দৃষ্টির অগোচরে,১৩তম_পর্ব,১৪তম_পর্ব
মুশফিকা রহমান মৈথি
১৩তম_পর্ব
নুশরাত তখন ধীর কন্ঠে বললো,
– আমি হয়তো কিছু একটা আন্দাজ করতে পারছি মানুষটা কে!
– কে!
– বলছি, আগে বলুন আপনি কি ব্যস্ত?
– নাহ, কেনো বলো তো?
– আমার সাথে একটা জায়গায় যেতে হবে, সেই জায়গায় গেলেই কিছু প্রশ্নের উত্তর পাবো।
নুশরাতের চোখে আত্নবিশ্বাসের ঝলক রয়েছে। সে হয়তো কিছুটা আঁচ করেছে। তৌহিদ দ্বিমত পোষণ করলো না৷ তার কাছে আপাতত ঐ কালো জ্যাকেট পরিহিত লোকটির রহস্য উম্মোচন করাটার প্রাধান্যটাই বেশি। নুশরাত তৌহিদের উত্তরের অপেক্ষায় তার পানে অধিক আগ্রহে চেয়ে রয়েছে। তৌহিদ ধীর কন্ঠে বললো,
– কোথায় যেতে হবে?
– আলতাফের বাসায়। আপনি বাইকে রওনা দিন, আমি সি.এন.জি তে করে আসছি।
– আমার বাইকে যেতে আপত্তি আছে তোমার?
তৌহিদের প্রশ্নে খানিকটা চমকে উঠে নুশরাত। “ভুতের মুখে যেতো রাম নাম” — কথাটার উপযুক্ত উদাহরণ আজ চোখের সামনে দেখছে সে। নুশরাতের মুখটা না চাইতেও হা হয়ে গেলো। তার চোখে একরাশ বিস্ময়। তৌহিদ তাকে নিজে লিফট দিতে চাইছে। এও সম্ভব! নুশরাতের উত্তরের অপেক্ষায় আছে তৌহিদ৷ কিন্তু নুশরাত উত্তর দেবার বদলে তার মুখপানে হা করে চেয়ে রয়েছে। নুশরাতের চোখের সামনে তুড়ি মেরে তীব্র কন্ঠে বলে,
– কি হলো? সময় পেরিয়ে যাচ্ছে আমাদের বের হতে হবে!
– চলুন।
নিচু গলায় উত্তর দিলো নুশরাত। তৌহিদ এক মূহুর্ত দাঁড়লো না। আকরাম সাহেবের কাছ থেকে স্নিগ্ধের রুমের চাবিটা নিয়ে বাইকের কাছে চলে গেলো সে। নুশরাত ও তার পিছু পিছু বেড়িয়ে গেলো। তৌহিদ বাইক স্টার্ট দিলে নুশরাত তার পেছনে বসলো। তার ঘাড়ে হাত রাখলো। লুকিং গ্লাস দিয়ে নুশরাতকে দেখছে তৌহিদ। তারপর দৃষ্টি সরিয়ে বাইক চালানো শুরু করে সে। প্রায় বারো বছর পর আবারো তৌহিদের বাইকের পেছনে এভাবে বসলো নুশরাত। একটা সময় ছিলো, যখন কোনো বাধা ছাড়া তৌহিদের পেছনে এভাবে বসে লং ড্রাইভ এ বেরিয়ে পড়তো নুশরাত৷ এই ঘুরতে যাওয়াটা একটা সময় বাজে অভ্যেসে পরিণত হয়েছিলো তার৷ সময়গুলো সুমধুর ছিলো, যা এখন কেবল ই স্মৃতির পাতায় জীবন্ত। মাঝে মাঝে স্মৃতির পাতাগুলো উলটাতে মন্দ লাগে না। তৌহিদ এবং নুশরাতের সম্পর্কটা এখন কেবল ই অতীত। বিষাক্ত মূহুর্ত গুলো মুছে দিলে সেই সময়গুলো নুশরাতের জীবনের অন্যতম সুখময় মূহুর্ত। আজ সম্পর্কটা নষ্ট না হলে তৌহিদ তার জীবনের অন্যতম পুরুষ হিসেবে থাকতো। নুশরাত এবং তৌহিদের সম্পর্কটা খুব সাদামাটা ছিলো। কিন্তু দুজনের দুজনের প্রতি অনুভূতিগুলো সুগভীর ছিলো। কিন্তু একটা সামান্য ঝগড়া, জেদ তাদের সুন্দর সম্পর্কটা তাশের ঘরের ন্যায় এলোমেলো করে দিলো। জোরে বাইকের ব্রেক কষলে নুশরাত স্মৃতির পাতাগুলো থেকে বেরিয়ে আসে। সামনে তাকাতে দেখে আলতাফের বাসার সামনে এসে বাইকটা থেমেছে। এতোটুকু পথ কখন কেটে গেছে বুঝতেই পারে নি নুশরাত! তৌহিদ ধীর কন্ঠে বললো,
– ধীরে নেমো।
– হু
বাইকটা পার্ক করে তৌহিদ বললো,
– তুমি শিওর এখানে সব প্রশ্নের উত্তর পাবো?
