অজান্তে_আগমন,পর্বঃ- ২০ (শেষ পর্ব – ১ম অংশ)

অজান্তে_আগমন,পর্বঃ- ২০ (শেষ পর্ব – ১ম অংশ)
সাদিয়া_সৃষ্টি

দ্রোহের মা বলেছিলেন ঠিকই যে তিনি ছেলের বিয়ে নিয়ে মাতামাতি করবেন না, কিন্তু সেটা রাখা আর কতদিনই বা সম্ভব তার পক্ষে! ছেলের বিয়ে দেওয়া এতদিনে শখ হলেও এখন তা “লক্ষ্য” হিসেবেই বিরাজমান। তাই আবার ছেলের জন্য পাত্রী খোঁজা চলছে। কাজী সাহেবের আনাগোনা হচ্ছে তাদের বাড়িতে রোজ। এই নিয়ে বেশ বিরক্ত দ্রোহ। সাথে পুরো পরিবার। দ্রোহ ভেবে পায় না তার মা বিয়ে করিয়ে করবেনটা কি? এমনিই টিভি তে সিরিয়াল দেখে দেখে নানা মৌখিক গুণ রপ্ত করেছেন। কথার মাধ্যমে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল, ঝগড়া সহ নানান গুণ। হয়তো এই বয়সে এসে একজন ঝগড়া করার সঙ্গীর বড্ড অভাব অনুভব করছেন। তবে ঝগড়া করার-ই যদি দরকার পড়ে তাহলে দ্রোহের সাথেই করুক, দিন রাত ঝগড়া করুক। দরকার পড়লে ফোনে কল করে তারপর ঝগড়া করবেন- এমনটাই ভাবে দ্রোহ। কিন্তু মায়ের মুখের উপর কথা বলতে পারেন না। রেখাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারটা কি করে মাকে বলবে- সেটাই বুঝতে পারছে না সে। রেখা ফিরে আসলে তারপর বলা যাবে, এই ভাবনা নিয়েই এসময়ের জন্য নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে রেখার একটা ব্যবস্থা এবার করেই ছাড়বে। এই কয়দিন রেখাকে মিস করার পরিমাণটা অনেক বেশিই বেড়েছে। দ্রোহের মনে হচ্ছে রেখা তার একটা রোগে পরিণত হয়েছে, যার ওষুধ আপাতত কোন চিকিৎসক তাকে দিতে পারবে না। এই রোগ সারানো যাবেও না। সারাতে গেলে উল্টো আরও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়তে হবে। আর সেই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে “রেখা” নামক ওষুধ সারাদিন সামনে নিয়ে বসে থাকতে হবে। জীবনেও যেই কাজটা দ্রোহ করেনি, সেটা শুধু রেখার ক্ষেত্রেই হচ্ছে। “হ্যালুসিনেশন”। প্রথমে রেখাকে ভাবনায় আনছে, তারপর রেখা তার সামনে চলে আসছে। ভয়ংকর এক ব্যাপার! জীবনে ভুতের চলচ্চিত্র দেখেও ভুতের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়নি সে, সেখানে রেখা আসছে। শুধু সামনে আসলেও একটা কথা ছিল, রেখার কথাও শুনতে পারছে। তার ঘ্রাণও কল্পনায় আসছে। দ্রোহের কাছে এগুলো একেবারেই নতুন। কাউকে এতোটা অনুভব করা যায়, সেটা দ্রোহের জানা ছিল না।

_____

সকাল সকাল ঘুম ভাঙার পরিকল্পনা নিয়েই ঘুমাতে গিয়েছিল দ্রোহ। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ তার দ্বারা কোন দিন সম্পন্ন হয়নি। যার ব্যতিক্রম ঘটেনি আজও। দ্রোহের আজও মনে পড়ে। আগে বাবার কথা অনুযায়ী কষ্ট করে ২ ঘণ্টা ব্যয় করে একটা সুন্দর রুটিন বানিয়েছিল। সারাদিন কি কি কখন করবে সেটার। পরের দিন থেকে মানার কথা। কিন্তু সেটা তারপর আর মানেনি দ্রোহ। প্রথম কয়েকদিন চেষ্টা করেও মেলাতে পারেনি। তারপর রেখে দিয়েছছিল। ৩ বছর পর এক বইয়ের ভাজে খুঁজে পায় সেটা। তখন মনে পড়ে রুটিন ধরে ধরে কাজ করার কথাটা। বাবা কি সুন্দর করে বলেছিলেন- বাবা সুন্দর করে রুটিন বানিয়ে পড়তেন, সময়মত ও প্রয়োজনমত রুটিন বদলাতেন। এতে করে তার কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে, সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হত। বাবার এমন বক্তব্যে অনুপ্রানিত হয়ে দ্রোহও রুটিন বানানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সফল হয়নি। সে আরেক কথা। মূল কথা হলো দ্রোহ আজও সময়মত উঠতে পারেনি।

দ্রুত হাত-মুখ ধুয়ে খাবার না খেয়েই ঘর থেকে বের হয়ে পড়ে। পিছন থেকে দ্রোহের মা ডেকে ওঠেন “কোথায় যাচ্ছিস?” বলে। দ্রোহ শুধু এক বাক্যে জবাব দেয়।

“বউ আনতে।”

মোটরসাইকেল নিতে হলে ইমনকে জাগাতে হবে, তার সাথে ফোনে ঝগড়া করতে হবে, বলতে হবে যে “তোকে আমি শালা বললেও আমার বনের সাথে জীবনেও তোর বিয়ে দিব না”, তাকে দিয়ে দরজা খোলাতে হবে, আরও নানা কাজ। সেসব করতে গিয়ে দেরি হয়ে যাবে। সেইটুকু দেরিও করতে চাচ্ছে না দ্রোহ। তাই বিল্ডিং থেকে বের হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশায় উঠে পড়ল দ্রোহ। চৌরাস্তা হওয়ায় রিকশা পেতে সমস্যা হয় না কখনো এখানে। খুবই কম সময় এখানে রিকশা থাকে না। তাই রিকশায় বসে “বাস স্ট্যান্ড” বলেই চুপ করে রইল দ্রোহ।

বাস স্ট্যান্ডে নেমে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে দিল। রাস্তা সাবধানে পার হয়ে ওপারে থাকা একটা দোকানের ছাউনিতে দাঁড়াল সে। রোদের উত্তাপটা আজ তুলনামূলক ভাবে বেশি অন্যান্য দিনের থেকে। সকাল সকাল বাস খালি পাওয়াও কঠিন মনে হচ্ছে। এইতো ৯ টাও বাজেনি হয়তো। তবুও বাসে ভিড় উপচে পড়ছে। বাসে চড়ে বসতেই ঘুম এসে ভর করল দ্রোহের চোখে। তবুও চোখ খুলে রাখতে সমস্যা হচ্ছে। এই মুহূর্তে তার মনে হলো যদি মি. বিন এর মতো করে স্কচটেপ লাগিয়ে রাখতে পারতো চোখে, তাহলে ভালো হত। চিন্তা হচ্ছে অনেক, আজ রেখাকে মনের কথা বলবে। কিন্তু এতো চিন্তার মধ্যেও ঘুম আসছে তার। এরকমও হয় কারো সাথে?

শেষমেশ যখন ঘুমে ঢুলে পড়তে চাচ্ছিল দ্রোহ, তখন বাস কন্ডাক্টর কাঙ্ক্ষিত জায়গার না চিৎকার করে বলে উঠলেন। দ্রোহ মনে মনে বাস কনডাক্টরকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভাড়া দিয়ে নেমে পড়ল। হেঁটে যেতে যেতে ভাবছিল রেখা যখন দরজা খুলবে তখন কি বলা যায়। অনেক আশা নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল চাপল। কিন্তু দরজা খুলল না। ১ বার, ২ বার, ৩ বার চাপার পরও যখন দরজা খুলল না তখন একসাথে কয়েকবার চেপে ধরল সুইচ। তাও দরজা না খুললে এবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল দ্রোহ। বাড়িতে কি মানুষ নেই? বাড়িতে মানুষ না থাকলে দ্রোহ এতক্ষণ বেল বাজাচ্ছিল কেন? দিনের বেলা তো অতৃপ্ত আত্মাও থাকবে না তার জন্য দরজা খুলতে, সাথে সেই বিখ্যাত ভয়ংকর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও থাকবে না। সময় নষ্ট, শক্তি নষ্ট। এর মাঝ দিয়ে রেখাও হাত থেকে বের হয়ে গেল। দ্রোহ ফেরার জন্য পা বাড়াতেই মনে হলো রেখা এখন স্কুলে যেতে পারে। শুধু শুধু এখানে কষ্ট করে না এসে বাসায় ঘুমানো ভালো হত। বাস ভারাটাও নষ্ট হলো, সাথে রিকশা ভাড়াও। অত্যন্ত দুঃখের সাথে দ্রোহ যখন ফিরে যাচ্ছিল, তখন তার মাথায় খেলে গেল রেখার চাচা বাড়ির কথা। আশেপাশেই রেখার চাচার বাসা রয়েছে। সরাসরি রিহানকে কল করে বসল সে কিছু না ভেবেই। রিহানের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত উত্তরের জায়গায় উল্টো কথা শুনল। রেখা তো স্কুল বদলিয়েছে। রিহান জানবে কি করে রেখা স্কুলে আছে না কি অন্য জায়গায়? ওদের মধ্যেকার দুরুত্ব তো দুই ঘণ্টার। দ্রোহ কল কেটে দিয়ে নিজেই বোকা বনে গেল। সত্যিই তো, চিন্তায় সে এতটাই পাগল হয়ে গিয়েছিল যে এই কথাটাই ভুলে গেল! যদিও এখানে থাকার কোন যুক্তি খুঁজে পাচ্ছিল না, তবুও “যাব কি যাব না” মন নিয়ে নিজের লজ্জা ২য় বারের মতো ভুলে মনোয়ারাকে কল করল। সাধারণত খালামণিকে কল করতে গেলে দ্রোহের টানা ১ দিন ভাবলেও চিন্তা শেষ হওয়ার কথা না। কিন্তু এই প্রথমবার এমন সাহসের কাজ করল সে। নিজেকে বাহবা দেওয়ার সময়ও নেই আপাতত, নাহলে এই খুশিতে মায়ের তথাকথিত “মুরগি পোড়া” কিংবা আসল নাম “গ্রিল্ড চিকেন” খেত সে। কল রিসিভ হতেই সরাসরি সালাম দিয়ে উত্তরের অপেক্ষা না করেই জিজ্ঞেস করল,

— মিস রেখা কোথায় অ্যান্টি? বলতে পারবেন?

— কেন?

এই মুহূর্তে এই “কেন” কথাটা অনেক বিদঘুটে লাগল দ্রোহের কাছে। কিন্তু কিছুই করার নেই তার। এটাও হজম না করলে রেখার সঠিক অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে না। সে বলে উঠল,

— আসলে মিস রেখার একটা জিনিস আমার কাছে ছিল, কিন্তু উনাকে কোথায় পাওয়া যাবে সেটা বুঝত পারছিলাম না। তাই কল করলাম আপনাকে। আমার একটু কাজের চাপ আছে, আপনি যদি একটু দ্রুত বলতেন, তাহলে সুবিধা হত।

মনোয়ারা খাতুন কিছু কথা মনে মনে ভাবলেন, তারপর দেরি না করে বলে দিলেন,

— আজ রেখার চাচার বাড়িতে যাওয়ার কথা। স্কুল থেকেও ছুটি নিয়েছে ও।

— চাচার বাড়ি?

— হ্যাঁ, জানি না কেন, তবে মনে হচ্ছে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে ওকে।

— আচ্ছা ধন্যবাদ। রাখছি অ্যান্টি, আসসালামু আলাইকুম।

মনোয়ারা সালামের উত্তর দিয়ে ফোন কান থেকে নামাতেই খেয়াল করলেন কল এতক্ষণে কেটেও গিয়েছে। তিনি মনে মনে ভাবলেন,

“সামনে আরেকটা বিয়ের দাওয়াত পেতে চলেছি।”

_____

চাচি অসুস্থ শোনার পর গতরাতেই চাচার বাসায় চলে আসতে চেয়েছিল রেখা। কিন্তু পারেনি। চাচা নিজেই মানা করেছেন রাতে সেখানে যেতে। রাতে রাস্তার অবস্থা ভালো থাকে না। কখন কোন অঘটন ঘটে যায়- সেই ভেবে। রেখাও মেনে নেয় কথাটা। এটা তো সত্য, রাতে ঘর থেকে বের হয়ে একবার যে পরিস্থিতির মুখোমুখি সে হয়েছে, ২য় বার আর বের হওয়ার সাধ্য তার নেই সেজন্য। রাতে ঘর এর বাইরে থাকার কথা উঠলেই মনে এক আতঙ্ক বিরাজ করে রেখার। আগের বার ভাগ্য ভালো ছিল বলে দ্রোহ এসে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। ওই প্রথম আর ওটাই শেষ। তারপর একবার বের হয়েছে দ্রোহের সাথে। সে রাতে পুরোটা সময় দ্রোহ রেখার সাথে ছিল। রেখার বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ে যে কষ্ট হচ্ছিল, সেটা দূর করতে যেন সব রকমের চেষ্টা করেছিল দ্রোহ। কিন্তু এখন থেকে আবার তাকে একাই থাকতে হবে। দ্রোহের সাথে যোগাযোগ রাখা যাবে না। রেখা ভাবছিল স্কুলও যদি বদলানো যেত, তাহলে বেশ ভালো হত। কিন্তু হুট করেই ভালো বেতনে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হওয়া যাবে না। আবার বাবার বাড়িটাও ঠিক করতে টাকার প্রয়োজন। চাচার বাড়িতে বেশি দিন থাকা চলবে না। তাই ছাড়তে পারছে না বর্তমান চাকরি।

আজ সকাল সকাল বের হয়ে পড়েছে রেখা চাচা বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়িতে গিয়ে দেখল চাচি সত্যিই অসুস্থ। তাই বেশি বাক্য ব্যয় না করে রান্নার কাজটা আগে সামলে নেয় সে। সকালে সবার জন্য নাস্তা তৈরি করে আবার চাচির কাছে যায় তার অবস্থা দেখতে। জানতে পারল তার চাচাতো ভাই বোনেরা তার দাদাবাড়িতে ঘুরতে গিয়েছে। তাই বাড়ি এতো ফাঁকা, তাদের খেয়াল রাখার মানুষও নেই বাসায়। রেখা ঠিক করল আজ সারাদিন এ বাড়িতেই থাকবে। তাই সে সবার সাথে খাবার খেয়ে আবার রান্নাঘরে ঢুকতে গেল দুপুরের খাবার বানাতে। কিন্তু তার আগেই চাচি তাকে আটকে দিল তার পাশে বসে থাকতে বলে। আর খাবারের কথা তুললে বলা হলো, চাচা খাবার হোটেল থেকে কিনে আনবেন। তাই রেখা আর কথা বাড়াল না।

তবে সমস্যা হলো আরেক জায়গায়। রেখাকে হুট করে ধরে নিয়ে গিয়ে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে দেওয়া হলো। সামনে আরও ৪ জন মানুষ আছেন। চাচা পরিচয় করিয়ে দিলেন রেখাকে ওদের সাথে। ওদের কথা শুনে রেখা বুঝতে পারল সে এ জীবনে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সবাইকে জানাতে ভুলে গিয়েছে। তাই এখ পাত্রপক্ষ তার সামনে বসে আছেন আর রেখা চাইলেও এদের সামনে কিছু বলতে পারছে না কারণ সে চায় না এখানে কোন সিন ক্রিয়েট হোক। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইল রেখা। আপাতত সে পরিকল্পনার ছক সাজাচ্ছে, ছেলের বাড়ির লোকেরা শুধু দরজার বাইরে পা রাখবে আর রেখা পাশের রুম থেকে নিজের ব্যাগ নিয়ে এক দৌড়ে বের হয়ে যাবে। এদিকে আর আসবে না। দরকার পড়লে মনোয়ারা খালামণিকে পাঠাবে। ওরা তো আর চাইলে জোর করে খালামণিকে বিয়ে দিতে পারবে না। অন্যদিকে রেখাকে জোর করা সহজ। রেখা আবার সহজে মুখের উপর না বলেনি কখনো। সারাজীবন বাবা মায়ের ছায়ায় থেকেছে। তারা কখনো এমন কোন সিদ্ধান্ত নেননি যে খত্রে রেখাকে “না” বলতে হত। তাই এই দিক থেকেও রেখার অভিজ্ঞতা শুন্যের কোঠায়। সরাসরি মুখের উপর না বলে দেওয়া রেখার জন্য সহজ কাজ নয়। তার উপর সামনে থাকা ব্যক্তি গুরুজন। রেখা চুপ করে বসে রইল।

হঠাৎ অচেনা কারো আগমন দেখে চাচা প্রশ্ন করে উঠলেন,

— কে আপনি?

চাচার কথায় রেখা মাথা তুলে তাকাল। সামনে থাকা ব্যক্তিকে দেখতেই রেখার চোখ রসগোল্লার আকার ধারন করল। সে অবাক হয়ে সেদিকেই তাকিয়ে রইল পলক না ফেলে। তার কানে এসে ধাক্কা খেলো দ্রোহের বলা কথাটা,

— আমার হবু বউ কে আপনারা আবার পাত্রপক্ষের সামনে বসিয়েছেন? কি করে করতে পারলেন এটা?

দ্রোহের কথা শুনে বাকি ৭ জনের চোখ অক্ষিকোটর থেকে বের হয়ে আসার উপক্রম। রেখা তো নিজের বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলে পাল্টা জবাব দিল না। ওদের মধ্যে আরও কিছু কথা হলো যার কিছুই রেখার কান প্রজন্ত পৌছালো না। সে একই ভাবে দ্রোহের দিকে তাকিয়ে আছো তখনও। সেই সময়ের মধ্যে কখন যে অতিথিরা চলে গিয়েছেন, সেদিকে খেয়াল নেই রেখার। তার ধ্যান ভাঙল চাচির কথায়,

— এই কথাটা আমাদের থেকে লুকিয়েছিলি কেন?

রেখা প্রতিবারের মতই অতিব মাত্রায় বিস্মিত হয়ে চুপ করেই রইল। দ্রোহ রেখার অবস্থা বুঝতে পেরে নিজেই উত্তর দিল।

— আসলে সবটা এতো দ্রুত হলো যে বলার সময় পেলাম না। তাছাড়া আপনিও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এখন রেখা অসুস্থ মানুষের খেয়াল রাখবে নাকি নিজের বিয়ের কথা বলবে, সেটা বুঝে উঠতে পারেনি। আর তার আগেই আরেক ছেলেকে এনে হাজির করলেন। আপনারা তো জানেনই রেখা কেমন। হঠাৎ কোন অদ্ভুত পরিস্থিতিতে পড়লে মুখ থেকে একটাও কথা বের করতে পারে না। তাই আর কিছু বলে নি সে।

দ্রোহের কথায় জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলেন চাচা-চাচি উভয়েই। একেই বোকার মতো একটা কাজ করে লজ্জায় পড়ে গিয়েছেন তারা। তাই আর কথা বললেন না। চাচা পরিবেশটা স্বাভাবিক করার জন্য বলে উঠলেন,

— কবে ঠিক হলো?

— অনেক আগে।

— অনেক আগে?

— হ্যাঁ, আমাদের বাবা একে অপরকে আগে থেকেই চিনতেন। তারপর অনেক বছর যোগাযোগ হয়নি। তাই আবার যখন দেখা হলো তখনই বিয়ের কথা তোলা হয়েছিল।

রেখা পারছে না খালি কেঁদে দেয় একটুর জন্য। দ্রোহ কি সুন্দর গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে। মুখ দেখে মনেও হচ্ছে না তার কথা মিথ্যা। উল্টো মনে হচ্ছে- তার মতো সত্যবাদী মানুষ এ যুগে পাওয়া-ই সম্ভব হবে না, সেটা অনেক কঠিন কাজ। আর রেখা মুখের উপর একটা “না” বলে দিতে পারল না। যদি আগেই না বলত, তাহলে আর এতো কিছু হত না।

এক পর্যায়ে দ্রোহ রেখার হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো ওকে। তারপর চাচা চাচির থেকে বিদায় নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। রেখা সরাসরি প্রশ্ন করল,

— আপনি এতো সুন্দর করে গুছিয়ে মিথ্যা কথা বললেন কেন অভি?

— চুপ কর। আমি মিথ্যা কথা ব্ললাম তোকে কে বলেছে?

— আপনি তো মিথ্যাই বললেন।

ঠোঁট উল্টে জবাব দিল রেখা। দ্রোহ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে উঠল,

— তোর আর আমার বাবা আগে থেকে একে অপরকে চিনে না?

— হ্যাঁ, চিনে আগে থেকেই।

— তাহলে তাদের মনে একবারের জন্য হলে তো এটা আসতে পারে যে আমাদের দুজনের বিয়ে দেওয়া যায়।

— আসতে পারে।

— তোকে দেখার পর তো আমার পরিবারের সবার মনেই আসতে পারে আমাদের বিয়ের কথা। যেহেতু আমি ২৮ বছর বয়সে এসেও বিয়ে করিনি। আমার মা তো পারলে তোর সাথেই বিয়ে দিয়ে দেয়, কিন্তু তুই রাজি হবি কি না ভেবে বলেন না।

— তাই নাকি?

— তুই এতো খুশি হচ্ছিস কেন রিখি? তুইও আমাকে বিয়ে করতে চাস না কি? চাইলে বলে ফেল, আমি এখনো সিঙ্গেল।

— আমি কোথায় খুশি হচ্ছি।

দ্রোহ কথা না বাড়িয়ে রেখাকে নিয়ে ফিরতি বাসে উঠে পড়ল। এবার যা কথা, বাড়িতে গিয়েই হবে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here