মেঘলা আকাশের প্রেমজুরি,পর্ব-০২ (দ্বিতীয়)

মেঘলা আকাশের প্রেমজুরি,পর্ব-০২ (দ্বিতীয়)
লেখনীঃ Mona Hossain

কুয়াশার বুক চিরে সোনালী রোদ যখন মেঘলার গায়ে এসে পড়েছে তখন সকাল নয়টার কাছাকাছি।
কুয়াশা মোড়া সকালে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকার যে মজা সেটা মেঘলার মত ছন্নছাড়া কোনো মেয়ের পক্ষে বুঝা সম্ভব না সে বুঝতে চায়ও না। অন্যদিন হলে এতক্ষনে বাইরে চলে যেত কিন্তু আজ মনটা বেশ খারাপ তাই আজ আর বাইরে যাওয়া হচ্ছে না ফলস্বরুপ একরকম বাধ্য হয়েই কম্বলের নিচ থেকে শীতের সকাল উপভোগ করছে মেঘলা। জানালার ফাঁকে মিষ্টি রোদ মেঘলার গায়ে এসে পড়ছে, গোটা চারেক পাখি জোড়ায় এসে জানলার পাশের শেফালী গাছটায় বসেছে। তারা নিজের মনে কিচিরমিচির করে চলেছে। মেঘলার এই পরিবেশ টা বেশ উপভোগ্যই লাগছে। অনেক দিন এমন পরিবেশের সাথে সাক্ষাৎ হয় না তার। নানা নানু মারা যাওয়ার পর তেমন আর গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয়নি ব্যস্ত নগরীর স্কুল কোচিং সব কিছুর চাপে বিলীন হয়ে গিয়েছে তার শৈশবের কিছু মিষ্টি স্মৃতির।
তবে তার এখনো মনে আছে এমনি কোন এক শীতের সকালে মেঘলার জন্য শেফালী কুড়াতে যেত আকাশ।
সাদা লালের এই ফুলটা বড্ড প্রিয় ছিল মেঘলার। তাই যখন শীতের ছুটিতে আকাশ রা সবাই মিলে গ্রামে যেত তখন প্রায় প্রতিদিন সকালেই নিয়ম করে মেঘলাকে মুঠোভর্তি ফুল এনে দিত আকাশ সাথে গুড়ের রসে ডুবানো একটা জিলেপি ।নদীর পাড়ের বড় শেফালী গাছটার তলায় সকালের হাট বসত তখন। গ্রামের রমেশ চাচা গরম গরম জিলেপি বানাতেন মেঘলা আকাশকে অনেক বলেছে নিয়ে যেতে কিন্তু ছোট বেলা থেকেই আকাশ সেন্সিটিভ মাইন্ডের মেঘলাকে কারো সাথে মিশতে দিতে চাইত না সকালে হাটে ভিড় থাকত বলে কখনো নিয়ে যায় নি। মাঝে মাঝে বিকেলের হাটে নিয়ে যেত আর চুড়ি কিনে দিত। কতই না ভাল ছিল সেই সময় গুলো মেঘলা তখন কেবল ক্লাস ৩ তে আর আকাশ ৮ এ পড়ত। মেঘলা মনের অজান্তে নিজের শৈশবের স্মৃতিচারনে ডুব দিল পরক্ষনেই মনে পড়ল আকাশ এখন আর মেঘলাকে ততটা কেয়ার করে না সবসময় মেঘলাকে এরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়।

– আগেই ত ভাল ছিল ভাইয়া কেন বড় হয়ে গেল
ভাবতে ভাবতেই নিজের অজান্তে চোখ ভরে এল মেঘলার।

মেঘলার ভাবনায় ছেদ পড়ল নিচের চেঁচামেচি শুনে।মেঘলার কন্ঠটা চিনতে ভুল হয় নি এটা আকাশের গলা নিচে ওই চেঁচামেচি করছে। আকাশ যতবার হোস্টেলে আসে হোস্টেলের অনিয়মের জন্য সবাইকে কথা শুনায় তখন সে ভুলেই যায় এটা একটা মেয়েদের হোস্টেল ছেলেদের এখানে আসা বারণ। রাজনীতি করায় এলাকার মোটামুটি সবাই ওকে চিনে তাই কেউ কিছু বলে না যাকে বলে ক্ষমতার অপব্যবহার। আকাশ চেঁচাতে চেঁচাতে উপড়ে আসছে,
এখনী আমার ঘরে আসবে বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজার লক করে দিয়ে কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিলাম আজ পৃথিবী এস্পাড় থেকে ওস্পাড় হয়ে গেলেও দরজা খুলব না। এই আকাশের বাচ্চা আমাকে পেয়েছে টা কি সারাদিন জ্বালিয়ে মারে। একেবারে অসহ্যকর একটা প্রানী।

-আজ আমি কিছুতেই ওর মুখ দেখব না বলে বিছানায় গাঁ ছুঁয়াতে না ছুঁয়াতেই দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পেলাম। প্রথমে ঠকঠক তারপর ধুমধাম…দরজার ওপড় পাশ থেকে আকাশ চেঁচাচ্ছে,

-মেঘলা দরজা খোল..

