আমার_অপ্রিয়_আমি,শেষপর্ব (২য় খণ্ড)

আমার_অপ্রিয়_আমি,শেষপর্ব (২য় খণ্ড)
রিলেশন_সিরিজ
Ipshita_Shikdar samia


ইপশি বেডরুম থেকে বের হয়ে বড় ভাবির ঘরে চলে গেলো। আর কাব্য সারা ঘর জুড়ে পায়চারি করছে এবং ভাবছে কি দিয়ে রাগ ভাঙাবে কারণ ইপশির রাগ ভাঙানো প্রচুর কষ্টকর। যদিও সে কথায় কথায় রাগ করে তবে তা ভাঙানো সহজ কারণ নিজেই ভুলে যায়। তবে কারো উপর যদি অভিমান জমে তবে তার খবর হয়ে যায়…

ড্রইংরুমে বড়রা তখনো বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে। ইশা ইপশিকে একা রুমে ঢুকতে দেখে বড়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইপশির পিছু গেলো। কারণ সে ইপশিকে হারাতে চায় না। ব্যপারটা সবার চোখের আড়াল হলেও আরাভ ঠিক খেয়াল করলো। মনে মনে বললো,

— আল্লাহর কাছে দোঁয়া করি, তাদের মাঝের সব সমস্যা দূর হোক। আগের সম্পর্ক ফিরে পাক।

কারো দরজায় নক করার আওয়াজে পিছন ফিরে তাকায় ইপশি। তাকাতেই দেখে চোখে একফোঁটা অশ্রু নিয়ে ম্লান হেসে দাঁড়িয়ে আছে। বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো ইপশির, ইশা আর ইপশির কথার অপেক্ষা না করে ঘরে ঢুকে ইপশির হাত নিজের হাতের মাঝে ঢুকরে কেঁদে দিলো এবং ভাঙা গলায় বললো,

— স-সরি। আমাকে ক্ষমা ক…

বাক্যটি শেষ করতে দিলো না ইপশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নিজের প্রিয় বান্ধুবী। ঢুকরে কেঁদে দিলো সেও, দুজনেই আজ কাঁদছে তবে বিরহবেদনায় নয় বরং মিলনসুখে। ইপশি কাঁদতে কাঁদতে বললো,

— আই এম সরি ইশা, যেই সময় তোর সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো আমার সেই সময় আমি তোকে দোষারোপ করতে ব্যস্ত ছিলাম। আর তুই আমার জন্য এতো বড় স্যাক্রিফাইস করলি!

— স-স্যাকরিফাইস! কিসের স্যাক্রিফাইস?

— ইশা আমি তোর ছোটবেলার বেস্টি, আই নো ইউ। আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে তুই কখনো ডিভোর্স দিতি না, বরং কাব্যর বিয়ে আটকাতি। তোর ভালোবাসা জেদালো!

— হুম, সর্বপ্রথম আমার মস্তিষ্কে এটাই এসেছিলো। তবে তোর জায়গায় অন্যকেউ থাকলেও আমি এটা করতে বাধ্য ছিলাম, কারণ জোড় করে ভালোবাসা হয় না। আর সম্পর্ক ভেঙেছিলো আমার জন্য তাই কাব্যকে কি করে বলতাম ফিরে আসতে আমার আকাশে… দেখ মেয়ের সাথে তুইও কাব্যকে দেখেছিলি আর আমিও দেখেছিলাম। তুই কষ্ট পেলেও, রাগ করলেও ক্ষণিকের রাগ কিংবা কষ্টতে গা ভাসিয়ে দিসনি বরং সত্য জানার অপেক্ষা করেছিস, বিশ্বাস রেখেছিস নিজের সম্পর্ক ও ভালোবাসার উপর। আর আমি…

— যাক যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। এখন তো তুই আমার ভাবি আর আমি তোর ননদী। আমার স্বপ্নটা পূরণ করসে আল্লাহ, শুকরে আলহামদুলিল্লাহ!

— স্বপ্ন?

— হ্যাঁ, স্বপ্ন! আমার স্বপ্ন ছিলো আমার বেস্টিকে আমার ভাবি বানামু। তারপর সিরিয়ালের দজ্জাল ননদের মতো তোকে অর্ডার দিবো, খোঁচা দিবো। ইশ! কত্ত মজা লাগবে!

— হারামি! দাঁড়া আজ তোর খবর আছে!

ইপশি সারা ঘর বেয়ে দৌড়াচ্ছে, আর ইশাও তার পিছু নিচ্ছে বালিশ হাতে মারার জন্য। আরাভ ও কাব্য তা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখে হাসছে। এটাই তো বন্ধুত্ব… ঝগড়া, হাসি, কান্না বিনিময়ে যা রয়ে যায় আজীবন।এই সম্পর্কটা অনেক পবিত্র, একসময় তো প্রিয় মানুষ ছাড়াও থাকা যায় তবে বন্ধু ছাড়া জীবন নিঃস্ব নয় নিঃশেষ।

কারো হাসির শব্দে ইপশি ও ইশা হাসি থামিয়ে সামনে তাকায়। আর যা দেখে তাদের চক্ষু চড়কগাছ কারণ দুজন বজ্জাত হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আরাভ তো বলেই উঠে,

— কিরে থামলো কেনো? ভালোই তো লাগছিলো দুই পাগলের মারামারি।

ইপশি ও ইশা আয়নায় তাকিয়ে দেখে তাদের দুজনের চুল এলোমেলো হয়ে পাগলের মতো অবস্থা, তার উপর এ দুজন এখনো হাসছে। মুহূর্তেই রাগ উঠে যায় দুই কন্যার। ইশা তো খুব ইনোসেন্টলি আরাভের কাছে যেয়ে এক চিমটি কেটে দেয় আরাভের পেটে। আর ইপশি কাব্যর দিকে তাকিয়ে ভেঙচি কেটে রাগান্বিত মুখে চলে যায় রুম থেকে। এবার কাব্যর হার্টফেল করার দশা কারণ বউ তার এমনেই রাগের ঠেলায় কাছে ঘেঁষতে দেয় না এখন তো আরও রাগিয়ে দিলো।

তিনদিন পর,

আজ ইশা ও আরাভের এঙ্গেজমেন্ট। ইপশি ইশাকে নিয়ে সেই যে বেডরুমে ঢুকেছে পার্লারের আন্টিদের নিয়ে আর বের হয়নি। কাব্যর বউকে দেখার জন্য মনটা আনচান করলেও এঙ্গেজমেন্টের কাজের চাপে যেতে পারেনি। যদিও ঘরোয়া ভাবে কারণ সব ঘরের মানুষ তবুও কাজ তো কম নয়। কারণ আয়েশা বেগমের একমাত্র ছেলের এঙ্গেজমেন্ট বলে কথা। আর এমনিতেও গেলেই বা কি বউয়ের তো রাগ এখনো একদফাও কমেনি।

আঙটি পড়ানোর কয়েক মিনিট আগে ইপশি ইশাকে নিয়ে নামছে। উভয়কেই দেখতে অমায়িক সুন্দর লাগছে। ইশা অফ হোয়াইট আর পিংকের মধ্যে একটা লেহেঙ্গা পড়েছে সাথে চুলে মেসিবান, আর ইপশি ব্লাক কালার শারারা যেটার উড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা দেয়া। আরাভ ও কাব্য হা করে তাকিয়েছে নিজেদের বউয়ের দিকে। কাব্যর তো হার্টবিটস বেড়ে গিয়েছে কারণ একে তো সারাদিন বউকে কাছে পায়নি তার উপর যখন আসলো এভাবে…

বিড়বিড় করে সে বলেই ফেলে,

— হায় ম্যা মার যাওয়া তেরি আদাওয়ে পে মেরে জা!

পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো আরাভ, সে কথাটা শুনে মুচকি হেসে ফিসফিস করে বলে,

— কন্ট্রোল জিজু! কন্ট্রোল। আশেপাশে বহুত শালাশালি, একবার শুনলে সারাদিন মজা নিবে।

কাব্য নেশাপ্রবণ কণ্ঠে বলে,

— কন্ট্রোল ভাই তুমি করো! আমার তো বিয়ে করা বউ।

— হ্যাঁ, এইজন্যই ঘরে ঢুকতে দেয় না। চারদিন ধইরা আমার বউরে নিয়া ঘুমায় আজও ঘুমাবে আর তুমি আমার ঘরে…