– উত্তর না পেলেও ক্লু অবশ্যই পাবো। স্নেহা এখন বাসায় থাকতে পারে। চলুন যাওয়া যাক।
আলতাফের বাসাটা এস.এ ডেভেলপমেন্ট কো. এর একটা ৮ তালার বিল্ডিং। আলতাফ সাত এবং আট তালা মিলে ডুপ্লেক্স এ থাকতো। তৌহিদ এবং নুশরাত বিল্ডিং এ ঢুকতে গেলে দারোয়ান তাদের আটকে দেয়। তৌহিদ তাকে নিজের কার্ড দেখালে সে আমতা আমতা করে বলে,
– স্যার, আমার ম্যাডামকে ফোন দিতে হবে। এটা আমার ডিউটি।
– হ্যা, দাও। বলো ওসি সাহেব এসেছেন।
– জ্বী স্যার।
দারোয়ান ফোনে কথা শেষ করে বলে,
– স্যার আপনারা যাইতে পারেন। ম্যাডাম বাসায় ই আছেন।
– আচ্ছা। চলো নুশরাত
বলেই লিফট কল করলো তৌহিদ। নুশরাত তার পিছু পিছু লিফট এ উঠলো। নুশরাতের দুটো খটকার একটার সমাধান স্নেহার কাছে রয়েছে। লিফটে থাকাকালীন নুশরাত তৌহিদকে জিজ্ঞেস করলো,
– আচ্ছা বাসায় চোর ঢোকার রাস্তাটা কি খুজে পেয়েছেন!
– নাহ, কোনো ফাঁক দিয়ে একটা আস্ত মানুষ ঢোকার সিস্টেম নেই। দারোয়ানের কাছে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা গেছে, সেদিন ডেলিভারি বয় রুমে খাবার নিয়ে এসেছিলো। তার মাথায় ক্যাপ আর মুখে মাস্ক ছিলো। রেস্টুরেন্টের প্যাকেট ও আমরা পেয়েছিলাম। স্নিগ্ধ যেটায় কাজ করে সেই রেস্টুরেন্ট। এজন্যই স্নিগ্ধের প্রতি ডাউটা এত স্ট্রং
– বুঝলাম, তা দারোয়ান ডেলিভারি বয় কে নিচে নামতে দেখেছিলো কি!
– অদ্ভুত ব্যাপার হলো, না। ডেলিভারি বয়টি যেনো হাওয়া হয়ে গিয়েছিলো। ডেলিভারি বয়ের এন্ট্রি হবার পনেরো মিনিটের মাঝেই স্নেহা বাসায় আসে৷ দরজাটা আটকানো ছিলো তখন৷ স্নেহা কলিংবেল বাজায় অনেক কিন্তু কোনো সারা পায় না। তাই ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে সে দরজা খুলে৷ আলতাফ তখন মাটিতে মৃত অবস্থায় পড়েছিলো।
নুশরাত আর কিছু জিজ্ঞেস করে না। লিফটের সাততলায় যাবার অপেক্ষা করতে থাকে সে, উত্তরগুলো তার অপেক্ষায় রয়েছে___________
কলিংবেল বাজানোর আগেই দরজা খুলে দিলো স্নেহা। মনে হলো সে দরজার কাজেই অপেক্ষা করছিলো, কখন তৌহিদ আসবে। দরজা খুলতেই নুশরাতকে দেখে বেশ অবাক হয় স্নেহা৷ তৌহিদ তখন তার সাথে নুশরাতের পরিচয় করিয়ে দেয়। স্নেহার মাঝে একটা অদ্ভুত অস্থিরতা খেয়াল করলো নুশরাত। নুশরাত এবং তৌহিদকে বসতে পড়ে শরবত আনতে গেলো সে। নুশরাত কিছুক্ষণ আপাদমস্তক স্নেহাকে পর্যবেক্ষণ করলো। মেয়েটি অসম্ভব সুন্দর দেখতে, হলদে সাদা গায়ের রঙ, মুখখানা একেবারেই পুতুলের মতো। মাজা অবধি ঘন কালো কেস তার। মেয়েটি দৈহিক গড়ণ ও বেশ সুন্দর, লম্বা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি হবে, গায়ে অহেতুক মেদ নেই। বয়সটাও বেশি নয়,পঁচিশ-ছাব্বিশ হবে। বেশ পরিপাটি হয়ে আছে মেয়েটি। একটি নীল শাড়ি পড়ে রয়েছে সে। তার সাথে ম্যাচিং কানের দুল। চুলগুলো সুন্দর করে আঁচরানো। ঘরে কেউ এতোটা সেজেগুজে থাকে এটা নুশরাতের জানা ছিলো। সবথেকে বড় খটকা নুশরাতের লাগলো এটা ভেবে মেয়েটির স্বামী মারা গেছে একটা সপ্তাহ হয়েছে মাত্র। অথচ মেয়েটির চোখে মুখে শোকাতর ভাবটি নেই৷ ব্যাপারটা একটু ভাবাচ্ছে নুশরাতকে। যতটুকু পুলিশি স্টেটমেন্টে ছিলো মেয়েটি নাকি স্বামী শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলো। অথচ আজ তারএকশত ভাগের এক ভাগ ও লক্ষণীয় হচ্ছে না। স্নেহা শরবত এনে নুশরাত এবং তৌহিদকে দিলো। তারপর ধীর কন্ঠে বললো,
– আজ হঠাৎ এখানে কি মনে করে আসা?
– আসলে আমাদের আপনার সাথে একান্তভাবে কিছু কথা ছিলো।
স্নেহার প্রশ্নের উত্তরে কথাটা বলে নুশরাত। স্নেহা মুখে হাসি টেনে বললো,
– জ্বী বলুন। আমার জানা থাকলে অবশ্যই উত্তর দিবো।
– ধন্যবাদ, আসলে আমরা আসলে সেদিনের ঘটনাটা পুনরায় শুনতে চাইছি। আসলে বুঝেন ই তো খুনের মামলা। আমাদের ব্যাপারগুলো পানির মতো স্বচ্ছ রাখতে হয়।
– খুনি তো ধরা পড়েছে।
– কিন্তু সে স্বীকার করে নি। আর এখনো চুরি যাওয়া জিনিসও খুঁজে পাওয়া যায় নি।
– এখনো খুঁজে পাওয়া যায় নি?
স্নেহার কন্ঠে খানিকটা উদ্বিগ্নতা বোধ হলো নুশরাতের। তৌহিদ তখন ধীর কন্ঠে বললো,
– জ্বী, স্নিগ্ধের রুমে আমরা কিছুই পাই নি।
– ওহ!
স্নেহা শাড়ির আঁচলটা হাতের মধ্যে নিয়েক খুটখুট করতে শুরু করলো৷ তারপর ধীরে ধীরে সেদিনের ঘটনাটা খুলে বলতে শুরু করলো। স্নেহার কন্ঠে ধীরে ধীরে ভারি হতে লাগলো৷ কন্ঠস্বর জড়িয়ে আসছে। কাহিনীর এক পর্যায়ে মেয়েটির চোখ থেকে নোনাজলের স্রট শুরু হলো। স্নেহার বলা শেষ হতে নুশরাত প্রশ্ন করে উঠলো,
– আচ্ছা আপনি ডাক্তারকে ফোন করেন নি কেনো? বা এম্বুলেন্স? হাসপাতালে নিয়ে যাবার চেষ্টাও হয় নি কেনো?
