অনুভূতিরা শীর্ষে 💗দ্বিতীয়ধাপ,পর্ব-২,৩
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব-২
হঠাৎ লোকটির আর্তনাদ শোনা গেলো। সাদাদ এর দলের এক লোক, লোকটিকে পিছন থেকে চাকু মেরেই পালাতে চেয়েছিলো। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয় নি। সাদাদের লোকেরা তাকে ধরে ফেলেছে। সাদাদ এগিয়ে আসার আগেই হাতের আংটি খুলে তার ভেতর থেকে পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহনন করে। সাদাদ একটা শ্বাস ফেলে বলল,
–সাব্বির বডিটা ভালো করে চেক কর! কিন্তু সাবধানে। আর একে(আহত লোকটিকে ইশারা করে) যত দ্রুত সম্ভব হসপিটাল নিয়ে যা। লোকটা যেনো বেঁচে যায়! সর্বোচ্চ চেষ্টা কর!
সাদাদ তার দলের লোকেদের নির্দেশনা দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। তার এখন সবার আগে সাদিয়ার কাছে যেতে হবে। তাই রুবায়েতকে ফোন দিলো।
-আসসালামুওয়ালাইকুম! হ্যাঁ সাদাদ বলো!
–রুবায়েত ভাই, আপনি এখন কোথায়?
রুবায়েত সাদাদের কথা ঠিক বুঝতে পারলো না। হঠাৎ এই প্রশ্ন শুনে বেশ অবাক হলো।
-আমি এখন ইউনিটে আছি! কোনো জরুরী বিষয়?
সাদাদ স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
–দি কি বাসায়? আমি আপনাদের দুজনের সাথে কিছু কথা বলতে চাই! তাই…
রুবায়েত বুঝতে পারলো হয়তো জরুরী কোনো বিষয়। নয়তো সাদাদ এভাবে বলতো না। রুবায়েত সাদাদকে বিষয়টা সহজ করে দিয়ে বললো,
-সাদাদ তুমি কষ্ট করে আমাদের বাসায় চলে আসো। আমি এখুনি ইউনিট থেকে বাসার উদ্দেশ্যে বের হবো।
সাদাদ রুবায়েত এর কথায় সম্মতি দিয়ে সেও চললো সাদিয়ার শ্বশুরবাড়ি। সামনে ইলেকশন। আশে পাশের পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ। সাদাদকে সবদিক থেকেই পরাস্ত করতে চায় বিরোধী দল। তাই সাদাদকে সবসময়ই সাবধান থাকতে হয়!
.
সাদিয়া তার শাশুড়ির সাথে রান্নাঘরে টুকটাক কাজে সাহায্য করছে। এতো করে বললো সে যে কাজ গুলো সে করবে কিন্তু তার শাশুড়ি কিছুতেই রাজি হলেন না। অবশেষে সাদিয়ার কথা মেনে তাকে বললো সাহায্য করতে। সাদিয়া শাশুড়ির কথামতো তাকে সাহায্য করছে। দুইজন মিলে কাজের ফাঁকে কথা ও হাসাহাসি করছে। তখনই দরজায় বেল বাজলো। সাদিয়া হাতের কাজ রেখে গেলো দরজা খুলে দিতে। রুবায়েত এসেছে। তাকে এতো তাড়াতাড়ি আসতে দেখে সাদিয়া অবাক হলো। তাই গেল বন্ধ করতে করতে বললো,
-আজ এতো তাড়াতাড়ি ফিরলে যে? শরীর ঠিক আছে?
রুবায়েত হালকা হাসলো। পাশের সোফায় বসে জুতো খুলতে খুলতে বললো,
-শরীর ঠিক আছে গো বউ! কিন্তু মন একটুও ঠিক নেই!
রুবায়েত পরক্ষনেই জুতো পাশে রেখে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,
-আছে নাকি তোমার কাছে, আমার মন ভালো করার ঔষধ?
