আমার_অপ্রিয়_আমি,পর্বঃ৫ক,পর্বঃ৫খ

আমার_অপ্রিয়_আমি,পর্বঃ৫ক,পর্বঃ৫খ
রিলেশন_সিরিজ
Ipshita_Shikdar (samia)
পর্বঃ৫ক

ব্রেকফাস্ট করে সেই যে ড্রইংরুমে বসেছি আর উঠার সুযোগ পেলাম না। ব্রেকফাস্ট থেকে উঠতেই আশেপাশে পাড়াপড়শি থেকে আন্টিরা চলে এসেছে নতুন বউকে দেখতে মানে আমাকে দেখতে আর কি। তাই প্রায় ঘণ্টা খাণেক ধরে বসে আছি হাসিমাখা মুখ নিয়ে। গালটাও যেনো ব্যথা হয়ে গিয়েছে হাসি মুখে থাকতে থাকতে। বড্ড বিরক্তিকর লাগছে তবে প্রকাশ করার স্বাধীনতাও নেই কারণ এটা শশুরবাড়ি। বেশ কিছুক্ষণ পর লোকজন গেলে আমিও উঠে নিজের ঘরে গেলাম।

মাগরিবের নামাজ পড়ে বাগানে এসেছিলাম হাঁটতে। বাগানটা মনোরম পরিবেশের সাথে মেঘলা লালচে আকাশটা এতোটা মনোমুগ্ধকর লাগছে যে অজান্তেই চোখজোড়া বদ্ধ করে গেয়ে উঠলাম,

আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে!
আমার দিনগুলো সব রঙ চিনেছে তোমার কাছে এসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে!
তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে,
ভোরের শিশির ঠোঁট ছুঁয়ে যায় তোমায় ভালোবেসে!

গান গাওয়ার মাঝে চোখ খুলতেই চুপ হয়ে যাই, কারণ দেখি একজোড়া চোখ মুগ্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নাহ, লোকটি কাব্য নয় আমার অপরিচিত কেউ। অন্য সময় হলে লোকটির পরিচয় জিজ্ঞেস করতাম তবে আজ চুপ করে আছি। লোকটি আমার থেমে যাওয়া দেখে ভ্রু কুচকে আমার দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,

— কি হলো গাওয়া বন্ধ করলেন যে… আমায় দেখে নাকি? ওহ! বুঝতে পেরেছি আমাকে চিনতে পারেননি, তাইতো?

— হ্যাঁ।

— আমি হলাম আপনার সরি তোমার একমাত্র দেবর তিয়াস। কাব্য ভাইয়ের একমাত্র ফুপাতো ভাই আমি। তোমায় আমার কথা বলেনি সে?

— নাহ, সে তো তার ভাই আছে এমনকিছু কখনো বলেনি।

— ওহ! আসলে কাব্য ভাইয়া আমায় তেমন একটা পছন্দ করে না। কারণ ছোটবেলায় ভাইয়ার জিনিসগুলো আমার মাত্রাতিরিক্ত পছন্দ হয়ে যায়। পরে দুজন এটা নিয়ে ঝগড়া লেগে যেতাম একদম মারামারি!

তিয়াস ছেলেটার কথা আমি হুহা করে হেসে দিলাম কারণ ছোটবেলার কথা নিয়ে কেউ এখন পর্যন্ত বসে থাকতে পারে তা জানতাম না। এভাবে নানা ব্যাপারে কথা হতে থাকে আমাদের মাঝে। ছেলেটা কথায় কথায় বেশ হাসাতে পারে তাই বারবার হাহা করে হেসে দিচ্ছে। হঠাৎ দেখলাম বাগানটায় কাঠগোলাপ গাছ। বলা বাহুল্য, কাঠগোলাপ আমার খুব প্রিয়। আমার গাছটার থেকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছেলেটা হয়তো বুঝতে পারলো তাই মালিকে দিয়ে আজকের তুলা ফুলের মাঝে থেকে একটি আনালে।

