মেঘলা আকাশের প্রেমজুড়ি,পার্টঃ০৬ শেষ

মেঘলা আকাশের প্রেমজুড়ি,পার্টঃ০৬ শেষ
লেখনীঃ Mona Hossain

নাবিল ভাইয়া খাচ্ছে না দেখে ছোট মা বলল
-কিরে নাবিল থেমে গেলি কেন খাবি না?

-খাব না কেন খাব ত অবশ্যই তবে ভাবছিলাম পৃথিবীতে কত ধরনের উন্মাদ আছে…??

-আহ নাবিল প্লিজ থাম না সব বুঝেও এমন করিস কেন?

-কেন আকাশ তুই পাগলামি করতে পারবি আমি বল্লেই দোষ…?.

-তুই কেন যে মেয়ে হলি না…তাহলে ত আমার কপাল খুলে যেত।

-মেঘলার কপাল পুড়ত তাই হয় নি বলেই ২ জন হেসে উঠল।

আকাশ আর নাবিলের কথার আগামাথা এখানের কেউই বুঝতে না পারলেও আমি বুঝতে পেরেছি আসলে ভাইয়া আমার জন্যই এসব করেছিল নাবিল ভাইয়ার কথায় এটা স্পষ্ট। ভাল লাগছে কিন্তু এমন ভালবাসার কোন মানে হয় কি?এটা কেমন ভালবাসা?সবার সামনে বলা যায় না সেটা আবার কেমন ভালবাসা।যাইহোক ভাইয়া আমাকে ভালবাসে এটাই কম কিসে। অনেক খুশি লাগছে কিন্তু হটাৎ একটা ফোন কল আমার সব খুশিকে ফিকে করে দিল।সবার মাঝে ভাইয়ার ফোন বেজে উঠল,
ভাইয়া পিঠে মুখে দিতে গিয়েও দিল না থেমে গিয়ে ফোন তুলল,

-হ্যা নন্দীনি বল…??? কি তুই চলে এসেছিস? যাক ভালই ভালই এসেছিস জেনে শান্তি পেলাম সেই কখন থেকে ফোন করছিলাম জানিস?

ওপর পাশের কথা শুনতে পেলাম না।কিন্তু ভাইয়ার উত্তর শুনে বুঝার চেষ্টা করছি।

-হ্যা হ্যা আমি এখনী আসছি তুই যাস্ট এয়ারপোর্ট থেকে বের হ আমি তোকে পিক করে নিচ্ছি বলেই ভাইয়া হাতের পিঠে টা রেখে উঠে গেল।

বড় মা- কি হল আকাশ উঠে গেলি যে খাবি না?

-না মা নন্দীনি অপেক্ষা করছে আমাকে যেতে হবে।

-এ আবার কেমন কথা তখন বললি পিঠে খেতে হচ্ছে তাই এত আয়োজন আর এখন খাবিই না?

ছাড়ো বড় মা আকাশের গলা দিয়ে এখন খাবার নামবে না। যা তুই ফিরে এসে খাস বলে নাবিল ভাইয়া আকাশ কে উপড়ে পাঠিয়ে দিল।

কেন জানি না খুব খারাপ লাগছে মনে হচ্ছে যেন আমার সব কিছু হারিয়ে যাচ্ছে না আমি ভাইয়াকে হারাতে পারব না কিছুতেই না। এই নন্দনীর কাছে আমি ওকে যেতে দিব না কিছুতেই না।ভেবেই ভাইয়ার পিছনে ছুটলাম।

দরজায় নক না করেই ঘরে ঢুকে গেলাম।ভাইয়া আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেল কারন ও বাইরে যাওয়ার জন্য এই মাত্র নিজের শার্ট খুলে অন্যশার্ট হাতে নিয়েছে আমাকে দেখে তাড়াতাড়ি শার্ট টা জড়িয়ে নিয়ে বলল,

-কি ব্যাপার এখানে কি চাই?

-তুই নন্দনীর কাছে যাচ্ছিস?

-নিচে ত বলে আসলাম আবার প্রশ্ন করার কি হল?

-তুই যাবি না মানে আমি তোকে যেতে দিব না।

-আজব তো যাব না কেন? আর তুই মানা করলেই আমি তোর কথা শুনব সেটাই বা তোকে কে বলল?

-কি কম আছে আমার?