সাদিয়া লজ্জা পেয়ে হেসে রান্নাঘরের দিকে ছুটলো। নয়তো আরো লজ্জা দিতো রুবায়েত তাকে। এই গম্ভীর লোকটাকে সাদিয়া অজান্তেই প্রচন্ড রকমের ভালোবেসে ফেলেছে। সাদিয়া তার আর রুবায়েত এর সম্পর্কটা বেশ এগিয়ে নিয়ে গেছে। ভালোবাসা আর অনুভূতিগুলো একদম শীর্ষে। সাদিয়া প্রার্থনা করে যেন সুখটা সবসময় বজায় থাকে।
রুবায়েত রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। সাদাদ এখনো বাসায় পৌঁছায়নি। তাই তাকে ফোন করার জন্য হাতে মোবাইলটা নিতেই দরজায় কলিং বেল বাজলো। রুবায়েত নিজেই গেলো দরজা খুলতে। সাদাদ এসেছে। সাদিয়া তার ভাইকে দেখে প্রচন্ড খুশি। সে ব্যস্ত এটা সেটা দিয়ে ভাইয়ের আপ্যায়নে। সাদাদ বাসার সবার সাথে কুশলবিনিময় করে রুবায়েতকে ইশারা করলো। রুবায়েত ইশারা বুঝে বললো,
-সাদিয়া একটু আমাদের রুমে চা নিয়ে এসো তো! আমি আর সাদাদ রুমেই আছি।
সাদিয়া তার স্বামীর কথায় সম্মতি দিয়ে এগিয়ে গেলো রান্নাঘরে।
.
রুবায়েত আর সাদাদ পাশাপাশি বিছানায় বসে আছে।
-সাদাদ! কি হয়েছে? বুঝতে পারছি বিষয়টা হয়তো গুরুত্বপূর্ণ! কিন্তু কি নিয়ে তা ঠিক বুঝতে পারছি না।
সাদাদ কিছু বলবে তার আগেই সাদিয়া চা নিয়ে রুমে এলো। সাদাদ সাদিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–দি! বোস এখানে!
সাদিয়া বসলো। সাদাদ সাদিয়া এবং রুবায়েত দুইজনকেই বললো,
–আপনারা দুজনেই জানেন রাজনীতিতে সকল বিষয়ই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আর সামনে ইলেকশন। আমার আগে তোমাদের নিরাপত্তা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ইম্পরট্যান্ট। দি কখনোই তুই একা বাসা থেকে বের হবি না। হয়তো রুবায়েত ভাইয়ের সাথে বের হবি। আর ভাইয়া ব্যস্ত থাকলে আমাকে বলবি! তাও একা বের হবি না। আমি সবসময়ই তোকে সত্যটা বলে দেই। আজও তার ব্যতিক্রম হবে না। তোকে কেউ টার্গেট করেছে আর আমি কোনভাবেই তোকে নিয়ে রিস্ক নিতে পারবো না।
রুবায়েত সাদাদের কথায় চমকালো।
-কিন্তু কেউ কেনো সাদিয়াকে টার্গেট করবে? ওর সাথে কি শত্রুতা?
সাদিয়া চুপচাপ সবটা শুনে যাচ্ছে। সাদাদ প্রশ্নোত্তরে বললো,
–দি এর মতো মানুষের কখনো কোন শত্রু থাকে না। রাজনীতিবিদ এর কন্যা এবং ছাত্ররাজনীতিবিদ এর বোন হওয়ার জন্যই ওকে সবাই সবার আগে টার্গেট করতে চায়।
রুবায়েত সবটা শুনলো। সে নিজেও বেশ চিন্তিত সাদাদকে নিয়ে। সাদিয়াকে সে নিরাপত্তা দিতে পারবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সবচেয়ে বেশি চিন্তা হয় তার ছোট বোনটার জন্য। কিন্তু রুবায়েত বিশ্বাস করে সাদাদের কাছেই তার বোনটা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।
.
এখন আনুমানিক রাত নয়টা বাজে। কিন্তু সাদাদ এখনো বাসায় আসলো না। এদিকে সুবাহ বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে। বারবার ফোনে চেষ্টা করছে কিন্তু প্রতিবারই এক বিশ্রী কন্ঠের মহিলা বলছে ফোনটা নাকি সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সুবাহ আবার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন নাম্বার থেকে সে চেষ্টা করেছে। অজান্তেই তার চোখের কোনে পানি চলে এসেছে। যতই ব্যস্ত থাকুক না কেনো একটাবার ফোন করে জানিয়ে দিলে কি এমন হয়? এই যে তার হাত পা কাঁপছে, বুক ধড়ফড় করছে টেনশনে, অস্থির লাগছে তার! সারা রুম পায়চারি করছে। হঠাৎ রুমের দরজায় শব্দ হলো। সুবাহ তাকিয়ে দেখে রুবাইয়া এসেছে। হাতে জুস। সুবাহ ভ্রু কুঁচকে এক পলক দেখে আবার পায়চারি শুরু করেছে। তার অস্থির আচরণ দেখে বুঝতে পেরেছে।
-সুবাহ! আরে বাবা! এতো চিন্তা করিস না সাদাদ চলে আসবে।
সুবাহ পায়চারি বন্ধ করে চিন্তিতভাবে বললো,
–চিন্তা করবো না তো কি করবো? তখন থেকে ফোন করে যাচ্ছি কিন্তু ফোনটা অফ বলছে। ভাল্লাগেনা!
