আঁখির আড়ালে,পর্বঃ- ০১
সাদিয়া_সৃষ্টি
শান্তিপুরের খন্দকার বাড়ির মানুষ ছাড়া সবাই মাঠে জড়ো হয়েছে।
”শেখ বাড়ির বউ রুমিকে খালি বাড়িতে নাহিলের সাথে দেখা গিয়েছে।”
কথাটা ছড়িয়ে পড়তেই সারা এলাকায় কানাকানি শুরু হয়ে যায়। রুমিকে নিয়ে বিভিন্ন কথা বলা শুরু করে সবাই। তাই সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করা হয়েছে। আর রুমিকে নিজের সতীত্ব প্রমাণ করতে আগুনের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে হবে। এই সিদ্ধান্তে পৌছুতেই কয়েকজন মিলে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করে। রুমির সামনে এখন আগুনের রাস্তা। দাউদাউ করে সেখানে আগুন জ্বলছে।
যারা যারা সেখানে উপস্থিত, সবাই তখনও কানাকানি করছে। গুনগুন আওয়াজে সবার মধ্যেই মতবিনিময় চলছে। কেউ বলছে রুমিকে নাহিলের সাথে অনেক আপত্তিকর পরিস্থিতিতে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। অনেকে বলছে নাহিলের সাথে রুমির আগেও অবৈধ সম্পর্ক ছিল। অনেকে বলছে, রুমি এর আগেও নাহিলের সাথে নিজের স্বামীর থেকে লুকিয়ে বন্ধ ঘরে দেখা করতে দেখেছে অনেকে। তবুও যারা কথাগুলো বলছে তাদের কথার সত্যতা কতোটুকু সেটা কেউ-ই জানে না। তবুও কথা বলে চলেছে। রুমিকে এক পর্যায়ে দোষারোপ করা শেষ হলে রুমির চরিত্রের দিকে আঙুল তুলতেও দ্বিধাবোধ করেনি। সবাই শুধু নিজের মতো করে কথা বলছে আর অপেক্ষা করছে রুমির আগুনের মধ্য দিয়ে হাঁটার। আগুনের রাস্তা বেশি লম্বা নয়। তবুও মানুষকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় প্রবেশ করুক কিংবা জোরাজুরিতে, মৃত্যু অবধারিত। তবুও রুমির উপর কারো মায়া হচ্ছে না যেন। সবাই কোন না কোনভাবে রুমিকে-ই দোষ দিয়ে চলেছে আর বলছে,
— রুমির এটা হওয়াই উচিত। নিজের স্বামী ছেড়ে পরপুরুষের সাথে দেখা করার আগে ভাবা উচিত ছিল। তাও সাহস কি দেখো মেয়ের? ছেলেটার সাথে দেখা করছে তো করছে-ই, নিজের শ্বশুর বাড়িতে ডেকে এনেছে। ঠিকই হচ্ছে। এখন করো প্রমাণ।
সবার মুখেই এক কথা। মাঠের এক জায়গায় ছাউনির নিচে এক কাঠের চেয়ারে আয়েস করে বসে আছেন গ্রামপ্রধান মকবুল মির্জা। সময়টা রাত। অন্ধকার হলেও চাঁদের আলোয় সেই জায়গা আলোকিত হয়েছে। এছাড়া মানুষের ভিড় যেখানে শেষ সেখানে তার লোকেরা আগুনের মশাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের হাতের লাঠিটা পাশে রেখে দিলেন তিনি। মকবুল মির্জা হলেন গ্রামের সবচেয়ে সম্মানিত মানুষ। গ্রামের একটা ব্যাক্তিও নেই যে তাকে সালাম না দিয়ে চলে যায়। মকবুল মির্জার দেওয়া বিধান সবাই মাথা পেতে নেয়। কারণ উনি গ্রাম প্রধান। সকল গ্রামবাসীর আলচনার পরই তিনি গ্রাম প্রধান নিযুক্ত হয়েছিলেন। আর বছরের পর বছর সেই দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করে চলেছেন। কারো সমস্যা হলে তৎক্ষণাৎ তার সমাধানের জন্য তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন। তার আগে তার কয়েক প্রজন্ম থেকেই শান্তিপুর গ্রাম পরিচালনা করে আসছেন। বলতে গেলে গ্রামের ২ স্বনামধন্য পরিবারের মধ্যে এক হলো মির্জা পরিবার। আর ২য় হলো খন্দকার পরিবার। দুই পরিবার-ই গ্রামের জন্য প্রাণ দিতে পারে। তাই তারা অতি সম্মানের।