আমার কথাটা শুনে চোখ সরু করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-মানে বুঝলাম না।

-আমি কি দেখতে খারাপ নাকি আমার ফিগার খারাপ?

ভাইয়া প্রচন্ড রেগে গিয়ে ধমক দিল
-মেঘলা…!!! এই মুহুর্তে তুই আমার রুম থেকে বেরিয়ে যা চোখের সামনে আসবি না।

আমি যাচ্ছি না দেখে ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে বলল,
-মারতে ইচ্ছে করছে না তাই চুপচাপ বিদায় হ…

-তারমানে তুই যাবিই? এত খারাপ হয়ে গিয়েছিস তুই?

এবার উত্তর দিল না সোজা থাপ্পড় দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

ইচ্ছে করছে ভাইয়াকে জোর করে হলেও আটকে রাখি কিন্তু সেটা আমার সামর্থ্যের বাইরে তাই চুপচাপ ওর ঘরের দরজার সামনে সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছি কিছুক্ষন পর ভাইয়া বেরিয়ে এল। অবাক করা বিষয় ভাইয়া আজ একটু বেশিই পরিপাটি হয়ে নিয়েছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ডেটে যাচ্ছে ওফহোয়াইট কালারের শার্টের সাথে কালো ব্লেজার পড়েছে সাথে ম্যাচিং জিন্স হাতে ঘড়ি চোখের উপড় সিল্কি চুল গুলি পড়ে থাকায় ওকে আরও আকর্ষনীয় লাগছে।

ভাইয়া কখনো আমার জন্য এভাবে সাজগোছ করেনি নন্দীনি ওর কাছে কত ইম্পর্টেন্ট সেটা ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে নিজের অজান্তেই চোখ ২ টি ছল ছল করে উঠল।
আমি ছল ছল চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম কিন্তু আমার জন্য যে ভাইয়ার কোন টান নেই সেটার প্রমান দিয়ে আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেল ভাইয়া।

আমিও নিচে নেমে আসলাম এই মুহুর্তে এই বাসাটা আমার কাছে অসহ্য লাগছে দমবন্ধ হয়ে আসছে তাই সবার আপত্তি সত্ত্বেও নানারকম তালবাহানা করে সবাইকে বুঝিয়ে রাতের বেলায় হোস্টেলে ফিরে আসলাম।মন টা কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। আমি কি করে ভাইয়ার মত একটা ছেলেকে ভালবেসেছিলাম ভেবেই রাগ হচ্ছে নিজের রাগ কমাতে শীতের রাতে শাওয়ারের নিচে বসে প্রায় ঘন্টা খানিক ভিজেছি এবার মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে শরীরে কাটা দিচ্ছে এই ঠান্ডা পানির কামড় আর সহ্য করতে পারব না বুঝতে পেরে উঠে এসে জামা বদলে বিছানায় গা মিশিয়ে দিলাম। প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছে কম্বলেও যেন ঠান্ডা কমছে না। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে কখন যে চোখ বুজেছি নিজেই জানি না। রাতে হটাৎ ঘুম ভাংগল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ১.৩০ টা বাজে।
বেশ বুঝলাম আজ অনেক সকাল সকাল ঘুমিয়েছিলাম তাই এখন ঘুম ভেঙে গিয়েছে।এখন আর ঘুম আসবে না তাই ফোন টা হাতে নিলাম। ফোনটা হাতে নিতে না নিতেই একটা এসমেস আসল।

-যাক অবশেষে ঘুম ভাংল তাহলে..

অবাক না হয়ে পারলাম না কারন এসমেস টা ভাইয়া করেছে।এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। নাহ আমি সপ্ন দেখছি না আর আমি নিজের হোস্টেলেই আছি তাহলে ভাইয়া কিভাবে জানল আমি এখন ঘুম থেকে উঠেছি? কৌতুহল নিয়ে উঠে বসলাম তখনী চোখ পড়ল বেলকনীতে একটা মোমবাতি নিভু নিভু করে জ্বলছে তাড়াতাড়ি লাইট অন করে সেখানে গেলাম আর দেখলাম কেকের উপড় বেশ বড় আকারের মোমটা গলে প্রায় নিচিহ্ন হওয়ার পথে,কেকের পাশেই কয়েকটা শেফালী ফুল, একটা কাগজ আর আর একটা ছোট গিফট বক্স।

