দৃষ্টির অগোচরে,৫ম_পর্ব,৬ষ্ঠ_পর্ব
মুশফিকা রহমান মৈথি
৫ম_পর্ব
নুশরাত পুরো ঘটনা বিস্তারিতভাবে খুলে বলে রবিনকে। রবিন কিছুক্ষন চুপ করে থাকে। কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে,
– শালা বুইড়া নিজেই খুন করেছে। আর দোষ দিছে তোর উপরে। আমি শিওর।
– উহু, ভুল। মঈনুদ্দিন সাহেব খুন করেন নি। কারণ শুধুমাত্র ছেলের বউ এর উপর ঝাল তুলতে নিজের একমাত্র ছেলেকে মেরে ফেলার মতো বোকা তিনি নন রবিন। অত্যন্ত ধূর্ত একটি মানুষ তিনি।
– এটাও তার ধূর্তামির একটি প্রমাণ হতে পারে, তিনি ইচ্ছে করে পুলিশকে ভুল পথে ধাবিত করছেন। ফ্লাটটি তোর এবং মাহিরের নামে। সুতরাং যেকোনো একজন মারা গেলে অপরজন সম্পূর্ণ ফ্লাটটি পেয়ে যাবে। সুতরাং মাহিরের মৃত্যুতে তোর লাভটা কিন্তু সবচেয়ে বেশি। ছুরিতেও তোর আঙ্গুলের ছাপ ই কিন্তু পাওয়া গেছে। সুতরাং আইন তোকেই কিন্তু দোষী ভাববে।
– তোর পয়েন্ট ঠিক আছে। হয়তো এই ছুরিটির কারসাজি আমার প্রাক্তন শ্বশুরের। এটা আমার মাথায়ও এসেছে।কিন্তু সে নিজের একমাত্র ছেলেকে তিনি সামান্য একটা ছোট ফ্লাটের জন্য মেরে ফেলবেন না। ফ্লাটের দাম কত বল! বর্তমান মূল্যে ধরি ৭৫ লাখ টু ৮০ লাখ। তার কালো পয়সার বিশ ভাগের এক ভাগ ও নয়। তার মাহির ব্যাতীত কোনো সন্তান নেই, মাহির তার যক্ষের ধন বলা যায়। শুনেছিলাম অনেক মানতের পর মাহির হয়েছিলো। মাহিরের আগে নাকি হেনা ম্যাডামের দুবার মিসক্যারেজ হয়েছিলো। আরেকটি পয়েন্ট আমার জানা মতে মাহির তার নাম ডুবানোর মতো কোনো কাজ এই অবধি করে নি বলে৷ নারীর প্রতি ছোকছোকানি না থাকলে সে কিন্তু বেশ ভালোই পজিশনে ছিলো। সিটি করপোরেশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু কম সম্মানের প্রফেশন নয়৷ ঘুষ খাওয়া, সরকারি টাকার হেরফের এসব খুব প্রিসিশনের সাথে মাহির করতো। ওর বিরুদ্ধে ওর পিয়ন ও মুখ খুলতো না। সুতরাং শুধু একটি ফ্লাটের জন্য এমনটা তিনি মাহিরকে খুন করবেন না। এবার প্রশ্নটি হলো মাহিরকে খুন করলোটা কে?
রবিন কিছুক্ষণ তার হাতে থাকা কলমটি দিয়ে টেবিলের উপর খুটখুট করলো৷ নুশরাত চোখ বুজে বসে রয়েছে। তার মাথায় সেদিনের সব দৃশ্যগুলো ভাসছে। সে কি কিছু মিস করে ফেলেছে! কিছু এড়িয়ে যাচ্ছে না তো সে! তখন রবিন নিচু গলায় বলে,
– দোস্ত, নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত কর।
– কেনো বলতো?