আমার সামনে ধরলো আমি নিতে যাবো এমনসময় কাব্য এসে আমাকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো,

— তোকে তো আমি ঘরে যেয়ে দেখবো আর তুই! জাস্ট স্টে ওয়ে ফ্রম হার। দূরে থাকবি আমার বউয়ের থেকে। আমার সব প্রিয় জিনিসগুলো তোর পছন্দ হয় বলে যে আমার বউয়ের দিকে নজর দিবি সেটা একেবারেই নয়। তাছাড়া গতবারের ভুল না আমি এবার করবো না তোকে করতে দিবো।

কাব্যর চোখের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলাম। তার চোখজোড়া রক্তিম হতে শুরু করেছে, ফর্সা নাকটা থেকে যেনো রক্ত পড়বে এতোটা লাল হয়ে আছে, হাতটি এতো শক্ত করে ধরেছে যেনো চামড়ার ভিতরে আঙ্গুলগুলো ঢুকিয়ে দিবে। মনে পড়ে গেলো অতিতের সেইদিন যখন প্রথম এবং শেষবারের মতো কাব্যকে এতোটা রেগে যেতে দেখেছিলাম।

অতিত,

সেদিনের ঘটনার পর কলেজে গেলে কাব্য বেশ কয়েকবার আমার সাথে কথা বলতে আসে। আমি তাই যথাসাধ্য এড়িয়ে যাই, কারণ এমন মানুষের সাথে কথা বলার ইচ্ছে বা রুচি কোনোটাই আমার নেই। কিন্তু একদিন কাব্য ও নিহাম ভাইয়া আমার ক্লাসরুমে এসে ক্লাসে উপস্থিত সকল ছাত্রছাত্রীকে বের হয়ে যেতে বলে। কাব্যর বাবা এই ভার্সিটির ট্রাস্টিজ মেম্বার হওয়ায় তার কথা মতো সবাই বের হয়ে যায়। একবারে পিছনে বসায় আমি সবার শেষেই বের হতে নিচ্ছিলাম এমনসময় কাব্য আমার হাত ধরে আটকালে এবং নিহাম ভাইয়াকে চোখের ইশারায় বের হয়ে যেতে বললো। এদিকে আমি নিজের হাত তার থেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছি।

আমার এই কাজে সে হয়তো বেশ বিরক্তই হয়েছিলো তাই একটানে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে উঠে,

— হোয়াট’স ইউর প্রবলেম ড্যামেট? আমি কি তোমাকে ইভ টিজিং করছি নাকি রেপ করতে নিচ্ছি যে এমন ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছো!

কথাগুলো বলেই আমাকে ছেড়ে সামনের টেবিলের উপর উঠে বসে। তার আচমকা ধমকে আমি নিশ্চুপ এবং স্থীর হয়ে যাই। তারপর নিচু ও শান্ত গলায় বলি,

— তাহলে আপনি আমাকে আটকিয়ে রেখেছেন কেনো? তাছাড়া আমার সাথে আপনার কোনো কথা থাকতে পারে না সেদিনের ঘটনার পর নাকি আরও টিজ করা বাকি আছে?

— উফফ! তোমার কথা বলার দরকার নাই থাকতে পারে তবে আমার তো আছে। আই ওয়েন্টেড টু সে সরি ফর হোয়াট হ্যাড হ্যাপেন্ড।

— হুম।

— এই মেয়ে! এই! হুম কি? তোমার কাছে কি আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি যে হুহা করছো! আমি তোমাকে সরি বলেছি সো সেটার উত্তর দাও। সে ইট’স ওকেহ!