আগ্রহ নিয়ে কাগজ টা হাতে নিলাম ভেবেছিলাম কোন শুভেচ্ছা বার্তা বা চিরকুট হবে কিন্তু কাগজের ভাঁজ খুলে অবাক হলাম কারন এখানে আমার একটা ছবি আছে কিন্তু ছবিটি ক্যাপচার করা না হাতে আর্ট করা। অনেক সময় নিয়ে খুব যত্ন করে আর্ট করা হয়েছে ছবি টা।ছবিটা এতই নিঁখুতভাবে আঁকা হয়েছে যে এতে আমার শরীরের একটা তিল ও বাদ পড়ে নি। এই অদ্ভুত কান্ড টা ভাইয়া ছাড়া কেউ করবে না বুঝতে পারলাম।

-না এসব করে তো মন পাওয়া যাবে না অন্যমেয়ের সাথে সময় কাটিয়ে এসে আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা আর কাজে দিবে না আমি কিছুতেই আর ভাইয়ার ফাঁদে পা দিব না। যেমন ভাবনা তেমন কাজ কেক টা হাতে নিয়ে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেললাম মনের জ্বালা মিটালাম।

তখনী ফোনে এসমেস আসল,
– সেই এগারোটা থেকে বেচারা মোমটা তোকে পাহারা দিল আর তুই ছুঁড়ে ফেলে দিলি?

মেজাজ টা আরও গরম হয়ে গেল,

– আমাকে কি তোর খেলনা মনে হয় যখন ইচ্ছে হবে আমাকে নিয়ে খেলবি যখন ইচ্ছে হবে না ছুঁড়ে ফেলে দিবি?

-সন্দেহ রোগ টা খুব জটিল যার মনে এই অসুখ হয় যে কখনো সুখি হতে পারে না।

-তুই কথা ঘোরানোর চেষ্টা করছিস?

-আমার কথা তুই কোনদিন বুঝিস নি আজও বুঝবি না সেটাই স্বাভাবিক।যাইহোক তোর জন্য একটা গিফট আছে বক্সটা একটু খুলে দেখবি?

-পারব না…

-অনেক ঠান্ডা লাগছে রে মেঘলা একটাবার পায়েল টা পর একনজর দেখেই চলে যাব প্রমিস।

ভাইয়ার এসেমেসে অবাক হলাম বেলকনি থেকে নিচে তাকালাম। রাতের শহরের নিস্তব্ধতার একমাত্র সাক্ষি রাস্তার লাইটগুলো ও যেন কুয়াশায় চাদরে ঢাকা পড়েছে অস্পষ্ট অন্ধকার চারদিকে।
আমার রুমের নিচে কিছু দূরে রাস্তার ধারে কুয়াশায় চাদর গায়ে বসে ভাইয়া আমাকে এসমেস করছে তাই ওর ফোনের আলোতে মুখটা স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি ঠান্ডায় ভাইয়ার গোলাপি ঠোঁট দুটো নিলচে রং ধারন করেছে হাত রীতিমত কাঁপছে তবে মুখে সেই ভুবন ভুলানো হাসি। দেখে বুকের ভিতর কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠল তাড়াতাড়ি বক্সটা হাতে নিলাম। বক্সের কাগজ টা কোনরকম ছিড়ে ফেলে চোখ কপালে উঠে গেল।

-এটাতো নন্দীনি আপু ভাইয়াকে যে পায়েলের ছবি পাঠিয়েছিল সেটাই। তবে এটা যেমন তেমন পায়েল না এর দাম কম হলেও লাখ টাকার উপড়ে।
এত দামী পায়েল সচারাচর পাওয়া যাওয়ার কথা না কারন সবাই হীরের নেকলেস পড়তেই পছন্দ করে এত টাকা খরচ করে পায়েল তৈরি করে না।

-কিরে পছন্দ হয় নি?পায়ে পর না একবার?