কাব্য এবার আরাভকে চোখ মেরে দুষ্টু গলায়,

— দেখা যাবে শালাবাবু।

ইশা ও আরাভের আঙটি বদল হয়ে যায়। ইপশির হঠাৎ মনে হয় তার ওড়নার পিন খুলে গিয়েছে, আর তা ঠিক করতে বেডরুমে যায়। ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে পিন লাগাচ্ছিলো এমনসময় গেট লক করার আওয়াজ পায়, তাকিয়ে দেখে কাব্য। তার চোখে আজ অন্যরকম নেশা কাজ করছে, ভালোবাসার নেশা যেই নেশায় হাজারবার ডুব দিতে চায় ইপশি।

কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে,

— ক-কি হয়েছে? দরজা লাগালে ক-কেনো, আমি বাইরে যাবো!

কাব্য কিছু না বলে ইপশির দিকে এগিয়ে যায়। সে আগাচ্ছে আর তার প্রিয়তমা পিছাচ্ছে, আচমকাই হাত টেনে নিজের বুকে মিশিয়ে ফেলে তাকে। ইপশি কাঁপা গলায়,

— ছাড়ো।

বলে চলে যেতে নেয় কাব্য তার হাত ধরে বলে,

— এভাবে আমার সম্মুখে এসে, আমায় পাগল করে ভাবলে কি করে ছেড়ে দিবো আমি? বরং আমি তো এবার মিশে যাবো তোমাতে, খুঁজবো তোমার মাঝে তোমায় ভালোবাসার রহস্য।

উত্তরে আর কিছু বলতে পারে না ইপশি। সপে দেয় নিজেকে তার প্রিয়তমের হাতে। দুজন হারিয়ে যায় নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশের সেই রঙিন রাজ্যে।

সমাপ্ত

কাউকে ভালোবাসতে সে মানুষকে বিশ্বাস করা লাগে না, কিন্তু বিবাহবন্ধন ও সম্পর্কতে ভালোবাসা ছাড়া চললেও বিশ্বাস ছাড়া টিকে না। একই পরিস্থিতিতে ইপশি ও ইশানি দুজন পড়েছিলো তবে টিকেছে একজনের সম্পর্ক। কারণ একজন বিশ্বাস রেখেছে ও সত্য জানার অপেক্ষা করেছে আরেকজন ক্ষণিকের রাগ ও কষ্টে গা ভাসিয়ে প্রিয়জন হারিয়েছে।

আজকাল প্রায়শয়ই এরকম বিশ্বাসের অভাব ও সন্দেহর প্রভাবে রিলেশন এমনকি বিয়ে ভাঙতেও দেখা যায়। এই লকডাউনের মাঝেই পরিচিত একজনের তালাক হতে দেখলাম। বউ প্রতিরাতে সন্দেহ করে ঝগড়া করতো যদিও সে নিজেই জানতো কিছু নেই তবুও রোগ তো বাসা বেধেই ফেলেছে। একদিন ঝগড়ার মাঝে রাগের মাথায় দুজন দুজনকে তিন তালাক বা মৌখিক তালাক দিয়ে দিয়েছে। হুশ আসতেই মেয়ের মাথায় হাত, কেঁদেকেটে অস্থির। ছেলে তো থ হয়ে গেছে। তবে উপায় কি যা হওয়ার তো হয়েই গিয়েছে। সেখান থেকেই কনসেপ্টটা মাথায় আসলো।

হয়তো আপনার হাজব্যান্ড রাতে লেট আসছে, কারণ জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে যাচ্ছে। তার মানে এটা নয় আপনার সংসারে সিলসিলা নামক সিরিয়াল চলছে। হতে পারে তার কোনো বন্ধু-বোন-মা ইত্যাদির সমস্যা বা অন্যকিছু যা সে এখন আপনাকে বলতে ইচ্ছুক নয়। বিয়ে ইজ নট আ কেয়দি জীবন, বর-বউ দুজনেরই একটা আলাদা স্পেস আছে তাই অপরজনকে ফ্রাস্টেটেড না করে তার সমস্যা জানার অপেক্ষা করুন। আপনার দুর্ভাবনাও ঠিক হতে পারে তবে সেই মানুষটা যখন আপনার নেই অলরেডি চিট করেই ফেলেছে তার সাথে ঝগড়ায় জড়ানোর বা ঝামেলা করার কোনোরকম অর্থই হয় না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here