ইহান ভাই,পর্ব-৩
সাদিয়া
ইহান সকালে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। আফজাল সাহেব সকালে ছেলেকে ডাকতে গেলে রেহেলা বেগম বললেন “আজ বাদ দাও কল থেকে না হয় নিয়ম চালু করো। ছেলেটা অনেকদিন পর হয়তো শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।”
“আচ্ছা। কিন্তু এখন থেকে ছেলেকে ভালোবাসার সাথে একটু বুঝিও।”
“আচ্ছা।”
সকালে ইহান একা নাস্তা করল। মাকে বলল,
“আম্মু বাকিরা কই? ব্রেকফাস্ট করবে না?”
“ইহান বাবা কাল থেকে তোকেও সবার সাথে ব্রেকফাস্ট করতে হবে। সেই সকাল ৮ টায়।”
“কি বলো আম্মু?”
“হ্যাঁ।”
ইহান কি জানি বলবে তখন মিহু বলল “মামুনি আমি একটু বের হচ্ছি।”
“কোথায় যাবি এখন?”
“কিছু কেনাকাটার ছিল। আর দুইটা উপন্যাস কিনব।”
“নিজের বই না পড়ে উপন্যাস পড়লেই হবে?”
“হবে মামুনি। সব হবে। এবার আমি যাই।”
“আরে আরে দাঁড়া। একা যাবি নাকি?”
“হ্যাঁ” বলে তাড়াতাড়ি করে মিহু চলে যাচ্ছিল।
“দাঁড়া মিহু। একা যেতে হবে না। ইহান তুই যা ওর সাথে। কেনাকাটা করার পর না হয় একটু ঘুরে এলি।”
“না মামুনি। একদম না আমি একা যেতে পারব।”
মিহু দৌড় দিলেও পারল না। ইহান পিছন থেকে বলল “মিহু কুহু দাঁড়া।”
ইহানের কথাও শুনল না মিহু। যখন রেহেলা বেগম ধমক দিয়ে বলল তখন থমকে দাঁড়াল।
“ইহান বাবা যা তো ওর সাথে।”
ইহান বাকা ঠোঁটে হেসে মিহুর কাছে গেল। মিহু বলল,
“আমি আজ যাবো না। কাল যাবো।”
ইহান তখন দাঁড় কিটে বাকা হেসে মিহুর বাহু খামছে ধরে বলল “যাবি না কেন। চল এখন।”
মিহু কে দরজার বাহিরে নিয়ে আসতেই সে ঝারি দিয়ে হাত সরিয়ে নিল। চোখ মুখ কুঁচকে সে ইহানের দিকে তাকাল।
“আমি একদম আপনার সাথে যাবো না।”
ইহান গাড়িতে ঠেসে ধরল তাকে।
“কাল রাতে যে তোকে দরজা খুলতে বলেছিলাম তখন কি করেছিলি?”
“সরুন আপনি। নাহলে কিন্তু পিন দিয়ে পেটে গুঁতো মেরে দিব।”
“বড্ড পাখির মতো উড়িস তুই। তোকে একটু..”
বুকে ধাক্কা দিয়ে মিহু সরে গেল। পিছনে গিয়ে বসে চুল ঠিক করতে লাগল। কপাল কুঁচকে ইহান জিজ্ঞেস করল
“আমাকে তোর কি মনে হয়?”
“….
“পিছনে গিয়ে বসলি কেন?”
“….
“আমি তোর ড্রাইভার না মিহুর বাচ্চা।”
“ডোন্ট কল মি মিহুর বাচ্চা। আই এম মিহু। জাস্ট মিহু।”
“এ্যাহহ এই এমম মিহুহহ। সামনে আয়।”
“একদম না।”
“এই তুই জানিস আমার পাশে বসার জন্যে আর আমার বাইকের পিছনে বসার জন্যে কত মেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে।”
“আমি তো নেই। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার হলে দিন নাহলে আমি রিকশা করে চলে যাবো।”
“নাম তুই আমার গাড়ি থেকে নাম।”
রাগে মুখ লাল করে আনল মিহু। মুখ ভেংচে সে গাড়ি থেকে নেমে গেল। কিন্তু সেখান থেকে আর যেতে পারল না। বিড়ালের বাচ্চার মতো ইহান তার ঘাড় ধরে সামনের ডালা খুলে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিল। তারপর নিজে বসে গাড়ি লক করে দিল।
“আপনি কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছেন বলে দিলাম।”
“শাট আপ।”
“অসভ্য ইতর প্রাণী একটা।”
“মিহুর বাচ্চা তোকে আমি।”
তেড়ে গেল ইহান। মিহু এবার নিজেকে খানিক গুটিয়ে নিয়ে এলো। কপাল কুঁচকে বলল
“গাড়ি স্টার্ট দিন।”
ইহান তখনো তার দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে ছিল। ভয়ার্ত মিহু কে বেশ দেখাচ্ছে।
“ইশশ ভয় পেলে তোকে যা লাগে না।”
“আমি কিন্তু এখন মামুনিতে ডাক দিব।”
“স্টুপিড একটা। টাইম বুঝে না।”
বিরক্তিকর মুখের আভা নিয়ে ইহান গাড়ি স্টার্ট দিল। ওদিকে মিহু ভ্রুকুটি করে একবার তার দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে বাহিরে দিল। এই লোকটার মুখ দেখলেও বিরক্ত চলে আসে তার।
শপিংমলে পৌঁছে মিহু বলল
“আপনি চলে যান। আমার দেড়ি হবে। আমি একা বাসায় চলে যাবো।”
ইহান গাড়ির চাবি নিয়ে নেমে মিহুর হাত ধরে ভেতরে যেতে যেতে বলল “আম্মু বলেছে ঘুরতে। তোকে নিয়েই বাসায় ফিরব।”
“আরে হচ্ছে টা কি ইহান ভাই। সবাই দেখছে।”
থমকে দাঁড়াল সে। মিহুর দিকে তাকিয়ে বলল
“এই আমি তোর কোন জন্মের ভাই? আরেকবার ভাই বলবি তো নাক ফাটিয়ে দিব। বেয়াদব মেয়ে।”
রাগে মিহুর ঠোঁট এক হয়ে কুঁচকে এলো।
“আর আমার বোন আছে এলরেডি। তোর মতো এমন বোনের দরকার নেই। তবে তোর মতো একটা গার্লফ্রেন্ডের দরকার আছে। চুটিয়ে রোমাঞ্চ করার জন্যে।”
মিহু রাগ আর শরীরে ধরে না। সে ইহান ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে নিজের মতো করে চলতে লাগল। আর এদিকে ইহান রাগে বেহাল অবস্থা।
মিহুর কেনাকাটার পর ইহান একটা রেস্টুরেন্টে গেল। যদিও মিহু যেতে চাই নি। ইহান নিজের মতো করেই খাবার অর্ডার করল।
“আপনি একা খান আমি বাড়ি চলে যাই।”
“মুখে লাগাম দিয়ে বসে থাক।”
“বিরক্তকর।”
“কিছু বললি?”
“না।”
ইহান উঠে গেল ফোন হাতে নিয়ে। মিহু একবার তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে নিজের জিনিসপত্র দেখতে লাগল।
একটুপর খাবার এসে গেল। ইহান ব্যস্ত হয়ে বলল
“তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। নয়তো এগুলো তোর মাথায় ফেলব।”
“….
মিহু যেই না মুখে খাবার দিল ওমনি ঝালো তার তালু জিহ্বা এক হয়ে গেল। এটা কোনো খাবার না মরিচের দলা। মিহুর চোখ দুটি লাল হয়ে উঠেছে। হাত বাড়িয়ে পানি নিতে গেলে ইহান সেটা তখনের মতো নিয়ে নেয়। বাকা ঠোঁটে হেসে বলে “ইশশ ঝাল লাগছে মিহু কুহু? তুই তো এর থেকেও বেশি ঝাল।”
মিহুর চোখ দিয়ে পানি গড়গড় করে পড়ছে। স্তব্ধ হয়ে গেল ইহান। ভেতরে যেন কোনো সুতার টান অনুভব করছে সে। হাতের পানিটা তাড়াতাড়ি করে মিহুর দিকে এগিয়ে দিল। মিহু এক টানে গ্লাসের পানি খেয়ে নিয়েছে। তবুও তার ঝাল কমছে না। লাল লাল চোখ দুটি দিয়ে এখনো পানি পড়ছে। ইহানের এখন যেন অস্বস্তি হচ্ছে। ভেতরে কেমন কষ্ট কষ্ট পাচ্ছে। টেবিলে তাকিয়ে লাচ্চিট গ্লাসটা দেখে তাড়াতাড়ি মিহুর মুখে ধরল। মিহু একবার তার চোখের দিকে তাকিয়ে লাচ্চির ফাইবে মুখ ডুবিয়ে দিল। ওই লাল চোখ দুটি একদম মনে গিঁথে গেছে তার। ওই লাল লাল চেহারার দিকে ইহান বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে।
মিহু লাচ্চি শেষ করে উঠে গেল। নিজের ব্যাগ গুলি হাতে নিয়ে টান টেনে সে চুপচাপ চলে যেতে লাগল। ইহানও বিল মিটিয়ে দ্রুত পায়ে মিহুর পিছু নিল। এক দোকানে গ্লাসের ভেতর সাদা স্টোনের এক জোড়া পায়ের উপর চোখ চলে গেল তার। একটু থেমে তাকিয়ে আবার সামনে তাকাল। একি মিহু কে কে ওভাবে কোমর জড়িয়ে রেখেছে? আর ব্যাগপত্র ওমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কেন?
ইহান দৌড়ে গেল ওখানে। ততক্ষণে মিহু উঠে গেছে। চোখে মুখে বিরক্তির ভাব নিয়ে জিনিসপত্র ব্যাগে তুলতে লাগল। ইহান লক্ষ্য করল ছেলেটা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে মিহুর দিকে তাকিয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে এলো ইহানের। গলায় ধারালো তলোয়ারের ঝাঁঝ নিয়ে বলল,
“এই যে মিস্টার কি ব্যাপার? দেখেশুনে হাটতে পারেন না?”
তার কথাতে ছেলেটা তাকালো না পর্যন্ত। মিহুর দিকে তাকিয়ে অসহায় মুখ নিয়ে বলল
“সরি আমি আসলে দেখি নি।”
মিহু কিছু বলল না। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটু মেকি হাসল মাত্র।
“ক্যান আই হ্যাল্প ইউ?”
“নো নো ইট’স ওকে।”
ইহান রেগে গিয়ে মিহুর জিনিসপত্র ছুড়ে ছুড়ে কোনো রকম ব্যাগের ভেতরে রেখে ওর হাত ধরে লোকটার সামনে দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেল।
গাড়িতে উঠে গম্ভীর মুখে স্টার্ট দিল। মিহু তখন ব্যাগের জিনিসপত্র ঠিক করে রাখছিল। একটু দূর যেতে না যেতেই ইহান ব্রেক নিল। মিহু একবার সামনে আবার ইহানের দিকে তাকাল। মুখের ভাবই বিকৃত দেখাচ্ছে তার।
চলবে♥