দৃষ্টির অগোচরে,অন্তিম_পর্ব

দৃষ্টির অগোচরে,অন্তিম_পর্ব
মুশফিকা রহমান মৈথি

কিছু একটা ভেবে টিভি চ্যানেলটা অন করে নুশরাত। শিরোনামটি দেখে হতবাক হয়ে যায় নুশরাত। শিরোনামে লেখা রয়েছে,
” এগারো বছর পূর্বের হত্যাকান্ড ফাঁশ। হত্যাকান্ডের মুল আসামী নাহিদুল ইসলাম হাজত থেকে নিখোঁজ। পুলিশের ভ্যান থেকেই পলাতক নাহিদুল ইসলাম”

খবরটা দেখা আতকে উঠে নুশরাত। এক মূহুর্ত দেরি না করে সে তৌহিদকে ফোন করে। প্রথমে ফোনটা কেটে দিলেও মিনিট পাঁচেক পর তৌহিদ তাকে কলব্যাক করে। নুশরাত ফোনটা রিসিভ করেই গড়গড়িয়ে বলতে থাকে,
– আমি টিভিতে যা দেখলাম তা কি সত্যি?
– হ্যা, ওকে থানায় আনার সময় কান্ডটা ঘটেছে।
– স্নিগ্ধ?
– স্নিগ্ধ মুখ খুলে নি! আমি সত্যি বুঝছি না নাহিদ পুলিশ কাস্টেডিতে আনার আগেই গায়েব কিভাবে হয়ে গেলো। এটা ইম্পোসিবল। যাই হোক আমরা পুরো শহরে ফোর্স এলার্ট করে দিয়েছি। দেখা যাক কি হয়! আমি এখন রাখছি।

বলেই ফোনটা রেখে দেয় তৌহিদ। উপর মহলের চাপ কম আসছে না তৌহিদের উপর৷ নাহিদের স্যালেন্ডারের পর যেনো সারা শহরে এটা হটক্যাকের মতো আলোচনার টপিক হয়ে গেছে। একে একের পর এক পাঁচটা খুন, প্রতিটা মানুষ তানজীম হত্যার সাথে জড়িত। স্নিগ্ধকে কাস্টেডিতে নেবার পর থেকে তাকে নানাভাবে টর্চার করা হয়েছে যেনো মাস্টারমাইন্ডের নামটা সে বলে কিন্তু সে মোটেই তার মুখ খুলে নি। সে ভেবেছিলো এই খুনীর হত্যালীলা থামানোর একটাই উপায় তা হয় নাহিদকে শাস্তি দেওয়া। মৃত্যু ভয় দেখিয়ে নাহিদকে দিয়ে নিজের দোষের স্বীকারোক্তি করিয়ে তার বিরুদ্ধে এরেস্ট ওয়ারেন্ট অবধি বের করা হয়েছিলো। কিন্তু পুলিশ কাস্টেডিতে আনার আগেই তাকে গায়েব করে নিলো খুনী। মিডিয়া জোকের মতো পেছনে লেগে আছে। তৌহিদের যেনো মাথাই কাজ করছে না। যদি নাহিদের কিছু হয় তার পুরো জবাব দিহিতা তার করতে হবে। পুলিশ ভ্যানের হাবিলদারের ভাষ্য। রাস্তায় গ্যাঞ্জাম হচ্ছিলো, তারা সেটায় মনোযোগ দিতে নাহিদ কে রেখে ওই গ্যাঞ্জামের কাছে গিয়েছিলো। তারা যখন ভ্যানে ফেরত গিয়েছিলো তখন ভ্যানটা ফাঁকা ছিলো। একটা পুলিশ ভ্যান থেকে আসামী গায়েব হয়ে যাবার কাহিনী সিনেমাতে বেশ বাড়িয়ে চড়িয়ে দেখানো হয়। কিন্তু এই প্রথম তৌহিদের চাকুরিজীবনে সে ব্যাপারটার সাথে অবগত হয়েছে।