আমার কি উত্তর দেওয়া উচিত জানি না তবে কোন অজানা কারনে এত দামী গিফট পেয়েও খুশি হতে পারছি না তাই জবাব দিলাম,

-এটা আমি পরব কেন তোর পায়েল তুই নিয়ে যা।

ভাইয়া এবার আর রিপ্লে দিল না ফোনটা পকেটে রেখে দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে কুয়াশায় মিলিয়ে গেল।

——————-

তুই আমায় কোনদিনি বুঝলি না মেঘলা…
তোর মুখের হাসিটা দেখব বলে এতরাত পর্যন্ত ঠান্ডার মধ্যে বসে থাকলাম তাও তুই …???
তুই এমন কেন রে মেঘলা কবে বুঝতে শিখবি আমায়? ভাবতে ভাবতে হাঁটছে আকাশ তখনী,

-চোর চোর….বলতে বলতে হোস্টেলের দারোয়ান এদিকেই ছুটে আসছে আকাশ হতবাক হয়ে গেল কি করবে বুঝতে পারছে না। দারোয়ান কি তাকেই তাড়া করছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করতে চাইল এর মধ্যে হ্যাচকা টানে কেউ আকাশের হাত ধরে টানতে টানতে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। অন্ধকারে কে তার হাত ধরে টানছে আকাশ বুঝতে পারল না কিন্তু আকস্মিক এমন ঘটনায় একটু অবাক হল আর তার সাথে তাল মিলাল কিন্তু কিছুটা গিয়েই আকাশ ঝারি দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
-কে আপনি আমার হাত ধরে টানছেন কেন?

হাঁফাতে হাঁফাতে জবাব দিল,
-ভাইয়া আমি মেঘলা…পালা দারোয়ান ধরতে পারলে মানসম্মান থাকবে না…

-কি আজব ঘটনা তুই এখানে আসলি কি করে?

-কেন পাইপ বেঁয়ে, আরে নামার সময়েই তো দারোয়ান দেখে ফেলেছে।

-কানের নিচের একটা মারলে আর এসব করার সাহস হবে না হোস্টেলে থেকে এসবি করিস তাহলে ফাউল কোথাকার।

-তুই কি এখন জগড়া করবি নাকি পালাবি

– এই অন্ধকারে পালাব কি করে?

-সে আমি কি জানি? দারোয়ান যদি দেখে আমি রাতে তোর সাথে দেখার জন্য পালিয়েছি কি বিশ্রি ব্যাপার হবে বুঝতে পারছিস?

-সেটা নামার আগে বুঝা উচিত ছিল না?তোকে কে বলেছিল আসতে।আমি কি তোকে আসতে বলেছিলাম ফাউল মেয়ে সবসময় ঝামেলা পাকাস।

-হয়েছে তোর পালাতে হবে না আমি গিয়ে ধরা দিচ্ছি।

-এইটুকু মেয়ের তেজ কত বলেই আমার হাত টেনে ভাইয়া ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে আমাকে নিয়ে গিয়ে বড় রাস্তায় থামল।

দৌড়াতে দৌড়াতে ২ জনেরই নাজেহাল অবস্থা গরম লাগছে।ভাইয়া তো জ্যাকেট খুলেই ফেলল।

হাইওয়েতে লাইট জ্বলছে কিন্তু কোন যানবাহন নেই কোন মানুষের চিহ্নও নেই।

আমি বসে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিলাম তারপর ভাইয়ার দিকে তাকালাম ওমা এত আমার দিকে রাক্ষসের মত তাকিয়ে আছে এখনী হয়ত গিলে খাবে।

উপায় না পেয়ে নিজের ৩২ দাঁত বের করে জোরপূর্বক হেসে বললাম
-কিছু বলবি…??

ভাইয়ার এমন উত্তরের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না রাগে বলে উঠল,
-একটা লাথি দিয়ে নিচে ফেলে দিব।

_এমন করিস কেন?

-তো কি আদর করব?

-আরে ভাবিস না ইম্প্রেস হয়ে চলে এসেছি কিছু প্রশ্ন আছে তাই এসেছি। প্রথম প্রশ্ন এত টাকা কোথায় পেলি তোর কাছে তো এত টাকা নেই মাস শেষে বড় বাবা যে টাকা দেয় সেটার বেশির ভাগ ত আমিই খরচ করে ফেলি তাহলে?

-তোকে কয়ফত দিতে হবে?

-অবশ্যই, আর এটা তো আমার জন্য ছিল না নন্দীনির জন্য ছিল। ওহ আচ্ছা ওর সাথে ডেট ভাল হয় নি তাই ফিরত নিয়ে এসেছিস তাই না? তোর ত মনেই ছিল না আজ আমার জন্মদিন।

-তোর মত ছাগল এর চেয়ে বেশি কি আর ভাব্বে। তোর কি মনে হয় ছবি টা একদিনে আর্ট করা হয়ে গিয়েছে? পুরো ২ মাস আগে থেকে আর্ট করছি জন্মদিনে দিব বলে বুঝেছিস?