– আজ বৃহস্পতিবার, আগামী দুদিন কোর্ট বন্ধ। সুতরাং শনিবার পর্যন্ত তোকে এখানেই থাকতে হবে। আর রবিবার ও যে তুই বেইল পাবি তার কোনো গ্যারেন্টি নেই। তাই বলছিলাম…
– তুই চিন্তা করিস না, আমি থেকে নিবো৷ তুই শুধু একটা জিনিস খোঁজার ট্রাই করিস সেটা হলো যে ছুরি দিয়ে মাহিরকে খুন করা হয়েছে।
– সেটা কোথায় পাবো?
– বিল্ডিং এই। এটা আমার ইন্টিউশন ও হতে পারে৷ কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ছুরিটা বিল্ডিং এ। আমি ঠিক পনেরো মিনিটের মাঝেই বিল্ডিং এ ফিরে আসি। আমি যখন মাহিরকে দেখেছি তখন ও তার পালস চলছিলো। আমার বিল্ডিং এ আসার পর কারেন্ট চলে আসে। এই পনেরো মিনিটের মাঝে তাকে নিজের জামা, ছুরি লুকিয়ে ফেলতে হবে। নয়তো ধরা পরার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এগুলো সহ তুই বিল্ডিং থেকে বের হতেও পারবি না। এবার তুই বল তুই কোথায় ফেলবি জিনিস গুলোকে!
– বিল্ডিং এর কোনো চিপা জায়গায়, বা পরিত্যাক্ত জায়গায়।
– বিংগো। রবিন তুই আমার শেষ ভরসা। প্লিজ হেল্প মি আউট।
রবিন মাথা নাড়িয়ে নুশরাতকে আশ্বস্ত করলো। নুশরাত মলিন হাসি হাসলো৷ নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। এমন একটি গোলকধাঁধাতে আটকে গেছে যার অংক মেলানো খুব দুষ্কর____________
রবিবার,
সকাল ১২টা,
মঈনুদ্দিন সাহেবের অফিসকক্ষের বাহিরে বসে রয়েছে তৌহিদ। গত তিনরাতও নির্ঘুম কেঁটেছে তার। উপর মহলের প্রেসার না থাকলে এতো শারীরিক পরিশ্রম যেতো না তার৷ আজ এখানে আসার উদ্দেশ্য কিছু প্রশ্নের উত্তর। বিগত আধা ঘন্টা যাবৎ বাহিরের সোফায় বসে রয়েছে সে। মঈনুদ্দিন সাহেব একটি জরুরী কাজে ব্যাস্ত। তৌহিদের ও তাড়া নেই। তাই সে সেখানে বসে রয়েছে৷ হঠাৎ মহুরী এসে জানায়, মঈনুদ্দিন সাহেব তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। মঈনুদ্দিন সাহেবের কক্ষে ঢোকার সময় তৌহিদ খেয়াল করলো সাব-ইন্সপেক্টর হাবীব রুম থেকে বের হচ্ছে। তৌহিদকে দেখে সে সালাম দিলো৷ তারপর চোরের মতো মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলো। তৌহিদ বাঁকা হাসি হাসলো৷ কক্ষে চুরুট টানছিলেন মঈনুদ্দিন সাহেব৷ তৌহিদ স্যালুট দিলে বসার জন্য ইশারা করলেন তিনি। চুরুটটি নামিয়ে রেখে ঠান্ডা কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,
– কেস কতদূর এগোলো অফিসার? শুনলাম মেয়েটাকে নাকি হাজতে পুরেছো?
– জ্বী স্যার। ইনভেস্টিগেশন চলছে। আমরা এই কেসটির শেষ দেখতে চাচ্ছি।
– এখন তো ইনভেস্টিগেশনের কিছুই নেই। প্রমাণ পেয়েছো খুনি ও পেয়েছো! তাহলে? এখন তো শুধু কোর্টের রায় আসার অপেক্ষা।
মঈনুদ্দিন সাহেবের কথা শুনে নিঃশব্দে হাসে তৌহিদ। তারপর ঠান্ডা গলায় বলে,
– স্যার আপনি কি খুনি কে ধরতে চান না!
– মানে?
– শুধু একজনের প্রতি ক্ষোভ রয়েছে বলেই সে খুনি এই ব্যাপারটা আপনাকে মানায় না। অবশ্য ছকটা ভালোই কষেছিলেন কিন্তু মানুষটাকে ভালো চুজ করেন নি। নয়তো একটা ভোঁতা ছুরি কখনোই সোফার নিচে পাওয়া যেতো না। আপনি টেনশন করবেন না। আমরা আসল খুনিকে ঠিক ধরে ফেলবো।
মঈনুদ্দিন সাহেব কোনো উত্তর দিলেন না। শুধু অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন তৌহিদের উপর। তৌহিদ তাকে সালাম দিয়ে উঠে যেতে নিলে তিনি হিনহিনে কন্ঠে বলেন,
– পাঁচদিন সময় দিলাম, এর মাঝে যদি খুনিকে না ধরতে না পারো তবে আমি এর ইতি আমার মতো করেই টানবো। যদি সেই মেয়েটার সাথে দেখা করতে না যেতো আমার ছেলে তবে আজ সে জীবিত থাকতো এটাই আমার বিশ্বাস। আর আমার বিশ্বাসেই আমি চলি।
তৌহিদ কোনো উত্তর দিলো না। সেও তার চাকরির জীবনে কোনো ব্যার্থতার কালিমা লাগাতে চায় না। সুতরাং এই বৃদ্ধ মানুষের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট না করে ক্লু খোঁজাটা এখন বেশি জরুরী_______
ফোরেন্সিক ডাক্তার শহীদুল হক ময়না তদন্ত করেছিলেন মাহিরের। তৌহিদ এখন তার সামনেই বসে রয়েছে। শহীদুল সাহেব আরেকটি ময়না তদন্ত করে রিপোর্ট তৈরি করছেন। আর ক্ষণে ক্ষণে শুধু চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। তৌহিদ অস্থির কন্ঠে তাকে জিজ্ঞেস করে,
– আমি যে পলিথিনটা দিয়েছিলাম তার থেকে কি কিছু জানা গেছে স্যার?
– হুম, তোমার আন্দাজ ঠিক ছিলো। পলিথিন থেকে পাওয়া ছুরি দিয়েই মাহিরকে খুন করা হয়েছে।
– স্যার ছুরির সাথে তো আরোও জিনিস ছিলো, হাতের গ্লোভস, একটা রুমাল। সেগুলো থেকে কি কোনো ফিঙ্গার প্লিট পাওয়া গিয়েছে?
– হুম, পাওয়া গেছে।
– স্যার ডাটার কারোর সাথে কি মিলেছে?
এবার চোখ তুলে তাকালেন শহীদুল সাহেব। কিছুক্ষণ তৌহিদের দিকে তাকিয়ে থাকলেন তিনি। বেচারার প্রতি তার মায়া হচ্ছে। তারপর চোখের চশমাটা ঠিক করতে করতে বললেন,
– তৌহিদ, একটা কথা বলি! এই কেসটা খুব হোপলেস একটি কেস। অহেতুক কেসে সময় নষ্ট করো না।
– কেনো বলুন তো স্যার!
অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করে উঠে তৌহিদ, যেটুকু আশা ছিলো সব যেনো এক নিমিষেই গুড়ো হয়ে গিয়েছে শহীদুল সাহেবের কথা শুনে। শহীদুল সাহেব হাতদুটো জড়ো করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন,
– গ্লাভস এ যার ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া গেছে সে মৃত…….
চলবে
দৃষ্টির অগোচরে
৬ষ্ঠ_পর্ব
এবার চোখ তুলে তাকালেন শহীদুল সাহেব। কিছুক্ষণ তৌহিদের দিকে তাকিয়ে থাকলেন তিনি। বেচারার প্রতি তার মায়া হচ্ছে। তারপর চোখের চশমাটা ঠিক করতে করতে বললেন,
– তৌহিদ, একটা কথা বলি! এই কেসটা খুব হোপলেস একটি কেস। অহেতুক কেসে সময় নষ্ট করো না।
– কেনো বলুন তো স্যার!
অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করে উঠে তৌহিদ, যেটুকু আশা ছিলো সব যেনো এক নিমিষেই গুড়ো হয়ে গিয়েছে শহীদুল সাহেবের কথা শুনে। শহীদুল সাহেব হাতদুটো জড়ো করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন,
– গ্লাভস এ যার ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া গেছে সে মৃত। মৃত মানুষকে কিভাবে জেলে পুড়বে তুমি?
তৌহিদ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তার মস্তিষ্কের নিউরণগুলো যেনো মূহুর্তের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। শহীদুল সাহেব তার সাথে মজা করছে কিনা বুঝতে পারছে না। যদি তিনি মজা করে থাকেন তবে এটা খুব বিছ্রি তামাশা। আর যদি না করে থাকেন তবে তৌহিদ তার জীবনের দ্বিতীয় ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। তৌহিদের মাথায় ঝাঁকে ঝাঁকে চিন্তারা জেকে বসছে। প্রায় একটা সপ্তাহ পাগলের মতো ছুটছে সে। উপরের মহলের চাপ সহ্য করে দাঁতে দাঁত চেপে এই কেসটা সলভ করার চেষ্টা করছে সে। ভেবেছিলো এই বুঝি একটা দরজা খুলেছে, কিন্তু অথচ সব বৃথা। তৌহিদ আশংকিত কন্ঠে বলে উঠে,
– স্যার কি মজা করছেন?
– আমি তোমার সাথে মজা করেছি কখনো?
– আজ্ঞে না, কিন্তু মৃত ব্যাক্তি খুন কিভাবে করতে পারে!
– খুন করে মারা যেতেই পারে!
– বুঝলাম না!
– বুঝিয়ে বলছি। এই যে রিপোর্টটা আমি তৈরি করছি মানে যে লাশটি গতকাল বনানী থানা থেকে আমার কাছে পাঠানো হয়েছে সেই লাশটির ফিঙ্গার প্রিন্ট আর গ্লাভস এর ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাচ করেছে। অদ্ভুত একটা ব্যাপার আছেও, এই লাশের ডিএনএ স্যাম্পেল মাহিরের আংগুলের নখেও পাওয়া গেছে। বলা যেতেই পারে এই লোকটি ই খুন করেছে।
শহীদুল সাহেব একটু থামলেন। পাশে থাকা পানির গ্লাস থেকে একটু পানি পান করলেন তিনি। তৌহিদ খানিকটা কৌতুহলী কন্ঠে বললো,
– স্যার এই লাশের ডিটেইলসটা কি পাওয়া যাবে?
– হ্যা অবশ্যই৷ ওর নাম সাদ্দাম, আগে ছিচকে চোর ছিলো। একবার একটা খুনের কেসে ফেসে যায়। তারপর রাজসাক্ষী হয়ে নিজের শাস্তি কমিয়ে ছিলো। তারপর মাঝে মাঝে পুলিশের খবরী হিসেবে কাজ করতো। তবে চুরির নেশাটা এখনো রয়ে গেছে। হয়তো সেদিন ও সে চুরি করতেই নুশরাতের বাসায় গিয়েছিলো। হয়তো মাহির তাকে ধরে ফেলেছিলো। অনেক কিছু হতে পারে। তুমি এর পুরো জীবনগাঁথা বনানী থানায় পেয়ে যাবে।
তৌহিদ মন দিয়ে শহীদুল সাহেবের কথাগুলো শুনলো। সে অংক মেলানোর চেষ্টায় রয়েছে। বারবার এক আর এক দুই মিলাতে চাইছে। কিন্তু কেনো যেনো অংকটা মিলছে না। কারণ এখানের ধাধার একটি অংশ এখনো অজানা। তাই কৌতুহলী কন্ঠে তৌহিদ শহীদুল সাহেবকে সে জিজ্ঞেস করে,
– স্যার ও মারা গেলো কি করে?
– ওভার ড্রাগ, ওর শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ড্রাগ এবং এলকোহল পাওয়া গেছে। মৃত্যুটা হয়েছে প্রায় ৭২ ঘন্টা আগে, মানে বৃহস্পতিবার।
– স্যার কেউ কি তাকে মারার চেষ্টা করেছে?
– ওর লাশের পাশে বেশ কয়েকটা ড্রাগের পাতা, ইঞ্জেকশন, ছোট ছোট শিশিও পাওয়া গেছে। সেগুলোতে দ্বারা কিছুই জানা যায় নি। পুলিশ খোঁজ নিয়েছিলো ওর নেশা করার অভ্যাসটা পুরোনো। আমিও ওর বডিতে ড্রাগের মাত্রা খুব বেশি পেয়েছি। সন্দেহজনক কিছুই তেমন পাওয়া যায় নি। তবুও পুলিশরা খোঁজ নিচ্ছে। দেখা যাক। সত্যি বলতে এমন ছ্যাঁচড়া চোরদের কে ঘটা করে খুন করবে?
– ধন্যবাদ স্যার।
বলেই তৌহিদ উঠে দাঁড়ায়। তার নিজেকে ব্যার্থ সৈনিক মনে হচ্ছে। পুরো একটা সপ্তাহ এতো দৌড়াদৌড়ি, এতো তোলপাড় সব বৃথা। অন্যদিকে, একটা নির্দোষ মেয়েকেও জেলে পুড়ে রেখেছে। নিজের বিবেকটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাকে। এখন এসপি স্যারের সাথে কথা বলতে হবে। নয়তো নুশরাতকে অহেতুক এমন দোষের সাজা পেতে হবে যা সে করেও নি। তৌহিদ যেতে নিলে শহীদুল সাহেব বলে উঠে,
– এতো খাটুনি শুধু একটা সিম্পল রোবারি কেসের জন্য। তাও এটা অনুমান, কোনো প্রমাণ নেই। বলি কি যেমনটা এগোচ্ছে তেমন ই এগোতে দাও। নয়তো খামোখা মানুষের আক্রোশের কারণ হবে। তোমার ইমেজটাও নষ্ট হবে।
শহীদুল সাহেব ধীর কন্ঠে কথাটা বললেন। তৌহিদ কিছু বললো না। শুধু মলিন হাসি দিয়ে তাকে সালাম দিলো। এরপর তার অফিস থেকে বেড়িয়ে গেলো। আকাশে বেশ মেঘ জমেছে। ঢাকার নীল আকাশ অচিরেই কালো হয়ে গেছে। বৃষ্টি হবে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু গরমের তাপটা এখনো কমে নি৷ শুধু মাঝে মাঝে একটা দমকা হাওয়া গায়ে লাগছে। তৌহিদ বাইক স্টার্ট দিলো। তার মনে কি চলছে বোঝা যাচ্ছে না। বাইক চলছে, সাথে রাস্তার ধুলো গুলো উড়ছে। হয়তো আজ বেশ ভালোই বৃষ্টি হবে________
রাত ৯টা,
একটা সাদা বোর্ডের সামনে কিছু ছবি পিন দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। তৌহিদ এক দৃষ্টিতে ছবি গুলো দেখছে। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট, টেবিলে রাখা কদির মগটা ঠান্ডা হচ্ছে। কিন্তু তৌহিদের সেদিকে খেয়াল নেই। তার দৃষ্টি বোর্ডে থাকা ছবিগুলোতে স্থির। প্রতিটা ছবি এক একটা চরিত্র। এবং প্রতিটা চরিত্র এক একটা কাহিনী বলছে। নতুন একটা ছবি যুক্ত হয়েছে সেটা হলো সাদ্দামের। সাদ্দামের মৃত্যুটা তার কেসটা বেশ সুন্দর করে ইতি টেনে দিলো। একজন চোর চুরি করতে এসে সেই বাড়ির মালিককে অতর্কিতে ছোঁরা মেরে দিলো। তারপর নিজে অতিরিক্ত নেশা করায় মারা গেলো। ব্যাপারটা খুব সাধারণ। কিন্তু পাজেলের একটা অংশটা কিছুতেই মিলছে না। তৌহিদ হাজারো চেষ্টা করার পর ও সেই অংশটা মিলাতে পারছে না। হাতের সিগারেট খানা জ্বলতে জ্বলতে এক পর্যায়ে তৌহিদের আঙ্গুলে তাপ লাগতে শুরু হলে তার চিন্তার অবসান ঘটে। সিগারেটটা এশট্রে তে রেখে দেয় সে। ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে কটাক্ষের হাসি ফুটে উঠে। আরো একটি নির্ঘুম রাত, আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর__________
এক সপ্তাহ পর,
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে নুশরাত, নিজের প্রাক্তন স্বামীর খুনি বেশে। রবিন তার কেসটা হ্যান্ডেল করছে। এই একটা সপ্তাহ খুব বাজে ভাবে কাটাতে হয়েছে তাকে। তার বেইল হয় নি। তাকে জেলেই রাখা হয়েছিলো মেয়ে কয়েদিদের সাথে। এই একটা সপ্তাহ বেশ নতুন নতুন শব্দভাণ্ডার, কটুক্তি তার শিক্ষার খাতায় যুক্ত হয়েছে। দুবার রিমান্ডেও তাকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা শুধুমাত্র প্রশ্ন উত্তর খেলার জন্য। তৌহিদকে সে দেখে নি এই কয়দিন। লোকটা যেনো ডুব মেরেছে। নুশরাতের নিজেকে বেশ ফেমাস মনে হচ্ছে। তাকে কোর্টে আনার সময় মিডিয়ার লোকেরা বিভিন্ন এঙ্গেলে তার ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে। খবরের কাগজে হেডলাইনটি এরুপ,
” প্রখ্যাত নারীবাদী এডভোকেট নুশরাত গ্রেফতার নিজের স্বামীকে খুন করবার দায়ে”
আবার কিছু কিছু লাইন এমন ও রয়েছে,
” শুধুমাত্র ফ্লাটের ভোগদখলের জন্য স্বামীকে খুন করেছেন এডভোকেট নুশরাত”
নুশরাত পেপারের হেডলাইন গুলো পড়ে আর হাসে। কেসের কার্যক্রম শুরু হয়। যেই কোর্টে সে মানুষের হয়েছে লড়তো আজ সেই কোর্টে আসামীর মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে সে। একের পর এক অহেতুক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাকে। তার বিপক্ষের উকিলের প্রশ্নগুলো বেশ অদ্ভুত, একবার তিনি তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করছেন আবার তাকে অর্থলোভীও বলছেন। তিনি তার বক্তব্যে প্রমাণ করতে ব্যাস্ত খুনটি নুশরাত ই করেছে৷ একপর্যায়ে রবিন অবজেকশন জানায়। কিন্তু তার অবজেকশন অগ্রাহ্য করা হলো। নুশরাতের বুঝতে বাকি রইলো না কেস কোথায় যাচ্ছে। একটা পর্যায়ে বিচারক রবিনকে তার পক্ষ রাখতে আদেশ দেন। রবিন একটা ছোট নিঃশ্বাস ছাড়ে তারপর বলে,
– স্যার এই খুনটি নিতান্ত একটি রোবারি কেস……………
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি