দৃষ্টির অগোচরে দ্বিতীয়_অধ্যায়,৮ম_পর্ব,৯ম_পর্ব
মুশফিকা রহমান মৈথি
৮ম_পর্ব
নুশরাত বাইক থেকে থেমে নিচু কন্ঠে বলে,
“সাবধানে যেয়েন”
এটুকু বলে সঠান ভেতরে হাটা দেয় সে। তৌহিদ মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট দেয়। নুশরাতের ঠোটে স্মিত হাসি। হঠাৎ তার হাসি মিলিয়ে যায়। এক রাশ ভয়ের স্রোত শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যায়। তার অনুভব হয় সিড়িঘরে সে একা নয়। একজন মানব অবয়ব তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। যে ঘাপতি মেরে ছিলো সিড়ির নিচে। অপেক্ষা করছিলো নুশরাতের ফেরার। এখন সে বেড়িয়ে এসেছে ঘাপটি ছেড়ে। গলা শুকিয়ে আসে নুশরাতের। ভয়ার্ত চোখে পেছনে তাকায় সে। তাকাতে দেখতে পায় একটি লাল বাক্স রাখা শেষ সিড়ির দাঁড়প্রান্তে। কেউ তো ছিলো সিড়িঘরে। কিন্তু সে পালিয়ে গেছে নুশরাতের ঘাড় ফেরাবার আগে। কেঁচিগেটের খোলার শব্দ কানে আসে নুশরাতের। সে ছুটে যায় কেঁচিগেটের দিকে। রাস্তার দুদিকে হন্যে হয়ে খোঁজে নুশরাত। না কেউ নেই, মানুষটি পালিয়ে গেছে। হয়তো তার উদ্দেশ্য নুশরাতকে আক্রমণ করা নয়। উদ্দেশ্য শুধু ভয়ের জাল বোনা। নুশরাত সিড়িঘরে ফিরে যায়। বক্সটি সিড়ি থেকে হাতে নেয়। উপরে সেই সুন্দর একটি কার্ড। আগের কার্ড এবং এখনের কার্ডটি একই ধাঁচের। কার্ডটি খুলে নুশরাত। লাল কালিতে তাতে লেখা,
“HAPPY BIRTHDAY”
লোকটি নুশরাতের জন্মদিন সম্পর্কে জানে, ব্যাপারটি ভাবতেই কেঁপে উঠে নুশরাত। তার জন্মদিনের কথাটা শুধু মাত্র তার কাছের বন্ধুরা, আত্নীয়রা জানে। অর্থাৎ যে তাকে ভয় দেখাচ্ছে সে নুশরাতের পরিচিত একজন অথবা নুশরাত সম্পর্কে এক একটা ক্ষুদ্র তথ্যও তার জানা। নুশরাত নিজের মনকে প্রস্তুত করে, গতবারের মতোই ভয়ার্ত কিছুই থাকবে এই বাক্সতে। বুকে ফু দিয়ে বাক্সটি খুলে সে। বাক্সের ভেতর যা দেখে তাতে মাথা ঘুরে যাবার যোগাড়। একটি রক্তে মাখা কাউন্টডাউন ঘড়ি, যাতে “20:45:45” দেখাচ্ছে। সময়টা কমছে সেকেন্ড এর ডিজিট না ৪৫ থেকে ৪৪, তারপর ৪৪, ৪৩ হচ্ছে। তারমানে এখন থেকে বিশ ঘন্টা পয়তাল্লিশ মিনিট পর কিছু একটা ঘটতে চলেছে। কিন্তু সেটা কি! ঠিক তার পাশে একটি রক্ত মাখা কাগজ, যাতে লেখা,
“শূন্য ঝুলি আজিকে আমার;
দিয়েছি উজাড় করি
যাহা-কিছু আছিল দিবার,
প্রতিদানে যদি কিছু পাই
কিছু স্নেহ, কিছু ক্ষমা
তবে তাহা সঙ্গে নিয়ে যাই
পারের খেয়ায় যাব যবে
ভাষাহীন শেষের উৎসবে”
কবিতাটি শেষে বড় বড় করে লেখা,
“GAME ON”
এই চিরকুটের মাধ্যামে কি বোঝাতে চাচ্ছে সেই ব্যাক্তি। বিশ ঘন্টা পয়তাল্লিশ মিনিট পর কি হবে! নুশরাতের পা কাঁপছে। সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। ধপ করে সিড়িতেই বসে পড়লো সে। মাথাটা টন টন করছে। ঘুম আসছে। ঘুমানোটা প্রয়োজন, একটা শান্তির ঘুম_______________
থানায় এসে উপস্থিত হয় তৌহিদ। হাবীব চিন্তিত মুখে বসে রয়েছে চেয়ারে। তৌহিদকে দেখেই উঠে দাঁড়ায় সে। তৌহিদ ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“কি হয়েছে হাবীব? এতো জরুরী তলব?”