-তাহলে কাল আমাকে উইশ করিস নি কেন?

-গত পরশু তোকে গিফট দেওয়ার জন্য অনলাইন শপ গুলো ঘাঁটছিলাম তখন হটাৎ পায়েল টা চোখে পড়ল। পায়েল টা দেখেই মনে হয়েছিল এটা শুধু মেঘলার পায়েই মানাবে। ডিটেল চেক করে দেখলাম এটা মাস্টারপিস। ডিজাইনার শুধু একটাই বানিয়েছে সাথে সাথে সিধান্ত নিলাম এটা কিনব কিন্তু এটা uk এর একটা সাইট ছিল তাই অর্ডার দিলে আসতে একমাস সময় লাগবে তখন বহুত চিন্তা করে বেরবকরলাম uk তে আমার একমাত্র পরিচিত নন্দনী থাকে। তারপর ওটাকে নক দিয়ে বহুত রিকুয়েষ্ট করে বল্লাম পায়েল টা কিনে যেন নিয়ে আসে।ও কিনলে সাথে সাথে ডেলিভারি পাবে আর আসতে যে সময় টা লাগে তারমানে জন্মদিনের আগেই পেয়ে যাব। কিন্তু ও সময়মত আসে নি তাই রাগে আমি তোকে উইশ না করে নন্দনীকে ফোন করে ইচ্ছামত গালি দেই। তখন তুই আমাকে ফোন করছিলি রাগ উঠলে আমার হুঁশ থাকে না জানিস তো তার মধ্যে সবাই ফেসবুকে তোকে উইশ করছিল তাই তোকে ফেসবুকেও ব্লক করেছিলাম।

-চাপা মারবি না তাহলে নন্দীনি তোকে বাবু ডাকছিল কেন?

-কারোর মুখের ভাষা এরকম হলে আমার কি করার আছে?

-তাই যদি হবে নন্দীনির এসমেস দেখেছি বলে তুই আমাকে মেরেছিলি কেন?

-একটা গিফট কতটা পছন্দ হলে বিদেশ থেকে একজন কে একদিনের মধ্যে দেশে আনার ব্যবস্থা করা যায় বুঝিস তুই? কিন্তু তুই আমার সবটা সারপ্রাইজ নষ্ট করে দিয়েছিলি তাই মেরেছিলাম।

-আচ্ছা সেসব না হয় বাদ দিলাম কিন্তু তুই আমার বার্ডে পার্টি হতে দিলি না কেন?

-পার্টির মানে তুই বুঝিস?

-মানে কি?

-তুই যে বড় হয়েছিস সেটাকি সবার চোখে আংগুল দিয়ে দেখাতে হবে? আমি চাইনা তোকে কিনার মত আমার সামার্থ্য হওয়ার আগেই তোর বাবা তোকে নিলামে তুলুক এটা তোর ১৮ তম জন্মদিন ছিল পার্টি তে তোর বাবার পরিচিতরা আসত আর তোর দিকে নজর দিত বিয়ের প্রস্তাব দিত আমি ত এখনো নিজের পায়ে দাঁড়াই নি। না পারতাম কিছু বলতে আর না পারতাম সহ্য করতে তাই পার্টি ক্যান্সেল করেছিলাম কিন্তু বাসার সবাইকে নিয়ে তোর পছন্দের পিঠে তো খায়িয়েছি তাই না?ফ্যামিলি পার্টি ত হয়েছেই ? নিজের হাতে পায়েস করেও খায়িয়েছি তাও মন ভরে নি দেখে হোস্টেলে কেক ও নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তুই যে ঘুম দিয়েছিস জন্মদিন পার হয়ে গিয়েছে।

-থাক গা গেছে তো গেছে কি হয়েছে? নে পায়েল টা পরিয়ে দে..

আকাশ পায়েল টা পরাতে পরাতে প্রশ্ন করল,
-তুই কোন বুদ্ধিতে ২ টা তলা থেকে পাইপ বেয়ে নামলি বলতো যদি পড়ে যেতি?

-তুই পাগল হয়ে যেতি আর কি হত?

– মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোকে মেরে হাত পা ভেঙে দেই।এখন তোকে নিয়ে কোথায় যাব বলতো? হোস্টেলে ত যেতে পারবি না আমার বাসাতেও যাওয়ার উপায় নেই কি যে করব এখন?