সুবাহ আবার পায়চারি করতে শুরু করলো। রুবাইয়া জুসটা নিয়ে সুবাহর কাছে গেলো। কিন্তু সুবাহ সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে সে খাবে না। কি আর করার? জোর করে এতো বড় মেয়ে কে তো আর খাওয়ানো যায় না। তাই রুবাইয়া ব্যর্থ হয়ে জুস টেবিলে রেখে চলে গেলো। সুবাহ পায়চারি করতে করতে বিছানায় ধপ করে বসে গেছে।
.
সাদাদের আজ অনেকটা দেরি হয়ে গেছে বাসায় আসতে। ফোন করে কাউকে বলবে তারও উপায় নেই, ব্যাটারি ডেথ। পাওয়ার ব্যাংকটাও সাথে করে আনতে ভুলে গেছে। এদিকে ইলেকশনের জন্য বেশ কাজ করতে হয়েছে সাথে আবার বোনের বাসায় যাওয়াতে সে ধরে বেধে খাইয়ে ছাড়লো। আনুমানিক রাত বারোটা নাগাদ সে বাসায় পৌঁছালো। বাসার সবাইই ঘুম। এক কাজের লোক এসে দরজা খুলে দিলো সাদাদকে। সাদাদ আস্তে করে রুমে চলে এলো। রুমে এসে দেখে সুবাহ বিছানা এক পাশ হয়ে এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে। সাদাদ এগিয়ে গিয়ে দেখে হাত থেকে ফোনটা বিছানা পড়ে আছে। আর সুবাহ ঘুম। চোখের পানিতে গালে দাগ হয়ে আছে। সাদাদের অনেক কষ্ট লাগলো। সে বেশ বুঝতে পারছে সুবাহ আজ অনেক কষ্ট পেয়েছে। সাদাদ সুবাহকে ধরতে গিয়েও হাত গুটিয়ে নিলো কিছু ভেবে। সে সরাসরি তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
পানির শব্দে সুবাহ ঘুম থেকে উঠে গেলো। প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও পরক্ষনে আবার ফোন হাতে নিয়ে ফোন দিতে নিলেই চোখে পড়লো টেবিলের উপর রাখা সাদাদের ফোন আর ঘড়ি। সুবাহ দেয়াল ঘড়িটায় চোখ বুলালো। রাত বারোটা একুশ! তারপর চোখ ঘুরিয়ে ওয়াশরুমে তাকালো। তারমানে সাদাদ এসেছে। কিন্তু তাকে কিছুই বললো না। সুবাহর বেশ অভিমান হলো। থম মেরে বসে রইলো সে। বেশ কিছুক্ষন পর সাদাদ মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই সুবাহকে বসে থাকতে দেখলো। সুবাহ এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে। সাদাদ কিছু বলবে তার আগেই সুবাহ উঠে রুমের বাইরে চলে গেলো। আর সাদাদ হা করে তাকিয়ে আছে। সুবাহ যে বেশ ক্ষেপে আছে তা সে বেশ বুঝতে পারছে।
(চলবে)….
অনুভূতিরা শীর্ষে 💗
দ্বিতীয়ধাপ
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব-৩
সুবাহর পিছু পিছু সাদাদও বেরিয়ে এলো রুম থেকে। এসে দেখে সুবাহ রান্নাঘরে কি যেন করছে। হয়তো সাদাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছে। সাদাদ রান্নাঘরে গিয়ে সুবাহকে বললো,
–সুবাহ! আমি এখন কিছু খাবো না। খেয়ে এসেছি! তুমি খেয়েছো তো?