মকবুল মির্জা-ই সাধারণত গ্রামের সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। শান্তিপুর সহ আশেপাশে ৩০ গ্রাম পর্যন্ত তার বিস্তার বা রাজত্ব। আজ যখন শুনলেন শেখ বাড়ির কোন এক সমস্যা হয়েছে যা সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে, তখনই তিনি সবাইকে গ্রামের মাঠে জড়ো করলেন বিচারের জন্য। কারণ রাতের বেলা একা বাড়িতে কোন ছেলে আর মেয়েকে একসাথে ধরতে পারা কোন সাধারণ সমস্যা না। সবার কাছ থেকে শুনলেন যে তারা কি দেখেছে। দেখেছে মাত্র ১ জন। কিন্তু বিচার দিল অনেকেই। তবে রুমি কিংবা নাহিলকে এক বারের জন্যও জিজ্ঞেস করা হলো না। আর না তাদের বলার সুযোগ দেওয়া হলো। তাদের আটকে রাখা হলো তাগড়া তাগড়া ৪ জন কুস্তিবিদদের দিয়ে। ভয়ে আর কথা বলল না নাহিল। আর রুমি তো সেই তখন থেকে কান্না করেই যাচ্ছে। তার পাশ থেকে তার শাশুড়ি কথা শুনিয়েই যাচ্ছেন। অকথ্য কতগুলো গালিও দিয়েছেন সবার সামনে জোর গলায়। রুমির আর কথা বলা হয়নি তাই। ভয়ে অপমানে শুধু কেঁদেই গিয়েছে। মকবুল মির্জা সব শুনে বিচার দিলেন,
— রুমির সতীত্ব পরীক্ষা করা হোক। বহু বছর আগে সীতা যেমন অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে নিজেকে শুদ্ধ প্রমাণ করেছিল সেই ভাবেই রুমিকেও নিজের সত্যতা প্রমাণ করতে হবে। সেজন্য আগুনের ব্যবস্থা করা হোক। আমার পরিবারের পূর্ব নিয়ম অনুযায়ী এই পদ্ধতি এই সময়ের জন্য উপযুক্ত। আর কার্যকর। রুমি যদি আগুন থেকে সুস্থ-স্বাভাবিক ভাবে বের হয়ে আসতে পারে, তাহলে তাদের মধ্যে কিছুই হয় নি এটা প্রমাণ হবে।
নিজের বড় ভাষণ শেষ করে তিনি আয়েশ করে আবার বসে পড়েন। সবাই অপেক্ষা করছে রুমির আগুনে ঢোকার। কিন্তু সে ঢুকছেই না। ভয়ে যেন তার পা মাটি আঁকড়ে ধরেছে। কান্নাও শেষের দিকে। চোখের পানি ফুরিয়ে গিয়েছে। এখানে কেউ তাকে বিশ্বাস করবে না। তাই আগুনে হাঁটতেই হবে তাকে। রুমিকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মকবুল মির্জা আবার চিৎকার করে বলে উঠলেন,
— এক্ষুনি অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করো মেয়ে। আমার এখনো অনেক কাজ বাকি। আর চিন্তা করো না। তুমি যদি নির্দোষ হউ, তাহলে এই আগুন তোমার কিছুই করবে না।
কথা শোনার পরও যখন রুমি নড়ল না, তখন তিনি রুমির ২ পাশে দাঁড়ানো লোকদের বলে উঠলেন,
— ওকে ভিতরে নিক্ষেপ করো। বাকিটা ও বুঝে নিবে।
আদেশ পেতেই লোক দুটো রুমির দুই বাহু ধরল শক্ত করে। এতেই যেন রুমির হুঁশ ফিরল। সে ছাড়া পেতে ঝাপাঝাপি করা শুরু করল। কিন্তু তাদের ২ জনের শক্তির কাছে একলা পেরে উঠল না। তার সামনে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। এর মধ্যে প্রবেশ করলে মৃত্যু নিশ্চিত। রুমি চোখ বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে নিল। যদি শেষ মুহূর্তে কেউ তাকে বাঁচায়!
আগুন ছুঁই ছুঁই অবস্থা। এমন সময় এক বিকট চিৎকার করে তেড়ে আসলো দিশা। তার হাতে এক বিশাল বাশের লাঠি। লাঠি দিয়ে প্রথমের লোক দুটোর মাথায় মেরে তাদের জখম করল দিশা। তারপর রুমিকে টেনে সেখান থেকে দূরে নিয়ে আসলো। ওর হাত শক্ত করে ধরেই বলে উঠল,
— আমাকে ফাঁকি দিবি তোরা? এতো বড় সাহস? আমার অগোচরে আমার গ্রামের মেয়ে খুন করবি আগুনে পুড়িয়ে। আর একটাও যদি আমার সামনে এসেছিস, তোদের সবগুলোর মুখে আমি আগুন লাগিয়ে দেব। সামনে আয়! কে আসবি? আয় সামনে।
বলেই হাতে থাকা লাঠিটার বেশ কিছু অংশ ওই আগুনে প্রবেশ করালো দিশা। লাঠিতে আগুন লাগতেই আবার ফিরিয়ে এনে যেখানে মানুষ জড়ো হয়েছিল, সেদিকে নিয়ে গেল।
— কি হলো? আসছিস না কেন? কলিজার পানি শেষ? একটাও নিজের বাপের বেটা হলে আয়। আমার থেকে লুকিয়ে বিচার বসিয়েছিস না? কি ভেবেছিলি? আমি ঘুমিয়ে থাকব, আর তোরা গ্রামবাসী মিলে মানুষ খুন করবি? আগে নিজের সতীত্ব প্রমাণ করতে এই আগুনে হেঁটে দেখা। তোরা যদি পুড়ে না মরিস, তাহলে রুমি এর মধ্যে দিয়ে হাঁটবে। আয় তোরা।
সবাইকে চুপ করে থাকতে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিল দিশা। তার চোখ থেকে তখনও আগুন ঝরছে। সে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করল মকবুল মির্জার দিকে। তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
— রুমিকে নাহিলের সাথে কি কাজ করতে দেখেছিস? সত্যি সত্যি বল। আল্লার কসম, একটাও যদি মিথ্যা শুনি তাহলে সবগুলোকে আমি মাটিতে গেড়ে ফেলব। নাহলে আমার নামও দিশা খন্দকার না। আশা করি, আমাকে চেনে সবাই। না চিনলে সামনে আয়। চিনিয়ে দেই।
হুংকার ছেড়ে বলে উঠল দিশা। তার আওয়াজে রাতের থমথমে পরিবেশের পরিবর্তন ঘটল। আকাশের চাঁদ আলো দিচ্ছে তখনও। বাতাসের বেগ বেড়ে চলেছে। কিছুক্ষণ আগে যে মেঘের জমা হচ্ছিল আকাশে, তা কেটে যেতে শুরু করেছে। আলোর পরিমাণ বাড়ছে যেন। দিশার প্রতিটা হুংকারে আকাশে পাখিদের দল এলোমেলো হয়ে উড়ছে। বাতাসের বেগে আগুনের শিখা ওঠানামা করছে। সবাই শীতের বদলে ভয়ে কাঁপা শুরু করেছে। খন্দকার বাড়ির এই মেয়ে যেকোনো মুহূর্তে মানুষ মারতে ভয় করে না। তাই সবাই নিজের যান বাঁচাতে পালানোর পথ খুঁজছে।
দিশা সবাইকে চুপ করে থাকতে আরেক চিৎকার করতেই একটা লোক বলে উঠল,
— রুমিরে নাহিল্লার সাথে এক ঘরে দেহা গেছে। ওরা খুব কাছে ছিল।
–কি করছিল ওরা তখন?