-কেন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরব আর সারারাত তোর সাথে প্রেম করব। কতদিনের ইচ্ছে ছিল তোর সাথে প্রেম করব

-এই না হলে মেঘলা মাথায় পুরাই গোবর ভরা। এখানে ছেলে মেয়েকে একসাথে দেখলে পুলিশে এখনী ধরে নিয়ে যাবে বুঝেছিস…তাও বাইকটা থাকলে শহরের বাইরে চলে যাওয়া যেত।

-কেন তোর বাইক কোথায়…??

আকাশ কথাটা ঘুরানোর জন্য বলল,
-না মানে আছে। বাইকে তোর ঠান্ডা লেগে যাবে তাই যাওয়া যাবে না।

-তাহলে এখন কোথায় যাব? চল কোন হোটেলে যাই?রুম বুক করে থাকি

– ওরে সাবাস কি বুদ্ধি ভাবা যায়…??

-ওহ হোটেলে গেলে লোকে খারাপ বলবে তাই না? আচ্ছা ভাবছি দাঁড়া।পেয়েছি চল চল ওখানে গেলে নিশ্চিন্তে রাত টা কাটিয়ে দেয়া যাবে।

-কিন্তু কোথায় সেটা আগে তো বল টানছিস কেন?

-চুপচাপ চল তো

-কোথায় যাচ্ছি সেটা ত বল

– হসপিটালে এটাই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা।

-ওহ গড শেষে কিনা হাসপাতালে প্রেম?

-এছাড়া তোর কাছে কোন অপশান আছে?

আকাশ বাধ্য হয়েই মেঘলার সাথে সরকারী হাসপাতালে গেল। ঠান্ডার কারনে করিডরে কোন মানুষ জন নেই। পুরোটাই ফাঁকা মেঘলা আকাশকে একটা বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে নিজেও তার পাশে বসে আকাশের বুকে মাথা রাখল আর কিছুক্ষনের মধ্যে ঘুমিয়েও গেল।ঘড়ির কাঁটায় ২ টা বাজে।

আকাশ ফোন বের করে নাবিল কে ফোন দিল।
২ বার ফোন দেয়ার পর নাবিল ফোন তুলল,

-আবার কি হল? এত রাতে কি চাই?(নাবিল)

-লক্ষি ভাই এভাবে কথা বলে না দেখো না বিপদে পড়েছি বলেই তো ফোন দিয়েছি।

-সেটা তো বুঝেতেই পেরেছি বনিতা না করে ঘটনা কি বলে ফেলেন।

-মেঘলাটা না ঘুমিয়ে গিয়েছে…

-ত ২ বাজে ঘুমাবে নাত কি নাচবে?

-আরে ভাই ও আমার কোলে ঘুমাচ্ছে?

-কি…!!! এ ভাই তরা কি মানুষ নাকি এলিয়েন মেঘলাকে তো আমি নিজে হোস্টেলে রেখে এসেছিলাম এখন তোর কোলে আসল কি করে?

আকাশ সবটা খুলে বলল।

-বাহ অসাধারন শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে প্রেম ভাবা যায়?ভাই দেখিস ইতিহাসে তোদের নাম স্বর্নাক্ষরে লিখা থাকবে। ভালই ত হয়েছে চালিয়ে যা আমাকে ফোন দিয়েছিস কেন।

-আরে তুই ও কি মেঘলার মত মাথামোটা হয়ে গেলি নাকি?মেঘলার ঠান্ডার সমস্যা আছে জানিস না ওকে নিয়ে সারারাত বারান্দায় থাকব?

-তা এখন আমার কি করনীয়?

-যেভাবেই হোক বাসার গাড়িটা বের করে আনতে হবে।

– আমাকে ত পাগলা কুকুরে কামড়েছে বাসার সবাই ঘুমাচ্ছে আর গাড়ির চাবি বড় বাবার ঘরে আমি কি করে আনব?

-তা আমি কি করে বলব?

-জানতাম তো আমার কপালে আজ দুঃখ আছে,ঘুরে ফিরে বাঁশ টা আমিই খাব পালিয়েও শান্তি পেলাম না তোরা না আমাকে না মেরে শান্ত হবি না…

-নাবিল মেঘলার শ্বাসকষ্ট হবে….

-হয়েছে হয়েছে ইমোশনালি ব্লেকমেইল করতে হবে না শেষ পর্যন্ত আমাকে চুর বানিয়ে ছাড়লি হারামজাদা।
ফোন রাখ দেখছি কি করা যায়।
—————–
কিছুক্ষন পর নাবিল হাসপাতালে আসল আর আকাশের হাতে চাবি দিল।

-থ্যাংকস দোস্ত একটু ধর আমি ওকে কোলে নেই তারপর চলে যাস।বলে আকাশ মেঘলাকে কোলে নিল

তখনী মেঘলা ড্যাবড্যাব করে বলে উঠল,
-চলে যাবে মানে নাবিল ভাইয়া আমাদের সাথে যাবে না?

মেঘলার কথায় আকাশ আর নাবিল ২জনেই চোখ বড় বড় করে মেঘলার দিকে তাকাল।

আকাশঃ তুই ঘুমাস নি?

-ঘুমানোর জন্য ২ তলা বেয়ে পালিয়ে এসেছি নাকি? এই নাবিল ভাইয়া চল ৩ জন একসাথে যাই বার্ডে সেলিব্রেট করি।

-তোর বার্ডে ডেট ত চলে গেছে তাছাড়া এত রাতে কেক কোথায় পাব?

-তাতে কি মনের ডেটই বড় ডেট। আর নাবিল ভাইয়া আমার বার্ডের সমস্ত আয়োজন করবে তাই না ভাইয়া?

নাবিল প্রশ্নবোধক চাহনী দিয়ে বলল
-হ্যা আমার জন্মই তো হয়েছে তোদের ঝামেলা মিটানোর জন্য তাই না আমি তো সুপারম্যান এত রাতে কেক বানিয়ে ফেলব?

-ভাইয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারিস আমার জন্য একটা কেক পারবি না কেন?

-না পেরে উপায় আছে? গাড়িতে যা দেখছি…

কিছুক্ষন পর নাবিল ফিরে আসল।

-এই নে এর চেয়ে বেশি কিছু পেলাম না।

-তাই বলে ৫ টাকার একটা কেক আনলি ভাইয়া?

-এটাই যে পেয়েছি সেটাই ত ভাগ্য।হাসপাতালের ক্যান্টিনে আর কোন কেক নেই।

-ঠিক আছে এত রেগে যাওয়ার কিছু নেই বড় কেক নেই তো কি হয়েছে মনের কেকেই বড় কেক নে মোমবাতি জ্বালা।

নাবিল অসহায় ভংগিতে বলল,
-আবার মোমবাতি? বোন তুই আমায় মেরে ফেল তাও আর কিছু ম্যানেজ করতে বলিস না।

নাবিল অনেক করেছে এবার ছেড়ে দে মেঘলা এটার ব্যবস্থা আমিই করছি বলে আকাশ নিজের ফোন বের করে একটা মোমবাতির ভিডিও বের করে বলল,

-নে ফুঁ দে…

মেঘলা তাই করল সাথে সাথে মোমবাতি নিভে গেল কারন এটা ফোনের একটা ওয়ালপেপার ছিল।

নাবিল সাথে সাথে বলে উঠল
– যেমন গার্লফ্রেন্ড তার তেমন বয়ফ্রেন্ড যাক হ্যাপি বার্ডে টু ইউ…

মেঘলা কেকটা ভেঙে ২ জনকেই খাইয়ে দিল।

কেক খাওয়ার শেষ নাবিল মেঘলার কাছে এসে বলল,
– গিফট নিবি না?

-তুই ত বলেছিলি জানিস না তাহলে গিফট দিবি কোথা থেজে?

-চোখ টা বন্ধ কর না

মেঘলা চোখ বন্ধ করে হাত বাড়াল।

নাবিল মেঘলার হাতে একটা চাবি দিল। মেঘলা চমকে তাকাল তবে মেঘলার চেয়ে আকাশ বেশি অবাক হল।

আকাশঃ নাবিল এটা…??

-ছোট বেলা থেকে দেখছি আকাশ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এ যাতায়েত করতে পারে না তাই যখন নিজের বাইক টা বেচে দিল মনে হল এটা ফিরিয়ে আনা আমার দায়িত্ব।

নাবিল ভাইয়ার কথায় অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম

-আকাশ ভাইয়া বাইক বেচলি কেন? এই জন্যেই সকালে রিক্সায় এসেছিলি?

