#বউ চুরি
সিজন-২
পর্ব ঃ ১১
লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা
“ভালোবাসার ছোঁয়ায় যতোটা সুখ অনুভূত হয়
তার থেকেও হাজারগুন বেশী সুখ অনুভূত হয় যখন ভালোবাসার ছোঁয়া গুলো আদরমাখা হয়,,
ইমন যখন মুসকানকে আদর করতে ব্যাস্ত তখন মুসকান ভারী আওয়াজে নাক টেনে টেনে বলে ওঠলো – আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে,,,
ইমন ঘোর লাগা কন্ঠে বলে ওঠলো ভালোবাসিনা,আদর করিনা বলে যতো অভিযোগ তোমার, আর আদর, ভালোবাসা দিতে গেলে যতো বাহানা তোমার,বলেই ঠোঁট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নিলো।
মুসকান খামচে ধরলো ইমনের শার্ট। ঠোঁট ছেড়ে গলায় মুখ ডুবালো।
বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে পুরো শরীরে, ইমন হঠাৎ থেমে গেলো।
মুসকান কে ছেড়ে ওঠে গেলো লাইট অন করে মুসকানের দিকে তাকালো।
দ্রুত শ্বাস ওঠানামা করছে, ইমন এগিয়ে গিয়ে মুসকানের পাশে বসে মুসকান কে ওঠালো।
কি হলো ঘামছো কেনো এতো,,,
মুসকান হাঁপাতে হাঁপাতে বললো আমার শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
ইমন ভ্রু কুঁচকে মুসকানের দিকে তাকিয়ে বললো- বৃষ্টি তে ভেজা,অতিরিক্ত কান্নার ফল এখন ভোগ করো। ঠান্ডা লেগে গেছে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাই তো,,,
মুসকান মাথা নিচু করে ফেললো। ইমন ওঠে দাঁড়ালো।
কি যে করো কোন দিন আর বড় হবে না তুমি,আমাকে বলবে তো কি সমস্যা হচ্ছে, আমারই বুঝে নিতে হলো। যদি না বুঝতাম তাহলে তো আজ তোমার খবড় হতো,,,বলেই শার্টের বোতাম গুলো লাগাতে লাগলো।
মুসকান ইমনের দিকে তাকিয়ে অভিমানী স্বরে বললো আমাকে সুযোগ টা তো দিতে হবে বলার,,,
ইমন আড় চোখে তাকালো, মুসকান লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলো।
ইমন বাঁকা হেসে বললো লজ্জা পেতে হবেনা আর তুমি শুয়ে থাকো আমি আসছি,,,
মুসকান ভয় কাতুরে কন্ঠে বললো- কোথায় যাচ্ছো। প্লিজ যেওনা আমার যদি আরো কষ্ট হয়,,,
চুপচাপ শুয়ে থাকো আমি এসে পড়বো, কষ্ট কমানোর জন্যই যাচ্ছি।
নিপুকে নিয়ে ইমন গ্রামের ফার্মেসি থেকে মুসকানের জন্য ওষুধ নিয়ে এলো। ঠান্ডা লাগলে মুসকানের কি ওষুধ খেতে হয় সেটা ইমন খুব ভালো করেই জানে তাই কোন অসুবিধা হলোনা। বাড়ি ফিরতেই নিপু বললো ভাই সরি সব আমার জন্য হলো।
ইমন নিপুর কাঁধে হাত রেখে বললো কোন সমস্যা নেই তুই এসব না ভেবে নিজেকে নিয়ে ভাব।
আর দোষ টা তোর না দোষ সমাজের কিছু মানুষের দেয়া কুসংস্কারের। যা তারাতারি ঘুমিয়ে পড় কাল বিয়ে আজ এতো রাত জাগিস না।