— রুমি পানি দিতেছিল।
দিশা হুট করে গগন কাপিয়ে হাসা শুরু করল। খোলা মাঠ হওয়ায় তার হাসি মিলিয়ে যেতে থাকলেও সবার জন্য সেই পরিবেশ ছিল অত্যন্ত ভয়ের। দিশা বলে উঠল,
— ঘরে কেউ ছিল না? আমি তো জানতাম, রুমির শাশুড়ি অসুস্থ ছিল তাই নিজের ঘরে ছিল। আর নাহিল তার পাশের ঘরেই বসেছিল। তার চেয়ে বড় কথা নাহিল তো ৩ টা গ্রাম হেঁটে তারপর এসেছিল তখন। তাই পানি চেয়েছিল। তোরা কিসের ভিত্তিতে ওর উপরে বাজে মন্তব্য করলি? এর পরের বার তেষ্টা পেলে আসিস। পানি দিবি না আর কেউ কাউকে। মরলে মরুক সবাই।
সবাই নিজের ভুল যখন বুঝতে পারল, তখন লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখল। দিশার সামনে তাদের কিছু বলার সাহস এমনিই নেই। তবুও ভিড়ের মধ্যে একজন বলে উঠল,
— এক ঘরে তো ছিল। শোয়ামী যখন বাড়িত নাই তহন পরপুরুষের এত কাছে জাওন লাগব কেন?
— তো আপনারা কি বলেন? আপনার কাছে পানি চাওয়া হলে কি আপনি শান্তিপুকুরে পাঠাবেন? যান খেয়ে আসেন।
দিশার কথার বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাইলেও পারল না সে। সেখানেই থেমে গেল। কারণ আর কথা বললে লাশ হয়ে ওখানেই পড়ে থাকতে হবে। যে করেই হোক না কেন, দিশা রুমিকে বাঁচাবেই। তবে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল এই ভেবে যে ”আপনি” করে যেহেতু বলেছে, সেহেতু দিশা এখনই কাউকে মারার জন্য তেড়ে আসবে না। শুধু এখন এখান থেকে যেতে পারলেই হলো। দিশা এক নজর মকবুল মির্জার দিকে তাকাল। তিনি অনুভূতিহীন ভাবে বসে আছেন। যেন কিছুক্ষণ আগে কিছুই হয়নি।
মকবুল মির্জা এবার উঠে দাঁড়িয়ে নিজের লাঠি ঠিক করলেন। তারপর বলে উঠলেন,
— আমার মনে হয় দিশা মায়ের কথা শোনা উচিত। তোমাদের সব কিছু এভাবে ভাবা ঠিক হয় নি। সবটা জেনে তারপর বলতে। এখন আমি যাই। আমার অন্য কাজ ছেড়ে আসতে হলো। আবার এখন কাজে যেতে হবে। নাহলে এইবারের ত্রান কাজটা ঠিক ভাবে করা হবে না। তোমরাও যাও। বিশ্রাম নেও।
বলেই চলে গেলেন মকবুল মির্জা। তার পেছন পেছন চলে গেল তার দলবল। অন্য সসবাই মকবুল মির্জার এই ক্ষমা করার মতো মহৎ গুণ দেখে তাদের মনে তাকে নিয়ে সম্মান আরও বেড়ে গেল। সবাই চলে যাওয়া শুরু করলে দিশা আবার চিৎকার করে বলে উঠল,
— খন্দকার বাড়ি থেকে লুকিয়ে আবার যদি সালিশ করতে এসেছেন আপনারা, তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
দিশা নিজের হাতের দিকে তাকাল। সেটা তখনও রুমি ভাবীর হাত ধরে আছে শক্ত করে। তাকে ডাকতে যাবে তার আগেই সে অজ্ঞান হয়ে গেল। দিশা ধরে ধরে তাকে নিয়ে রওনা দিল শেখ বাড়ির উদ্দেশ্যে।
__________
বনের কর্দমাক্ত রাস্তা পার করে দৌড়ে চলেছে বিহান। থামলে চলবে না। আজ প্রাণ থাকবে কিনা সেটা তার জানা নেই। বিভিন্ন গাছে লেগে এর মধ্যে জামা কাপড় ছিঁড়ে গিয়েছে অনেক জায়গায়। কাদায় কয়েকবার পড়ে গিয়েও পায়ে ব্যথা পেয়েছে। তবুও খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। থামছে না কোথাও। বিশ্রাম নেওয়াও যেন তার জন্য হারাম এখন। গাড়ি পথিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেল বিধায় ফাঁকা জায়গায় হেঁটে চলেছিল। অন্ধকার হওয়ায় আন্দাজেই চলছিল। তখনই কারো সাথে ধাক্কা লাগল। কোন মানুষকে দেখতে পেয়ে সে খুশির সাথে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই সে আরও কিছু মানুষকে ডেকে জড়ো করে তাকে আঘাত করা শুরু করল। তাই বিহান নিজের জীবন বাঁচাতে দৌড়ানো শুরু করল। নিজের যাবতীয় জিনিসপত্র সব গাড়িতেই রয়েছে। কিন্তু সেই নিয়ে কোন চিন্তা আপাতত করছে না। প্রায় আড়াই ঘণ্টা দৌড়ানোর পর কিছুটা লুকিয়ে লুকিয়েই এসেছে সে। সামনে দেখতে পেল আলোর শিখা। আর কিছু না ভেবে সেদিকেই চলে গেল। ততক্ষণে তার দেহ রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে। মাথা সহ সারা শরীরে বেশ কিছু জায়গায় কেটে গিয়েছে। রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে সাদা রং এর জামাটা। কিছু জায়গায় ঘা হয়ে যাওয়ার অবস্থা। কিছু দূর যেতেই বাড়ির সামনে পৌছাল বিহাল। ৫০ বছরের আশেপাশে হবে এমন এক লোককে দেখে ডেকে উঠল,
— চাচা, একটু শুনবেন?
মকবুল মির্জা মাত্রই বাড়িতে ঢুকছিলেন। তার আগেই কারো ডাক শুনে থেমে গেলেন। ডাকটা অপরিচিত মনে হতেই তিনি পিছনে ঘুরে তাকালেন। ২৫ বছর বয়সী এক ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতেই কিছু ভাবলেন। তারপর আশেপাশে দেখে নিলেন একবার। ছেলেটার পিছনে কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে। মকবুল মির্জা তৎক্ষণাৎ বিহানের কাছে চলে গেলেন। নিজের লোকদের দিয়ে তাকে তুলে নিজের বাড়িতে অতিথিদের জন্য বরাদ্দ ঘরে নিয়ে গেলেন। তারপর নিজের লোকদের কিছু বলে ঘর থেকে পাঠিয়ে দিলেন। আর একজনকে দিয়ে বিহানের পোশাক বদলে দিতে বললেন। পাশাপাশি কবিরাজ ডেকে আনার ব্যবস্থা করলেন। গ্রামের মানুষ মকবুল মির্জার এই রুপের সাথে পরিচিত। সাহায্য করায় তিনি সবার আগে থাকেন। তাই বিহানকে নিয়ে আর কেউ কিছু চিন্তা করল না। এমনিই রাত বেড়েছে। আর বাইরে থাকা ঠিক না।
বিহানের পোশাক বদলানো হয়ে মকবুল মির্জা নিজে বিহানকে দেখতে গেলেন। তারপর নিজের স্ত্রীকে দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করালেন। কবিরাজ ততক্ষণে বিহানের শরীরে কিছু ভেষজ ওষুধ লাগিয়ে দিয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিতেই মকবুল মির্জা তার খাবারের ব্যবস্থা করলেন। পাশাপাশি কিছু চাল আর সবজি দিয়ে দিলেন। তারপর তার স্ত্রী খাবারের থালা আনতেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
— সব ঠিক ভাবে দিয়েছ তো? কোন খাবার বাকি রাখো নি তো? মেহমান মানুষ, তাকে ঠিক করে খাওয়াতে হবে।
উত্তরে তার স্ত্রী মাথা ডানে বামে নাড়িয়ে আবার নিচু করে রাখলেন। মকবুল মির্জা খাবারের ঘ্রাণ নিলেন। তারপর সেটা বিহানকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলেন।
চলবে।