-এই ছেলেটা দিন দিন সব সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। ও কি আমাকে নিজের কেনা গোলাম মনে করে নাকি?যখন যা ইচ্ছে করতে চলে আসে শান্তিতে একটু ঘুমাতেও দেয় না এটা যে মেয়েদের হোস্টেল ও কি জানে না? আর আমার বাসার সবাই কেন যে ওর পাগালামি মেনে নেয় বুঝি না। মামাত ভাই বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি?
দরজা না খুলায় কয়েক সেকেন্ড পর আবারো চেঁচিয়ে উঠল ভাইয়া, এবার শুধু চেঁচিয়ে উঠে নি রীতিমতো বকা শুরু করে দিয়েছে।

-এই ফাঁকিবাজ, মুর্খ, গর্দব মহিলা দরজা খোল বলছি,তোকে কি এখানে ঘুমানোর জন্য পাঠানো হয়েছে নাকি?

-আমাকে কোন এংগেল থেকে ওর মহিলা মনে হল বুঝলাম না যাইহোক সব শুনেও না শুনার অভিনয় টা আরও কিছুক্ষন চালিয়ে যেতে হবে তাই মহিলা বলার কয়ফত চাওয়া যাবে না বুঝতে পেরে কথাটাকে পাত্তা না দিয়ে শুয়ে মনের মধ্যে এই আশার সঞ্চার করলাম যে
কিছুক্ষন চেঁচামেচি করে চলে যাবে।
যে পরিমান বেয়াদব ছেলে আমার আশা কতটা ঠিকবে জানি না তবুও কথায় আছে মানুষ বাঁচে আশায়।

-আমি দরজা খুলছি না দেখে ভাইয়া হোস্টেল সুপারকে বলে উঠল,

– আপনাদের মাস শেষ মোটা অংকের টাকাটা দেয়া হয় কিসের জন্য মুখ দেখার জন্য? ৯ টা বাজে এখনো ঘুম থেকে উঠে নি তো সকালের নাস্তা খাবে কখন? এভাবে না খেলে ত প্রতিবন্ধী কোটায় ভর্তি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

হোস্টেল সুপার শান্ত গলায় জবাব দিল,
– অস্থির হবেন না স্যার মেঘলা এত বেলা পর্যন্ত ঘুমায় না আর আপনি যা যা খেতে বলেছিলেন সবি ঠিক টাইমে দেয়া হয়।

– আপনারা যে কত দায়িত্ব পালন করেন তাত দেখতেই পারছি মনিকে বলে ওকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।সে যাইহোক এখন ওকে ডাকুন দরজা খুলতে বলুন।দেখি বেঁচে আছে নাকি সুসাইড করে বসে আছে?

-আজব ওর মাথায় এমন অদ্ভুত চিন্তা আসছে কি করে?আমি সুসাইড কেন করব দরকার পড়লে তোর মত হনুমানকে মেরে জেলে যাব তাও তো নিজের ক্ষতি করব না হু হু..

হোস্টেল সুপার কয়েকবার ডাকার পরেও সাড়া দিলাম না কথায় আছে না ঘুমের মানুষ কে জাগানো যায় কিছু জেগে থাকা মানুষকে জাগানো সম্ভব না।আজ সেটাই হল আর আমার জয় হল।

ভাইয়া বেশ বিরক্ত হয়ে কয়েকবার আমাকে ডাকল,
-কিরে মেঘলা দরজা খুলছিস না কেন? এতবেলা পর্যন্ত ঘুমাতে হয়?

– কপালে দুর্ভোগ আছে বুঝতে পারলাম কিন্তু আজ কিছুতেই আমি প্রতিজ্ঞা ভাংব না তাই গায়ের কম্বল টা মাথা পর্যন্ত টেনে দিয়ে ঘাপটি মেরে শুয়ে পড়লাম।

ভাইয়া কিছুক্ষন চেঁচামেচি করে শান্ত হয়ে গেল আনুমানিক ১০ মিনিটের মত কেটে গিয়েছে ভাইয়ার গলা শুনতে পাই নি তারমানে হতচ্চারা বিদায় হয়েছে মনে এক প্রকার প্রশান্তি ভর করল। অবশেষে ত্যাড়া ছেলেকে আমি হারাতে পারলাম মনের মাঝে কেমন যেন বিজয়ী বিজয়ী একটা ফিলিং চলে আসল। হাফ ছেড়ে আস্তে করে কম্বল টা সরিয়ে পিটপিট করে তাকালাম কিন্তু সাথে সাথে দ্রুত হাতে কম্বল টা আবার টেনে দিলাম,

-আমি কি ঠিক দেখলাম আমার সামনের চেয়ারে ভাইয়া বসে আছে না? কিন্তু এই হনুমান ঘরের ভিতরে ঢুকল কি করে? আমি তো দরজা লক করেছিলাম তাহলে?
ওকি সত্যি আছে নাকি আমার মনের ভুল..?? ঘরে যদি আসবেই তাহলে এতক্ষন চুল থাকবে কেন?
ভয়ে ভয়ে কম্বল টা একটুখানি ফাঁক করে পিটপিট করে তাকালাম,