আমার প্রশ্নে আকাশ জবাব দিল না কিন্তু নাবিল ভাইয়া বলে উঠল,
-পায়েল টা যে বড্ড দামী তাই…??

-তুই আমার পায়েলের জন্য নিজের এত পছন্দের বাইক টা?

– ছাড়ত, হ্যারে নাবিল তুই টাকা পেলি কোথায়?

-আমি ত আর আকাশ নই আমি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এ চলাচল করতে পারি।

-কি? তারমানে তুই আমার জন্য তোর বাইক টা বিক্রি করে দিয়েছিস?

-আহ আকাশ তোর আমার বলতে কিছু আছে নাকি তোর বাইক মানে ত আমারো এক বাসায় ২ টা দিয়ে কি হবে?

-কাজ টা তুই ঠিক করিস নি নাবিল

-গিফটা আমি তোকে না মেঘলাকে দিয়েছি। আমি জানতাম মেঘলা যখন জানতে পারবে ওর পায়েলের জন্য তুই বাইক বিক্রি করেছিস ও কষ্ট পাবে। আমি ওকে সেই কষ্ট টা দিতে চাইনি। যা করেছি মেঘলার জন্য করেছি তোর জন্য না তাই এতে তোর কথা বলার অধিকার নেই।

কি বলব বুঝতে পারছি না শুধু কান্না পাচ্ছে। ভাইয়ারা আমাকে কত ভালবাসে অথচ আমি সব সমত ওদেএ ভুল বুঝি।নিজেকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারলাম না কেঁদেই ফেললাম।
আমার কান্নায় নাবিল ভাইয়া আকাশ ভাইয়া ২ জনেই অস্থির হয়ে গেল।

আকাশ ভাইয়া কাছে এসে বলল,
কি হয়েছে মেঘলা শরীর খারাপ লাগছে? কাঁদিস কেন?

কিছু বললাম না নাবিল ভাইয়া এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
-কাঁদিস না বোকা তোরা ২ টা আমার বুকের পাজর তোদের খুশিতেই আমি খুশি মন খারাপ করিস না আমি আবার বাইক কিনে নিব এসব ভেবে আজকের দিনটা নষ্ট করিস না প্লিজ।যা আকাশের সাথে ঘুরে আয়।আমি এখন যাই রে অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। বলে ভাইয়া বিদায় নিল।

-নাবিল টা একেবারে আমার মত এত কিছু করবে কিন্তু কাউকে বুঝার সুযোগ দিবে না।
আমার কান্না থামছে না। ভাইয়ার কথায় আরো দুর্বল হয়ে পড়লাম দেখে ভাইয়া বলল
থাম মেঘলা এত রাতে কান্না করলে লোকে দেখলে কি ভাব্বে?

ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বল্লাম,
-আমাকে তোরা এত ভালবাসিস কেন?

-পৃথিবীর সবচেয়ে জঠিল কঠিন আর অমীমাংসিত বিষয়টি হল ভালবাসা এখানে কখন যে কে কাকে ভালবাসে আর কেন বাসে তার সঠিক হিসেব কেউ মিলাতে পারে নি।
এসব ছাড় আগে বল তোর চুল ভেজা কেন?

ভাইয়ার এই প্রশ্নে আত্মা উড়ে গেল।এখন আর রক্ষা নেই। ভাইয়ার কথার উত্তর দিলাম না

ভাইয়া চোখ পাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে আবারো প্রশ্নকরল

– আমি ত এতক্ষন খেয়াল করি নি রাতে চুল ভিজিয়েছিস কেন উত্তর দে মেঘলা।

আমি যে রাগে শাওয়ারের নিচে বসেছিলাম এটা জানলে আমাকে আর আস্ত রাখবে না।

-কিরে জবাব দে…তোর ঠান্ডায় প্রবলেম আছে জানতি না?

আমি আর কিছু না বলে দিলাম দৌড়। ভাইয়াও আমার পিছন পিছন আসছে। আমাকে এখন কেউ বাঁচাতে পারবে না জানি মার খেতে হবে সিওর।

-দাঁড়া হারামী…আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।

-আর কখনো এমন করব না এবারের মত ছেড়ে দে ভাইয়া এই যে কান ধরছি ভুল হয়ে গিয়েছে দৌড়াতে দৌড়াতে বলতে লাগল মেঘলা…



সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here