কাব্যর কথায় বেশ বিরক্তবোধ করছিলাম। কারণ সে ভাবটা এমন করছে যেনো সরি বলে সে খুব মহৎকর্ম করে ফেলেছে এবং সরির উত্তরে ক্ষমা করেছি মানে ইট’স ওকেহ বলতেই হবে। ইচ্ছে তো করছে কিছু কথা শুনিয়ে দিতে কিন্তু কথা বাড়ানোর ইচ্ছে নেই বিধায় শুধু বলি,

— ইট’স ওকেহ। এখন আমি যাই?

— হ্যাঁ, এখন যেতে পারো তুমি।

সে জবাব দিতেই আমি বের হয়ে যাই সেখান থেকে। আর বের হতেই নিলা আমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে,

— দোস্ত তুই ঠিক আছিস তো? আই মিন ওই ছেলে কাব্য না কি যেনো উনি তোকে কি জন্য ডেকেছিলো? কি হয়েছে ভিতরে?

আমি নিলার প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবো তখন খেয়াল করলাম নিলা নয় আমাদের ক্লাসের প্রত্যেকে আমার পানে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না কারণ এখন যদি বলি যেই লোকটা সেদিন আমাকে এতোটা হেনেস্তা করেছিলো সে আজ সরি বলেছে ব্যপারটা কেউ ঠিকভাবে নিবে না। তাই চুপ করে আছি তখনই কাব্য এসে বললো,

— সরি বলেছি। আই মিন ক্ষমা চেয়েছি আমি ওকে সেদিনের জন্য… এটুকোই বলেছি তাকে এর চাইতে বেশি কিছু নয়।

আমিও তার কথায় সম্মতি জানালাম। সেদিনটা ভার্সিটিতে সেভাবেই কাটলো। তারপর থেকে মাঝেমাঝেই কাব্য আমার সাথে অযথা কথা বলার চেষ্টা করতো যা আমি উপেক্ষা করতাম অথবা হ্যাঁ বা না বলে চলে আসতাম।

এই ঘটনার তিনদিন পর আব্বু গাড়ি নিয়ে বাইরে যাওয়ায় আরাভ আমায় তার বাইক দিয়ে ভার্সিটিতে দিয়ে যায়। আমি সাধারণত বাইকে বসতে প্রচুর ভয় পাই। সেদিনও তার ব্যতিক্রম হলো না আমি ভয়ে বারবার আরাভের কানের সামনে চিৎকার করছি আস্তে চালানোর জন্য। আমার ভয় পাওয়া দেখে ক্যাম্পাসের সামনে এনে আরও উচ্চ গতি চালানো শুরু করলো এবং অনেক দ্রুত ব্রেক মারলো। এতক্ষণ বাইকের পিছনের দিকটা ধরে থাকলেও এখব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তার কাঁধ খামচে ধরি এবং ব্রেক করার মুহূর্তে তার থেকে বেশ খাণিকটা দূরত্ব রেখে বসায় শুধু মাথাটাই তার পিঠে পড়ে।

বাইক থেকে নেমেই আরাভকে আমার ব্যাকপ্যাক দিয়ে মারতে লাগলাম আর সে আমাকে হাত দিয়ে আটকাচ্ছে। একসময় ক্লান্ত হয়ে বাইকে বসে পড়ি যা দেখে সে গলা ছেড়ে হাসতে লাগে। আমি অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাতেই আরাভ হাসি থামিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর দুজনেই একসাথে হেসে দিলাম। কিন্তু আমাদের হাসিতে কেউ একজন রাগে ফুঁসছিলো। আরাভকে বিদায় দিয়ে আমি আমাদের ক্লাসরুমের দিকে যাচ্ছিলাম এমনসময় কেউ আমাকে একটানে ফাঁকা ক্লাসরুমে টেনে নিলো।