-না মনের ভুল ত নয়,ভাইয়া সত্যিই বেডের সাইডে চেয়ারে বসে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে,
অফ হোয়াইট শার্টের সাথে কাল লেদার ব্লেজার পড়েছে সে। চোখের উপড় পড়ে থাকা এলোমেলো সিল্কি চুল গুলো ওর সূন্দর্য্য যেন হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ওকে দেখে মনের মাঝে লুকিয়ে রাখা অতৃপ্ত ইচ্ছা যেন চারা দিয়ে উঠল আমার এই এক দোষ ভাইয়াকে দেখলে কেমন যেন নেশায় ডুবে যাই।
ফর্সা চেহারায় ঘন পাঁপড়িতে ঢাকা কাজল কাল চোখ গুলো যেন আমাকে মাদকের মত আকর্ষন করে নিজেকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারি না ইচ্ছে করে আমৃত্যু ওর দিকে তাকিয়ে থাকি।
কি দরকার ছিল এত মিষ্টি হওয়ার…?এতটা সুন্দর না হলেও পারত আমাকে পাগল করার জন্যই হয়ত এত কিউট হয়েছে…

ভাইয়া হয়ত আমার অবস্থা আন্দাজ করতে পেরেছে তাই কাশির ভান করে আমার ঘোর কাটিয়ে দিল সাথে সাথে কল্পবিলাস থেকে বাস্তবে ফিরে আসলাম আমি।বাস্তবে ফিরতেই মনে পড়ল আকাশ নামক প্রানীটি কতটা অসহ্যকর তাই কম্বল সরিয়ে বিরক্ত সুরে জিজ্ঞাস করলাম,

– কি হয়েছে কি শুনি? সকাল হতে না হতেই সাইক্লোন এর মত হাজির হয়েছিস কেন?

ভাইয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সহসা উত্তর দিল,
– দেখতে আসলাম বেঁচে আছিস নাকি মরে গেছিস?

– মরে গেলে খুশি হতি নাকি.??

– খুশি হতাম কিনা জানি না তবে ব্যাপারটা মন্দ হত না।

ভাইয়ার বিরক্তকর সংলাপ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য হোস্টেল সুপারেকে ডেকে বললাম,
– এটা যে একটা গার্লস হোস্টেল সেটা কি আপনারা ভুলে যান? এমন একটা কম বয়সী ছেলেকে ঢুকতে দেন কি করে? তাও আমার বেড রুমে আমার পারমিশন ছাড়া? আমি ত দরজা লক করে রেখেছিলাম তাহলে ঢুকল কি করে?

আমার কথাটা শুনে আকাশ নামক অদ্ভুত প্রানীটি ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠল এক্সিউজ মি ম্যাডাম বড় ভাই শব্দটার মানে বুঝেন?আমি এখানে প্রেম করতে আসি নি।আপনি কখন কি করছেন তার খোঁজ রাখা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কারন আপনার মা অলিখিত নীতির মতো আপনাকে অলিখিতভাবে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন।
এখানে আমি আপনার লিগ্যাল গার্জিয়ান বুঝেছেন?
আপনাকে ত বিশ্বাস নেই হয়ত দরজা বন্ধ করে রাগে হাতের শিরা কেটে পড়ে থাকবেন অথবা তেলাপোকার ভয়ে হার্টফেইল করে মরে যাবেন।আবার রুমে বসে প্রেমালাপ করা বা সিগারেটও খেতে পারেন আপনাকে কোনো বিশ্বাস নেই। তাই ডুবলিকেট চাবি দিয়ে ঘরে ঢুকালাম হোস্টেলে প্র‍তি রুমেরেই ডুবলিকেট চাবি রয়েছে কারন মেয়ারা একটু মেন্টাল টাইপের বুঝে কম করে বেশি কখন কাকে ফাঁসিয়ে দিবে বলা ত যায় না তাই রাখা হয়।আর বাকি রইল অন্য মেয়েদের কথা তোকে যেমন ছোট বোনের চোখে দেখি তেমনি এখানকার সবাই আমার ছোট বোন বুঝেছিস?

– নিকুচি করেছে ছোট বোনের।
ইচ্ছে করছে চেয়ার থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে নিজের পৈশাচিক আত্মাটাকে শান্তি দেই কিন্তু এমন সুঠাম দেহের অধিকারী ব্যাক্তিকে আমার মত পুচকে মেয়ে ফেলা দূর এক চুল নড়াতেও পারবে না তারউপড় আবার মারামারিতে দক্ষ ছেলে।তাই মনের সুপ্ত ইচ্ছাটাকে কবর দিয়ে দিলাম।

– বিড়বিড় করা বন্ধ করে বল এতক্ষন ডাকার পরেও দরজা খুললি না কেন?

-আমার কথা ছাড় তুই এখানে এসেছিস কেন সেটা বল?শোন একদম ন্যাকামি করবি না যত যাই কর তোর সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই ইটস ফাইনাল।

– আমি আর ন্যাকামি কেমনে কি…?? আমি কোন দুঃখে ন্যাকামি করতে যাব শুনি?

– তুই রাতে আমাকে ব্লক করেছিস সেজন্যই তো এসেছিস তাই না? এখন হ্যান ত্যান টেবিল ফ্যান বুঝিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে ফেলবি তাই তো।

– আজব মেয়ে বটে তুই একটা,
ব্লক করার কারন ছিল তাই করে দিয়েছে তার জন্য তোর কাছে কয়ফত কেন দিব?আমার একাউন্ট আমি কাকে ব্লক করব তার অনুমতি নিশ্চুই কোন মাথা মোটা মেয়ের কাছ থেকে নিব না তাই না?নেহাৎ আমি তোর গার্জিয়ান তাই তোর নাম্বার টা ব্লেক লিস্টে রাখতে পারি না তানাহলে সেটাও রেখে দিতাম।

-রাখার বাকি রেখেছিস নাকি?

