হৃদপিন্ড_২,পার্ট_১
জান্নাতুল নাঈমা
—- বর্তমানে একজন ভার্জিন মেয়ে কে বউ হিসেবে পাওয়া মানে ঐ আকাশের চাঁদটাই হাতে পাওয়া বুঝলি ইমন?
—- এই ভাবনা থেকেই বিয়ে করছিস না নাকি? তুই তো ভাই বেশ চালাক। অতি চালাকের গলায় দড়ি বুঝলি পাগলা! কাকি মা ফোন দিয়ে দিয়ে অস্থির বানিয়ে ফেললো। আর তুই আছিস মেয়েদের ভার্জিনিটি নিয়ে শালা আহাম্মক। সব মেয়ে কি এক হয় নাকি?
—- এই শালা! একদম শালা বলবিনা। তোর কাছে বোন দেওয়ার মতো আজাইরা শখ আমার নাই।
—- তোর ঐ দের ফুইটা বোনকে মনে হয় বিয়ে করার জন্য আমি লাফাচ্ছি।
—- বোন নিয়ে একটা কথাও বলবিনা৷ একদম খুন করে ফেলবো ইমন।
—- ওকে ওকে ভয় পাইছি। কিচ্ছু বলছিনা কিচ্ছু বলবোনা। কিন্তু এটা সত্যি কাকিমা তোকে নিয়ে চিন্তায় আছে এদিকে এক্সিডেন্ট করে বসলি। বিয়ে টিয়ে তো করতে হবে নাকি?
—- আমাকেওতো কাকি মা রোজ দুবার করে ফোন দেয়৷ তুই বিয়ে করছিস না কেনো? তোর পিছনে তো এমনিতেও হাজারটা মেয়ে লাইন দিয়ে আছে। ব্যারিষ্টার বাপের ব্যারিষ্টার পোলা দিনে চৌদ্দ টা করে বিয়ে করতেও তোর সমস্যা নাই৷ বড়লোকদের ব্যাপার স্যাপারই আলাদা।
—- এই জন্যেই তো বিয়ে করছিনা বস। ইন্দি,পিন্দি সব দৌড়ায় পিছে আমার তো এইসব ইন্দি,পিন্দি পছন্দ না ইয়ার। তাই ভাবছি তোকে আগে বিয়ে করাবো তাঁর পর তোর শালি টালি থাকলে সেখান থেকে একটা তুলে আনবো৷ কি বলিস মুরাদ রাজিতো তোর শালিকে আমাকে দিতে?
—- বিয়ে করার মুডই আসে না। আবার শালি! এদিকে দিহান আর সায়রীকে দেখ বিয়ে করে হানিমুন করে পুরোদমে সংসার করছে।
—- হাহাহা চিন্তা করিসনা তোর পা ঠিক হোক তারপর তোকেও বিয়ে করাবো সামনে সপ্তাহে তো আসছিই । কাকি মা কে দেখিনা তিনবছর হয়ে এলো। এবার গিয়ে কাকিমার হাতের মাংস, পোলাও কিন্তু মিস দিবো না।
—- আচ্ছা সব হবে তুই তো আগে আয়। বেশ ভালো হলো বল আমাদের জেলায় এসে পড়লি। নিজ বাড়ি থেকে অফিস করার শান্তিই আলাদা।
—- হুম মা ও খুব খুশি কিন্তু বাড়ি গেলেই তো প্যারা শুরু বিয়ে বিয়ে করে মাথা খেয়ে ফেলবে।
—- হাহাহা আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে অফিস থেকে এসেছিস এবার রেষ্ট নে। রাখি।
__________________________
আজ পনেরো দিন হয়ে এলো বাইক এক্সিডেন্ট করেছে মুরাদ। মুরাদ হাইস্কুলের শিক্ষক। দুবছর হয়েছে হাইস্কুলে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেছে। তাঁর বাবা ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার। তিনবছর আগে স্ট্রোক করে মারা যান তিনি৷ তাঁর মা মরিয়ম আক্তার গৃহিনী। ছোট বোন মুসকান এবার ক্লাস নাইনে পড়ছে। বড় চাচা রাজ্জাক সরকার সরকারি চাকরিজীবি ছিলেন গত বছরই রিটায়ার করেছেন। এছাড়াও বাড়িতে রয়েছে চাচি নিলুফা বেগম, চাচাতো দুই বোন রুমা,আর রিমি। রুমার বিয়ে হয়েছে একবছর রিমি এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।পুরো বাড়িতে একজনই সদস্য। দাদা,দাদি মারা গিয়েছে প্রায় দশ,বারো বছর আগে। সংসারের কর্তা এখন বড় চাচাই।
মুরাদ বিছানায় বসে পেপার পড়ছিলো। তখনি রুমে ঢুকলো দিহান। মুসকানকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই দিহান এসেছে। মুরাদ এক্সিডেন্ট করার পর থেকে দিহানই মুসকানকে স্কুল, প্রাইভেট দিয়ে আসে। কখনো কখনো বড় চাচাও দিয়ে আসে৷ বর্তমান দেশের যা পরিস্থিতি একা একা আদরের বোনকে স্কুল,প্রাইভেট পাঠানোর সাহস পায় না মুরাদ। তাছাড়া মুরাদের ফ্রেন্ড সারকেলের সকলেই মুসকানকে যথেষ্ট প্রটেক্ট করে। মুরাদের যখন চৌদ্দ বছর বয়স তখন মুসকানের জন্ম হয়। মুরাদের ফ্রেন্ড সার্কেলদের মধ্যে আর কারো ভাই,বোন এতো ছোট নেই। মুসকানই সবচেয়ে বাচ্চা ছিলো। যার কারনে সেই বাচ্চা কাল থেকেই সকলের থেকে অনেক বেশীই আদর, ভালোবাসা পায় সে। এছাড়াও তাঁর জন্য সবসময় থাকে আলাদা কেয়ার। এই আদর,ভালোবাসা, কেয়ার এর পরিমাণ তখন থেকে আরো বেড়ে যায় যখন মারা যায় মুরাদ এবং মুসকানের বাবা।
—- মুসু ওঠেছে? বললো মুরাদ।
দিহান চেয়ার টেনে মুরাদের সামনে বসতে বসতে বললো,
—- কাকি মা তুলে ব্রাশ করাচ্ছে।
—- সায়রী স্কুলে যাবে না আজ?
—- না ওর শরীরটা ভালো নেই। তাই ছুটি নিয়েছে। আমিও অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। মুসুকে স্কুলে দিয়ে বাসায় চলে যাবো। ছুটি হলে আবার দিয়ে যাবো নো টেনশন।
—- চিন্তা করিনা ভাই তোরা থাকতে আমার কোন চিন্তা নেই। স্কুল থেকে তিনমাস ছুটি পেয়েছি। পায়ের যে অবস্থা কোনদিন কি আদেও হাঁটতে পারবো?
—- ধূর পা তো ভাঙে নাই হাঁটতে পারবি না কেনো? মানুষ ভাঙা পা নিয়েও এতো চিন্তা করেনা তুই যেমন করছিস। কিছুই হবে না তিনমাসেই সেড়ে যাবে।
—- সাবধানে বাইক চালাবি মুসুকে ওঠার সময় বলবি ওড়না যেনো সামলে রাখে৷ আম্মাকে বল ওর চুল বেনি করে দিতে।
দিহান হেসে ফেললো। বললো,
—- এতো চিন্তা করলে তো আংকেলের মতো তুইই স্ট্রোক করবি চিন্তা করিস না মুসুকে সঙ্গে নিলে আমি বাইক খুব স্লো চালাই। সায়রীকে নিয়ে যখন চালাই তখন তো উড়াধুড়া টান দেই। বলেই দাঁত কেলিয়ে হাসলো।
তখনি রুমে এলো মুসকান বললো,
—- দাদাভাই গুড মর্নিং! দিহুভাই চলো চলো আই এম রেডি।
মুরাদ মুচকি হেসে বললো,
—- এদিকে আয় মুসু।
মুসকান মিষ্টি করে হেসে ছুটে গেলো। মুরাদের পাশে বসে ব্যান্ডেজ করা পায়ে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো,
—- দাদাভাই এখনো খুব ব্যাথা হয়?
মুরাদ ইশারায় কাছে যেতে বলতেই মুসকান একদম কাছে গিয়ে বসলো। মুরাদ কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে মাথার স্কার্ফ টা আরেকটু সামনে দিয়ে বললো,
—- একদম ব্যাথা করছেনা মুসু দেখি তোর চুল বেনুনি করেছিস কিনা।
মুসকান পিছন ঘুরে দেখালো চুল বেনি করে দুভাজ করে তাঁর মা ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে দিয়েছে। তা দেখে মুরাদ স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। বড় বড় কোমড় ছোঁয়া চুলগুলো ছেড়ে রাস্তাঘাটে চলাচল করলে বা বাইকে বসলে যে কোন এক্সিডেন্ট ঘটে যেতে পারে। তাই মুরাদ এসব বিষয়ে খুবই সচেতন৷
—- আচ্ছা যা দেরী হয়ে যাচ্ছে। দিহান সাবধানে চালাবি। মুসু শক্ত করে ধরে বসবি। ব্যাগ দিহানের কাছে দিবি। আর দিহান স্কুলে পৌঁছেই আমাকে ফোন করে দিবি। বললো মুরাদ।
মুসকান মিটি মিটি হাসতে লাগলো। দিহান অস্থির হয়ে বললো,
—- উফফ চলতো মুসু এই পাগলের সামনে থাকলে আমাদেরও পাগল করে দেবে। বলেই মুসকানের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো।
__________________________
বাড়ি ফিরেই ইমন সেই যে ঘুম দিয়েছে আর ওঠার নাম নেই। ইমনের মা ইরাবতী রান্না শেষ করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে ছেলের রুমে এসে বসে আছে। মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। একটা মাএ সম্বল তাঁর তিনটা বছর ধরে দূরে ছিলো। কতো কান্নাকাটি করে স্বামী আকরাম চৌধুরী কে কি পরিমাণ মেন্টালি টর্চার করে যে ছেলেকে নিজ জেলায় ট্রান্সফার করিয়েছে তা শুধু ইরাবতীই জানে। শেষ বারের মতো ইরাবতী ইমনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
—- বাবা দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেলো এবার তো ওঠ। আমি কিন্তু সকাল থেকে না খেয়ে আছি। বয়স হয়েছে এ বয়সে এসে কি না খেয়ে থাকা যায়। ছেলে হয়ে মায়ের কষ্ট বুঝবিনা তুই?
ইমন মায়ের দিক ফিরে পিটপিট করে তাকালো। মুচকি হাসি দিয়ে চট করে ওঠে বসে মা কে বুকে জরিয়ে ধরে বললো,
—- ও মা কেমন আছো তুমি? তুমি তো শুখিয়ে গেছো। বাবা কি তোমায় কম ভালোবাসে? আমি কি ব্যারিষ্টার সাহেবের জন্য নতুন কাঠগোড়া বানানোর ব্যবস্থা করবো?
ইরাবতী শব্দ করে হেসে ওঠলো। ইমনের বুকে হাত রেখে বললো,
—- স্বামী না ছেলের ভালোবাসা কম পড়েছে তাই শুখিয়ে যাচ্ছি দিন দিন।
ইমন ইরাবতীর মাথায় চুমু খেয়ে বললো,
—- ওকে ডিয়ার মাদার ছেলেও আপনাকে প্রচুর ভালোবাসবে।
ইরাবতী সুযোগ বুঝে বললো,
—- মায়ের সব আবদার ছেলে পূরণ করবে তো?
ইমন ইরাবতী কে ছেড়ে দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে টাইম দেখে নিয়ে ওঠে পড়লো। ব্যাস্ত পায়ে বাথরুম ঢুকতে ঢুকতে বললো,
—- নো মাদার বাংলাদেশী আপনার একটা আবদার আপাতত পূরণ করতে পারছিনা।
_____________________________
বিকেল পাঁচ টা বাজে। দিহানকে ফোন করতেই জানায় সন্ধ্যার পর মিট করবে। ইমনও বলে দেয় সোজা মুরাদের ওখানে চলে আসতে। কিছু ফল কিনে ইমন গাড়ি তে ওঠতে যাবে তখনি রাস্তার বাম সাইটে ভীড় দেখতে পেলো। ছোট পাটি বিছিয়ে তারওপর জায়নামাজ বিছিয়ে একজন বৃদ্ধ বসে আছে। সাদা পাঞ্জাবি পড়া,মাথায় সাদা টুপি,হাতে তজবি৷ সামনে কয়েকজন ছেলে,মেয়ে হাত দেখাচ্ছে আর লোকটা কি যেনো বলছে। তা শুনে কারো মুখে হাসির ঝলক দেখা যাচ্ছে তো কারো আবার মুখটা ভাড় দেখাচ্ছে। গাড়ির ভিতর ফলগুলো রেখে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেলো ইমন। একটি মেয়ে বৃদ্ধ লোকটার দিকে হাত বাড়িয়ে বলছে,’দেখুন তো আমার জীবন সঙ্গী কেমন হবে’?
বৃদ্ধ লোকটা কি সব বলছে মেয়েটা লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে ওঠে দাঁড়ালো। ইমনের মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে৷ এসবের কোন মানে হয়? পাঞ্জাবি পড়ে মাথায় টুপি দিয়ে জায়নামাজের ওপর বসে তজবি হাতে নিয়ে এসব ভন্ডামি না করলেই কি নয়? কার জীবন সঙ্গী কেমন হবে তা তো উপরওয়ালাই ভালো জানেন৷ একে আগ বাড়িয়ে পন্ডিতি করতে কে বলেছে? ইমন লোকটাকে ধমক দেওয়ার জন্য উদ্যত হতেই লোকটা বললো,
—- এসো এসো তুমিও নিশ্চয়ই জীবনসঙ্গীনীর খোঁজ করতে এসেছো এখানে। দাও দও বাম হাতটা বাড়িয়ে দাও।
ইমন ভ্রু কুঁচকালো। যতোই এসব লোক ভন্ড হোক সাধারণ মানুষ কৌতুহলের বশে এদের ঠিক বিশ্বাস করে নেয়। মানুষ তাঁদের নিজেদের ভবিষ্যত জানার জন্য বরাবরই গভীরভাবে আগ্রহী থাকে। একাকী নিজেকেই বার বার প্রশ্ন করে কি আছে আমার ভাগ্যে? সেখানে যখন লোকটা নিজ থেকে বলছে তাহলে হাত দেখাতে ক্ষতি কি? যদিও এসব বিশ্বাস করেনা তবুও অন্যমনস্ক হয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিলো ইমন।
লোকটা মিটি মিটি হাসতে হাসতে মাথা দুলিয়ে বললো,
—- মেয়েটির শরীরে তিনটে আকর্ষণীয় তিল থাকবে৷ যা তোমাকে গভীর থেকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করবে। প্রেমে তুমি পড়বে তাঁর প্রেমে পড়বে তুমি, গভীর প্রেম। যে প্রেমের শুরু থাকবে কিন্তু শেষ থাকবে না। সেই মেয়েই তোমার অর্ধাঙ্গিনী হবে যে মেয়ের শরীরের তিনটা তিল দেখা মাএ তোমার বুকের ভিতর তীরের মতো কিছু বিঁধবে।
ইমনের মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে। বেশভূষা দেখে তো পাক্কা আলেম মনে হয় অথচ প্রেমটেম আওড়াচ্ছে। কোথায় ছেলেমেয়েদের দ্বীনের জ্ঞান দিবে তা না ছিঃ। পাশ থেকে এক ছেলে বলে ওঠলো, ‘আমাকে একটা তাবিজ তাহলে দেন পাঁচশই দিব তবুও ঐ মেয়েকে আমি আমার বউ করতে চাই’ ইমন এবার শিওর হয়ে গেলো লোকটা আসলেই ভন্ড তাই দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লোকটাকে কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই আশে পাশের আরো অনেক লোকজন এসে ভীড় জমালো। ইমন বুঝলো সে একা লোকটাকে কিছু বলতে গেলে কাজ হবে না৷ বরং সকলে মিলে তাঁকেই ভুল প্রমাণিত করতে চাইবে। তারওপর লোকটা পুরো হুজুর সেজে বসে আছে এদের সামান্য তম কিছু বলা মানেই জনগনকে ক্ষেপিয়ে তোলা৷ ঝুঁকে বাঙালি বলে একটা কথা আছে এরা ঝুঁকেই কথা বলবে। কোন যুক্তি তে কাজ হবে না৷ তাই ফালতু সময় নষ্ট না করে চলে যাওয়াই ব্যাটার। যুগের পর যুগ চলে আসবে তবুও মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসবে না। আজো মানুষ কুসংস্কার থেকে বের হতে পারলোনা। ভেবেই এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভীড় থেকে বেরিয়ে এলো ইমন।
_________________________
মুসকান টিভি দেখছে। এমন সময় গেটে শব্দ হলো। কেউ এসেছে বড় চাচার ঘরের দিকে ওকি দিলো। রিমি বের হচ্ছে না দেখে রিমুট টা সোফার সাইটে রেখে ওড়না গায়ে জড়িয়ে মুসকানই গেলো গেট খুলতে।
গেট খুলে দিতেই দেখতে পেলো একটি ছেলেকে হাতে সাদা পেপারে মোড়ানো কিছু৷ ভ্রু কুঁচকে ছেলেটির মুখের দিকে তাকালো। কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চুলগুলো মৃদু বাতাসে ওড়ছে। একদম কালো শার্টে গায়ের রঙটা যেনো দ্বিগুন চওড়া হয়ে গেছে। বডিফিটনেস দেখে অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা মুসকানের। সামনের মানুষ টাকে তিনবছর পর দেখছে সে । বুকের ভিতরটা হঠাৎই কেমন কেঁপে ওঠলো তাঁর। মনে পড়ে গেলো কিছু ঝাপসা স্মৃতি। যে স্মৃতি তে রয়েছে পাহাড় সমান অভিমান। তিনবছরে তাঁর ধারনার থেকেও পালটে গেছে লোকটা। এতো হ্যান্ডসাম একটা মানুষ কি করে হতে পারে? এতো সৌন্দর্য কি একটা ছেলেকে মানায়? কে বলেছিলো এতো সুন্দর হতে? দাদাভাই আর দিহুভাইয়ের মতো হলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো? অভিমানী প্রশ্নগুলো মনেই রেখে দিলো সে। সকল খুশি,আনন্দ ধামা চাপা দিয়ে মুখ টা মলিন করে বললো,
—- নানাভাই! কেমন আছো?
হকচকিয়ে গেলো ইমন৷ সেই সাথে অপমানবোধও হলো খুব। সে কি সত্যি বুড়ো হয়ে গেলো নাকি? আগের বিষয় আলাদা ছিলো এখন তো বড় হয়েছে মুসকান। এখন নানাভাই বলতে হবে কেনো? আমি কি বুড়ো হয়ে গেছি নাকি? ধূর বিরক্ত নিয়ে বললো,
—- খুব ভালোই ছিলাম। দিলিতো ভালো থাকার রাস্তার এক বোতল মদ ঢেলে? সড় সামনে থেকে মুচি তো মুচিই রয়ে গেলি আর বড় হলিনা। বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেলো ইমন৷
মুসকান তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে গেট লাগিয়ে দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে গেলো রুমের দিকে। ইমন সোফায় বসে তাঁর লম্বা লম্বা পা গুলো মেলে দিলো মেঝেতে। শার্টের কলার ঘাড়ের দিক উচিয়ে দিয়ে বললো,
—- মুসু এক গ্লাস পানি দে তো যা গরম পড়েছে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।
মুসকান আড় চোখে এক পলক চেয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলো। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো রান্নাঘরের দিকে। গিয়ে মা কে বললো,
—- আম্মু নানাভাই এসেছে। এক গ্লাস পানি চায়।
মরিয়ম আক্তার খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন,
—- যা,যা পানি দে আমি হাতটা ধুয়ে আসি।
মুসকান পানি নিয়ে ইমনের সামনে ধরতেই ইমন চোখ তুলে তাকালো। তিনবছর পর আজ আবারো দেখা তাঁর মুসকানের সাথে। গেটে থাকা অবস্থায় ভালো করে না দেখলেও এবার ঠিক নজর পড়েছে। কিন্তু এমন কিছু দেখবে তা মোটেও আশা করেনি ইমন। যা দেখে বসা থেকে সোজা দাঁড়িয়ে পড়েছে সে। ভূত দেখার মতো একধ্যানে চেয়ে আছে মুসকানের দিকে। তাঁর এমন চাহনী দেখে মুসকান ভয়ে এক ঢোক গিলে দু পা পিছিয়ে গেলো। ইমন আশ্চর্যান্বিত হয়েই চেয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ইমন খেয়াল করলো তাঁর দুহাত কাঁপছে সাথে শুধু হাত না হাঁটুও কাঁপছে। এক ঢোক গিলতে নিয়ে খেয়াল করলো তাঁর হার্টবিটও কেমন যেনো করছে। এতোক্ষণ পানি পিপাসা গলায় থাকলেও সেই পিপাসা এখন গিয়ে ঠেকলো বুকে। গলার সাথে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই বুকটাও যেনো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
চলবে…