“স্যার, উকিল ম্যাডামের ওখানে যেই বক্সটা পাওয়া গেছে সেটার ফোরেন্সিক রিপোর্ট চলে এসেছে।“
খানিকটা চিন্তিত স্বরেই কথাটা বলে হাবীব। হাবীবের চিন্তিত মুখ দেখে বুঝতে বাকি রইলো না তৌহিদের, কিছু একটা সাংঘাতিক ধরা পড়েছে। তৌহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“রিপোর্ট কি বলছে?”
“বক্সটা থেকে কোনো ফিঙার প্রিন্ট পাওয়া যায় নি স্যার। তবে মোমের আঙ্গুলের উপর যে রক্ত ছিলো সেটা নিয়ে একটা মারাত্নক ব্যাপার জানা গেছে।“
“কি মারাত্নক ব্যাপার?”
চেয়ারে বসতে বসতে প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করে তৌহিদ। হাবীব আমতা আমতা করে বলে,
“স্যার, মোমের আঙুলের যে রক্ত ছিলো সেই রক্তের সাথে গোডাউনে পাওয়া জমাট থাকা রক্তের স্যাম্পল ম্যাচ করেছে। ফোরেন্সিক রিপোর্ট অনুযায়ী এই দুটো রক্তের স্যাম্পল একই মানুষের। আরোও অদ্ভুত একটা ব্যাপার আছে সেটা হলো, এই রক্তটার স্যাম্পল আমাদের ডাটাতে অলরেডি আছে।“
তৌহিদ থমকে যায়। গোডাউনের কথা মনে পড়তেই বুকটা কেঁপে উঠে তার। ধীর কন্ঠে বলে,
“কে সেই মানুষ?”
“মানুষটি আমাদের রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত।“
“যদি মৃত ই হয়, তবে কি সে কবর থেকে উঠে এসেছে?”
“রিপোর্ট তো তাই বলছে স্যার। ডি.এন.এ, গ্রুপ থেকে ৯৮% ম্যাচ দেখিয়েছে। আর সেই ব্যাক্তিটিকে আপনি চিনবেন!”
“কে সে?”
“কানা বসির”
‘কানা বসির’ নামটা শুনতেই মুখের ভাব পালটে যায় তৌহিদের। একরাশ ভয় জড়ো হয় চোখে মুখে। হাবীব কথা বাড়ায় না। সবার একটি কালো অতীত থাকে। তৌহিদের ও আছে। কানা বসির নামক ত্রাশটি শিরায় শিরায় প্রবাহিত হয়। বহু বছর পর অতীতের কালো ছায়া আবার তাকে ধাওয়া করছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব। মৃত মানুষ কি ফিরে আসতে পারে? এটা ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিকভাবে অসম্ভব। নিজেকে কিছুতে শান্ত রাখতে পারছে না তৌহিদ। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে জোরে টেবিলে আঘাত করে উঠে সে। হাবীব তৌহিদের মনোস্থিতি বুঝতে পেরে ধীর কন্ঠে বললো,
“স্যার, আমার মনে হয় কেউ গভীর ষড়যন্ত্র করছে। খুব ভয়ংকর খেলায় মেতেছে সে। তার কেন্দ্রবিন্দু আপনি এবং উকিল ম্যাডাম। প্রথমে স্নিগ্ধের খুন, তারপর ম্যাডামের অফিসে পার্সেল, তারপর আপনাকে গোডাউনে ডেকে নেওয়া। সব কিন্তু কাকতালীয় হতে পারে না স্যার।“
“হাবীব আমাকে বাসায় পৌছে নিবে?”
ক্লান্ত কন্ঠে কথাটা বলে তৌহিদ। হাবীব মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তৌহিদের সাথে বছর তিনেকের বেশি সময় ধরে কাজ করেছে হাবীব। সেই সুবাদে তার স্বভাব সম্পর্কে বেশ ভালোই ধারণা রয়েছে তার। সহজে ভয় পাবার মানুষ তৌহিদ নয়। কিন্তু এই একটা ত্রাশ তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে বছরের পর বছর। তৌহিদ জিপে উঠে বসে, সিটে গা এলিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকে। অতীতের কালো অধ্যায়ের সূচনার কথা চিন্তা করে। এই ত্রাশের শুরু হয় যখন তৌহিদ প্রথম প্রথম ইন্সপেক্টর হিসেবে জয়েন করেছে। পঁচিশ বছরের জোয়ান একজন ছেলে। তখন তার আন্ডারে একটি কেস আছে। কেস ছিলো একটি সিরিয়াল কিলারের। শহরে একের পর এক ১৬-১৯ বছরের মেয়ে কিডন্যাপ হয়ে থাকে। মেয়েগুলো একটি কফি শপ থেকেই উধাও হয়ে যেতো। এর তিন দিন পর তাদের বাবা মায়ের কাছে তাদের একটি পরিহিত জিনিস এবং একটি ট্যাপ পাঠানো হতো। সেই ট্যাপ তাদের নিষ্ঠুর ভাবে ধর্ষণ এবং হত্যালীলা রেকর্ড থাকতো। তৌহিদ অনেক কষ্ট করে সেই ক্যাসের আসল খুনীকে খুজে বের করে। সেই নৃশংস পৈশাচিক খুনীর নাম ছিলো কানা বসির। সে জন্ম থেকে এক চোখ অন্ধ বিধায় তাকে কানা বসির বলা হতো। কানা বসির সেই কফি শপের মালিক ছিলো। তার শপে যারা কফি খেতে আসতো তাদের মধ্যে যে মেয়েটিকে তার ভালো লাগতো তাকেই সে তার কফি শপ থেকে উধাও করে ফেলতো। সেই মেয়েটি যখন একা তার কফি শপে ভিজিট করতে আসতো তখন এই কাজটি সে করতো। কানা বসিরের মৃত্যু হয় ক্রস ফায়ারে। পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী তৌহিদ যখন তাকে ধরতে যায় তখন সে পালানোর চেষ্টা করে। সেই ছোটাছুটির মাঝেই তার উপর গুলি চালাতে বাধ্য হয় তৌহিদ। তার লাশটি নিজ চোখে দেখেছিলো তৌহিদ, সেই মানুষ কিভাবে ফেরত আসতে পারে এটা যেনো রহস্য। নিজ হাতে মাথায় শুট করেছিলো সে ঐ খুনিকে। তার বাঁচার কোন সম্ভাবনাই নেই। তবে এই ভয়ংকর খেলাটা কে খেলছে!
