দৃষ্টির অগোচরে,১১তম_পর্ব,১২তম_পর্ব

দৃষ্টির অগোচরে,১১তম_পর্ব,১২তম_পর্ব
মুশফিকা রহমান মৈথি
১১তম_পর্ব

নুশরাত উঠে দাঁড়ালো। মৃদু কন্ঠে বললো,
– চিন্তা করো না, যদি তুমি নির্দোষ হও তবে তোমার কিছু হবে।

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। স্নিগ্ধ অসহায় দৃষ্টিতে নুশরাতের যাবার পানে চেয়ে থাকলো। নুশরাত থানা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো তখন তৌহিদ পেছন থেকে বলে উঠে,
– এই কেসটা লড়ো না, ছেলেটা নাটক করছে। অহেতুক একজন খুনিকে শাস্তির হাত থেকে বাঁচাতে যেও না।

কথাটা শুনে কৌতুহলী নজরে তাকায় নুশরাত। অবাক কন্ঠে বললো,
– কেনো বলুন তো?
– তোমার ভালোর জন্য বলছি।
– ওহ, কথাটা শুনে মজা লাগলো। কারণ আমি যতটুকু চিনি আমার জন্য ভাবার সময় আপনার কাছে নেই।
– অহেতুক সময় নষ্ট করতে ভালো লাগছে না। ছেলেটাকে তিনদিন যাবৎ দেখছি। এতো মার খাবার পর ও তার কথার কোনো এদিক ওদিক হচ্ছে না। অর্থাৎ তার মিথ্যে ধরা যায় না। এরকম মানুষরা ধূর্ত হয়। তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এতো ধূর্ত।
– এমন ও তো হতে পারে। সে সত্যি বলছে। তাই তার স্টেটমেন্ট চেঞ্জ হচ্ছে না।

তৌহিদের কথার মাঝেই কথাটা বলে উঠে নুশরাত। তার চোখে একরকম জেদ রয়েছে। এই কেসটাতে নিজেকে জড়াতে চায় সে। তৌহিদের বেশ রাগ হলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
– কয়জন খুনিকে দেখেছো তুমি? কোর্টে শুধু তর্ক করলেই সবজান্তা হওয়া যায় না। এসব ধূর্ত শয়তানরা অসহায়ত্বের মুখোশ পরা থাকে।
– আপনি সবাইকে সন্দেহ করেন এটা তো আমার অজানা নয়। তাইতো আমাকেও সন্দেহ করেছিলেন, তাই নয় কি! যাক গে, ধন্যবাদ আমাকে নিয়ে ভাবার জন্য। আসি।

নুশরাতের কন্ঠে চাঁপা অভিমান ছিলো। নুশরাত এক মূহুর্ত সেখানে দাঁড়ালো না। একটা সিএনজি ঠিক করে সেটায় উঠে পড়লো। নুশরাত চলে যাচ্ছে। তৌহিদ এখনও নুশরাতের চলে যাবার পানে চেয়ে রয়েছে। নুশরাতের জিদ সম্পর্কে সে অজানা নয়। একবার যদি সে ভেবে নেয় কোনো কাজ করবে সেই কাজটা সে করবেই, তাতে নিজের ক্ষতি হলেও তার কিছু যায় আসে না। তাদের সম্পর্কটাও এই কারণেই নষ্ট হয়েছিলো৷ বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হলো তৌহিদের। সে আজ ও চায় না নুশরাতের কোনো ক্ষতি হোক৷ তাদের মাঝের দূরত্বটা গাঢ় হলেও তার মনে এখনো নুশরাত সেই কলেজ পরুয়া মেয়েটি ই রয়েছে___________