– আমি আগেও বলেছি আমি একজন ডাক্তার। সুতরাং আমি এসে যখন আলতাফকে দেখেছি, তখন আমি ওর পালস চেক করি। ওর পালস ছিলো না। তাই আমি পুলিশকে ফোন দেয়।
– সরি এই ইনফরমেশনটা আমার কাছে ছিলো না। আরেকটি প্রশ্ন, পনেরো হাজার টাকা বলেছিলেন ওইটা কি গোনা ছিলো? একুরেটলি বলা ছিলো তো
– জ্বী গোনা ছিলো
– নোটগুলো কি সব পাঁচশত টাকার ছিলো নাকি হাজার?
– হাজার টাকার
– শিওর?
– না না পাঁচশত টাকার ত্রিশটা নোট
– আর স্বর্ণটা কি কি ছিলো ওই বক্সে?
– দুটো বালা।
– শিওর?
– সাথে এক জোড়া দুল ও আছে।
– বেশ, আপনি কি একাই থাকেন এই বাড়িতে।
– জ্বী
– আপনার স্বামীর জিনিসগুলো এখনো রেখে দিয়েছেনম?
– জ্বী না, আসলে স্মৃতিগুলো কষ্ট দেয়। তাই দান করে দিয়েছি। কেনো বলুন তো?
– এমনি আসলে আপনাদের সম্পর্কটা তো অনেক গভীর ছিলো
– জ্বী খুব ভালোবাসতাম আমি তাকে!
– আচ্ছা আজ উঠি। ধন্যবাদ, অনেক সনয় নষ্ট হলো।
বলেই উঠে দাঁড়ালো নুশরাত। তৌহিদ স্নেহাকে আশ্বস্ত করলো,
– আমরা খুনিকে ঠিক শাস্তি দিবো। আপনি চিন্তা করবেন না।
নুশরাত এবং তৌহিদ আলতাফের বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে আসলো। নুশরাত এখনো কোনো কথা বলে নি তৌহিদের সাথে। তৌহিদ উগ্রীব হয়ে আছে রহস্য জানার জন্য। নুশরাত নির্লিপ্তভাবেই জিজ্ঞেস করলো,
– এক কাপ চা খাওয়াবেন?
– তুমি না বললে, এখানে আসলে জ্যাকেট পড়া লোকটির রহস্যের সমাধান হবে৷
– চা খেতে খেতে কথা বলি?
তৌহিদ কোনো কথা বললো না। বাইক স্টার্ট দিয়ে হিনহিনে কন্ঠে বললো,
– উঠে বসো।
একটা চায়ের স্টলের সামনে চা হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে তৌহিদ এবং নুশরাত। সূর্য পশ্চিমের দিকে ঢেলে পড়েছে। গোধুলীর হলদে কিরণ গায়ে আচড়ে পড়ছে তৌহিদ এবং নুশরাতের। চায়ের কাপটায় চুমুক দিয়ে নুশরাত তৌহিদের উদ্দেশ্যে বললো,
– এখানের চা টা বেশ মজা তো! ধন্যবাদ, মাথাটা ব্যাথা করছিলো। চা টা অমৃত লাগছে।
– এবার কি আমাকে বলা যায়, আমরা কেনো স্নেহার বাসায় এসেছি?
– আচ্ছা আপনার স্নেহাকে কেমন লাগে?
– মানে?
– মানে, ওকে কি স্বাভাবিক মনে হয়েছে আপনার? কোনোই খটকা লাগে নি?
– একটু খটকা লেগেছে, যেমন ওর হাবভাব। তবে সেটাতে কি প্রমাণ হয়?
– তেমন কিছু প্রমাণ অবশ্য হয় না কিন্তু এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে আলতাফের মৃত্যুতে স্নেহার খুব একতা দুঃখ হয় নি। ওর হয়তো আলতাফকে পছন্দ ও ছিলো না। আর একটা ব্যাপারে আমি নিশ্চিত কালো জ্যাকেট পড়া লোকটা স্নেহার ই পাঠানো ছিলো!
নুশরাতের কথা অবাক হয়ে তাকালো তৌহিদ। তৌহিদের বিস্মিত মুখ দেখে মুচকি হাসি হাসে নুশরাত। তারপর আবার বলা শুরু করে,
……….
চলবে
দৃষ্টির অগোচরে
১৪তম_পর্ব
– কালো জ্যাকেট পড়া লোকটা স্নেহার ই পাঠানো ছিলো!