রুমে আসতেই দেখতে পেলো মুসকান বেশ ছটফট করছে। ইমন দরজা লাগিয়ে গ্লাসে পানি নিয়ে ওষুধ গুলো নিয়ে মুসকানের সামনে ধরলো। তারাতারি খেয়ে নাও রাতের মধ্যেই কমে যাবে।
ওষুধ গুলো খেয়ে মুসকান শুয়ে পড়লো। প্রচন্ড গরম তাই ইমন শার্ট খুলে শুধু একটা ট্রাউজার পরে শুয়ে পড়লো। মুসকান কে টেনে বুকে জরিয়ে বললো শান্তি তে ঘুমাও তো সকালের মধ্যে সেরে যাবে।
মুসকান হা করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে গরম শ্বাস ইমনের লোমশভর্তি বুকে পড়তেই মুসকানের কোমড় জরিয়ে আরেকটু গভীর করে মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে।
মুসকান চোখ পিট পিট করতে করতে বললো ঘুম তো আসছে না।
তবুও ঘুমাতে হবে কাল তো অনুষ্ঠান বাড়িতে কাল রাতেও ঘুম হবেনা ভালো করে তাই আজ ঘুমিয়ে নাও কোন কথা না।
বেশকিছুসময় কেটে গেলো তবুও মুসকানের ঘুম এলোনা। ইমন ঘুমিয়ে পড়েছে মুসকান ইমনের ঘুমন্ত মুখটা একবার দেখে নিয়ে মুচকি হাসলো।
মাথায় দুষ্টুমি ভর করতেই বুকের লোম গুলোতো হালকা করে টান দিতে লাগলো।
ধ্যাত এভাবে জরিয়ে রাখলে ওপাশ ও ঘুরা যায় না,,, বেশ আমি তাহলে তোমাকে একটু জ্বালাই,,,
একবার বুকে আরেকবার দাঁড়িতে টানতে লাগলো।
ইমনের ঘুম ভেঙে গেছে আবার যেই দাঁড়িতে হাত রেখেছে ওমনি খপ করে হাতটা ধরে ফেললো।
মুসকান চমকে গেলো হিহি করে হেসে ওঠলো।
আমি বলেছিলাম ঘুমাতে এভাবে জ্বালাচ্ছো কেনো।
মুসকান ঠোঁট ফুলিয়ে বললো আমার ঘুম আসছে না,,,
ও তাই আমার ঘুম ভেঙে দিলে। রাগি গলায় বললো ওঠো ওঠে বোসো,,,
মুসকান ভ্রু কুঁচকে ওঠে বোসলো আর বির বির করতে লাগলো,,,
রেগে যাওয়ার কি আছে একটু আদর চাইছি তো এখন তো আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে না,,,
ইমন আরাম করে শুয়ে মুসকানের দিকে তাকিয়ে বললো মাথা টিপবে সারারাত,,, ঘুম আসছে না তো স্বামীর সেবা করো এখন।
মুসকান মুখ ফুলিয়ে চেয়ে রইলো ইমনের দিকে।
ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই যা বলছি তাই করো নয়তো খবড় আছে,,,
মুসকান আলতো করে মাথায় হাত রাখতেই ইমন চোখ দুটো বুজে ফেললো। অনেকটা দিন পর মুসকান ইমনকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,,, ইমন সেটা অনুভব করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়লো।
মুসকান ও একসময় ওভাবে বসেই ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে ঘুম ভাঙতেই ইমন দেখলো মুসকান বসেই ঘুমাচ্ছে। তারাতারি ওঠে ভালোভাবে শুইয়িয়ে দিলো।
ঘুমন্ত মুখের দিকে বেশকিছুক্ষন চেয়ে রইলো।
তোমার বাবা, মা কাছে নেই, তোমার সন্তান হারিয়েছো সবটা তোমায় খুব কষ্ট দেয় তাইনা মুসকান,,,
