বউ চুরি
সিজন-২
পর্ব ঃ ৫
লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা
ইমন মুসকান কে ছেড়ে দিয়ে পিছন ঘুরে এক হাত উপরে ওঠিয়ে বললো- ব্যাস। আর কিছু শুনার ইচ্ছে আমার নেই। এইকদিন অনেক সুযোগ দিয়েছি বলার তুই বলিস নি। নিজের স্বামীর থেকেও বাইরের লোক কে বেশী বিশ্বাস করেছিস। তুই হেরে গেছিস, হ্যাঁ তুই হেরে গেছিস। তুই আমার ভালোবাসা, আমার বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে পারিস নি। তুই স্ত্রীর কর্তব্য পালন করতে পারিস নি। একবার ভুল করে তোর শিক্ষা হয়নি, আবার তুই তার সাথে লুকিয়ে যোগাযোগ শুরু করেছিস যার জন্য তুই নিজের স্বামী কে ছেড়ে পরপুরুষের হাত ধরে বেরিয়ে গিয়েছিলি।
মুসকান চোখ তুলে তাকালো গাল বেয়ে পড়লো অশ্রুকনা।
তাঁর মানে ও সব জেনেও এতোদিন চুপ করে ছিলো।
তোকে আমি আর কোন সুযোগ দিবো না। এতোদিন আমার ভালোরূপ তুই দেখেছিস আজ থেকে দেখবি আমি কি,,,
মুসকান ওঠে দাঁড়ালো কান্নাজরিত কন্ঠে বললো- আমার বাচ্চা কে হারিয়েছি আমি,,,আর সেটা কেনো জানো,,,নিশ্চয়ই জানো তুমি।
ইমন আরো ক্ষেপে গেলো ঘুরে আরেক চড় বসিয়ে দিলো। মুসকান গাল ধরে ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। ঠোঁট কেটে রক্ত পড়তে শুরু হলো।
এই চুপপ তুই কোন কথা বলবি না। তোর বলার সময় শেষ। জানতে চাস কেনো আমাদের সন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পারেনি তাহলে শোন।
জাবের জয়ের বড় ভাই, জাবেরের সাথে আমার শত্রুতা অনেক বছর আগের। কিন্তু তোকে তুলে নেওয়ার পিছনে মেইন কারন ছিলো জয়। জয় তোকে ভোগ করতে পারেনি, ওর হাত থেকে তোকে বাঁচানোর জন্য আর ওকে শাস্তি দেওয়ার জন্যই জাবের প্রতিশোধ নিতে এসেছে।
আর তুই তুই নিজের কর্মফল ভোগ করছিস সেই সাথে আমাকেও করাচ্ছিস। আমাদের সন্তান হারানোর জন্য আমি যদি ২০% দায়ী হই তাহলে তুই ৮০% দায়ী মাথায় রাখিস।
একজন সন্তান কে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেয় তার মা।
তুই কেমন মা যে নিজের সন্তানের নিরাপত্তা দিতে পারলি না।
রাগটা কন্ট্রোল না করতে পেরে ইমন বলেই চললো।
মুসকান সহ্য করতে না পেরে দুহাতে কান চেপে ধরলো।
তোর এতোই অধঃপতন হয়েছে যে হেনা হসপিটাল এসে তোর মনে বিষ ঢুকিয়ে চলে গেলো আর তুই ওকে সুযোগ দিলি। নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে নিয়ে গেলো আর তুই গেলি। ওর কথা অনুযায়ী তুই বেবী নিতে চাইলি সবটাই আমার জানা সব । ইমন মুসকানের দুকাধে শক্ত করে চেপে ধরলো।
মুসকান কেঁপে ওঠলো।
আজ যদি হেনা বলে ইমনকে বিষ দিয়ে মেরে ফেল তুই তো তাই করবি। আমার স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতাও তুই রাখিস না।
মুসকান এক চিৎকার দিলো,,,না,,,এসব কি বলছো তুমি,,,
ইমন মুসকান কে ছেড়ে বললো,, হ্যাঁ তুই এটাই করবি। তোকে বোঝা শেষ তুই থাক তোর মতো আজ থেকে তোর আর আমার পথ আলাদা।
আমার সামনেও যেনো তোকে আর না দেখি। এই মুখ টা দয়া করে আমার সামনে আর আনিস না।
তাহলে এর থেকেও খারাপ কিছু হবে তোর সাথে।
ইমন চলো গেলো সেখান থেকে। মুসকান নিচে বসে পড়লো ইমনের বলা প্রত্যকটা কথা তার কানে ঝিম ধরে গেলো। চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
ইমন রেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। ইরাবতী পিছন পিছন অনেক ডাকা সত্ত্বেও দাঁড়ালো না।
ইরাবতী ছেলের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়লো।
এশাকে ডেকে জিগ্যাস করলো ওদের মধ্যে কি হয়েছে কিছু জানো??
এশা সবটা চেপে গিয়ে বললো- আসলে বড় মা মুসকানের মনের অবস্থা তো ভালো না। ভাইয়ার সাথে ঠিকভাবে, স্বাভাবিক ভাবে মিশেও না তাই রেগে গেছে হয়তো। ইরাবতী বললো ওহ।
কিন্তু ইরাবতী আঁতকে ওঠলো যখন মুসকান কে সিঁড়ি দিয়ে নেমে নিজের রুমে যেতে দেখলো।
একি অবস্থা ওর এমন বিধ্বস্ত কেনো। এশা এটা তো স্বাভাবিক কিছু না। আমার ছেলে তো এইটুকুতে এমনটা করবে না। নিশ্চয়ই অন্যকিছু আছে মুসকান আমার ছেলেকে এমন রাগিয়ে দিয়েছে কেনো।
কি হয়েছে কি।
বড় মা আমিতো জানিনা,,,এশা ভয়ে কিছু বলতে পারছেনা। মুসকানকে দেখে সেও ভয় পেয়ে গেছে।
ইরাবতী দীপান্বিতা কে ডাকা শুরু করলো। দীপান্বিতা এসে সব শুনে অবাক হয়ে গেলো। তারাতারি মুসকানের রুমের দরজায় ঠকঠক করতে লাগলো কিন্তু ভিতর থেকে কোন সারা পেলো না।
বাড়ির সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো। রাত হয়ে গেছে ইমন বাড়ি আসেনি মুসকান ও দরজা খোলে নি।
ইরাবতী কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে পড়লো।
এই ছেলে মেয়ে দুটো আমাকে একটুও শান্তি দিলো না। একের পর এক সমস্যা লাগিয়েই রাখছে দুটো।
দীপান্বিতা শান্ত করার চেষ্টা করলো।
দিপক আর এশা ভাবতে লাগলো কিভাবে কি করা যায়।
হেনার বাড়িতে কাজি নিয়ে উপস্থিত হয়েছে ইমন সহ আরো পাঁচজন।হেনা ছুটিতে বাড়ি এসেছে সেই খবড় ইমনকে জানিয়েছে সুমন। ইমনের কলেজ লাইফের বন্ধু সুমন। একবছর প্রেমের অভিনয় করে ছেঁকা দিয়েছে হেনা সুমন কে। সুমন হেনাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। কিন্তু হেনা যে মিথ্যা প্রেমের অভিনয় করেছে তার সাথে সেটা সুমন বুঝতে পারেনি। তাই ইমন নিজ দায়িত্বে সুমন আর হেনার বিয়ে দিবে ভাবলো। সেই সাথে সব হিসেব বরাবর আর কখনো যাতে আমার সংসারে অশান্তি না করে সেই ব্যবস্থাও করবো এবার।
হেনার বাবা মা কিছু বুঝতে পারলো না। ইমন সুন্দর করে মেয়ের প্রেমের কাহিনি বাবা মা কে বুঝালো।
হেনার বাবা মায়ের আর কিছু বলার মুখ থাকলো না।
হেনার বাবা বললো বেশতো ছেলে চাকরি করে বেকারতো না মেয়ে পছন্দ করেছে যখন হয়ে যাক।
ইমনের মুখের উপর না করার উপায় নেই। ইমন সম্পর্কে হেনার বাবা মায়ের বেশ ধারনা হয়েছে।
কিন্তু হেনা কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি নয়। তার মতে সুমন তার যোগ্য নয়।
ইমন বললো- এই সুমন তুই ওর যোগ্য কিনা সেটা এবার প্রমান কর।
সুমন হেনার সামনে গিয়ে ঠাশ করে এক থাপ্পড় দিলো। হেনা অগ্নি চোখে সুমনের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে ওঠলো।
হেনার বাবা ইমন কে বললো- বাবা আমি বুঝাচ্ছি ইমন তাকে থামিয়ে দিলো। নাহ আমার বন্ধুর কি ক্ষমতা নেই নাকি একটা মেয়েকে ফেইস করার।
যদি না থাকে তাহলে তো ও আমার বন্ধু হবার যোগ্যতাই রাখে না। বলেই ইমন বাঁকা হাসলো।
সুমন হেনাকে আরেক গালে থাপ্পড় দিয়ে বললো- বিয়ে করবি কিনা বল।
না না না,বিয়ে করবো না।
তাহলে কি করবি অন্যের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করবি? বলেই আরেক থাপ্পড় দিলো । এবার হেনা নিচে পড়ে গেলো হেনার মা কান্না করে দিলো দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে ওঠালো।
বাবা, মা বুঝিয়ে মেয়েকে বিয়েতে রাজি করালো।
ইমন যে নাছোড়বান্দা সে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।
সুমন আর হেনার বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলো।
ইমন গিয়ে হেনার মুখোমুখি গিয়ে বসে বললো
কি ভাবি,,,আর কখনো দেবরের সংসারে আগুন লাগাতে যাবেন।
হেনার মুখটা ছিলো দেখার মতো। ক্রাশের মুখ থেকে ভাবী ডাক সে কল্পনাও করতে পারেনি। সেই সাথে ঢোক গিললো ভয়ে ।
ইমন বললো- আমার সাথে লাগতে আসলে এমনটাই হয়,,,প্রথম ভুলে শাস্তি টা ঠিক খাপে খাপ পড়ে নি।
দ্বিতীয় ভুলে ঠিক ঠাক কাজটা সেরে ফেললাম।
কি,,,সুমন বউ শায়েস্তা করতে জানো তো,,,
সুমন হেনাকে একহাতদিয়ে একদম নিজের কাছে চেপে নিয়ে বললো একদম।
হেনা কঠিন চোখে সুমনের দিকে তাকালো সুমন চোখ টিপ মেড়ে বললো এই তো বাবু বাসর সাজাচ্ছে। অমন করে আগেই তাকিয়ো না তাহলে কিন্তু আর নিজেকে আটকাতে পারবো না।
হেনা এক ঝটকা দিয়ে সুমনকে ছাড়িয়ে দিলো।
ইমন সহ সবাই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছিলো।
আর হেনা সাপের মতো ফুসছিলো।
ইমন সুমনের থেকে বিদায় নিয়ে তিনজন বন্ধু কে থাকতে বলে হেনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
এর পর আর কখনো যদি আমার বউকে ওলটা পালটা বুঝাতে এসেছো তাহলে ঠিক কি হবে ভাবতেও পারবেনা। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আশা করি এবার ধারনা হয়েছে। নিজের জীবন সামলাও এখন অন্যের জীবন নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে অন্যের জীবনে অশান্তি না সৃষ্টি করে নিজের জীবন সামলাও। বাবা,মা তো মানুষ করতে পারেনি এবার আমার বন্ধু যদি পারে বলেই বাঁকা হেসে ইমন চলে গেলো।
ঘরের লোক ই যদি ঠিক না থাকে বাইরের লোকের আর কি দোষ। হেনাকে যদি মুসকান সুযোগ না দিতো,বিশ্বাস না করতো তাহলে কখনোই হেনা সুযোগ নিতে পারতো না। নিজের স্বামীর থেকে বাইরের লোক কে বেশী গুরুত্ব দিলো। হয়তো আজ অনেক বেশী বলে ফেলেছি তবে এটার দরকার ছিলো। ওকে আমি সত্যি মন থেকে ক্ষমা করতে পারছিনা। এই দূরত্ব টার জন্য শুধুই তুমি দায়ী মুসকান শুধুই তুমি।
ইমন বাড়ি ফিরতেই মোজাম্মেল চৌধুরী বললো- ইমন আমাদের কালকেই গ্রামে যেতে হবে। বাবার কড়া আদেশ সবাইকে নিয়ে গ্রামে যেতে হবে। মতিশের ছেলের বিয়ে আমি বিয়ের আগের দিন যাবো তুমি সবাইকে নিয়ে কালকেই রওনা দিবে।
ইমন বাবাকে হ্যাঁ বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
ইরাবতী ছেলেকে খুব শাসন করলো এসে ইমন মা কে কাছে টেনে কপালে চুমু খেয়ে বললো সরি মা।
ইরাবতীর রাগ নিমিষেই ওধাও হয়ে গেলো।
ইমন বললো- মা বড্ড খিদে পেয়েছে খেতে দাও।
ইরাবতী খানিকটা অবাক হলো আজ মুসকানের কথা জিগ্যাস করছে না যে ।
ছেলেকে কিছু না বলে খাবাড় দিতে দিতে বললো- কাল তো আমাদের সবার টাংগাইল যেতে হবে। বেশকিছুদিন থাকতেও হবে।
ইমন বললো হুম বেশ তো অনেক বছর যাওয়া হয় না। এবার সবার ঘুরে আসা হয়ে যাবে।
ইমন ভাত খাচ্ছে ইরাবতী তাকিয়ে ছেলের খাওয়া দেখতে দেখতে বললো – মুসকানের জ্বর হয়েছে কি করে যাবে এই অবস্থায়।
ইমনের গলায় খাবাড় আটকে গেলো । পানি খেয়ে বললো তাহলে ওর যাওয়ার দরকার নেই আলেয়া চাচীকে রেখে যাবে বাবা তো আছেই।
ছেলের কথা শুনে ইরাবতী অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো খানিকটা রেগে বললো মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর। ইমন খাওয়া শেষ করে ওঠে বললো-
খানিকটা,,,
রাত তখন দুটো বাজে দীপান্বিতা জলপট্টি দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
ইমন আস্তে করে রুমে ঢুকে সোজা মুসকানের পাশে গিয়ে বসলো। বেশকিছু ক্ষন জলপট্রি দিয়ে মুসকানের দিকে খানিকটা ঝুঁকে ঠোঁটে আলতো করে স্পর্শ করলো। কাঁটা স্থান টায় আঙুল দিয়ে হাত বুলিয়ে ঠোঁটে গভীরভাবে একটা কিস করলো। মুসকান জ্বরের ঘোরে ঘুমের তালেই খানিকটা কেঁপে ওঠলো। ইমন বাঁকা হাসলো,,, আদরে আদরে বাদড় বানিয়ে ফেলেছি। এবার শায়েস্তা করার পালা,,, এবার দেখি কি করে তোমার স্বামীকে সামলাও।
দীপান্বিতা নড়াচড়া করতেই ইমন চট করে ওঠে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
সকাল দশটায় বাড়ির সবাই রওনা দিলো। শুধু এশা, দিপক, ইমন আর মুসকান বাদে। তারা বিকেলে রওনা দিবে।
চলবে….
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।