নুশরাতের কথা অবাক হয়ে তাকালো তৌহিদ। তৌহিদের বিস্মিত মুখ দেখে মুচকি হাসি হাসে নুশরাত। তারপর আবার বলা শুরু করে,
– আপনি হয়তো খেয়াল করেন নি, যখন আপনি স্নেহাকে বলেছিলেন যে চুরি হওয়া জিনিসগুলো এখনো পাওয়া যায় নি তখন ও বেশ অবাক হয়েছিলো। ও যেনো বিশ্বাস ই করতে পারে নি আপনি এভাবে তাকে নিরাশ করবেন।
– এটায় প্রমাণ কি করে হয় সে স্নেহাই লোকটাকে পাঠিয়েছে?
– আমাকে একটা কথা বলুন, আপনার যদি টাকা হারাতো কিংবা স্বর্ণ হারাতো আপনি বলতে পারতেন না কতো টাকা হারিয়েছে বা কতটুকু স্বর্ণ হারিয়েছে?
– অবশ্যই বলতে পারতাম।
– স্নেহা কি বলতে পেরেছিলো?
তৌহিদ এবার চিন্তায় পড়ে যায়। আসলেই স্নেহা বলতে পারে নি৷ সে খুবই দ্বিধায় ছিলো উত্তর দেবার সময়। এবার নুশরাত জড়তাবিহীন কন্ঠে বলে,
– আলতাফের খুনটি চুরির জন্য হয় নি। খুনের মোটিভ অন্য কিছু। আর স্নেহা সেটা জানে। ও চায় না আমরা সত্যটা জানি। তাই ও ইচ্ছে করে আমাদের কেসের ডিরেকশন চেঞ্জ করতে চাচ্ছে। ওর কোনো টাকা বা স্বর্ণ চুরি হয় নি। ও হয়তো কাউকে বলেছিলো স্নিগ্ধের রুমে জিনিসগুলো রাখতে৷ যাতে আমরা জিনিসগুলো পাই আর স্নিগ্ধ নির্দোষ হওয়া স্বত্তেও ও ফেসে যাক।
– তুমি শিওর কি করে হলে ও নির্দোষ? খুনের আগে একজন ডেলিভারি বয় কিন্তু বিল্ডিং এ এসেছিলো।
– তো? এমন তো হতেই পারে খুনি ডেলিভারি বয় সেজে এসেছিলো! স্নেহা খুন করে নি, তবে সে চায় না খুনি ধরা পরুক। কিংবা খুনের মোটিভ টা কেউ জানুক। খুনি ধরা পরলো না পরলো এটা ওর হেডেক নয়। ইভেন আলতাফের খুনে তার তেমন কিছু যায় ও আসে না, বরং ও বেশ আনন্দিত।
– স্নেহা খুন করে নি, কিন্তু আলতাফের মৃত্যুতে সে আনন্দিত? পাগল হয়ে গেছো? কি বলছো?
– স্নেহার বাসায় ঢুকতেই ছেলেদের জুতো আমার চোখে পড়েছিলো। প্রথমে ভেবেছিলাম এটা হয়তো আলতাফের। কিন্তু খটকাটা লেগেছিলো জুতোটা কাঁদা মাখা দেখে। কাঁদাটা শুকায় নি অবধি। তারমানে কেউ হয়তো কাল রাতে বা আজ সকালে জুতোটা ব্যাবহার করেছে। আমি হাত ধোঁবার জন্য যখন ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম তখন গেস্ট বাথরুমে ছেলেদের কাপড় ভেজা অবস্থায় ঝুলছিলো রডে। আমি কাঁপড়ের কথাও একারণেই তুলেছিলাম। স্নেহা বলেও দিলো ও সব কাপড়, জিনিস দান করে দিয়েছে। তাহলে আমার দেখায় কি ভুল ছিলো?