রাত ৯টা,
টেবিলের উপর কাগজপত্র এবং ছবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। চুলগুলো খোঁপ করে এক কাপ ধোঁয়া উঠ কড়া চা দিয়ে চেয়ারে বসলো নুশরাত। কেসটা বেশ ভালো করে স্টাডি করতে হবে তাকে। স্নিগ্ধের অজান্তেই স্নিগ্ধের স্টেটমেন্টটা ফোনে রেকর্ড করেছে সে। আলতাফ হোসেনের লাশের ছবিগুলো পরপর সাজালো নুশরাত। বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবিগুলো তোলা হয়েছে ছবি গুলো। আলতাফ হোসেন একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। এস.এ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর সে। বর্তমানে কোম্পানিটি বেশ নাম করেছে। প্রায় অনেক পুরাতন বিল্ডিং তারা কিনে নিয়েছে। সেখানে নতুন করে এপার্টমেন্ট, শপিংমল বানাচ্ছে তারা। আলতাফ হোসেনের বয়সটা বেশি না, মাত্র বত্রিশ বছরে বেশ অর্থের মালিক হয়েছে সে। অবশ্য তার উত্তরাধিকার সূত্রে তার বাবার মৃত্যুর পর এস.এ কোম্পানি তার ই হবে। যে তাকে মেরেছে প্রচুর নৃশংসভাবে খুনটি করেছে। ময়নাতদন্তে জানা গেছে মোট ছয়বার তাকে ছুরিঘাত করা হয়েছে। আলতাফের স্ত্রী তখন বাসার বাহিরে ছিলো। যখন বাসায় ফিরে তখন আলতাফের নিথর শরীরটা দেখতে পায়। ভয়ের কারণে পুলিশকে ফোন দেয় সে। তার ভাষ্য মতে বাসা থেকে পনেরো হাজার টাকা এবং ৫ ভরি স্বর্ণ চুরি গেছে। পুলিশ যখন সার্চ করে তখন লাশের কাছেই স্নিগ্ধের আইডি কার্ড পাওয়া যায়। পুলিশের ধারণা স্নিগ্ধের সাথে ধস্তাধস্তির সময় এই ঘটনা ঘঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো একজন সামান্য মাস্টার্স পড়া ছেলে যে কিনা পার্টটাইম চাকরি করে সে কেনো তাকে মারবে? মটিভ কি? চুরি! শুধু পনেরো হাজার টাকা আর ৫ ভরি স্বর্ণের জন্যই কি সে খুন করেছে। স্নিগ্ধের আইডি কার্ডটাও সেখানে থাকবে কেনো? কেউ কি স্নিগ্ধকে ফাঁসাচ্ছে নাকি স্নিগ্ধের অসহায় মুখের পেছনে সত্যি ই কোনো শয়তান লুকিয়ে আছে! নুশরাত তার রেকর্ডারটা অন করে। লুপে স্নিগ্ধের কথাগুলো শুনতে থাকে। অদ্ভুত ব্যাপার ছেলেটি তাকে ঠিক যা যা বলেছে পুলিশকেও একই কথা বলেছে। না একলাইন বেশি না একলাইন কম৷ স্নিগ্ধের বক্তব্য তার আইডি৷ কার্ড কলেজ থেকে হারিয়ে গিয়েছিলো। সে কলেজে রিপোর্ট ও করেছে। এখন সত্য বলছে না মিথ্যে সেটা তো খোঁজখবর নিলে বেরিয়ে আসবে। নুশরাত চোখ বুজে নিলো, হেলান দিয়ে চেয়ারে বসলো সে৷ আলতাফের লাশটা দেখলেই মাহিরের লাশের দৃশ্যটি মনে পড়ে যায় তার। আচ্ছা তার লাশটা প্রথমে দেখেছিলো আলতাফের স্ত্রী স্নেহা। আলতাফ যখন খুন হয়েছিলো তখন বাসায় কেউ ছিলো না। স্নেহার ভাষ্য অনুযায়ী, সে শপিং এ গিয়েছিলো। বাসার কাজের লোককে বিদায় দিয়ে সে বাহিরে গিয়েছিলো। নুশরাতের একটা খটকা লাগছে, যদিও সে নিশ্চিত নয়। স্নেহার সাথে কথা বলাটা দরকার। হঠাৎ নুশরাতের ফোনটা বেজে উঠলো। ঘড়ির দিকে তাকালে দেখতে পায় কাটাটা একটার ঘরে ভিড় করেছে। ফোনটা ফাইলের ভিড়ে চাপা পিড়ে আছে। ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো রবিন নামটি দেখা যাচ্ছে। ফোনটা রিসিভ করতেই ঝাড়ির কন্ঠে রবিন বলে উঠে,
– তোর ফোন কই থাকে? কখন থেকে ফোন দিচ্ছি!
– তোর বাড়ি আগুন লাগছে?
– না তো কেনো?
– তাইলে এই রাতে এতো জরুরি তলব?