নিজের কেবিনে বসে রয়েছে নুশরাত। তার কপালে চিন্তার ছাপ। তার সামনে সবার ছবি রাখা। নাহিদের গায়েব হবার ৬ ঘন্টা হয়ে গেছে অথচ তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। খুনী তাকে মেরে ফেলেছে নাকি সে এখনো বেঁচে রয়েছে কেউ জানে না। তৌহিদের সাথে কোনো যোগাযোগ হচ্ছে না। তাই চিন্তাটা বাড়ছে নুশরাতের। যদিও ভিক্টিম প্রতিটা মানুষ ঘৃণ্য পশুর মতো কাজ করেছে কিন্তু তাদের মেরে ফেলাটাও কোনো বুদ্ধিমত্তার কাজ হয়। মাহির, আলতাফ, রাজীব, ইশান, দিহান সবাইকে যেভাবে নৃশংসতার সাথে খুন করা হয়েছে তাতে আন্দাজ করা সম্ভব খুনীও একজন মানসিক রোগী। সে রীতিমতো সিরিয়াল কিলারের মতো এক একটা মানুষকে মেরেছে। খুনী তাকেও হয়তো মেরে ফেলতো যদি না সেই রাতে সে বাসার বাহিরে যেতো! স্নিগ্ধের ভাষ্যমতে সেই রাতে খুনী তাকে মারতেই তার ফ্লাটে ঢুকেছিলো। তখন মাহির ফ্লাটে উপস্থিত ছিলো। অন্ধকারে খুনীর সাথে মাহিরের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে সে মাহিরকে খুন করে। নুশরাত চোখের চশমাটা খুলে টেবিলে রাখে। হাত জোড়া মাথার কাছে ঠেকিয়ে নুশরাত চোখ বুঝে কিছুক্ষণ বসে থাকে। প্রতিশোধ কখনোই কোনো সল্যুশন হতে পারে না। কিন্তু তাদের সাথে প্রতিশোধটা নিচ্ছে টা কে! তখন কেবিনের দরজায় টোকা পড়ে। রবিন উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে,
– আসবো?
– আয় না, কি হয়েছে? তোর মুখের এরকম বারোটা কেনো বেজে আছে?
– এই ভিডিও টা দেখ।

বলেই ফোনটা এগিয়ে দিলো রবিন। ফোনে একটা ভিডিও চলছে। তাতে একটা চেয়ারের সাথে বাঁধা রয়েছে নাহিদ। বাঁচার জন্য আকুতি করছে সে। চিৎকার করছে সে। তাকে একটা ঘরের ভেতরে আটকে রাখা রয়েছে। ঘরটা ময়লা আবর্জনার স্তুপ। পনেরো সেকেন্ডের ভিডিও নিমিষেই শেষ হয়ে যায়, ভিডিও শেষে “টু বি কন্টিনিউড” লেখাটা ভেসে উঠে স্ক্রিনে। নুশরাত অবাক কন্ঠে বলে,
– এই ভিডিও কোথায় পেলি তুই?
– ফেসবুকে ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে। হাজার হাজার জায়গায় শেয়ার ও হয়ে গেছে। এখন মেইন প্রোফাইলটা কোনটা কে বলবে? আমার মনে হয় এবার আর লুকিয়ে খুন হবে না। সবার চোখের সামনে খুনটা হবে।
– এতোটা রিস্ক কি খুনী নিবে?
– জানি না। থানায় যাবি একবার? ভিডিও টা তৌহিদ স্যারকে দেখানো প্রয়োজন।
– হু,চল।
– আমি উবার কল করছি।

নুশরাত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রদান করে। গাড়িতে উঠেও নুশরাত শুধু ভিডিওটাই দেখছিলো। বারবার ভিডিওটা দেখে যাচ্ছিলো যেনো একটা ক্লু পাওয়া যায়। হঠাৎ নুশরাত বলে উঠে,
– রবিন, গাড়ি ইশানীর বাসার দিকে নে?
– কেনো?
– বলছি তো ওদিকে নিতে বল৷

রবিন ও ড্রাইভারকে এড্রেস বলে। হঠাৎ এমনটা কেনো বললো নুশরাত রবিনের বোধগম্য হলো না। কিন্তু সে কোনো প্রশ্ন ও করলো না।