– তারমানে বলতে চাচ্ছিস আমি দায়িত্বহীন? মোটেই না তোর নাম্বার আমি ব্লক করি নি রাতে যদি ফোন দিয়ে থাকিস তাহলে কল ফরওয়ার্ড করা ছিল মেজাজ খারাপ ছিল তাই ফরওয়ার্ড করে রেখেছিলাম শুধু ফেসবুকেই ব্লক করেছি।

– এই চুপ থাকতো তোর মত হনুমানের সাথে কে এড থাকতে চায়। যাত এখান থেকে যা। সকাল সকাল মাথাটা খাস না, বিদায় হ

– সেটাই এখানে বেশিক্ষন থাকার ইচ্ছে আমারো নেই চারদিকে কেমন মেয়েলি মেয়েলি ভাব দেখলেই গা গুলিয়ে বমি পায় তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নে ছোট মা বলেছে তোকে নিয়ে যেতে।

– আমি যাব না।

– তোর মতামত কে জানতে চেয়েছে…??
২ মিনিট টাইম দিলাম নাইট ড্রেস চেঞ্জ করবি …

– আমি যাব না শুনতে পাস নি?

আমার বলতে দেড়ি হলেও আমার হাত ধরতে ভাইয়ার দেড়ি হল না অসম্ভব জোরে চেপে ধরেছে হাতটা, পারলে এখনী ভেঙে দেয়। টানতে টানতে নিয়ে নিচে নামছে হাত মুচড়া মুচড়িতে হাত টা পুরো লাল হয়ে গিয়েছে তবুও ওর কাছ থেকে ছাড়াতে পারলাম না। নিচে এসে রিসিপশনে সাইন করে দিয়ে বলল,
– ফুফিমনি তো ফোন করেছিল তাই না বলে দিয়েছে নিশ্চুই? নিয়ে যাচ্ছি রাতে দিয়ে যাব।রিপশনের ম্যাডাম অনুমতি দিতেই ভাইয়া আমাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।

ওদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে যেন আমি মানুষ নই কোন পন্য যার নিজের কোন মতামত নেই তাকে নিয়ে যা খুশি করা যায়।নিজেকে মানুষ প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে যতটা সম্ভব চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,
– আমার কি কোনো স্বাধীনতা নেই? তোদের যখন যা ইচ্ছে তাই করবি?

আমার আকস্মিক চিৎকারে ভাইয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হলো তবে তার আচারনের কোনো পরিবর্তন ঘটল না হাতটা একটু হালাকা করে দিয়ে শান্ত গলায় বলল,
– নেই কে বলল? আছে তো তবে বিয়ের পর, বিয়ের পর যা মন চায় তাই করিস এখন আপাতত এভাবেই চলতে হবে।বলেই রিক্সা ডাকল ভাইয়া।
রিক্সা কাছে আসতেই আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল উঠ।

যাওয়া আটকানোর কোনো উপায় নেই জানি তাই বাড়াবাড়ি করলাম না তবে কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,
– রিক্সায় যাব? বাইক আনিস নি?

নির্বিকার ঝটপট উত্তর দিয়ে দিল,
-আমার বাইকে মেয়েদের চড়া নিষেধ।বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি উঠ।

কথা বাড়িয়ে লাভ হবে না বুঝতে পেরে রিক্সায় উঠে বসলাম ভাবলাম ভাইয়া হয়ত বাইকে যাবে আর সেই সুযোগে আমি পালাব কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাইয়া টুপ করে আমার পাশে বসে পড়ল।
পৃথীবির অষ্টম আশ্চর্য বোধহয় রিক্সায় বসা ভাইয়াই হতে চলেছে কেননা এর আগে কেউ কখনো তাকে রিক্সায় চড়তে দেখে নি। ছোট থেকেই দেখছি নিজের সাইকেল তারপর বড় হয়ে নিজের বাইক ছাড়া এক পাও ফেলে না সে। নিজের বাইকের অসুখ করলে বন্ধুর টা হলেও ধার নিয়ে আসে রিক্সায় চড়তে নাকি তার অসহ্য লাগে তার মতে এর চেয়ে হেঁটে যাওয়া শ্রেয়। কত করে বলেছি একটা দিন আমাকে নিয়ে রিক্সায় ঘুরতে কিন্তু কোনদিন রাজি হয় নি। সেই ব্যাক্তি আজ হটাৎ রিক্সায় ব্যাপারটা ঠিক হজম হল না।
আমি হা করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।

ভাইয়া নিজের ফোন বের করতে করতে বলল,
– অটিস্টিকের মত আচারন বন্ধ কর তানাহলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে চলে যাব কথাটা বলে ফোন টিপতে ব্যস্ত হয়ে গেল ভাইয়া আর আমি নামক অসিত্বটাকে ভুলে গেল।আমি যে চার হাতপা বিদ্যমান একজন মানুষ তার পাশে বসে আছি সেটা মুহুর্তের মধ্যেই ভুলে সে তার ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল হয়ত নন্দনীর সাথে এসমেস করছে।

মনভার করে চুপচাপ বসে আছি কিন্তু উপড়ওয়ালার বোধয় সেটা পছন্দ হয় নি তাই হঠাৎ লক্ষ্য করলাম সবাই আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলাম না তবে বেশ অস্বস্তিতে ভুগছি কিন্তু কিছু বলতে পারছি না।ইচ্ছে করছে নেমে গিয়ে সব কটার মাথা ফাটিয়ে দেই। মনে মনে সবার গোষ্ঠী উদ্ধার করছিলাম হঠাৎতেই ভাইয়া উঠল,

– সমস্যা যারা তাকিয়ে আছে তাদের নয় বরং যে নাইট ড্রেসে খালি পায়ে বাইরে বেরিয়েছে তার।কোন সুস্থ মানুষ এ অবস্থায় বাইরে আসতে পারে ব্যাপারটা অনেকেরেই অজানা ।

– ভাইয়া ত মনে হয় কথাটা আমাকেই বলল কিন্তু ও তো এখনো ফোনের দিকেই তাকিয়ে আছে তাহলে কে কার দিকে তাকিয়ে আছে কি করে বুঝল?আমি জিজ্ঞাস করার আগেই উত্তর পেলাম

– যেকোনো এক বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে বসে থাকলে এতদিনে রাস্তায় মরে পড়ে থাকতাম নিজের সেইফটির জন্য কারন ছাড়াই চারপাশের খেয়াল রাখাটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে….

-আমি কিছু বলার আগেই ও কিভাবে সব বুঝে যায় আর যা বুঝাতে চাই তা বলেও কেন বুঝাতে পারি না ব্যাপারটা বোদগম্য হল না।

রিক্সা চলছে এটা অটো চালিত রিক্সা না তাই একটু সময় লাগছে বাইরে বেশ ঠান্ডা পড়েছে হিমময় বাতাস বইছে, একে ত সকাল তার উপড় শুধু নাইট ড্রেস পড়ে বাইরে চলে এসেছি পায়ে জুতাও নেই শৈত্য প্রবাহের প্রকোপে আমার প্রায় জমে যাওয়ার মত অবস্থা।ছোট থেকেই আমার ঠান্ডার সমস্যা আছে তাই অল্প হাওয়াতেও বেশ কষ্ট হচ্ছে। ভাইয়ার গায়ে ব্লেজার আছে কিন্তু এই অসহ্যকর ব্যাক্তিটির কাছে আমি সাহায্য চাইব না, কিছুতেই না তাতে যদি মরে যেতে হয় যাব কোন আফসোস নেই, কিন্তু হাত পা আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে, আমার নিঃষ্পাপ মনের নিষেধ উপেক্ষা করে কবুতরের বাচ্চার ন্যায় কাঁপা-কাঁপি শুরু করে দিয়েছে।কিছুতেই শান্ত করতে পারছি না।

কিছুক্ষন পর ভাইয়া ফোন টা পকেটে রেখে বলে উঠল,
-মেয়ে মানেই আলগা প্যারা…এসব আমার ঘাড়েই কেন যে এসে পড়ে বুঝিনা।
এই হাঁফানি রোগীর মত এমন কাঁপাকাঁপি করছিস কেন? তখন বলেছিলাম ড্রেস চেঞ্জ করে রেডি হয়ে আয় ভাল লাগে নি এখন এমন করছিস কেন?যতসব আজাইরা ঝামেলা।মামা সাইড করে থামুন তো..

রিক্সা থামতেই ভাইয়া আমাকে বলল,
-এই নাম রিক্সা থেকে..

এই ঠান্ডায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় যেতে পারলে বাঁচি তা না আমাকে নামিয়ে দিচ্ছে? তারমানে কি আমাকে রেখে চলে যাবে…??ভাইয়া আমার সাথে এমন টা করতে পারছে ভাবতেই পারছি না কিন্তু আমার ত আর কিছু করার নেই নেমে দাঁড়ালাম রাস্তার পাশের ঘাসের উপড় জমে থাকা শিশরবিন্দুতে পা পড়তেই গায়ে কাঁটা দিল।
ছল ছল চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।

-ভ ভ ভাইয়া তুই আমায় রেখে চলে যাবি…??

ভাইয়া রিক্সা থেকে নামতে নামতে জবাব দিল সেই উপায় কি আছে? ছোট মার আদেশ তোকে বাসায় নিয়ে যেতে হবে তানাহলে তোর মত মেয়ের জন্য এত সকালে ঘুম থেকে উঠি? কথাগুলো বলেই আমার ব্যাথায় লাল হয়ে যাওয়া হাতটায় আবারো চেপে ধরল ভাইয়া।

-ব্যাথা পাচ্ছি ভীষন ব্যাথা,হাতে বুকের বা পাশে ২ জায়গাতেই একদিনেই ভাইয়া কেমন বদলে গিয়েছে কিন্তু বললে আরও আঘাত করবে তাই চুপচাপ ওর সাথে সাথে চলছি। হাতের জবরদস্ত ব্যাথায় চোখ দিয়ে টুপটুপ পানি পড়ছে আমার এক হাত ভাইয়ার হাতে বন্দি থাকায় অন্যহাতে চোখের পানি মুছতে মুছতে ভাইয়ার সাথে তাল মিলাচ্ছি ভাইয়া একবারো পিছনে ফিরছে না।

যেতে যেতে ভাইয়া একটা টং দোকানের সামনে থামল,দোকানের পাশেই একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা শীতের হরেক রকমের পিঠা বানাচ্ছে ভাইয়া দোকানের সামনে থেকেই দৃঢ় কন্ঠে বলব,
-চাচী মিষ্টি করে একটা ভাপা পিঠে দিন।

-আমি যে এই মুহুর্তে খাব না এটা বুঝার জন্য মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম।

ভাইয়া টং দোকান থেকে মাটির ভাড়ে চা নিয়ে ঠোঁট ভেজাল। দুধলাল রংয়ের চায়ের উপড়ে গাঢ় দুধের সর আহা দেখেই খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু চা ও এক কাপ নিয়েছে আমাকে দেয় নি।
আমাকে যখন দিবেই না নিয়ে আসার কি দরকার ছিল বুঝতে পারছি না আমাকে কষ্ট দিয়ে কি মজা পায় ভাইয়া? গাল ফুলাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু এখানে অভিমানের দীর্ঘশ্বাস ফেললে প্রতিধ্বনিগুলো বরংবার আমার কাছেই ফিরে আসবে তাই রাগ দেখানোর বৃথা চেষ্টা না করে একটানে ভাইয়ার হাতের ভাড়টা হাতে নিয়ে চুমুক বসিয়ে দিলাম।

ভাইয়া কিছুটা অবাক হলেও কিছু বলল না।আমার চা খাওয়ার মাঝেই চাচী পিঠা দিলেন ভাইয়া পিঠা নিয়ে ফুঁ দিতে দিতে বলল,
-জানিস চাচা চাচী প্রেম করে বিয়ে করেছিল দেখ তাদের কত ভালবাসা সারাদিন একসাথেই থাকে গত ৭ বছর ধরে তারা এখানে কাজ করে। কখনো ঝগড়া করে, অভিমান করে আবার ভালওবাসে কখনো চাচী চাচাকে পিঠা খাওয়ায় কখনো চাচা চাচীকে চা… কত সুন্দর বন্ডিং তাই না? আমারও যদি এমন একজন থাকত যে আমাকে আগাগোড়া বুঝবে…

-হু হু আছে না ট্যালেন্টেড মেয়ে (ফিসফিসিয়ে)

– কিছু বললি..?

– না তো

– চা খাওয়া শেষ হয়েছে…

– না এটা বেশি গরম.

ভাইয়া অযথাই নিজের মুখে, তার বিখ্যাত হৃদস্পন্দন বন্ধকারী হাসি ফুটিয়ে আমার কাছে এসে চায়ের ভাড় টা নিজের হাতে নিয়ে আমার হাতে পিঠেটা ধরিয়ে বলল,
খা ততক্ষনে ঠান্ডা হয়ে যাবে।

অবাক হলাম ভাইয়া ফুঁ দিয়ে চা ঠান্ডার চেষ্টা চালাচ্ছে। আজব প্রকৃতির মানুষ এই ভাইয়া, কখন কি করে বুঝি না। কে বলবে যে রাত থেকে এত আঘাত করেছে সেই ভাইয়ায় এখন আমাকে খাওয়ানোর জন্য খাবার ঠান্ডা করছে।ওর উপড় রাগ থাকলেও খেতে ইচ্ছে করছে তাই কথা না বাড়িয়ে টুক করে খেয়েও নিলাম। পিঠের পর চা টাও শেষ করলাম।

ভাইয়া দাম দিয়ে আসবে আমাকে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে আমি রিক্সায় এসে বসেছি কিছুক্ষন পর ভাইয়াও আসল এসে নিজের জ্যাকেট টা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

-গরম লাগছে একটু রাখ তো..

কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম
– এত ঠান্ডায় তোর গরম লাগছে?

– আমি ত আর তোর মত হাঁফানী রোগী নই তাছাড়া হেঁটে এসেছি গরম লাগাটাই স্বাভাবিক।

আর কথা না বারিয়ে জ্যাকেট টা ভাঁজ করে ২ পায়ের উপড় রাখলাম,

ভাইয়া শান্ত গলায় বলে উঠল,
-পকেটে ফোন আর ওয়ালেট আছে এভাবে রাখলে পড়ে যাবে গায়ে জড়িয়ে নে…

-ওকি আমার জন্যই জ্যাকেট টা দিল নাকি আমার বুঝার ভুল? বুঝতে গিয়েও বুঝলাম না।

– ধমক দেয়ার আগে তুই কি কিছু করতে পারিস না ফোন টা যদি পড়ে না গুণে গুণে ৩৩ হাজার টাকা উশুল করে নিব সাথে থাপ্পড় ফ্রি..

রাগ রাগ ভাব নিয়ে জ্যাকেট টা গায়ে দিলাম। ভাইয়ার গায়ের উষ্ণতা এখনো জ্যাকেটে মিশে আছে ঠান্ডায় জমে যাওয়া দেহে এ যেন পরশপাথর। উষ্ণতা পেয়ে ইচ্ছে করছে এখানেই ঘুমিয়ে যাই। আরামে চোখ বন্ধ করে নিলাম। যখন চোখ খুললাম আমি ভাইয়ার বাহুডোরে আবদ্ধ দেখে অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।

০৪.

আমি মিটমিট করে তাকাতেই ভাইয়া আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে উঠল,
– দিলি তো মানসম্মানের ফালুদা বানিয়ে,তোকে এই জন্যেই বিশ্বাস করিনা।কখন যে কি করিস?এটা ঘুমানোর জায়গা হল? না পারছিলাম ধরতে, না পারছিলাম ছাড়তে সবাই কেমন করে তাকাচ্ছিল ইচ্ছে করছিল ছেড়ে দেই পড়ে গিয়ে মাথা ফেঁটে যাক…

ভাইয়ার অভিযোগের প্রতিবাদ জানালাম না বদলে বলে উঠলাম,
– আমাদের তো এতক্ষনে বাসায় থাকার কথা তাই না?এখানে কি করছি..??

ভাইয়া কর্কশ কন্ঠে জবাব দিল,
– হ্যা এভাবে তোকে বাসায় নিয়ে যাই আর সবাই আমাকে হাজারটা কথা শুনাক তাই না? ফালতু কথা ছেড়ে তাড়াতাড়ি নাম আর দোকানে যা জ্যাকেটের পকেটে ওয়ালেট আছে,ভিতরে গিয়ে চোখের সামনে যা পড়বে সেটাই কিনে পরে আসবি আর হ্যা সাথে এক জোড়া জুতাও। দেড়ি যেন না হয়।

-ভাইয়া কি আমাকে জন্মদিনের ট্রিট দিচ্ছে নাকি বুঝাতে চেষ্টা করলাম কিন্তু ওর মুখের ভঙ্গি তো সে কথা বলছে না তাহলে?আমি অবাক চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।

– এভাবে তাকানোর কি আছে? ফুফি আসছে সাথে তোর স্বার্থপর বাবাও আর এসে যদি দেখে তোর এই অবস্থা উনি বলবে আমি তোর দায়িত্ব পালন করি নি সাথে ফুফির ১৪ গোষ্ঠী সহ কথা শুনাবে আমার সেটা মোটেও ভাল লাগবে না।তাই নিজের টাকা খরচ করছি তা নাহলে তোর জন্য এক পয়সাও খরচ করতাম না।

-ভাইয়া মুখে যাই বলুক ও যে আমাকে গিফট দিতে চাইছে বুঝতে দেড়ি হল না। আমাকে আর পায় কে মনের আনন্দে নেমে দোকানের দিকে দিলাম ছুট।

পিছনে থেকে ভাইয়া চেঁচাচ্ছে
– আস্তে যা বাবা পড়ে যাবি তো… তোর জামা কেউ নিয়ে যাচ্ছে না।

ভিতরে ঢুকেই বেবি পিংক কালারের একটা গাউন নিয়ে নিলাম সাথে ম্যাচিং জুতা। জামাটা বেশ মানিয়েছে আমাকে একটু সাজুগুজু করতে পারলে একদম জমে যেত।
-এমন অদ্ভুতভাবে গিফট না দিলেও পারত। কেন যে এমন করে বুঝি না।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছি আর ভাইয়া বাইরে ওয়েট করছে তখনী ভাইয়ার ফোন টা বেজে উঠল।
জ্যাকেটের পকেট থেকে ফোন টা বের করলাম।

ফোনের স্ক্রিনে গোটা গোটা করে লিখা নন্দীনি ফোন টা তুলব কি তুলব না দ্বিধায় পড়ে গেলাম।
এই চান্স মিস করা ঠিক হবে না কিছুতেই না ওদের মাঝে কি সম্পর্ক জানার এটাই সুযোগ তাই ফোন টা রিসিভ করলাম।ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে মেয়ের কন্ঠ ভেসে এল,

– বেবি কি বেশিই রাগ করেছো? বিশ্বাস করো আমি কালকেই আসতে চেয়েছিলাম তুমি বলেছো আর আমি আসব না তা কি হতে পারে? কিন্তু কাল কোন ফ্লাইট ছিল না তাই আসতে পারি নি সরি বেবস, আমি জানি তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করছো অনেক রাগও করেছো এই তো আমি চলে আসছি আমি এয়ারপোর্টে এর পর আর কথা বলতে পারব না তাই কল দিলাম একটু পরেই আমার ফ্লাইট রাত ৯ টার মধ্যে চলে আসব। বাই দ্যা ওয়ে রাতে ত ভাল করে কথাই বলতে পারলাম না আমি কিন্তু তোমার পছন্দের ওর্নামেন্টস টাই নিয়েছি ম্যাসেঞ্জারে ছবি দিয়েছি কেমন মানাবে বললে নাতো?
কি ব্যাপার আকাশ কথা বলছো না কেন?

-ম্যাসেঞ্জারের কথা শুনেই ফোন টা কেটে দিয়ে ভাইয়ার ম্যাসেঞ্জারে ঢুকলাম।

চ্যাট লিস্টে প্রথমেই আছে নন্দীনি।জলদি ওপেন করলাম। আর দুজনের কথোপকথন পড়তে শুরু করলাম।

প্রথম এসমেস টা ভাইয়াই নন্দীনিকে করেছে,

আকাশঃ কে তুমি নন্দনী আগে তো দেখিনি…

-ওমাই গড আমি কি সত্যি দেখছি দ্যা গ্রেট আকাশ আমাকে এসমেস করেছে কিভাবে সম্ভব😱

– হাহা অনেকদিন হল কথা হয় না তাই ভাবলাম একটু কথা বলি তা ম্যাডাম ফোন নাম্বারটা কি দেয়া যাবে?

– কেনো নয় অবশ্যই দেয়া যাবে আপনার সাথে কথা বলতে পারলে এই বান্দা ওহ নো বান্দি ধন্য হবে +44398…… আমার নাম্বার।

– ওকে প্রিয়তমা কল দিচ্ছি।

তারপর অনেক্ষন কোনো এসমেস হয় নি প্রায় ২ ঘন্টা পর এসমেস।

– থ্যাংকস নন্দনী কথা বলে অনেক ভাল লাগল কাল আবার কথা হবে ঠিক আছে?

