গল্প :- রহস্যময় মেয়ে,পর্ব :- ০১
Writing by Kabbo Ahammad
.
.
-:”ইউনিভার্সিটি তে আজ প্রথম দিন। সকাল থেকে রেডি হচ্ছি। খুব এক্সাইটেড। ইউনিভার্সিটি লেভেল নাকি জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময়। নতুন নতুন বন্ধু,আড্ডা,হাসি,মজা,হইহোল্লোর। লাইফ টা নাকি স্বপ্নের মতো হয়ে যায়। আজ আমি সেই জীবনে প্রবেশ করছি। ওয়াও ভেবেই আমার নাচতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে বললে ভুল হবে উত্তেজনায় দুই একবার লাফিয়ে উঠেছি। ইইসস কখন যে যাবো সেটা ভেবে বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি।
ঘড়িতে যখন ঠিক ৮ টা আমি দৌড়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে যেতে চাইলাম। আর ঠিক তখনি পেছন থেকে মা ডেকে উঠলো।
:-যারিন,এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিস।
:-মা ইউনিভার্সিটি তে যাবো।
:-না খেয়ে,ব্যাগ না নিয়ে এমনি দৌড়ে চলে যাবি?
ইসস রে মনেই ছিল না,আনন্দে আমি খেতেই ভুলে গেছি আর ব্যাগ নিতেও ভুলে গেলাম।
:-না মা এখন আর খাওয়ার সময় নেই আমি চলে যাচ্ছি এসে খাবো।
:-আচ্ছা যা পাগলি মেয়ে। সাবধানে যাবি কিন্তু।
:-আচ্ছা মা।
(মা ভালোকরে ই জানে এখন যদি দুনিয়া উল্টে ও যায় আমি খাবো না। আসলে আমি একবার যা বলি তা করেই ছাড়ি। কেউ আমাকে জোর করে কিছু করাতে পারে না।)
ঘর থেকে ব্যাগ টা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। উফফ কি যে করি। অনেক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একটা রিক্সা আসছে। কিন্তু তাতে তো পেসেঞ্জার রয়েছে আমাকে নেবে কি?
ধুর এতো কিছু ভাবার টাইম নেই। আমাকে যেভাবে হোক আজ ইউনিভার্সিটি তে যেতেই হবে। যা হবার হোক। কুছ পরোয়া নেহি।
দৌড়ে রিক্সার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। রিক্সা টা দুম করে থেমে গেলো। একটুর জন্য আমার উপরেই উঠে আসছিল। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। শুনতে পেলাম রিক্সা চালক গরুর মতো চিল্লাচ্ছে।
:-এই মেয়ে,আমার রিক্সার সামনে চলে এলে কেন?
:-আমি কোথায় এলাম আপনি ই তো রিক্সা একটুর জন্য আমার উপরে তোলে দিচ্ছিলে।(একটু অভিনয় করলাম)
:-কি মিথ্যা কথা বলে রে বাবা,আজ কালকার মেয়ে।
:-এতো কথার কি আছে এখন যদি আমি মরে যেতাম?
:-হয়েছে এবার আমাকে যেতে দিন।
:-না,আগে বলুন কোন দিকে যাচ্ছেন।
:-ইউনিভার্সিটি রোড।
:-চলেন আমি ও যাবো।
:-আমার পেসেঞ্জার আছে আপনাকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
:-নেবেন না মানে?এখন না নিলে সোজা থানায় যাবো।
রিক্সাচালক একটু বিব্রত হয়ে গেল। এটাই সুযোগ। আমি গিয়ে রিক্সাতে চড়ে বসলাম। এতক্ষন রিক্সাচালকের সাথে কথা বলে পেছনে কে বসে আছে সেদিকে খেয়াল করি নি। দেখলাম একটা ছেলে। দেখে খুব সাদাসিধে মনে হলো,একটা কালো শার্ট আর প্যান্ট পড়া। সাথে একটা ব্যাগ। একটু আশ্চর্য হলাম। এতো কিছু ঘটে গেল অথচ ছেলেটা এমন ভাবে বসে আছে যেন কিছুই হয়নি। এই ছেলের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এতোক্ষনে বিরাট কান্ড করে বসতো। কে যানে আবার এডভান্টেজ নেয়ার মতলব আছে কিনা। এই হলো ছেলেদের স্বভাব। মেয়ে দেখলেই এডভান্টেজ নিতে চায়। যাক বাবা একদিক ভেবে ভালো লাগছে,প্রথম দিন ক্লাস মিস করতে হবে না।