যা তোমার জন্য মঙ্গলকর আমি সব তোমায় এনে দিবো একটু ধৈর্য ধরো। তোমার ইমন তোমার জন্য ঠিক কি কি করতে পারে এখনো তুমি বুঝতে পারোনি। কিন্তু খুব তারাতারি বুঝবে,,,
তবে যে কষ্ট পেয়েছো, এগুলো পাওয়া খুব দরকার ছিলো। ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা গ্রহন করে, আশা করি নেক্সট টাইম কোন ভুল করার আগে হাজার বার ভাববে তুমি।
কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একে বেরিয়ে গেলো ইমন।
কোনো কিছু অর্জন করতে চেয়ে না পারার কষ্ট; কোনো কিছু হারিয়ে ফেলার বেদনা কিংবা ভালোবেসে বিফল হয়ে যাওয়ার মনযন্ত্রণা; একেকজনের কষ্টের আছে রকমফের। অনেকে আবার শারীরিক যাতনাকেও কষ্টের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। সেটাও আরেক ধরনের কষ্ট বটে।
কিন্তু মুসকান শারীরিক যন্ত্রণা যতোটা পেয়েছে তার থেকে বহুগুন পেয়েছে মানসিক যন্ত্রণা।
হারিয়ে ফেলার তীব্র যন্ত্রনা ভোগ করেছে ও। শুধু ও না আমিও ভোগ করেছি। কিন্তু আমি আমার সন্তান কে তিনমাস অনুভব করিনি যেটা মুসকান করেছে।
এমনকি সন্তান হারানোর পর শারীরিক তীব্র যন্ত্রনা আমি ভোগ করিনি যেটা মুসকান করেছে। ঐটুকু বয়সের একটা মেয়ে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা ভোগ করেছে। তোমরাও তো একজন মা তোমাদের বোঝা উচিত একজন মায়ের মনের দুঃখ, মায়ের মনের কষ্ট। ইরাবতীর চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে পড়লো ইমন ইরাবতীর দিকে এগিয়ে চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো আমার মাও কিন্তু একি ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। সন্তান হারানোর শোকে আমার মা কেমন দিশাহীন হয়ে গেছিলো সেটা নিজের চোখে দেখেছি আমি। আমার চৌদ্দ দিনের বোন যখন মারা যায় তখন থেকেই আমি বুঝতে শিখেছি সন্তান হারানো কতোটা যন্ত্রণাদায়ক। আর নিজের সন্তান হারানোর পর অনুভব ও করেছি। কিন্তু আমার মা বা মুসকানের যন্ত্রণার মতো যন্ত্রণা কিন্তু আমরা এখানে কেউ পাইনি।
যে মায়ের যায় সেই মাই বুঝে,,, যার যায় না সে কি করে বুঝবে।
ঝুমুর নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে রইলো।
ইমন বললো কাকি আমি আপনাকে একটা কথাই বলবো যুক্তিহীন ভাবনাগুলো ভেবে মানুষ কে কখনো কষ্ট দেবেন না। উপরওয়ালা কাকে সন্তান দেবে কাকে সন্তান দেবে না সেটা উপরওয়ালাই ঠিক করবে।
এখানে মানুষ শুভ, বা অশুভ হয় এটা একদমই অযৌক্তিক কথাবার্তা। সমাজের মানুষের ভ্রান্ত ধারনা মাএ। কুসংস্কারে প্রবলভাবে বিশ্বাসী এরা।
এই কুসংস্কারের জন্য মানুষের জীবন ধীরে ধীরে পতন নেমে আসছে। জীবনের আসল সমস্যা না খুঁজে এরা কুসংস্কারে বিশ্বাসী হয়ে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করে যাচ্ছে দিনের পর দিন।
মোতালেব চৌধুরী বললেন ঠিক বলেছো দাদুভাই।
মুসকান আমার ঘরের লক্ষী। লক্ষী কখনো অমঙ্গল বয়ে আনতে পারেনা।
ইমন বললো যা হয়েছে হয়েছে আমি চাই ঝুমুর কাকি মুসকানের সাথে কথা বলুক। নয়তো মুসকানের মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করবে। যেহেতু ঝুমুর কাকিই এই অপরাধ বোধ তৈরী করেছে আমি চাই এটা শেষ ঝুমুর কাকিই করুক।
জোভান আর মিলন বললো হ্যাঁ অবশ্যই,,,
মা তুমি মুসকান কে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে আসবে এখানে।
ঝুমুর বললো আমি বুঝতে পেরেছি আমার ভুল। ওতোটুকু বাচ্চা মেয়েকে যেহেতু আমিই আঘাত করেছি সেহেতু আমিই ওকে বুঝিয়ে নিবো।
ইমন বললো আমি মনোবিজ্ঞানী নই। ফলে কষ্টের আসল সংজ্ঞা কিংবা ব্যাখ্যা হয়তো দিতে পারব না। কিন্তু এটুকু বুঝি, কষ্ট হচ্ছে মানসিক নেতিবাচক অনুভূতি। অনেক সময়ই যার শারীরবৃত্তীয় প্রকাশও ঘটে। আমরা অনেক সময়ই বলি ‘মন খারাপ’। আর এই মন খারাপ হওয়ার পেছনে যে কারণটি সবচেয়ে বেশি দায়ী, তার নাম ‘কষ্ট’। কষ্ট কিভাবে পায় মানুষ? কেউ কাউকে কষ্ট দেয়। আবার প্রাকৃতিক কারণেও মানুষ কষ্ট পায়। আবার অনেকে হয়তো পারিপার্শ্বিক কোনো কারণে প্রভাবিত হয়ে কষ্ট পায়। ভালোবাসা যেমন একটি অনুভূতি এবং তার প্রকাশের নাম, কষ্টও তেমনি। এটা অনেকটা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো। আবার অনেক সময় এটা বলা যায়, প্রদীপের নিচেই যেমন অন্ধকার। আলোর পাশে অন্ধকারের উপস্থিতিই বলে দেয়, পৃথিবীর রং-রূপ কতটা বিচিত্র।
তাই আমি বলতে পারি কাল মুসকান যে কষ্টটা ঝুমুর কাকির থেকে পেয়েছে আজ সেই ঝুমুর কাকির থেকেই ওর কষ্ট লাঘব হবে।
আর ঝুমুর কাকির যে অপরাধ বোধ সৃষ্টি হয়েছে মুসকানের মুখে হাসি ফুটলে সেটাও কমে যাবে।
মোতালেব চৌধুরী বললেন বাহ দাদু ভাই তোমার জ্ঞান, বুদ্ধি একদম প্রশংসনীয়।
আমার সুপারম্যান দাদুভাইটা সত্যি বড় হয়ে সুপারম্যান হয়েছে। কঠোর মনোবল , ধীর বিশ্বাস,জ্ঞান, দক্ষতায় অনেক এগিয়ে তুমি আরো এগিয়ে যাও।
ইমন শান্ত ভাবে সবটা সবাইকে বুঝানোর ফলে সবাই সবটা বুঝেছে। ইরাবতী দীপান্বিতা কে বললো – দেখেছিস আমার ছেলেটা কিভাবে সবটা সমাধান করে ফেললো।
দীপান্বিতা বললো হ্যাঁ দেখলাম। যাক বদমেজাজি ছেলেটা যে মাথা গরম করে কিছু বলে নি এই অনেক। রূপালী বললো নিজেদের মধ্যে মাথা গরম করলে হিতে বিপরীত হয়। ইমন যা করেছে এতে সবার ভালোই হয়েছে পারিবারিক বন্ধন টাও বজায় রেখেছে ছেলেটা।
লীনা বললো ইমন ভাই যে মুসকানের জন্য এতো ভাবে আগে শুনতাম আজ নিজের চোখে দেখলাম।
মেঘা বললো সেটাই তো স্বাভাবিক। ও এ বাড়ির প্রথম কন্যাসন্তান সেটা ভুলে গেলে তো চলবে না। শুধু বউ না এ বাড়ির মেয়ে ও।
ইরাবতী কথাটা কেটে বললো সবাই সবার কাজে যাও তারাতারি। যারা সকালের খাবাড় খাও নি তারা খেয়ে নাও।
দীপান্বিতা বেশ বুঝলো ইরাবতী কথাটা কেটে গেলো।
কারন মোজাম্মেল চৌধুরী আর মইন চৌধুরীর পরিবার ছাড়া শুধুমাএ রূপম, রিপা আর মোতালেব চৌধুরীই জানেন ইমন আর মুসকানের জীবনের এক চিরন্তন সত্যি,,,
পূবালী তাদের বাড়ির সামনে মাঁচায় মুখ ভাড় করে বসে আছে। শুভ দেখে এগিয়ে এসে বললো কিরে পূবালী নিপুর গায়ে হলুদে তোকে দেখলাম না যে,,,
পূবালী উদাস মনে বললো রং চলে গেছে ভাই জীবন থেকে তাই যাই নাই।
শুভ ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে মাঁচায় বোসলো। পূবালীর মাথায় ঠোকা দিয়ে বললো আবল তাবল বকছিস কেনো? কি হয়েছে? ইমন ভাই আসছে তাও তুই ওখানে যাস না ঘটনা কি?
আমার আর যাওয়ার প্রয়োজন নাই রে অন্যের দেবতাকে আমি পূজা করে আর কি করবো,,,
মানে,,,মাথা কি পূরাই গেছে হিন্দু দের মতো মনের মানুষ কে পূজা করার কথা বলছিস বলেই হোহো করে হেসে ওঠলো শুভ।
পূবালী বিরক্তি ভাব নিয়ে ওঠে পড়লো। জ্বালাস না তো ভালো লাগছে না ।
এই রাগ করছিস কেনো বলেই পিছন যেতে যেতে বললো কি হয়েছে বল না দোস্ত। সেই ছোট থেকে একসাথে আছি পড়াশোনা খেলা ধূলা সব টাতেই তুই। তোর মনের কথাও সবার আগে আমাকেই বলেছিস। তাহলে আজ এই বিষাদ মনের কারনটা কেনো বলছিস না।
পূবালী থেমে গেলো। গভীর এক শ্বাস ফেলে শুভর দিকে তাকালো।
শুভ তুই কি কিছুই জানতি না আমার মতো,,,
কি জানার কথা বলছিস,,,
দিপুর বড় বোন মুসকান যে ইমনের বউ। ওদের বিয়ে হয়েছে এটা তুই জানিস না,,,
শুভ অবাক হয়ে তাকালো পূবালীর দিকে,,,
কি বলছিস কি?
পূবালী স্মীত হেসে মাথা নাড়ালো ওরা স্বামী- স্ত্রী।
শুভ কয়েক সেকেন্ড চুপ রইলো সব কিছু ভাবতে লাগলো। গননা শেষে হিসেব মিলিয়ে বললো পূবালী,,,
আমারো খটকা লেগেছিলো কিন্তু কাউকে সরাসরি বলিনি। সম্পর্কে ওরা চাচাতো ভাইবোন।কেউ সেভাবে কিছু বলেও নি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি সবটা,,,
বইন তুই কষ্ট পাস না হৃদয় শুধু তোর আহত হয়নাই আমারো হয়েছে।
মানে,,,
কিছুনা যা বাড়ি যা আমার কাজ আছে,,,
পূবালী কিছু বুঝলনা,,, শুভ চলে গেলো। পূবালীও বাড়ি চলে গেলো।
বাড়ির সকলে রেডি হচ্ছে ইমন প্রথমে মুসকানকে নিয়ে যেতে আপত্তি করলেও পরে রাজি হয়েছে।
বাড়ির সব বউরাই শাড়ী পড়েছে।ছোট্র রুপ ও শাড়ী পড়েছে বেবী শাড়ী,,, তাই দেখে মুসকান মুখ ভাড় করে ঘরে গেলো। ইমন শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে আড় চোখে মুসকান কে দেখে বললো কি ব্যাপার সমস্যা কি।
মুসকান গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। ইমন একটু ঝুঁকে বললো কি সমস্যা,,,
সবাই শাড়ী পড়ছে আমি একা এই গ্রাউন পড়ে যাবো না।
প্লিজ আমি শাড়ী পড়ি,,, তুমি না করোনা প্লিজ।
ইমন কিছু একটা ভেবে বাঁকা হেসে বললো- ওকে পড়ো।
মুসকান ইইয়ে বলেই লাগেজ থেকে ডার্ক গ্রিন কালারের সিল্ক কাতান শাড়ী বের করলো।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেতেই দেখলো ইমন বসে ফোন ঘাটছে। মুসকান বাথরুম গিয়ে অর্ধেকটা শাড়ি পড়ে বেরিয়ে এলো।
ইমনকে উদ্দেশ্য করে বললো একটু হেল্প করোনা,,,
ইমন মুসকানের দিকে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকালো।
ওঠে গিয়ে বললো এটা কেনো পড়লে,, আর শাড়ী নেই,,
কেনো এটা ভালো লাগছেনা,,,
ভালো লাগছে বলেই তো বলছি এটা পড়ে বের হতে দিবোনা। ব্লাক,মেরুন, ব্রোন,এন্ড গ্রিন এগুলো বাদে অন্যগুলো পড়ে যাও নো প্রবলেম।
মুসকান রেগে গিয়ে বললো আমি এটাই পড়বো,,,
ইমন মুসকানের দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে সরু চোখে তাকালো,,,
না, মানে, আসলে আমি তো আর শাড়ী আনিইনি দুটা এনেছি তার মধ্যে একটাতো পড়েছি। তাই আরকি আমতা আমতা করে কথাগুলো বলেই মুসকান ইমনকে পাশ কাটিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো।
ইমন মুসকানের পিছনে দাঁড়িয়ে ব্লাউজের ফিতায় হাত দিতেই কেঁপে ওঠলো মুসকান।
ইমন সেদিকে মন না দিয়ে ফিতা বেঁধে দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো- জাষ্ট শাড়ী পড়বে আর চুল বাঁধবে। আর কোন প্রস্বাধনী মুখে মাখবে না, নো লিপস্টিক, নো কাজল। আমি এশাকে পাঠাচ্ছি কুঁচি ধরে দিবে।
মুসকান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইমন সেখান থেকে চলে গেলো।
মানেটা কি বিয়েতে যাবো সাজ গোঁজ ছাড়া,,, হায় কপাল। এহ বললেই হলো একশবার সাজবো বলেই মুখ বাঁকা করলো মুসকান।
এশা এসে মুসকান কে শাড়ী পড়িয়ে দিলো।
সাজগোজ শেষে যেই বেরুবে অমনি ফোন বেজে ওঠলো। বিছানায় তাকাতেই দেখতে পেলো ইমন ফোন রেখেই চলে গেছে।
ফোনের কাছে আসতেই দেখলো নাম্বারটা সেভ করা নয়। ভালোভাবে নাম্বার টা দেখে চমকে ওঠলো মুসকান।
ও ইমনকে ফোন করেছে কেনো??
ইমনের নাম্বার ও কি করে জানলো??
ফোন রিসিভ করার আগেই কেটে গেলো।
ডায়াল লিষ্ট চেক করে দেখতে পেলো সকালেও একি নাম্বার থেকে ফোন এসেছে দু’মিনিটের মতো কথাও হয়েছে । মুসকান গভীর ভাবে ভাবতে নিতেই এশা বলে ওঠলো –
কি হলো তারাতাড়ি চলো ওরা রাগারাগি করবে তো,,,
চলবে…….
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।