একটি পুরোনো গোডাউনে বেঁধে রাখা হয়েছে নুশরাতকে। তার হাত শক্ত নাইলনের দড়ি দিয়ে বাঁধা। হাত ছাঁড়াবার চেষ্টা করে সে। কিন্তু এতোটাই শোক্ত করে বাঁধা যে সেই বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। বাঁধনের চারপাশটি ছিলে গেছে। সামনে একটা রুটি এবং বাসি ভাজি রাখা। চব্বিশ ঘন্টা পর কিছু খেতে দেওয়া হয়েছে তাকে। বাঁধনটা একটু হালকা হয়েছে। বাঁধন খুলতে পারলে সে মুক্ত তৌহিদ হয়তো তার লোকেশন ট্রেস করে ফেলেছে। এখনই তাকে বাঁচাতে আসবে। হটাৎ কারোর পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কিডন্যাপাররা হয়তো এসেছে। ভয়ে গলা শূকিয়ে যায় নুশরাতের। পা ঘষে ঘষে লোকটা এগিয়ে আসছে। ভয়ার্ত চোখে মাথা তুলে তাকালো নুশরাত। এটা তো সেই কফি শপের মালিক। মোটা, ছোট খাটো, ভালোমানুষী চেহারাটা ভয়ংকর দানবের মতো লাগছে নুশরাতের কাছে। তার ঠোটে কাঁচা রক্ত লেগে আছে। অপ্রকৃতস্থ একটি হাসি দিয়ে উঠলো লোকটি। সেটা দেখেই গা গুলিয়ে আসলো নুশরাতের। প্রতিটি লোম শিউরে উঠেছে তার। জিবটা খানিকটা বের করে তীক্ষ্ণ কন্ঠে লোকটা বললো,
“মামনি, ভয় পাচ্ছো। ভয় পেয়ো না। আমি তো তোমাকে আদর করবো”
বলে এগিয়ে আসতে লাগলো লোকটি। তার আস্তে একটি খুড়। লোকটি এগিয়ে আসছে। নুশরাত হাটু ঘষে পিছানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পেছনে দেয়াল। পালাবার জায়গা নেই। তখনই…………………
চলবে
দৃষ্টির অগোচরে
দ্বিতীয় অধ্যায়
৯ম_পর্ব
হটাৎ কারোর পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কিডন্যাপাররা হয়তো এসেছে। ভয়ে গলা শূকিয়ে যায় নুশরাতের। পা ঘষে ঘষে লোকটা এগিয়ে আসছে। ভয়ার্ত চোখে মাথা তুলে তাকালো নুশরাত। এটা তো সেই কফি শপের মালিক। মোটা, ছোট খাটো, ভালোমানুষী চেহারাটা ভয়ংকর দানবের মতো লাগছে নুশরাতের কাছে। তার ঠোটে কাঁচা রক্ত লেগে আছে। অপ্রকৃতস্থ একটি হাসি দিয়ে উঠলো লোকটি। সেটা দেখেই গা গুলিয়ে আসলো নুশরাতের। প্রতিটি লোম শিউরে উঠেছে তার। জিবটা খানিকটা বের করে তীক্ষ্ণ কন্ঠে লোকটা বললো,
“মামনি, ভয় পাচ্ছো। ভয় পেয়ো না। আমি তো তোমাকে আদর করবো”
বলে এগিয়ে আসতে লাগলো লোকটি। তার আস্তে একটি খুড়। লোকটি এগিয়ে আসছে। নুশরাত হাটু ঘষে পিছানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পেছনে দেয়াল। পালাবার জায়গা নেই। তখনই তড়াক করে চোখ খোলে তৌহিদ। তার সারা শরীর ঘামে সিক্ত হয়ে আছে। বুকটা লাফাচ্ছে। জোরে জোরে শ্বাস নেবার চেষ্টা করছে সে। গলাটা শুকিয়ে যেনো কাঠ হয়ে গেছে। এক গ্লাস পানি খেতে পারলে ভালো হতো। এলোমেলো দৃষ্টিতে চারপাশে নজর বুলালো সে। এটা তার ঘর, সকাল হয়ে গিয়েছে। এক ফালি স্নিগ্ধ রোধ জানালার ফাঁক দিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করছে। রোদের তাপটা বেশ কম। মেঘলা দিনে রোদের তাপ থাকে না বললেই চলে। ভিজা ভিজা পরিবেশ থাকে তখন। আজ ও ঠিক তেমন ই পরিবেশ। বুকে হাত দিয়ে একটি বড় নিঃশ্বাস ছাড়লো তৌহিদ। তারপর উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। তৌহিদের ঘরটি দক্ষিণ-পশ্চিম মুখী। এই ঘরটির অদ্ভুত ডিজাইনের জন্য এই ঘরটি থেকে রাস্তা বেশ ভালো করেই দেখা যায়। বলতে গেলে একেবারে রাস্তার উপর তার ঘর। তাই জানালা সবসময় বন্ধ রাখা লাগে। নয়তো হর্ণের প্যা প্যা কানে তালা লাগিয়ে দেয়। আজ জানালা বন্ধ রাখবে না তৌহিদ। ঘর টা গুমোট গুমোট হয়ে রয়েছে। তাই জানালা খুলে বুক ভরে শ্বাস নিলো সে। এতক্ষণ স্বপ্ন দেখেছে সে, বাজে স্বপ্ন। হুঠাৎ এই স্বপ্নটা কেনো দেখলো তার ব্যাখ্যা তার কাছে আছে। কাল রাতে ঘুমাবার সুয় ও কানা বসিরকে নিয়ে ভাবছিলো সে, তাই এই স্বপ্ন দেখেছে। বারো বছর পূর্বে এই কানা বসিরের কারণে তৌহিদ এবং নুশরাতের জীবনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো।
ঘটনাটা ঠিক এরকম, সেবার যখন একে একে মেয়ে উধাও হচ্ছিলো; এক সন্ধ্যায় নুশরাতের খুব ভ্ল বান্ধবী প্রজ্ঞাও উধাও হয়ে যায়। নুশরাতের জানা ছিলো প্রজ্ঞা ক্যাফেতে যাবার জন্য বের হয়েছিলো। কারণ সেদিন তাদের এক বান্ধবীর জন্মদিন ছিলো। নুশরাত এবং বাকি মেয়েরা যখন ক্যাফেতে পৌছায় তখন প্রজ্ঞা সেখানে উপস্থিত ছিলো না। ক্যাফের মালিক বসির তাদের জানায়, মেয়েটি তার ক্যাফেতে আসেই নি। প্রজ্ঞার মা-বাবা সে সন্ধ্যায় তাকে হন্নে হয়ে খুজে কিন্তু মেয়েটিকে পায় না। তার তিনদিন পর প্রজ্ঞার হত্যার ভিডিও তাদের পাঠানো হয়। কেসটি তৌহিদের কাছে ছিলো।
নুশরাতের সন্দেহ প্রথম থেকেই বসিরের উপর ছিলো। সে তৌহিদকে জানায় ও ব্যাপারটি। তৌহিদ বসিরের ক্যাফেতে সার্চ ও করে। কিন্তু কোনো প্রমাণ পায় নি। যখন হাতের সব উপায় একে একে শেষ হএ যায় তখন নুশরাত ঠিক হয়ে সে ভিক্টিম হবে। অনেকটা বাঘ শিকারের জন্য ছাগল বাঁধার মতো। তৌহিদের এই বুদ্ধি একেবারেই পছন্দ হয় নি। নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে জেনেশুনে বিপদে ফেলবার পরিকল্পনা কারোর ই পছন্দ হবে না। তৌহিদ তাকে বাঁধা দেবার হাজার চেষ্টা করলেও অসফল হয়। নুশরাতের জেদের সামনে তার আকুতি টিকতে পারে না। নিজের বান্ধবীকে যে অমানবিক ভাবে খুন করেছে, তাকে ছেড়ে দিলে তার নাকি ঘুম হারাম হয়ে যাবে। সে তাকে শাস্তি দিতে চায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী কানা বসির জালে ধরাও দেয়। কিন্তু গোলটা বাধে শেষে। সব পরিকল্পনাই জলে ভেসে যায়। কথায় বলে, সাইকোপ্যাথদের সেন্স এবং বুদ্ধি তুখর থাকে। কানা বসির তাদের ব্যাতিক্রম নয়।
যে ট্রাকারটি নুশরাতের গায়ে ছিলো সেটা বসিরের কাছে ধরা পরে যায়। অবশ্য সে সেটার ঝাল নেয়ও, অসম্ভব বাজে ভাবে নুশরাতকে সে মারে। নুশরাতের বুকে বাজে ভাবে লাথায়। এক পর্যায়ে সে ঠিক করে নুশরাতকে জ্যন্ত পুড়িয়ে মারবে। কারণ তার ভাষায় নুশরাত পুলিশি ‘খেচর’। হয়তো আজ নুশরাত জীবিত ও থাকতো না যদি সঠিক সময়ে তৌহিদ সেখানে উপস্থিত না হতো। ঘটনাস্থলে যখন পৌছে তখন নুশরাত মৃত প্রায় অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে ছিলো। কানা বসির তাকে নগ্ন করে তার উপরে কেরোসিন ছেটাচ্ছিলো। নুশরাতের সারা দেহে কাস্তের আচর, ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে, পাড়িয়ে তার মাংসপেশি থেতলে দেবার প্রচেষ্টা। নিজেকে শান্ত রাখতে পারে নি তৌহিদ। রাগের মাথায় পিস্তল দিয়ে শুট করে বসিরকে। জায়গায় সে মারা যায়। নুশরাতকে যে জায়গায় রাখা হয়েছিলো সেট সেই পরিত্যাক্ত গোডাউন ছিলো, যে গোডাউন থেকে মোবাইল এবং রক্ত উদ্ধার করা হয়েছে। নুশরাতকে একটি কম্বল দিয়ে মুড়ে গোডাউন থেকে উদ্ধার করে। যার সুস্থ হতে ৪ মাস লাগে। ভাগ্য ভালো ছিলো অভ্যন্তরীন রক্তক্ষরনটি মারাত্নক ছিলো না। তার পর থেকেই নিজেদের মাঝে একটি দেয়াল টেনে দেয় তৌহিদ। নুশরাতের সাথে যা হয়েছে তার জন্য নিজেকে দোষারোপ করতো সে। তৌহিদের অবহেলা ধীরে ধীরে নুশরাত কে তার থেকে বহু ক্রোশ দূরে সরিয়ে দেয়। তাই তো আজ কাছে আসার পর ও দুটি প্রানের মাঝে অদৃশ্য দূরত্ব রয়েই গেছে। তবে এবার সেই একই ভুলটি সে করবে না। বসির যদি ফিরেও আসে তবে নুশরাতের হাত ধরে তার মোকাবিলা করবে। সে আর ভীতু হয়ে থাকবে না। এবার সে রুখে দাঁড়াবেই, তার যে কানা বসিরের কুনজর থেকে নুশরাতকে এবার বাঁচাতে হবে___________________
মুখে হাত দিয়ে বসে রয়েছে নুশরাত। কেসের ফাইল এলোমেলো হয়ে রয়েছে কিন্তু সেদিকে তার খবর নেই। সে শুধু শূন্য দৃষ্টিতে আনমনে তাকিয়ে রয়েছে। স্বর্ণ বিগত পনেরো মিনিট যাবৎ নুশরাতকে দেখে যাচ্ছে। নুশরাতের এরুপ উদাসীনতা দেখে তার মনে প্রশ্নরা ভিড় জমিয়েছে। তাই হাতে থাকা ফাইলটি বন্ধ করে নুশরাতের সামনে গিয়ে বসে সে। বিদ্রুপের স্বরে বলে,
“ম্যাডাম কি কেসের টেনশনে দিশাহারা হয়ে গেলেন নাকি?”
হুট করে স্বর্ণের তীক্ষ্ণ কন্ঠ কানে যেতে হুশ ফিরে নুশরাতের। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
“কেসটা জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে তাই তো চিন্তায় পড়ে গেছি।“
“এতো নামী উকিল সাহেবা যদি চিন্তায় পড়ে, তবে আমাদের কি হবে!”
স্বর্ণের মুখে ‘উকিল সাহেবা’ শব্দটি শুনে থমকে গেলো নুশরাত। তখন রবিনের পারফিউমের বক্স এবং চিঠির কথা মনে পড়লো তার। আচ্ছা তার সাথে যে মানুষটি মজা করছে সে রবিন নয়তো। হতেই পারে সে এসাইলাম থেকে এই কাজ করছে। পুনরায় নুশরাতকে উদাস হতে থেকে তার সামনে তুড়ি বাজায় স্বর্ণ। নুশরাত তার দিকে তাকালে হাসিমুখে বলে,
“আপনার কেসের সমস্যার সমাধান আমার কাছে আছে। আমার মতে এই পন্থা অবলম্বন করলে আপনি খুব সহজে এই কেস জিতে যাবেন!”
স্বর্ণের কথা শুনে অবাক কন্ঠে নুশরাত জিজ্ঞেস করে,
“কি পন্থা?”
“কিন্তু তার আগে বলুন, এর বিনিময়ে আমি কি পাবো?”
“কি চান আপনি?”
স্বর্ণের মুখে বিস্তৃত হাসি। এই হাসির কারণ কি সেটা জানা নেই নুশরাতের। লোকটা কি চাইবে তার কাছে? হঠাৎ স্বর খাদে নামিয়ে বলে,
“বললে দিতে পারবেন তো?”
“শুনি, শুনতে তো দোষ নেই”
স্বর্ণ খানিকটা এগিয়ে এসে বললো,
……………
চলবে……
মুশফিকা রহমান মৈথি