প্রায় ১০ মিনিট পর রিক্সা থামলো। আমি নামার আগেই ছেলেটা নেমে ভাড়া দিয়ে হনহন করে চলে গেল। এ কেমন ছেলে রে বাবা! একবার আমার দিকে তাকালো না পর্যন্ত। ভদ্রতা ও নেই।।একবার তো আমাকে বলতে পারতো “””ভাড়া দিতে হবে না আমি দিয়ে দিচ্ছি”” কিপ্টা কোথাকার। তবে যাই হোক ছেলেটা কেমন যেন অদ্ভুত। আমার লাইফে এমন ছেলে কখনো দেখি নি।
হঠাৎ রিক্সাচালক বলে উঠলো..””আপা,নামুন এসে গেছি।””
আমি নেমে লোকটাকে ভাড়া দিয়ে ইউনিভার্সিটির ভেতর ঢুকলাম। বিশাল বড় মাঠ,সামনে বড় বিল্ডিং অন্যপাশে একটা বাগান,একটু ডান দিকে একটা লাইব্রেরি। আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। আমি সোজা যেতে লাগলাম। কিন্তু ক্লাসরুম টা কোনদিকে তা তো জানি না। আশেপাশে অনেকে রয়েছে। একজন কে জিজ্ঞেস করতেই সে আমায় দেখিয়ে দিল। আমি ক্লাসরুম এ চলে এলাম। চারদিকে অনেক স্টুডেন্ট।কিন্তু কেউ আমার চেনা নেই।ক্লাসে ঢুকে মাঝামাঝি একটা বেঞ্চ এ বসলাম।
একটু পরেই স্যার এলো। আমাদের অভিনন্দন জানালেন আর কিছুক্ষন লেকচার দিলেন। বেশ ভালোই লাগলো। ক্লাস শেষ হতেই আস্তে আস্তে সবাই বেরিয়ে যেতে শুরু করলো। আমি যেই বের হবো ঠিক তখন লাস্ট বেঞ্চে আমার চোখ আটকে গেলো। সেই ছেলেটা বসে আছে যার সাথে আমি রিক্সায় এসেছি। কিন্তু এখনো ওকে কেমন অদ্ভুত লাগলো। দেখলাম চুপ করে বসে আছে। ক্লাস তো শেষ এখনে বসে আছে কেন জানার খুব আগ্রহ হলো।
আসলে আমি যে কোন বিষয়ে খুব আগ্রহী। আমি ছেলেটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রায় দুই মিনিট দাঁড়িয়ে আছি অথচ ছেলেটার কোন পরিবর্তন নেই। সে এক ভাবেই বসে আছে। দেখে একটু বিরক্ত হলাম।
:-এই যে,এখানে এভাবে বসে আছেন কেন?
ছেলেটা আমাকে পাত্তাই দিল না।যেন আমার কথা তার কান দিয়ে ঢুকছে না।আমি আবার বললাম..
:-হ্যালো,মিস্টার!আমি আপনার সাথে কথা বলছি।শুনতে পারছেন না?
এখনো ছেলেটা আমাকে এড়িয়ে গেল। বিরক্ত হয়ে হাতে থাকা বই টা ছেলেটার সামনে দুম করে ছেড়ে দিলাম। জোড়ে শব্দ হলো। আমি রাগি দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ছেলেটা আমার দিকে একবার চাইলো। এর পর উঠে চলে গেলো। আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এত কিছুর পর ও ছেলেটার কিছু যায় এলো না। তবে ছেলোটা যখন আমার দিকে চাইলো দেখলাম ওর চোখে কেমন যেন একটা মায়া মিশে আছে। যেন অনেক কথা বাকি যা আমাকে বলতে চাইছে। কিন্তু বলতে পারছে না। জানিনা কেন এমন মনে হলো।
সেদিন আর ছেলেটাকে দেখতে পেলাম না এর পর যতগুলো ক্লাস হলো একটা তে ও আমি মন দিতে পারছিলাম না। সেই ছেলেটার কথা বার বার মনে হচ্ছিল। কিছু একটা আছে যা আমাকে বার বার ছেলেটা কে নিয়ে ভাবাচ্ছে। কি হতে পারে? আমি ইউনিভার্সিটি থেকে বাসায় চলে এলাম। আমাকে দেখে মা জিগ্যেস করতে লাগলো..
:-কিরে যারিন,তোকে এমন মনমরা লাগছে কেন,কিছু হয়েছে?
:-না মা,কিছু হয় নি।
:-কি আর হবে,সারা দিন না খেয়ে থাকলে তো এমন হবেই কত বার বলেছি এতো জেদ ভালো না,কে শোনে আমার কথা। হ্যাঁ রে,একবার আমার কথা তোর শুনতে ইচ্ছে হয় না?
:-মা,তুমি তো জানো আমি এমন। শুধু শুধু এসব কথা বলো না। ভালো লাগছে না আমি আমার ঘরে গেলাম।
ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়েছি। পছন্দের একটা গান বাজিয়ে চোখটা বন্ধ করলাম।।হঠাৎ সেই ছেলের মুখ টা মনে পড়ে গেল। তখনি দোলার ফোন এলো।
:-কিরে যারিন,কেমন আছিস?কত দিন হলো তোর সাথে কথা হয় না। একটি বার ফোন দিতে তো পারিস। নাকি আমাকে আর মনেই পড়ে না?(একটু অভিমান করে)
:-ধুর কি যে বলিস,তা তোর সংসার কেমন চলছে?
:-এইতো ভালোই। খালিদ আমার খুব খেয়াল রাখে।
:-রাখবেই তো,তোর মতো মিষ্টি মেয়েকে পেয়ে যে কেউ খুশি থাকবে।
:-ধুর কি যে বলিস। আমি ও খুব লাকি রে। এমন একজন কে পেয়েছি।
:-তা আমার মনোবিজ্ঞানী দুলাভাই এখন কোথায়?
:- ও তো কাজে খুব ব্যস্ত। কিন্তু এতো ব্যস্ততার মধ্যে ও আমার খুব খেয়াল রাখে।
:-কত দরদ!
:-হুম হবেই তো। তুই যখন প্রেমে পরবি তখন বুঝবি।
:-দুর ছাই এসব প্রেম আমার দ্বারা হবে না।
:-আচ্ছা আজ রাখি,কাজ আছে।
:-হু,আল্লাহ্ হাফেজ।
পরদিন সকালে……
:-মা আমি ইউনিভার্সিটি তে যাচ্ছি।
:-আচ্ছা যা,তারাতারি চলে আসিস।
বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরলাম। রাস্তায় হাটছি,একটার পর একটা গাড়ি যাচ্ছে কিন্তু ইউনিভার্সিটি তে যাওয়ার কোন গাড়ি পাচ্ছি না। হঠাৎ দেখতে পেলাম একটা মেয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। মুখ দেখতে পেলাম না। তখনি চোখ পড়লো মেয়েটির ঠিক সামনে একটা ট্রাকের উপর। দ্রুতবেগে আসছে মেয়েটার দিকে।
কয়েকবার মেয়েটা কে আওয়াজ দিলাম। মনে হয় শুনতে পেলো না। উপায় না দেখে আমি দৌড়ে মেয়েটার কাছে যাই। ধাক্কা দিয়ে মেয়েটা কে সহ আমি রাস্তার ধারে গিয়ে পরি। পাশে থাকা একটা ইটে আমার মাথায় আঘাত লাগে। আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। তবে অজ্ঞান হওয়ার আগে এক পলক মেয়েটার মুখ টা দেখে নিলাম।
চোখ খুলতেই দেখি আমি হাসপাতালে। উঠে বসতে চাইলেই মাথায় ব্যথা পাই। হাত দিয়ে দেখি ব্যান্ডেজ করা। তখনি দেখলাম নার্স আমার পাশে।
আমি নার্স কে জিজ্ঞেস করলাম কে আমাকে এখানে নিয়ে এলো। নার্স বলল কিছু লোক আমাকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে এখানে নিয়ে আসে। আমি আবার নার্স কে জিজ্ঞেস করলাম”””এখানে কি কোন মেয়ে এসেছিল?””নার্স বলল কোন মেয়ে আসে নি।
মনে মনে একটু খারাপ লাগলো। মেয়েটাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার এই অবস্থা অথচ মেয়ে টাই আমাকে রেখে এভাবে চলে গেলো?
সেদিন আর ইউনিভার্সিটি তে যাওয়া হলো না। হাসপাতাল থেকে কিছু ঔষধ লিখে নিয়ে বাসায় চলে এলাম। আমার মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে মা চিন্তুিত হয়ে গেলেন। হাজার টা প্রশ্ন করতে লাগলেন। আমি সেগুলোর জবাব দেওয়ার অবস্থায় ছিলাম না। তাই নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পরি।
রাতে ঘুম ভাঙলো একটা শীতল হাওয়ায়। চোখে মেলার আগেই টের পেলাম আমার রুম শিউলি ফুলের সুগন্ধে ভরে গেছে। এতো সুবাস কোথা থেকে এলো বুঝতে পারলাম না। উঠে বসতেই হালকা ডিম লাইটের আলোতে আমার হাতে একটা কাগজ দেখতে পেলাম।
আশ্চর্য হয়ে গেলাম। ঘুমানোর সময় তো আমি কোন কাগজ হাতে নিই নি তাহলে এই কাগজ আসলো কেথাথেকে।
কাগজে কি আছে দেখার জন্য লাইট অন করলাম।ভাজ করা কাগজ টা মেলতেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম…..
.
.
চলবে