আমি ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছি। বেশকিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো কার্যক্রম টের না পেয়ে চোখজোড়া খুলতেই অজানা ভয়ে কেপে উঠি। কারণ আমার সামনে একটা চেয়ারের উপর বসে কাব্য আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার চোখজোড়ায় হিংস্রতা বিদ্যমান, রাগে নাকটা ফুলে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে, কপালের রগগুলো গোলাপি রংয়ের হয়ে সুস্পষ্ট হয়ে আছে। সবমিলিয়ে তাকে দেখতে কোনো ভয়ংকর জীব কিংবা জিনের চাইতেও কম কিছু লাগছে না। কিন্তু সে আমার উপর এমন রেগে আছে কেনো! আমি তো সবেমাত্র ভার্সিটিতে আসলাম তাহলে? কাব্যর দিকে তাকিয়ে দেখি সে একইভাবে আমার দিকে দৃষ্টি স্থীর করে রেখেছে।

তাই আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে উঠলাম,

— আ-আমাকে এখানে ক-কেনো আনা হয়েছে? মানে আমি কি কোনো ভুল করেছি তাহলে আ-আমাকে বলুন। আমি তো মাত্রই আসলাম ক্যাম্পাসে তাই আর কি!

আমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু না বলে সে বেশ শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,

— ঐ ছেলেটা কে?

— ক-কোন ছেলেটা? আমার তো কোনো ছেলে বন্ধু নেই ভার্সিটিতে। ভার্সিটি কেনো আমার জীবনেই কোনো বন্ধু নেই সব বান্ধুবী। আপনার বোধহয় কোনো ভুল…

আমার কথা শেষ করার আগেই সে উঠে দাঁড়িয়ে চেয়ারটা ঠাস করে লাথি দেয় এবং আমাকে দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে শান্ত কণ্ঠে আবার জিজ্ঞেস করলো,

— লুক! আ’ম নট ইন মুড অফ লিসেনিং জোকস। তাই সোজাসুজি বলো তোমাকে বাইকে করে নিয়ে আসা ছেলেটির সাথে তোমার সম্পর্ক কি?

তার শান্ত কণ্ঠেও রাগ সুস্পষ্ট ছিলো শুনেছি নিস্তব্ধতা ও নিরবতা নাকি ঝড়ের পূর্বাভাস। তাই ভয়ে ভয়ে বলে দিলাম,

— সে তো আমার খালাতো ভাই আরাভ। আজ আব্বু গাড়ি নিয়ে গিয়েছে তাই তার বাইকে করে আজ ভার্সিটিতে এসেছি।

আমার কথাটায় যেনো সে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে আমার হাত তার হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো,

— হোয়াট খালাতো ভাই! আপন ভাই হলেও নাহয় মানতাম তোমার তার বাইকে উঠা। খালাতো ভাইয়ের বাইকে কি করে উঠতে পারো,।তার কাঁধে কি করে হাত রাখতে পারো, পিঠে কি করে মাথা ঠেকাতে পারো তুমি? কি করে?

একে তো তার এভাবে জোরে হাত ধরায় ব্যথায় চোখে পানি এসে পড়েছে তার উপরে তার এমন কথা যেনো আমি তার কেনা পুতুল মেজাজ পুরোই খারাপ করে দিলো। স্বভাবগতই আমি রাগ নিয়ন্ত্রণে অসক্ষম। আজও সে কারণেই চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,

— আমি যার বাইকে ইচ্ছে তার বাইকে উঠবো! শুধু বাইক কেন যার ইচ্ছে তার কারেও উঠবো, তার সাথে ঘুরেবেড়াবো কিংবা যা ইচ্ছে তাই করবো। তুই বলার কে? আমার জীবনে নাক গলানোর তুই কে, হ্যাঁ?

আমার কথা তার রাগের আগুনে যেনো প্যাট্রোল ঢেলে দিলো। আমাকে আরও কাছে টেনে রাগান্বিত গলায় বলে উঠলো,

— আমি কে তাই না? আচ্ছা, তাহলে তো তোকে জানাতেই হয় আমি কে! চল আমার সাথে আজ শুধু তুই কেন পুরো ভার্সিটি জানবে তুই কে এই কাব্যর!

