বউ চুরি সিজন-২ পর্ব ঃ ৭

#বউ চুরি

সিজন-২

পর্ব ঃ ৭

লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা

ব্যাথায় কুঁকড়ে ওঠলো মুসকান চোখ বেয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পড়লো। খানিকপর ছেড়ে দিলো ইমন পাশ ফিরে শুয়ে রইলো।মুসকান নিঃশব্দে আবারো কেঁদেই চলেছে।কাঁদতে কাঁদতে একসময় গুটিশুটি মেরে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।ইমন মুসকানের দিকে ফিরে কাছে টেনে নিলো। মুসকানের ঘুমন্ত মুখে তাকাতেই বাঁকা হাসলো। হালকা ফুঁ দিয়ে সামনে চলে আসা চুল গুলো সরিয়ে দিলো।এক আঙুল দিয়ে গাল আর ঠোঁটের দাগগুলোতে স্পর্শ করতে লাগলো। বউকে শায়েস্তা করতে গেলেও বুকের ভিতর কেমন ব্যাথা লাগে। কিন্তু বউ তো এবার শায়েস্তা করতেই হবে। এমন বোকা, বুদ্ধিহীন বউ থাকলে তো বিপদের পর বিপদ আসবে। ভালোবাসা দিচ্ছি না বলে বোকার মতো কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে পড়ছো।আমি ছাড়া আর কে আছে যে তোমায় এক বুক ভালোবাসা দিবে। আমার মতো আর কাকে পাবে বোকা মেয়ে কোথাকার। মুসকান কে গভীরভাবে জরিয়ে মনে মনে অসংখ্য কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো ইমন।

খুব সকালে ঘুম ভাঙলো ইমনের। মুসকানকে আলতো করে ধরে শুইয়িয়ে দিলো। কিছুক্ষন মুসকানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। মুখের দাগগুলো রয়েই গেছে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুসকানের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে ওঠে পড়লো।

বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজ, অনেক মানুষের কথা হাসির আওয়াজ কানে ভেসে এলো মুসকানের ঘুমটাও আলগা হয়ে গেলো। চট করে ওঠে বসে পুরো রুমে চোখ বুলালো। ধীরে ধীরে মনে পড়ে গেলো সে এখন ইমনদের গ্রামের বাড়ি আছে। জানালা দেখতে পেলো ওঠে গিয়ে জানালা খুলে দিলো। সূর্যের আলো এসে পড়লো তার মুখের উপর। চোখ দুটো ছোট করে একটু সরে দাঁড়ালো। দৃষ্টি সামনের দিকে স্থির রইলো। বিশাল বড় ফাঁকা জায়গা তার সামনে দুটো বড় বড় পুকুর তার সামনে দিয়ে গেছে কাঁচা রাস্তা। মুসকানের বেশ ভালো লাগলো সেই সাথে ইচ্ছে হলো সেখানে যাওয়ার। আর দেরী না করে রুম ছেড়ে বেরুতেই দেখতে পেলো ইয়া বড় ওঠোনের মাঝখানে তার মা,শাশুড়ি, কাকিরা বসে কাজ করছে। একজন মাংস কাটছে আরেক জন সবজি কাটছে। ছোট দুটো বাচ্চা পাশেই খেলা করছে। এশা চেয়ারে বসে আছে দিপু বাচ্চাদের সাথে খেলা করছে।
এশা মুসকানকে দেখে বললো ওঠে পড়েছো। এদিকে আসো সবাই মুসকানকে এসে তাদের সাথে বসতে বললো। মুসকান এশা কে বললো না বসবো না।
দীপান্বিতা কে বললো আম্মু আমি একটু এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখি কখনো তো আসিনি। ভাবী চলো তুমিও আসো।
না আমি তো অনেক সকালে ওঠেছি ঘুরে দেখা শেষ তুমি দিপুর সাথে যাও। আমি এখানেই বসি কিছুক্ষন।

মুসকান দিপুকে বললো এই দিপু দেয়ালগুলো এমন পুরোনো হয়ে গেছে তবুও এগুলো ঠিক করে না কেনো? দেখে তো মনে হচ্ছে খুব পুরোনো বাড়ি।

আরে আপু এটা তো আসলেই অনেক পুরোনো বাড়ি। চলো ছাদে যাই আর কে কোন ঘরে থাকে সেটাও দেখাই। এমন পুরোনো বাড়ি দেখার মজাই আলাদা। দিপু মুসকান কে ঘুরে ঘুরে সব ঘর দেখালো।ছাদে নিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো দুজন মুসকান নিচের দিকে তাকালো।
দুতালা বিশাল বড় বাড়ি সামনে ইয়া বড় ওঠোন তার পর সিরিয়ালি পাঁচটা ঘর। যেগুলো অর্ধেক ভবন চারপাশে দেয়াল উপরে টিনের চাল। মুসকান বললো- বাহ আমরা ওখানেই ছিলাম রাতে এগুলোতো ভীষণ সুন্দর দেখতে একদম আনকমন ঘর এগুলো।
দিপু হাসতে হাসতে বললো- হুম তোমার কাছে আনকমনই। আমাদের কাছে না, আপু তখন জিগ্যাস করলে এই পুরোনো বিল্ডিং টা ঠিক করে না কেনো তাইনা। এটা দাদুর জন্যই দাদু ঠিক করতে দেয় না। কাকাদের বলে আমি মরার পর এসব ঠিক করবি এগুলো। এগুলোতে নাকি পুরোনো গন্ধ মিশে আছে পুরোনো বাড়ি, পুরোনো গন্ধ, পুরোনো স্মৃতি দাদুকে ঘিরে থাকে। তাই দাদু এটা ঠিক করতে দেয় না। সবকিছুতেই নাকি দাদীর স্মৃতি মিশে আছে।
বাহ এততো ভালোবাসা এখনো,,,
হুম ইমন ভাইয়ার থেকেও গভীর,,,
মুসকানের মুখটা দিপুর কথা শুনে মলিন হয়ে গেলো।
অমন মুখ দেখে দিপু বললো আপু চলো না আমরা বাড়ির বাইরে যাই তোমাকে পুকুর দেখাবো চলো।

হুম চল।
দিপু মুসকান কে নিয়ে বাইরে গেলো। দিপু বললো আপু এটা হচ্ছে বার বাড়ি,,, মানে বুঝেছো তো মানে বাড়ির বাইরের জায়গা কে বার বাড়ি বলে।
হুম। দিপু দেখ আম গাছ কতো বড় বড় আম। এগুলাই তো কাল রাতে টিনের উপরে পড়েছিলো আমি ভীষণ ভয় পেয়েছি।
দিপু হাসতে হাসতে বললো- তুমিতো একটুতেই ভয় পাও।
তুই হাসছিস বলেই গাল ফুলালো মুসকান।
আরে আপি রাগো কেনো চলো সামনের দিকে যাই। পুকুরে ইয়া বড় বড় মাছ রয়েছে আসো যাই।
দুপুকুরের মাঝের জায়গায় এসে দাঁড়ালো দিপু আর মুসকান। দিপু ওটা সেটা দেখাচ্ছে আর মুসকান হাসছে কথা বলছে। কাঁচা রাস্তা দিয়ে গ্রামের বেশ কিছু ছেলে যাচ্ছিলো দিপু মুসকানের দিকে তাকিয়ে একজন বললো এই ওইটা দিপু না,,,

আপু থাক ওদের সাথে কথা বলে আসি।
কি জসিম ভাই কি খবড়।
আরে দিপু যে কবে আসছো ভাই,,,
এইতো কাল এসেছি সবাই মিলে,,,
ওও তাইনাকি, ওটা কে।
আমার বড় আপু আর,,,
দিপুর কথা কেটে জসিম বললো ওও কখনো আসেনি আগে তাইনা।
না আসেনি।
তোমার বড় ভাইরা আসছে।
হ্যাঁ। সবাই এসেছে।
বাহ বেশ ভালো নিপুর তো বিয়ে বেশ মজা হবে। তাহলে আসি সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যেও আমাদের বাড়ি।
ওকে ভাই যাবোনি।

এতো ছেলের মধ্যে অনেকেই মুসকানকে হা করে দেখছিলো। শহড় থেকে এসেছে দেখতে বেশ সুন্দরী। তাই সবাই একটু বেশীই আগ্রহী।
মুসকান আপন মনে চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে। কে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই।
দিপু ওদের সাথে কথা বলা শেষ করে মুসকানের কাছে আসলো।
দুজন বেশ গল্পসল্প করছিলো। হঠাৎ জোভান এসে বললো কিরে তোরা এখানে কেনো।
মুসকান খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো।
দিপু বললো এই ঘুরে ঘুরে ওকে সব দেখাচ্ছি ভাই।
যা বাড়ি যা তোদের ডাকছে।

দিপু মুসকান কে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো।
দিপক, ইমন,নিপু গিয়েছিল ধানক্ষেতে। ইমন আর দিপক কে আবাদি জমিগুলো নিপু দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলো। তিনজনের গায়েই ছিলো লুঙ্গি আর সাদা সেন্ডেল গেন্জি। বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই মুসকান ইমনকে দেখে হা করে তাকিয়ে রইলো।
ইমনকে এভাবে প্রথম দেখলো মুসকান প্রচন্ড হাসি পেলেও তা আটকে মুখ চিপে হেসে যাচ্ছে মুসকান। ইমন আড় চোখে একবার তা দেখে সেখান থেকে হনহন করে চলে গেলো। ওঠোনে মোড়ায় বসে আছে মুসকান সবার সাথে।
জোভানের বউ সীমা মিলনের বউ মেঘা কে বললো-
বুঝলি মেঘা স্বামীর শাসন আর ভালোবাসার চিহ্ন নিয়ে ঘুরা মেয়ে গুলো সত্যি বড় ভাগ্যবতী হয়।
মুসকান লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেলো। নিঝুমের বউ মিম আর রিক্তমের বউ লীনাও হাসি তামাসা করতে লাগলো। এশা এসে বললো ইশ ভাবি আমার ননদটাকে তোমরা আর ক্ষেপিও না তো।
লীনা বললো- কি আর করবো ননদ প্লাস দেবরের বউ বলে কথা সহজে কি ছেড়ে দেওয়া যায় নাকি।
মুসকান লজ্জা পেয়ে ওঠে গেলো সেখান থেকে।
সব ভাবীরা হাসিতে লুটোপুটি খেতে লাগলো।

সকালের খাবার খেয়ে সবাই যে যার রুমে রেষ্ট নিচ্ছিলো। মুসকান আর দিপু আম খাচ্ছে বারান্দায় বসে বসে এমন সময় পাশের বাসার কয়েকটা মেয়ে বাড়িতে ঢুকলো।
লীনা ভাবী,মেঘা ভাবী কই গো,,,
লীনা বেরিয়ে এলো। এইতো আমি বসো তোমরা গল্প সল্প করি।
সুমি,সাথী আর পূবালী বললো শুনলাম ভাবী আপনাদের তিন জন দেবর এসেছে শহড় থেকে।
লীনা বললো শুধু দেবর না ননদ ও এসেছে। তা তোমরা কি দেবরদের খবর নিতে এসেছো নাকি ইমনের খবর নিতে এসেছো। বলেই মুখ চিপে হাসলো লীনা।
পূবালী লজ্জামাখা মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
সুমি, সাথী বলে ওঠলো বুঝোই যখন আমাদের পূবালীর সাথে একটু কথা বলিয়ে দাও না।
লীনাও ওদের সাথে মজা করতে করতে বললো বসো গো বসো। আমার দেবরের সাথে কথা বলা অত সহজ না বুঝলা। তার সাথে কথা বলতেও অনেক কাঠখড় পোহাতে হবে।

মুসকান এসব কথা শুনে বেশ রেগে যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না। কারন ইমন কে সে চিনে। তাই চুপচাপ ই বসে আছে মুসকান।

লীনা ওদের সাথে মুসকানের পরিচয় করিয়ে দিলো ননদ হিসেবে। ইমনের বউ সেটা বলার আগেই অন্য কথায় চলে গেছে তারা।
পূবালী খুব ছোট বেলা থেকেই ইমনকে পছন্দ করে।
গ্রামে আসে না তাই কথা বলার সুযোগ পায় না।
কিন্তু কয়েক বছর আগে ইমন এসেছিলো পুকুরে বর্ষি ফেলে মাছ ধরছিলো সব ভাইয়েরা মিলে।
পূবালী ও ছিলো লীনা আর মেঘা ভাবীদের সাথে।
কথার ফাঁকে পূবালী ইমনকে তার মনের কথা বলেছিলো। ইমন কঠোর স্বরে বলেছিলো আমার বউ আছে তাই এই সব ভূত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।
ভাবীদের কাছে শুনেছিলো ইমনের বিয়ে হয়নি। তারপর আর বিয়ের ব্যাপারে জিগ্যাস করেনি তাই ইমনের বিয়ের কথা অজানাই রয়ে গেছে পূবালীর।

ইমন দিপক কে ফোন করে বললো বের হ পুকুরে বর্ষি ফেলবো। দিপক বললো ভাইয়া তুমি যাও আমি আসছি এশার শরীরটা ভালো নেই তো।
আচ্ছা তাহলে থাক। দিপুকে নিয়ে যাচ্ছি।
ইমন রুম থেকে বের হতেই দেখতে পেলো এক ঝাক মহিলা বসে আছে। সাথে তার বউ ও রয়েছে দিপুর সাথে আম খাচ্ছে।
এই যা,,, এইসব মেয়ের কাছে ও কেনো। এদের যা চালচলন, স্বভাব এদের সাথে না মেশাই মঙ্গলকর।
ওহ এই ভাবী গুলাও না, এদের নিয়ে আর পারা যায় না।

মুসকান,,, কঠোর গলায় ডাকলো ইমন।
সবাই তাকালো ইমনের দিকে। মুসকান আড় চোখে পূবালী কে দেখলো একবার ।
যেনো চোখ দিয়ে গিলে খাবে শয়তান মেয়ে। এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে। বেহায়া মেয়ে। মনে মনে গালি দিতে লাগলো মুসকান।
ইমন ধমকে বললো কি হলো ডাকছি তো,,,
মুসকান সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। ইমন বললো রুমে যাও আমার শার্ট গুলো ভাজ করে রাখো। বলেই দিপু কে বললো দিপু চল পুকুর পাড়ে যাই মাছ মারবো।
ইমন চলে যেতেই পূবালী সুমি, সাথীকে ইশারা করলো। ওরাও পুকুরের দিকে চলে গেলো। লীনা হাসতে হাসতে টুকটাক কাজে মনোযোগ দিলো। মেয়েগুলাও না ভারী দুষ্টু৷

মুসকান শার্ট গুলো ভাঁজ করছিলো আর ভাবছিলো হঠাৎ আমার সাথে কথা বললো যে । কাজের জন্য নাকি অন্য কোন ব্যাপার। শার্ট গুলো ভাঁজ শেষে বিছানায় বসতে গিয়েও থমকে গেলো তার চোখ চলে গেলো জানালার বাইরে। ইমন আর দিপু চেয়ারে বসে আছে। পুকুরে বর্ষি ফেলেছে। ইমনের বাম পাশে দিপু আর বাম পাশে পূবালী দাঁড়িয়ে। পূবালী লজ্জা রাঙা মুখ করে কথা বলছে। ইমন ও যে বলছে তা বেশ বুঝতে পারলো মুসকান।
ওও এই জন্যেই কাজের বাহানায় আমাকে রুমে পাঠিয়ে দিলে। দুফোঁটা পানি বেরিয়ে এলো চোখ বেয়ে।
প্রচন্ড রাগ,অভিমান হিংসা হতে লাগলো মুসকানের।
কি হবে কি হবেনা কি করবে কি করবেনা সেসব না ভেবে রুম ছেড়ে বেরিয়ে সোজা বার বাড়ি চলে গেলো।

ইমনদের কাছে গিয়ে বললো- দিপু,,,
ইমন, দিপু, পূবালী তাকালো মুসকানের দিকে।
সর বসবো আমি এখানে। দিপু ওঠে বললো বসো।
দিপু আরো কয়েকটা চেয়ার নিয়ে আসলো।
সবাই বসে আছে ইমনের বাম পাশে মুসকান আর ডান পাশে পূবালী বসে আছে।
মুসকান চুপ করে বসে রাগে শুধু ফুঁসে যাচ্ছে।
ইমন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বেশ মজা পেলো। এতোক্ষন পূবালী বললেও এখন ইমন শুরু করলো ওটা সেটা বলা। ইমন আর পূবালী কথা বলছে মুসকান রাগে একদিকে চেয়ে আছে শুধু। ইমন আড় চোখে মুসকান কে একবার দেখে নিলো। তারপর আবার শুরু করলো।
পূবালী বললো তোমার ছোট বোনটা খুবই মিষ্টি দেখতে। তোমাদের বংশে ওই তো প্রথম মেয়ে খুব আদরের তাইনা,,,

ইমনের কান দুটো গরম হয়ে গেলো কথাটা শুনে। প্রচন্ড রেগে পূবালী কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দিপক এসে বললো- ভাইয়া ইশতাক আংকেলের নাম্বারটা দাও তো।
ইমন থেমে গেলো। মুসকানের চোখ দুটো চিক চিক করছিলো। দিপু বললো পূবালী আপু এসব কি বলছো । তুমি কি কিছু জানোনা,,,
পূবালী বললো -কি,,,
মুসকান দিপুকে বললো দিপু বেশী কথা বলবিনা চল এখান থেকে। দিপুকে টেনে নিয়ে গেলো মুসকান।
ইমন দিপক কে নাম্বার দিয়ে পূবালীকে বললো -মুসকানের বিষয়ে লীনা ভাবীর থেকে ভালোভাবে শুনে নিও। আর এখান থেকে যাও এখন।
পূবালী আগা মাথা না বুঝে সেখান থেকে চলে গেলো। ইমনকে ভালোভাবে চিনে সে বেশী কথা বললে আবার ঝাড়ি দিবে তাই চলে গেলো।

বউ কে ক্ষেপিয়ে দিলাম কি হবে এখন আল্লাহ ভালো জানে,,, মিটিমিটি হাসতে লাগলো ইমন।

মোতালেব চৌধুরী ছাদে বসে চা খাচ্ছিলো। মুসকান গিয়ে পাশে বোসলো।
কি গিন্নি মন খারাপ নাকি,,,
না দাদু ঠিক আছি তুমি এইসময় এখানে যে,,,
এটা তো আমার নিত্যদিনের কাজ। এসময় আমি এখানে বসেই চা খাই। তোমার দাদী যখন ছিলো তখনো এটাই করতাম। সেই অভ্যাসটাই এখনো রয়েছে শুধু পাশের মানুষ টা এখন আর নেই।
মুসকানের বড্ড মায়া হলো তাই বললো কই আমি তো দিব্বি আছি।
মোতালেব চৌধুরী হোহো করে হেসে ওঠলো।
মুসকান ও হাসলো।ইশ দাদু এখনো কতোটা ভালোবাসে দাদীকে। কথা শুনেই বোঝা যায় অনেক মিস ও করে। মারা গেছে সেই কতোবছর আগে এখনো ভালোবাসা কতোটা গভীর। আর আমি জলজ্যান্ত থাকতেও আমার দিকে আমার বরের খেয়াল নেই,,,

দাদুর সাথে গল্প শেষে মুসকান বারবাড়ি হাঁটাহাটি করছিলো। আর ভাবছিলো গ্রামে শহড়ের মতো

তেমন সুবিধা না থাকলেও আলাদা একটা প্রান আছে। সবসময় কেমন ভরপুর মানুষ। সবাই কেমন প্রানোজ্জ্বল বড্ড ভালো লাগছে এখানে আমার।
কিন্তু কেউ তো কোথাও ঘুরতেই নিয়ে যায় না আমাকে ধ্যাত ভালো লাগেনা।
ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে পুকুর ঘাটে চলে এলো মুসকান। পুকুরের ওপারে ছোট কয়েকটা ছেলেকে গোসল করতে দেখলো। ব্যাপারটা বেশ ইনজয় করলো সে। বাহ এটাতো সুইমিংপুলের মতোই ওয়াও কতো সুন্দর ওরা মজা করছে। কিন্তু এখানে তো জলজ্যান্ত মাছ ও হয় এই পানিতে কিভাবে গোসল করে ওরা শরীরে গন্ধ লাগেনা,,,
নানারকম ভাবনায় বিভর হয়ে গেলো মুসকান।
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘাট ছেড়ে পানিতে পা দিয়েছে খেয়াল ই নেই। মুসকান ভাবতেও পারেনি এতো গভীর জলাশয় এটা। কয়েককদম এগুতোই ধপাশ করে পড়ে গেলো পানিতে। ওপারে থাকা বাচ্চা গুলো খেয়াল করলো।
মুসকান পানিতে হাবুডুবু খেতে লাগলো। এক পিচ্চি তারাতারি দৌড়ে এসে বাড়িতে চিল্লিয়ে বললো পানিতে পড়েছো গো আন্নেগো মেয়ে। তারাতারি বার হন গো মরে সারলো।
দিপু কথাটা শুনেই সবাইকে ডাকলো। সবাই বেরিয়ে এলো দৌড়ে। ইমন বাড়ি নেই কোথায় যেনো গেছে।
দিপু ওরা পুকুর পাড়ে আসতেই দেখতে পেলো শুভ পাশের বাড়ির ছেলে মুসকানকে কোলে করে ঘাটে নিয়ে বসেছে।
দীপান্বিতা, ইরাবতী মুসকানের কাছে এসে মুখ ধরে ডাকতে লাগলো।এশা ইমনকে ফোন করে জানালো।
সবাই ধরাধরি করে মুসকানকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে এলো।বারান্দায় শুইয়িয়ে দিয়ে ইরাবতী পেটে হালকা চাপতে লাগলো। মুখ দিয়ে গড়গড় করে পানি বের হলো।
ইমন আর রক্তিম বাড়ি আসলো দিপু ভয়ে ভয়ে সরে দাঁড়ালো। ইমন মুসকানের কাছে গিয়ে পেটে জোরে জোরে চাপ দিতেই গলগল করে পানির সাথে বমি বেরিয়ে এলো জ্ঞান ও ফিরলো।
ইমন বললো কাকি কাপড় চেন্জ করে রুমে নিয়ে যাও । দীপান্বিতা বেশ বুঝতে পারলো কতোটা রেগে গেছে ইমন।
সীমা, মেঘা বললো ভাগ্যিস শুভ ছিলো নয়তো মেয়েটাকে বাঁচাতে পারতাম না।
ইমন বললো মানে,,
মিম বললো শুভই তো মুসকানকে বাঁচিয়েছে। ইমন শুভর দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো ওর শরীরও ভেজা। কিছু না বলে ইমন রুমে চলে গেলো।
রাগে কি করবে সে বুঝে ওঠতে পারছেনা।
রাগটাকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।
দীপান্বিতা মুসকানকে রুমে শুইয়িয়ে গেলো।
এশা আর মেঘা মুসকানের পাশে বসে আছে।

বাড়ি ভর্তি এতো মানুষ তবুও এমন একটা কান্ড কি করে ঘটলো বলবে তোমরা আমায়।
সবাই কি করছিলে ঘুমিয়ে ছিলে নাকি। কতো বড় দূর্ঘটনা হতে যাচ্ছিলো।
এই তুই কোথায় ছিলি তুই খেয়াল রাখতে পারলিনা।
দিপুর দিকে তাকিয়ে বললো ইমন।
দিপু একদম চুপ রইলো। সবাই ইমন কে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
ইমন বললো এই একটা মানুষ আমাকে নাজেহাল করে ছাড়ছে এক দন্ড শান্তি পাচ্ছি না এর জন্য।
পা বেশীই লম্বা হয়ে গেছে একা একা বাড়ির বাইরে গেছে। এটা ওর শহড় নয় এটা গ্রাম। সবাই কান খুলে শুনে রাখো মুসকানের খেয়াল না রাখতে পারলে আমি ওকে কালি নিয়ে ফিরে যাবো।
মোতালেব চৌধুরী বললেন দাদু ভাই এতো রাগ করোনা। কাল থেকে আর মুসকান একা একা কোথাও যাবেনা। ভুল হয়ে গেছে মাথা গরম করো না। যাও মেয়েটার কাছে যাও তুমি প্রচন্ড ভয় পেয়েছে হয়তো।
ইমন আর কিছু না বলে হনহন করে চলে গেলো।বাড়ির সবাই নিরব দর্শক হয়ে চুপ করে রইলো।

ইমন যেতেই এশা আর মেঘা চলে গেলো।
ইমন গিয়ে পাশে বোসলো মুসকানের কপালে হাত দিতেই বেশ গরম অনুভব হলো। তাই বললো- নাপা খেয়েছো?
মুসকান বললো হুম।
ওকে ঘুমাও।
ইমন মুসকানের পাশে শুয়ে পড়লো।
মুসকানকে একটু কাছে টেনে নিতেই মুসকান ইমনের হাত ছাড়িয়ে পাশ ফিরে শুয়ে রইলো।
ইমনের মেজাজ বিগরে গেলো। এক টানে নিজের কাছে নিয়ে বললো এত ত্যাজ না দেখিয়ে চুপচাপ ঘুমাও এখানে। নয়তো আজ যা হয়েছে তার জন্য তোমার কি হাল করবো ভাবতেও পারবে না।
মুসকান কিছু বললো না চুপচাপ শুয়ে রইলো।

গভীর রাতে মুসকানের শরীরের উষ্ণতায় ঘুম ভেঙে গেলো ইমনের। প্রচন্ড তাপ জ্বর খুব বেশীই এসে গেছে। মুসকান গুটিশুটি মেরে বুকে ঘুমিয়ে আছে। ইমন একটু সরাতে চেয়েও পারলো না মুসকান ইমনকে জরিয়ে রইলো। হঠাৎ ই ইমনের মধ্যে আলাদা এক অনুভূতিরা শিহরন জাগিয়ে তুললো।
মুসকানের শরীরের উষ্ণতা গভীরভাবে ইমনকে মুসকানের দিকে আকর্ষণ করছিলো।
আজ এতটা মাস হয়ে গেলো আমাদের মাঝে বেশ দূরত্ব। এতো গভীরভাবে কাছে এসো না মুসকান তোমার শরীর ভালো নেই।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here