সুবাহ একবার সাদাদের দিকে তাকালো। তার এখন ইচ্ছে হচ্ছে সাদাদকে ধরে ঠান্ডা পানিতে চুবাইতে। রাগে তার শরীর রি রি করছে। প্লেটের খাবার ফ্রিজে ঢুকিয়ে সে চললো রুমের দিকে। তার প্রতিটা পদক্ষেপ বলে দিচ্ছে যে সে কতটা ভয়ানক রেগে আছে। সাদাদ নিজেই অবাক হয়ে গেছে সুবাহকে এমন রাগতে দেখে। বিয়ের পর এই প্রথম সে দেরি করে বাসায় এসেছে। এর আগে তো প্রায়শই এমন দেরি করে বাসায় আসতো। তার কাছে বিষয়টা সাধারণ হলেও সুবাহর কাছে নয়। সাদাদও ছুটলো সুবাহর পিছনে। এখন নিশ্চয়ই রেগে নিচে ঘুমাতে যাবে। মেয়েদের এই একটা সমস্যা কিছু হলেই রেগে হয় রুম থেকে বেরিয়ে যাবে নয়তো মেঝেতে শুতে যাবে। তারপর কান্নাকাটি! উফফ!
.
সাদাদ রুমে গিয়ে দেখে সুবাহ খাটে আধশোয়া হয়ে কাঁথা গায়ে দিচ্ছে। সাদাদ হালকা কেশে উঠলো নিজের ভুল ধারণার জন্য। সুবাহ এখনো চুপ। কোনো কথা বলছে না। সাদাদ টেবিলের উপর জুসের গ্লাস দেখে বললো,
–এই জুসের গ্লাস এখানে কেনো?
সুবাহ কোনো কথা না বলে কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো। সাদাদ ভ্রু কুঁচকে সুবাহর দিকে তাকালো। তারপর নিজে সুবাহর ডানপাশে শুয়ে পড়লো। সাদাদকে পাশে শুতে দেখে সুবাহ বামদিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে। তা দেখে সাদাদ আধশোয়া হয়ে সুবাহকে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে এলো। সুবাহ চোখ বন্ধ করে আছে। সাদাদ সুবাহর কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদুস্বরে বললো,
–আচ্ছা বাবা! সরি তো! আসলে বুঝতেই পারি নি কিভাবে এতো লেট হয়ে গেলো। ফোনে চার্জ না থাকায় ফোনও দিতে পারি নি। সরি…! এই! এই সুবু!
সাদাদ একটা নিশ্বাস ফেলে আবার বললো,
–আমার বউটা আমার সাথে কথা বলে না কেনো? এই সুবাহ! জানো আমি মনে করেছি তুমি রেগে মেঝেতে ঘুমাতে যাবে।
সুবাহ এবার বেশ ক্ষেপে গিয়ে বললো,
–কেনো? আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে? বেশি সমস্যা হলে নিজে অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করুন! আমাকে ঘুমাতে দিন প্লিজ!
বলেই সুবাহ আবার শুয়ে পড়লো। সাদাদ পুরোপুরি অবাক হয়ে গেছে। যেই মেয়ে তাকে বাঘের মতো ভয় পেতো, সে আজ তার সাথে এইভাবে কথা বললো! সাদাদ সুবাহর রাগ ভাঙাতে আবার বললো,
–আরে কাজ ছিলো তো তাই দেরি হয়ে গেছে। এরপর থেকে কাজ থাকলে সবার আগে তোমাকে বলে দিবো। তাও রাগ করে থেকো না প্লিজ। এই সুবাহ!
সুবাহ কোন কথা বললো না। সাদাদ ব্যর্থ হয়ে সুবাহকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার পিঠে ঠোঁট ছোঁয়ালো। সুবাহ তৎক্ষণাৎ কেঁপে উঠলো। সাদাদ বিছানা থেকে উঠে পানি পান করতে গেলে দেখে জগে পানি নেই। তাই জগ নিয়ে নিজেই রান্নাঘরের দিকে গেলো। পানি নিয়ে আসার সময় তার দেখা হয় রুবাইয়ার সাথে। রুবাইয়া তাকে দেখে বলে,
-আরে ভাইয়া! আপনি কখন আসলেন?
সাদাদ রুবাইয়াকে উত্তর দিলো,
–এই তো আধা ঘন্টা হবে।
রুবাইয়া আবার বললো,
-খাওয়া দাওয়া করেছেন? সুবাহ তো সেই বিকেল থেকে না খাওয়া। আসলে আপনি ফোন ধরছিলেন না দেখে ও অনেক প্যানিক হয়ে উঠেছিলো। এটা ওর অভ্যাস। প্যানিক হয়েই হাত পা কেঁপে, বুক ধড়ফড় করে, প্রচুর টেনশন করে। আর ও অল্পতেই প্যানিক হয়ে যায়। আজও তাই হয়েছে। আমি তাকে কিছুই খাওয়াতে পারি নি। আপনার সাথে খেয়েছে তো কিছু? নয়তো আবার তার প্রেশার ফল করবে!
সাদাদ মনে মনে বেশ রেগে গেলো। সুবাহ এখন পর্যন্ত না খাওয়া! সাদাদ রুবাইয়াকে বিদায় দিয়ে পানি নিয়ে রুমে গেলো। পানি বেডবক্সের উপরে রেখে সুবাহর দিকে তাকালো। সুবাহ আপাতত চোখ বুঝেই আছে। সে যে ঘুমায় নি তা সাদাদ বেশ বুঝতে পারছে। সাদাদ আবার রান্নাঘরে গিয়ে খাবার প্লেটে করে নিয়ে এলো। সুবাহর পাশে বসে তাকে ডাকলো,
–সুবাহ! এই! ওঠো! আগে খাবারটা খাও তারপর ঘুমাবে। সুবাহ!
সুবাহ কোনো প্রতিক্রিয়া জানালো না। সাদাদ এবার সুবাহকে হালকা করে ধাক্কা দিলো। সুবাহ এবার ভ্রু কুঁচকে বললো,
–কি সমস্যা? ঘুমাতে দিন।
সাদাদ গম্ভীর গলায় বললো,
–আগে খেয়ে নাও। তারপর ঘুম। ওঠো বলছি।
সুবাহ এবার আড়চোখে সাদাদের দিকে তাকাতেই দেখে সে রাগী চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সুবাহ ভ্রু কুঁচকে কাঁথা মুড়ি দিয়ে দিলো। সাদাদ রেগে সুবাহর বাহু ধরে একটানে উঠিয়ে দিলো। আর সুবাহ বিরক্তিপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সাদাদের দিকে।
.
সাদিয়া বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে। তার ঘুম আসছে না। বেশ কয়েকদিন ধরেই তার এই সমস্যা হচ্ছে। পাশে রুবায়েত ঘুমিয়ে আছে। সাদিয়া রুবায়েত এর দিকে ফিরে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। রুবায়েত এর এক হাত সাদিয়ার পেটের উপর। রুবায়েত এর দিকে তাকিয়ে সাদিয়া মুচকি হাসলো। সারাদিনের কাজের পর ক্লান্তিপূর্ণ চেহারা দেখে সাদিয়ার বেশ মায়া হয়। সাদিয়া আস্তে করে রুবায়েত এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। রুবায়েত আদরমাখা হাতের স্পর্শ পেয়ে সাদিয়ার আরো কাছে এগিয়ে এলো। হঠাৎ সাদিয়ার ফোনে ফোন এলো। আননোন নাম্বার। সাদিয়া সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে যে তার কি ফোনটা তোলা উচিৎ? রাত একটার সময় কে ফোন দিবে? অনেক ভেবে সাদিয়া ফোনটা তুলে নিলো হাতে। এর মধ্যেই ফোনের আওয়াজে রুবায়েত এর ঘুম ভেঙে গেছে। সে ভ্রু কুঁচকে সাদিয়ার দিকে তাকালো। সাদিয়া তাকে বললো,
-আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসছে। কি করবো? তুলবো?
রুবায়েত উঠে বসে। সাদিয়ার ফোনটা সেই রিসিভ করলো।
-হ্যালো! কে বলছেন?
ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ এলো না। রুবায়েত ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে লাইনটা কাটে নি কিন্তু কোনো শব্দ আসছে না। রুবায়েত বেশ কয়েকবার কথা বললো কিন্তু কোন আওয়াজ না পেয়ে দেখে দুই সেকেন্ড আগে কলটা কেটে গেছে। রুবায়েত সাদিয়াকে জিজ্ঞাসা করলো,
-আগেও কি এই নাম্বার থেকে ফোন এসেছিলো?
সাদিয়া নাবোধক উত্তর দিলো। রুবায়েত আগত নাম্বারে আবার কল দিলো কিন্তু নাম্বার বন্ধ বলছে। কে ফোন দিতে পারে এতো রাতে সাদিয়াকে?
(চলবে)….