ভিডিওটার আই পি এড্রেস খোঁজার কাজে দুইজন হ্যাকার কাজ করছে। তৌহিদের কাছে সময় বেশি নেই। কিছুক্ষণ পূর্বে তাকে এই ভিডিও মেইল করা হয়েছে। যে এড্রেস থেকে মেইল করা হয়েছে সেই এড্রেসটিকে ট্রেক করা যাচ্ছে না। যতবার ই ট্রাক করতে যাচ্ছে উলটো কম্পিউটার হ্যাক হয়ে যাচ্ছে। সেই ভিডিও এর পর আরেকটি মেইল তাদের পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, ঠিক বিকেল ৪টায় ফেসবুকে লাইভ মার্ডার করা হবে নাহিদকে। পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করে লেখা থাকে,
” যদি ধরার ক্ষমতা থাকে তবে বিকেল ৪টার আগে ধরে দেখান”

এর পর থেকেই তৌহিদ এই আইপি এড্রেসএর লোকেশন ট্র‍্যাক করার চেষ্টায় রয়েছে।

গাড়িটা গিয়ে থামে ইশানীর বাসার সামনে। রবিন অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
– তুই এখানে কেনো এসেছিস?
– ইশানীর ঘরে তালা দেওয়া!
– তো?
– দোস্ত খেয়াল করে শোন। ভিডিও তে নাহিদের ভয়েজের সাথে সাথে আর কিছু শুনতে পাচ্ছিস কি না?

রবিন হেয়ারফোনস লাগিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনে, একজন হকারের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। রবিন খেয়াল করে দেখলো সেই একই হকারের কন্ঠ বাড়ির পাশের বন্ধ বরফকলটার সামনে পাওয়া যাচ্ছে। সেই হকারটা সেখানে বসে হকারি করছে। নুশরাতের দিকে তাকাতেই নুশরাত বললো,
– সেদিনো এই হকার এখানেই ছিলো। এটা আমার ওয়াইল্ড গেজ ও হতে পারে। কিন্তু ইশানীর বাসার ভেতর ই নাহিদকে রাখা হয়েছে। আমার মনে হয় তৌহিদ ভাইকে ফোন দেওয়া উচিত।
– আচ্ছা ইশানী বাসার ভেতরে ঢোকা গেলে কেমন হয়?
– রিস্ক হয়ে যাবে দোস্ত। তৌহিদ ভাইকে একটা ফোন করি?
– আমি তো আছি, একটা মেয়েই তো।

বলেই বাসার পেছনের ওয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে রবিন। নুশরাতের মন টা বাসাটার ভেতরে ঢুকতেই কেনো যেনো কু ডেকে উঠে। বাসার ভেতরে সিড়ি দিয়ে একটা চিলে কোঠার মতো জায়গায় এসে দাঁড়ায় নুশরাত এবং রবিন। চিলে কোঠাটার তালাটা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে নুশরাত। রুমটার ভেতরে যেতেই নুশরাতের চোখ বিস্ফোরিত হয়ে যায়। ঘরের একটা কোনায় নাহিদের হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে। তাকে অমানুষের মতো মারা হয়েছে। নুশরাত তাকে দেখেই বলতে লাগে,
– রবিন, তৌহিদ ভাইকে ফোন দে। এখন ই তৌহিদ ভাইকে ফোন দে।

বলেই পেছনে ফিরতেই তীব্র আঘাত মাথায় অনুভব হয় তার। কিছু বুঝার আগেই জ্ঞান হারায় সে।

তৌহিদ তাদের আইটি ডিপার্টমেন্টের সাথে কাজে ব্যাস্ত তখন ই তার ফোনটা বেজে উঠে। আরেকটা মেইল এসেছে। মেইলটা অন করতেই মাথাটা ফাঁকা হয়ে যায় তৌহিদের। নুশরাত চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় অচেতন পড়ে রয়েছে। তারপর একটা ফোন আসে তৌহিদের ফোনে। রিসিভ করতেই একটি অপরিচিত কন্ঠ ভেসে উঠে তৌহিদের কানে,
– উকিল সাহেবাকে বলেছিলাম আমার কাজে নিজের মাথা না ঘামাতে শুনে নি। আর মাত্র আধা ঘন্টা রয়েছে। আমাকে ধরতে চাইলে নিজেকে আরোও স্মার্ট করুন। টিক টক টিক টক। সময় চলে যাচ্ছে।

বলেই ফোনটা কেঁটে দেয়। তৌহিদের রাগ হচ্ছে নিজের উপর। একটা মানসিক রোগীর কাছে রয়েছে নুশরাত। লোকটা যেকোনো কিছু করতে পারে। তৌহিদের দম বন্ধ লাগছে। কোথায় আছে কেমন আছে সেটাও জানে না সে! নুশরাতের ফোনটাও সুইচড অফ। তখনই একটা ছেলে বলে উঠে,
– স্যার আমরা মেইল প্রোফাইলটা খুজে পেয়েছি। আইপি এড্রেস ও ট্রেস হয়ে যাবে ডিভাইসের।
– তোমরা লোকেশনটা ট্রেস করার চেষ্টা করো। সাথে এই নাম্বারটার লোকেশন ও ট্রেস করার চেষ্টা করো। ওর মোবাইলটা এখন কোন লোকেশনে আছে এটা ট্রেস করতে পারলেও হবে। কুইক কুইক।

মুখে পানির ছিটা পড়তেই নুশরাতের হুশ ফিরে। চোখ খুলে তাকাতেই দেখে তার সামনে রবিন বসে রয়েছে। রবিন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। নুশরাত মাথায় তীব্র ব্যাথা অনুভব করলো। কিছু বোঝার আগেই রবিন বললো,
– তোকে আমি অনেকবার বলেছিলাম দোস্ত, আমার কাজে নাক গলাশ না। তুই শুনিস নি। এখন সেই খেশারত তো দিতেই হবে। তাই না?
– রবিন তুই?
– হ্যা! আমি! অন্য কাউকে ভেবেছিলি নাকি?
– কিন্তু কেনো?
– প্রতিশোধ জিনিসটা খুব ই খারাপ জানিস তো। একবার মজা আসা শুরু করলে আর থামতেই ইচ্ছে করে না। প্রথমে ভেবেছিলাম ওরা যদি শাস্তি পায় তবেই আমার রাগ শান্ত হবে। কিন্তু ভুল, ওদের নিজের হাতে মারার যে মজা তা ওই জেলের পেছনে দেওয়ার মাঝে নেই।
– কিন্তু কেনো?
– তানজীমের মৃত্যুর সাথে আমার কিছু যায় আসে না। আমি আমার প্রতিশোধ নিয়েছি। কারণ এদের জন্য আমাকে কলেজ ছাড়তে হয়েছে। স্নিগ্ধকে বলেছিলাম আমি তানজীমের বড় ভাই আর তানজীমের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিবো। স্নিগ্ধ বিশ্বাস ও করলো। ইশানীও সেইজন্যই আমাকে হেল্প করে। ইশানী ভালো কম্পিউটারের কাজ জানতো। ওর আর স্নিগ্ধের সাহায্যে আমি আবার সব কাজ করি। আরোও অনেক হেল্পার ছিলো আমার। ওগুলো পোশা খুনি, টাকার বিনিময়ে সব করে। যাক গে, আমি তখন দূর্বল ছিলাম, তাই কিছুই বলতে পারতাম না। কিন্তু এখন না নয়। এখন আমি এদের ভয় পাই না।
– তাহলে সমীর, অনিককে কেনো ছেড়ে দিয়েছিস?
– ছাড়ি নি, আসলে ওদের মারার কারণ পাচ্ছিলাম না। আর চুনোপুটি পারার চেয়ে রাঘববোয়াল গুলোকে সরানো বেশি জরুরি। তাই নয় কি?

বলেই বিকৃত হাসি হাসতে থাকে রবিন। রবিনের এই রুপ দেখে লোমগুলো দাঁড়িয়ে যায় নুশরাতের৷ তার মনে হচ্ছে সে এক ভয়ংকর মানুষের সামনে বসে রয়েছে। রবিন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
– এখন শো টাইম

বলেই মোবাইলের ভিডিও ক্যামেরা অন করে সে। নাহিদের মুখে পানি ছিটা দিয়ে তাকে উঠায়। নাহিদের ঠিক মুখোমুখি নুশরাত বসে রয়েছে। নুশরাত এবং নাহিদের মাঝে ক্যামেরাটি। নাহিদের দিকের লাইটটা জ্বালায় রবিন। তারপর বলতে থাকে,
– আপনারা এতোদিন লাইভ এ রান্না করা দেখেছেন, কাঁপড়ের মডেলিং দেখেছেন, মেকাপ করা দেখেছেন। আজ দেখবেন কিভাবে একজন র‍্যাগ প্রদানকারীকে শাস্তি দেওয়া হয়।

বলেই নাহিদের হাতের শিরা ব্লেড দিয়ে কেটে দেয় সে। গড়গড়িয়ে রক্ত পড়ছে। নাহিদের কন্ঠে চিৎকার করার মতো ও শক্তি নেই। নুশরাতের চোখের সামনে জিনিসগুলো হচ্ছে। ভয়ে তার কন্ঠ যেনো বন্ধ হয়ে আসছে। রবিনের ভেতর এক উম্মাদনা লক্ষ করতে পারছে নুশরাত। এমন উম্মাদনা সে এর পূর্বে কখনোই দেখে নি। এতো বছরের বন্ধুত্বের মাঝে কখনো বুঝতেই পারে নি এই ছেলেটা এতোটা উম্মাদ। রবিন নাহিদের আরেকটি হাতের ধমনি বরাবর ছুরি চালাতে থাকে। কতোবার নাহিদের হাতের উপর ছুরি চালানো হয় তার ঠিক নেই। তারপর নাহিদের বুকটা একটা তীক্ষ্ণ ছুরি দিয়ে চিরে ফেলে রবিন। নাহিদের তখনো শ্বাস চলছে। তারপর চোখের ভেতর গরম শিশা ডেলে দেয়। গরম শিশার গরমে চোখ গলে যায় নাহিদের। দৃশ্যটা আর সহ্য করতে পারে না নুশরাত। তখন ই জ্ঞান হারায়।

তিনদিন পর,
নুশরাতের যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে একটি সাদা বিছানায় শুয়ে ছিলো। হাতে সেলাইনের ক্যানেল। শরীরটা বেশ দূর্বল লাগছে তার। জ্ঞান ফিরতেই আশেপাশে তাকায় সে। একটা হাসপাতালে রয়েছে সে। একটা পরিচিত কন্ঠ কানে ভেসে আছে নুশরাতের,
– ভয় পেও না, রবিন ধরা পড়েছে।

ঘাড় কাত করতেই দেখে তৌহিদ বসে রয়েছে। তৌহিদ মুচকি হেসে বলে,
– তুমি চালাকিটা না করলে রবিনকে ধরতে পারতাম না। সরি, তোমাকে এতো বড় রিস্ক নেওয়ানোর জন্য।
– ও কোথায় এখন?
– এসাইলামে।

নুশরাত কোনো কথা বলে না। নাহিদদের গ্রুপের সম্পর্কে খোঁজ নিতে নিতে তাদের খোঁজ পায় তারা যাদেরকে অমানবিক ভাবে নাহিদদের গ্রুপ র‍্যাগ দিতো। রবিন তাদের মধ্যেই একজন ছিলো। রবিন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরে নাহিদদের দ্বারা অত্যাচারের পর। এক বছর এসাইলামে থাকার পর তাকে বাহিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তৌহিদের রবিনের উপর অনেক আগ থেকেই সন্দেহ ছিলো। কিন্তু হাতে নাতে ধরার সুযোগ পাচ্ছিলো না। তাই নুশরাত এবং সে মিলিত ভাবে এই প্লান টা করে। নুশরাত আগ থেকেই তৌহিদকে লোকেশনটা সেন্ড করে দেয়। কিন্তু রবিন এতোটা ভয়ংকর হবে এটা কল্পনা করতে পারে নি তারা। অবশেষে নুশরাতের লোকেশন অনুযায়ী তৌহিদ রবিনকে হাতে নাতে ধরে। যখন তৌহিদ সেখানে উপস্থিত হয় তখন নুশরাত অচেতন ছিলো এবং নাহিদ মৃত। নাহিদের লাশ খুবলে খাচ্ছিলো রবিন। রবিন যেনো পালাতে না পারে তাই পায়ে গুলি চালায় তৌহিদ। অবশেষে এই হত্যালীলার মাস্টারমাইন্ডকে ধরতে পেরেছে তারা।

নুশরাত ঘুমাচ্ছে, বেচারি অনেক ভয় পেয়েছে। তৌহিদ তার পাশে বসে রয়েছে। তখন ফোনটা বেজে উঠে তৌহিদের৷ ফোনটা রিসিভ করতেই শুনে,
– স্যার, স্নিগ্ধকে কাস্টেডির ভেতরেই কেউ মেরে ফেলেছে।

কথাটা শুনতেই ফোনটা পড়ে যায় তৌহিদের হাত থেকে। রবিন তো এসাইলামে, তবে কে এই খুনী!

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here