কথা বলতে বলতে বারান্দায় চলে আছে নুশরাত। ঘরটা দম বন্ধ হয়ে গেছে, একটু ঠান্ডা বাতাসে দাঁড়ালে মন্দ হবে না। রবিন ফোনের ওপাশ থেকে বলতে লাগে,
– তোকে এই নিয়ে সতেরোবার ফোন দিছি। আমি সত্যি ভয় পেয়ে গেছিলাম৷ ভাবলাম আবার কিছু হলো কি না!
– আসলে স্নিগ্ধের কেসটা স্ট্যাডি করছিলাম।
– কেসটা কি নিচ্ছিস তুই?
– এখনো শিওর না। দুটো খটকা আছে। সলভ হলে নিতেও পারি।
– আচ্ছা যে জন্য ফোন দিলাম, সাব-ইন্সপেক্টর ইমাম ফোন করেছিলেন। বক্সের উপর কোনো ফিঙ্গার প্রিন্ট নেই৷ পুরো ক্লিন চিট। উনি তোর সেফটির জন্য ডায়রি করতে বলেছেন।
– ওসবে কিছু হবে না৷
– কেনো বলতো?
– কারণ কাজটা কে করেছে আমি জানি
– কে?
– বললে তুই বিশ্বাস করবি না।
– তবুও বল
– মাহিরের খুনি।

রবিন কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো৷ রবিনের নীরবতা বুঝতে পেরে হেসে উঠলো নুশরাত। বিদ্রুপের স্বরে বললো,
– বলেছিলাম না বিশ্বাস করবি না। যাক গে বাদ দে। ওই লোক আমাকে ততদিন কিছু করবে যতদিন সে আমার অজানা হয়ে থাকবে৷ যেদিন ওর মুখোশ টেনে খুলে ফেলবো হয়তো সেদিন আমার সময় ঘনিয়ে আসবে। আমি রাখছি, ঘুমোবো। মাথা ব্যাথা করছে।

বলেই ফোনটা খট করে কেটে দিলো নুশরাত। আগুন নিয়ে খেলতে খেলতে তার হাত ঝলসে যাওয়া শুরু করছে কিন্তু তবুও আগুন নিয়ে খেলার সে আনন্দ আছে তা অন্য কোনো খেলায় নেই। ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো নুশরাতের। আজ রাতটা আবারও নির্ঘুম কাটবে__________

বঙ্গকলি মেসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নুশরাত। মেসটা বেশ পুরোনো। লাল ইটের বিল্ডিংটার একপাশে আগাছারা নিজেদের বাস শুরু করে দিয়েছে। চুন খসতে খসতে কিছুই বাকি নেই দালানটির। তিনটা তলার পুরোটাতেই ব্যাচেলরদের ভাড়া দেওয়া হয়। মেসের ম্যানেজার আকরামের রুমটা ঢুকেই কর্ণারের। তিনি এখানে একাই থাকেন। তার বউ এবং একজন কন্যা আছে যারা গ্রামে থাকে। রুমের কাছে যেয়ে গলা খাকারি দেয় নুশরাত। আকরাম তখন পায়ের উপর পা তুলে মুড়ি মাখা খাচ্ছিলো। নুশরাতকে দেখে লুঙ্গিতে হাত মুছলো সে৷ নুশরাত বিনয়ী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– আসতে পারি?
– কাকে চাই আপনার?
– আমার নাম নুশরাত চৌধুরী। স্নিগ্ধ নামের একটা ছেলে এই মেসে থাকতো। আমি ওর উকিল
– ওহ আসেন, আসেন ম্যাডাম।

বলেই উঠে দাঁড়ায় আকরাম। নুশরাত ভেতরে ঢুকে চেয়ারে বসে। আকরাম আনুগত কন্ঠে বললো,
– বলেন ম্যাডাম কেমনে সাহায্য করবো?
– আমি একটু স্নিগ্ধ সম্পর্কে জানতে চাই৷ আপনি কিছু না লুকিয়ে আমাকে কি তার সম্পর্কে বলতে পারবেন?
– কেন পারবো না। আসলে ছেলেটা খুবই ভদ্র একটা ছেলে, আমাদের মেসে থাকে এক বছর। পোলাটা এতো বিনয়ী কি বলবো। না কারোর সাথে গ্যাঞ্জামে যায় না কারোর ক্ষতি করে। বুঝলাম না তারে কেনো খুনের আসামী বানানো হলো?
– আচ্ছা, আপনি কি ওর রুমটা দেখায়ে দিবেন একটু? আমি একটু দেখতাম
– আপনিও ওর রুম তল্লাসি করবেন?
– আপনিও বলতে, আমি বাদে আর কি কেউ এসেছে নাকি?…………..

চলবে

দৃষ্টির অগোচরে
১২তম_পর্ব

– আচ্ছা, আপনি কি ওর রুমটা দেখায়ে দিবেন একটু? আমি একটু দেখতাম
– আপনিও ওর রুম তল্লাসি করবেন?
– আপনিও বলতে, আমি বাদে আর কি কেউ এসেছে নাকি?

নুশরাতের প্রশ্ন শুনে চুপ হয়ে যায় ম্যানেজার আকরাম। কিছু একটা ভাবছেন। হয়তো কথাটা বলা উচিত হবে কিনা সেটা চিন্তা করছেন। নুশরাত শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,
– আমি ব্যাতীত আর কে এসেছিলো?

এবার আমতা আমতা করে বললেন,
– না আসলে পুলিশ আসছিলো আর কি!
– ওহ, তা পুলিশ কি তল্লাশি করেছে ঘরের?
– হো, পুরো লন্ডফন্ড করে লাইছে। কিন্তু কিচ্ছু পায় নাই খুঁজে। আমি তো আপনারে বললাম ই, স্নিগ্ধ পোলাটা খুব ভালো। এই মেসে আমি কম দিন কাজ করি না। পোলারা গিজ গিজ করে, কে কেমন এইটা বলা কোনো ব্যাপার ই না আমার জন্য।

ম্যানেজারের কথায় বুঝাই যাচ্ছে সে স্নিগ্ধের বেশ বড় ভক্ত। নুশরাত আর কথা বাড়ালো না। মুচকি হাসি হেসে বললো,
– আমাকে একটু ওর ঘরটা দেখাবেন কি? তাহলে আমার জন্য সুবিধা হতো!
– হো, আসেন আসেন। আমার কাছে আর একটা চাবি আছে।

নুশরাত এবং আকরাম সাহেব উঠে দাঁড়ায়। স্নিগ্ধের রুমে যেতে নুশরাত প্রশ্ন করে,
– আচ্ছা, রুমটাতে স্নিগ্ধ একা থাকতো?
– হো, বেশির ভাগ একাই থাকতো। মাঝে মাঝে ওর একজন বন্ধু ওর সাথে থাকতো৷ ছেলেটা অবশ্য বেশি আসতো না। শুধু রাতটুকুই থাকতো। তারপর সকালে আবার যাইতো গা।
– ওহ, আচ্ছা শুনেছি স্নিগ্ধ নাকি বেশ অসুস্থ ছিলো এই কয়দিন! কি হয়েছিলো
– আর বইলেন না ম্যাডাম, কি জ্বর পোলাডার! মাইপে দেখি শ এর উপরে৷ আমি তো ভয় পাইয়া গেছি। ভাবলাম, ডেঙ্গু হইলো কি না! কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে, নামতে চায় না। যেদিন পুলিশ ধরে লয়ে গেছে সেদিন ও সকালে জ্বর ছিলো পোলাডার। আহারে!
– ওহ! তাই?
– হো ম্যাডাম