– তারমানে
– হ্যা, সে তার একটা রিলেশনে জড়িয়ে রয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওর প্রেমিক তখন ও ওই বাসাতেই ছিলো। যাক গে, এখন চলুন একটু স্নিগ্ধের ভার্সিটিতে যাবো। তারপর ওই রেস্টুরেন্টে সেটার কথা সে বলেছিলো। চলুন চলুন
বলেই চায়ের কাপটা এগিয়ে দিলো দোকানির কাছে। তৌহিদ চায়ের বিলটা দিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো। নুশরাত তার পেছনে বসলো। গন্তব্য স্নিগ্ধের কলেজ_______
নুশরাত এবং তৌহিদ প্রিন্সিপালের অফিসে বসে রয়েছে। প্রিন্সিপাল স্যার মোহাম্মদ আবদুর রহমান সাহেবকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। তাদের কলেজের একজন ছাত্র এভাবে খুনের দায়ে গ্রেফতার হয়েছে ব্যাপারটা কলেজের রেপোটেশনের জন্য মোটেই ভালো নয়। তার উপরে পুলিশ সেটার খোঁজখবর নিতে কলেজে এসেছে ব্যাপারটা আরো ও বাজে প্রভাব ফেলবে অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীর উপর। তৌহিদ বিরক্তির স্বরে বললো,
– স্যার আপনি এটুকু সাহায্য তো আমাদের করতেই পারেন, বেশি তো কিছু না। আমি শুধু ওই ছেলেটার সম্পর্কে ওর ক্লাসমেট এবং টিচারদের কাছে কিছু প্রশ্ন করবো। এটুকু পারমিশন দিতে আপনার এতো আপত্তি কেনো?
– দেখুন আমি চাই না এটা একটা গোসিপের ব্যাপার হোক।
– একটা খুন হয়েছে আপনার কাছে কি সেটা ইম্পোর্টেন্ট না?
– সরি অফিসার। আমার কিছু দায়বদ্ধতা আছে।
এবার তৌহিদের মেজাজ আরোও উগ্র হতে শুরু করে। পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছে বুঝতে পেরে নুশরাত তৌহিদের হাতটা চেপে ধরে। ধীর কন্ঠে বলে,
– স্যার, স্নিগ্ধ খুব ব্রাইট স্টুডেন্ট। ওর সারাটা জীবনের ব্যাপার। প্লিজ স্যার, আমরা কাউকে বুঝতে দেবো না আমরা পুলিশের লোক৷ শুধু একটু খোঁজখবর নিবো স্যার। আপনার কলেজের একটা ছেলেকে জেলে নেওয়া হয়েছে আপনার মনে হয় না ব্যাপারটা অলরেডি একটা গসিপ। আমরা চাইলে ফোর্সফুল্লি কাজট করতে পারতাম। আপনি কিচ্ছু করতে পারতেন না। আপনা চাই না ব্যাপারটা অন্যান্য স্টুডেন্টের মাঝে আতঙ্গ সৃষ্টি করুক। প্লিজ স্যার।
নুশরাতের কথায় খানিকটা নরম হয় আবদুর রহমান সাহেব। তিনি অবশেষে তাদের সম্মতি দেন ছাত্র-ছাত্রী এবং টিচারদের সাথে কথা বলার জন্য। নুশরাত তাকে ধন্যবাদ বলে উঠে পড়ে। তৌহিদ বেড়িয়ে যাবার সময় ক্ষুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবদুর রহমান সাহেবের দিকে৷ তিনি বেশ চুপসে যান তৌহিদের চাহনী দেখে।
নুশরাত প্রায় প্রতিটা টিচারের সাথে কথা বলে। সবার একটাই বক্তব্য স্নিগ্ধের মতো ছাত্র তাদের জীবনে খুব কম পেয়েছেন। এতো ডিডিকেশন দিয়ে পড়াশোনা করে যা কল্পনাতীত। ছেলেটার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নেই। কিন্তু ছেলেটা যথেষ্ট চেষ্টা করে পড়াশোনার ক্ষতি যাতে হয়। খুনের সময় ও ক্লাসেই ছিলো৷ সেদিন ওদের পরীক্ষা ছিলো। ছেলেটা বেশ ভালো নাম্বার ও পেয়েছে। এই খোঁজখবর নেবার একটা সময় একজন একটা পাথরে কাগজ মুড়ে ছুড়ে মারে তৌহিদ কে। কাগজটা গায়ে লাগতেই তৌহিদ মাটি থেকে তুলে নেয় কাগজটা। কাগজটি খুলতেই দেখে সেখানে লেখা,
” স্নিগ্ধের সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে পুকুরের দিকে আসুন………..
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি