ইহান ভাই,পর্ব-৪

ইহান ভাই,পর্ব-৪
সাদিয়া

“ছেলেটা তোর দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিল কেন?”

“আজব সেটা আমি কি করে বলব?”

“তুই না করতে পারলি না?”

“আপনার কি তাতে?”

“আমার কি মানে?”

“তোর দিকে তাকাবে কেন ওই ছেলে?”

“আশ্চর্য কথা বার্তা বলছেন আপনি।”

“দেখ মিহু রাগ উঠাস না। আর তুই এত দেড়ি করছিলি কেন নিজের জিনিসপত্র ব্যাগে নিতে নাকি পছন্দ হয়েছে?”

“ইহান ভাই!”

“মেরে না এখানেই পুতে রাখব। আবার ইহান ভাই বলছিস।”

“….

“এখন বাসা থেকে শুধু বের হয়ে দেখিস তুই।”

“তাতে আপনার কি? এসব বলার আপনি কে?”

“যে কেউ হই তোর দেখার কি? না করে ব্যাস।”

“আপনি বললেই হবে না।”

“আমি বললেই হবে। তুই বের হবি না। আর তোকে কেউ দেখবে না।”

“আমাকে কেউ দেখুক বা না দেখুক আপনার কি? আপনি যে চরিত্রের মানুষ তাতে আপনার তো বিশ তিরিশটা গার্লফ্রেন্ড আছে।”

“তাতে তোর দেখার কি?”

“কিছুই না। দেখতে যাচ্ছি না। আপনিও আমারটা দেখতে আসবে না।”

খুব রেগে গেছে ইহান। হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মিহুকে চড় দেওয়ার জন্যে। সে এবার ইহানের কান্ডে ভয়কে গেল। ঢোক গিলে নিষ্পল তাকিয়ে রইল। ইহান নিজের হাত নামিয়ে নিল। দাঁত এক করে ওর দুই বাহু ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো। মায়াবী ওই চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার ছেড়ে দিল ওকে। লম্বা নিশ্বাস ছেড়ে গাড়ি চালাতে লাগল। একবারও আর মিহুর দিকে ফিরল না সে। হঠাৎ এত রেগে গেল কেন বুঝতে পারছে না।

দুপুরে খাবার টেবিলে মিহু আসল না। ইহান এপাশওপাশ তাকিয়ে নিজের মতো খেয়ে নিল। সারাদিন আর দেখা হয়নি মিহুর সাথে। সে নিজেও ইচ্ছা প্রকাশ করে নি দেখার জন্যে।
রাতে খাবার টেবিলেও যখন মিহু কে দেখল না তখন মাকে জিজ্ঞেস করবে কি না ভাবতে লাগল।
তিতুনের কানে কানে জিজ্ঞেস করল “মিহু কোথায়?” তিতুন ওর দিকে কেমন করে তাকাল। কি ভাবল সে বুঝে উঠতে পারল না।

আফজাল সাহেব বললেন “দুই ভাই বোনে কিসের কথা হচ্ছে?”

“আসলে ভাইয়া মিহু আপুর কথা জিজ্ঞেস করছিলি।”

স্বপ্না বেগম চমকে উঠলেন। সন্দেহ চোখে তাকালেন ইহানের দিকে। ইহান আমতাআমতা করে বলল,
“আসলে সবাই এক সাথে খাবার খেতে বসার কথা তাই জিজ্ঞাস করলাম আরকি।”

“ইহান বাবা তো ঠিকি বলেছে। খেয়ালই করি নি আমি। মিহু কোথায়?” বললেন আফজাল সাহেব।

তিতুন বলল “আসলে আব্বু মিহু আপু বলল আজ রাতে স্যুপ খাবে। তাই আসে নি।”

“তো এক সাথে খেতে পারত।”

পাশ থেকে রেহেলা বেগম বললেন, “ওর শরীরটা হয়তো খারাপ। আমি স্যুপ বানিয়ে দিয়ে আসব ওকে।”

“কি হলো আবার মেয়েটার? অসুস্থ নাকি?”

“তুমি খেয়ে নাও। আমি দেখে আসব।”

“আচ্ছা।”

তিতাস কোনো রকম খেয়ে উপরে উঠল। মিহুর ঘরের দিকে গিয়ে দেখল দরজা খোলাই।

“আসব মিহু?”

“তিতাস ভাইয়া। আসো”

“তোমার কি শরীর খারাপ মিহু?”

“না তো।”

“নিচে গেলে না কেন তাহলে?”

“এমনি ভালো লাগছিল না শুধু।”

“কিছু হয়ছে?”

“না তিতাস ভাইয়া।”

“আমি তো ভাবলাম ডায়েট করতে শুরু করে দিয়েছো।”

মিহু হুহু করে হেসে উঠল। তিতাসও হেসে বলল, “যেই না শরীর আবার ডায়েট। তাহলে তো উড়ে যাবে।” দুজনে আবার হাসল।

“তিতাস ভাইয়া বসো না। দাঁড়িয়ে আছো।”

“না মিহু কাজ আছে।”

“তোমরা এত কাজ কি করে যে করো।”

“কেন?”

“এই যে সারাদিন শুধু কাজ।”

“সারাদিন শুধু কাজ নয়। চিন্তাও আছে।”

“তা কিসের চিন্তা?”

“প্রেয়সীর।”

“কি বলো? নাম বলো।”

“….

“কি হলো বলো না।”

“সে এখনো মনের বাসে আছে। পরেই জেনে নিও।’

মিহু তাকে নিয়ে রসিকতা করছিল। দরজার বাহির থেকে ইহান সবাই দেখল। রাগ উঠলেও সামনে নিল। মুখে ভাব নেওয়া হাসি নিয়ে সে ভেতরে ঢুকল। তাকে দেখে তিতাস ভ্রু কুঁচকে আনল। মুখে হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ইহান ভাইয়া তুমি এখানে।”

“তুই এখানে কেন?”

“এই মিহু কে একটু দেখতে এলাম শরীর খারাপ কি না।”

“আমিও এই কারণেই এসেছি।”

অবাক হলেও মিহু মুখ ভেংচি কাটে। হাতে ফোন নিয়ে নিজের মতো করে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে। দুই ভাই তাদের মধ্যেই কথা বলতে থাকুক।

“আচ্ছা তুমি তাহলে কথা বলো আমি আসছি।”

“আমি এসেছি বলেই কি চলে যাবি? তাহলে তুই থাক আমি যাই।”

“আরে না না ভাইয়া আমার তো..”

“তিতাস ভাইয়া, মিথ্যে বলার কি আছে? যা সত্যি বলে দাও না।”

মিহুর কথায় ইহান দাঁত চেঁপে আনে। আড়চোখে মিহুকে দেখল।
তিতাস একবার ইহান কে আবার মিহু কে দেখতে লাগল। তারপর খানিক জড়তা নিয়ে বলল,
“না ইহান ভাই আমার কাজ আছে।”

“….

তিতাস দ্রুত পায়ে চলে গেল সেখান থেকে। ইহান মিহুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।
“হাতে এটা কার ফোন?”

মিহু একবার তার দিকে তাকাল তারপর আবার ফোনে চোখ বুলিয়ে বলতে লাগল,
“আমার।”

“তোর ফোন মানে?”

“তোকে ফোন কে দিয়েছে?”

“চাচ্চু।”

“এই বয়সে আব্বু তোকে ফোন দিয়ে দিল?”

“এই বয়স মানে? হোয়াট ডু ইউ মিন বাই এই বয়স? আমি অনার্স ফাস্ট ইয়ারে উঠব। বুঝে শুনে কথা বলুন।”

“তারমানে তুই খুব বড় হয়ে গেছিস?”

“আমি এখনো ছোট নই। কেন এসেছেন এই ঘরে বলুন তো।”

মিহু খেয়াল করল ইহান তার দিকে কেমন চোখ করে এগিয়ে আসছে। ভীত চোখ মুখে সে বলল,
“আপনি এখন এই ঘর থেকে যান।”

“তুই এখন খুব বড় তাই না?”

“হ্যাঁ তাতে আপনার কি? আপনি যান। নাহলে আমি..”

“আম্মু কে বা আব্বু কে ডাকবি এই তো?”

“হ্যাঁ”

ইহানের এগিয়ের আসার তালে তালে মিহু নিজেকে বিছানায় গুটিয়ে নিল।

“দেখুন..”

“দেখতেই তো আসছি।”

“মা মানে?”

“এই যে তুই কতটা বড় হয়েছিস।”

মিহুর ভেতরে ভয় চেঁপে ধরেছে। অসভ্য ছেলেটা তো এগিয়েই আসছে।

ইহান মিহুর বাহু ধরল।
“চল একটু রোমান্স করি। দেখি তুই কতটা বড় হয়েছিস।”

“আপনি অন্তত অসভ্য খারাপ একটা লোক।”

“তোর সাথে তো এমন কিছু করলামই না এর আগেই এসব বলছিস?”

“ছাড়ুন আমার হাত।”

ইহান টেনে মিহু কে কাছে আনল। সে দুই পা এক করে গুঁজে আছে।
“ইশশ আসলেই তো তুই বড় হয়ে গেছিস। তোর সাথে রোমান্স করতে রোমাঞ্চ লাগবে।”

মিহু ধাক্কা দিয়ে সরে খাটের ওপাড় দিয়ে নিচে নেমে গেল। ইহান তখন শক্ত চোখ মুখ নিয়ে বলল,
“আর কখনো নিজেকে বড় বলবি না। আর কাল থেকে তোর ফোন আমার কাছে থাকবে।”

“….

“বুঝেছিস কথাটা।”

মিহু মুখ ঘুরিয়ে নিল।

“তুই ফেসবুকও ইউস করিস নাকি?”

“হ্যাঁ তো?”

“একাউন্ট ডিলিট করে দিবি।”

“কেন?”

“তোর এখনো বয়স হয়নি তাই।”

“আমি..”

“হ্যাঁ তুই?”

“আমার দরকার হয় তাই করি। আপনি এখন যান আমি ঘুমাবো।”

তখন রেহেলা বেগম হাতে স্যুপ নিয়ে ভেতরে এলেন।

“তুই এখানে?”

“দেখতে এসেছিলাম মিহু কুহু কে।”

“ইহান এসব কি কথা।”

“আম্মু আব্বু কে বলবে ওর থেকে ফোন নিয়ে নিতে।”

“কেন কিছু করেছে কি?”

“ও ফেসবুক চালায়।”

“তাতে কি হয়েছে?”

“কি হয়েছে মানে?”

“মেয়ে মানুষ টুকটাক সময় কাটায়।”

“আম্মু ফেসবুকে টুকটাক নয় পুরো সময়টাই কেটে যায়।”

“….

“ওকে বলো এসব চালানো বন্ধ করতে।”

ইহান মিহুর দিকে তাকিয়ে চলে গেল।

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here