– হ্যা অবশ্যই, তবে যাই বলো এতদিনে কিন্তু একটুও বদলাও নি সেই ফাযিল আকাশেই আছো…

– পাগলামি রক্তে মিশে গিয়েছে কি আর করি বলো? যাইহোক ঘুমাও আমি চাই না আমার জন্য বিউটি কুইনের চোখের নিচে কাল দাগ পড়ে যাক।

– যথা আগ্যা স্যার সকালে নক দিচ্ছি বাই।

পরদিন সকালে নন্দীনি আকাশ কে ২ টা ছবি পাঠিয়েছে ২ টাই পায়েলের ছবি। ছবির নিচে লিখেছে কোনটা নিব।
বেবি তুমি যেটা বলবে সেটাই নিব।

আকাশ প্রথম টা সিলেক্ট করে অনলাইন মানি ট্রান্সফারের একটা স্ক্রিনশট দিয়ে লিখেছে টাকা পেয়ে গিয়েছো নিশ্চুই।

এসমেস গুলো দেখে মেঘলার হাত কাঁপছে এক বা দুই না
পুরো ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ট্রান্সফার করেছে আকাশ। মানে নন্দীনিকে এত টাকার পায়েল কিনে দিয়েছে।

মেঘলার আর দেখার শক্তি নেই শরীর টা স্থীর হয়ে আসছে প্রতিটা এসমেস বুকের মাঝে তীরের মত আঘাত করছে। বুকে তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছে মাথা ঝিমঝিম করছে চোখে জ্বালা ধরেছে কিন্তু জল পড়ছে না।
এতদিন যে ভাইয়াতে অন্ধ ছিল মেঘলা,যাকে নিজের সবচেয়ে আপনজন ভাবত সেই ভাইয়া তার সাথে এত বড় বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে ভাবতেই পারছে না সে।

– ও আমার আড়ালে একটা সম্পর্ক গড়ে তুলেছে…?? এতদিনের সব কেয়ার ভালবাসা সব কি তবে মিথ্যা ছিল? এভাবে আমাকে ধোঁকা দিতে ওর একটুও খারাপ লাগল না?কি করে পারলি রে ভাইয়া? আমার কথা একটা বার ভাবলি না। আমার এতদিনের ভালবাসার প্রতিদান এভাবে দিলি?

মেঘলা বের হচ্ছে না দেখে আকাশ নিজেই ভিতরে আসল। মেঘলা আকাশের ফোন হাতে বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে।

আকাশ কাছে আসতেই ছল ছল চোখে আকাশের দিকে তাকাল মেঘলা
আকাশ কিছু একটা আন্দাজ করে ভ্রু কুচকে বিরক্ত শুরে প্রশ্ন করল
-কোন সমস্যা?

মেঘলা জবাব দিল না শুধু ফ্যালফ্যালিয়ে ২ ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন দিল। সাথে সাথেই আকাশ মেঘলার হাত থেকে ফোন টা নিয়ে কল লিষ্ট চেক করল।

এবার মেঘলার মুখে কথা ফোটল..
মেঘলাঃ নন্দী…..
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ স্বজোরে মেঘলার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল শপিং মলে উপস্থিত সবাই তাদের দিকে তাকাতেই আকাশ সশব্দে চেঁচিয়ে উঠল,

– অনুমতি ছাড়া কারোর পার্সনাল বিষয়ে নাক গলানোটা কি ধরনের স্বভাব?আমার ফোন রিসিভ করেছিস কেন কি বলেছিস তুই নন্দীনিকে…??

আকাশ কে জবাব দেয়ার ভাষা মেঘলা হারিয়ে ফেলেছে তাই চুপ করে প্রিয়জনের রং বদলের দৃশ্যের সাক্ষি হচ্ছে সে।

– যাস্ট এক মিনিট অপেক্ষা কর নন্দীনিকেই জিজ্ঞাস করছি বলেই আকাশ নন্দীনি কে ফোন দিল কিন্তু ফোনটা সুইচ অফ হয়ত ফ্লাইট ছেড়ে দিয়েছে তাই কিন্তু ফোন সুইচ অফ পেয়ে আকাশ আরও ক্ষেপে গেল। ফোন টা কেটে দিয়ে আবারও মেঘলাকে থাপ্পড় মারল আকাশ। মেঘলা আজ যদি তোর জন্য নন্দীনির সাথে আমার কোনো গন্ডগোল হয় আমি তোকে খুন করে ফেলব।ভালই ভালই বলছি ওকে কি বলেছিস বল।

মেঘলা উত্তর দিল না।

আকাশ হটাৎই ভীষন রেগে গিয়েছে মেঘলা চুল টেনে বলল, জবাব দে মেঘলা…

আকাশ সব সীমা পেরিয়ে গিয়েছে সবাই অবাক চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ জেদী তাইবলে মেঘলাও কম না সে জবাব দিলই না আকাশ রাগে মেঘলা কে রেখে চলে গেল।

আকাশের থাপ্পড়ে লাল হয়ে যাওয়া গালে হাত দিয়ে চোখের জল ফেলতে লাগল মেঘলা


চলবে….!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here