যদিও অন্যকোনো সময় হলে হয়তো সবাই জানবে কথাটা শুনে ভয় পেতাম, তবে রাগের মাথায় আমার অন্যকোনো অনুভূতি কাজ করে না। তাই আমি তখনও রেগে নিজেকে তার থেকে ছাড়ানোর প্রচেষ্টা করছি। কাব্য আমাকে সবার সামনে দিয়ে ভার্সিটি মাঠের মাঝে নিয়ে গেলো। যা দেখে সবাই ভিড় জমালো তা দেখতে। সে আমাকে নিজের সাথে চেপে ধরেসবার উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

— এই যে মেয়েটাকে দেখতে পারছেন! এই মেয়ের নাম ইপশি হোসেইন। তার আরেকটা পরিচয় সে এই ভার্সিটি ভিপি অর্থাৎ কাব্যর উডবি ওয়াইফ এন্ড এই মুহূর্ত থেকে সে আমার ফিয়োন্সে ও গার্লফ্রেন্ড হতে যাচ্ছে। আর ইউ নো হোয়াট’স দ্য বেস্ট, এঙ্গেজমেন্টটা এই ভার্সিটিতে এখনই হবে।

কথাগুলো বলে সে আমার হাতের অনামিকা আঙুলে জোর করে নিজের কনিষ্ঠ আঙুলে পরিহিতা আঙটি খুলে পড়িয়ে দিলো। সেই সাথে আমার হাতের পিঠে ঠোঁট ছুঁয়ে রাগী গলায় বললো,

— পেয়ে গেছো তোমার প্রশ্নের উত্তর? আমি তোমাকে ভালোবাসি বলে ভেবো না তোমার পিছন পিছন প্রেম নিবেদন নিয়ে ঘুরে বেড়াবো। আমি ভালোবাসার কাঙাল তাই তোমায় যেহেতু ভালবেসেছিই তোমাকে আমার হতে হবেই। তুমি চাও কিংবা না চাও! আর হ্যাঁ আমি কখনোই পছন্দ করবো না আমার ফিয়োন্সে অন্য পুরুষের ধরা, ছোঁয়া কিংবা কথা বলার মাঝে থাকুক। তাই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে তার থেকে সকল ছেলেকে কারণ নিজের প্রেয়সীকে শাস্তি দিতে পারবো না তাই সব ঝাল তার থেকেই তুলবো।

চলবে…
#রিলেশন_সিরিজ
#আমার_অপ্রিয়_আমি
#Ipshita_Shikdar (samia)
#পর্বঃ৫খ

তার কথা শুনে তো আমি সম্পূর্ণ স্তব্ধ কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। তাছাড়া ভাইয়া বা বাসার কেউ জানলে… ভয়ে আমার বুক এতোটা কাঁপছে যে কাব্যর কথা মাথায় আসছে না। কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই নিজেকে সামলে নিলাম। আমি নিজেকে সব পরিস্থিতিতে খুব সহজে মানিয়ে না নিতে পারলেও মেনে নিতে পারি। তাই কয়েক সেকেন্ডই যথেষ্ট ছিলো। আমি মৃদু হেসে কাব্যকে বললাম,

— হতে পারেন আপনি এই ভার্সিটির মালিক আর এটা আপনার নিজস্ব মহল তবে না আপনি আমার কেউ হন না আমি আপনার কেনা পুতুল। তাই প্লিজ আমাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন না! আমাকে আমার মতো থাকতে দিন আর আপনার রিং তার আগের স্থানে থাকতে দিন।

বলে আমি আঙটি নিজের অনামিকা আঙুল থেকে খুলতে নিবো তখনই কাব্য বলে উঠে,

— সামি বেবি ওটা যেখানে আছে সেখানেই থাকতে দাও। খুলার ভুল করো না অন্যথায় যা হবে তোমার সাথে তার জন্য আমাকে দায়ী করতে পারবে না।

— এসব চাপা অন্যকাউকে মাইরেন। আমি পুরান ঢাকার মেয়ে এসব চাপাবাজি করে আমাকে দমাতে পারবেন না। আর করবেনইটা কি আপনি আমাকে?

— এই বেশি কিছু না। শুনেছি তোমার ফ্যামিলি অনেক ধার্মিক ও কনজার্ভেটিভ তাই ধরো আমি তাদের কাছে যেয়ে বললাম তোমার সাথে আমার ক্লোজ রিলেশন আছে কিংবা তোমার আমার কিছু ইডিটেড পিক দিলাম কিংবা তোমার বাসার সামনে একটু ফিল্মি আশিক টাইপ হাঙ্গামা করলাম… তোমার পরিবার তখন এমনিতেও আমার হাতে তুলে দিবে তোমার। ক্ষতি শুধু তোমার হবে কারণ তোমার পরিবারের সম্মানেই দাগ লাগবে।

তার কথায় রাগের চাইতে বেশি ভয় লাগলো কারণ ছোটবেলা থেকে আমাদের বলা শিখানো হয়েছে টাকা দিয়ে সব কেনা গেলেও সম্মান কেনা যায় না। তাই পরিবারের মানসম্মানের কথা চিন্তা করেই প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে। কিন্তু এখন আমার কি করার থাকতে পারে।

— ইউ ব্লাডি…

— নো বেবি! নট এট অল ভালোবাসি বলে যে সব মেনে নিবো তা না। মোটেও গালিগালাজ করবে না আমায় রেগে গেলে উল্টাপাল্টা কিছু করলে আমাকে বলতে এসো না। সে যাই হোক আজ অনেক পড়ালেখা হইসে আমি গাড়ি ঠিক করে দিচ্ছি তুমি বাড়ি চলে যাও। আর সাথে নিলাকেও নিয়ে যাও। নীলা! নীলা!

— জ-জী কাব্য ভাইয়া!

— তোমার বান্ধুবীকে নিয়ে সোজা বাড়ি যেয়ে যাবে। যদি এর মাঝে কোথাও গিয়েছো তাহলে তোমার বান্ধুবীকে তো কিছু বলবো না আফটার অল একটামাত্র জান আমার। তাই যা বলার যা করার তোমার সাথেই… আই হোপ ইউ হ্যাভ গট ইট।

— হ্যাঁ ভাইয়া!

কাব্য কাকে যেনো কল করতেই দুই মিনিটের মধ্যেই একটা গাড়ি এসে উপস্থিত হলো। নিলা আমাকে নিয়ে সেই গাড়িতে উঠতে যাবে তখন কাব্য তাকে থামিয়ে বললো,

— তুমি বসো আমার তার সাথে কিছু কথা আছে। বুঝোই তো এখন সব কথা তো তোমাদের সামনে বলা যাবে না তাই বোন আর দুলাভাইকে একটু স্পেস দাও।

দুষ্টামির সুরে কথাগুলো বলে আমার হাত ধরে রেস্টরুমে নিয়ে গেলে। আমিও তার মূর্তির ন্যায় নিশ্চুপ ও ভাবলেশহীন হয়ে তার পিছুপিছু যাচ্ছি। নাহ, আমি তার কথায় ভয় পেয়ে কিংবা তার কাণ্ডে অবাক হয়ে স্তব্ধ হয়ে যাইনি। আসলে কিছু কিছু সময় উত্তেজিত না হয়ে মাথা খাটাতে হয় এখন আমি তা-ই করছি। আমি জানি এখন আমার কথা বা কাজ মূল্যহীন আর এই ক্যাম্পাসে আমি কিছুই করতে পারবো না। তাই মুখে কুলুপ এঁটে সব হজম করে নেয়াই আমার জন্য শ্রেয়। বাসায় যাই তারপর ভাববো এই ঝামেলা থেকে পরিত্রাণের উপায়।

এর মধ্যেই কাব্য আমাকে সেই ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে বেঞ্চিতে বসায় আমার যে হাতটা চেপে ধরেছিলো সেটা নিজের হাতের মাঝে নিয়ে নার্স আন্টিকে বললেন,

— ফাস্ট এইড বক্সটা এগিয়ে দিন তো আমায় প্লিজ!

আন্টি সেটা এনে তার হাতে দিতেই সেখান থেকে অয়েনমেন্ট বের আমার হাতে লাগিয়ে দিতে দিতে বললেন,

— জানো ইপশুপাখি, আমি খুব বেশি একটা রাগ করিনা তবে হুটহাট রেগে নিজেকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারিনা। তাই আমি রেগে থাকলে আমার সাথে ভুলেও তর্কে জড়াবে না এবং আমি রেগে যাই এমন কাজও করবে না। আজ ইচ্ছে তো করছিলো যেই হাত দিয়ে তার কাঁধ চেপে ধরেছিলে সেই হাতটা কামড়ে আমার ছাপ লাগিয়ে দিতে তবুও নিজের ইচ্ছেকে নিয়ন্ত্রণ করেছি কারণ তোমার উপর কোনো অধিকারই এখনো পাইনি। পেলে হয়তো আজ এই হাত… যাই হোক সেসব কথা থাকি হাতে অয়েনমেন্ট দিয়ে দিয়েছি কিছুদিনের মাঝে ঠিক হয়ে যাবে…

তার কথায় আমি আশ্চর্যের চরম সীমায় পৌঁছে গেলেও মুখের ভাবভঙ্গি পূর্বের মতোই রাখলাম। ছেলেটা কেমন শান্ত ভঙ্গিতে আমাকে থ্রেট দিলো যেনো কত দরকারী জ্ঞান দিচ্ছে। কোন পাগলের পাল্লায় যে পড়ছি আল্লাহ জানে! অয়েনমেন্ট লাগিয়ে নার্স আন্টিকে বলে আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসলো। আমি গাড়িতে বসে সারাদিনের কথাই ভাবছি তবে কাব্যর সেই রাগী মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই ভয়ে শিউরে উঠছি। ইশ! কি ভয়নকই না লাগছিলো!

বর্তমানে,

কাব্যর ধাক্কায় অতিতের স্মৃতিরপাতা থেকে বের হয়ে আসলাম। হুশ আসতেই নিজেকে বিছানায় উবু হওয়া অবস্থায় পেলাম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখি কাব্য রক্তিম চোখজোড়া নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যা দেখে ভয়ে কাঁপছি কারণ কাব্য তো বলেছিলো অধিকার পেলে… তাহলে কি ভয়ানক কিছু হতে চলেছে আমার সাথে! কাব্যর দিকে আবার তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে এগুচ্ছে। ইচ্ছে তো করছে দৌড়ে পালাতে কিন্তু পা দুটো যেনো কেউ অদৃশ্য শিকল দ্বারা আটকে রেখেছে সেই জায়গার সাথে… শুনেছি অতিরিক্ত ভয় কিংবা নার্ভাস হলে এধরনের সমস্যা হয়ে থাকে আমার সাথেও হয়তো তাই হচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতেই কাব্য কখন যে আমার এতোটা কাছে চলে এসে পড়েছে বুঝতে পারিনি কিন্তু তার উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার মুখে ছিটকে এসে তার উপস্থিতির জানান দিলো।

আমি ভীতু চোখে তার দিকে তাকাতেই সে আমাকে আবারও এক ধাক্কায় বিছানাতে ফেললো এবং আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে,

— ইপশুপাখি মনে আছে আমি কি বলেছিলাম? আমি তোমাকে আগেই সচেতন করেছিলাম কিন্তু তুমি তো আমার সতর্কবার্তা শুনলে না। তাহলে অধিকার তো আছে শাস্তি দেয়া যাক!

কথাগুলো বলেই মুখ উঠিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে নিজের ঐতিহাসিক শয়তানি হাসিটা দিলেন। আমি জানি এবার সেই ভয়ংকরতম কাজটা করবেন তিনি। তাই তাকে আটকাতে আমি আমার জীবনে প্রথমবারের মতো এমন একটা কাজ করে বসলাম যেটাতে কাব্য কেন আমি নিজেই অবাক।

কাব্য নিজের হাতে চিমটি কেটে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

— তুমি কি সত্যি আমার গালে চুমু দিয়েছো সেটাও নিজে থেকে? নাকি আমি কোনো কল্পনা করছি বা স্বপ্ন দেখছি? একটা চিমটি কাটো তো আমায়, নিজের হাতে নিজে কেটে বিশ্বাস হচ্ছে না।

আমি কি বলবো লজ্জায় তো মন চাচ্ছে অদৃশ্য হয়ে যেতে। ইশ! কেনো যে মিসেস ইন্ডিয়া হলাম না! পরক্ষণেই চিন্তা করলাম লজ্জা পেলে চলবে না আমাকে সবটা জানতে হবে। কাব্য কেনো তিয়াসকে বললো অতিতের কোনো ভুল সে করবে না আর না তিয়াসকে করতে দিবে? কি এমন ভুল করে বসেছিলো কাব্য কিংবা সে কেন তিয়াসের সাথে ছোটবেলা নিয়ে এখনো ভাবে নাকি অন্যকোনো কাহিনী? এসব ঘটনার সাথেই ইশা ও কাব্যর আসল সত্য জড়িয়ে নয়তো? এসব কিছুর উত্তর আমার কাব্যর থেকে নিতে হবে যে করেই হোক। আমি তার কথামতো ছোট্ট করে একটা চিমটি কাটলাম তার হাতের পিঠে।

— আহ! তার মানে সত্যিই তুমি আমাকে এতো বছরে প্রথমবার ভালোবাসার স্পর্শ দিলে সেটাও আবার জড়িয়ে ধরাও নয় সোজা চুমু খেলে।

— এতো হাওয়ায় উড়ার দরকার নেই মাটিতে এসে হাঁটো। উপায় ছিলো না তাই চুমু খেয়েছি নাহলে কখনোই না। তুমি ভুলে যাচ্ছিলে আমাদের সম্পর্কটা আগের মতো স্বাভাবিক নেই এবং অযাচিত অধিকার খাটাতে যাচ্ছিলে তাই আর কি!

— ওহ! তারমানে তুমি… যাই হোক আমাদের মধ্যে একটা ব্যপারে মনমালিন্য হয়েছে এবং সেটা থেকে তুমি একা একটা ডিসিশন নিয়েছো এভাবে থাকার আমি মেনে নিয়েছি। বাট এজন্য যে আমি সব মেনে নিবো তা কিন্তু একেবারেই। ঐ ছেলে থেকে যথাসাধ্য দূরত্ব বজায় রেখে চলবে নাহয় ঘরবন্দী বানাতে আমার একমুহূর্তও লাগবে না…

— কেনো? এমন কি করেছে তিয়াস ভাইয়া যে তুমি এমন করো তার সাথে? শত হোক তোমার ছোট ভাই সে, তাই তাকে তো সেভাবেই স্নেহ করা উচিত।

— দেখো আমি এতোকিছু তোমায় বলতে পারবো না। এতে আমি আবার ভালোবাসার কাঙাল হতে বসবো যা আমি কিছুতেই হতে দিবো না। তবে একটা কথা বলে রাখি আজ আমি তোমাকে নিয়ে এতো পাগলাটে, ওভার প্রটেক্টিভ ও ওভার পজেজিভ হওয়ায় একমাত্র কারণ ঐ ছেলে… আমার দূষিত ও কালো অতিতের কারণ ঐ ছেলে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here