বলেই দরজার তালাখান খুলতে যায় আকরাম সাহেব। তখনই পেছন থেকে গম্ভীর কন্ঠ শোনা যায়,
– পুলিশের পারমিশন ছাড়া আপনি এখানের কোনো জিনিসে হাত লাগাতে পারবেন না নুশরাত ম্যাডাম।

কন্ঠটি কর্ণপাত হতেই পেছনে ঘুরে তাকায় আকরাম সাহেব এবং নুশরাত৷ পেছনে ফিরতেই দেখলো তৌহিদ সিভিল ড্রেস এ দাঁড়িয়ে আছে৷ তৌহিদকে দেখে চোখ কুচকে ফেলে নুশরাত৷ এই ভরদুপুরে তৌহিদ এখানে টহল মারতে আসবে এই চিন্তাটা তার মাথায় আসে নি৷ তৌহিদ ধমকের স্বরে আকরাম সাহেবকে বলে,
– আপনাকে বলেছিলাম আমরা ব্যাতীত কেউ জল্যেনো রুমে প্রবেশ না করে! বলেছিলাম?
– আজ্ঞে, উনি তো!
– উনার যদি কেসের তদন্তের কারণে আসতেই হতো আমাদের সাথে আসতেন। এভাবে চোরের মতো আসার কি মানে বুঝলাম না।

তৌহিদের কথাটা বেশ গায়ে লাগে নুশরাতের। রাগে গা রি রি করা শুধু করে। নিজেকে শান্ত রাখাটা দুষ্কর হয়ে পড়ে তার জন্য। কড়া কন্ঠে বলে,
– আজকাল বুঝি সবাইকেই আপনার চোর মনে হয়! আসলে কি বলুন তো পুলিশদের তো ঠিক নেই। কাউকে ফাঁসানোর জন্য তারা মিথ্যে প্রমাণ রেখে যেতেও পারে। আমি অন্তত আমার মক্কেলকে নিয়ে কোনো চান্স নিতে চাই না।

নুশরাতের কথার উত্তর তৌহিদ দিলো না। তাদের মাঝে শুধু দৃষ্টির খেলা চললো। এবার তৌহিদ আকরাম সাহেবের উদ্দেশ্যে বললো,
– খুলে দিন দরজাটা।

তৌহিদের কথাটা শুনে আকরাম দরজার তালাটা খুলে দেয়। নুশরাত দরজাটা খুলতেই দেখে একটা কালো জ্যাকেট এবং মুখোশ পড়া ব্যাক্তি জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি তাদের দেখামাত্রই জানালার খোলা শিখটা সরিয়ে তড়িৎ গতিতে লাফ দিলো। তৌহিদ লোকটাকে ধরার জন্য তার পিছু ছুটলো। স্নিগ্ধের রুমটা দ্বিতীয় তালায়। জানালার কাছে গিয়ে নিচে তাকালে দেখতে পায় লোকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করছে। তৌহিদ এক মূহুর্ত দেরি না করে ছুটে সিড়ির কাছে গেলো। পাঁচ মিনিটের পথ এক মিনিটেই পার করলো সে৷ নিচে নেমে দেখলো লোকটা একটা বাইকে চড়ে ছুট লাগিয়েছে৷ তৌহিদ তাড়াতাড়ি নাম্বারটি দেখে নিলো। বাইকে উঠতে উঠতে ওয়াকি টকিতে নাম্বারটি জানিয়ে দিলো সে। স্পিড বাড়িয়ে সামনের বাইকটিকে ফলো করতে থাকে সে। অজানা ব্যাক্তিটির বাইকের স্পিড প্রচুর। তার সাথে তাল মিলিয়ে তৌহিদ ও স্পিড বাড়ায়। একপর্যায়ে প্রায় লোকটির কাছেই চলে এসেছিলো তৌহিদ। তখনই একটা গাড়ি ওভার টেক করে তৌহিদের বাইকের সামনে চলে আসে৷ ফলের গাড়িটির হেড লাইটটা ভেঙ্গে যায়। গাড়ির মালিক গাড়ি থেকে বেরিয়ে তৌহিদের সাথে চড়া গলায় গালিগালাজ করতে থাকে। ফলে আশেপাশে লোক জড়ো হতে থাকে। এই সুযোগে তৌহিদের দৃষ্টির অগোচরে চলে যায় সেই অজানা ব্যাক্তিটি লোকটি। মানুষের ভিড়ে যেনো হারিয়ে যায় সে। এদিকে গাড়ির মালিক প্রচন্ড উগ্র ব্যাবহার করতে থাকে তৌহিদের সাথে,
– এই চোখ কই থাকে? পকেটে? আমার এতো দামী গাড়ি। জীবনে কখনো দেখেছিস এতো দামী গাড়ি! শালা বাস্টার্ড।

একেই ঘুঘু হাত ছাড়া হয়ে গেছে উপরে গাড়ির লোকটা অকথ্য ভাষায় গাল্মন্দ করছে, পুলিশের হুমকি দিচ্ছে দেখে মেজাজ ঠিক রাখতে পারে না তৌহিদ। বাধ্য হয়ে তার পুলিশের আইডি কার্ডটা শো করে সে। পুলিশের লোক জানতে পেরেই ব্যাক্তিটি চুপ হয়ে যায়। তৌহিদ তখন হিনহিনে কন্ঠে বলে,
– কি এবার মুখ বন্ধ করে গেলো কেনো? কমপ্লেইন করবেন না? যতসব গাড়ি চালাতে পারে না, শো ইফ করতে রাস্তায় নামে।

গাড়ির লোকটা কিছু বলে না, দাঁত পিষতে পিষতে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়। তৌহিদ লোকজনের উদ্দেশ্যে বলে,
– যান যান, যে যার কাজে যান। নাটক শেষ

ধীরে ধীরে মানুষের ভিড় কমতে থাকে। তৌহিদ বাইকের উপর বসে। ব্যার্থতাটা বিরক্তিতে পরিণতা হলো। বাইকের ট্যাঙ্কারে জোরে আঘাত করলো সে। রাগটা দমানোর ব্যার্থ চেষ্টা করলো, কিন্তু লাভ হলো না________

নুশরাত ঘরটা তন্নতন্ন করে খুঁজলো। লোকটা কেনো এসেছিলো বুঝতে বেশি কষ্ট হয় নি নুশরাতের। কারণ ঘরের একটা ছোট্ট ফাটলের মতো খোঁপে পনেরো হাজার টাকা এবং মোটা মোটা দুটো স্বর্ণের বালা রাখা। এতো নিপুন করে রাখা যে কেউ সহজে খুঁজে পাবে না। কেউ স্নিগ্ধকে ফাঁসাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো কে সেই লোকটি! আলতাফকে কে খুন করতে পারে! তার স্ত্রী, রাইভাল নাকি অন্য কেউ! নুশরাত জিনিসগুলো নিজের ব্যাগে পুড়ে নিলো। ঠিক তখনই সেখানে তৌহিদ সেখানে উপস্থিত হলো। তৌহিদকে দেখে নুশরাত উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ধরতে পেরেছেন লোকটাকে?
– উহু, তবে বাইকের নাম্বারটা কন্ট্রোল রুমে জানিয়ে দিয়েছি। মেজাজটা খারাপ লাগছে। কে এই কাজ করতে পারে?

বিরক্তির স্বরে কথাটা বললো তৌহিদ। তার কপালের রগ ফুলে রয়েছে। রীতিমতো রাগে ফুসছে সে। নুশরাত তখন ধীর কন্ঠে বললো,
– আমি হয়তো কিছু একটা আন্দাজ করতে পারছি মানুষটা কে!
– কে!
– বলছি, আগে বলুন আপনি কি ব্যস্ত?
– নাহ, কেনো বলো তো?
– আমার সাথে একটা জায়গায় যেতে হবে………….

চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here