছিলো না আমার। মনে হচ্ছে এই কণ্ঠতেই ব্র্যান্ডেড ওয়াইন ও ভোটকা মিশ্রিত আছে। ইচ্ছে করছে মন ভরে আদর করতে তাকে… জিজ্ঞেস করতে এতো মিষ্টি কেনো তুমি বলো তো! কথা থেকেও যেনো শিরা বেয়ে পড়ে আর এই প্রেমিক পুরুষটা লোভে পড়ে যায়।

— এই যে কথা বলছেন না কেনো? এমনিতেই সকাল সকাল কল দিয়ে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন।

ইপশির ঝাঁঝালো কথায় কাব্য নিজের নেশার ঘোর থেকে বের হয় এবং কিছুটা আমতাআমতা করে বলে,

— আমি কাব্য। তোমার এখন ভার্সিটিতে আসা লাগবে কিছু কাজ আছে। আই মিন স্টেজের ডিজাইনটা কেমন হবে তাছাড়া ডেকোরেশন এবং আরও কত কি।

ইপশির এতো কাজের কথা শুনে মাথা ঘুড়ানোর অবস্থা কারণ সে ছোটবেলা থেকেই কাজ থেকে দশ হাত দূরত্ব বজায় রেখে চলে। সোজাভাবে অলস প্রকৃতির আর কি! তাই একটু বিরক্তিমাথা গলাতেই বললো,

— এতো সকাল সকাল আমি।আসতে পারবো না। আমি এখন ঘুমাবো তাই আপনি নিহাম ভাইয়া বা অন্যকারো হেল্প নিন কিংবা নিজে একা করুন। আমি ঘুমাচ্ছি, বাই!

এটুকো বলেই কাব্যকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে ঘুমিয়ে গেলে। এদিকে কাব্য তীব্রভাবে ব্যথিত ইপশির আচারণে তাই এক ক্লান্তিজনক দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

— আমি জানি তুমি আমার উপর বিরক্ত তাই-ই নববর্ষের অনুষ্ঠানের এরেঞ্জমেন্টের কাজেও আগ্রহ দেখাচ্ছো না। কিন্তু কি করবো বলো ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়, ছাড়া সম্ভব না তোমায়, তোমায় বিরক্ত করে না থাকা সম্ভব নয়। কবে বুঝবে তুমি আমার ভালোবাসা? কবে? আমি যে বড্ডমরিয়া হয়ে যাচ্ছি তোমার একটুখানি ভালোবাসা পেতে।

ইপশি।সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠে দেখে সাড়ে আটটা বাজে, আর তার দশটার দিকে একটা দরকারী লেকচার এটেন্ড করতে হবে বলে তাড়াতাড়ি গোসল করে আসলো। আলমারি খুলে তার নিল রংয়ের থ্রিপিসটা বের করে পড়ে নিলো। বলা বাহুল্য নীল কাব্যর প্রিয় রং এবং আজ ইপশির কাব্যর প্রিয়তমা রূপ নিতে মন চাইছে। তাই জামার সাথে একহাত ভর্তি নীল কাঁচের চুড়ি এবং অন্যহাতে ঘড়ি, কানে একজোড়া সিলভারের ঝুমকা, চোখে গাঢ় কাজল, ঠোঁটে হালকা খয়েরি রংয়ের লিপস্টিক। চুলগুলো খোঁপা করে সব সাজসজ্জা ঢেকে নিলো হিজাবের আড়ালে শুধু মুখশ্রী দৃশ্যমান। আর হাতের সাজসজ্জা ঢাকলো ওড়না চাদরের মতো শরীরে নিয়ে মুড়িয়ে নিয়ে। তারপর বের হয়ে গেলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

ক্লাসে যেয়ে জানতে পারলো ক্লাস হবে না তাই নিলা ও ইপশি চলে গেলো হলরুমে নববর্ষের অনুষ্ঠানের জন্য নিজেদের কাজ সম্পূর্ণ করতে। ইপশির উদ্দেশ্য অবশ্য কাজ করা নয় কাব্য। সে আজ চাচ্ছে কাব্যকে নিজের সাজসজ্জায় বিমোহিত করতে। কিন্তু যেয়ে যা দেখলো তাতে তারই রাগে মাথা ইপশি দেখলো ঐদিনের মেয়েটা কাব্যর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে, হাসাহাসি করছে আবার কখনো কখনো হাসতে হাসতে গায়েও হাত দিচ্ছে। ইপশি মনেমনে বলে উঠে,

— বাহ! ভালোই তো চলে আমাকে ছাড়া আর বলে কিনা আমাকে ছাড়া থাকতে পারেনা। বাংলা সিনেমার ডায়লগ ছিলো সব। হুহ! যাকগে তার যা ইচ্ছে করুক আমিও আমার যা ইচ্ছে তা করবো।

নিলা ও ইপশি সিনিয়রদের নিকট এগিয়ে যায় কাজ বুঝে নিতে। একজন সিনিয়র আপু তাদের বলে,

— নিলা তুমি তোমার পার্টনার নিলয়ের কাছে যাও সে তোমাকে কাজ বুঝিয়ে দিবে। আর ইপশি তোমার পার্টনার তো কাব্য ছিলো সে যেহেতু রিতুর সাথে কাজ করছে তাহলে তুমি রিতুর পার্টনার মানে তোমার ব্যাচমেট শুভের সাথে কাজ করো। ওকে আমি বলে দিয়েছে ইউ উইল জাস্ট হেল্প হার।

ইপশি ও নিলা দুজনেই দুজনের পার্টনারের কাছে চলে যায়। ইপশির সাথে যে ছেলেটা কাজ করছে তার এই ভার্সিটিতে আজই প্রথম দিন। তাই সে কাব্য ও ইপশির ব্যপারটা জানে না। ফলে একটু বেশিই যেচে কথা বলছে ইপশির সাথে… আর ইপশিও তার কথায় তাল মিলাচ্ছে। কারণ ছেলেটা বেশ ফ্রেন্ডলি এবং ডিসেন্ট লাগছে তার কাছে… তাছাড়া কারো সাথে একদম বাইরের কথাবার্তা না বলে শুধু কাজ করে যাওয়া কোনো স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। শুভ কাজ করতে করতে খেয়াল করলো ইপশি ঘেমে গোসল হয়ে গিয়েছে।

— আরে ইপশি তুমি তো পুরো ঘেমে নেয়ে গেছো!

— হ্যাঁ, আসলে আমি গরম সহ্য করতে পারি না তাই অল্প গরমেই অতিমাত্রায় ঘামিয়ে যাই। আর এখানে তো একটু গরমই আর কাজও করতে হবে, কি করার?

— হুম। তবে তুমি ওড়নাটা খুলে ফেলো হিজাব তো পড়েই আছো। তাই আই গ্যাস তোমার কোনো সমস্যা হবে না।

— তা অবশ্য ঠিকই বললে।

ইপশি তার ওড়না খুলে ব্যাগে রেখে দিলো। যার কারণে ইপশির চুড়ি পরিহিতা হাতটা বের হয়ে গেলো যা দেখে শুভ বললো,

— বাহ এক মুঠো চুড়িতে তো তোমার হাত চমৎকার লাগছে… একদম গ্রামের বাঙালি রমণীদের মতো!

— ধন্যবাদ। কিন্তু প্রশংসা কি আসল ছিলো না নকল?

— আরে বাবা আসলই। তোমার নকল তারিফ করতে যাবো কোন দুঃখে… তুমি কি আমার গার্লফ্রেন্ড শুভ্রতা নাকি? তাছাড়া তোমার হাতে নীল রঙটা বেশ মানিয়েছে। কোথা থেকে নিয়েছো?

শুভের কথায় ইপশি হাসতে হাসতে বললো,

— তার মানে শুভ্রতাকে মিথ্যে বলো। নিয়েছি তো একটা ফেসবুক পেজ থেকে তবে তুমি জেনে কি করবে?

শুভ একটু লজ্জা পেয়ে আমতাআমতা করে বললো,

— শুভ্রতার জন্য নিবো। তাকে সারপ্রাইজ দিতে আমাদের এনিভার্সারি আসছে তো তাই আর কি! তা দাম কত আর কোন পেজ একটু ডিটেইলস বলো।

— ওহ আরিজা’স কালেকশন থেকে প্রাইস দুইশো টাকা। এই শোনো সাথে একজোড়া সিলভার ঝুমকাযুক্ত বালা কিনো কারণ একসাথে পড়লে জোশ লাগবে।

— আচ্ছা, কিন্তু কি কালার নিবো সেটা বুঝতে পারছি না। আর ওর সাইজ কি জিজ্ঞেস করলে তো বুঝে ফেলবে সারপ্রাইজ তো হবে না তাহলে… তোমার হাতের হবে কিনা?

সে হাত ভালোভাবে দেখে বললো,

— তোমারটাই হবে। তুমি এক কাজ করে এই নাও আমার ফোন একটা পছন্দ করে অর্ডার করে ফেলো। এই দাঁড়াও কতক্ষণ ধরে তুমি তুমি করে কথা বলছি আর ভালো লাগছে না। আফটার অল উই আর ব্যাচমেট সো উই শুড বি ফ্রেন্ডস রাইট?

— হুম।

শুভ নিজের হাত এগিয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার জন্য কিন্তু ইপশি যেই না তার হাতে হাত রাখবে তখনই একজন এসে তার হাতটি নিজের হাতে নিয়ে নেয়। শুভ অবাক হয়ে ব্যক্তিটির দিকে তাকাতেই দেখে কাব্য। কাব্য জোরপূর্বক মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,

— আসলে সামি বেবি ছেলেদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে অনিচ্ছুক। কারণ তাদের সাথে কথা বলতে পছন্দ করে না কিংবা কমফোর্টেবল নয় তাই ডোন্ট মাইন্ড।

ইপশি অন্যসময় হলে কাব্যর কথায় সায় জানাতো তবে আজ ভার্সিটিতে এসে তাকে রিতুর সাথে দেখে এমনিতেই রেগে আছে। তাই ঝাঁঝালো গলায় বললো,

— আমি কি বলেছি আমি শুভের সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই না তাহলে আপনি কেন উইদাউট রিজন নাক, হাত, পা গলাচ্ছেন। শুভ আমার কোনো সমস্যা নেই তোমার সাথে কথা বলতে তাই উই আর ফ্রেন্ডস।

কাব্য বিড়বিড় করে বললো,

— বাহ! এতোদিনের পরিচয়ে আমাকে তুমি সম্বোধন করলো না অথচ এই ছেলেকে প্রথম সাক্ষাতেই তুমি করে বলছে। পাখা গজিয়েছে না তোমার কয়েকদিন ধরে কিছু বলছি না দেখে, আজ খালি একা পাই। কারণ এখন কিছু বললো অযাচিত সিনক্রিয়েট হবে।

কাব্য কি বলছে বুঝতে না পেরে ইপশি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

— কিছু বললেন মনে হলো। যদি বলে থাকেন তো আবার বলেন কারণ আমি শুনিনি।

— নাথিং মাচ শুধু বললাম তোমার যেহেতু সমস্যা নাই আমার কি।

— ওহ।

কাব্য সেখান থেকে চলে গেলো আর তারাও নিজেদের কথাবার্তা ছেড়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। হঠাৎ ইপশিকে একজন মেয়ে এসে বললো,

— আপু আপনাকে দ্যুতি মিস দুইতলার কর্ণারের ক্লাসরুমে যেতে বলেছে। তার নাকি প্রয়োজন আপনাকে…

— ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি।

ইপশি দুইতলার ক্লাসরুমের সামনে আসতেই একটি হাত তাকে একটানে ভিতরে নিয়ে আসলো এবং ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। ইপশি উপরে না তাকিয়েই উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে,

— এই আপনি কি স্বাভাবিকভাবে আমাকে ডাকতে পারেন না কিংবা বলতে পারেন না অমুক জায়গায় আসতে… আমি কি না করেছি আপনাকে? পাগলছাগলের মতো খালি হাত ধইরা টানেন! বিরক্তিকর!

কথাটা যেনো কাব্য তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। এক ঝটকায় ইপশিকে নিজের সাথে মিশিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,

— আমার বেলায়ই তোর সব সমস্যা, বিরক্তি আরও কত কি! ঐ ছেলের সাথে তো কত ভাব লাগালি তাও মাত্র একদিনের পরিচয়ে। তার উপর আবার তার সাথে হাতও মিলাতে যাচ্ছিলি। বাহ! আমি জাস্ট স্পিচলেস তোর কার্যকলাপে… ঐ ছেলে তো এর শাস্তি পাবেই বাট তুইও বাদ যাবি না এবার।

শাস্তির কথা শুনে একটু থতমত খেয়ে গেলো ইপশি তাই ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— শ-শাস্তি! কিসের শাস্ত? কি শাস্তি? আমি তো কিছুই করিনি তাহলে শাস্তি কেন পাবো?

— ওরে আমার বেবিটা! কিচ্ছু করেননি আপনি আমি তো স্বপ্নে দেখেছি আপনি ঐ ছেলের সাথে কথা বলছিলেন সেটাও সাধারণ ভাবে নয় বেশ হেসে হেসে। আবার আপনার প্রশংসাও করেছে সে। এমন কি হাতও ধরতে যাচ্ছিলো। কি অদ্ভুত স্বপ্ন তাই না? একদম রিয়েলিস্টিক!

— ত-তো কি হয়েছে? হাত ধরতে তো আর পারেনি।

— কি হয়েছে তাতো পরে বুঝাবো। আগে আপনার হাতটি দেখি যার প্রসংশা করছিলো ঐ ছেলে… কি এতো সেজেছেন আপনি আমাকেও দেখান সবাই তো দেখেছেই।

কাব্য হাতজোড়া নিজের সামনে টেনে ধরে তীক্ষ্মদৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় তারপর তার হিজাবটিও খুলতে হাত এগুতোই সে চিৎকার করে উঠে,

— নাহ! প্লিজ আমার হিজাব খুলবেন না। আমি ওড়না খুলে ব্যাগে রেখে দিয়েছি তাই…

— আচ্ছা ওড়না পড়ে তুমিই খুলে নাও হিজাব। তারপর তোমার শাস্তি শুরু!

ইপশি মাথা ঝাঁকিয়ে ব্যাগ থেকে ওড়না বের করে তা বুকে জড়িয়ে নেয় আর হিজাব খুলে ফেলে। কাব্য ততক্ষণ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিলো। তাই ইপশির দিকে তাকাতেই সে থমকে যায় কারণ মেয়েটা আজ প্রথম এতোটা সাজসজ্জা করে ভার্সিটিতে এসেছে। কাব্য মনে মনে ভাবছে,

— ছেলেটার কথাই ঠিক, দেখতে পুরো গ্রামবাংলার রমণীদের মতো লাগছে। কিন্তু কি যেনো মিসিং… শাড়িই! শাড়ি বাদ পড়েছে। বিয়ের পর ইপশিকে রোজ শাড়ি পড়তে এবং এভাবে তৈরি হতে বলবো।

এগুলো ভেবেই মিটমিট করে হাসছিলো, হঠাৎই মনে পড়লো ছেলেটা ও ইপশির কথোপকথনের ব্যপার। তাই আবার নিজের পুরাতন রূপে ফিরে আসলো।

— বাহ! বেশ ভালোই তো সাজসজ্জা করে এসেছো। ঐ ছেলেটাকে দেখানোর জন্য বুঝি।

কথাটা শুনতেই ইপশির পুরো শরীরে যেনো মরিচের ছিটে লাগলো কারণ সে তৈরি হয়ে আসছে কাব্যর জন্য… আর সে একবারও তো ঠিকভাবে দেখেনিই বরং দোষারপ করছে।

— হ্যাঁ, তার জন্যই সেজেছি। আর শুধু তার জন্য কেনো পুরো ভার্সিটির হট হট ছেলেদের দেখানোর জন্যই তো এভাবে এসেছি। তাহলে আমি যাই তাদের দেখিয়ে আসি, ঠিকাছে?

বলে নিজের চুলের কাটা খুলে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে যেতে নিলে কাব্য তাকে দরজার সাথে ঠেকিয়ে গাল চেপে ধরে বলে,

— একটা থাপ্পড় লাগাবো ফাজিল মেয়ে! তোকে এভাবে দেখার অধিকার শুধুমাত্র তোর স্বামীর যা আমি ভবিষ্যতে হবো। তাই তোর এই রূপ, যৌবন এমনকি মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সব আমার আমানতস্বরূপ তোর কাছে গচ্ছিত। রক্ষা না করতে পারলে আমানতের খিয়ানত করা হবে!

— শুধু স্ত্রীই কি স্বামীর আমানত, তার অলংকার? আল্লাহ তো বলেছেন স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছে তার অলংকাররূপ। তাহলে আমার আমানতও তো তোমার কাছে গচ্ছিত সামলাতে না পারলে কি তুমি মুনাফিক হচ্ছো না? আমি কোনো ছেলের সাথে কথা বললে সমস্যা আর তুই যে একেকজনের গায়ের উপর পড়োস তখন কিছু না, তাইনা? মামারবাড়ির আবদার পাইসে। ছাড় আমাকে! একদম ধরবি না আমারে ঐ উড়নচণ্ডী মাইয়ার কাছে যা!

ইপশির কথায় কাব্য থতমত হয়ে গিয়েছে অথচ তার মনে সুখানুভূতিরা এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে। কারণ তার ভালোবাসা তাকে নিয়ে হিংসা করছে অন্যদের সাথে।

ভালোবাসা ও সম্পর্কেরর খুব জরুরি উপাদান ঈর্ষা। এটাকে মনের গহীনে সৃষ্ট ভালোবাসা প্রকাশের প্রথম ধাপ বা মাধ্যমও বলা যায়। ছোট্ট শিশুই একটু বুঝদার হলে তার ভালোবাসার মানুষ বিশেষ করে মাকে নিয়ে বাকিদের সাথে ঈর্ষান্বিত হয়। আসলে ঈর্ষা মানুষের কোনো গুণাগুণ নয় বরং বৈশিষ্ট্য। যার তীব্রতা ও নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভর করে তার ফলাফল।

কাব্য হ্যাবলার মতো আপনমনে কি যেনো ভেবে যাচ্ছে যার ফলে তার হাতের বাধন কিছুটা আলগা হয়ে গিয়েছে। আর সে তা দেখে বিরক্ত হয়ে জোরে ধাক্কা দিয়ে কাব্যকে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে বের হয়ে যেতে নেউ। ধাক্কা খেয়ে কাব্য নিজের স্বাভাবিকতা ফিরে পায় এবং ইপশিকে কোলে তুলে নেয়। ইপশি ছোটাছুটি করলেও ছাড়ে না বরং ইপশিকে একটা বেঞ্চিতে বসিয়ে তার কোলে জোর করে মাথা রেখে চোখজোড়া বন্ধ করে বলে উঠে,

— আজ সারাদিন এই কাজের দখল গিয়েছে মাথাটা বড্ড ব্যথা করছে একটু চুলগুলো টেনে দাওনা, প্লিজ!

কাব্যর কণ্ঠতেও ক্লান্তি স্পষ্ট ছিলো তাই ইপশি কিছু না বলেই কাব্যর মাথা টিপে দিতে থাকে আবার চুলও টেনে দিচ্ছে। হঠাৎই কাব্য বলে উঠে,

— রিতুর সাথে সে কাজের কথাই বলছিলাম যে কাজটার জন্য সকালে তোমায় কল করেছিলাম। আর তুমি কেটে দিয়েছিলে। তাছাড়া একজনের সাথে কাজ করলে একটুআধটু কাজের বাহিরের কথা হয়ই। বাট তোমার যেহেতু খারাপ লেগেছে তাই আমি আর কোনোদিন রিতু কেনো অন্য মেয়ের সাথে কোনো অতিপ্রয়োজন ছাড়া কথা বলবো না। তার আগে বলো ডু ইউ লাভ মি?

কাব্যর প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে ইপশি দুষ্টু হেসে উত্তর দেয়,

— আজ আমি ঐ ছেলের জন্য না শুধুমাত্র তোমার জন্য সেজে এসেছিলাম। কিন্তু আফসোস এখন পর্যন্ত একবার বললোও না কেমন লাগছে শুধু রাগারাগি আর রাগারাগি।

চলব…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here