ইহান ভাই,পর্ব-৬

ইহান ভাই,পর্ব-৬
সাদিয়া

ঘরে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে নিল ইহান। টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ইহান হঠাৎ খেয়াল করল টেবিলের উপর এক জোড়া নূপুর তার নিচে সাদা একটা চিরকুট। ইহান গিয়ে হাতে নিল নূপুর গুলি। তারপর চিরকুটের দিকে তাকাল। তাতে লেখা “চরিত্রহীন লোক।”

বেশ অবাক হলো ইহান। তার মাথাতেই আসছে না চিরকুটের লেখাটার মানে কি আর এই নূপুর গুলি তাকে কেউ কেন দিবে? বেশ ভাবনায় পড়ে গেল ইহান।

খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে। ইহানের আসার অপেক্ষা। সে “আম্মু আম্মু” বলে চেঁচিয়ে নিচে নামল।

আফজাল সাহেব বললেন “ইহান এভাবে ডাকছো কেন কোনো দরকার?”

ইহান চেয়ারে বসতে বসতে নিজের বাবার দিকে তাকাল। তখন রেহেলা বেগম এসে বললেন “পরোটা আর ডিম পোচের জন্যেই ডাকছিস তো? এই নে তোর পরোটা আর ডিম।”

“না আম্মু এই কারণে না।”

“তাহলে?”

“আম্মু কেউ একজন আমার ঘরে নূপুর আর একটা চিরকুট রেখে গেছে।”

মিহু চট জলদি তাকাল ইহানের দিকে। তার সাথে বাকি সবাই। রেহেলা বেগম শুনে বেশ অবাক হলেন। আফজাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে হুহু করে হেসে উঠলেন তিনি। বাকি সবাইও নিজেদের মতো করে হাসছে। ইহান বুঝতে পারছে না কি এমন বলেছে যে এত হাসতে হবে। ইহান বিরক্ত নিয়ে মাকে বলল,
“আম্মু প্লিজ হেসো না তো।”

“এত দিন তো জানতাম মেয়েরা নূপুর আর চিরকুট পায়। আজকাল ছেলেরাও পায় নাকি?”

আবার হাসির রোল পড়ে গেল।

“আম্মু এবার রাগ উঠছে আমার।”

“আচ্ছা আচ্ছা আর হাসব না। তা কে তোকে নূপুর দিল? চিরকুটে কিছু লেখা ছিল?”

“জানি না কে দিল। আর তেমন কিছু লেখা ছিল না।”

“কি লেখা ছিল?”

“সে আমি বলতে পারব না।”

রেহেলা বেগম হাসলেন। মিহু গলা কাশল। নূপুর গুলি ইহানের না হলে কে দিল তাকে? ইহান তার চোখে চোখ রাখতেই মিহু চোখ নামিয়ে আনে। খুব চিন্তা লাগছে বিষয়টা নিয়ে।

ইহান সবার দিকে চোখ বুলাল। কার কাজ হতে পারে এটা? বাড়ির লোক ছাড়া কে আসবে? তিতাসের দিকে তাকাতেই খেয়াল করল তিতাস মিহুর দিকে কেমন চোখে তাকিয়ে আছে। মুখে লাল দৃশ্য ফুটে উঠছে। ইহান কপাল কুঁচকে আনল। তিতাস তখন কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে উঠে গেল। কেউ অবাক না হলেও ইহান হয়েছে। কালকের কথা আর চাউনি তে তার সন্দেহ লাগছে কেমন। মিহুর দিকে তাকাল ও। মিহু না খেয়ে খাবার নাড়ছে শুধু। যা বুঝার বুঝে নিয়েছে সে।

—-
মিহু তখন ফোনে চ্যাট করছিল। দরজায় আওয়াজ পেয়ে সে সামনে তাকাতেই দেখে ইহান দরজা বন্ধ করে তার দিকে এগিয়ে আসল।

“আপনি দরজা বন্ধ কেন করছেন?”

“ওটা তোর কাজ না?”

“কো কোনটা?”

“ওই যে চিরকুটের লেখাটা।”

“সে আমি কি করে জানব?”

“মিথ্যে বলবি না।”

“হ্যাঁ তো?”

“আমার চরিত্র নেই?”

“…..

“তোকে আমি নূপুর দিয়েছি এটাই ভেবেছিলি? কি করে রে?”

“কেন?”

“তোকে আমার নূপুর দিতে বয়েই গেছে।”

“আর আমি যেন আপনার কাছ থেকে নূপুর পাওয়ার আশায় হা করে বসে আছি।”

“হ্যাঁ থাকবি। আমার জন্যে বসেই থাকবি তুই।”

“আশ্চর্য তো। আমি কেন আপনার জন্যে বসে থাকতে যাবো?”

“…..

ইহান কতক্ষণ গম্ভীর থেকে “আমি যা বলেছি তাই করবি। আমার কথা শুনেই তোকে চলতে হবে” বলে চলে গেল সে। মিহু দাঁড়িয়ে মুখ ভেংচালো। বিড়বিড় করে বলল “কোথাকার কে তার জন্যে নাকি আমার বসেই থাকতে হবে।”

—-
“মিহু আজ নাস্তা না করেই বের হয়ে গিয়েছে। আজ নাকি কলেজ যাবে।”

“কলেজ কি এত সকালে আম্মু?”

“না বলল একটা বান্ধবীর বাসায় যাবে।”

“এতটা স্বাধীনতা দেওয়া ঠিক না আম্মু।”

“ইহান তেমন ভুল কিছু বলেনি। একটু সাবধানে রাখা দরকার যা দিনকাল পড়েছে।” খেতে খেতে বললেন আফজাল সাহেব। মুখে আরেক টুকরা রুটি তুলে দিয়ে ইহানের দিকে মুখ ফিরালেন। খাবারটা গলায় নামিয়ে বললেন,
“ইহান বাবা।”

“জ্বি আব্বু।”

“কাল থেকে মিহু আর তিশা কে তুমি কলেজে ছেড়ে করে দিয়ে আসবে।”

তিতাস কাশতে লাগল। হাতের সামনে গ্লাসটা নিয়ে পানি খেয়ে নিশ্বাস নিল। চাচার দিকে তাকিয়ে বলল,
“চাচা আমিই না হয় অফিস যাওয়ার সময় ওদের নামিয়ে দিয়ে আসব।”

আফজাল সাহেব কে কিছু বলতে না দিয়ে আগেই ইহান বলে উঠল “তার কি দরকার তিতাস? তোর অফিস যেতে লেট হয়ে যাবে। আর ওমনিতেও প্রতিদিন দুই রাস্তা নিয়ে যেতে যেতে হিমশিম খেয়ে যাবি।”

আমতাআমতা করে তিতাস বলল “যেটা ভালো হয়।” তিতাস মায়ের দিকে নজর গেলে দেখতে পায় তিনি লাল লাল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। তিতাস “আমার খাওয়া হয়ে গেছে” বলে উঠে গেল। একবার ইহান তিতাসের যাওয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মন দিল।

স্বপ্না বেগম তেড়ে গেলেন নিজের ছেলের কাছে।
“তিতাস তুই এবার বাড়াবাড়ি করছিস।”

“কিসের বাড়াবাড়ি বলো তো আম্মু।”

“মিহু কে নিয়ে একটু বেশিই ভাবছিস তুই। আবারও না করে দিচ্ছি ওই মেয়ের দিকে আর চোখ তুলেও তাকাবি না।”

“আম্মু আমার কাজ আছে তুমি যাও।”

“আমার কথাতো আর তোর ভালো লাগবে না। সেদিনও তুই মিহুকে নূপুর গুলি দিয়ে এসেছিস। কি ভেবেছিস কেউ না বুঝলেও আমি বুঝব না?”

“আম্মু আমার মাথাটা ধরিও না তো প্লিজ। যাও এখন।”

“আমার জ্বালা। আরেকবার শুধু দেখি মিহু কে নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করেছিস তো দেখিস ওই মেয়ের কি করি আমি।”

স্বপ্না বেগম চলে এলেন ঘর থেকে। তিতাস পিছু থেকে কয়েকবার ডাকলেও শুনেননি তিনি। ফুস করে নিশ্বাস ত্যাগ করল তিতাস। মিহু কে ছাড়া কিছু কল্পনা করতে পারে না সে।

স্বপ্না বেগম খুব রেগে আছেন। সন্তান দুইটার থেকে একটাও উনার কথা শুনে না। মেয়ে কে কিছু বললেও পাত্তা পাওয়া যায় না। শুধু ফোন নিয়ে বসে থাকে। আর এদিকে ছেলের বাড়িতে পড়ে থাকা মিহুর দিকে নজর। ভেতরে অশান্তির আগুনে জ্বলছেন তিনি।

—-
ইহান তার কয়েকটা বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়েছে। কলেজের বিশাল মাঠে বসেছে তাদের আড্ডা। ইহান কি বলে হাসতে হাসতে পাশ ফিরতেই চমকে উঠল। ভ্রুকুটি করে সে উঠে দাঁড়াল। চোখের সামনে যা দেখছে তা আসলে সত্যি কি না বিশ্বাসই করতে পারছে না সে। কলেজের মাঠের এক কোণায় মিহু দাঁড়িয়ে আছে। আর তার সামনে এক ছেলে হাটু গেড়ে নিচে বসে আছে। হাতে একটা ফুল স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না তখন। অবাক বিস্মিত নয়নে হতবাকের মতো চেয়ে আছে। কান গুলি গরম হয়ে আসছে। ভেতরে তার উত্তপ্ত একটা হাওয়া বইছে….

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here